দূরত্ব part:9

0
2296

দূরত্ব
part:9
#writer:Maliha Islam Tafsi(Jeba)

ভাবী আসবো?
রিহার কথায় বালিশ থেকে মুখ তুলে মুখে হাসির রেখা টেনে বললো- আসো(প্রীতি )

রিহা এসে প্রীতির পাশে বসল

-তুমি কি ঘুমাচ্ছিলে ভাবী?সরি,,,আমার কারণে তোমার ঘুম ভেঙে গেল।
-না গো ননদীনী এমনিতেই শুয়ে ছিলাম। কিছু বলবা?
-আসলে ভাবী,,,,,,

প্রীতি রিহার দিকে তাকিয়ে দেখল রিহা ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে কোনো বিষয়ে । আর হাতে দুটো মুঠো করে রাখছে । প্রীতি মুচকি হেসে রিহার গালে হাত রেখে বলল-

-ভাবীর কাছে কিছু বলতে লজ্জা পেতে নেই।
-ভাবী তুমি তো আমাদের ফ্যামিলি সম্পর্কে আগে থেকেই জানো সবাই কে চিনো।
-হুম,,
-আচ্ছা ভাবী তুমি পিয়াশ ভাই কে চিনো?
-হু,,,তোমার রাহাত ভাই এর ফ্রেন্ড ।
-ভাবী,,,,, (রিহা ইতস্তত করে বলল)
-ভালোবাস তাকে? (মুচকি হেসে বলল প্রীতি)

প্রীতির কথায় রিহা চোখ বড় বড় করে বলল-
-হুম ভাবী,,,
-তাহলে এখন আমার তোমার জন্য কি করতে হবে ননদীনী?

রিহা প্রীতি কে সব খুলে বলল।
-ঠিক আছে আমি তোমার ভাইয়া কে বলব।
-সত্যি ভাবী? (একগাল হেসে)
-হুম সত্যি।
-আই লাভ ইউ সো মাচ আমার মিষ্টি ভাবী।
-আই লাভ ইউ টু ননদীনী ।

আচ্ছা এখন নিচে চলো সবাই মিলে আড্ডা দিবো।
ওকে চলো।



প্রীতি নিচে রান্না ঘরে গেল। গিয়ে দেখল তার শাশুড়ি রান্না করছে। প্রীতি কে দেখে আফসানা বেগম মুচকি হেসে বলল-
কিরে ঐখানে দাঁড়িয়ে আছিস যে আয় ভিতরে আয়।
প্রীতি ভিতরে এসে দাঁড়াল ।

-মা আমাকে বলুন আমি আপনার হেল্প করতে চাই রান্নার কাজে
-আমাকে তোর মা ভাবিস তো?
-হুম ভাবী।
-তাহলে আর কখনও বলবি না কাজ করার কথা। আমি আমার মেয়েদের দিয়ে কোনো কাজ করাবো না তারা হচ্ছে আমার রাজকন্যা । এতো সার্ভেন্ট কি আমার মেয়ে কে দিয়ে কাজ করানোর জন্য রেখেছি নাকি?তুই রুমে গিয়ে রেষ্ট নে। তুই আর রিহা হচ্ছিস আমার রাজকন্যা ।

কথা গুলো বলে প্রীতির কপালে ভালোবেসে একটা চুমু দিলেন আফসানা বেগম।

মা নতুন মেয়ে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছো তাই না?
রিহার কথা শুনে আফসানা বেগম প্রীতি দুইজন হাসতে লাগল।



পরেরদিন খুব সুন্দর করে সাজানো হলো প্রীতি কে। পুরো শেখ বাড়ি জাকঝমক ভাবে সাজানো হলো। আজকে রাহাত আর প্রীতির রিসেপশন পার্টি । সব মেহমান চলে আসছে। সবাই খুব সাজগোজ করে নিচে নেমে এল। পিয়াশ ও এসে রাহাত এর সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লাগল। রিহা বার বার দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে তার প্রিন্স টা কে। হঠাৎ আফসানা বেগম রিহার পাশে এসে দাঁড়াল ।

-কিরে কি করছিস?
-কই কিছু নাতো।
-আচ্ছা সব মেহমান চলে এসেছে আর প্রীতির ফ্যামিলি ও আসছে রাস্তায় আছে।
তুই গিয়ে প্রীতি কে নিচে নিয়ে আয়।
-ঠিক আছে মা।

প্রীতি তোকে তো আজকে বিয়ের দিনের চেয়ে ও বেশি সুন্দর লাগছে।
নিহার কথায় প্রীতি হেসে বলল তাই নাকি?
-হু,,,

রাহাত ভাই কে ও খুব সুন্দর লাগছে নিচে দেখে আসলাম।

নিহার কথায় প্রীতি কিছু বলতে যাবে তখনি রুমে রিহা প্রবেশ করল।
-ভাবী চলো। নিচে সবাই অপেক্ষা করছে।
-ওকে,,,,
-ভাবী আজকে তো রাহাত ভাই চোখই সরাতে পারবে তোমার থেকে । এতো বেশি সুন্দর লাগছে তোমায়। আসলে খুব খুব সুন্দর তুমি তাই তো আমার ভাই টা এতো ভালোবাসে তোমায়।

রিহা আর নিহা প্রীতি কে নিচে নিয়ে আসল। দুইজন মানুষ খুব গভীর চোখে প্রীতি কে দেখতে লাগল।
রাহাত মুচকি হেসে প্রীতির দিকে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিল । প্রীতি মুচকি হেসে রাহাতের হাত টা ধরল সবাই করতালি দিতে লাগল। প্রীতি আর রাহাত কে একসাথে বসানো হলো। সবাই এসে তাদের শুভেচ্ছা জানাতে লাগল ।

প্রীতির পরিবারের সবাই এসে প্রীতির কাছে বসল।
প্রীতির পরিবারের সবাই রাহাত এর পরিবারের সাথে কথা বলতে লাগল । প্রীতির ভাই এসে প্রীতির পাশে বসল-
-কেমন আছিস পুচকি? (মুচকি হেসে নিরব)
-ভাইয়া তুমি আমাকে সবার সামনে পুচকি ডাকছো? (ভেংচি দিয়ে )
-তুই আমার পুচকি তো পুচকি বলবো।

নিরব এর কথায় মুচকি হেসে রাহাত বলল ঠিক বলেছেন ভাইয়া আপনার বোনটা আসলেই পুচকি।

রাহাতের কথায় প্রীতি রাগি লুক নিয়ে রাহাতের দিকে তাকালো। রাহাত হাসি দিয়ে বলল এইভাবে রাগ করলে তো পুচকি টার মেকআপ নষ্ট হয়ে যাবে।
রাহাতের কথা শুনে নিহা রিহা পিয়াশ নিরব সবাই হাসতে লাগল।প্রীতি গাল ফুলিয়ে বলল দাঁড়াও ভাইয়া এইবার বাসায় যেয়ে নিই তোমার আর নিহার কথা কিন্তু মাকে বলে দিবো যদি আর পুচকি ডাকো।
-তাহলে তো আরও বেশি করে ডাকবো । বোন প্লিজ তাড়াতাড়ি বলিস মাকে এইবার তোর বান্ধবী টা কে বউ বানিয়ে নিয়ে আসতে ইচ্ছে করছে। হি হি হি,,,,

হাই এভরিওয়ান,,,,,

রোহান এর বাবার কথায় সবাই ওনার দিকে তাকালো।

-আপনারা সবাই জানেন আমার বড় ছেলে রাহাত শেখ এর বিয়ের রিসেপশন পার্টি আজকে। এই খুশির দিনে আমি আরও একটা খুশির এনাউনমেন্স করতে চাই,,,

কাম মাই বয় রোহান শেখ এন্ড কাম মাই সুইট গার্ল নাজিফা ।
সবাই নাজিফা নাম শুনে চমকে গিয়ে তাকালো। একটা খুব সুন্দর মেয়ে ব্লাক কালার একটা শাড়ি পড়া স্টেজের দিকে এগিয়ে গেল। সবার চোখ আটকে আছে তাতে। অনেক মায়াবী একটা চেহারার মেয়ে টার। আজ রোহান ও ব্লাক কালার পানজাবী পড়েছে। মেয়ে টা রোহানের পাশে গিয়ে দাঁড়াল । সবার চোখ তাঁদের দিকে।
প্রীতি কিছু বুজতে পারছে না। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে।

– নাজিফা হচ্ছে আমার ফ্রেন্ড এর মেয়ে । আপানারা হয়তো জানেন না নাজিফা আর রোহান এর এনগেইজমেন্ট ঘরোয়া ভাবেই পনের দিন আগে হয়েছিল । কিন্তু আমি এখন ওদের বিয়ের ডেট ঘোষণা করতে চাই। আগামী মাসে আমার ছোট ছেলের বিয়ে নাজিফা হক এর সাথে।



নাজিফা আর রোহান এর বিয়ের কথা শুনে একটা বড়সড় ধাক্কা খেল প্রীতি। এই কি শুনছে সে?তাহলে নিহা কাল ভুল কিছু বলে নি? রোহার আমার সাথে শুধু টাইম পাস করেছে। আমি তোমাকে বুঝিয়ে দিবো রোহান শেখ যে আমি তোমার জন্য আর কষ্ট পাই না। তুমি যদি আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে ঠকিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারো তাহলে আমি কেনো পারবো না রাহাত কে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়ে ভালো থাকতে????? (মনে মনে কথাগুলো বলল প্রীতি)

নাজিফা সবার সাথে কথা বলে প্রীতির দিকে এগিয়ে আসল-
-কংগ্রেস,,,
-থেংকস,,,
-তুমি খুব সুন্দরী ।
-আপনি তো আরও বেশি।
অনেক্ষণ প্রীতি আর নাজিফা হেসে হেসে কথা বলল।

দূর থেকে রাহাত এর বাবা মা তাদের দেখে বললেন-
আমরা খুব লাকি। এতো ভালো দুইটা ছেলের বউ পেয়েছি। আমার সংসার টা খুব পরিপূর্ণ এখন আর নাজিফা আসলে আরও পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
-ঠিক বলেছো।

অনুষ্ঠান শেষে সবাই চলে গেল। প্রীতি রুমে এসে ফ্রেশ হতে যাবে তখন কেউ ওর হাত ধরে টান দেয়,,,

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here