দু’মুঠো প্রেম,৮,৯
ফারজানা আফরোজ
৮
সবুজ ঘাসের উপর এলোপাতাড়ি ভাবে শুয়ে আছে অরিন আর আদিবা। আদিবার দৃষ্টি খোলা আকাশের সেই নীল সাদা মেঘের উপর। অরিনের দৃষ্টি আদিবার উপর। বাড়ির পিছন দিকে সবুজ ঘাস আর বিভিন্ন গাছের মেলা। আদিবার মন খারাপ হলেই সে এইখানে এসে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকবে। বান্ধবীর সেদিন চলে আসা বারবার অরিনের মনকে আকুল করে তুলেছিল। সকাল হতে না হতেই ব্যাগ পত্র নিয়ে চলে আসে আদিবার বাসায়। অরিনকে দেখে মুখে মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকে নিয়ে চলে আসে বাড়ির পিছন দিকটায়।
– কি হয়েছে তোর? ফয়সাল ভাই কিছু করেছেন?
– কিস করেছে গালে।
– কিহ। ছিঃ উনার মত মানুষ কিনা এখন এইভাবে নিচে নেমে যেতে পারে। ভাবলেই রাগ হচ্ছে। আজকেই উনার পেজ থেকে লাইক উঠিয়ে ফেলবো। গ্রুপ থেকে লীভ নিবো। আইডি থেকে ব্লক মারবো। উপরে উপরে এমন ভাব নিয়ে চলে যেন ভাজা মাছটি উল্টিয়ে খেতে জানে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে লুচু নাম্বার ওয়ান
– একটা প্ল্যান করেছি শুনবি?
ভ্রু জোড়া কুচকালো অরিন। আদিবার শান্ত কথাগুলো তাকে ভীষণ ভাবাচ্ছে। কারণ, যখন আদিবা ভীষণ কষ্টে কিংবা রেগে থাকে তখন সে এইভাবে কথা বলে। ভয়ে ভয়ে বলল,
– কি প্ল্যান করেছিস?
– ফয়সাল নামক বাজে লোকটির মুখোশ আমি সবার সামনে তুলে ধরবো। যেভাবেই হোক তাকে আমি শাস্তি দিবো।
– কিন্তু কিভাবে?
– উনার প্রেমের জালেই ফাঁসাবো উনাকে। কিন্তু তোর একটা হেল্প লাগবে।
অরিন ভয়ে কেঁপে উঠলো। ফয়সালের সাথে গেম খেলা মানে নিজের প্রাণ হাতে নিয়ে খেলা করা। তবুও বেস্ট ফ্রেন্ডের মনকে শান্ত করার জন্য হেল্প তো তাকে করতেই হবে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
– কি হেল্প?
– তুই আজ আব্বুকে গিয়ে বলবি আমরা বেশ কিছু ফ্রেন্ড মিলে সাজেক ঘুরতে যাব। তুই বললে আব্বু এত ঘেঁটে দেখবে না। সাজেক যেহেতু কাপলদের জন্য কিংবা প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য বিশেষ ভ্রমনকর সেখানেই নিয়ে যাবো পাজি ফয়সালকে। কিছুদিন উনার সাথে নাটক করে সব রেকর্ড করবো ফোনে। সুযোগ বুঝে নেট জগতে ভাইরাল করে দিবো।
– সবই বুঝলাম কিন্তু পরে যদি খারাপ কিছু হয়।
– কিচ্ছু হবে না ট্রাস্ট মী। কিন্তু আন্টির শরীরের কথা ভেবে ভাবছি তোকে নিবো না।
হকচকিয়ে উঠলো অরিন। ভয়ঙ্কর মুহূর্তে কিছুতেই সে আদিবাকে একা ছাড়বে না। ফয়সাল হলো হিংস্র পশু যখন তখন কি রূপ নেয় তা বুঝা মুশকিল তার উপর তাকে জব্দ করার জন্য এই প্ল্যান। কিছুতেই প্রিয় বান্ধবীকে সে একা ছাড়বে না। মায়ের জন্য কষ্ট হচ্ছে হঠাৎ তার মাথায় একটা প্ল্যান আসলো, খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
– সমস্যা নেই। মাম্মী, বেশ কিছুদিন ধরে বলছে নানু বাড়িতে যাবে। আমি বরং আজকে গিয়ে বলব উনি নানু বাড়িতে গিয়ে ঘুরে আসুক আর আমরাও ফয়সাল ভাইকে শায়েস্তা করার জন্য সাজেক ঘুরে আসি। বাই দা ওয়ে ফয়সাল ভাইকে নিমন্ত্রণ দিবে কে?
– এই ব্যাবস্থাও আছে এখন তুই চল আব্বুর কাছে।
দৌঁড়ে চলে গেল দুইজন। প্রথমবার বারণ করার পর মিষ্টার নিজাম উদ্দিন দেখলেন অরিন আর আদিবার মন খারাপ হয়ে গেছে। মেয়েদের মুখের কষ্ট কিছুতেই উনি মানতে পারেন না তাই রাজি হয়ে পারমিশন দিলেন তবে উনার এক শর্ত আদুরীকে নিয়ে যেতে হবে।
– ওরো এখন ঘুরাঘুরি করার বয়স। তোমরা যেহেতু যাচ্ছ তাহলে ওকে নিয়ে যাও সাথে করে। ভালো মতে খেয়াল রেখো ছোট বোনের।
ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও রাজি হলো আদিবা। আদুরী তো খুশিতে সবার গালে পাপ্পি খেতে লাগল। মনের ভিতর তার রঙিন সুর,
– সাজেক সাজেক না বলেও আমি সাজেক যাবো রে….
হলুদ জামা, ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক, চোখে গাঢ় কাগল, গালের তিনটা আরেকটু কালো করার জন্য আইলেনার লাগালো আদিবা। আজ তাকে ভয়ংকর সুন্দরী লাগছে। চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে এক পাশে রেখে অন্য পাশে ওড়না দিয়ে অরিনের দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর হাসি দিয়ে বলল আদিবা,
– কি রে অরি পাখি কেমন লাগছে আমাকে?
– আজ ছেলে হলে তোকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করতাম। ফয়সাল ভাই শুধু শুধু তোর প্রেমে পড়েনি। মায়াবতী, সুন্দরী, কেশবতি মেয়েকে দেখলে সবাই প্রেমে পড়বে।
– ফয়সাল ইজ নট ভাই হি ইজ ঘরের ময়লা ছাল। বাই দা ওয়ে আমাকে দেখে টাস্কি খাবে অসভ্য লোকটি?
– অবশ্যই।
দুই বান্ধবী তৈরি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য যেতে লাগলো। আজ তাদের প্ল্যান হলো ফয়সালের সামনে গিয়ে ঘুরে ঘুরে কথা বলা, জোরে জোরে হাসতে থাকা, সাজেক যাবার ব্যাপারে একজন আরেকজনকে এমনভাবে বলবে যেন ফয়সাল শোনে কথাগুলো। আদিবা যাচ্ছে মানে ফয়সালও যাবে। সেখানেই হবে আসল গেম।
______________
পার্কের বেঞ্চে এসে বসেছে আদিবা ও অরিন। তাদের নজর ফয়সাল কোথায় সেদিকে। হঠাৎ ফয়সালের উপস্থিত টের পেয়ে অরিন গদগদ করে বলল,
– আদুরে আমার কি যে ভালো লাগছে। আমরা সাজেক যাবো। ওয়াও, নিজের দু হাতে মেঘের ভেলা স্পর্শ করতে পারবো। আকাশের সাথে মিশতে পারবো। ভাবলেই নাচতে ইচ্ছে করছে।
– শুধু কি তোর? আমিও তো ভীষণ খুশি। ভাবছি বাসে করে যাবো। দুই বান্ধবী আড্ডা দিতে দিতে পারি জমাবো মেঘের রাজ্য। মেঘের রাজ্যেতে যদি একজন রাজা কিংবা রাজকুমার পেয়ে যাই মন্দ হবে না ব্যাপারটা।
– আমার মনের কথাগুলো বলেছিস বাই দা ওয়ে কবে যাবো আমরা?
– পরশু।
বাসের নাম,কয়টায় যাবে, বাস কখন ছাড়বে সব ডিটেলস তারা ফয়সালকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলো। ফয়সালের এখন মনে হচ্ছে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়ে গেছে। আরিফ বলেছিল, এমন কোথাও যেতে যেন তারা অনেকক্ষণ সময় আলাদা থাকতে পারে। যেখানে তাদের খুব কম মানুষই চিনে। ফয়সাল মনে মনে ভীষণ খুশি হয়ে বলল,
– আমার প্রবলেম সলভ করার জন্যও একটা তুমি চাই আদু রাণী।
ফয়সালের এখন সামনে থেকে আদিবাকে দেখতে ইচ্ছা করছে। পিছন থেকে খোলা চুলের হলুদিয়া পাখিকে দেখে তার মন ভরছে না। তাই সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আদিবা অরিন দেখেও না দেখার ভান করে কথা বলছে এমন সময় ফয়সাল ওদের সামনে একটা গানের কলি বলতে লাগলো,
– ঢাকা টু খুলনা একটু ভালোবাসোনা। নেই কোনো ভাবনা নিয়ে যাবো পাবনা।
অরিনের ভীষণ হাসি পাচ্ছে গান শোনে। ফয়সালকে দেখে তার মনে হয় না এই ছেলে একটা মেয়ের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে গান বলবে। আদিবার জন্য জোরে হাসতে না পেরে মুখ চেপে হাসছে। আদিবাও একটু মজা নেওয়ার জন্য বলল,
– ঢাকা টু সিলেট সবকিছুই ডিলেট। মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা গবেট।
অরিন এইবার হাসি ধরে রাখতে না পেরে জোরে জোরে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে হঠাৎ করেই ফয়সালের পিঠে হালকা চাপড়ে বলে দিলো,
– ফ্রী-তে এত সুন্দর সিনেমা দেখবো কখনো ভাবিনি। প্লিজ কন্টিনিউ।
অরিনের মনে নেই সে কাকে চাপড় মেরেছে। ফয়সাল তো রাগান্বিত চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে অরিনের দিকে। যখনি অরিনের খেয়াল হলো সে ভয়ে আদিবার পিছন দাঁড়িয়ে পরলো। ফয়সালের ইচ্ছা করছে এখন অরিনকে ধরে মাথার উপরে তুলে নিচে ফেলে দিতে শুধু মাত্র হবু বউয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড বলে রাগটা কন্ট্রোল করে হেসে দিয়ে বলল,
– ইটস ওকে। শালীদের এমন করতেই হয় হবু দুলাভাইয়ের সাথে। ভীষণ খুশি হলাম তুমি যে আমাকে দুলাভাই ভেবে ফেলেছো। লাভ ইউ শালীকা।
আদিবা রাগী দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অরিনকে নিয়ে চলে যায়। সে চায় না তার প্ল্যান নষ্ট হয়ে যাক। ফয়সালকে সে জ্বালাবে কিন্তু এখন নয়। সাজেক হবে ফয়সালের জীবনের কষ্টের মুহূর্ত।
____________
চলে গেলো দুইটা দিন। আজ সাজেক যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে আদিবা ও আদুরী। অরিন ওর বাসা থেকেই আসবে। আদুরী কালো টপ, জিন্স, মাথার চুলগুলো জুটি বেঁধে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, গলায় পাথরের মোটা চেইন, ডান হাতে ঘড়ি, বাম হাতে ব্রেসলেট, হিল জুতো পরে মুখটা আফসোসের ভঙ্গিতে বলল,
– আমার যেতে ইচ্ছা করছিল না। যতদিন থাকবো না ততদিন বেয়াদব তুহিন খুব আনন্দ করবে। শুধু মাত্র তোমাকে আর অরি আপুকে দেখে রাখার জন্য যাচ্ছি। ঘুরতে গিয়ে হারিয়ে যেতে পারো কিংবা কোনো ছেলে বিরক্ত করলে তখন একা একা কি করবে তাই তো আব্বু আমাকে পাঠাচ্ছে তোমাদের খেয়াল রাখার জন্য। ইসস কত কাজ যে করতে হয় আমাকে। তবুও কোনো অহংকার নেই আমার, নেই কোনো ক্লান্তি। আমার মত এই পৃথিবীতে একজনই আছে। ভাগ্য ভালো তোমার, আমার মত কিউট একটা বোন পেয়েছো বলে।
– এত কথা না বলে প্যাম্পাস ব্যাগে রাখ। ওইখানে যদি হিসু টিসু করিস তোকে জেলে ভরবে রিসোর্টের লোকেরা।
গাল ফুলিয়ে প্যাম্পাস ব্যাগে রাখলো। ওর একটাই সমস্যা মাঝে মধ্যে রাতে বিছানা ভিজিয়ে ফেলা। এইজন্য ওর মা কত যে হিসু বিছানা থেকে খাইয়েছে তবুও যায় না এই বদ অভ্যাস।
চলবে,
দু’মুঠো প্রেম
ফারজানা আফরোজ
৯
বাসের বাম পাশের মাঝের দুটি সিটে বসেছে আদিবা আর অরিন। তাদের মাঝে অর্থাৎ দুইজনের কোল ভাগাভাগি করে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে আদুরী। কতবার করে সে বলেছে তার জন্য আলাদা সিট রাখতে কিন্তু ওর দুই পঁচা বোন রাখেনি। উল্টো ওরা বলেছে,
— টাকা কি গাছে ধরে? এক্সট্রা টাকা খরচ করার মানেই হয় না তাছাড়া একা একা কার সাথে বসবি যদি কেউ কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় তখন কি হবে?
অরিন ও আদিবার ঝাড়ি খেয়ে চুপ বনে যায় আদুরী। তার ভীষণ লজ্জা করছে অন্যের কোলে বসতে।
অরিন ব্যাগ বের করে পানির বোতল বের করতে যাবে দেখলো বোতল নেই। রাজ্যর বিরক্তি নিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
— মাথা নস্ট হয়ে গিয়েছে আমার। বোতলটা যে কোন দুঃখে আনিনি কি জানি।
আদিবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
— আদু আমি পানির বোতল কিনে আনতেছি। জানিসই তো মিনিট মিনিটে পানি পান করতে হয় আমার।
কোল থেকে আদুরীকে নামিয়ে বাস থেকে নেমে পড়লো অরিন। আশে পাশে কোথাও ঠাণ্ডা পানি না পেয়ে কিছুটা দূরে যেতেই একজন ছেলেকে দেখে রাজ্যর বিরক্তি নিয়ে অন্য পাশ ফিরতেই ছেলেটি বলে উঠলো,
— ওয়াও কি মীরাক্কেল। ঝাঁসিকা রাণী তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে হাতে হারিকেন ধরতে বাধ্য হয়েছি আর সেই তুমি কিনা আজ আমার সামনে। একেই বলে পৃথিবীটা গোল। তাছাড়া আমার ভালোবাসার একটা দাম আছে বুঝছো।
— ওই মিয়া ফলো করছেন আমাকে? মার খেতে চান। সেদিন রাতেই বুঝছি আপনি ছেলেটা সুবিধার নয়। আস্ত একটা জলহস্তী।
— আরিফকে বকা দিচ্ছ বাহ সাহস আছে দেখছি। এই প্রথম কোনো মেয়ের কাছ থেকে বকা খাচ্ছি। দেখো মেয়ে আমি কিন্তু খুব রোমান্টিক তাইতো রোমান্টিক রোমান্টিক কথা বলছি।
— মরণ। আপনার নাম কে জানতে চেয়েছে? আমি বলেছি নাম বলতে? ওওও বুঝছি নিজের নামটা কিভাবে জানাবেন সেইজন্যই জাল ভোটের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। বড্ড ভেজাল মানুষ আপনি।
আরিফ ভাবতে লাগলো,
— এইখানে কোনো ভোট হচ্ছে না তাহলে এই মেয়ে জাল ভোট কিভাবে দেখলো। মেয়েদের কথার আগা গোড়া ঠিক নেই কিছু বললেই ঝগড়া লাগবে তারচে বরং কিছুক্ষণ কথা বলি। শালার ফয়সালটাও এলো না এখনও। কোথায় ওর হবু বউ সাজেক যাচ্ছে আগে ওর আসা উচিৎ কিন্তু এখন ও নিজেই হাওয়া। এখন যদি বলা হতো কোথায় দরবারে যেতে হবে সময় মতো ঠিকই চলে আসতো। আমি নিশ্চিত এই ছেলের কখনো বিয়ে হবে না।
আরিফের ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে অরিন বলে উঠলো,
— আমার পথ ছাড়েন বলছি।
— যদি না ছাড়ি কি করবে?
— জানেন আমি কে? আমি কিন্তু ফয়সাল আহমেদের গার্লফ্রেন্ড।
অরিন নিজেকে আরিফের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা কথাটা বলল। আরিফ ভাবলো এই মেয়েই তাহলে সেই বাঘিনী। আরিফ আদিবাকে দেখেনি তাই অরিনের কথা বিশ্বাস করে মুখটা আঁধার করে রাখলো। প্রথম দেখাতেই একটু বেশিই ভালো লেগেছিল মেয়েটাকে কিন্তু এই মেয়ে তার ভাবী ইসসসসসস ভাবতেই ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। তবুও মনটা শক্ত করে বলল,
— সরি সরি ভাবী আমি বুঝছি। আসসালামু আলাইকুম ভাবী। কোনো সমস্যা হচ্ছে আপনার?
অরিন কিছুটা ভাব নিয়ে মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো। আরিফ তখন ফোন লাগালো ফয়সালের নাম্বারে….
— হ্যালো বল, কোথায় তুই?
— শালা, এক ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি কোথায় তুই?
— আর বলিস না আসার পথেই শুরু হলো গ্যাঞ্জাম তাই দেরি হচ্ছে। পাঁচ মিনিটের ভিতর চলে আসবো।
— তাড়াতাড়ি আয়। বাই দা ওয়ে ভাবীর সাথে দেখা হয়েছে। তোকে বলছিলাম না একদিন রাতে এক মেয়েকে ভীষণ ভালো লাগছে সেই তোর হবু বউ মানে আমার না হওয়া গার্লফ্রেন্ড।
— বাজে বকিস না। তুই চিনবি কিভাবে আদিবাকে?
— ভাবী নিজেই তো আজকে বলেছে সে নাকি ফয়সাল আহমেদের গার্লফ্রেন্ড। দেখ ভাবী তোকে ভালোবাসে কিন্তু মুখে বলে না। কি সুইট দেখতে ভাবী।
— শালা নজর দিবি না। আসছি আমি। দেখে শোনে রাখ তোর ভাবীকে।
ফয়সাল ফোন কেটে দিলো। অন্যদিকে আরিফ ছ্যাকা খেয়ে ব্যাঁকা মার্কা মুখ নিয়ে অরিনকে খুঁজতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। কথা বলার সময় অরিন কোথায় গিয়েছে সে জানে না। বেস্ট ফ্রেন্ডের একটা মাত্র হবু বউ বলে কথা দেখে শোনে তো রাখতে হবে তাই না?
পাঁচ মিনিট হয়ে যাবার পরেও আসছে না অরিন। কিছুক্ষণের মাঝেই বাস ছেড়ে দিবে। জানালা দিয়ে উঁকি ঝুঁকি মেরেও কোনো খুঁজ মিলছে না অরিনের। আদুরী বসে বসে চিপস খাচ্ছে। হঠাৎ করেই ফয়সাল এসে সিট থেকে আদুরীকে কোলে নিয়ে সে সিটে বসে পড়লো। আদুরী ও আদিবা ভ্রু জোড়া নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
— সমস্যা কি এইখানে বসেছেন কেন?
— আমার ইচ্ছা।
আদুরী বলে উঠলো,
— মামার বাড়ির আবদার পেয়েছ। এক্ষুনি কোল থেকে না নামালে হিসু করে দিবো বলে দিলাম।
— বাহ বাহ ছোট শালী দেখি ধানি লংকা। ওকে দেও হিসু করে তাহলে আমিও ভিডিও করে ফেসবুকে দিয়ে বলব, দেখেন এত বড় মেয়ে এখনও হিসু করে তখন কি হবে তোমার? রাস্তা ঘাটে মুখ দেখাতে পারবে?
আদুরী রেগে গিয়ে ফয়সালের চুল টেনে ধরে বলল,
— বড্ড পঁচা তুমি। দেখতে জিরাফের যমজ ভাই।
— কি খাবে চিপস নাকি চকোলেট?
আদুরী একবার বড় বোনের দিকে তাকিয়ে ফয়সালের কানে ফিসফিস করে বলল,
— ওই তুমি কাকে পটাতে এসেছো? আমাকে নাকি আপুকে?
ফয়সালও ফিসফিস করে বলল,
— দুইজনকেই।
— ওকে আপুকে পটাতে সাহায্য করব তবে তার জন্য তোমাকে অনেক কিছু করতে হবে। প্রচুর গিফট, মজা দিতে হবে।
— ওকে ওকে দিবো। এখন পটাতে সাহায্য করো।
আদুরী মনে মনে হাসল। মনের ভিতর দুষ্টুমি ভরপুর হয়ে উঠেছে তার। বিড়বিড় করে বলল,
— আমাকে অপমান করেছো তার শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে দুলাভাই। পটাতে ঠিকই সাহায্য করবো কিন্তু তোমার অবস্থা নাজেহাল করে ফেলব। যদি বিয়ে হয় তাহলে তো সারাজীবনই শায়েস্তা করতে পারবো। আমার ভিডিও আপলোড দিবে তাই না, দেখো তোমার এমন এমন পিক তুলবো আর আপুকে বলে ভাইরাল করবো কল্পনায়ও করতে পারবে না। পাজি দুলাভাই।
অন্যদিকে ফয়সাল ভাবছে,
— একবার তোমার বোনকে বিয়ে করি তখন আমার চুল ধরে টানার প্রতিশোধ নিবো। বাসর রাতে ভাইরা ভাইকে আটকিয়ে রেখে তোমাকে শায়েস্তা করবো, বড় হয়ে প্রেম করতে চাইলে তখন শুধু ছ্যাকা খাওয়াবো। তখন বুঝবে দুলাভাই কি জিনিষ হুহহ।
আদিবা তখন চেঁচিয়ে উঠে বলল,
— আমার ফ্রেন্ড বসেছে এইখানে উঠুন বলছি।
— উঠবো না কি করবে? আমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে বসবো ওকে।
আদিবা ভাবলো কিছুক্ষণ। ভাবনার জগত থেকে একটা কথাই রিপ্লাই আসছে,
— বসতে দে আদু। তাহলে তো তোরই লাভ। সুন্দর সুযোগটি হাত ছাড়া করিস না পাগলী।
আদিবা কিছু না বলে জানালার দিকে মুখ এনে বসে রইলো। আদুরী ফয়সালের কোলে এখনও। তারা দুজন ফিসফিস করে কথা বার্তা বলছে যেন আদিবা না শোনে।
বেশ কিছুক্ষণ পর অরিন বাসে উঠলো তার পিছনে আরিফ। অরিন একবার পিছনে আরেকবার সামনে তাকিয়ে কিছুটা ভয় পেয়ে আটকে উঠলো। আরিফের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হেসে দিয়ে বলল,
— আমার উনি চলে আসছে এখন আপনি যেতে পারেন।
ভ্রু জোড়া কুচকালো আরিফ। উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখলো অন্য একটি মেয়ের সাথে বসে আছে তার প্রাণ প্রিয় বন্ধু। অরিনের সাইড কাটিয়ে ফয়সালের সামনে এসে দাঁড়ালো আরিফ। স্ল্যাং ভাষা ইউজ করে বলল,
— বা** ল তুমি গার্লফ্রেন্ড রেখে এখন অন্য মেয়ের সাথে বসেছো। খালি আমার চরিত্রের দোষ ধরিস এখন যে তোর চরিত্র কেমন সেটা চেয়ে দেখ। আমি তো তাও লুকিয়ে লুকিয়ে চার পাঁচটা প্রেম করি আর তুই, তুই তো সামনা সামনি। এমন চরিত্র থাকলে কোন মেয়ে প্রেমে পড়বে তোর?
আরিফের কথা ফয়সালের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। অরিন বুঝতে পারছে আরিফ আর ফয়সাল যে একে অন্যকে চিনে। দাঁত দিয়ে আঙ্গুল কামড় দিয়ে আদিবাকে ইশারা করে বলল সে যে একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছে।
ফয়সাল বলল,
— পাগলের মত কিসব বলছিস স্পষ্ট ভাবে বল।
আরিফ কিছু বলতে যাবে তার আগে অরিন এমন একটি কাজ করে বসলো যাতে আরিফের চোখ কপালে। রসগোল্লার মতো চোখগুলো তাকিয়ে আছে অরিনের দিকে,
চলবে,