দূরত্ব part:11

0
2658

দূরত্ব
part:11
#writer:Maliha Islam Tafsi (jeba)

রাহাত আর প্রীতি গাড়ি তে বসে আছে। রাহাত ড্রাইভ করছে। প্রীতি জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাহিরের সৌন্দর্য উপভোগ করছে আর রাহাত প্রীতির দিকে কিছুক্ষণ পর পর তাকিয়ে তার বেগুনী পরীর সৌন্দর্য উপভোগ করছে।।

-আচ্ছা পুচকি ☺
-কিইইইইই?
-না না পুচকি না প্রীতি?
-???
-হাসছো যে?
-আপনার মুখ টা দেখে।।
-আমার মুখ টা দেখে হাসার কি হলো? (ভ্রু কুঁচকে বলল রাহাত)
-আমি যখন রাগ দেখাইছি তখন আপনার মুখ টা ভয়ে একদম বাচ্চাদের মতো হয়ে গিয়েছিল।
(কথা টা বলে আবার হাসতে লাগল প্রীতি)

-এইভাবে সবসময় হেসো বেগুনী পরী। তোমার দুঃখজনক মুখ টা আমাকে খুব কষ্ট দেয় আর তোমার হাসিজনক বুক টা আমার হৃদয়ে শান্তির ঢেউ এনে দেয়।(ড্রাইভ করছে আর সামনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল রাহাত)


রাহাত এর কথা শুনে প্রীতি আবার জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইল একদম নিশ্চুপ হয়ে।এইভাবে কিছুক্ষণ নিরবতা রইল দুজনের মাঝে।
নিরবতা ভেঙে রাহাত আবার প্রীতি কে ডাক দিলো।
প্রীতি বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলল- বলুন ?
:
-ফুচকা খাবে?

(রাহাত জানে প্রীতি ফুচকা খেতে খুব পছন্দ করে। কারন সে তার বেগুনী পরী টা কে প্রথম ফুচকা খাওয়া দেখেই প্রেমে পরেছিল । তার পরীটা যখন ফুচকা খাচ্ছিল তখন পরী টার মুখ টা আরো সুন্দর লাগছিল )

-না খাবো না।(রাহাত এর দিকে না তাকিয়ে বলল প্রীতি)
-কেনো খাবে না?
-ভালো লাগছে না।
-তুমি জানো আমাকে ফুচকা খাওয়ায় কেউ হারাতে পারে না । আমি মেয়েদের চেয়ে বেশি ফুচকা খায়।
-তাই নাকি?
-হুম,,,তাই।
-তাহলে চলুন কম্পিটিশন হয়ে যাক।
-চলো।



রাহাত আর প্রীতি দুইজনে ত্রিশ টা করে মোট ষাট টা ফুচকা খেলো?। কেউ কাউকে হারাতে পারলো না। প্রীতি আর রাহাত গাড়িতে এসে বসল।
-বাব্বা,,,,আপনি এতো ফুচকা খেতে পারেন? (প্রীতি)
-হুম। আমার কাছে ফুচকা অনেক ভালো লাগে। আগে লাইক করতাম না কিন্তু একদিন একটা ফুচকা পাগলি কে দেখে ফুচকার প্রেমে পরে গেলাম ।
-কে সেই ফুচকা পাগলি? (হেসে জিজ্ঞেস করল প্রীতি)
-আমার পাশেই বসে আছে ফুচকা পাগলি টা। যার ফুচকা খাওয়া দেখে আমি ফুচকার প্রেমে পরে গেছি।

রাহাত এর কথায় লজ্জা পেয়ে প্রীতি আর কিছু বলল না। গাড়ি এসে প্রীতিদের বাসার কাছে পৌছালো । প্রীতি আর গাড়ি থেকে নেমে ব্যাগ গুলো নিয়ে নিলো। তারপর দুজনে মিলে উপরে চলে গেল।
প্রীতির মা রান্না ঘরে রান্না করছে মেয়ে আর জামাই আসবে তাই। প্রীতির বাবা সোফায় বসে পেপার পড়ছে। হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজে তিনি গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। প্রীতি তার বাবাকে দেখে জরিয়ে ধরল বাবা বলে। তার বাবা ও মেয়ে কে দেখে খুশিতে চোখের জল ফেলতে লাগলেন।




বাবা মেয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে খুশিতে কাদছো আর আমার জামাই টা কে দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখেছ কাজ টা কিন্তু ভালো করো নাই তোমরা ।
প্রীতির মায়ের কথায় প্রীতি..বাবা..রাহাত.. মা সবাই হেসে দেয়। রাহাত ভিতরে এসে প্রীতির বাবা মার পা ছুঁয়ে সালাম করল।

-আচ্ছা তোরা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আমি নাস্তার ব্যবস্থা করছি।(প্রীতির মা)
-মা এখন আমরা কিছু খাবো না।(প্রীতি)
-কেন রে মা?খাবি না কেন? (প্রীতির বাবা)
-বাবা তোমার জামাই আসার সময় আমার সাথে ফুচকা নিয়ে কম্পিটিশন করেছিল।
-কে জিতল? (প্রীতির মা)
-কেউ নয় মা। আমাদের মধ্যে ড্র হয়েছে।(রাহাত)
-কি বলো জামাই তুমি এতো ফুচকা খেতে পারো?আমার মেয়ে তো ফুচকা পাগলি।।তুমিও কি আমার মেয়ের মতো ফুচকা পাগল নাকি? (প্রীতির বাবা)

প্রীতির বাবার কথা শুনে সবাই আবার হো হো করে হেসে উঠল।



প্রীতি আর রাহাত প্রীতির রুমে আসল। নিরব বাসায় নেই । নিরব বাসায় আসলে সবাই কে একসাথে গিফট গুলো দেওয়া হবে।
প্রীতি রুমে এসে রাহাত কে বলল আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আগে তারপর আমি ফ্রেশ হবো।
রাহাত প্রীতির কথায় আগে ফ্রেশ হতে গেল। প্রীতি বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগল-

আমরা মানুষ চিনতে কতো ভুল করি। যে আমাদের সত্যিকারে ভালোবাসে তাঁদের ভালোবাসা আমরা কখনও বুঝি না আর যে মিথ্যা ভালোবাসে আমরা তাদের একটু ভালোবাসার জন্য তাঁদের পিছনে ছুটে চলে যায় । রোহান শেখ আর ছুটবো না তোমার মিথ্যে ভালোবাসার পিছনে। আর রাহাত এর মতো এতো ভালো মানুষ টা কে ও ঠকাবো না আমি। হে আল্লাহ,,,আমাকে একটু রহমত করো। আমি যে জীবনে দুটানায় পড়ে আছি । আমার যে কারো মনে কষ্ট দেওয়ার একটু ও ইচ্ছে নেই। আমি যদি দূরে চলে যাই তাহলে আমার পরিবার রাহাত এর পরিবার রাহাত সবাই কষ্ট পাবে। আমি তাঁদের কষ্ট দিতে চাই না। আমি যেনো রাহাত কে স্বামীর অধিকার দিতে পারি।আমার কষ্টের জন্য আমি অন্য কাউকে কষ্ট পেতে দিবো না। রোহান ভালো থাকুক নাজিফা কে নিয়ে আর আমি যেনো ভালো থাকতে পারি রাহাত কে নিয়ে ।



কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ দুটো বন্ধ করল প্রীতি।
-কি হলো ফ্রেশ হবে না?
রাহাত এর কথায় প্রীতি চোখ খুলে রাহাতের দিকে তাকিয়ে বলল -হু,,,
প্রীতির এক সেট থ্রি পিচ নিয়ে চলে গেল ফ্রেশ হতে। রাহাত ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমে গিয়ে নিরব আর বাবার সাথে আড্ডা দিতে লাগল।সাথে নিহা ও।
প্রীতি ও ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমে আসল। ও নীল কালার এর একটা থ্রি পিচ পড়েছে। রাহাত মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রীতির দিকে।
ওফফফ,,,এই মেয়ে টা একদম ঘায়েল করে দিয়েছে আমাকে।(মনে মনে বলল রাহাত)



নিহা প্রীতি কে দেখে জরিয়ে ধরে বলল-কেমন আছিস?
-ভালো।
-তুই কেমন আছিস?
-ভালো।
-তুই এইসময় আমাদের বাসায় ব্যাপার কি? (হেসে বলল প্রীতি)
-তুই এসেছিস শুনে আসলাম।(ভেংচি কেটে বলল নিহা)
-তুই কোথায় শুনলি যে আজকে আমি আসবো?
-নিরব ভাইয়ার কাছ থেকে রাস্তায় শুনলাম

-নিরব ভাইয়া???? (মূচকি হেসে বলল প্রীতি)
-তা নয়তো কি?
-বুঝেছি এইবার তোকে ভাবি বানিয়ে আনতেই হবে।
-ইশশশ,,,চুপ থাকবি তুই?
-হু,,,

রাহাত এর প্রীতি মিলে সবাই কে গিফট গুলো দিল। আর নিহার জন্য ও একটা গিফ্ট আনল রাহাত। প্রীতির তো খেয়ালই ছিলো না। প্রীতি মনের অজান্তেই বলতে লাগলো সত্যি আপনি খুব ভালো রাহাত।।।।

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here