দূরত্ব part:3

0
3822

দূরত্ব
part:3
#writer:Maliha Islam Tafsi (Jeba)

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি রোহান এর দিকে কিন্তু রোহান একটি বার ও আমার দিকে তাকালো না।ভাবি আমাকে বললেন- প্রীতি তুমি কি ভয় পেয়ে গেছ?

-না ভাবী,,,, (মাথা নিচু করে)
-এইটা আমাদের পরিবারের নিয়ম যে নতুন বউ কে তার দেবর কোলে করে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করবে।

আচ্ছা অনেক কথা হয়েছে আর কালকে কথা বলিস বউমা অনেক ক্লান্ত । তোরা ওকে রাহাত এর রুমে দিয়ে আয়।(রাহাত এর মা)

ভাবী আর আমার ননদ (রাহাত এর ছোট বোন রিহা ) মিলে আমাকে রাহাত এর রুমে দিয়ে গেল।রুমটা খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। গোলাপ রজনীগন্ধা ফুলের ঘ্রাণে সুরভিত হয়ে আছে পুরো টা রুম। বিছানার মাঝে খুব সুন্দর করে লিখা রাহাত +প্রীতি । গোলাপ আমার পছন্দ আর এইভাবে আমার বাসর ঘর সাজাতে হবে সেই কথাটা আমি সবসময় রোহান কে বলতাম । তাহলে কি এইভাবে রোহান সাজিয়ে দিয়েছে আমার আর রাহাত এর বাসর ঘর টা???ও কিভাবে পারল এটা করতে???

আমার পছন্দ মতো বাসর ঘর হলেও আমার কাছে তা বিষ এর মতো লাগছে। আমি আর পারছি না। হে আল্লাহ আপনি আমাকে এই কষ্ট সহ্য করার ধৈর্য দান করুন আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে ।
বিছানায় এক কোণায় ঘুঁটিসুটি মেরে বসে রইলাম ।
দু চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে অঝোর ধারায় রোহান আর আমার স্মৃতি গুলো ভেবে,,,,,,
.
.
.
এক্সকিউজ মি..আমাকে একটা টিকেট দিন কুমিল্লা যাওয়ার ।

-ওকে মেম,,,

-টিকেট টা যেন জানালার পাশে হয়।

– সরি ম্যাম,,, জানালার পাশে টিকেট তো নেই । আর বাসে সব সিট ফুল মাত্র একটা টিকেট ই আছে। আপনি চাইলে দুইঘন্টা পর আরেকটা বাসে যেতে পারেন। ওই টা তে সিট খালি আছে।

– না না আমি এখন যেই বাস টা ছাড়বে ওই টা দিয়েই যাবো। যেই একটা সিট আছে ঐটার টিকেট দেন।

-ওকে ম্যাম ,,,,,

প্রীতি: একটা ছেলে আমার পাশের সিট টা তে জানালার পাশে বসা যেইভাবেই হোক ছেলে টা কে উঠিয়ে আমার বসতে হবে।( মনে মনে)
এই যে ভাইয়া,,,,,,

ছেলেটা মুখ থেকে বই সরিয়ে প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল,,,

-জ্বী,,,আমাকে বলছেন?
-হুম,,,,,একটা সাহায্য করবেন?
-এত সুন্দর করে বলে আমার সিট টা দখল করার চিন্তা তাই না?
-সয়তান ছেলে কিভাবে বুঝল যে আমি ওনার সিট টায় বসতে চাই (মনে মনে)
আসলে ভাইয়া আমি না জানালার পাশে না বসলে বমি হয় তো আপনি যদি আমাকে আপনার সিট টা দিয়ে একটু সাহায্য করতেন এই বোন টা কে(আমতা আমতা করে বললাম )
– বমির বাহানা একদম দিবা না। মেয়েরা বাসে উঠলেই জানালার পাশের সিট টা তে বসার জন্য এরকম বাহানা দেখানো শুরু করে। আর আরেকটা কথা তুমি আমার কোন জন্মের বোন হও হে?????
নেক্সট টাইম এরকম যেন আর না শুনি। চুপচাপ নিজের সিটে বসো।(ধমক দিয়ে )

কি অসভ্য ছেলে। সয়তান ছেলে। বান্দর,,,,আমি অপরিচিত হয়েও আমাকে তুমি করে বলে।সয়তান????(মনে মনে বলে বসে পড়লাম কিন্তু আমার অসহ্য লাগছে জানালার পাশের সিট টা ছাড়া যেভাবেই হোক ঐ সিট টাই আমার চাই)

-আচ্ছা ভাইয়া,,,,,
-???
-সরি সরি,,,,আর ভাইয়া বলব না(ভয়ে)আপনার নাম টা বলেন তাহলে আমি না হয় আপনার নাম ধরেই ডাকব।
– রোহান শেখ।
-কী?
-আমার নাম রোহান শেখ (চেঁচিয়ে )
-ওফফফ,,,,কানের পর্দা টা মনে ফাটিয়ে ফেলছে..অসভ্য ছেলে(মনে মনে)
-তোমার নাম কী?
-আমার নাম নুসাইফা আহমেদ প্রীতি ।
-ওহ,,,,,
-হুম
– তুমি কোথায় যাচ্ছ?
– ঢাকাতে ফুফির বাসায় বেরাতে এসেছিলাম এখন নিজের বাসায় কুমিল্লা যাচ্ছি ।আপনি?
– আমি ও কুমিল্লা যাচ্ছি আমার বাসায় । আর ঢাকায় থেকে আমি পড়াশোনা করি।
-ওহ,,,কিসে পড়েন?
-অনার্স থার্ড ইয়ারে কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে । তুমি?
-আমি অনার্স ফাস্ট ইয়ারে নতুন ভর্তি হয়েছি ।
-কোন ডিপার্টমেন্ট?
-ম্যাথমেটিক্স ।

এইভাবে কতক্ষণ কথা চলল। বাস একটা রেসটুরেনট এর কাছে থামল।

– আচ্ছা আপনি কিছু খাবেন?(রোহান )
-না,,,,,
-ওকে,,,

রোহান বাস থেকে নেমে রেস্টুরেন্টে গেল । সুযোগ টা হাত ছাড়া করা যাবে না প্রীতি বসে পড়। কিন্তু এইটা কি ঠিক হবে? হবে হবে বসে পড় জানালার কাছে সিট ফাঁকা আছে সুযোগ টা মিস করা যাবে না.. ( মনে মনে ভাবলাম )

তাড়াতাড়ি করে রোহানের সিট টায় বসে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে থাকার ভান ধরে থাকলাম যেন রোহান কিছু বলতে না পারে।।।

রোহান এসে আমার সিট টায় বসে পড়ল।
আচ্ছা সয়তান টা কিছু বলছে না কেন?এত চুপচাপ হয়ে আছে কেন?? (মনে মনে)
এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর ঘুম ভেঙে আমি নিজেকে রোহান কাঁধে আবিষ্কার করলাম। তার মানে এতক্ষণ ওনার কাঁধে মাথা দিয়ে শুয়ে ছিলাম।।। ইসসস,,,,, কি লজ্জাজনক বিষয়,,,,,

কিছুক্ষণ পর রোহান চোখ মেলে আমার দিকে তাকালো । ওনার চোখে চোখ পড়তেই আমি মাথা নিচু করে বললাম
-আসলে,,,,,বাইরে থেকে বাতাস আসছিল আর খুব ভালো লাগছিল বাতাস টা তাই আপনার সিটে বসে পড়লাম আর কখনও যে চোখ লেগে গেছে বুঝতে পারি নি।
-ইটস ওকে, ,,, (হাসি দিয়ে )

আমি লজ্জায় আর কথা বললাম না। কুমিল্লা এসে দুইজন বাস থেকে নেমে গেলাম। হঠাৎ রোহান পিছন থেকে প্রীতি বলে ডাক দিল,,,

-বলুন,,,
-আমাকে কী তোমার ফেসবুক আইডির নাম টা বলা যাবে?
– হুম,,,,,
এইভাবে রোহান এর সাথে রেগুলার চ্যাটিং,,,,ফোনে কথা বলা একসময় আমাদের ভালোবাসায় পরিণত হলো।।।

কথাগুলো ভেবে আবার কাঁদতে লাগলাম। হে আল্লাহ কেন এমন করলেন আমার সাথে???যাকে এত ভালোবাসি তার আর আমার মাঝে কেন এত দূরত্ব তৈরি করলেন? (কথাগুলো বলে আবারো কান্নায় ভেঙে পড়লাম)

দরজা খোলার আওয়াজে তাড়াতাড়ি নিজেকে ঠিক করে নিলাম। তাকিয়ে দেখলাম রাহাত আমার দিকে এগিয়ে আসছে,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,

(বানান ভুল হলে নিজেরা একটু বুঝে পড়ে নিবেন । আর যাঁরা বলেছেন রোহান প্রীতি কে কোলে নিয়ে ঠিক করে নি তাঁদের বলছি এইটা অনেক পরিবারের নিয়ম দেবর ভাবি কে কোলে করে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায় । আপনাদের যদি এই নিয়ম টা খারাপ লেগে থাকে তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আমি আপনাদের সামনে এই নিয়ম টা শুধু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আর ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here