#দেবী,০৯,১০
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
৯ঃ
ঘনিয়ে আসছে সেই শুভ মুহূর্ত। সিরাজী মঞ্জিলে বিয়ের জাকজমক সাজ দেওয়া চলছে। দেশ এর অভ্যন্তরে সকল আত্মীদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে। শহর থেকে, গ্রাম থেকে নানা আত্মীয় স্বজনরা এসেছে। দু’দিন পর বিয়ে। বিয়ের পরের দিন সকল সিরাজপুর বাসী কে খাওয়ানো হবে। পুর্বপুরুষের যুগ থেকেই যে ভাবে বিয়ে হয় সেই নিয়ম এই বিয়ে হবে।
দুলাল সিরাজীর মেয়ে আসমা তার স্বামী, সন্তান দের নিয়ে এসেছে। আলেয়া,রোকেয়া রাও স্বামী সন্তান নিয়ে এসেছে।
হেলালের মা আসমাকে বললো,” আসমা তোমার আসতে কোনো অসুবিধা হয় নাই তো। সেই সক্কালে আইছো অথচ এই এখন তোমার লগে কথা হইলো।বুঝোই তো বাড়ির বড়ছেলের বিয়া অনেক ব্যস্ত আছি। তোমার বড় ভাইরে ও দেখতে হয়। তাই তোমারে যত্ন করতে পারুম কি না।”
আসমা বললো,” আরে ভাবি যত্ন তো মেহমান গো করা লাগে। এইডা তো আমার নিজের বাড়ি, আমার বাপের বাড়ি আপনাদের খেয়াল না রাখলেও চলবো।”
মালেকা এমন কথা শুনেও মুখে কিছু প্রকাশ করলো না। কিন্তু নিজের মায়ের অপমান সামিয়া সহ্য করতে পারলো না।তাই বলল,” হ্যাঁ ফুফুআম্মা ঠিক ই কইছেন। আমার ও বাপের বাড়ি। কিন্তু আফসোস আমার ও আপনার মতো কয়দিন পরেই চইলা যাওয়া লাগবো। শুধু থেকে যাবে এই বাড়ির সদস্যরা মানে মা -চাচিরা।”
আসমা চেতে উঠলো।বললো, ” বড়দের মুখে মুখে কথা কওয়া এই শিক্ষা দিতাছে তোর মা চাচিরা। আম্মা, আম্মা এক দিন হইলো আসি নাই তোমার নাতনি আমারে কথা শুনায়তাছে। ”
দাদিমা বললেন,” চুপ কর সবাই। আসমা তুইও চুপ থাক। ভাবি গো লগে মিলামিশা বাদ দিয়া কথা বাড়াস খালি। আমি কিন্তু অশান্তি চাই না। ”
আসমা বললো,” হ্যাঁ আমারেই তো কইবা। এতদিন আসি নাই কেউ একটু খোজ নিছে আমার। তাও তো কিচ্ছু কই নাই। আমার মাইয়া ডার লগে রুহুলের বিয়া দিতে চাইছিলাম তুমি কইছিলা তুমি নিজে বিয়া দিবা। কই গেলো তোমার দেওয়া কথা। কও আম্মা?”
দাদিমা এবার ঠান্ডা স্বরে বললো,”তর আব্বা রে যায়া জিগা। যেইডা জানোস না তা কইস না। তর মাইয়ারে যখন এই বাড়ির বউ কইরা আনতে চাইছি আনমু। হেলাল আর মহী এখনো আছে।”
আসমা আবারো বললো, ” কিন্তু আমার তো পারুলের জন্য রুহুল রে জামাই করতে চাইছিলাম। তুমিও কথা দিছিলা।”
–“পরিস্থিতি এখুন অনুকূলে নাই। সেইসব ভুইলা যা বিয়ার মজা কর। আর পারুলের বিয়া এই মঞ্জিলেই হইবো।”
–” ঠিক আছে আমি তোমার কথা মাইনা নিলাম। যদি পারুল এই বাড়ির বউ না হয় আমি সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করুম সিরাজী মঞ্জিলের লগে।” বলেই হন হন করে রানুকে দিয়ে সুভাকে খবর পাঠানোর জন্য বললো।
আসমার মেয়ে পারুল বললো,” নানিমা, তুমি আম্মার কথায় কিছু মনে কইরো না। জানোই তো কেমন।রুহুল দাদাভাই আমারে বোন ই ভাইবা আসছে। আমিও তাই তারে ভাই ভাবি। আম্মা শুধু শুধু কথা বাড়ায়। ”
দাদিমা নাতনির গালে হাত রেখে বললো,”তর নানার দুলালি তো তাই এমন করে। তয় মন ডা ভালা।”
সুভা এতক্ষণ ব্যস্ত থাকায় আসমা কে দেখে নি।রানুর থেকে শুনে আসমার কাছে গেলো। আসমা কে জড়িয়ে ধরলো সুভা। বললো, “আসমা, কেমন আছো তুমি”।
আসমা বলল,” বড়ভাবি,, ভালো আছি। আপনে কেমন আছেন,,ইশ কেমন হয়া গেছেন। বাড়িতে কি আর কেউ নাই বড়ভাইজান এর কাম এর জন্যে। আপনারে কি একা বিয়ে করছে নাকি।”
সুভা আসমা কে থামতে বললো, “আসমা এগুলা বলো না তো। আমি যতটুকু পারি করি বাকিরাও করে। তুমি বসো আমি তোমাকে শরবত এনে দেই।”
আসমা বললো,”তাইলে দুই গ্লাস আইনেন। আপনেও খাইবেন।”
এ বাড়িতে আসমা তার বাকি দুই ভাবিকে দেখতেই পারে না। তবে সুভাকে সে তার মায়ের মতো ভালোবাসে। তাই তো নিশ্চিন্তে পারুল কে রুহুলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যে নেই এই আফসোস আজীবন থাকবে আসমার।
_____________________
বিয়ের জন্য শাড়ির বিক্রেতারা ডালা ভরে শাড়ি নিয়ে আসলো সিরাজী মঞ্জিলে। ভারতের বেনারস থেকে বেনারসি এছাড়াও নানা শাড়ি নিয়ে এসেছে। দেশী কাতান,সিল্ক,জামদানি,তাঁতের শাড়ি ও আছে। কাকনের জন্য গায়ে হলুদ, বিয়ে, বৌভাত সকল দিনের জন্য শাড়ি পছন্দ করা হবে। সাথে নিজেদের জন্য ও সবাই যার যার মতো শাড়ি পছন্দ করছে।
সকলেই বসার ঘরে বসে শাড়ি দেখছিল। রুহুল যখন সে ঘরের পাশে দিয়ে যাচ্ছিলো শাড়ি দেখেই বুঝতে পারলো তার বউ এর জন্য শাড়ি দেখা হচ্ছে। রুহুল দরজার কাছে গেলো। দেখলো অনেক শাড়ি। তবে তার মধ্যে থেকে কোন শড়িটা পছন্দ করবে সেটা কঠিন। সব গুলোই সুন্দর। সবাই যখন ভেবে পেলো না রুহুল বললো, “আলেয়ার হাতের শাড়িটি সুন্দর। ”
রুহুলের কথা শুনে সবাই শাড়ির দিকে তাকালো। তারপর কন্ঠের সুচনা খুজতে রুহুলের দিকে। সকলেই হেসে দিলো। কেননা এর আগে সিরাজী মঞ্জিলের কোনো পুরুষ কোনো দিন নিজের হবু স্ত্রীর জন্য বিয়ের শাড়ি পছন্দ করে দেয় নি।
রুহুল এগিয়ে গিয়ে আবার বলল,”এই শাড়িটি সুন্দর।”
এই কথা বলেই রুহুল একটি শাড়ি হাতে নিলো। তার পর বসার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। রুহুল বেরিয়ে আসার পর আরেক দফা হাসাহাসি হলো। সেই সাথে রুহুলের পছন্দ করা শাড়িটিই বিয়ের দিন কাকনের জন্য রাখা হলো।
সুভা রান্না ঘরে কাজ করছিল। পিছন থেকে হালকা সুরমা রঙা শাড়ি জড়িয়ে দিলো রুহুল। তারপর বললো,”আম্মা,,আপনার জন্য এই শাড়ি টা। বিয়ের দিন এটা পড়ে আমার বউ কে নামাবেন আপনি। ”
সুভা শাড়ি সরিয়ে বললো,” আরে ছাড় তো খোকা। কাজ করছি জ্বা’লাস না আমাকে।”
–“আমি আপনাকে সারা জীবন জালাবো আম্মা।”
সুভা হেসে দিয়ে বললো,” হয়েছে সর তো। তোর আব্বাকে দুধ ভাত খাওয়াতে যেতে হবে ।”
রুহুল বললো,”আমিও যাবো চলেন একসাথেই যাই।”
_______________
বিছানায় শুয়ে আছে বিলাল সিরাজী। বাবাকে দেখে
রুহুল বলল,”আব্বা আব্বা,,আমি আপনার খোকা।”
কোনো ভাবান্তর নেই। বিলাল শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে।
সুভা স্বামীর শিউরে বসে বললো,”রুহুলের আব্বা দেখেন আপনার খোকা আসছে। আপনি কথা বলেন ওর সাথে। আপনার ছেলের বিয়ে শুক্রবারে। আপনি যাবেন না বরযাত্রী হয়ে।” বলেই কেদে দিল সুভা।
রুহুল নিজের মাকে শান্তনা দিলো,”আম্মা কাদবেন না। আপনাকে কিন্তু শক্ত থাকতে হবে। আপনারা দুজন ই যদি এমন করেন কি নিয়ে থাকবো বলেন।”
–‘তোর আব্বার কত সখ ছিল তোর বিয়ে নিয়ে। আর সবাই আনন্দ করবে আর তোর আব্বা এই ঘর টায় শুয়ে থাকবে আমার সহ্য হবো না রে খোকা।”
রুহুল মায়ের চোখের পানি মুছু দিয়ে বলল,”একদম কাদবেন না। বিয়ের ঝামেলা যাক দরকার হলে আব্বা কে বিদেশ নিয়ে যাবো। আমার আব্বা কে সুস্থ করেই ছাড়বো। ওনাকে সুস্থ হতেই হবে।
____________________
রাতে রুহুল কে দুলাল সিরাজী নিজ কক্ষে ডাকলেন। রুহুল গিয়ে দাদাজানের পাশে বসলেন।
দুলাল সিরাজী বললেন, “রুহুল, তুমি হইলা আমার সবচেয়ে আদরের নাতি। তোমার মুখে প্রথম দাদাজান ডাক শুনছিলাম। কান্ধে চড়ায়া ঘুরছি এই মঞ্জিলে। দেখো যা ই হইছে এতে তোমার আমার কোনো হাত ছিলনা। তয় তুমি কি আমার সিদ্ধান্তের প্রতি অসন্তুষ্ট হইছো। আমার মনে হইলো তোমার কাছে জানা উচিৎ। মাইয়া এতিম বইলা আবার নাজার না তো তুমি?”
রুহুল বললেন,” না দাদাজান আপনি তো আমার ভালোর জন্যই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।আর সে এতিম হোক অথবা ভিখারি হোক দুনিয়ার সকল মানুষ ই সমান। আমি নারাজ হইনি।”
দুলাল আবারো বলল,” কাকন বড্ড ভালো মাইয়া। তোমাগো দাম্পত্য জীবন সুখের হইবো আশা করি।”
–“আমিও ভালো আশা করছি।আশা করি সব ভালোই হবে। আর হ্যাঁ সবচেয়ে বড় কথা হলো সিরাজী বংশের মান-সম্মান, সদস্যদের চেয়ে বড় আমার কাছে কোনো কিছুই নয়। সেদিনের সিদ্ধান্তে আমি অত্যন্ত খুশি।”
দুলাল বলল,” জানি আমি। কেউ না বুঝলেও তুমি যে আমার বংশের জন্য আশীর্বাদ হেইডা আমি বুঝি। তুমি সর্বদা সিরাজী বংশের ভালো চাও। বিয়া ডা হোক তারপর শীতের শুরুতেই তোমারে সব দায়িত্ব দিয়া দিলে বাচি। আমার শরীর ভালো না। গায়ে জোর পাই না। তোমারে দায়িত্ব দিয়া নিশ্চিন্তে মরতে পারুম।”
রুহুল দাদার হাত ধরে বললো, “মরার কথা মুখে ও নেবেন না দাদাজান। আমি সব দায়িত্ব নিবো। তবে আপনাকেও আমার সাথে থাকতে হবে। আমি বেঁচে থাকতে সিরাজী মঞ্জিলের কারো কিছু হোক তা আমি মেনে নেবো না।”
_____________________
পরের দিন ও সিরাজী মঞ্জিলে মেহমানের আগমন হচ্ছেই। বাড়ির কাজের লোক সহ প্রহরী দের কেও হেনেস্তা হতে হচ্ছে। বার বার সবাইকে গেইট খুলে সালাম দিয়ে প্রবেশ করাতে হচ্ছে। এর সাথে ও খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে করতে বাড়ির লোকের সাথে কাজের মেয়েদের অবস্থা দফারফা।
সুর্য যখন ঠিক মাথা বরাবর ঠিক তখন ই সিরাজী মঞ্জিলে আগমন হল এক ভদ্রলোকের। প্রহরী রা সালাম দিয়ে গেইট খুলে দিলো। ভদ্রলোকটি সিরাজী মঞ্জিলে প্রবেশ করলো।
ঠিক তখনই বাগান থেকে বের হচ্ছিল সামিয়া।রুহুল এর বিয়ে উপলক্ষে হলুদের সাথে গোলাপের পাপড়ি বেটে মুখে লাগাবে। রুপচর্চা শুরু করে দিয়েছে সে। হঠাৎ কেউ ডাকলো, “এই মেয়ে শুনছো?” পিছন ফিরলো সামিয়া।
দেখলো একটি ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে। সামিয়া লোকটিকে পা অব্দি মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করল।শহুরে পোশাকে আসা এই লোককে সে আগে দেখে নি।তার চেনা জানা আত্মীয়ের মধ্যেও তো পড়েনা। তাই সে বললো, “জি,,,কি চাই,,,কার আত্মীয় আপনি হ্যাঁ,, সিরাজী মঞ্জিলে কি করছেন,,আপনারে তো আগে দেখি নাই?” ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে চোখ মুখ খিচে প্রশ্ন করলো সামিয়া।
বয়সে ছোট মেয়ের থেকে এমন কথা শুনে অবাক হলো বকুল। সেই সাথে একসাথে এত প্রশ্ন। সে তো তার বন্ধুর বিয়েতে এসেছিল। বললো,” জি আমি বকুল আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি আর রুহুল একসাথে লেখা পড়া করেছি। ও আমাকে চিঠি দিয়েছিল। দাওয়াত দিয়েছে তাই এসেছি। তুমি আমাকে চিনবে না।”
সামিয়া বললো, ” ওহ আপনে দাদাভাই এর বন্ধু।আগে কইবেন না। আসেন আমার সাথে। হুদাই আপনেরে বিনা দাওয়াতের মেহমান মনে করছিলাম আমি।”
বকুল বললো,”বিনা দাওয়াতের মেহমান মানে।আমি যথেষ্ট ভালো ঘরের ছেলে বিনা দাওয়াতে আসতাম না।”
সামিয়া লাগামছাড়া ভাব নিয়ে বলল,” সে ভালো কথা। আমি শুনতে চাই নাই।”
সামিয়া বকুল কে নিয়ে মঞ্জিলের ভিতর প্রবেশ করলো। তারপর রুহুল কে ডাক দিলো।
উপর থেকে রুহুল নেমে এলো। প্রাণপ্রয় বন্ধুকে বুকে জড়িয়ে নিলো। তারপর বললো,”এসেছিস শা’লা। ”
বকুল জড়িয়ে ধরে বলল,” বন্ধু কি অবস্থা তর?”
রুহুল উত্তর দিলো,”এই তো আছি।তোর কি অবস্থা। কতদিন পর দেখা হলো।চল আমার সাথে বিশ্রাম নিবি।
আর সামিয়া তুই বকুলের জন্য শরবত দিয়ে যা আমার কক্ষে।”
সামিয়া বিরক্তিতে চ উচ্চারণ করলো। তবুও
বললো,” জি দাদাভাই।”
বকুল বললো,এই মেয়ে শুনো, “আধা চামচ চিনি দিবে। আর হালকা লবণ ঠিক আছে। ”
সামিয়া এবার বেশ বিরক্ত হলো। তার মনে হলো সে কোনো এক কামের বেটি। তবুও দাদাভাই এর খাতিরে মেনে নিলো।
_____________________
অন্যদিকে সিরাজী মহিলাশালায় ও বেশ ভালো ভাবেই সব কিছু সাজানো হচ্ছে। মহিলা শালায় যে এভাবে কারো অনুষ্ঠান হবে কেউ ভাবেও নি। সব মেয়েরা খুব খুশি।ফাতিমাও ব্যস্ত সময় কাটায়।
১৫ বছর বয়সী কিশোরী কাকনের ২৫ বছর বয়সী পুরুষের সঙ্গে বিয়ে। কাকন এখন নিজ কক্ষ থেকে বের হওয়া প্রায় বন্ধ করেই দিয়েছে। সবাই তাকে রুহুলের কথা শুনিয়ে বেড়ায়। কাকনের খুব লজ্জা করে। সেদিনের রুহুলের বলা কথা মনে হলেই কাকনের মুখ রক্তিম রঙ ধারণ করে। তারপর আরেকদিন বাসর রাতের কথা শুনে কাকনের চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে তো মনে আরো ভয় সৃষ্টি হয়েছে। সত্যিই যদি তার সাথেও এমন হয়। সে তো মেনে নেবে না। না না সে যদি পারতো এই বিয়ে নামক বন্ধনে জড়ানোর আগেই পালাতো। কিন্তু সে যে নিরুপায়। কোথায় যাবে সে। একমন বলে যা হচ্ছে মেনে নে আবার আরেক মন বলে পালিয়ে যা। এই ভয়াবহ প্রণয়ে শিকলবন্দী হওয়া থেকে। তার মনে কেন যেন বার বার রুহুলের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছে।
চলবে…..
#দেবী
#শবনম_রাবাহ
#দেবী
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ।
১০ঃ
রুহুলের কথা মতো শরবত বানাতে গিয়ে বিরক্তি লাগছে সামিয়ার। সে বরাবরই কাজ চুরি তে পটু।মায়ের নানা বকা শুনেও সংসারের কোনো কাজে হাত দেয় না। অথচ কোথাকার লোকের জন্য শরবত বানাতে হচ্ছে তার। শরবত নিয়ে উপরে গেলো সামিয়া। রুহুলের কক্ষে যাওয়ার পর রুহুল জানালো বকুল বাম পাশের অতিথি কক্ষে আছে। অগত্যা সামিয়া শরবত নিয়ে সেখানেই গেলো। কক্ষে উকি দিয়ে দেখলো শুধু লুঙ্গি পড়ে খালি গায়ে রয়েছে বকুল। পর-পুরুষ কে এমন অবস্থায় দেখে খানিক টা লজ্জা পেলো সামিয়া তবুও বিনা বাক্যে শরবত নিয়ে বকুলের সম্মুখে গেলো।শরবত নেওয়ার সময় বকুল সামিয়া কে কাছ থেকে দেখলো। মেয়েটা যে সুন্দরী বকুল তা মানলো। “ধন্যবাদ” দিয়ে মুচকি হেসে শরবত মুখে নিলো কিন্তু হাসিমুখ হঠাৎ এমন হলো যেন সে বিষ পান করেছে। গড়গড় করে সব ফেলে দিলো।
বকুল বললো, ” এই মেয়ে এটা কি,, তুমি এত চিনি দিয়েছো কেন? তোমাকে না বললাম আধা চামচ চিনি দিতে । শুধু শুধু মুখটা নষ্ট করে দিলে।”
সাময়া অবাক হয়ে বললো,” নষ্ট করলাম মানে,,শরবতে কেউ আধা চামচ চিনি খায়। কম হইলেই দুই চামুচ দেওয়া লাগে। আর নুন দিছি তাই আমি মাত্র দেড় চামচ চিনি দিছি। ”
বকুল বললো,”আমি মিস্টি পছন্দ করি না। তার চেয়ে বরং শুধু পানি এনে দিলে তবুও তৃপ্তি হতো।”
–কিহ, মিস্টি পছন্দ করেন না এ আবার কেমন মানুষ।”
–“এই বকুল এমনই মানুষ। সে যাই হোক যাও আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে এসো।”
সামিয়া বিরক্ত হলো তবুও ভদ্রতার খাতিরে পানি নিয়ে এলো। সামিয়া পানি এনে দিলো, “এই নেন পানি”
বকুল পানি খেয়ে গ্লাস টা দিলো। সামিয়া যে বিরক্ত
হয়েছে বুঝলো এবং বিরক্তিতে মুখের অবস্থা দেখে বকুলের খুব ভালো লাগলো। সামিয়া কে জিজ্ঞেস করলো,” কিসে পড়ো তুমি?”
” মেট্রিক দিমু।( ঝাজালো স্বরে বললো)”
সামিয়ার কথা শুনে বকুল খুব খুশি হলো।মুখে প্রকাশ করলো না। বললো,”ওহ বেশ ভালো। ভালো ভাবে পড়াশোনা করো, কেমন। ”
_____________________
রাতে সিরাজী মঞ্জিলে খাসির মাংস দিয়ে খিচুড়ির আয়োজন করা হয়েছে । ভোজন কক্ষে জমিদারদের মতো বিশাল বড় টেবিল এবং চেয়ারের আয়োজন করা। একসাথে ৫০ জন বসে খেতে পারে। সিরাজী মঞ্জিল পুর্বপুরুষদের তৈরি করা বাড়ি। প্রত্যেক কক্ষ, রান্নাঘর ভোজন কক্ষ সব ই অনেক বছর আগের তৈরি। ভোজন কক্ষে সকল পুরুষেরা খেতে বসেছে।
রুহুল এখনো আসেনি তাই সামিয়ার দ্বারা রুহুলকে ডাকতে পাঠালো সুভা।
সামিয়া রুহুল কে ডাকার জন্য গেলো। কিন্তু অন্ধকার কক্ষে কাউকে পেলো না। দাদাভাই বলে ডাকলো সাড়া না পেয়ে পিছন ফিরবে ওমনি কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলো। সামিয়া উঠে দাড়াতে দাড়াতে বললো,”ওমা গো কোন ইট এর বস্তা রে,,,চোখ কি সাপ এর গর্তে রাইখা আইছা নাকি,,,ধাক্কা দিয়া মাঞ্জা ভাইঙ্গা ফালাইলো রে,,আম্মা গো।”
–”ইট এর বস্তা মানে আমি বকুল একজন জলজ্যান্ত মানুষ। আর এভাবে কেউ কাউকে কথা বলে। আমি রুহুলের রুমে আসছিলাম তুমিই তো আমাকে ধাক্কা দিলে। নিজে চোখে দেখো না আবার আমাকে বলছো। তুমি আসলেই একটা কানা।”
সামিয়ার ছোটবেলা থেকে অভ্যাস যার সাথে ঝগড়া লাগবে তাকে কামড় দিবে আর না হয় চিমটি দিবে।সামিয়া এবার রেগে বকুলের হাতে চিমটি কাটলো।
বকুল আহ করে উঠলো। সামিয়া বললো,” আমি কানা তাই না,,আর আপনি কি হ্যাঁ। আমি যদি হই কানা আপনি হইলেন শয়তানের নানা।”
বকুল সামিয়ার কথা শুনে হো হা করে হেসে উঠলো, “বেশ আমি শয়’তানের নানা হলে তুমি শয়’তানের নানি” বলেই সামিয়ার কাধে চিমটি কেটে চলে গেলো।
সামিয়া এবার আশ্চর্যের শেষ সীমানায় গেলো। কি হলো এটা লোকটা তার কাধে চিমটি দিলো।
সামিয়া রাগে ফুসলো।যে করেই হোক প্রতিশোধ নিবে।
_____________________________
খাওয়া শেষে সবাই যার যার মতো আনন্দে আড্ডা জুড়ে দিয়েছে। মেয়েরা আলাদা ছেলেরা আলাদা। মেয়েরা সবাই পাতা মেহেদী বেটে রেখেছিল।সবাই এখন যার মতো করে হাতের আঙুলে লাগাচ্ছে।
আর গল্প করছে। অন্যদিকে ছেলেরাও নিজেদের
মতো আছে।
রুহুলের রুমের সাথে বড় উন্মুক্ত বাড়ান্দায় রুহুলের দুই বোন জামাই বসে আছে। তারা বয়সে রুহুলের সমবয়সী। আর সাথে জোট বেধেছে বকুল।
আলেয়ার স্বামীর সাথে রুহুলের ব্যবসার খাতিরে ভালো সম্পর্ক হয়েছিল। সেখান থেকেই ভালো সম্পর্ক আর বোন বিয়ের পর আরো গভীর হয়েছে। আর রোকেয়ার স্বামী সিরাজী বংশের পুর্বের আত্মীয়। সেই সুবাদে আগে থেকেই পরিচয়।
আলেয়ার স্বামী বললো, “তা রুহুল বিয়ে করছো কেমন অনুভুতি হচ্ছে?”
রোকেয়ার স্বামী ও তাল মেলালো,” হ্যাঁ রুহুল দাদাভাই আমিও জানতে চাই এতদিনে তাহলে বিয়েতে মত দিলেন। সেই জন্য আমরাও খুব খুশি।”
বকুল বললো,” সে আর বটে রুহুল সিরাজী যে রাজি হয়েছে চিঠি পেয়ে ও বিশ্বাস হয়নি। কি এমন জাদু করলো ভাবি সে রাজি হয়ে গেলি।”
রুহুল এবার একে একে সকল ঘটনা খুলে বলল কেন তার বিয়ে হচ্ছে। রুহুলের কথা শুনে তিনজন ই অবাক হলো। রুহুলের মতো সুচরিত্রবান পুরুষকে এমন নোংরা অপবাদ দেওয়া হয়েছিল।
বকুল সব শুনে বললো,” একদিকে ভালোই হয়েছে এই সুবাদে বিয়ে টা তবুও হলো। তা না হলে তো আজীবন তুই চিরকুমার থেকেই যেতি। ”
রোকেয়ার স্বামী এবার বললো,” সে বিয়া করো নিকা করো আমাগো হক কিন্তু আগে। আমাগো ভুইলো না।”
রুহুল অবাক হয়ে বললো,” হক আছে মানে কি?”
আলেয়ার স্বামী হাসি দিয়ে বললো,” আরে সেরকম কিছু না।আমরা তোমারে বৈবাহিক জীবনের উপদেশ দিতে আসলাম। তোমার দুলাভাই লাগি তো। ”
রোকেয়ার স্বামী রুহুলের কাছে এগিয়ে গেলো বললো, –“হ্যাঁ কাল বাদে পরশু তোমার বিয়ে। আমাগো কিছু দিবা না? ”
–“কি দেবো?”
–” আসলে আমরা বেশি কিছু না ইয়ে মানে শুধু কিছু খাইতাম আরকি।”
রুহুল স্বাভাবিক ভাবেই বললো,”সে তো বিয়ে খেতেই এসেছো। যত ইচ্ছে খাও। না করেছে কে।”
বকুল মুখ টা ছোট করে বললো,”তোর বিয়েতে শুধু পোলাও কোরমা খেতে আসছি নাকি। আমাদের মালপানি কিছু খাওয়াবি না। শুনেছি জমিদার বংশ তোদের। এই তোদের আথিতেয়তা। ”
রুহুল ভ্রু কুচকে তাকালো তিনজনের দিকে।
রোকেয়া স্বামী আমতা আমতা করে বলা শুরু করলো, “ইয়ে মানে তোমার বিয়ের রাতে আমাদের একটু জলপানির ব্যবস্থা করে দেওয়া লাগবে। জমিদার বাড়ি তোমাদের। বেশি না একটু হলেই হবে।”
আলেয়ার স্বামী বললো,”না কইরো না। হাত জোর করি। তোমার দাদা-চাচারা কিন্তু ঠিক ই খাবে। শশুড়ের কাছে কি আর চাওয়া যায়। তোমার বোনদের জন্য কতদিন খাইতে পারি না।তোমার বিয়ে উপলক্ষে চাই ই চাই।”
এবার রুহুল বুঝলো কেন খাওয়ার শেষে জোর করে তাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল। রুহুল না করলো না কারণ সে চায় তার বিয়েতে সকলের হাসিমুখ দেখতে। তাই বললো,” বেশ আমার বিয়ে উপলক্ষে যখন চেয়েছো তাই দেবো। কিন্তু খবরদার কাক পক্ষীও যেন টের না পায়। এখন বিদেয় হও তিন বদ’জাত।”
“যো হুকুম সিরাজীসাহেব” বলেই বিদায় হলো তিনজন।
রুহুল ওদের যাওয়ার পানে হেসে দিলো। আজকাল রুহুল সিরাজী একটু বেশিই হাসে।
___________________
সিরাজী মঞ্জিলে জামালের গোপন কক্ষে বসেছে মদের আসর। সেখানে মদ গিলছে জামাল,মহীবুল, হেলাল। জামালের বিশ্বস্ত চাকর হবীবুল্লাহ মদ ঠেলে ঠেলে দিচ্ছে। সাথে নিজেও বিনা পয়শায় গিলছে।
হেলাল মদ এর গ্লাস শেষে আরেক গ্লাস মদ নিচ্ছে আর বলছে,” দাদাভাই এর কপাল সত্যি খুব ভালো। তা না হইলে এত্ত সুন্দর একখান পরী কি কেউ পায়।”
মহীবুল ক্ষ্যাপা কন্ঠে বললো,” শা’লী কাকন রে দেখছিলাম গতবছর। দেইখাই ভাবছিলাম এক রাইতের জন্য হইলেও কাছে আনমু। কিন্তু তোর ভাই এর জন্য তাও হইবো না। শা’লা রুহুল সবই পাইলো । রানী ও পাইলো কয়দিন পর রাজত্বও পাইবো।”
হেলাল বললো,”সে আর কইতে। ও বিদেশ যাইতে চাইলো গেলেই ভালো হইতো। বুড়া আর বুড়ি ই তো ওরে ঠেকাইলো।”
জামাল ভীতু গলায় বলল, “আস্তে কথা ক গা’ধার দল।আব্বাজান শুনলে রাস্তায় ভিক্ষা করার অবস্থায় ও থাকবি না।”
মহীবুল বাবার কথায় রেগে গেলো,” ফকির ই হমু কয়দিন পর। আপনি যদি ঠিক থাকতেন তাইলে আমার কাধেই সব দায়িত্ব দিতো ওই দুলাল সিরাজী। তাই আপনে আর কথা কইয়েন না আব্বা।”
জামাল ছেলের পিঠে হাত বুলালো আর বললো,”আহ বাপ চেতোস কেন। সঠিক সময় আইতে দে সব ঠিক হইবো। আমার কইলজা। রাগ করে না বাপ। সব তো তোর ই হইবো একদিন। ”
জামালের ছেলের প্রতি ভালোবাসা দেখে হেলাল মন খারাপ করলো। তার বাবা রুহুল কে বেশি ভালোবাসতো। তাই মহীবুলকে বলল,”চাচাজান তাও তরে ভালোবাসে মহী। আর আমার নিজের বাপ সারাজীবন খালি রুহুল রুহুল ই করছে। মানলাম ও আমার সৎ ভাই। কিন্তু আব্বা সে তো আমার নিজের বাপ। সারাজীবন ওই রুহুলের সাথেই তুলনা কইরা গেছে। ওই রুহুলের ভালো কাম এর জন্য খোটা শুনতে শুনতেই বড় হইলাম। রুহুল ভালো লেখাপড়া করে, ব্যবসায় উন্নতি করছে, বুদ্ধি দিছে সব কামে এই জন্য আমারেই কথা শুনাইতো। ওরে দেখলেই আমার রগ খাড়া হইয়া যায়। ইচ্ছা করে খু’ন কইরা ফালাই। ”
জামাল নিজের গ্লাস টা হেলাল কে দিলো আর বললো, “শোন হেলাল তরে আমি মহীর মতোই ভালোবাসি। তর আব্বার থিকা ও কিন্তু বেশি। ”
হেলাল সাই দিলো,” হ্যাঁ চাচাজান আমি জানি। আপনে আমার আব্বার চেয়েও আপন।”
জামাল বললো,”হ্যাঁ বাজান এই জন্যই তো তরে কই আমার কথা মতো চলতে। আর তাই তুই এখন ঘরে যা। শুইয়া পড় গা। বহুত রাইত হইছে। রুহুল রে শেষ করার জন্য তো তোর সুস্থ থাকতে হইব। একটু পর আমরা আসমু। একসাথে গেলে সন্দেহ করবো।”
হেলাল যেন চাচার ইশারায় চলা কুকুর। ওমনি বললো,
” আচ্ছা চাচাজান আমি গেলাম।” বলেই ঢুলতে ঢুলতে চলে গেলো।
হেলালের যাওয়ার পর মহীবুল বাকা হেসে বললো, “আব্বাজান, এই হেলাল কিন্তু আমাগোর ডিম পারা হাঁস। ওরে দিয়াই সবাইরে খতম করমু। হাহাহা।”
জামাল শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,” সে আর কইতে। ছাড়ুম না কাউরে ছাড়ুম না। কাটা দিয়া কাটা তুলুম। ওর বাপে আমার থিকা সব অধিকার কাইড়া নিছিলো আর এখন ওর ভাই তর থিকা সব নিবার চায়। ওরে দিয়াই ওর ভাই রে খুন করুম।”
হবীবুল্লাহ মহীবুলের গ্লাসে মদ ঢালছে। বললো, “ছোট সাব একখান কথা কই যা ই করেন দুলাল সিরাজী মরার পর কইরেন। সে কিন্তু বাইচা থাকতে সম্ভব না।”
মহীবুল গ্লাস টা ছুড়ে ফেলে দিলো,হবীবুল্লাহর ফতুয়ার কলার টেনে ধরে বললো,” তাইলে সবার আগে ওই বুড়া রেই মা’রুম। খুব শীঘ্রই সব কিছুর মালিক আমরা হমু।”
——————————
সুভা ঘরের বাতি নিভিয়ে সবেমাত্র বিছানায় বসেছে ওমনি দরজায় করাঘাতের শব্দ পেলো।
রুহুল এর কন্ঠে শোনা যাচ্ছে,” আম্মা,আম্মা আপনি কি জেগে আছেন?”
ছেলে এসেছে বুঝে দরজা খুলে দিলো। বললো,” আয় ভিতরে আয়। কি দরকার খোকা?”
–“ইয়ে মানে আম্মা আপনি রাতে খেয়েছেন?”
সুভা বিছানায় বসতে বসতে বললো,” হ্যাঁ,”
রুহুল মিনিট পর বললো,” আব্বা ঘুমিয়েছে?”
সুভা সন্দেহ চোখে বললো,”তুই এই কথা শোনার জন্য এসেছিস?”
রুহুল শুয়ে থাকা বাবাকে দেখে মাথা নিচু করে বললো,”আসলে আম্মা সবাই কেই তো দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। আমি চাইছিলাম তাদের কেও দাওয়াত দিতে কিন্তু তাদের কোনো খোজ তো আমি জানি না। আপনি বললে আমি দাদাজান কে যেভাবেই হোক মানিয়ে নিয়ে তাদের কেও দাওয়াত করবো এবং নিয়েও আসবো।আপনি যদি ঠিকানা টা দিতেন।”
রুহুলের কথায় সুভা যেন ক্রোধের আগুনে জ্বলে উঠলো। রাগ দমন না করতে পেরে বললো, “লজ্জা করে না তোর,, এত কিছুর পর যেতে চাস। কেনো যেতে চাস আবার রক্ত খেতে। সিরাজী মঞ্জিলের কি রক্তের পিপাসা জেগেছে আবার। আমাকে কি শান্তি তে থাকতে দিবি না তোরা?”
মায়ের কথায় কষ্ট লাগলো রুহুলের। বলল,” আম্মা ভুল বুঝছেন কেন। আমি তো …..”
সুভা তীব্র ঘৃণায় বলল,”চুপ,, চুপ কর তুই। আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না। বের হ তুই আমার কক্ষ থেকে। পরশু তোর বিয়ে খারাপ আচরণ করতে চাই না।”
বলেই রুহুল কে হাত ধরে ঘর থেকে বের করে দিতে দিতে বলল, “সব তোদের রক্তের ই দোষ। তোরা সব এক একটা নর’পি’শাচ।”
বলেই দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে কাদতে শুরু করলো সুভা। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার ভিতরে।
সুভা কাদতে কাদতে বললো,”কেন, কেন,, কেন আমার সব শেষ হয়ে গেলো। সব দোষ আমার। আমার দ্বারা এই পাপ হওয়ার আগে কেন মরলাম না আমি। আমার আর সহ্য হয় না। আমার মতো পাপির যে বেঁচে থাকার অধিকার নাই। আমার মরণ দাও, মরণ দাও।”
বিছানায় সুয়ে থাকা বিলাল সিরাজী সুভা কে চেয়ে চেয়ে দেখছে। সে অচল- অক্ষম, কিছুই করার নাই তার। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখাই যেন তার রাজ কার্য।
চলবে………..
#দেবী
#শবনম_রাবাহ