দি_বাটারফ্লাই_ইফেক্ট লেখিকা : #আরফিন_জাহান_আনিকা পর্ব : ১৬

0
26

গল্পের নাম : #দি_বাটারফ্লাই_ইফেক্ট
লেখিকা : #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ১৬ (শেষ পর্ব ❌ প্রাপ্তবয়স্ক এলার্ট 🚫)

( আমার টিউশনের ছাত্রীরাও আমার গল্প পড়ে জানি। তোরা সবাই ছোট। আজকের পর্ব কেউ পড়বি না। যদি পড়ছস খবর আছে।)

“এক্সকিউজ মি বিউটিফুল লেডি। কাজ শেষ হলে আমাকে একটু সময় দেয়া যাবে?”

বারান্দায় ফুল গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছিল অন্তরা। আফনানের কথা শুনতে পেয়েও সে পিছনে তাকায় না। আফনান বুঝে নেয় অভিমান জমেছে।

“সবই বুঝলাম। তাই বলে বৃষ্টির সিজনে রাতের বেলা ফুলের টবে পানি কে দেয়?”

অন্তরা এবারও কোনো জবাব দিলো না। তার ভিষণ রাগ উঠেছে এই লোকটার উপর। বিকেলে আসার পর থেকে সবার সাথে কথা বলছে, দেখা করছে। গিফট দিচ্ছে। অথচ বৌয়ের খোজ নেয়ার তার সময় নেই। এক বারের জন্যও রুমে আসেনি। সবার সামনেও তেমন পাত্তা দেয় নি।

বড় অফিসার হয়েছে দেখে কি দুনিয়া সব উল্টে ফেলেছে? অন্তরাকে দেখাটা তার কাছে কি খুব তুচ্ছ বিষয়। রাগে জেদে আর কথাই বলবে না এই লোকটার সাথে।

হঠাৎ পিছন থেকে কেউ কোমর জড়িয়ে ধরায় অনেকটা কেপে উঠল অন্তরা। নাড়াচাড়া বন্ধ করে একদম স্থির হয়ে গিয়েছে। শ্বাসও প্রায় আটকে যাওয়ার মতো অবস্থা। বুঝল আফনানের কাজ এটা। কাপা কাপা গলায় শুধু বলল,

“হা..তটা সড়ান।”

“কেন? বৌ তো আমারই।”

আফনান এক হাত দিয়ে অন্তরার কাধ থেকে চুলগুলো সড়িয়ে দিয়ে একপাশে নিজের মুখটা রাখলো। আরো শক্ত করে কোমরটা জড়িয়ে ধরে বলল,

“সব সময় বাচ্চাদের মতো নাক ফুলিয়ে থাকলে হয় না। এখন বড়দের মতো কিছু করার সময়।”

অন্তরা শুধু কেপে উঠল। কিছু বলল না। কেন জানি এখন একটু বেশিই ভয় লাগছে আফনানকে। আফনান অন্তরার হাত ধরে ওকে নিজের দিকে ঘোরায়। মুখটা উচু করে ধরে কপালে একটা চুমু দেয়। অন্তরা চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে। দূরে গিয়ে বাধাও দিচ্ছে না কাছে এসে সায়ও দিচ্ছে না। আফনান ওর অবস্থা বুঝতে পেরে বলে,

“ভয় করছে?”

“আপনার কথা কাজ সবকিছু আজ একটু অন্যরকম লাগছে। কি চান?”

“আমি কি চাই তুমি জানো না?”

অন্তরা চুপ হয়ে যায়। আফনান আবার বলে উঠে,

“একটু সুযোগ দিবে তোমার মাঝে হাড়িয়ে
যাওয়ার?”

“আমার মাঝে হাড়াবেন মানে? আমি কি গোলক ধাধা নাকি?”

অন্তরার বোকা বোকা কথায় এমন অবস্থায়ও হেসে ফেলে অাফনান। ওকে কোলে করে নিয়ে খাটে শুইয়ে দেয়। অন্তরাও বাধা দিচ্ছে না। স্বামীই তো। ওরতো অধিকার আছে। আফনান অন্তরার অনেকটা কাছে চলে আসে। রাত গভীরের সাথে স্পর্শটাও অনেকটা গভীর হয়।

কিছুক্ষণ পর…

“আউচ? অন্তরা ব্যাথা পাচ্ছি তো।”
“সরি।”
“তুমিই তো কাছে আসতে চাইতে। এখন এভাবে খামচি দিচ্ছো কেন? পিঠটা শেষ করে দিলে। ”
“সরি। একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”

অন্তরার কাদোঁ কাদোঁ মুখ দেখে আর আফনান কিছু বলল না। আজ রাতে তার পিঠে আচড়ের দাগের কোনো কমতি হবে না। সে বুঝে গিয়েছে। আর সময় নষ্ট না করে সে অন্তরার মাঝে আবার ডুব দিলো। তারপর..

(আর জানতে হবে না। তারপর কি হবে সবাই জানি আমরা। আমি এত খোলামেলা লিখতে পারি না বোন। যা লিখছি তাও সবার অভিযোগের জন্য লিখছি। আমি নাকি রোমান্স দেই না এজন্য। কিন্তু এখন সরম করছে। পরে ইডিট করেও ফেলতে পারি। জানি না।)

এইদিকে সব দেখে চারুও বুঝে ফেলে সে কত বড় ভুল করেছে। নিজেকে ওয়াদা করে এই ভুল আর করবে না। যেই ভালোবাসা থেকে স্বামীকে দূরে রেখেছে, তা আর করবে না।

সকালবেলা..

অন্তরার ঘুম একটু আগে ভেঙে গিয়েছে। আফনানের দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো ঘুমোচ্ছে। ওকে আর ডাকে না। আস্তে করে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। এসে দেখে আফনান উঠে গিয়েছে।

“গুড মর্নিং জামাই।”

“ব্যাড মর্নিং বৌ।”

“কেন? কি হলো আবার?”

“আমাকেও ডাকতা। একসাথে যেতাম। ইউ নো? দেশে পানির খুব সংকট। আমাদের উচিত পানি বাচানোর। ”

“থাক। আর দেশের চিন্তা করতে হবে না ফ্রেশ হয়ে আসেন।”

আফনান আর কিছু না বলে ফ্রেশ হয়ে আসল। এসে দেখে অন্তরা সবকিছু গুছিয়ে, নিচে যাচ্ছে। আফনান ওর এক হাত টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে বলল,

“এত তাড়া কিসের বৌ?”

“ছাড়েন এখন। সময় নেই। বাসায় মেহমান আসবে।”

“কোন মেহমান আসবে? যে আমার থেকেও বেশি জরুরি।”

“রোদ আপুকে দেখতে আসবে।”

আফনানের মনে পড়ে কাল সন্ধ্যায় তার মাও এ ব্যাপারে বলেছিল। ইয়াসিন নাকি কি যেন নাম ছেলেটার। আফনান অন্তরার কপালে ঠোট ছুইয়ে ওকে ছেড়ে দিলো।
………

আফনানদের বাড়ির ড্রয়িং রুমে সবাই গোল হয়ে বসে আছে। একপাশে অপরাধীর ন্যায় মুখ করে দাড়িয়ে আছে রোদেলা। ইয়াসিন তার বাবাকে নিয়ে এসেছে। সেও মাথা নিচু করে বসে আছে। নিরবতা ভেঙে আরিফুল বলে উঠল,

“তা, সব জানো তো তুমি?”

” জ্বী আংকেল।”

“আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নিও না বাবা। সমাজের মানুষের কথা শুনতে হবে খুব। তখন আমার মেয়েকে ছেড়ে দিবে না তো?”

রোদেলার বুকটা ধক করে কেপে উঠে। আসলেই তো? পড়ে আবার ছেড়ে দিবে না তো? ইয়াসিন রোদেলার দিকে একবার তাকিয়ে আরিফুর ইসলামের দিকে তাকায়। আর উত্তর দেয়,

” যদি মাঝপথে হাতটা ছাড়ারই হতো। তাহলে হাতটা ধরতে চাইব কেন? আই উইল ট্রিট হার লাইক মাই কুইন।”

আফনান এবার আর চুপ করে থাকল না। সেও বলে উঠল,

“আমার একটাই বোন। খুব আদরের ছিল। অনেক কষ্ট সহ্য করছে গত বারো বছর। আর সহ্য করার ক্ষমতা নেই ওর মাঝে। ওকে কষ্ট দিও না প্লিজ।”

“দিবো না। কথা দিলাম।”

আরো কিছুক্ষণ কথা হলো সবার মাঝে। ইয়াসিনের প্রতিটা কথার উত্তর সবার খুব পছন্দ হলো। শেষে এক সপ্তাহ পর বিয়ে ঠিক হলো। আল্লাহর রহমতে বিয়েটাও ঠিকঠাক ভাবে হয়।

তিন বছর পর……

“এই এই, আফরা। দাড়াও মা। আর এক লোকমা দিবো। তাহলেই শেষ।”

আফরা দুই বছরের ছোট্ট মেয়ে। অথচ এত দুষ্টুমিতে ভরা। অন্তরা সারাদিন মেয়ের পিছে দৌড়াতে দৌড়াতেই হাপিয়ে উঠছে। আফনান ছুটিতে এসেছে কিছুদিন হলো। নিচে বসে চা পান করছিল। এমন সময় আফরা দৌড়ে এসে বাবার কাছে লুকায়। আফনান কোলে নিয়ে মেয়েকে আদর করতে করতে বলে,

“কি হয়েছে আম্মু? মা জোর করছে? থাক, বাবার কাছে থাকো। আম্মু জোর করবে না।”

অন্তরা আফনানের উপর রাগ হয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। লাই দিয়ে দিয়ে মেয়েকে মাথায় উঠিয়ে রাখবে। এমন সময় সায়েম এসে বলল,

“ভাবী…..”

আর কিছু না বলে কান্নাই করে দিলো। অন্তরা ভেবাচেকা খেয়ে বলে,

“কিই? বাচ্চার মতো কাদছো কেন?”

“চাকরি তো পেয়েই গিয়েছি। একটু ফারিয়াকে রাজি করান। সবাই বিয়ে করে সেটেল হয়ে গিয়েছে। খালি আমি দেবদাশের মতো ঘুরছি। দূরর।”

“আচ্ছা। চাচিকে বলে দেখবো।”

সায়েম আর কিছু বলে না। এই ফারিয়া মেয়েটা এতো জেদি। একবার বলছে পড়াশোনা শেষ করে বিয়ে করবে, মানে সেটাই করবে। শুধু সত্যি সত্যি ভালোবেসেছিল বলে। নয়ত এতদিনে অন্য কাপল হলে ঠিকই ব্রেকআপ হয়ে যেত।

………

অন্তরা রুমে বসে কাপড় গুছাচ্ছে। আফরা বিছানার একপাশে ঘুটিসুটি হয়ে ঘুমাচ্ছে। অন্তরা কাপড় গুছিয়ে ড্রয়ারে রেখে আসতেই আফনান এসে ওকে জড়িয়ে ধরে।

“এই পাগল আপনি?”

“হুমম। ”

আফনান কিছু না বলে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আর বলতে থাকে,

“শুনলাম, কাল নাকি রোদ আপু আসবে।”

“হ্যা। এখন থেকে আগামী কয়েকমাস এখানেই থাকবে। ডেলিভারির ডেটতো দিলোই।”

“দেখা করে যেতে পারলাম না।”

অন্তরার মনটা খারাপ হয়ে যায়। আজ বিকেলে চলে যাবে আফনান। তবে এখন এসবের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।

“বৌ একটা কথা বলি?”

“বলো।”

“ভালোবাসি।”

অন্তরা হেসে দেয়। বিয়ের তিন বছর পরও ও বদলায় নেই। অন্তরাও ওর গালে একটা চুমু দিয়ে বলে,

“আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি আমার বাবুর আব্বু।”

ছোট্ট মেয়ে আফরাও ঘুমের মাঝে একটু কেপে উঠে, যেন সেও বলছে, “আমিও তোমাদের ভালোবাসি আব্বু, আম্মু।”

#সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here