দূরত্ব part:16

0
4230

দূরত্ব
part:16
#writer:Maliha Islam Tafsi (jeba)

?

একমাস পর,,,,,,
পুরো শেখ বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একমাস আগেও কতো হাসি খুশিতে মেতে ছিল পুরো শেখ বাড়ি । শেখ বাড়ির প্রীতির বাবার বাড়ির মানুষ সব আজ হসপিটালে ।

আফসানা বেগম কেঁদেই যাচ্ছে। কারো আজ কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা নেই। শেখ বাড়ির দুই ছেলে রোহান আর রাহাত আজ মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।

প্রীতি হাসপাতালে একটা বেঞ্চে বসে আছে পাথর এর মতো। আজ সে পাথর হয়ে গিয়েছে। সে আজ বুঝতে পেরেছে কেন রোহান তাকে রাহাত এর হাতে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু সে দিনের পর দিন রোহান কে ভুল বুঝেছে । আজ খুব ঘৃণা হচ্ছে তার নিজের প্রতি। নিহা সেই কখন থেকে প্রীতি কে ডাকছে কিন্তু সেইদিকে কোনো খেয়াল নেই তার।


আজ বিকেলে যখন রোহান ড্রইং রুমে বসে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছিল তখন সে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেল। সবাই রীতিমতো ভয় পেয়ে যায় রোহান এর এই অবস্থা দেখে। রাহাত সাথে সাথে ডাক্তার কে ফোন দিয়ে বলল তখন ডাক্তার জানাল রোহান কে অপারেশন না করালে রোহান বাঁচবে না আর অপারেশন করালেও বাঁচার চান্স আছে কিনা সেটা অপারেশন করানোর পরই বুঝা যাবে। ততক্ষণে বাসার সবাই জেনে গেল রোহান এর ব্রেইন টিউমার অনেক আগে থেকেই কিন্তু সে কাউকে জানায় নি। প্রীতি রোহান এর এই অবস্থা দেখে সবার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ল। রাহাত প্রীতি কে সামলে নিয়ে রোহান কে নিয়ে হসপিটালে গেল।



বাড়ির সবাই রাহাত এর সাথে হসপিটালে আসল। প্রীতি নিহা কে জরিয়ে ধরে কাঁদছে শুধু । নিহা অনেক বুঝালো প্রীতি কে যে এই অবস্থায় কান্না করলে এইভাবে শরীর খারাপ হবে। কিন্তু প্রীতির রোহান এর এই অবস্থা সহ্য হচ্ছিল না খুব কষ্ট হচ্ছিল তার। রাহাত হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে কোথায় যেন চলে গেল। নিজের কষ্ট চেপে রাখতে পারছিল না রাহাত। একটা জায়গায় নিরবে কতক্ষণ বসে আবার হসপিটালের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ল সে কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস চিন্তিত হয়ে গাড়ি চালানোর কারণে ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেল তার গাড়ি। আর আজ সে ও লড়াই করছে মৃত্যুর সাথে।

??
একজন নার্স ওটি থেকে বেরিয়ে আসল। নার্স কে দেখে আফসানা বেগম এগিয়ে গিয়ে বলল আমার বড় ছেলের কি অবস্থা?
-মেম,,,এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। ওনার অবস্থা খুব খারাপ আর এখন ওনাকে কেবিনে শিফট করা হবে।

কিছুক্ষণ পর রাহাত কে কেবিনে শিফট করা হলো।দুই ভাইয়ের এই অবস্থার কথা শুনে রিহা ছুটে আসল হসপিটালে । মাকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে সে। হঠাৎ সে প্রীতির কাছে গিয়ে বসল,,,,,
-ভাবী,,,,,,
প্রীতি একটু ও নড়ছে না। রোহান আর রাহাত এর এই অবস্থা দেখে একদম পাথর এর মতো হয়ে গেছে সে।
রিহা প্রীতি কে ধরে ঝাঁকিয়ে বলল-
-এইটা নাও।রোহান ভাইয়া দিতে বলেছিল তোমাকে। আমি তোমার আর রোহান ভাই এর ব্যাপারে সবকিছু জানি ভাবি। আমি জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে । একদিকে ভালোবাসার মানুষ একদিকে স্বামী । প্লিজ তুমি নিজেকে শক্ত করো ভাবি।(কথাগুলো বলে রিহা কেঁদে দিল)

প্রীতি কাগজ টা হাতে নিয়ে খুলে পড়তে লাগল–
?


– হেই কলিজা,,,কলিজা বললে ভুল হবে আমার পুরো লাইফ তুমি প্রীতি। মাফ করে দিও আমাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমার ভাবি হতে বাধ্য করেছি তোমাকে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি যা করেছি সব তোমার ভালোর জন্য করেছি। আর রাহাত ভাইয়া তোমাকে সবসময় আগলে রাখার চেষ্টা করেছে। কখনও তোমাকে কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করে নি রাহাত ভাইয়া । আমি ভাইয়া কে বলেছি তোমাকে যেন জোর করে হলেও ওনাকে ভালোবাসতে বাধ্য করে। আমি চাই না তুমি সারাটাজীবন আমাকে ভালোবেসে কষ্ট পাও। আমি চাই তুমি রাহাত ভাই এর সাথে যেনো সুখে থাকো সারাজীবন। আমার অনিশ্চিত জীবনে তোমাকে জরিয়ে কষ্ট দিতে চাই নি। যেইদিন থেকে জেনেছি আমি আর বাচবো না সেইদিন থেকে আস্তে আস্তে তোমাকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। আমাকে ঘৃণা করতে বাধ্য করেছি। আর নাজিফার সাথে আমার বিয়ের মিথ্যে অভিনয় করেছি। নাজিফা আমাকে সাহায্য করেছে তোমাকে দূরে সরানোর জন্য। রিহা সবকিছু জেনে ফেলেছিল । ওর কাছে আমি এই কাগজ টা দিয়ে বলেছিলাম এইটা যেনো একমাস পর তোমার হাতে দেই। আমি আর থাকবো না তোমাদের মাঝে কিন্তু স্মৃতি হয়ে থাকবো আজীবন । প্লিজ রাহাত ভাই কে কষ্ট দিও না ভালো থেকো সারাজীবন ।


লিখাগুলো পড়ে প্রীতি কাগজ টা বুকে নিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। রিহা আর নিহার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল—

-কেনো বুঝলাম না আমি রোহান কে??কেন ভুল বুঝলাম আমি রাহাত কে?একজন কে ও বুঝতে পারলাম না আমি। কারো ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার নেই আমার।

রিহা প্রীতি কে পানি খাইয়ে দিল। প্রীতির শরীর অনেক খারাপ হয়ে গেছে। আফসানা বেগম প্রীতির দিকে তাকিয়ে কাঁদতে লাগল আর বলতে লাগল—


-মেয়ে টা কতো কষ্ট পেয়েছে কিন্তু কখনও মুখ ফুটে কিছু বলে নি। আজ ও কতো কষ্ট সহ্য করছে। আল্লাহ কেন আমার দুই ছেলেকে আজ এমন অবস্থায় এনেছে। আমার ছেলে দুইটা চোখের সামনে আজ মৃত্যুর সাথে লড়ছে।


কিছুক্ষণ পর একজন নার্স এসে বলল রাহাত সবাইকে কেবিনে ডাকছে,,,,,,,,
সবাই কেবিনে গিয়ে রাহাত এর দিকে তাকিয়ে কাঁদতে লাগল।রাহাত তার মায়ের হাত টা ধরে বলল-রোহান এর কি অবস্থা?
-এখনও ডাক্তার রা ওটি থেকে বের হয়ে আসে নি।
-তুমি কেঁদো না মা আমি রোহান দুইজনই ভালো হয়ে যাবো খুব তাড়াতাড়ি ।

আফসানা বেগম আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে লাগল।
রাহাত প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল-একটু কাছে এসে বসবে?
প্রীতি রাহাত এর কাছে গিয়ে বলতে লাগল—

-আপনি আমাকে ক্ষমা করে দেন আমি না বুঝে অনেক কিছু বলেছি। অনেক কষ্ট দিয়েছি অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। আপনি সুস্থ হয়ে ফিরুন আর কখনও আমি এমন করবো না।(কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বললপ্রীতি)

-তুমি ও আমাকে ঐ রাত এর জন্য ক্ষমা করে দিও। আর নিজের খেয়াল রেখো। কান্না করলে তোমার আর আমার সন্তানের ক্ষতি হবে।(হাল্কা হেসে বলল রাহাত)

-আমি জানি আপনি ইচ্ছে করে করেন নি। আপনি সুস্থ হয়ে আসুন এইসব নিয়ে পরে কথা হবে।

-সবাই একটু বাহিরে যাবে আমার বাবা আর মার সাথে কিছু কথা আছে।

সবাই বাহিরে চলে আসল। অপরদিকে ডাক্তার ওটি থেকে বেরিয়ে এসে বলল রোহান এর অবস্থা খুব খারাপ । রোহান এর বাঁচার চান্স খুবই কম। ডাক্তার এর কথা শুনে প্রীতি কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ হয়ে পড়ল।

চলবে,,,,,,

(আগের পর্বে যেই মিসটেক টা হয়েছিল সেটার জন্য আমি খুব দুঃখিত । আসলে রিহার বিয়ে সামনের সপ্তাহে না সামনের মাসে ঠিক হয়েছিল । টাইপিং এ মিসটেক হয়েছিল। আর প্লিজ বানান অথবা অন্য কোনো ভুল ত্রুটি থাকলে নিজরা একটু বুঝে পড়ে নিবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here