দূরত্ব part:2

0
4747

দূরত্ব
part:2
#writer:Maliha Islam Tafsi (Jeba)

আজ থেকে রোহান আমার সম্পর্কে দেবর আর আমি ওর ভাবি।

বাবা আমার হাত টা রাহাত এর হাতে দিয়ে বললেন আমাকে যেন সবসময় ভালো রাখে। আমি যেন কোনো কষ্ট না পাই। সত্যিই কি কোনো কষ্ট পাব না আমি?মনের বিরুদ্ধে গিয়ে সারাক্ষণ রোহান এর সামনে ওর ভাবি হয়ে থেকে কি সুখে থাকতে পারব আমি?

হঠাৎ খেয়াল করলাম রাহাত আমার হাত টা খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে। এতে আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছিল তাই হাত টা বার বার ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম রাহাত হয়তো তা বুঝতে পেরে আমার হাত টা আলতো ভাবে ছেড়ে দিল।
আমার কানের কাছে ওর মুখ টা এনে বলল খুব সুন্দর লাগছে আমার বউ টা কে একদম পরীর মতো।

কিন্তু ওর কথায় আমার একটু ও ভালো লাগছে না। আমার চোখ দুটো শুধু আমার ভালোবাসি মানুষ কে খুঁজছিল । আচ্ছা আমি কোনো অপরাধ করছি না তো এখনও নিজের ভালোবাসার মানুষ টা কে খুঁজে? কিন্তু আমি যে কখনও রাহাত কে ভালোবাসতে পারব না।

আমরা একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে হাতে হাত রেখে বলেছিলাম যে সারাজীবন একে অপরের হয়ে থাকব। কেউ কাউকে কখনও ছেড়ে যাবো না। তাহলে আজ কেন তুমি এমন করলা রোহান?কেন ঠেলে দিলে আমাকে কষ্টের দিকে?তুমি কি জানো না তোমাকে ছেড়ে একটা মুহূর্ত কাটানো ও অনেক কষ্টকর আমার জন্য? (মনে মনে)

কথাগুলো ভাবতে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছিল । বিদায়ের সময় বাবা কে জরিয়ে ধরে অনেক কাদলাম । মা আমাকে জরিয়ে ধরে বলল আমি যেন নিজেকে ভালোভাবে মানিয়ে নেই ঐ পরিবারে।
আরও কষ্ট হচ্ছিল এইটা ভেবে কিভাবে থাকব আমি ঐ বাড়িতে । সারাক্ষণ রোহান কে চোখের সামনে দেখলে তো যন্ত্রণায় মরে যাব।

গাড়িতে বসে বসে রোহান আর আমার স্মৃতি গুলো মনে করে কাদছিলাম ঠিক সেই মূহূর্তে রাহাত আলতো ভাবে আমার কাঁধে হাত রেখে বলল বাড়ির জন্য মন খারাপ লাগছে?

-,,,,,,,,,,

-কেঁদো না । আমরা তো আবার যাবো কয়েকদিন তোমার বাবার বাড়ি তে। এখন থেকে আমার পরিবার কে তোমার নিজের পরিবার ভাবতে হবে প্রীতি । প্লিজ আর কেঁদো না। তুমি কাদলে খুব খারাপ লাগে আমার ।

ওনার কথায় পাত্তা না দিয়ে আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। রাহাত বাড়ি তে পৌছে গেলাম আমরা । আমি গাড়ি থেকে নামতে যাবো সেই মূহূর্তে রাহাত আমাকে কোলে তুলে নিল। আমি বললাম কি হচ্ছে?নামান আমাকে সবাই দেখছে তো।

ওনি আমার দিকে হাসি দিয়ে বললেন- নামাবো না। আমার অনেক বছরের শখ এইটা যে আমি আমার বউ কে কোলে করে বাড়ির মেইন দরজা পর্যন্ত নিয়ে যাব।

আমি ওনার কথা শুনে অবাক হলাম আর কিছু বললাম না। ওনি আমাকে সদর দরজায় এনে কোল থেকে নামিয়ে দাঁড়িয়ে রইল আমার সাথে আমার হাত টা ধরে। আমার শাশুড়ি আমাকে খুব আদর করে বরণ করে নিলেন আর আমাকে জরিয়ে ধরে কপালে একটা চুমু একে দিয়ে বললেন লক্ষী একটা ছেলের বউ পেয়েছি আমি। আমার শশুড় ও পাশ থেকে বললেন ঠিক বলেছ তুমি একদম।

আমি যেই না বাড়ি তে ঢুকাল জন্য পা বাড়ালাম তখন একটা মহিলা বললেন দাঁড়াও প্রীতি । তুমি এইভাবে বাড়ি তে ঢুকতে পারবে না। আমি ওনার কথায় খুব ভয় পেয়ে গেলাম।

ওনি এমন কেন বলছে আমি কি কোনো অপরাধ করে ফেলছি যার জন্য আমাকে বাড়িতে ঢুকতে নিষেধ করছে?? ভয়ে আমার মুখ টা চুপসে গেল।

পাশ থেকে রাহাত বলল আমার বউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না কেন ভাবি???

মহিলা টা নাকি ওর চাচাতো ভাইয়ের বউ তাই ও ভাবি বলল। সবাই ওর কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠল । আর ভাবি আমার গালে হাত দিয়ে বলল-

দেখ দেখ প্রীতি তো আমার কথায় একদম ভয়ে চুপসে গেছে।
কথাটা বলে ভাবি আবার হাসল।

আমার শাশুড়ি পাশ থেকে বলে উঠলেন তোরা আর আমার ছেলে আর ছেলের বউ কে জালাবি না একদম।
একটা মেয়ে কে ডেকে বলল যাও তোমার রোহান চাচ্চু কে ডেকে নিয়ে আস। মেয়ে টা দৌড়ে ওপরে চলে গেল রোহান কে ডাকার জন্য ।

একটু পর রোহান নেমে আসল। ওকে দেখে আমার বুকের মধ্যে ওতাল পাতাল ঝড় ভয়তে শুরু করল। চোখে পানি চলে আসছিল । কোনো ভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করলাম। রোহান এর চোখ দুটো পানিতে ভরে আছে। আর কেউ না বুঝুক আমি তো বুঝি ওর মনের অবস্থা । ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাভ ও এতক্ষণ কান্না করছে।




রোহান আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে আচমকা কোলে তুলে নিল। আমি অবাক হয়ে গেলাম। আর পাশে সবাই হাসতাছে আর বলতাছে দেবর ভাবি কে তো একসাথে সেই লাগতাছে। আর কোলে তুলে নেওয়ার স্টাইল টা কিন্তু অনেক ফাইন হইছে।

রোহান আমাকে ভিতরে এনে সোফায় বসিয়ে দিল। আমি এখনও অবাক হয়ে রোহান এর দিকে তাকিয়ে আছি।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here