দূরত্ব part:12

0
2478

দূরত্ব
part:12
#writer:Maliha Islam Tafsi (jeba)

সবাই মিলে ডিনার করল। ডিনার শেষে রাহাত রুমে এসে প্রীতির রুম টা খুব ভালো করে দেখতে লাগল। অনেক সুন্দর করে সাজানো প্রীতির রুম টা। এমনিতেই মেয়েরা অনেক গুছালো হয়। হঠাৎ প্রীতির পড়ার টেবিলের দিকে নজর গেল রাহাত এর। ঐখানেই গিয়ে রাহাত অসংখ্য গল্পের বই দেখতে পেল। একটা বই হাতে নিয়ে অনেক মুগ্ধ হলো রাহাত। সবগুলো বই এর নাম গুলো দেখল । এর মধ্যে একটা বই হাতে নিয়ে বইটা খুলল রাহাত। বই টার প্রেমাতাল। অনেক শুনেছি এই বইটার নাম বাট কখনও পড়া হয় নি মনে মনে বলল রাহাত।
বইটা খুলে অবাক হলো রাহাত একটা চিরকুট দেখে। চিরকুট টা খুলে পড়তে লাগল-

কলিজা তোমার ভালোবাসার মানুষের দেওয়া খুব স্পেশাল একটা গিফট। আশা করি তোমার খুব ভালো লাগবে আর তোমার কাছে আমার দেওয়া সবচেয়ে বেষ্ট গিফট মনে হবে। তোমার সবচেয়ে পছন্দকরে লেখক মৌরি মরিয়ম এর বই?


লেখাটা দেখে মুচকি হাসল রাহাত তার মানে পুচকি টার প্রিয় লেখক মৌরি মরিয়ম । তার জন্য মৌরি মরিয়ম এর লেখা অভিমানিনী ,,তোমায় হৃদ মাঝারে বই ও দেখি আছে। তারপর হঠাৎ খেয়াল হলো রাহাত এর একটা কথা কলিজা তোমার ভালোবাসার মানুষের দেওয়া স্পেশাল একটা গিফট। তার মানে প্রীতির কারো সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল?প্রীতি অন্য কাউকে ভালোবাসে?তাহলে প্রীতি আমার সাথে বিয়েতে কেনো রাজি হলো? বিড়বিড় করে কথাগুলো বলল রাহাত।


বাকি বইগুলো ভালো করে দেখতে লাগল রাহাত কিন্তু বাকি গুলোতে আর এমন চিরকুট নেই।
তাহলে আমি কি ভুল বুঝছি প্রীতি কে? (মনে মনে বলল রাহাত)
তবুও সে ভালো করে আবার বইগুলো ঘাঁটতে লাগল। কিছু না পেয়ে বইগুলো গুছিয়ে রেখে দিল ঠিক আগের মতো। হঠাৎ তার নজর পড়ল বইগুলোর একদম নিচে রাখা একটা ডায়েরির দিকে। সে ডায়েরি টা নিতে যাবে তখনি প্রীতি রুমে আসল।

-কি করছেন?
-কিছু না। এইতো ল্যাপটপে আমাদের বিয়ের পিক দেখছি।
-ওহ,,,আচ্ছা । কফি খাবেন?
-হু,,,
-ওকে আমি নিয়ে আসছি। আর শুনুন।
-বলো,,,
-ছাদে যাবেন?
-ওকে,,,আমি যাচ্ছি তুমি কফি নিয়ে এসো।
-ওকে।।।


রাহাত ছাদে গিয়ে শুধু ওই চিরকুট এ লিখা কথাগুলো নিয়ে ভাবতে লাগল । যেভাবেই হোক জানতে হবে কেন প্রীতি আমাকে মেনে নিতে পারছে না আর কেনোই ও অন্য কাউকে ভালোবাসলে আমার সাথে বিয়েতে রাজি হলো?

-এই যে আপনার কফি। আপনার মতো এতো ভালো করে বানাতে পারি না আর কেমন হয়েছে জানাবেন।
-হুম,,,
রাহাত কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল-খুব ভালো হয়েছে।
রাহাত এর কথার স্টাইল টা কেমন যেন অন্য রকম লাগছে এখন প্রীতির কাছে।

-আচ্ছা আপনার কি কোনো কারণে মন খারাপ?
-আচ্ছা প্রীতি তুমি কি আমায় পছন্দ করো?
-আপনাকে না পছন্দ করার মতো কি আছে?সবাই তো আপনাকে খুব পছন্দ করে।
-আমি সেইভাবে বলি নাই।
-কিভাবে বলেছেন? (কফি কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল প্রীতি)
-আচ্ছা রোহান আর আমার মধ্যে কে বেশি স্মার্ট?
-,,,,,,,,,,,
;
;
রাহাত এর এমন প্রশ্ন শুনে মনের মধ্যে কেমন যেন ছ্যাত করে উঠল প্রীতির।
রাহাত আপনি ভালো । শুধু ভালো না খুব ভালো। আর আপনি খুব স্মার্ট ও কিন্তু আমার চোখে যে রোহান ই আমার দেখা সবচেয়ে স্মার্ট ছেলে। সবার চোখে নিজের ভালোবাসার মানুষই সবচেয়ে সুন্দর হয়। হোক না রোহান এর ভালোবাসা অভিনয় কিন্তু আমার ভালোবাসা যে সত্যি। পারছি না বের হতে এই ভালোবাসার মায়া জাল থেকে। যতইভাবি এগিয়ে যাবো আপনার হাত ধরে ততই বেশি মন জুরে থাকে রোহান শেখ(মনে মনে বলল প্রীতি)



প্রীতির খেয়াল হলো রাহাত এমন প্রশ্ন কেনো করল?ওনি কি তাহলে আমার আর রোহানের ব্যাপারে জেনে গেছে?না এইটা তো সম্ভব না কারণ আমি রোহান নিহা ছাড়া সম্পর্কের কথা তো কেউ জানে না। আর নিহা তো কখনও বলবে না। আমি হয়তো একটু বেশিই ভাবছি।


রাহাত প্রীতি কে ডেকে বলল কি হলো কিছু বলছো না যে?
-আপনারা দুই ভাই খুব স্মার্ট । কারো থেকে কেউ কম নয়।
রাহাত প্রীতির কথায় হাল্কা হেসে বলল-ছাদে অনেক ঠান্ডা চলো রুমে চলো। ঘুমাবো।
-ওকে চলুন।।

রাহাত রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
মাঝখানে কোল বালিশ রেখে তারপর প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল-বেগুনী পরী আজ অনেক ঠান্ডা ফ্লোরে ঘুমাতে পারবো না আর তোমার রুমে তো সোফা নেই তাই মাঝখানে কোল বালিশ রাখলাম। প্লিজ একটু এডজাস্ট করে নিও।
কথাগুলো বলে রাহাত অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পড়ল। প্রীতি আর কোনো কথা না বলে ঘুমিয়ে গেল।


সকাল হলে প্রীতির ঘুম ভেঙে গেলে প্রীতি ওঠে রাহাত কে বিছানায় দেখল না। তারপর দেখল ওয়াশরুমে ও নেই। পরে ভাবলো হয়তো ছাদে গেছে। ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমে গিয়ে দেখল বাবা চা খাচ্ছে । তারপর প্রীতি দেখে একটা চিরকুট প্রীতির দিকে এগিয়ে দিল তার বাবা। প্রীতি তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল কি এইটা বাবা?

– জামাই দিতে বলল তোমাকে।
-কেনো?ওনি কোথায়?
-বলে গেলো একটা কাজে নাকি যাচ্ছে ।

প্রীতি চিরকুট টা খুলে দেখল – বেগুনী পরী একটা কাজে বাহিরে যাচ্ছি তোমাকে না বলেই যেতে হলো তুমি ঘুমিয়ে ছিলে তাই।

প্রীতি চিরকুট টা নিয়ে রুমে চলে গেল। কারণ তার চিরকুট নিয়ে কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেল। বাবার সামনে চোখের জল ফেলতে চায় না তাই রুমে চলে আসল।


রাহাত এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে একজনের মুখোমুখি । আজ তার চোখে হাজারো প্রশ্ন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টা ঠিকি বুজতে পারছে।।।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here