দেনাপাওনা পর্বঃ- ২য়

0
2513

দেনাপাওনা
পর্বঃ- ২য়
লেখাঃ- Md. Nazmul Huda

বাসায় গিয়ে সব কিছু গুছগাছ করে অন্য শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।মাঝ পথে যাওয়ার সময় নিলার বান্ধুবী আমাকে ফোন দিয়ে বললো নিলা সুইসাইড করেছে।

আমি নিলার সুইসাইড করার কথা শুনে নিলার বাবাকে ফোন দিলাম..

-আসসালামু আলাইকুম আংকেল!আমি নিলয় বলছি!আংকেল নিলার অবস্থা কি?

-নিলা অনেক গুলো ঘুমের ঔষধ খেয়েছে।সাথে ওর হাতের রগ কেটে ফেলেছে।ভাগ্য ভালো ওর বান্ধবী সময় মত এসে এই অবস্থা দেখেছে।ডক্টর ওয়াশ করে শরীর থেকে সব পয়জন বের করেছে।এখনো জ্ঞান ফিরেনি।

-আংকেল আমি নিলার জীবন থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি।চিন্তা করবেন না আমি নিলার জীবনে আর কখনোই ফিরবো না।তবে প্লিজ নিলার দিকে একটু খেয়াল রাখবেন।

নিলার বাবার সাথে কথা বলা শেষ করে গাড়ির জানালা থেকে ফোনটা বাহিরে ফেলে দিলাম।ফোন ফেলে দিলেই কি নিলাকে ভুলে যাওয়া যাবে?ওর মোবাইল নাম্বার আর সব কিছুই আমার মনে গেথে রয়েছে।নিলার চেহারা যে সব সময় আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে।

আজ কত বড়’ই না নিলাকে অপমান করলাম।নিলার কাছে ন্যুড বা এক জনের বাসায় গিয়ে ডেট করতে চলে গেলাম।নিজের শরীরে মাংস এখন নিজেরই চিবিয়ে ছিড়তে ইচ্ছা করতেছে।

টানা ছয় ঘন্টা গাড়িতে চলার পরে অন্য শহরে পৌছালাম।সেখানে গিয়ে বড় ভাইয়ের বাসায় উঠলাম।ভাই ভাবী আমাকে হঠাৎ দেখে অবাক হয়ে গেলেন।তাদের সাথে তেমন কথা না বলে ফ্রেশ হয়ে গেস্ট রুমে গেলাম।ভাবী আমার কাছে এসে বসলেন।আমার মন খারাপ তা ভাবী আগেই বুঝতে পেরেছে।আর হ্যা ভাবী আগে থেকেই নিলার ব্যাপারে জানতো।সে এসেই জিজ্ঞেস করলো..

-কিরে ছোটো!মন খারাপ কেনো?নিলার সাথে কিছু হয়েছে?

-ভাবী আমি আপাতত একা থাকতে চাই।আর প্লিজ তোমার কাছে আমার অনুরোধ নিলার কথা আমার কাছে কোনোদিন জিজ্ঞেস করবে না।তোমার দুইটা পায়ে পরি।

-আচ্ছা ঠিক আছে!এতোদূর থেকে এসেছো হাল্কা কিছু খেয়ে নাও।

-ভাবী আমি আপাতত কিছুই খাবো না।এখন তুমি যাও।

ভাবী রুম থেকে চলে গেলো।নিলাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে,জানতে ইচ্ছা করছে নিলা কেমম আছে?পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল বের করতে গেলাম।খেয়াল ছিলো না যে গাড়ি থেকে মোবাইল ফেলে দিয়েছি।শেষ সম্বল টুকু ফেলে দিলাম।নিলার নাম্বার মুখস্ত থাকলেও এই মুখে নিলাকে ফোন দেওয়ার সাহস নাই।

ধুরু কি ভাবতেছি?আমি তো আমার আর নিলার ভালোবাসা নিজ হাতেই কবর দিয়ে এসেছি।এমনকি নিলাকে মৃত্যুর কাছে ঠেলে দিলাম।আমার এই সব মানায় না।আমি একটা গেইমার।আমি ভালোবাসার মানুষটির কাছে ন্যুড চাইতে পারি।আমি তো অমানুষ।আমার আর কুকুরের মাঝে পার্থক্য কোথায়।অথচ কিছুদিন আগেও কেউ রেইপ করলে তার প্রতিবাদ করতাম।
আচ্ছা বলুন তো ন্যুড চাওয়া আর রেইপ করার মাঝে কি কোনো পার্থক্য আছে।উহু!কোনো পার্থক্য নাই।আজ আমি রেইপ করেছি নিলাকে।আমার শাস্তি পাওয়া দরকার।

ভাইয়ের বাসা থেকে বের হলাম।বাসা থেকে বের হওয়ার মূল উদ্দেশ্য একটা দুই টাকার ব্লেড কেনা!আরে ধুর আমি তো কাপুরুষ, ব্লেড আমি কিনবো কিভাবে?তার চেয়ে বরং এক প্যাক সিগারেট কিনে নেই!সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে ভালোবাসা ভ্যানিশ করে দিবো।না এটা ভালোবাসা না, ভালোবাসলে তো আজ নিলার এই অবস্থা হতো না।

সন্ধ্যার পরে আমার ভাইয়া বাসায় আসার পরে রাতের খাবার খেতে ডাইনিং টেবিলে বসলাম।খাবার খেতে খেতে ভাইয়াকে বললাম…

-ভাইয়া আমার জবটা ছেড়ে দিয়ে একে বারেই চলে এসেছি।আমাকে এখানে ছোটখাটো একটা চাকরি ম্যানেজ করে দাও তো।আর হ্যা ছোট একটা বাসা খুজেও দিও।তোমাদের বাসায় বা কতদিন থাকবো।

-নিলয় কিসব ফালতু বলতেছো?আমরা কি কিছু বলেছি?আর তুমি তো আমাদের বাসায় মাত্র কয়েক ঘন্টা আগেই আসলে।আগে কিছুদিন আমাদের বাসায় থেকেই দেখো?নাকি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছো?(ভাবী কথা গুলো বললো)

-নিলয় কিরে ভাই কি হয়েছে?বিয়ে সাধীর ইচ্ছা হইছে নাকি?হাহা!আমাদের তো দেখা উচিৎ ছিলো আমার ভাইটা বড় হয়ে গেছে।(ভাইয়া)

-ভাবী ভাইয়া,কি বলতেছো?জব তো আমার করা লাগবে তাই না?

-আচ্ছা খেয়ে নে।পরে কথা বলবো!

রাতের খাওয়া দাওয়া করে কাত হয়ে এক পাশে শুয়ে আছি।এরই মাঝে ভাইয়া ভাবি রুমে আসলো।আমাকে ভাইয়া ডাক দিয়ে উঠালো..

-নিলয় কি শুয়ে পরছিস?ওঠ আজকে আমরা গল্প করবো,অনেক দিন পরে আসলি আমাদের এখানে!
(ভাইয়ার ডাক শুনে শোয়া থেকে উঠে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলাম)
-হাহা!ভাইয়া গল্প!গল্প তো আমি বানিয়ে চিরতরে আমার শহর থেকে চলে এসেছি।শুনবে গল্প?তাহলে শুনো!
ভালোবাসি!একটা মেয়েকে বড্ড ভালোবাসি!ওর নাম নিলা।যার সাথে আমার পরিচয় আরো পাঁচ থেকে ছয় বছর হয়েছে।সেই কলেজ লাইফ থেকে আমরা রিলেশনে জড়িয়েছিলাম।খুব ভালোভাবে দিক কাল পার করতেছিলাম।সব দিক দিয়ে ঠিকঠাক ছিলো।নিলা সিদ্ধান্ত নেয় আমরা বিয়ে করবো।কতদিন আর এভাবে রিলেশন করে থাকবো।দুজনে সিদ্ধান্ত নেই আমাদের দুই পরিবারের সবাইকে জানাবো।নিলার পরিবার নিলাকে অনেক ভালোবাসে।নিলার ধারনা ছিলো আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবে ওর পরিবার।সেই ধারনা অনুযায়ী নিলার পরিবারকে জানায় আমাদের সম্পর্কের কথা।কিন্তু নিলার সেই ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে ওর বাবা আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারে না।আসলে নিলার বাবার কোনো দোষ ছিলো না।তিনি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে আমাদের ভালোবাসা মেনে নিতে পারেনি।নিলার বাবা ব্যাবসার পার্টনার এর কাছে অনেক টাকা দেনা হয়ে আছেন।নিলার বাবার ব্যাবসায় সেই পার্টনার সমস্ত টাকা দিয়ে তার ব্যাবসা দাড় করে দিয়েছে।কিন্তু তার সর্ত নিলাকে সেই পার্টনার এর ছেলের সাথে বিয়ে দিতে হবে।আর নিলার বাবার এখন এমন অবস্থা যে সেই টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার মত সামর্থ নাই।আর এই বিষয়টা নিলা যানতো না।তাই নিলার বাবার কথায় আমার নিলাকে ভুলে যেতে হয়েছে।নিলার কাছে আমি প্লেবয় হিসেবে পরিচিত হয়েছি।নারী জাতকে অসন্মান করেছি।
অনেক অপমান করেছি মেয়েটাকে।অনেক খারাপ খারাপ ব্যাবহার করে নিলার কাছে আমাকে ঘৃনার পাত্র হতে হয়েছে।আমার খারাপ প্রস্তাবেও নিলা রাজী হয়েছিলো।নিলার শরীর আমার কাছে বিলীন করতেও রাজী হয়েছিলো।একমাত্র নিলার ভালোবাসা প্রমান করার জন্য। আর এখন যে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লরছে নিলা।সুইসাইড করার জন্য হাতের রগ কেটেছে আর অনেক গুলো ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছে।আর কখনো নিলার সাথে যোগাযোগ হবে না।কখনো নিলার সামনেও যেতে পারবো না।ভাইয়া বলোতো একটা মেয়ের এতো কিছুর জন্য আমি তো একটা অমানুষ হয়ে গেলাম।আমার বেচে থাকার কি আদৌ কোনো অধিকার আছে?
এখন বলো ভাইয়া আমি কি করতে পারি?
আমাকে খারাপ বানানো ছাড়া নিলা কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কোনো উপায় ছিলো না।

-এতো কিছু কেন করতে গেলি ভাই আমার।এইসব করার আগে তো তুই অন্য কিছু ভাবতে পারতি বা আমরা ছিলাম আমাদের জানাতে পারতি।আমরা তো তোর অমতে যেতাম না!আচ্ছা চিন্তা করিস না।দরকার হলে নিলার বাবার পার্টনার এর কাছে নিলাকে ভিক্ষা চাবো।আমরা আছি তোর সাথে!

ভাইয়ার কথা গুলো ছিলো শান্তনামূলক কথা।নিজের মনকে শক্ত রাখতে পারছিনা কোনো ভাবেই।আমি তো কাপুরুষ ভালোবাসাকে জয়ী করতে পারলাম না।কি করলাম আমি?

কোনো এক ছুটিতে আমি ভাইয়া ভাবী নিলাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি।প্রায় সাত মাস পরে।ভাইয়ার বাসায় যাওয়ার কিছুদিন পরে ভাইয়া আমাকে একটা চাকরি ম্যানেজ করে দিয়েছে।আমি ভাইয়া ভাবীদের বাসায়ই আছি।গাড়ি ছুটছে আপন গতিতে।গাড়ির স্পিড যেনো কোনো ভাবেই বাড়ছে না।আমার বেহায়াপনা মনটা আর আমি কাপুরুষটা নিলার আকর্ষণে ছুটে চলছে।ফিরে পাবো কি আমার ভালোবাসাকে?নিলা আমাকে যে ভুল ভেবেছে,সেই ভুলটা ভাঙবে তো?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here