দেবী,১৯,২০

0
330

#দেবী,১৯,২০
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী )
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
১৯ঃ

রুহুল তার বিবিজান কে দেওয়া কথা রেখেছে। সকালে খাওয়ার পর সিরাজী মঞ্জিলের সকল কে রাজি করিয়েছে যেন কাকন কে মহিলাশালায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। রুহুলের কথায় কেউ আপত্তি না করলেও আপত্তি করেন দাদিমা। কিন্তু রুহুলের জেদের কাছে তাকে হার মানতে হয়। কাকন ও বেশ খুশি হয় মহিলাশালায় যাওয়ার অনুমতি পেয়ে।

গরুর গাড়িতে চড়ে চললো কাকন মহিলাশালার উদ্দেশ্যে। পাশেই বসে আছে রুহুল। সিরাজপুরে মেয়েদের বেপর্দাভাবে চলা নিষেধ। বোরকা না পড়লেও মাথায় আচল দিয়ে চুলসহ মুখ ঢেকে চলতে হয়। আর সেখানে কাকন সিরাজী মঞ্জিলের বউ তাই সেও বোরকা পড়ে কেবল চোখ দুটি বের করে চলছে মহিলাশালায়। চারপাশে নজর বুলালো কাকন এক সপ্তাহ পর আবার এই রাস্তা। যেন কত বছর দেখা হয় না। কাকনের মনে হচ্ছে এই পাঁচ মিনিটের পথ যেন শেষ হচ্ছে না। তবে বহুদিন পর গরুর গাড়িতে কাকনের ভালোই লাগছে। সাথে প্রকৃতির ছোয়া পাচ্ছে। পথ চেয়ে দেখতে দেখতেই মহিলাশালায় পৌছে গেলো কাকন। গাড়ি থেকে রুহুল হাত ধরে কাকন কে নামালো। রুহুলের হাত ভর্তি দই-মিস্টি আর কিছু বাজার। কাকন নামার পরেই দৌড়ে মহিলাশালার গেইট ভেদ করে ভিতরে চলে গেলো। কাকনের দৌড় দেখে রুহুল হাসলো। তার বিবিজান এখনো বাচ্চাই রয়ে গেছে। রুহুল ও মহিলাশালার ভিতরে গেলো।

কাকন মহিলাশালার ভিতরে ঢুকেই মুখের নিকাপ খুলে ফাতিমাকে পিছন থেকে জাপ্টে ধরলো। অঝোরে ঝরতে লাগলো চোখের পানি। ফাতিমা হঠাৎ আক্রমণে বিব্রত হলো। কিন্তু কাকনকে দেখেই নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো। ফাতিমাও কাদতে লাগলো। ফাতিমা এবং কাকন দুজনের ই যেন শুন্য বুক পরিপূর্ণ হলো। কাকনের আগমনী বার্তা শুনে সকল মেয়েরা ছুটে এলো। নুপুর, ফুল,রিতা, কাকন কে দেখেই হাত এগিয়ে দিলো। কাকন ফাতিমা কে ছেড়ে ওদের কেও জড়িয়ে ধরলো। সকলের সাথে চোখের পানি মুছে কথা হাসি মুখে কথা বলতে লাগলো।

দূর থেকে কাকনের এসকল কীর্তি দেখছিল। কাকনের চোখের পানি দেখে কিছুটা খারাপ লাগলেও এখন হাসি মুখ দেখে স্বস্তি লাগলো। রুহুল এগিয়ে গেলো ফাতিমার কাছে। গিয়ে বললো, “আসসালামু আলাইকুম আপা”

ফাতিমা উত্তর নিলেন,”ওয়ালাইকুম সালাম, শরীর কেমন আছে আপনের?

রুহুল বললো, “ভালো, এই নিন এগুলো রাখেন আর সকল মেয়েদের দেবেন কেমন। আর আমি এখন আসছি ওনাকে সন্ধ্যায় নিয়ে যাবো । ”

সন্ধ্যায় নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে ফাতিমা কাকন দুজনের ই মন উদাস হয়ে গেলো।
ফাতিমা বললো, ” আজ্ঞে কিছু যদি মনে না করেন কাকন আমার কাছে থাইক কয়ডা দিন”

রুহুল দেখলো কাকন করুণ চোখে তাকিয়ে আছে ওর উত্তরের আশায়। রুহুল মাথা নিচু করে বললো,” আমায় ক্ষমা করবেন আপা। আমি পারবো না। দাদিমার নিষেধ ছিল তবুও নিয়ে এসেছি।সন্ধার পর নিয়ে যেতেই হবে।”

কাকনের চোখ ফেটে যেন এখন কোনো কুপ সৃষ্টি হবে। রুহুল কাকনের চোখের দিকে চেয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলো না কাদতে এবং রাজি হয়ে যেতে। কিন্তু কাকন বাচ্চা দের মতো কেদে দিলো। কাদতে কাদতে নিজ কক্ষে গেলো। বেচারা রুহুল বিরাট ফ্যাসাদে পড়ে গেলো,যেন। এখন তো আর সে মেয়েদের কক্ষে ও যেতে পারবে না আর না বিবিজানের রাগ ভাঙাতে পারবে।
রুহুল ফাতিমার কাছে যেয়ে বললো, “আপা ওনাকে একটু বুঝান না যেন অভিমান না করে। আপনার কথা উনি ফেলবে না। ”

ফাতিমা রুহুল কে বললেন, ” হুম আপনে চিন্তা কইরেন না আমি বুঝামু নি ওরে। ”

রুহুল বললো, “বেশ আমি তাহলে এখন আসি। সন্ধ্যায় এসে নিয়ে যাবো। ”

রুহুল একবার ঘরের দিকে চাইলো। বিবিজান এর থেকে বিদায় না নিলে তার মন বসবে না কাজে। তবুও মনকে শান্তনা দিয়ে বের হয়ে গেলো মহিলাশালা থেকে।

ফাতিমা রুহুলের যাওয়া দেখে হাসলো। রুহুলের মতো গম্ভীর বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি যে কাকনের প্রেমে কুপকাত তা বুঝতে বাকি নেই। ফাতিমা হাতের কাজ ফেলে কক্ষে গেলো। গিয়ে দেখলো কাকন বালিশ কোলে নিয়ে সেই বালিশে ভড় করে দুই হাত গালে দিয়ে মন মরা হয়ে বসে রয়েছে।
ফাতিমা কাকনের কাছে বসে বললো, “কেমন আছা?”

কাকন ফাতিমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপা,,
আপনার শরীরের এই অবস্থা কেন, আপনার কি বুকের ব্যাথা আবার বেড়েছে আপা ?”

ফাতিমা কাকনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
“না বুকের ব্যাথা না, তরে ছাড়া আমার ভালো লাগে না রে মা।বুকের মধ্যে খালি খালি লাগে তরে ছাড়া। এই যে তুই আইছা আমি আবার ভালো হইয়া গেছি”

কাকন ফাতিমা কে জড়িয়ে ধরে বললো, ” আমারো এমন লাগে আপনাকে ছাড়া। ইচ্ছে করে চলে আসি কিন্তু আমার হাত পা যে তো বেধে দিয়েছেন আপনি।”

ফাতিমা কাকন কে বললো, ” ওইখানে যে তুই সারাজীবন ভালো থাকবি মা। সাতদিনে তর চেহারা কিন্তু ঘুইরা গেছে। তরে এখন সিরাজী মঞ্জিলের মানুষগো মতো লাগে।”

কাকন মুখ ছোট করে বললো, “আমি সেই আগের কাকন ই আছি আপা। শুধু বেশ পোশাকে জমিদারি আভিজাত্য। উনি নিজে এগুলো পোশাক এনে দিয়ছেন আমাকে কি আর করার।”

–“হুম তর সুয়ামির কথায় বুঝা গেলো হে তরে মেলা ভালোবাসে। লোক টা ভালো, তারে কোনোদিন কষ্ট দিস না। যাওয়ার সময় তার চোখ তরে খুজতে ছিল সে আমি ভালোই বুঝছি।”

ফাতিমার কথায় কাকন মুচকি হাসলো।বললো, “উনি বড্ড বেহায়া আপা। জানেন সকলের কাছে আমায় লজ্জায় ফেলে। আর সকলে নানা কথা বলাবলি করে। বাড়ির কাজের লোক গুলো পর্যন্ত আমাকে লজ্জা দেয়। আমার তখন ইচ্ছে করে পালিয়ে যাই। ”

কাকনের কথায় ফাতিমা উচ্চস্বরে হেসে দিলো। বললো,” পাগলি মাইয়া,,সুয়ামি চোক্ষে হারায় এইডা তে যে মাইয়া মানুষগো কত সুখ সেইডা একমাত্র তারাই বুঝে যারা সুয়ামির ভালোবাসা পায় নাই”

কাকন বুঝলো ফাতিমার বিরহের বেদনা। তাই বললো,
“সে হারাক গিয়ে,, আপা চলেন না বাইরে যাই সকলের সাথে কথা বলি। আর আজকে আমি রাধবো।”

ফাতিমা বললো,”ঠিক আছে চল।”
____________________

আজ যেন মহিলাশালা হেসে উঠেছে। সবাই খুব বেশি খুশি হয়েছে। রুহুলের আনা মিস্টি সবার হাতে হাতে বিলিয়ে দিয়েছে ফাতিমা। আর কাকন আজ রান্না করছে আর রান্না শেষে সকলেই তৃপ্তি সহকারে খেয়েছে।
খোলা উঠোনে বসে আছে সকলে। ঝড়ে পড়া কাচা আম মাখিয়েছে রিতা। কাকন সহ সকলেই খাচ্ছে আর গল্প করছে। তাদের আড্ডার মুল হলো কাকনের শশুড় বাড়ি কিভাবে থাকে, কে কেমন ইত্যাদি।

কাকন আসার পর থেকেই খেয়াল করছে নুপুর কে বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছে।কাকন ফুল কে বললো,”ফুল আপা, নুপুর আপা কে আজ এত খুশি দেখাচ্ছে কারণ কি?”

কাকনের কথায় সকলে হাহাহাহা করে হেসে উঠলো। কাকন খেয়াল করলো নুপুর লজ্জা পাচ্ছে। কাকন আবারও বললো,”আরে তোমরা এভাবে হাসছো কেন?”

রিতা বললো, “আরে কাকন নুপুর আপার বিয়া ঠিক হইছে তাই এমন করতাছে ”

কাকন খুশি হয়ে বললো, “বাহ কার সাথে ওই যে মেলার লোকটার সাথে নাকি?”

ফুল বললো,”হ সোহাগ ভাই এর সাথেই। পরশু আইছিল মহিলাশালায় খুব তাড়াতাড়ি ই বিয়া হইবো আমাগো নুপুরের। ”

কাকন কথা টা শুনে বেশ খুশি হলো। বললো, “অভিনন্দন আপা,,তোমার ইচ্ছে টা এবার পুরণ হলো।”

নুপুর আবারো লাজুক হাসলো।ভালোবাসার মানুষের সাথে বিয়ে বলে কথা তার যে বহুদিন এর স্বপ্ন পুরণ হতে চলেছে। নুপুর বললো,” হ্যাঁ সে বটে কিন্তু কাকন তোর কিন্তু আমারে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত?”

কাকন কাচা আম মুখে দিয়ে মখে টক টক ভাব এনে বললো, “কেন নুপুর আপা আমি ধন্যবাদ কেন দেবো?”

নুপুর বলল, “বাহ রে আমার জন্যই তো তোর বিয়া ডা হইলো, এত সুন্দর জামাই পাইলি?”

কাকন মুখে আম নিবে ওমনি কথা টা শুনে আর নিলো না। কথাটা সত্যিই বলেছে নুপুর। সেদিন যদি কাকন নুপুর কে না হারাতো তাহলে একা আসতোও না আর জঙ্গলে দুর্ঘটনা ঘটতো না আর না রুহুলের সাথে বিয়ে হতো। কাকন হাতের আম টুকু মুখে নিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলল,” কিন্তু আমার তো তোমাকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে না আপা। ”

কাকনের কথায় সকলে ওর দিকে তাকালো।
নুপুর বললো, “কেন রে কাকন, সিরাজী মঞ্জিলের বউ হইয়া কি কিপটা হইয়া গেলি নাকি সামান্য ধন্যবাদ দিতে পারবি না আর কেন দিবি না শুনি?”

কাকন বলল,” তার জন্য নয় বরং তোমাকে এই জন্য ধন্যবাদ দিবো না কারন তোমার জন্যই আমার মহিলাশালা ছেড়ে বিয়ের পীড়িতে বসতে হলো। আমি মোটেও বিয়ে করতে চাই নি। আমি সর্বদা এখানেই থাকতে চেয়েছি।”

নুপুর বললো,”ধুর পাগলি বিয়া করতে চাস নাই তো কি হয়েছে বিয়া তো হয়া গেছে আর তাও আবার সিরাজী মঞ্জিলে বিয়া হইছে।”

ফুল বলল,”তোর ই তো কপাল রে কাকন জামাই ও সেরা সংসার ও সেরা”

কাকন হেসে বললো, ” হ্যা তা ঠিক। আমার মতো কপাল বোধহয় খুব মানুষের ই আছে। সে যাই হোক নুপুর আপা তোমার বিয়েতে কিন্তু আমি আসবো। আমাকে কিন্তু দাওয়াত দিতে হবে।”

কাকনের কথায় নুপুর বললো, “সে তো দিমুই। তরে ছাড়া কেমনে বিয়া করুম।

এভাবেই হাসতে হাসতে পার হচ্ছিল আজকের দিন।
বিকেলে সকল বাচ্চা মেয়েরা খেলছে। আজ হঠাৎ কাকনের খেলতে ইচ্ছে করছে। নুপুর, রিতা,ফুল সহ সকলেই বসে আছে। রিতা প্রস্তাব দিলো যে কাকন খেলবি নাকি চল আজ আমরা খেলি। কাকন যেন প্রস্তাব টা অগ্রাহ্য করতে পারলো না। উঠানে কোট টানা হলো খেলার জন্য । তারপর কাকন সহ চার-পাঁচজন কুতকুত খেলা শুরু করলো। কাকন কোমড় পর্যন্ত চুল গুলো খোপা করে নিলো। তারপর শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজে নিলো ।ব্যাস শুরু হয়ে গেলো খেলা।
___________________

অন্যদিকে রুহুলের আজ যেন কোনো কাজে মন বসছে না। আজ সারাদিন যত কাজ ই করেছে বার বার খালি কাকনের লাল নাক আর জলে টইটম্বুর আঁখি জোড়া ভেসে উঠেছে। আজ দুপুরে ভালোভাবে খেতেও পারে নি রুহুল। মন টা খালি বিবিজান বিবিজান করছে। আজ পাইকারদের সাথেও ভালো ভাবে কথা বলতে পারে নি। রাগের মাথায় কর্মচারী দের সাথেও খারাপ আচরণ করেছে। মাথা কাজ করছে না তার। রুহুল আর থাকতে পারলো না। বাধ্য হয়ে সিরাজী মহিলাশালার উদ্দেশ্যে হাটা ধরলো। বিবিজানের অভিমান ভাঙাতে হবে আর হাসি মুখ খানা দেখতে হবে তা না হলে মনপাজরে শান্তি নেই। রুহুল মহিলাশালার গেইটের সামনে পৌছালো। গেইট খুলে ভিতরে ঢুকেই থমকে গেলো।
কাকন শাড়ির কুচি উঁচু করে তুলে কুতকুত খেলছে। কোমড় পর্যন্ত লম্বা চুল গুলো প্রত্যকে লাফে লাফে যেন আরো সুন্দর লাগছে। কাকনের এমন রুপ দেখে রুহুল আরো প্রেমে পড়লো। খেলতে খেলতে কাকন ঘেমে লাল হয়ে গেছে। চুল গুলো যখন হাত খোপা করলো ওই মুহুর্তে রুহুল ঢোক গিললো। এত সুন্দর কেন তার বিবিজান। রুহুলের ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। রুহুল দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাকনের খেলা দেখছে। কাকন জিতে গেলে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। সারাদিনের সকল বিরহ যেন নিমিষেই গায়েব হয়ে গেলো রুহুলের। এর মাঝে ফাতিমার নজরে পড়লো রুহুল কে।
ফাতিমা যখন রুহুল সিরাজী বলে ডাকলো কাকন রুহুল কে দেখে আঁচল ঠিক করলো। রুহুলকে দেখে সকল মেয়েরাই লজ্জা পেয়ে গেলো। এদিকে সন্ধ্যা ও হয়ে আসছে। ফাতিমা সকল মেয়েকে হাত পা ধুয়ে কক্ষে যাওয়ার তাড়া দিলো। ধীরে ধীরে সবাই যে যার মতো ঘরে চলে গেলো।

রুহুল এগিয়ে আসলো কাকনের কাছে। কাকনের দিকে ঝুকে বললো, “বেশ ভালো কুতকুত খেলতে পারেন তো বিবিজান। তবে তার চেয়েও বেশি খেলেছেন আজ আমার মন নিয়ে।”

কাকন রুহুলের কথা রুহুলের মুখপানে চাইলো। কাকন মুখ ঘুরিয়ে নিলো। মসজিদে মাগরিবের আজান দিলো মুয়াজ্জিন। রুহুল আবারও বললো,” আমি মাগরিবের সালাত আদায় করে আপনাকে নিতে আসবো। যান আপনিও নামাজ পড়ে তৈরি হন বিবিজান। ”

নামাজ শেষে রুহুল আসলো কাকন কে নিতে। কাকন যেতে চায় নি কিন্তু ফাতিমা এক প্রকার জোর করেই পাঠিয়ে দিচ্ছে। আজ কাকন কাদেনি বরং নিজেকে শক্ত রেখেছে। ওর এখন পুরো দুনিয়া কে শত্রু মনে হচ্ছে। রুহুল জোর করে নিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে ফাতিমা জোর করে পাঠাচ্ছে। রোজকার ন্যায় আজও ফাতিমা কাদলো।

রুহুল বেশ বুঝলো তার স্ত্রীর জেদ। রুহুল সাথে থাকা গরুর গাড়িতে উঠলো না বরং টাকা দিয়ে চলে যেতে বললো। রুহুল কাকনের হাত ধরে বললো “চলুন বিবিজান প্রকৃতি বিলাশ করি।”

তবুও কাকন কিছু বললো না। কেবল রুহুলের সাথে হাটতে লাগলো।

রুহুল আবারো বললো,”বলছিলাম যে আগামী সপ্তাহে ও আমার বিবিজানকে মহিলাশায় বেড়াতে নিয়ে আসবো। ”

কথাটা শোনা মাত্রই কাকনের সব অভিমান যেন গায়েব হয়ে গেলো। কাকনের রুহুলের হাত শক্ত করে ধরে বললো, “সত্যি আমাকে আগামী সপ্তাহে নিয়ে আসবেন?”

রুহুল কাকনের হাতে আরেক হাত রেখে বললো,”সত্যি”

রুহুল বুঝলো তার বিবিজানের রাগ-অভিমান গায়েব। তাই মনের কথা বললো, “জানেন যখন খেলছিলেন আমার মনে হচ্ছিলো আপনি আমার হৃদয় নিয়ে খেলছেন আমার এই হৃদয়ে এমন অনুভুতি হচ্ছিলো।
আর আপনাকে লাল শাড়িতে দারুণ লাগছিল। ”

কাকন পথের দিকে চোখ নিবদ্ধ করে বললো, “দয়া করে রাস্তাঘাটে আমাকে এগুলো বলে লজ্জা দেবেন
না। দিন দিন বড্ড অ’সভ্য হয়ে যাচ্ছেন আপনি।”

রুহুল কাকন কে বললো, “আচ্ছা তা আমি কি অসভ্যতামি করলাম শুনি ?”

— “এই যে কিসব বলছেন আমার খুব লজ্জা করে। জানেন সবাই নানারকম কথা বলে আমাকে লজ্জা দেয় আর এগুলো কেবল আপনার জন্যই।”

রুহুল কাকনকে আরো লজ্জা দিতে চায়। মনে মনে ফন্দি এটে বলল, “আপনার প্রিয় রঙ কি বিবিজান?”

কাকন পথের দিকে চেয়ে থেকে স্বাভাবিক ভাবেই বললো,” লাল, আর আপনার?”

রুহুল কাকনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো, “আমার বিবিজানের গায়ের রঙ।”

রুহুলের কথায় কাকন এর কান যেন গরম হয়ে গেলো।ফর্সা মুখখানা রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো। কাকন আস্তে করে বললো, “আপনি সত্যিই ভারি অসভ্য।”

চলবে……
#দেবী
#শবনম_রাবাহ

#দেবী
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
২০ঃ

বেশ হাসি খুশি ভাবেই কেটে যাচ্ছিলো কাকনের সংসার।কিন্তু বলে না যে সুখ বেশি দিন টিকে না। হয়তো রুহুল-কাকনের ভালোবাসায় ও কারো নজর লেগেছিল। দিন দিন যেন রুহুলের উপর কাজের চাপ বেড়ে যাচ্ছিলো। আগের তুলনায় কাকন কে সময় দিতে পারে না। প্রায় ই ঢাকা যেতে হয় এবং সেখানে ব্যবসার নানা কাজ করতে হয়। আর এদিকে কাকন সংসারের কাজ কর্ম করেই সময় কাটায়।

সিরাজপুরের নিচু ভুমি গুলো তে বন্যা হয়েছে। ঘাটে ঘাটে পানি আর এই পানির জন্যই দু’সপ্তাহ হলো কাকনের মহিলা শালায় যাওয়া বারন করেছে রুহুল। কাকনের মন ভালো করার জন্য রুহুল কাকনকে মহিলাশালায় যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। নিজে না যেতে পারলেও সামিয়াকে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। সামিয়ার ও মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে তাই সেও পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী হয়ে উঠেছে। আর কাকন সংসারের কাজ সামলায় আর রুহুলের জন্য অপেক্ষা করে।

গত সপ্তাহে রানুর বিয়ে হয়েছে লতিফের সাথে। মুলত লতিফ রুহুলের কাছে প্রস্তাব দেয় আর দুজনই যেহেতু একই বাড়িতে কাজ করে তাই রুহুল বিয়ের ব্যবস্থা করে দেয়। ঘরোয়া ভাবেই ওদের বিয়ে হয়।সব কিছু যেন গুছানো লাগে কাকনের কাছে। কোথাও কোনো কিছু অগোছালো নয়। তবে কাকন কাজ করে আর রানুর বৈবাহিক জীবনের নানা কার্যকলাপ শুনে হাসে। লতিফ একটু ঠাট্টা করলেই রানু ক্ষেপে লতিফ কে মারতে যায়। সেই সাথে লতিফের কাছেও যায় না। এসব নিয়ে বেশ হাসাহাসি করে সিরাজী মঞ্জিলের গৃহিণীরা।

কিন্তু সব কিছুর মাঝে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে বিলাল সিরাজীর। আজকাল তার চোখ বেয়ে শুধু পানিই পড়ে।তার ভিতরে বোধহয় অনেক কষ্ট, কিছু না বলতে পারা আক্ষেপ। রুহুল অনেক চিকিৎসা করিয়েছে কিন্তু ডাক্তার বলে দিয়েছে যে সব কিছু এখন আল্লাহ তায়লার হাতে। সবাই তাই বিলাল সিরাজীর বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু রুহুল হার মানে না। প্রত্যেক সপ্তাহে শহর থেকে গাড়ি দিয়ে ডাক্তার নিয়ে আসে।আর ডাক্তারের পরামর্শ মতো সুভা আর কাকন মিলেই বিলাল সিরাজীর সকল কাজ করে।

আজকেও কাকন রন্ধনশালার কাজ সেড়ে বিলাল সিরাজী কে সুভার সাথে খাওয়াতে গেছে। খাওয়ানো শেষে কাকন জিজ্ঞেস করলো, “আম্মা, আব্বাকে কি আগে আপনি একাই খাওয়াতেন?”

সুভা ছোট করে উত্তর দিলো,”হুম”

–” বাড়ির আর সদস্যরা কেন কাজ করে না আম্মা?”

–“খোকার নিষেধ তার আব্বাজানের কাছে আমি ব্যতীত কেউ আসতে পারবে না। গোসল করানো আর ভারী কাজের সময় মালেকা সাহায্য করতে পারবে!”

–“কিন্তু কেন সবাই তো নিজেদের লোক। নিজের রক্ত,নিজের আপনজন।”

–” আপন বললেই তো সবাই আপন হয় না। আত্মার সাথে আত্মার বন্ধুত্ব যাদের তারাই প্রকৃত আপন।”

–“কিন্তু উনি এমন করেন কেন আম্মা। আপনি, দাদাজান, দাদিমা আর আমি ছাড়া কেউ আসতে পারবে না। উনি বাড়ির সবাইকে কেবল আব্বাকে দূর থেকে একপলক দেখার অনুমতি দিয়েছেন। এটা তো ঠিক না আম্মা।”

সুভা কাকনের চোখে চোখ রেখে বললো,”আমার খোকা কখনো ভুল কাজ করে না কাকন। তোমার আব্বা কে কোনো জিন বা ভুত আহত করেনি বরং মানুষ তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে উনি আজ এখানে। তবে রুহুল ওর আব্বার মাথায় হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করেছে ওর বাবার এই অবস্থা যে করেছে রুহুল তাকে নিজ হাতে হত্যা করবে। এখন পর্যন্ত জানা যায় নি কে এই কাজ করেছে। ”

হত্যার কথা শুনে কাকন ভয় পেলো। তার স্বামী কাউকে হত্যা করবে একজন স্ত্রী হয়ে কিভাবে মেনে নেবে।কাকন বললো, “কিহ উনি হত্যা করবেন?”

কাকনের অবস্থা সুভা বুঝতে পারলো তাই বললো, “ভয় নেই আমার খোকা আর যাই করুক অন্যায়ভাবে হ’ত্যা করবে না। কিন্তু সঠিক শাস্তি ঠিকই দেবে। আসলে ওর আব্বার ভীষণ আদরের ছিল খোকা। ”

কাকন বিলাল সিরাজীর দিকে চেয়ে বললো, ” নিজের বাবার সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি অবশ্যই দেওয়া উচিত। তবে আজ আমি ওনাকে বলবো পরিবারের সবাই কে আব্বার কাছে আসতে দিতে দেখবেন
আব্বা ও খুশি হবে আম্মা।”

–“একটা কথা কি জানো, পর কখনো শত্রু হয় না, শত্রু আপন মানুষ ই হয় বুঝলে।এই জন্যই আমার খোকা এই কক্ষে সচারাচর কারো আসা নিষেধ করে দিয়েছে।”

–“কিন্তু ছোটাম্মা চাইলেও তো আসতে পারে উনি কেন আব্বার কাছে আসে না। ওনার ও তো স্বামী।”

–” মালেকা স্ত্রী হলেও স্বামীর দুঃসময়ে থাকার মতো নয়। আর থাকবেই বা কেন স্বামী হিসেবে সে তো মালেকা কে ভালোই বাসেনি।”

–“আপনাকে বোধহয় অনেক ভালোবাসতো তাই না।”

সুভা বিলালের দিকে চেয়ে থেকে বললো, “হ্যাঁ একসময় অনেক ভালোবাসতো আমায়। এক দিন না দেখলে তার নাকি রাতে ঘুম ই হতো না।”

–“হ্যাঁ আমি বুঝেছি আপনিও আব্বাকে এইজন্যই
এত ভালোবাসেন। আপনার সেবা যত্নেই প্রমানিত আপনিও আব্বাকে অনেক ভালো বাসতেন। ”

তারপর কাকন আবার মাথা নিচু করে বললো, ” উনিও বোধহয় আব্বার মতোই হয়েছে তাই না আম্মা। ”

সুভা কাকনের পানে চেয়ে বললো, “না, আমার খোকা তার আব্বার মতো হয় নি । সে তার আম্মার মতো হয়েছে। সে আমার মতো নিজের জীবনসঙ্গীকে বিনা স্বার্থে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। ”

কাকন কিছু টা অবাক হলো। তার এখন মনে হচ্ছে বিলাল সিরাজী সুভাকেও ভালোবাসতো না। তাহলে কি বিলাল সিরাজী তার কোনো স্ত্রী কেই ভালোবাসতো না।
কাকন শাশুড়ির হাত ধরে বললো, “আব্বা কি আপনাকেও ভালোবাসতো না আম্মা?”

সুভা সাধারণ ভাবেই বললো, “বললাম তো ভালো বাসতো। সে বাদ দেও আমায় কথা দাও দুনিয়ার সবাই আমার খোকা কে ছেড়ে গেলেও তুমি কোনোদিন ছেড়ে যাবে না। জানো আমার ছেলেটা এখন হাসে। অনেক হাসিখুশি থাকে।ওর আব্বার এমন দশার পর বছর যাবৎ একেবারে মন মরা হয়ে থেকেছে। ও ওর আব্বার কলিজা ছিল। ওর আব্বার এই অবস্থা ওর সহ্য হয় নাই দেখে বিদেশ চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই দুলাল সিরাজী খুব চালাক। নিজের বংশ রক্ষার জন্য জন্য সব করতে পারে। আর রুহুল এ বংশ রক্ষার্থের জন্য যোগ্য সন্তান। এই যে তোমাকে সে ঘরের বধু করে নিয়ে এসেছে সেটা কেবল বদনামের জন্য নয় বরং খোকা লকে সিরাজপুর আটকে রাখার জন্য ও।কারণ খোকা যথেষ্ট দায়িত্বশীল সে কখনোই স্ত্রীর প্রতি অবহেলা করবে না। স্ত্রী রেখে বিদেশে পাড়ি জমাবে না। আর এখন তো খোকা তোমায় ভালোবাসে। সিরাজপুর ছেড়ে আরো কোথাও যাবে না। তুমি জানো না,এই সিরাজী মঞ্জিলে মানুষের চেয়ে বড় মনে করা হয় মান-সম্মান কে। অসঠ আবরণে গড়া সকলে। তবে মনে রেখো সকল অসৎ এর মাঝে আমার খোকা সৎ।”

সুভার কথা গুলো কাকন প্রায় স্তব্ধ। সুভার মনে যে এই সিরাজী মঞ্জিলে নিয়ে ক্ষোভ সে তা উপলব্ধি করতে পারলো।সেই সাথে সুভার ভিতরে যে কষ্ট আছে তা কল্পনাও করতে পারে নি। আসলে বাস্তবতা বোধহয় এমন ই হাসির আড়ালেই লুকিয়ে থাকে হাজারো মানুষের কান্না। আর মিথ্যের আড়ালে থাকে সত্যতা।
________________

বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য পেরিয়ে আষাঢ়ের আগমন হয়েছে তিনসপ্তাহের বেশি। রোজই কম বেশি বৃষ্টি হয়। আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হচ্ছে, আর এ বৃষ্টির সৌন্দর্য উপভোগ করবে না এমন মানুষ বোধহয় খুব কমই আছে। আজ রাতেও তাড়াতাড়ি রুহুল আসছে না। কাকন ঘড়ির কাটা দেখলো রাত ১১ টার বেশি। এদিকে বাইরে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। কক্ষের সকল জানালা বন্ধ। কেবল বাড়ান্দার দরজায় দাড়িয়ে আছে কাকন।

খোলা বাড়ান্দায় পড়া প্রতিটি বৃষ্টির ফোটা দেখছে কাকন। খুব ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজতে। ছোট বেলায় কত ভিজেছে বৃষ্টিতে। আর এই বৃষ্টিতে ভেজার জন্যই মা কতই না মে’রেছে। একবার তো খুন্তি নিয়ে পুরো বাড়ি ছুটেছিল। বাবা বাড়িতে ছিল বলে রক্ষে হয়েছিল। কাকনের সকল আবদার যে তার বাবাই পুরণ করতো। সর্বদা বলতো ‘আমার মা এর আবদার সবার আগে, যা চাইবে তাই পাবে।’ কাকন বলতো ‘বাবা আমি যদি বলি আমাকে আকাশ থেকে তারা এনে দাও দিতে পারবে।’ বাবা বলতো ‘তুই আগে বড় হ মা তোকে তারার রাজ্যে বিয়ে দেবো। সেখানে তুই যতখুশি তারা নিয়ে খেলতে পারবি।’ কাকন মুখ গোমড়া করে বলতো ‘আমি বিয়ে করতে চাই না বাবা। আজীবন তোমার কাছে থাকতে চাই। আমাকে বিয়ে দিলে আমি খুব কাদবো খুব।’ তারপর বাবা বলতো, “বেশ আমার মা কে বিয়ে দেবো না।’ খুশিতে বাবাকে জড়িয়ে ধরতো কাকন। সারাবাড়ি নেচে বেড়াতো। অথচ সেই দুষ্ট, চঞ্চল কাকন আজ এত শান্তশিষ্ট।সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে প্রানোচ্ছল সত্তা।

যেদিন কাকন বাবা-মাকে হারিয়ে ছিল সেই দিন ও তো বৃষ্টি হয়েছিল আর আজ ও বৃষ্টি হচ্ছে। পার্থক্য শুধু এটাই, সেদিন ছিল ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড় যা সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল আর আজ শান্তির বৃষ্টি। কাকনকে আর একটা বার পৃথিবী সুযোগ দিলে সে বোধহয় নিজের বাবা মাকে নিয়ে আরেকটা বার বাঁচতে চাইতো। নিজের কাছে আগলে রাখতে চাইতো।

জোরে নিশ্বাস ফেললো কাকন। তার কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে। কাকন নিরবে হেটে বাড়ান্দায় গেলো। আজ হঠাৎ করে আবার তার শুন্য অনুভব হচ্ছে। কাকন আনমনে কক্ষ থেকে বাড়ান্দায় চলে এলো। বৃষ্টির প্রত্যেক টা ফোটা তার শরীরে যেন লোম কুপ ভেদ করে শরীরে প্রবেশ করছে এমন অনুভব হচ্ছে। কাকন দুই হাত মেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টিবিলাশ করতে লাগলো। বৃষ্টির ফোটায় ফোটায় হৃদয়ের সকল ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো। ধীরে ধীরে অস্থির চিত্তে শান্তি অনুভব করলো কাকন। বেশ অনেকক্ষণ এভাবেই দাড়য়ে রইলো বৃষ্টিতে নিজের সুখ খুজে নিতে।
__________________

রাত প্রায় ১১ঃ৪৫ ছুই ছুই। আমলাপাড়ায় গিয়েছিল রুহুল। বৃষ্টিতে পথে-ঘাটে পানিতে টইটম্বুর। সিরাজপুরর আসতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাকে। ছাতা থাকা সত্ত্বেও ভিজে গেছে। তবুও এই ঝড়ের রাতে বিবিজান কে একা রাখা তার পক্ষে সম্ভব না। তার বিবিজান যে বড্ড ভীতু স্বভাবের। যদি একা থাকতে ভয় পায়। তাই রুহুল ভিজতে ভিজতেই চলে এলো সিরাজী মঞ্জিলে। সকলেই ঘুমিয়ে পড়েছে বোধহয়। প্রহরীরা দরজা খুলে দিলো। রুহুল সন্তর্পণে অন্দরমহলে ঢুকলো। তার উদ্দেশ্য বিবিজানের ঘুম না ভাঙিয়েই বুকে জড়িয়ে ঘুমানো। এমন সুন্দর রাতে বিবিজান কে বুকে নিয়ে ঘুমালে ঘুম বেশ ভালো হবে তার।

রুহুল কক্ষে প্রবেশ করলো। হারিকেন জ্বালানো অথচ কক্ষে কাকনকে দেখতে পেলো না রুহুল। ভাবল হয়তো সামিয়ার সাথে আছে। কিন্তু পরক্ষণেই বাড়ান্দায় উকি দিয়েই যেন থমকে যায় রুহুল। ঘরের হারিকেনের আলোতে কাকন কে আবছা দেখা যাচ্ছে। পিছন থেকে এমন অবস্থায় কাকনকে যেন আবেদনময়ী লাগছে। রুহুল তার স্ত্রীকে এমন অবস্থায় দেখে পাগলপ্রায় তার ফলে নিজেকে সামলানো বড় কঠিন।

কাকন বৃষ্টির মাঝে ঠিক একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টিতে খোপা হালকা খুলে ঢিলে হয়ে গেছে। খোপা কিছুটা নিচে নেমে এসেছে। হালকা গোলাপি রঙের তাঁতের শাড়ি ভিজে শরীরের প্রতিটি ভাজ দৃশ্যমান।

রুহুল নিজের কপালে থাকা চুলো গুলো হাতের সাহায্যে পিছনে সড়িয়ে নিলো। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো কাকনের দিকে। পিছন থেকে কাকনের কোমড়ে হাত রাখলো। কাকন হঠাৎ কোমড়ে কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পাওয়া মাত্রই কেপে উঠলো।কাকন রুহুলের দিকে ফিরে কিছুটা পিছিয়ে গেলো। কাকন বোধহয় এখন রুহুলকে আশা করেনি। কিন্তু রুহুল যেন ঘোরে চলে গেছে সে আজ ধরণীর কোনো বাধা মানবে না। রুহুল এগিয়ে গিয়ে কাকনকে নিজের নিকটে নিয়ে এলো। কিছুক্ষণ কাকনের মুখোপানে চেয়ে রইলো।তারপর বাম হাত দিয়ে কাকনের কোমড় আকড়ে ধরলো। আর ডান হাত দিয়ে কাকনের থুতনি উচু করে ললাটে অধর ছুয়ালো এবং পরম আবেশে নিজের বক্ষে জড়িয়ে নিলো। এরপর পাজাকোলে তুলে কক্ষে নিয়ে গেলো ভালবাসার অর্ধাঙ্গিনী কাকনকে।

কক্ষে হারিকেনের তীব্র আলো জ্বলছিল। আর রুহুলের হৃদয় জ্বলছিল প্রণয়ের তাপে। বোধহয় এই রাতেই পৃথিবীর বুকে আষাঢ় মাসে বিরহের সর্বনাশ ঘটেছিল আর রুহুল কাকনের পবিত্রবন্ধনের প্রণয়লীলা শুরু হয়েছিল। সে রাতে তাদের ঘরের হারিকেন এর আলো প্রথমবারের মতো নিভানো হলো না। সারারাত জ্বালিয়ে রাখা হলো। আর সেই আলোয় পুড়ে ম’রলো কাকন।

চলবে….
#দেবী
#শবনম_রাবাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here