দু’মুঠো প্রেম,১২ শেষ
ফারজানা আফরোজ
আদুরী, আদিবা ও অরিন সামনে তাদের পিছনে ফয়সাল ও আরিফ। আদুরী একবার পিছন দিক ফিরে অট্টহাসিতে ফেটে উঠলো। আদুরীর হাসির অর্থ বাকি চারজন বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। আদুরী ভাব নিয়ে বলল,
— ফ্রী-তে বডিগার্ড পাওয়া কি যে সেই কথা। শুনো তোমরা, আমরা কিন্তু ফ্রী-তে সার্ভিস নিবো না। যেহেতু তোমরা পাহারা দিচ্ছ তাই ভাবছি তোমাদের একটা করে চকোলেট দিবো। যত যাই হোক বডিগার্ড বলে কথা।
আদুরীর কথা শোনে অরিন ও আদিবা হাসতে হাসতে হাঁটা দিল। আরিফ তো রেগে আগুন। আদুরীকে ধরতে আসবে তখনই ফয়সাল ওর হাতটা চেপে ধরে বিড়বিড় করে বলল,
— শালা আমার প্রেমে হারিকেন ধরাতে যাচ্ছিস। চুপচাপ সহ্য কর পরে সুদে আসলে আদায় করবো।
আদুরী তার ছোট্ট দুই হাত দিয়ে দূরবীন বানিয়ে আশে পাশে ভালো করে দেখে বলল,
— দেখো কত কত ছেলেরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সুন্দর মেয়ে দেখলে এই ছেলেদের চোখে যেন তাঁরা পরে। যাইহোক আমার আবার অহংকার নেই সুন্দরী বলে।
আরিফ ফিসফিস করে বলল,
— সুন্দরী হয়েছে বলে মাথা খেয়ে নিচ্ছে। এই মেয়ের বয়স দশ হলে একশো ছেলেকে পিছনে ঘুরাবে আমি শিওর।
বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর হাঁপিয়ে উঠলো আদুরী। কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠলো,
— দুইজন বডিগার্ড রেখেছি আমি, হাঁটার জন্য? দুইটাই দেখতে হিরোর মত কিন্তু কাজে কর্মে জিরো। দেখছে বাচ্চা মেয়েটা হাঁটতে হাঁটতে কান্না করছে কই একটু কোলে নিয়ে হাঁটবে তা না করে একা একা হাঁটছে। ছিঃ এদের কাছে তো বোনের বিয়ে কিছুতেই দিবো না।
ফয়সাল চেঁচিয়ে উঠে বলল,
— মাপ চাই বোন। আয় কোলে আয়।
— আমার ওজন নিতে পারবে?
— তোমাকে আর তোমার বোনকে দুজনকেই একসাথে নিতে পারবো এখন চলে আসো।
— শর্ত আছে?
— কি?
— হিরোরা যেভাবে কোলে নেয় সেইভাবে নিতে হবে। মনে রেখো আমার ওজন কিন্তু ১৮ কেজি।
ফয়সাল আদুরীর কথা কানে না তোলেই কোলে নিয়ে হাঁটতে লাগলো। অরিন ও আদিবা কথা বলতে বলতে যাচ্ছে ওদের কোনো হুস নেই পিছনে কি হচ্ছে। অরিন আরিফকে দেখার জন্য পিছনে ঘুরে দেখল আদুরী ফয়সালের কোলে।
— ওই দেখ ফয়সাল ভাই আদুরীকে কোলে নিয়েছে। ভাই কিন্তু তোকে সত্যিই ভালোবাসে।
আদিবা পিছনে ঘুরে দৃশ্যটা দেখে মুচকি হেসে আবারো হাঁটতে লাগলো।
সারাদিন ঘুরাঘুরি করার পর ভীষণ ক্লান্ত তারা। রাত আটটায় শুয়ে পরলো সবাই। রাত একটা হঠাৎ আদিবার ফোনটা বেজে উঠতে চোখ কচলাতে কচলাতে ফোনের দিকে তাকিয়ে নাম্বারটি দেখে চমকে উঠলো সে। অজানা মানুষটির চিনা নম্বরটি। এত রাতে তো ফোন কখনো দেয় না। সমস্যা হয়েছে কিনা জানার জন্য আদু ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো মধুর একটি কণ্ঠ,
— ভীষণ বিজি এখন তাই না?
— ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে আসছি তো তাই। কেমন আছেন?
— আলহামদুলিল্লাহ। কোথায় গিয়েছ?
— সাজেক।
— নামটি বহুবার শুনেছি কিন্তু যাওয়া হয়নি। জীবনে হবে কিনা সন্দেহ। তাছাড়া মনের ভিতর ভ্রমণের কোনো ইচ্ছা নেই। যে টাকা দিয়ে ঘুরবো সেই টাকা দিয়ে তিন বেলা পেট ভরে খেতে পারবো পরিবার নিয়ে। ঘুরাঘুরি হলো বড়োলোকের।
— আপনি বললে আমি সাহায্য….!
আদিবার বলার আগেই ওপাশের লোকটি বলে উঠলো,
— না খেয়ে মরতে রাজি কিন্তু পরের টাকা দিয়ে ঘুরতে রাজি নই। অনেক কথা বলার আছে তোমাকে শুনবে? যদি বিজি না থাকো।
আদিবার সারাদিনের ক্লান্তি নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো। ফোনটা হাতে নিয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির সাথে থাকতে থাকতে সে শুনতে চায় অজানা মানুষটির কথা।
— হুম শুনবো।
আজ আকাশে গোল চাঁদ। চাঁদের আশে পাশে মেঘেরা খেলছে। কেউ আঁকছে লম্বা লম্বা ঘোড়া, কেউবা আঁকছে স্তূপের মত একত্রে মিশিয়ে ফেলা, আবার কেউ আঁকছে গোলাকার বৃত্ত। রাতের আকাশের এই আর্টের খেলা ভীষণ ভালো লাগছে আদিবার।
— তোমাকে অনেক কথা বলতে চাই কিন্তু সময়ের অভাবে বলা হয়নি। তাই আজকে আধা ঘন্টা কথা বলে মনের যাবতীয় সব কথা বলে দিবো তোমাকে।
আদিবা ভয় পেল। আজ যদি এই মানুষটা তাকে প্রপোজ করে সে কিছুতেই অ্যাকসেপ্ট করতে পারবে না। কারণ, এই মানুষটার প্রতি তার মায়া, ভালোলাগা, মোহ ছাড়া আর কিছুই নেই। সারাদিন এই মানুষটার কথা তার মনে পরে না কিন্তু রাত যখন নয়টা তখনই মনে হয়, যা কখনো ভালোবাসা হতে পারে না। এখন যদি রিজেক্ট করে তাহলে কি সে আর ফোন দিবে? নানান চিন্তা ভাবনা এলোমেলো ভাবে আসছে আদিবার মাথায়।
— কি বলবেন?
— আমি নতুন চাকরি পেয়েছি। পনেরো হাজার টাকা বেতন। কষ্টের দিন এইবার শেষ হবে মনে হয়।
— গুড নিউজ তো। এইটাই বলা ছিল?
— নাহ। আসলে আমি একজন মেয়েকে পছন্দ করতাম বলা যায় তাকে আমি ভালোবাসি। কিন্তু তার পরিবার কিছুতেই আমার মত গরীব পরিবারের ছেলের সাথে তাদের বাড়ির মেয়ের বিয়ে দিবে বলে মনে হয় না। প্লিজ রাগ করো না।
আদিবার দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে। সে চায় না এইসব শুনতে কারণ এই মানুষটার কষ্টের মাঝে সে আর কষ্ট দিতে চায় না কিন্তু তবুও তাকে শুনতে হবে। লোকটি বলে যাচ্ছে,
— চাকরি পাবার পর আমি তার সাথে যোগাযোগ করি পরে জানতে পারি সেও আমায় ভালোবাসে। ওর বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর পর তার পরিবার রাজি হয়ে যায়।
আদিবা যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। মিষ্টি হেসে বলল,
— তাহলে সাহেবের বিয়ে কবে হুম?
— সত্যি বলতে আজ দুইদিন হলো আমার বিয়ে। তোমাকে দুইদিন ধরে ফোন দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু তুমি রিসিভ করছো না সেই কারণে আজ সিদ্ধান্ত নিলাম গভীর রাতে ফোন দিবো। শহরের মেয়েরা তো রাত জেগে বাড়িঘর পাহারা দেয় হাহাহা।
অভিমানী সুরে বলল আদিবা,
— কচু, কে বলছে শহরের মেয়েরা রাত জেগে বাড়ি পাহারা দেয়?
— মজা করলাম। এখন বলো রাগ করনি তো?
— রাগ তো একটু লাগছে। এত ভালো বন্ধু আমরা কিন্তু আপনি আমাকে দাওয়াত দেননি। ভাবির নাম বলেননি, কথা বলিয়ে দেননি। রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক না?
— ওর নাম মিলি। এখন তো ও ঘুমাচ্ছে। পরে একদিন কথা বলিয়ে দিবো।
— আচ্ছা। এখন তো আপনার নাম জানতে পারি বলুন প্লিজ!
— সুজন। রাখছি কেমন। অনেক রাত ঘুমাতে হবে।
— আচ্ছা।
সুজন ফোন কেটে দিল। আদিবার আজ ভীষণ খুশি লাগছে। ইচ্ছা করছে নাচতে ওর। এতদিন পর সে অজানা অচেনা মানুষটির নাম জানতে পেরেছে। সব থেকে বেশি খুশি হয়েছে যখন জানলো সুজন তার ভালোবাসার মানুষটিকে অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে পেয়েছে। ফয়সালের কথা ভাবতেই তার সমস্ত শরীর শিউরে উঠলো। ফয়সাল নামক মানুষটিকে দেখলেই মনের ভিতর আলাদা এক অনুভূতি সৃষ্টি হয় তার। আদুরীর প্রতি কেয়ার, ভালোবাসা দেখে ভালো লাগতে শুরু করেছে তার।
পরের দিন অর্ধেক সময় তারা ঘুরাঘুরি করলো। আদিবা একটা জিনিষ খেয়াল করলো, যখন বাড়িতে কথা বলে তখন আদুরী দূরে চলে যায় ফোন নিয়ে। আদুরীর মাথায় কি চলছে জানা নেই তার। বাচ্চা মেয়ে বলে আর কিছু ভাবলো না আদিবা।
একটু দূরে অরিন ও আরিফের মারামারি দেখে হাসছে সবাই। আইসক্রিম কিনেছিল অরিন। আরিফ এসে পুরো আইস্ক্রীম নষ্ট করে দেওয়াতে এখন মারছে আরিফকে। ফয়সাল ঝুঁকে এসে আদিবার কানে ফিসফিস করে বলল,
— আমিও তোমার হাতে মার খেতে চাই আদু।
— শখ কত।
— অনেক শখ প্লিজ মারো আমাকে।
আদিবা সুযোগের সৎ ব্যাবহার করল। কয়েকটি ধুমধাম খিল বসিয়ে দিল ফয়সালের পিঠে।
রাতে ঠিক করলো সবাই মিলে ট্রুথ ওর ডেয়ার খেলবে। মেয়েদের রুমে আসলো আরিফ ও ফয়সাল। বোতল ঘুরিয়ে প্রথম আসলো আদুরীর কাছে। আরিফ জিজ্ঞাসা করলো,
— ট্রুথ নাকি ডেয়ার?
— ভীতুরা ট্রুথ নেয় যেহেতু আমি সাহসী সো ডেয়ার।
আরিফ মনে মনে বলল,
— ছোট শালী এইবার তোমাকে ভাগে পেয়েছি। দাঁড়াও তোমাকে আজ এমন ডেয়ার দিবো জীবনে আর আমাদের সাথে লাগতে আসবে না।
— কি হলো বডিগার্ড বলো কি ডেয়ার?
— তুমি ত্রিশ মিনিট আমার হাত, পা ম্যাসাজ করে দিনে, চুল টেনে দিবে।
— খেলবো না আমি, ইউ পঁচা।
— ওকে তুমি যে ভীতু বুঝতে পেরে গেছি আমি।
— আমি ভীতু নই।
— তাহলে পূরণ করো ডেয়ার।
আদুরী বাধ্য মেয়ের মত আরিফের চুল টেনে দিচ্ছে মনে মনে তো বকা দিচ্ছেই।
এইবার আসলো ফয়সালের কাছে। সাথে সাথেই ফয়সাল বলল,
— ট্রুথ।
আদিবা প্রশ্ন করলো,
— জীবনে এমন কিছু করেছেন যা আপনি করতে চাননি কিন্তু কোনো কারণে সেই কাজটি করতে হয়েছে?
— হুম। প্রথম যে কাজটা করতে না চেয়েও করেছিলাম তা হলো, ভার্সিটির ল্যাবে তোমাকে ভয় দেখিয়ে ঘাড়ে আঁচড় কাটা। ইচ্ছা করে করেনি একটু মজা করার জন্য।
আদিবা ও অরিন চমকে উঠলো। তাহলে সেদিনের সেই কঙ্কাল থেকে আঁচড় কাটেনি কেটেছে এই বজ্জাত ফয়সাল। রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আদিবা বলল,
— সেদিন আপনার দুষ্টুমির জন্য আমি কত ভয় পেয়েছি জানেন? হার্ট অ্যাটাক হলে কি করতেন? বাই দা ওয়ে, আপনাকে দেখতে পাইনি কেন?
— রুমটা অন্ধকার ছিল। তাছাড়া ওই রুমের দেয়ালের আড়ালে আরেকটি দরজা আছে। আমার যত কাজ ঐখানে বসেই করি আমি। তোমাকে ভয় দেখিয়ে আমি ভিতরে চলে যাই আর তুমি ভয় পেয়ে দৌড়ে পালাও হাহাহা।
আবারো বোতল ঘুরানো হলো এইবার আসলো অরিনের কাছে। আদুরীর ডেয়ার দেখে সে ভয়ে বলল,
— ট্রুথ
আরিফ বলে উঠলো,
— আমায় পছন্দ করো?
— উহু।
— মিথ্যা বললে খেলতে আসো কেন?
— হুম। সেদিনের বাসে যে কথাগুলো বলছিলেন সেই কথা শোনে পছন্দ করে ফেলেছি।
আরিফ পারছে না জড়িয়ে ধরতে। তার এখন নাচতে ইচ্ছা করছে। খুশিকে দমিয়ে রেখে আবারো খেলায় মনোযোগ দিল। এইবার আসলো আরিফের দিকে। ভাব দেখিয়ে সে বলে উঠলো,
— ডেয়ার।
আদুরী লাফ দিয়ে আরিফের কোলে বসে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
— এখন তুমি আমার হাত পা ম্যাসাজ করবে শুধু আজকে নয় যতদিন এইখানে থাকতো ততদিন। চকোলেট দিবে অনেকগুলো।
আদুরীর কথা শোনে সবাই হাসলো কিন্তু বেচারা আরিফের মুখ কষ্টে দুঃখে ভরপুর ছিল।
আজ রাতে সুজন ফোন দেয়নি। আদিবাও দিল না। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে পাহাড় দেখছে সে, পিছন থেকে অরিন জড়িয়ে ধরে বলল,
— ফয়সাল ভাইয়া কিন্তু অনেক ভালো। আমি জানি তোরও ভীষণ ভালো লাগে। আগে তো দেখেছি ভাইয়ার সমস্ত ভিডিওতে তুই লাভ রিয়েক্ট দিতি। তোর জীবনের প্রথম ক্রাশ ছিল তাহলে বিয়ের প্রপোজাল পেয়েও বারণ কেন করছিস?
— আমি বিয়ের পর ভালোবাসতে চাই। বিয়ের আগে প্রেম হারাম তুই জানিস।
— ভাইয়া তো বিয়েই করতেই চাইছিল তুই তো রাজি হলি না।
— আব্বু ওকে পছন্দ করে না। তুই জানিস আব্বু যাকে পছন্দ করে না তাকে আমিও পছন্দ করি না।
— কিন্তু তুই তো এখন ভাইয়াকে পছন্দ করিস। যদি পছন্দ না করতি তাহলে তুই প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করছিস না কেন?
আদিবা মাথা নিচু করে রাখল। যতবার সে ফাঁসাতে চায় ফয়সালকে ততবারই ব্যর্থ হয় সে। অরিনের প্রশ্নের জবাব তার নেই, কথা ঘুরানোর জন্য মুচকি হেসে বলল,
— ঘুম পাচ্ছে। সকালে কথা হবে।
সকালে আদিবা বাহিরে গিয়ে বেঞ্চে বসে অরিনের বলা রাতের কথাগুলো ভাবছে। এক বাটি আইস্ক্রীম নিয়ে আদিবার সামনে দাঁড়ালো ফয়সাল। আইস্ক্রীম দেখে হাতে নিল বাটিটা, চামচ দিয়ে আইস্ক্রিম তুলতে নিতেই আইসক্রিম সহ পানি মুখে এসে পড়লো আদিবার। ফয়সাল হাসতে হাসতে টিস্যু দিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,
— বেলুনে পানি ভরে বাটির মধ্যে রেখে তার উপরে কিছুটা আইস্ক্রীম সাজিয়ে এনেছি। কি লোভী, দেখেই খেতে শুরু করেছ।
মুখ পরিষ্কার করতে করতে বলল আদিবা,
— অসভ্য, শয়তানের যমজ ভাই একটা।
— শুনলাম তুমি নাকি আমায় ভালোবাসো?
— কে বলেছে?
— আদুরী, অরিন।
— মিথ্যা। বিয়ের পর শুধু স্বামীকে ভালোবাসবো আমি।
— তাহলে চলো বিয়ে করে ফেলি।
— ইহহ আমার আব্বু আপনাকে পছন্দ করে না সো বিয়ে করার প্রশ্নই এসে না।
— শ্বশুর মশাই তো আমাকে হেব্বি পছন্দ করে। ওয়েট,,
ফয়সাল ফোন বের করে ফোন দিলো। দুইবার রিং হতেই ওপাশ থেকে আদিবার বাবার কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো,
— কি গো জামাই বাবা, মেয়ে আমার রাজি হয়েছে?
— শ্বশুর মশাই, আপনার মেয়ে রাজি বিয়েতে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসছি।
— আলহামদুলিল্লাহ। কবে আসবে জামাই বাবা?
— আপনার মুখে রাজাকারের বাচ্চা ডাকটাই ভীষণ ভালো লাগে শ্বশুর মশাই।
অবাক হয়ে বললেন আদিবার বাবা,
— তুমি জানলে কি করে? নিশ্চয় আদুরী বলেছে।
— জ্বী। এখন থেকে আমাকে রাজাকারের বাচ্চা বলেই ডাকবেন। হাহাহা।
ঐপাশ থেকে উনিও অট্টহাসিতে ফেটে উঠলেন,
— আচ্ছা রাজাকারের বাচ্চা।
আদিবা যেন আকাশ থেকে পড়লো। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো,
— আব্বু আপনাকে জামাই বাবা ডাকেন? কাহিনী কি বুঝলাম না।
— কিছুদিন আগে ব্যাংকে তোমার বাবার নামে অনেক টাকা ব্যয় করার মামলা করা হয়। সেই মামলা থেকে আমার বাবা আর আমি তোমার আব্বুকে বাঁচাই। সেদিন আমার আব্বুর একটা দাবী তোমাকে আমার কাছে বিয়ে দিতে রাজি হয় উনি। তোমার আব্বু বলেছিল তুমি রাজি থাকলে এই বিয়ে হবে। তাইতো যেদিন তুমি সাজেক আসার কথা বলছিলে তোমার আব্বুই তো জানিয়েছিল। আদুরীকে দিয়েছেন যেন তোমার মনের গতি উনি বুঝতে পারেন। ওই কারণেই তো আদুরী লুকিয়ে কথা বলে। ও তোমার আব্বুকে বলেছে, তুমি আমায় পছন্দ করো।
আদিবার এখন প্রচুর রাগ লাগছে। শেষমেষ ওর বাবা আর বোন ওর বিরুদ্ধে । তবে মনে মনে খুশি সে, প্রথম ক্রাশ নামক মানুষটিকে সে স্বামী হিসেবে পাবে বলে।
ফয়সাল আদিবার হাতটা তার হাতের মুঠোয় নিয়ে বিয়ের প্ল্যান করতে ব্যাস্ত। আদিবা তো লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। আদুরী এই দৃশ্য ফোনে বন্ধী করে বাবার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে অরিনের কাছে চলে গেলো।
একটা কোকের বোতলে দুইটা পাইপ লাগিয়ে খাচ্ছে অরিন ও আরিফ। দেখেই বুঝা যাচ্ছে তার বেশ রোমান্টিক মুহূর্তে আছে। মনে মনে কষ্ট নিয়ে রুমে এসে দুই গালে হাত দিয়ে বলল আদুরী,
— ইসস তুহিনের বাচ্চা আজ তোকে ভীষণ মিস করতেছি। তুই আসলে তো আমরাও এখন কানামাছি কিংবা গোল্লাছুট খেলতে পারতাম। আপুর গোয়েন্দা হয়ে এসে বড্ড ভুল করেছি।
অটুট থাকুক তাদের সম্পর্ক। সুজন যেন তার মিলিকে নিয়ে অভাবের মাঝেও ভালোবেসে সুখে থাকতে পারে। অরিন ও আরিফের খুনসুটি ভালোবাসা যেন কখনো না কমে। বিয়ের পর বৈধ সম্পর্কে ফয়সালকে স্বামী হিসেবে পেয়ে আদিবা যেন ভালো থাকে। তাদের দু’মুঠো প্রেম যেন অটুট থাকে সব সময়।
কোথাও যাইনি জানি, এখানেই আছি
যেখানে ভালোবাসা এত কাছাকাছি।
যেখানে ফিসফিস মায়া— কতকথা
যেখানেই তুমিময়, কী ভীষণ আকুলতা!
এইতো আমাদের দু’মুঠো প্রেমের কথা।।
সমাপ্ত,,,,,,