#দেবী,১৩,১৪
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
১৩ঃ
আজ রাত টা প্রাণপ্রিয় বন্ধুর সাথে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলো বকুল।হয়তো আর কোনো রাতে একসাথে থাকা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এক সঙ্গেই থেকেছে।কত সুখকর মুহুর্ত স্মৃতি দুজনের। রুহুলের কক্ষে যেয়ে দেখলো রুহুল কক্ষে নেই। বেরিয়ে যাবে ভেবে ওমনি বাড়ান্দায় উকি দিলো। দেখলো তার প্রাণ প্রিয় বন্ধু সিগারেট খাচ্ছে। বকুল হাসলো কারণ যেখানে পুরুষেরা কষ্টের সময় সিগারেট খায় সেখানে তার প্রাণ প্রিয় বন্ধু যখন মন ভালো থাকে তখন সিগারেট টানে। বড় অদ্ভুত তাই না হ্যাঁ এই রুহুল সিরাজী বড়োই অদ্ভুত।
বাড়ান্দায় গিয়ে রুহুলের পিছনে দাড়াতেই রুহুল বকুলের অবয়ব টা চিনতে পারলো। পাশে বকুল দাড়ালে সিগারেট টা বকুল এর হাতে দিলো। তারপর বাড়ান্দায় রাখা বেত এর চেয়ারে বসে বলল,”এত রাতে আমার কাছে এলি যে।”
বকুল সিগারেট টান দিয়ে বললো,” আজ রাতে তোর কাছে থাকবো। বিয়ের পর তো আর এই সুযোগ টা দিবি না। তখন তো ভাবিকে নিয়ে স্বর্গসুখে মেতে থাকবি। ” বলেই চোখ মারলো বকুল।
রুহুল বললো,”সা’লা,, বস এখানে। এসেই শুরু করে দিলি তোর জা*রা কথা বলা।”
–”আরে সবসময় সা’লা সা’লা করস কেন। সা’লা তো তুই হবি আমার।”
–“এখনো নিশ্চিত নয়। তাই যা ই বলিস না কেন আমাকে ভেবে চিন্তে বলিস।”
–“আসলে বন্ধু মন টা আজ অনেক ভালো আমার। কাল তো তোর বিয়ে চল না আজ রাতে এক সাথে নিদ্রাবিলাশ করি।”
–” মানে,, এ আবার কেমন কথা ‘নিদ্রাবিলাশ’।”
–” মানে তোর বিয়ের আগের রাত টা তোর প্রাণ প্রিয় বন্ধু বকুল এর সাথে কাটা।”
রুহুল স্পষ্টস্বরে বললো,”মোটেও না। কাল আমার বিয়ে। আর আমি চাই না আজ রাত নিদ্রাহীন কাটাতে।তোর ঘুমানোর যা ছিড়ি আমায় আস্ত রাখবি না। হলে যখন থাকতাম কম জ্বালাস নি আমায়। সাথে তোর বিনামুল্যের নাক ডাকা তো আছেই।”
–“এভাবে বলতে পারলি। তুই কিন্তু এবার আমাকে অপমান করছিস।”
–“রুহুল সিরাজী কাউকে অপমান করে না এটা তুই ভালো করেই জানিস। তাই যেটা সত্যি সেটাই বললাম।”
–” সা’লা আমাকে এভাবে আমাকে খোটা দেওয়া তাই না। অভিশাপ দিলাম বিয়ের পর তোর বউ ঘুমের মধ্যে আমার চেয়ে ও বেশি জ্বালাবে তোকে। আর নাক আমার চেয়েও বেশি নাক ডাকবে।”
রুহুল বকুলের হাত থেকে সিগারেট নিয়ে হাসতে শুরু করলো। রুহুলের হাসি দেখে বকুল বলল, “এত হাসিস না তো তোর সুখ সইবে না। তোর বউ তোকে কোনো দিনো ভালো বাসবে না দেখিস। তখন সারাজীবন কাদতে হবে তো.. ”
কথাটা শেষ করতে পারলো না বকুল তার আগেই
রুহুল অগ্নিচোখে তাকালো বকুলের দিকে। বললো, “খবরদার আমার বউ কে নিয়ে কোনো কথা বলবি না। আর এই অভিশাপ ফিরিয়ে নে। কাকন আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য,বাসতেই হবে।”
বকুল কিছুটা থমকে গেলো।রুহুল এমন করবে ভাবে নি। বকুলের নিজের ও অভিমান হলো।
তারপর রুহুল সিগারেট এর ধোঁয়া উড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,” তার ভালোবাসা না পেলে আমি মরে যাবো বকুল। এই স্বল্প দিনেই সে আমার হৃদয়ে এক সাজানো বাগান তৈরি করেছে যে বাগানের ভালোবাসার ফুল না ফোটা অব্দি তার নিস্তার নেই।”
রুহুলের কঠিন কন্ঠে বলা কথায় আবারো ভড়কে গেলো বকুল।বললো, “মজা করছিলাম। কিন্তু তুই যে এটা এভাবে ধরে নিবি বুঝিনি।এতটা উন্মাদ হয়ে গেছিস কি করে?ভাবি কে এত ভালোবাসিস তুই? ”
–” আমার হৃদপিঞ্জর জুড়ে কেবল আমার হৃদয়হরণী। ভীষণ ভালোবাসি। ওর চেহারায় যে সরলতা তা দুনিয়ার আর কোনো নারীর নেই। ওর মিহি কন্ঠ দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ কন্ঠস্বর। সব দিক দিয়ে সে আমার দেখা শ্রেষ্ঠ সুন্দরী। জানিস আল্লাহ তায়লা জান্নাতে একজন পুরুষকে ৭০টি হুর দেয় কিন্তু আল্লাহ তায়লা দুনিয়াতে আমার জন্য হুর পাঠিয়েছেন আর সেই হুরটি হলো উনি। বিশ্বাস কর আমি জান্নাতে সত্তর টি হুর চাই না আমি জান্নাতেও কেবল ওনাকেই চাই।”
এতক্ষণ রুহুলের কথা শুনে হতবাক হয়ে গেলো বকুল। রুহুল যে এতটা ভালোবাসে কাকনকে বকুল সেটা কল্পনা করতে পারে নি। বকুল কেবল বললো, “সত্যি বলতে তোর এই কথার কি জবাব দেওয়া উচিত জানি না। শুধু বলবো তোর সকল চাওয়া যেন পুর্ণ হয়।”
রুহুল উঠে দাড়ালো। বললো, ” পুরো দুনিয়া না চাইলেও আমার সকল চাওয়া পুর্ণ হবেই। আমার সাথে নিদ্রাবিলাশ করতে এসেছিলি না চল। অনেক রাত হয়েছে”।
রুহুলের কথায় বকুল হেসে বললো, ” হুম চল আজ রাত ই তো তোর শেষ নিদ্রাবিলাশ। কাল থেকে তো আবার সুখ বিলাশ এর যাত্রা শুরু।হেহেহে”
— ” ****** তুই জীবনেও ভালো হবি না, চল।”
_______________________
মহিলাশালায় দুহাতে পাতা মেহেদি দিয়ে বসে আছে কাকন। নুপুর, ফুল, রিতা একপ্রকার জোর করেই বসিয়ে রেখেছে যাতে হাত না ধুতে পারে। সরষের তেলের বোতল দিয়ে গেছে মেহেদি তুলে সরষের তেল হাতে দিলে নাকি রঙ বেশি সুন্দর হয়। কাকন মেহেদি তুলে ফেললে বাঁচে সরষের তেল হাতে দেওয়া তো দুরে থাক। এর ই মধ্যে ফাতিমা দুধ-ভাত মাখিয়ে কাকনের জন্য নিয়ে এলো। কাকন তা দেখে বললো,” আপা আমার তো হাত বন্ধ খাবো কি করে? ”
ফাতিমা ভাত কাকনের মুখের কাছে নিয়ে বললো, ” হা কর টপাটপ গিলে ফেলবি। ”
কাকন হা করে ভাত মুখে নিলো।তারপর বললো, “এতোই যখন ভালোবাসেন তাহলে আমাকে বিদায় করছেন কেন আপা,,রেখে দেন না আমাকে আপনার কাছে ”
ফাতিমা আবার ভাত ওর মুখে দিলো তারপর বললো, “রাইখা দেওয়ার জিনিস হইলে আজীবন তোরে নিজের কাছে রাইখা দিতাম তূই তো সেই কাকন যে আমারে প্রথম মা বইলা ডাইকা জড়ায়া ধরছলি। তুই যেদিন প্রথম আমার বুকে মাথা রাইখা মা মা কইয়া কানছিলি আমার মনে হইছিল তুই আমার গর্ভের সন্তান, আমার নাড়ি কাটা ধন। তরে ছাড়া আমার ও খুব কষ্ট হইবো কাকন তয় তরে বিয়া না দিয়াও উপায় নাই। এই যে আমরা যে ভাত টা খাই হেইডা ও সিরাজী মঞ্জিল থিকা আসে।এইখানে তর মতো কয়েকশত মাইয়া আছে। সকলের মুখের দিকে চাইয়াই আমি তরে বিয়া দিতাছি”
ফাতিমার চোখে যেন জলস্রোত বইছে। কাকন ফাতিমার চোখের পানি দেখে কেদে ফেললো।ফাতিমার বলা প্রত্যেক টা কথায় কাকনের এবার ফাতিমা কে নিজের মা ই মনে হলো। নিজের মা হলে হয়তো এমন ই নিস্বার্থ ভালোবাসতো। কাকন চুপচাপ খেতে লাগলো। কাকন আর কোনো কথাই বললো না। দুজনের ই যে গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না।
ফাতিমা কাকন কে সব টুকু ভাত খাইয়ে দিয়ে বললো,
” এখন চুপচাপ ঘুমা। আজ সারাদিন মেলা ধকল গেছে তর উপর। এখন তোর বিশ্রাম প্রয়োজন। ”
কাকন ফাতিমার হাত আকড়ে ধরে বললো, “কবুল বলার সময় আপনার হাতটি যেন আমার হাতে থাকে আপা। তা না হলে আমি কবুল বলবো না আপা। ”
ফাতিমা কাকনের পানে চেয়ে চলে গেলো কিন্তু কাকন এখনো স্থির হয়ে বসে আছে। এই অল্প বয়সে মস্তিষ্কে এত চাপ বোধহয় নিতে পারবে না। বিছানায় শুয়ে দুই হাত দুপাশে রেখে টিনের চালের দিকে তাকিয়ে রইলো কাকন। বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করার পর সিদ্ধান্ত নিলো সে মন থেকেই এই বিবাহ কবুল করবে। সে গ্রহণ করবে রুহুল সিরাজী কে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে। ভাবনার জগতে ডুবে যেয়ে কখন যে ঘুমিয়ে গেলো সে নিজেও বুঝলো না।
মধ্যরাতে কাকনের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। নিজেকে সোজা ভাবে শুয়ে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করল বুঝতে পারলো ফাতিমা ঠিক ভাবে শুইয়ে দিয়েছে। কাকন হাত দুটো যে কখন ভাজ করেছে বুঝতেও পারে নি। পাশে ফাতিমা কে দেখলো ঘুমিয়ে আছে। কাকন আস্তে করে বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে বাড়ান্দায় বেরোলো। তারপর দুই হাতের আঙুলে লাগানো মেহেদি তুলে ফেলে দিলো। হঠাৎ কিছুর ছায়া দেখতে পেলো যা দেখে ভয়ে দ্রুত দরজা আটকিয়ে বিছানায় সুয়ে পড়লো। এমনি তেও ভুত প্রেতের উপদ্রব নাকি সিরাজপুরে বেশি।
______________________
অবশেষ সেই শুভক্ষণ চলে এলো। আজ সেই বিবাহ যার মাধ্যমে দুজন মানুষ একে অপরের সাথে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ হবে।পবিত্র জুম্মাবারে পবিত্র বিয়ে।
কাকন রোজকার ন্যায় আজও বেশ সকালে উঠলো। উঠে নামাজ পড়লো। মোনাজাতে আল্লাহর কাছে মনের সকল চাওয়া চাইলো। কিছুক্ষণ কুরআন পড়লো। কুরআনের ২৭ পারার সুরা আর-রাহমান পড়লো। কাকনের সবচেয়ে প্রিয় সুরা এটা।তার কারণ হলো এর ১টা আয়াত যা ওর ভীষণ ভালো লাগে,
“ফাবি আইয়ি আ-লা-য়ি রব্বিকুমা তুকাজ্জিবান”
অর্থঃ “-এবং তোমারা তার(আল্লাহর) কোন কোন নেয়ামত কে অস্বীকার করিবে।”
কাকন বার বার এই আয়াতটি পড়লো এবং আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো। সত্যি আল্লাহর নেয়ামতের জন্যই আজ সে জীবিত। একটি সুন্দর পরিবার পেয়েছে সে। নিজের মায়ের পর দ্বিতীয় মা হিসেবে ফাতিমা কে পেয়েছে। কাকন কুরআন শরীফ বন্ধ করে আবারো মোনাজাত করলো। তবে এই মোনাজাতে কেবল আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো। কাল রাতে ভাবার পর তার মনে হয়েছে এই বিয়েটা তার জন্য কল্যাণকর। তাই সে যা চায় তা এই বিয়ের মাধ্যমেই সম্ভব। সে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে বিয়ে করবে। “কেননা আল্লাহ তায়লা উত্তম পরিকল্পনাকারী”
———————–
সিরাজী মঞ্জিল ~
জুম্মার নামাজ পড়ে সিরাজী বাড়ি থেকে বরযাত্রী বের হবে।সকল পুরুষেরা নামাজ পড়ে এলো সিরাজী মঞ্জিলে। রুহুল সাদা আর সোনালী মিশ্রিত বর এর পাঞ্জাবি পড়েছে। সাথে সাদা রঙের পাগড়ী। হাতে রুমাল। বর এর পোশাকে যথেষ্ট সুন্দর লাগছে। সামিয়া,আলেয়া,রোকেয়া সকল নারীরা শাড়ি পড়েছে আর পুরুষেরা পাঞ্জাবি।
সিরাজী মঞ্জিলের ফাকা মাঠে সকলে তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুহুল সিরাজী মঞ্জিলের ভিতরে প্রবেশ করলো। এরপর রুহুল তার বাবার কক্ষে গেলো। দেখলো তার মা পোশাক বদলিয়ে দিচ্ছে। রুহুল বিলাল সিরাজী কে সালাম করল। তারপর মাথা থেকে পাগড়ী নামিয়ে বাবার হাত মাথায় নিয়ে বললো,
“আব্বা আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি। কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক আমি বিশ্বাস করি আপনি সব শোনেন এবং সব বোঝেন। আপনি আমাকে মন ভরে দুয়া করে দেন আব্বা।আমার আপনার দুয়া চাই। ”
সুভা ছেলের কান্ড দেখে হাত নামিয়ে রাখলো। তারপর ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাদলো। বললো, “তুই অনেক সুখি হবি রে খোকা এটা তোর আম্মার দুয়া। তবে আজ একটা কথা দিবি আমায়? ”
রুহুল মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,” জি আম্মা বলেন?”
সুভা ছেলের হাত দুটো ধরে বললো, ” তুই কথা দে কখনো কাকন কে তোর বাপ-দাদাদের মতো বাবা- মা তুলে গালি দিবি না, আর কখনোই স্বামী নামক পশুর মতো নির্যাতন করবি না। সর্বদা সম্মান করবি। ”
রুহুল মায়ের কথা শুনে তার মায়ের মনের কষ্ট বুঝতে পারলো। তার মায়ের হাতে চুমো খেয়ে বললো, “আমি আপনাকে কথা দিলাম আম্মা আমি আপনার সকল কথা রাখবো, ইন শাহ আল্লাহ। ”
তারপর মাকে সালাম করে বললো, ” আপনার জন্য আরেকটা মেয়ে আনতে গেলাম আম্মা।”
সভা ছেলের সাথেই ঘর থেকে বের হলো। সকলের থেকে বিদায় নিয়ে রুহুল সিরাজী চললো তার কাকন কে বিয়ে করার জন্য।
_______________________
বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। তবে মহিলশালায় পুরুষদের আগমন শোভা পায় না। তাই সিরাজী পুরুষশালায় বরযাত্রী থেকে আসা পুরুষদের থাকার আয়োজন করা হয়েছে। রুহুল সহ সকলে সেখানেও গেলো। তবে রুহুলের বিয়ের কবুল পড়ানো হবে মসজিদে। তারপর কয়েকজন যাবে কাকন কে আনতে।
অন্যদিকে বরযাত্রী তে আসা মেয়েরা মহিলাশালায় গেলো। মহিলাশালা রঙিন কাগজের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। লাল-খয়েরি বিয়ের ভাড়ি শাড়ি পরিহিত কাকন। আর কাকন কে ঘিরে রয়েছে অনেক মেয়ে। সামিয়া সহ সকলে কাকন কে দেখে আজ আরো পছন্দ করলো। কাকন এর রুপ যেন উপচে পড়ছে বউ সাজে। চোখ ফিরানো বড় দায়।
আসরের পর কাজী নিয়ে হাজির হলো দুলাল সিরাজী। ঘোমটা মাথায় দিয়ে চুপটি করে বসে আছে কাকন। সকল ব্যস্ততার মাঝে ফাতিমা কাকনের বলা কথাটি স্মরণ রেখে কাকনের কাছে বসলো। কাকন ফাতিমার হাত শক্ত করে ধরলো। কাজি যখন কবুল বলতে বললো “কবুল” নামক এই শব্দটি তিনবার উচ্চারণ করলো কাকন। ব্যাস হয়ে গেলো সেও এখন সিরাজী মঞ্জিলের বউ। সকলেই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।
চলবে…..
#দেবী
#শবনম_রাবাহ
#দেবী
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
১৪ঃ
“কবুল” নামক এই শব্দটি তিনবার উচ্চারণ করলো কাকন। ব্যাস হয়ে গেলো সে এখন সিরাজী মঞ্জিলের বউ। সবাই একসাথে ” আলহামদুলিল্লাহ” বলে উঠলো। বিয়ে সম্পন্ন হওয়াতে খেজুর বিতরণ করা হলো।
ফাতিমা কাকনের হাত ছেড়ে দিলো। চারিপাশে কাকন কে ঘিরে কত মানুষ অথচ কাকনের মনে হচ্ছে সে ভীষণ একা। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে কাকন।
বৈশাখের কালবৈশাখী বোধহয় শুরু হবে আজ। এক অন্যরকম ঝড়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। টিনের চালে পুরাতন আম গাছটা বার বার বারি খাচ্ছে। বোধহয় ঝড়ে আম গাছে আসা মুকুল গুলো ঝড়ে যাবে। কিছুক্ষণ পর মাগরিবের আজান শোনা গেলো। এই তো আর কিছু সময় তারপর ই চলে যেতে হবে এবং চিরকালের জন্য সিরাজী মঞ্জিলই হবে কাকনের নিবাস। এর ই মাঝে রিতা এসে বললো বর এসেছে। কথাটি শোনা মাত্রই কাকনের বুকের ভিতর ছিত করে উঠলো। লাবডুব এর প্রলয় নৃত্য শুরু করে দিলো।
ঘরের মাটির মেঝেতে বিছানো শীতল পাটিতে কাকন বসে ছিল।পাশে থেকে মেয়েরা সরে গেলো। বড় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে কাকন আর কাকন এর ডান পাশে বসানো হলো রুহুলকে। মাঝখানে বিছানার চাদর দিয়ে পর্দা করে দিলো।ফাতিমা গ্লাসে করে দুধ এনো দিলো রুহুলের হাতে। নিয়মানুসারে অর্ধেক গ্লাস দুধ খেয়ে বাকি টুকু কাকন কে দেওয়া হলো। বিনা বাক্যে কাকন তা পান করলো।
__________
বিদায় যা বরাবরই বেদনাদায়ক। আর এবার সেই বিদায়ের পালা। মহিলা শালার গেইটের বাইরে সালু কাপড়ে ঢাকা পালকি চলে এসেছে। বিদায়ের জন্য যখন কাকন কে উঠানো হলো তখন কাকনের মনে হলো এই সময় থেমে যাক। সবাই পাথর হয়ে যাক আর সে থেকে যাক এখানেই। ফাতিমা কাকনের কাছে এসে কোনো কথা বলতে পারলো না কেবল চোখ ভড়া জল নিয়ে দুই হাত বাড়িয়ে দিলো কাকনের পানে। ঝাপিয়ে পড়লো কাকন ফাতিমার বুকে। চিৎকার করে বললো,”আপা, আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না আমাকে যেতে দিয়েন না আপা। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। প্রিয় মানুষদের বিদায় এত কষ্টের কেন। আমি আপনাকে ছাড়তে চাই না আপা। ”
কাকনের কথা শুনে ফাতিমা হাউমাউ করে কাদতে শুরু করলো। রিতা,নুপুর সহ বাকিরাও কাদছে।
দুলাল সিরাজী বললেন, “ফাতিমা ওরে ছাইড়া দেও,, ঝড় হওয়ার সম্ভবনা আছে, এমনেতেই দেরি হইয়া গেছে,,এখন যাওয়া লাগবো”।
দুলালের কথা শুনে কাকন আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ফাতিমা সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে কাকনের থেকে ছাড়িয়ে নিলো। কাকনের হাত রুহুল এর দিকে এগিয়ে দিলো। রুহুল কাকনের হাত ধরলো। প্রথম স্পর্শে কাকন কাপতে শুরু করলো। কাকনের কাপুনি অনুভব করে রুহুল আরো শক্ত করে হাত ধরলো।
ফাতিমা রুহুল কে বললো, ” ওর কেউ নাই, তয় আইজ থিকা আপনেই ওর সবচেয়ে আপন, ওরে কোনোদিন ও কষ্ট দিয়েন না,আগলাইয়া রাইখেন। ”
বলেই আবারো কাদতে শুরু করলো ফাতিমা ।
রুহুল ফাতিমা কে আশ্বাস দিয়ে বলল,”সারাজীবন আগলে রাখবো। ”
তারপর কাকনের হাত ধরে নিয়ে মহিলাশালার গেইট থেকে বেড়িয়ে পালকিতে উঠালো। পালকি উচু করা হলে কাকন পালকির পর্দা সরিয়ে শেষ বারের মতো মহিলাশালা টা দেখে নিলো। পালকি চলতে লাগলো প্রত্যেকটা কদম যেন কাকনের হৃদয়ে পারা দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে এতটা কষ্ট হচ্ছে কাকনের। নিরবে চোখের জল ঝড়তে লাগলো কাকনের।
অন্যদিকে প্রত্যেকটা কদম রুহুলের মনের বাগানের একটি একটি করে ফুল ফুটিয়ে দিচ্ছে। চারিদিকে ঝড়ের আগের এই শীতল বাতাস রুহুলের হৃদয়ে আরো সুখের আকুলতা সৃষ্টি করছে। এই সুখের ব্যাথা বোধহয় রুহুল আর কোনোদিন অনুভব করে নি। রুহুল ভাবতে লাগলো জীবনে বোধহয় আর কোনোদিন দুঃখ তাকে স্পর্শ ও করতে পারবে না। এত সহজেই ভালোবেসে ফেলেছে সে কাকন কে। কাকন ও বোধহয় ওকে ওর মতো করেই ভালোবাসবে।
সিরাজী মঞ্জিলের সামনে পালকি থামলো। হৈহৈ করতে লাগলো সকলে। দুলাল সিরাজীর স্ত্রী তার ছেলের বউদের নিয়ে বেরোলো। দুলাল সিরাজীর স্ত্রী নিজে কাকন কে পালকি থেকে বের করলেন। কাকন সকল কে সালাম করলো। সুভা কাকন কে মিস্টি খাইয়ে সিরাজী মঞ্জিলের ভিতরে প্রবেশ করালেন। এই প্রথম সিরাজী মঞ্জিলের গেইটেই ভিতরে পা রাখলো কাকন । চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিলেন। অত্যন্ত সুন্দর এই মহল আজ কাকন কে মিস্টি মুখ করিয়ে নিয়ে আসা হলো অথচ একদিন এই সিরাজী মঞ্জিলের গেইটের কাছে দাড়িয়ে থাকলে কেউ উঁকি ও দিতো না। ডান পা দিয়ে অন্দরমহলের সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো কাকন।সকল আত্মীয় স্বজনরা কাকন কে ঘিরে রইলো নতুন বউ দেখার জন্য। কাকন কে সর্বপ্রথম নিয়ে যাওয়া হলো একটি কক্ষে। যেখানে কেবল সুভা,রুহুল, তার দাদিমা আর কাকন গেলো। কাকনের হাত ধরে রেখেছে রুহুল। ওদের কে অনুসরণ করেই কাকন গেলো।
অত্যন্ত সুক্ষ কাজে ভড়া ঘরের প্রত্যেকটি আসবাব পত্র। কাকন এক প্রকার অবাক হলো এত সুন্দর কারুকাজ সে আগে কখনো দেখেনি। তবে তার চেয়ে বেশি অবাক হলো খাটে শুয়ে থাকা ব্যক্তিকে দেখে। চিনতে খুব বেশি অসুবিধে হলো না কাকনের। রুহুল কাকন কে নিয়ে নিজের আব্বার কাছে গেলো। আব্বার কাছে বসে বললো,”আব্বা আপনার বৌমা নিয়ে এসেছি দেখবেন না”। তারপর রুহুল কাকনের ঘোমটা তুলে দিলো। কান্না মিশ্রিত মুখে কাকন কে এই প্রথম বিয়ের সাজে দেখলো রুহুল। নিজেকে সংযত করে কাকনের উদ্দেশ্য বললো, “উনি আমার আব্বা, তবে আজ থেকে আপনার ও আব্বা, সালাম করুন।”
রুহুলের কথা মতো কাকন বিলাল সিরাজী কে সালাম করলো। তারপর রুহুল কাকনের হাত ধরে বিলাল সিরাজীর সম্মুখে নিয়ে গেলো। রুহুল বিলাল সিরাজীকে কাকনের দিকে মুখ করে দিলো। বিলাল সিরাজী পলকহীন ভাবে কাকন কে দেখতে লাগলো। যেন সে চোখ কাকন কে কিছু বলতে চায়। কিছু বলতে না পারার আক্ষেপে অস্থির হয়ে গেলো প্রায় বিলাল সিরাজী। আজকের এই ঠান্ডাময় প্রকৃতিতে ঘামতে শুরু করলো বিলাল সিরাজী। একভাবে চেয়ে রইলো কাকনের পানে। দুচোখ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রুকণা ঝড়ে পড়লো তার চোখ বেয়ে।
বিলাল সিরাজীর চোখের পানি কাকন মুছে দিলো। তারপর “আব্বা” বলে ডাকলো। রুহুল কাকন কে দেখলো। মনের ভিতর একটা আনন্দ অনুভব করলো এটা ভেবে যে তার স্ত্রী তার আব্বাকে নিজের আব্বা হিসেবে গ্রহণ করেছে। এতক্ষণ নিরব দর্শকের মতো সব কিছু দেখছিল সুভা। এই প্রথম সে তার স্বামীকে কাদতে দেখলো। একরোখা, জেদি, হৃদয়হীন মানব বিলাল সিরাজীর চোখে আজ পানি। শরীরে জোর না থাকলে বোধহয় মানুষের চোখে পানিও আসে। অথচ একটা সময় এই লোকটার কতই না দাপট ছিল।
_______________________
নানা রঙের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে বাসর ঘর। আর সেই ঘরে সাজানো খাটে বউ হয়ে বসে আছে কাকন। আর কাকন কে ঘিরে আছে আলেয়া, রোকেয়া, সামিয়া আর পারুল। সাথে আরো মেয়েরা আছে তবে কাকন তাদের চেনে না। সকলে নানা রকমের হাসি তামাশা করছে।
সামিয়া বলে উঠলো,”ইশ ভাবিজান তোমায় যে সুন্দর লাগতাছে আজ রাতে দাদাভাই খালি চাইয়াই থাকবো।”
চারিদিকে শুরু হল আবার সেই ধ্বনি “হিহিহিহিহিহি”
–“আরে সামিয়া বাসর রাইত আজকা। শুধু কি চাইয়াই থাকবো নাকি হুম।”
—“হাহাহাহাহা”
–” শোনো গো ভাবিজান আমার দাদাভাই কিন্তু লাখে একটা তাই আঁচলে বান্ধা রাইখো।”
এর ই মাঝে রুহুলের দাদিমা এলো। এসে বসলো কাকনের কাছে। তারপর বললো, “শোন কাকন আজ রাইত ই হইলো জামাই রে হাতে করার। তোর সুয়ামি খালি বিলাত যাইবার চায় তুই ওরে হাত করবি যাতে ও আর না যায়। আর হ্যা তুই হইলি এই সিরাজী বাড়ির বড় পোলার বউ। তোর দায়-দায়িত্ব বেশি। আমার আর তর দাদাজানের খুব সখ ম’রার আগে রুহুলের ঘরের পোলাপান দেইখা যামু। তাই তিনমাসের মধ্যেই জানি সুখবর পাই।আর আমার বিলালের শরীরডাও ভালা না তাই তাড়াতাড়ি বংশের বাত্তি দিবি,কী পারবি না তুই?”
দাদিশাশুড়ীর কথা শুনে ভড়কে গেলো কাকন। সবে এ বাড়িতে এলো সে এর মধ্যেই কত কি চেয়ে বসলো। কাকন কি পারবে এগুলো পুরণ করতে। কাকন মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো যে সে পারবে। আর মুখ ফুটে বললো,”আমি চেষ্টা করবো দাদি। ”
–“না চেষ্টা না তর কইরা দেখান লাগবো। আমার মানিক রে এই মঞ্জিলে বাইন্ধা রাখার একমাত্র উপায় হইলো তুই। রুপ যৌবন সব ই তো আছে তোর এই জন্যই তরে আমি পছন্দ করছিলাম। তাড়াতাড়ি আমার বংশের বাত্তি দিবি তুই। আমি তো বারো-তেরো বছর এই বিলাল রে জন্ম দিছিলাম। তোর ১৫ বছরের ও বেশি বয়স। তুই ও পারবি। আমি কইয়া দিলাম তোরে তিন মাসের মধ্যেই পুয়াতি দেখবার চাই।”
কাকন কি বলবে বুঝতে পারলো না। আসতে না আসতেই তার উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মাথা নিচু করে রইলো। সামিয়া কাকনের কাধে হাত রেখে বললো,” দাদিমা আপনে এইখান থিকা যান তো। এইখানে আমরা শিয়ানা(যুবতী)মাইয়ারা থাকমু খালি।”
— “ওরে আমার শিয়ানা মাইয়ারা থাকবো রে। থাক আমি থাকবার জন্য আসি নাই। তয় আলেয়া, রোকেয়া নতুন বউরে নিয়ম কানুন শিখায়া দিয়া তরাও সুয়ামির কাছে চইলা যা। আমি যাই মানিক রে পাঠায়া দেই।”
দাদি চলে যাওয়ার পর সামিয়া কাকনের হাত ধরলো তারপর বললো, “ভাবিজান চিন্তা কইরো না,,দাদাভাই থাকতে তোমারে কেউ কিছুই কইতে পারবো না। দাদাভাই শুনলে উলটা বুড়িরেই পুয়াতি বানাইয়া দেওয়ার ব্যবস্থা কইরা দিবো। হাহাহাহা।”
সামিয়ার কথায় কাকন এবার হাসলো। বুড়ো বয়সে পুয়াতি হওয়া কি আর আদোও সম্ভব।
আলেয়া, রোকেয়া, পারুলরা কাকনের সাথে নানা হাসি ইয়ার্কি করতে থাকলো।কাকন এর এখন ওদের সাথে ভীষণ ভালোই লাগছে।
_____________________
সিরাজী মঞ্জিলের অন্দরমহলে বকুলের কক্ষে রুহুলকে ঘিরে রয়েছে বকুল আর তার দুই বোনের স্বামীরা। তাদের কথা মতো তাদের চাওয়া জিনিস না দেওয়া পর্যন্ত যেতে দিবে না। রুহুল ওদের বলা সব কিছু নিয়ে এসেছে কিন্তু সেইটা লতিফের নিয়ে আসার দায়িত্ব । কিন্তু লতিফ না নিয়ে আসা অব্দি রক্ষে নেই।একেবারে নাছোড়বান্দা যাকে বলে। অগত্যা রুহুল কে এখানেই থাকতে হচ্ছে।
লতিফ হাসতে হাসতে ব্যাগ নিয়ে এলো। সেখানে বিদেশি মদ আছে যা রুহুল লোক দিয়ে নিয়ে এসেছে এবং লতিফ তা সিরাজী মঞ্জিলে নিয়ে এলো কেবল।
লতিফ কে দেখেই রুহুল বলে উঠলো, ” এতক্ষণ লাগলো আসতে,শুধুমাত্র তোর জন্য এতক্ষণ ধরে আমার এখানে থাকতে হলো।”
লতিফ পান খাওয়া ফোকলা দাঁতের হাসি নিয়ে বললো, “ইয়ে মানে রাস্তায় খুব জোরে হাগা আইছিল তাই ক্ষেতের মধ্যেই বইসা পড়ছিলাম,, ঘাটে যাইয়া হাত দুইয়া আইতে আইতে দেরি হইয়া গেছে দাদাভাই।”
লতিফের কথায় বকুল হোহোহো করে হেসে দিলো।
রুহুল বললো, “যত্তসব। এবার আমি উঠি, যা চেয়ে ছিলে সব ই আছে, আশা করি এখন আর আমাকে এখানে ধরে রাখবে না তোমরা। ”
–“আরে আরে কই যাও তোমারে ছাড়া কি আর আমরা একাই খাবো নাকি হ্যাঁ! ”
–“আরে রুহুল মিয়া তুমিও খাও তাহলে শরীরে আজ আলাদা জোর পাইবা যা তোমার দরকার। ”
দুই দুলাভাইএর কথা শুনে হাসতে শুরু করলো বকুল। বললো, “বাহ ভাই এই জন্যই বলে বিবাহিতদের থেকেই পরামর্শ নিতে হয়। আমার বিয়েতেও কিন্তু আপনারাই পরামর্শ দিবেন দুলাভাই। হাহাহাহা।”
এদের কথায় রুহুল বললো “চুপচাপ যা এনে দিয়েছি খাও এখন আর কোনো বাধা শুনতে পারবো না।তোমাদের সাথে থেকে কি রাত শেষ করব নাকি।”
–“হুম তর সইছে না বুঝি সব বুঝি সিরাজী সাব।”
রুহুল বিরক্তিতে “চ” এর মত উচ্চারণ করলো।
–“আহা কি ঘ্রাণ,, এক চুমুক খেয়েই দেখো না রুহুল, রাত তো এখনো পড়েই আছে। ”
রুহুল বললো,” তিন কবুল বলে বিয়ে করা আমার বউ কে আমি কেন অপেক্ষা করাবো। তাও আবার এইসব ছাইপাঁশ এর জন্য। তোমাদের জন্য যা দিয়েছি সেটা নিয়ে থাকো,আমি চললাম আমার বউ নিয়ে থাকতে।”
–“আরে বন্ধু তোর বউকে কেউ নিয়ে যাচ্ছে না তো।”
—”আর কোনো কথা নয় চুপচাপ এই কক্ষে থাকবি তিনজন।বাইরে লতিফ পাহাড়া দিবে,আমি চললাম।”
রুহুল দরজা খুলে বেরোবে এমন সময় পিছন থেকে তিন জনেই একসাথে দাত কেলিয়ে হেসে বলে উঠলো,”শুভকামনা রইলো সিরাজী সাহেব।”
রুহুল পিছন ফিরে মুচকি হেসে বেরিয়ে পড়লো নিজ কক্ষের উদ্দেশ্যে। সেখানে যে তার অপেক্ষার অবসান ঘটাতে হবে।
__________________
বিয়ে বাড়িতে সবাই যার যার মতো ব্যস্ত। সবাই যার যার কক্ষে নিদ্রায় আছন্ন । অন্যদিকে জামালের গুপ্তকক্ষে হেলাল, বেলাল, আর মহীবুল বসে আছে। সামনে মদের বোতল পড়ে আছে অথচ কেউ ছুয়েও দেখছে না। মুখ থমথমে অবস্থা সকলের মধ্যে বিরাজমান।তিনজনই চিন্তিত।
–“আব্বা হাবিবুল্লাহর তো কোনো খোজ পাইলাম না।”
–“চাচা আমি আর মহী মেলা খুজছি আনাচে কানাচে লোক দিয়া খুজাইছি কিন্তু নাই হাবিবুল্লাহ।”
জামাল এবার পড়নের লুঙ্গি দিয়ে কপালের ঘাম মুছলো তারপর বললো, ” হবি যদি মইরা যাইয়া থাকে তাইলে “আলহামদুলিল্লাহ” আর যদি কারো ধরা পইড়া থাকে তাইলে আমাগো অবস্থা খারাপ আছে।”
–” আব্বা আমার মনে হইতাছে এই কাম রুহুল ছাড়া কেউ করে নাই,নিশ্চিত ও টের পাইয়া এই কাম করছে।”
হেলাল বলে উঠলো, “না এইডা দাদাভাই করে নাই কারণ আমি নিজে কাইল স্বচোক্ষে দাদাভাই এর বন্ধু আর দাদাভাই রে একসাথে ঘুমাইতে দেখছি তারপর হবিবুল্লাহ রে পাঠায়ছিলাম।”
জামাল নিজের দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বললো, “তাইলে হবিবুল্লাহ গেলো ডা কই।”
চলবে…….
#দেবী
#শবনম_রাবাহ