দূরত্ব part:14

0
3100

দূরত্ব
part:14
#writer:Maliha Islam Tafsi (jeba)

প্রীতি তার বাবা মা কে বুঝিয়ে নিচে আসল। এসে দেখল রাহাত গাড়িতে বসে আছে।রাহাত কে খুব চিন্তিত আর কেমন যেন দুঃখজনক দেখাচ্ছিল।

প্রীতি গাড়িতে গিয়ে বসে রাহাত এর দিকে তাকিয়ে বলল–
-আজকে তো আমাদের থাকার কথা ছিল হঠাৎ চলে যাচ্ছেন যে?
-অফিসের জরুরি কিছু কাজ ছিল।(গম্ভীর গলায় বলল রাহাত)
-আচ্ছা আপনার কি কোনো কারণে মন খারাপ?
-না….

যেই মানুষ টা এতো শান্তশিষ্ট থাকে সে আজকে এমন গম্ভীর ভাবে কথা বলছে আর ভিতরে ভিতরে কেমন রাগ আর কষ্ট চেপে রেখেছে মনে হচ্ছে (মনে মনে বলল প্রীতি)

আমি কি পারব আমার রোহান এর কথাটা রাখতে?আমি কি পারবো প্রীতি জোর করে আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করতে?রোহান কেন দিলি এমন কসম আমায়?তোর প্রীতি যে শুধু তোকে ভালোবাসে আমাকে নয় (মনে মনে বলল রাহাত)

-আপনার সাথে একটা কথা ছিল? (প্রীতি)
রোহান সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে করতে বলল -কি কথা বলো?
-জানিনা আপনি কি ভাববেন? তবু ও আমার বলা জরুরি ।
-প্রীতি কি তাহলে আজকের ওর আর রোহান এর ভালোবাসার কথা বলবে?ওর কথা শুনে আমি নিজের কষ্ট চেপে রাখতে পারব? (মনে মনে রাহাত)
কি কথা বলবা তাড়াতাড়ি বল?
?
-আসলে রিহার ব্যাপারে কিছু বলতে চাই। আপনি তো আমার চেয়ে ভালো পিয়াশ ভাই কে চিনেন আপনার তো খুব ভালো ফ্রেন্ড ।
-হুম,,,তো? (অবাক হয়ে রাহাত)
-রিহা আর রাহাত ভাইয়া একে অপরকে ভালোবাসে । পিয়াশ ভাইয়া তো কানাডা চলে যাবে তাই চাইছিল সামনের সপ্তাহে রিহা কে তাঁদের বাড়ির বউ বানিয়ে নিতে।

প্রীতির কথা শুনে রাহাত ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।
-কি হলো আপনি এইভাবে তাকাচ্ছেন কেন? (ভয়ে ভয়ে প্রীতি)
-রিহা কে বলো পিয়াশ যেন কালকে ওর মাকে নিয়ে বাসায় আসে বিয়ের কথা পাকা করতে।
(সামনের দিকে তাকিয়ে বলল রাহাত)

-আমি জানতাম আপনি রাজি হয়ে যাবেন। রিহা শুনলে অনেক খুশি হবে।(মুচকি হেসে বলল প্রীতি)



প্রীতি আজ খুব খুশি কারণ সে পেরেছে চারজন ভালোবাসার মানুষ কে সারাজীবন এর জন্য এক করে দিতে। হে,,,,সে আজ তার মা বাবার কাছে নিরব আর নিহার কথা ও বলেছে। তার ফ্যামিলি খুব খুশি নিহার মতো মেয়ে ছেলের বউ হিসেবে পাবে জেনে।
প্রীতি নিজের ভালোবাসার মানুষকে পাই নি বলে কি হয়েছে চারজন ভালোবাসার মানুষ কে এক করতে পেরেছে ভেবে মনের মধ্যে একরকম শান্তি বিরাজ করতে লাগল তার।।।।।
?

গাড়ি এসে শেখ বাড়ির সামনে থামল। প্রীতি আর রাহাত দরজার কাছে আসতেই না আসতেই আফসানা বেগম দৌড়ে আসলেন বড় ছেলের কাছে।
-কিরে তোরা চলে এলে যে এতো তাড়াতাড়ি? (প্রীতির শাশুড়ি )
-তোমাকে খুব মিস করছিলাম তো তাই চলে এসেছি(মুচকি হেসে আফসানা বেগম কে জরিয়ে ধরে বলল প্রীতি)

আফসানা বেগম রাহাত এর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল রোহান আসে নি?ও কি সত্যি চলে গেছে?
রাহাত এর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না কষ্টে তার বুক টা ফেটে যাচ্ছে ভাই টার জন্য চিৎকার করে মাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। তবুও তার বুক ফাটা কষ্ট টাকে চেপে রেখে মায়ের উদ্দেশে বলল—
:
-মা ও ঘুরতে গেছে কিছুদিন এর জন্য । আমি ওর সাথে ভালোভাবে কথা বলেছি। তুমি কিছু চিন্তা করো না। ওর ঘুরাঘুরি শেষ হলেই চলে আসবে লন্ডন থেকে। যখন আসবে তুমি ওর সাথে কথা বলে নিও।(মিথ্যে হাসার অভিনয় করে বলল রাহাত)
-ঠিক আছে। তোরা রুমে গিয়ে রেষ্ট কর ।
-ঠিক আছে মা।


প্রীতি আর রাহাত রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিল। রাহাত রেডি হয়ে নিল। রাহাত কে দেখে প্রীতি বলল
-আপনি কোথায় ও যাচ্ছেন?
-হুম,,,,
-কখন আসবেন?
-আসলে তো দেখবাই।
-এইভাবে কথা বলছেন কেন?
-জানিনা।।।।।
প্রীতি আর কিছু বলল না রাহাত রুমথেকে বেরিয়ে চলে গেল।
প্রীতি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল রোহান লন্ডন কি সত্যিই ঘুরতে গেছে?কারণ তার যতটুকু মনে আছে রোহান একবার বলেছিল ও দেশের বাহিরে কোথায় ও যাওয়া পছন্দ করে না। একবার যখন প্রীতি হানিমুনে সুইজারল্যান্ড যাওয়ার কথা বলেছিল তখন সে বলেছিল যে তারার দেশের বাহিরে কোথায় ও হানিমুনে যাবে না রাঙামাটি যাবে।।
হে আল্লাহ,,,,আমি রোহান কে ভুল বুঝছি না তো??ওর ভালোবাসা যে কখনও আমার কাছে অভিনয় মনে হয় নি। তাহলে কি আমি ভুল বুঝছি আমার রোহান কে? (কথাগুলো ভাবতে ভাবতে প্রীতির চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়তে লাগল)



পুরো বিকাল প্রীতি রিহার সাথে কথা বলে কাটিয়ে দিল। রিহা খুব খুশি প্রীতির মুখ থেকে ওর বিয়ের কথা শুনে। অপরদিকে নিহা ও খুব খুশি প্রীতি কে ফোন দিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলল।
?

রাত নয়টা বেজে গেছে কিন্তু রাহাত এখনও বাসায় ফিরে নি। আফসান বেগম একবার কল দিয়েছিলেন তখন বলেছিল যে অফিসের কাজে ব্যস্ত আছে।তাই প্রীতি আর কল দেয় নি। কিন্তু অনেক রাত হয়ে গেছে তাই প্রীতি বাধ্য হয়ে অনেকগুলো কল দিল রাহাত কে কিন্তু রাহাত কল ধরছে না।
প্রীতি চিন্তায় পড়ে গেল কোথায় গেল মানুষটা?কল ও ধরছে না এখনও বাসায় ফিরছে না কেন?বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রীতি রাহাত এর জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। সে রাহাত কে ভালো না বাসুক কিন্তু রাহাত তো তার স্বামী । আর স্ত্রী হিসেবে স্বামীর জন্য এতটুকু চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক ।


প্রীতি গাড়ির শব্দে নিচে তাকাল। রাহাত গাড়ি দেখে প্রীতি নিচে গিয়ে দরজা খুলে দিল বাকি সবাই ঘুমিয়ে আছে তাই। গাড়ি থেকে অচেনা একটা ছেলে বের হয়ে রাহাত কে ধরে ধরে নিয়ে আসল। প্রীতি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রাহাত এর কি হলো?
ছেলেটা প্রীতির কাছে এসে বলল-
ম্যাম আমি স্যার এর পিএ।।। স্যার কে আমি কখনও দেখি নি নেশা করতে কিন্তু স্যার আজ অনেক বেশি নেশা করেছে.।
প্রীতি ছেলেটার কথাগূলো শুনে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে-একি শুনছে সে রাহাত ড্রিঙ্কস করেছে..কেউ দেখার আগে রাহাত কে রুমে নিয়ে যেতে হবে.।।।


প্রীতি আর ছেলেটা মিলে রাহাত কে রুমেএনে শুয়ে দিল। ছেলেটা চলে গেল। প্রীতি রাহাত এর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল-
কি হয়েছে আপনার আপনি এতো ড্রিঙ্কস করেছেন কেন রাহাত???আপনার কি কোনো কারণে কষ্ট হচ্ছে?


রাহাত প্রীতির কথায় পাত্তা না দিয়ে প্রীতি কে বিছানায় শুয়ে দিল। প্রীতির উপর নিজের শরীরের পুরো ভর ছেড়ে দিল। প্রীতি চিৎকার করে বলতে লাগল রাহাত কি করছেন আপনি?প্লিজ আপনার হুশ নেই ছেড়ে দিন আমায়। জোর করে কোনো কিছু হয় না রাহাত। প্লিজ আমার এতো বড় ক্ষতি করবেন না।

কিন্তু রাহাত প্রীতির কোনো কথায় শুনল না । নেশার ঘোরে রাহাত প্রীতির মধ্যে ডুব দিল। প্রীতির চোখ দিয়ে শুধু জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।


চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here