#দেবী,২৩,২৪
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী )
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
২৩ঃ
বকুল-সামিয়াকে আলাপ করতে দিয়েই বিন্তি কাকন কে নিয়ে বেরোলো। কাকনের সেই দিনের কথা মনে পড়ে গেলো যেদিন রুহুল তার দিকে হা করে চেয়ে ছিল। রুহুলের প্রথম কথা শুনেই লজ্জায় রাঙা হয়ে গিয়েছিল মুহুর্ত টি আজও লজ্জা দেয় কাকনকে।সেই দু’লাইনের বাণী আজ ও ভীষণ প্রিয়। যা শুনে কাকনের মনে এক অদ্ভুত অনুভূতির হানা হয়েছিল।
বিন্তি কাকনের কাছে আবদার করেছে সে মহল দেখবে। আগে কখনোই এমন পুরনো জমিদার বাড়ি দেখা হয় নি তার। তাই কাকন ও সম্মতি জানালো। তিনতলা জমিদার বাড়ি। নিচতলায় সকল গুরুজন রা থাকে। আর দোতলায় রুহুল,মহীবুল, হেলাল, সামিয়া সহ আরো অনেক কক্ষ। তার মধ্যে কয়েকটা কক্ষ অতিথি দের জন্য। তবে কাকন এখন অব্দি তিনতলায় যায় নি। সব গুলোই অকেজো বলেছিলেন দাদিমা। তাই কাকন ও আগ্রহ করে নি। তবে সুযোগ বুঝে একদিন আসতে চেয়েছিল তিনতলায় কিন্তু সম্মুখীন হয়েছিল দুলাল সিরাজীর তারপর আর আসে নি।
দোতলার সব কিছুই দেখে বিন্তি বেশ মুগ্ধ।প্রত্যেকটা কক্ষ,প্রত্যেক টা আসবার সব কিছুই পুরনো আমলের আভিজাত্য যা বিন্তিকে মুগ্ধ করলো। বিন্তি সখ করলো এরপর সে আবার আসবে। আর অনেকদিন থাকবে তখন প্রত্যেক টা আকর্ষণীয় বস্তুর ছবি এঁকে নিয়ে যাবে। কাকন ও আর কিছুই বললো না।
দোতলা পার করে তিন তলায় যাবে এখন।বিন্তি বললো, “আআচ্ছা ককাকন ততোমার ব্বাড়ি ককোথায়? ”
কাকন স্পষ্ট ভাবে বললো, “আমার কেউ নেই। তাই আমার বাড়ি ও নেই আপা ”
–“এএভাবে ববলছো ককেন কেউ ন্নেই মামানে,, ররুহুল ভভাই তো আআছে। ”
কাকম হেসে বললো, “হ্যাঁ সে ই তো আছে। সে ব্যতীত আমার আপন বলতে দুনিয়ায় কেউ নেই।উনি ভীষণ ভালো মনের একজন মানুষ!”
–“হহুম, ততুমি জ্জানো আমি কিকন্তু রুহুল ভাই ককে পপছন্দ ককরতাম। এএইজন্যই তোতোমাদের বিবিয়েতে আসিনি।”
রুহুলকে অন্য নারী পছন্দ করে কথাটি কাকনের পছন্দ হলো না। তবুও বলল, ” হ্যাঁ অনেকেই চায় ওনাকে তবে সে শুধুই আমার”
–“তুতুমি অঅনেক ভভাগ্যবতী ওনাকে জজীবন সসঙ্গী হিসেবে পেপেয়েছো।”
কাকন মুচকি হেসে বললো , “সত্যি আমি ভাগ্যবতী ওনাকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে। ওনার ভালো বাসা,যত্ন সব কিছুই আমাকে ওনার প্রতি আকৃষ্ট হতে বাধ্য করেছে। জানেন আমি ওনাকে বিয়ে করতে চাই নি। কিন্তু এখন আমি সারাজীবন ওনার সাথে থাকতে চাই। নিজের শেষ নিশ্বাস অব্দি। ”
— “হহ্যাঁ রুরুহুল ভাভাই অঅনেক ভালো মনের মামানুষ। রুরুহুল ভাভাই কে বুবুঝি অঅনেক ভালোবাসো কাকাকন।”
বিন্তির এমন কথায় কাকনের পা থেমে গেলো। কাকন একবার বিন্তির দিকে চাইলো। তারপর বললো, ” ভালো বাসি কিনা জানি না আপা। তবে শেষ নিশ্বাস অব্দি ওনার সোহাগ নিয়েই বাঁচতে চাই। আমার শেষ ঠাঁয় যেন ওনার বুকেই হয়। মরনের আগেও ওনার ভালোবাসাময় হাসিমুখ দেখতে চাই।”
বিন্তি কাকনের অনুভূতি বেশ বুঝতে পারলো। বিন্তি কাকন কে বললো, “তুতুমি এই টুকু ববয়সেই অনেক বেবেশি বুদ্ধিমতী কাকাকন। ”
–“সময় মানুষকে সব কিছু শিখিয়ে দেয় আপা। আমিও সময়ের শিক্ষায় পরিপক্ক। ”
বিন্তি আর কাকন তিনতলায় উঠে গেলো। প্রত্যকেটি কক্ষে তালা ঝুলানো। কেউ থাকে না বিধায় এখানে ধুলো বালি জমে আছে। কাকন আর সামিয়া তিনতলার বেশিরভাগ অংশই দেখলো। তবে তিন তলা কেমন যেন অদ্ভুত। দোতলা আর নিচতলায় একই রকম করে বানানো। অথচ তিনতলা ভিন্ন ভাবে বানানো। কক্ষ গুলো ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। কাকন আর বিন্তি ঘুরে ঘুরে দেখছে সব। তবে তিনতলার সব কিছু দেখতে দেখতে একেবারে শেষের দিকে চোখ গেলো হাতের বামে একটা ফাকা অংশ। আশেপাশে জানালা নেই। আর যা আছে সব বন্ধ।
বিন্তি এবার ভয় পেলো। কাকনের হাত ধরে বললো, “ককাকন চচলো নিনিচে যযাই, আআমার খুখুব
ভভয় ককরছে।”
কিন্তু কাকনের কেন যেন ওই সরু দিকটায় ঢুকতে ইচ্ছে করছে। কাকন বিন্তির হাত শক্ত করে ধরলো। তারপর জানালা খুজতে লাগলো। কিন্তু সে রকম পেলো না।তবে হালকা আলো আসছে বাহির হতে। কাকন সেই সরু গলির মতো অংশ টা অনুসরণ করলো। কিন্তু কিছুদুর যেয়েই দেখলো পুরনো ভাঙা আসবাব পত্র দিয়ে আটকে আছে। সেই সাথে নানা আবর্জনা ও আছে।তবে কাকনের কেন যেন মনে হচ্ছে সামনে একটি কক্ষ আছে। হালকা আলোয় দরজার মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। দুদিকে দেওয়াল উপরে ছাদ এটা নিশ্চিত গুপ্ত কোনো কক্ষে যাওয়ার পথ এই জন্য এভাবে আড়াল করে রাখা হয়েছে।
এদিকে বিন্তি বার বার এখান থেকে যাওয়ার জন্য জোর করছে কাকন কে। কাকন বিন্তির অবস্থা বুঝতে পারলো। তাই দুজনেই নেমে এলো তিন তলা থেকে।
কাকন ভাবলো সে রুহুল কে জিজ্ঞেস করবে যে ওই কক্ষে আগে কি ছিল। যেহেতু এটা একটা জমিদার বাড়ি তাই হয়তো কোনো গুপ্ত কক্ষ ছিল। কাকন রুহুল কে নিয়ে সেই কক্ষ দেখবে। কারণ আর যাই হোক রুহুল কাকনের ইচ্ছা কখনোই ফেলবে না।
___________________
বিন্তি আজ সামিয়ার সাথেই থাকবে। তাই বিন্তিকে সামিয়ার কক্ষে দিয়ে এসে কাকন রন্ধনশালায় গেলো।
বকুলের মা সেখানে বসে আছে। কাকন কে দেখেই মালেকা কাজের হুকুম দিলো। অগত্যা কাকন কাজ করতে ব্যস্ত হলো।তবে বাড়ির সকলের মুখে হাসি দেখে কাকনের ভালো লাগলো।
তবে আজ মালেকা সবচেয়ে বেশি খুশি। মেয়ের জন্য ভালো পাত্র পেয়েছে। বেয়াই-বেয়াইন দের আতিথেয়তায় কোনো কমতি রাখবে না। তাই হরেক রকমের রান্না চড়ানো হলো আজ। আর এমনিতেও সিরাজী মঞ্জিলে মেহমান দের খাতির যত্ন সবার আগে। মেহমান দের আপ্যায়ন করার রীতি অমান্য কেউ করতে পারে না।
সুভা রান্না করছে। যেহেতু কাজের লোকদের চুলোয় হাত দেওয়া নিষেধ তাই সকল রান্না বাড়ির মেয়ে-বউ দের কেই করতে হয়। সুভার আজ যেন খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে। সিরাজী মঞ্জিলে আসা সকলেই যদি মেহমান হয় তবে সুভার পরিবার থেকে যখন এসেছিল তখন কোথায় ছিল এই আতিথেয়তা। কেন সুভার বেলায় হয়নি। তবে সুভা মুখ ফুটে বললো না।
কিছুক্ষণ পর সুভা কাকনের কাছে পানি গরম করে দিলো।পানি ঠান্ডা হলে এই পানি দিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিতে বললো বিলাল সিরাজী কে। যেহেতু সুভা কাজ করছে আর এখন ওষুধ খাওয়ানোর সময় হয়েছে তাই কাকনকেই বললো।
সুভার কথা মতো কাকন বিলাল সিরাজীর কক্ষে গেলো। আজ সে প্রথম একা এই কক্ষে যাচ্ছে। দরজার কাছে সর্বদা একজন বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী পাহারাদার থাকে যে বিলাল সিরাজী কে পাহারা দেয়। কাকন কে দেখেই যেতে দিলো। কাকন বিলাল সিরাজীর কক্ষে গেলো। তারপর বাটিতে ওষুধ গুড়ো করলো। পানি মিশিয়ে সম্পুর্ন ওষুধ টুকু চামচে নিলো। এরপর বিলাল সিরাজীর মাথা উচু করে সম্পুর্ণ ওষুধ ঢেলে দিলো। কিন্তু বিলাল সিরাজী ওষুধ খাওয়ার সময় অর্ধেক ওষুধ ফেলে দিলো।পুরোপুরি ভাবে গিলতে পারেনি।
কাকন পাশে থাকা গামছা দিয়ে ওষুধ টুকু মুছে দিলো। বিলাল সিরাজীর চোখ মুছে দিয়ে হাসি মুখে বললো, “আপনার জন্য সুখবর আছে আব্বা।সামিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে আপনার খোকার বন্ধুর সাথে। আপনাকে তো তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে হবে নাকি। কাল থেকে কিন্তু ওষুধ সব টুকু খেতে হবে কেমন। আমি চাই আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন।”
বিলাল সিরাজী আবারো দুচোখ ভরে জল ছাড়তে লাগলো। কাকন এক পলক দেখে চলে এলো। আদোও কি ঠিক হবে লোকটা। যেই ওনাকে মেরে থাকুক না কেন নৃশংস ভাবেই মেরেছে এই জন্যই এই অবস্থা।
যেহেতু বিলাল সিরাজী কক্ষ একেবারে শেষ প্রান্তে তাই সেখান থেকে খুব সহজে বাইরের কিছু শোনা যায় না। কাকন বিলাল সিরাজীর কক্ষ পার করে বাকি দুই কক্ষ পার করে আসবে ওমনি কানে এলো কারো কান্নার আওয়াজ। কাকনের পা থেমে গেলো।
কাকন এদিক ওদিক উকি দিয়ে দেখলো আওয়াজ টি জামালের ঘর থেকে আসছে। কাকন কিছুটা এগিয়ে গেলো শোনার জন্য।ঘর থেকে শোনা যাচ্ছে —
–“আমারে মাফ কইরা দেন। ভুল হইয়া গেছে আর হইবো না, আপনের পায়ে পড়ি ”
–“মা** আমার পিছে গোয়েন্দা হস, আমার খাওয়া নষ্ট করস আইজ তরে খুন করমু। খালি মহীর মুখের দিক চাইয়া তক এই বাড়ি রাখছিলাম। শা** মর তুই ”
–“খোদার কসম আমি বুঝি নাই, আহ আহ মাগো আর মাইরেন না,মাফ কইরা দেন।”
এটুকু শুনেই কাকন আৎকে উঠলো। তার মানে জামাল সিরাজী চাচিআম্মা কে মারছে। কিন্তু এমন অত্যাচার কাকনের সহ্য হলো না। কাকন দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেলো। গিয়ে দেখলো মেঝেতে লুটিয়ে আছে মহীবুলের মা আর জামাল এলোপাতাড়ি লাথি দিয়ে দিচ্ছে।
আকষ্মিক কারো আগমন আশা করে নি তারা দুজন। চাচি শাশুড়ি কে এমন অবস্থায় দেখে কাকনের রাগ উঠে গেলো। কাকন তীব্র ক্রোধে জামাল কে ধাক্কা দিলো। যার কারনে জামাল সিরাজীর মাথা যেয়ে পড়লো খাটের হাতলে।
কাকন চাচি আম্মা কে হাত ধরে তুললো। গায়ে চড়ের ছাপ স্পষ্ট। ঠোঁটের কোনা দিয়ে রক্ত পড়ছে। কাকন নিজ হাতে তা মুঝে দিলো।
খাটের হাতলে মাথা লেগে জামালের মাথা বেশ অনেক খানি কেটে গেছে। হাত দিয়ে দেখলো রক্ত পড়ছে যা জামাল সিরাজীকে রাগিয়ে দিলো। জামাল সিরাজী কাকনের চুলের মুঠি ধরলো। ধরে বললো, “ছেমরি তুই আমারে ধাক্কা দেস,, তরে ******* ”
জামালের আচরণ শান্তশিষ্ট কাকন কে আবারও খেপিয়ে দিলো। কাকন নিজেকে ছাড়িয়ে জামালের দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো।বললো, “খবরদার ভুলে যাবেন না আমি কার স্ত্রী।আমার শরীরে স্পর্শ করার আগে ভেবে দেখবেন পরিনাম কতটা খারাপ হতেপারে।”
জামাল কিছু টা নত হলো। তবুও বলল ” এই ফকিন্নির মাইয়া, তুই আমার লগে চোখ গরম কইরা কথা কস। তোর সাহস তো কম না। ”
–“আমার সাহস আছে কি নেই সেটা আপনাকে বলতে হবে না। তবে স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা ভীতুর কাজ। যা কাপুরুষতার পরিচয় দেয়। তাহলে ভেবে দেখুন আপনি কি? ”
–“কিহ কইলি তুই আমি কাপুরুষ। তর এত বড় স্পর্ধা দেখ তোর কি করি আমি। তর তেল না কমাইলে আমি জামাল সিরাজী না।”
কাকন দু’হাত বুকে ভাজ করে দাড়ালো তারপর বললো, “আপনার যা খুশি করতে পারেন।আমি আপনাকে ভয় পাই না। তবে এইটুকু মনে রাখবেন আপনার স্ত্রীর গায়ে এভাবে হাত তোলার শাস্তি আপনাকে পেতে হবে। আমি নিজে দাদাজান কে বলবো আপনার এই সকল কাজের কথা। দিন দুপুরে ঘরে বসে মদ গিলে স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা তাই না। ”
–“কি করবি তুই হ্যাঁ কি করবি। আব্বাজান রে কইবি যা ক, সকলেই জানে। এই মঞ্জিলে আমি প্রথম পুরুষ না যে বউ পিটাই। আব্বাও এককালে আম্মারে মারছে। খালি তর ভা**র তরে কিছু কয় না। তয় কেবল বিয়ার কয়েকমাস তো।সময় যাইক তর পিঠেও মাইর পড়বো।”
এমন কথা শুনে যেন কাকনের গা জ্বলে গেলো। কাকন কিছু বলবে তার আগেই মহীবুলের মা হাত ধরে ধামিয়ে দিয়ে বললেন,”বউ তুমি চইলা যাও। হাত টা ধইরা কই যাও তুমি। বাড়িতে মেহমান আছে। অশান্তি কইরো না। লক্ষী বউ মা আমার যাও চইলা যাও।”
কাকন আর কিছু বললো না। জামাল সিরাজী কে বলল,” আপনার করা সকল কাজের শাস্তি আপনি পাবেন। সময় থাকতে নিজের স্ত্রী কে ভালোবাসুন। এমন যেন না হয় মরার আগে স্ত্রীর হাতের পানিটাও মুখে না জোটে। ”
কথাটি বলেই কাকন বেড়িয়ে এলো। তবে ভিতরে ভীষণ ঘৃণা হচ্ছে এটা জেনে সিরাজী মঞ্জিলে স্ত্রীদের এত নির্মম ভাবে পেটানো হয় অথচ স্ত্রীরা কোনো বিচার পায় না। একজন স্ত্রী হয়ে অন্য স্ত্রীর অত্যাচার সহ্য করতে পারবে না কাকন।
কাকন এখন আবার রন্ধন শালায় গেলো। সুভার দিকে পলকহীন ভাবে চেয়ে রইলো। এই শান্তশিষ্ট মানুষ টার প্রতি কাকনের সবচেয়ে বেশি টান। এই মানুষ টাকেও কি বিলাল সিরাজী মে’রেছে আগে। না জানি কত সহ্য করতে হয়েছে।তবে কাকনের সকল প্রশ্নের উত্তর যে সুভার কাছেই আছে যা কাকনকে জানতেই হবে।
সুভা কাকন কে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো, “কি হয়েছে কাকন? ”
কাকন মাথা নেড়ে জানালো কিছু হয় নি। অসম্পূর্ণ কাজ করতে লাগলো। তবে মনে মনে ক্ষোভ রয়েই গেলো।
___________________________
বিন্তি ছবি আঁকবে তাই ছাদে নিয়ে গেছে সামিয়া। মুলত ছাদ থেকে সুর্য অস্ত যাওয়ার সুন্দর কিছু মুহুর্ত আঁকবে। বিন্তির এমন নিরিবিলি পরিবেশ ভীষণ ভালো লাগছে। খোলা মেলা জায়গা, নিশব্দতা, গ্রাম্য পরিবেশ সব মিলিয়ে বিন্তি দারুণ উপভোগ করছে।
ছাদের কিনারে দাড়ালো বিন্তি। ওমনি চোখ গেলো গেইটের কাছে রুহুলকে। দেখলো রুহুল কারো সঙ্গে কথা বলছে। আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে হয়তো কিছু। আর রুহুলের পাশে দাড়িয়ে আছে বকুল। কালো রঙের একটি শার্ট পড়া কনুই অব্দি হাতা গুটানো উজ্জ্বল শ্যাম রুহুল কে আরো সুন্দর লাগছে। বিন্তি মনে করে দুনিয়ার সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ টি হলো রুহুল। যাকে সে ৪ বছরের অধিক সময় ধরে ভালোবাসে। রুপ গুণ সব ই তো আছে বিন্তির। কেবল তোতলা সেটা তো আল্লাহর দান। তবুও অনেক চিকিৎসা করিয়েছিল ঠিক হয় নি। রুহুল বকুলকে নিয়ে বাইরের দিকে চলে গেলো। যতদূর দেখা যায় বিন্তি চেয়েই রইলো।
সামিয়া বিন্তির এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে
বললো, “এভাবে কি দেখেন আপা?”
বিন্তি কথা ঘুরানোর জন্য বললো, “কিকিছু না। ওই যে বাবাগান দেখছিলাম। ফুফুল গুলি খুখুব সুন্দর। কাঠগোলাপ, জজবা, ককদম, আর গোলাপ গুগুলো খুব সুসুন্দর লালাগছে। ”
–“হুম আমার কাঠগোলাপ খুব ভাল্লাগে। কিন্তু রক্তজবা গাছ গুলা দাদাভাই লাগাইছে ভাবিজান এর জন্য ”
–“বিন্তি বললো, “রুরুহুল ভাভাই লাগিয়েছে কিন্তু ররক্ত জজবাফুল কেন? ”
সামিয়া হেসে বললো, “দাদাভাই এর মনে হয় যে ভাবিজান একটা ফুটন্ত রক্তজবা ফুল। প্রথম দিন
লাল শাড়ি পইড়া ভাবিজান রে দেইখা দাদাভাই তো টাস্কি খাইয়া গেছিলো। তারপর আমার গুতা খাইয়া হুশ হইছিল দাদাভাই এর, হাহাহাহা।”
–“রুরুহুল ভাই কাকাকন কে বোধহয় অঅনেক ভালোবাসে তাতাই না সাসামিয়া?”
–“হ খালি ভালোবাসে নাকি চোক্ষে হারায়। বিয়ার আগেই দিওয়ানা হইয়া গেছিলো দাদাভাই।”
–“এএকটা ককথা কি জাজানো?”
–“কি কথা?”
বিন্তি সামিয়াকে নিজের মতো করে বললো,
–“যে চরিত্র মানুষের মস্তিষ্ক স্পর্শ করতে পারে না,
সেই চরিত্রটিই মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে। ”
সামিয়া বললো, “এইডা আবার কেমন কথা আপা?”
–“তুতুমি বুবুঝবে না সামিয়া, তুতুমি বুবুঝবর না ।”
চলবে…..
#দেবী
#শবনম_রাবাহ
#দেবী
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
২৪ঃ
নিজের ভালোবাসার মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার মাঝে যে প্রাপ্তি , সেটা দুনিয়ার আর কোনো প্রাপ্তি তে নেই।
বিন্তি রুহুলকে ভালোবাসতো। বোধহয় আজও বাসে। কিন্তু বিন্তির একপাক্ষিক ভালোবাসা কোনোদিন ও পুর্ণতা পাবে না। কারণ রুহুলের হৃদয় তো অন্যকেউ হরণ করে বসে আছে। কারো সাধ্যি নেই তাদের দুজন কে আলাদা করার।
বিন্তি ছবি আঁকছে আর পাশে বসে আছে সামিয়া। সে মুলত আচার খাচ্ছে আর বিন্তির ছবি আকা দেখছে। এত সুন্দর করে অঙ্কন সে টেলিভিশন এ দেখেছিল তবে সাদাকালো টেলিভিশনে স্পষ্ট বুঝতে পারে নি। বিন্তির এত নিখুঁত অঙ্কন দেখে সামিয়া বেশ খুশি। রানুর মতো সেও আবদার করে বসে আছে তার মুখ ও অঙ্কন করে দিতে হবে।
কিন্তু বিন্তির মুখে হাসি নেই। সে চুপচাপ ছবি এঁকে যাচ্ছে। বিন্তির মনে হচ্ছে সে আর ওই অস্ত যাওয়া সূর্য সারাজীবন একাই থেকেই যেবে। রুহুলের অবজ্ঞা যদি এতই বেদনা দেয় তবে রুহুলের প্রেমে পড়ার অনুভুতি এত সুখের কেন লেগেছিল বিন্তির।
__________________
সকলে আবার বসার ঘরে বৈঠক বসিয়েছে। এর কারণ হলো বিয়েতে কিভাবে কি কি করবে। সেই অনুযায়ী সকলেই উপস্থিত।কাকন, বিন্তি,সামিয়া,রুহুল,দুলাল সহ বাড়ির সকল সদস্য রয়েছে।
রুহুল কথা বলছে আর রুহুলের ঠিক পিছনেই মাথায় কাপড় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কাকন। সকলের মনোযোগ ই রুহুলের দিকে।কিন্তু কাকনের চোখ দুটি বিন্তির দিকে। কারণ বিন্তি বার বার রুহুলের দিকে তাকাচ্ছে এটা কাকনের সহ্য হচ্ছে না। কাকন রুহুল কে বিশ্বাস করে কিন্তু কেন যেন তার কিশোরী মনে হিংসে হচ্ছে।
বকুলের বাবা, মা,বকুল, দুলাল তারাও নিজেদের মতামত জানালো। পনের দিন পর বিয়ে নানা আয়োজন করতে হবে। কিন্তু এগুলো তে বিন্তির কোনো ভাবান্তর নেই তার চোখ দুটো তখন ও রুহুলের দিকে নিবদ্ধ । রুহুলের সাথে বিন্তির চোখাচোখি হয়ে গেলো। রুহুল কিছু না বলে দাদাজানের কথায় মন দিলো।
_________________________
রাতের খাবার বানানোর জন্য রন্ধনশালায় কাজ করছে। আর দাদিমার কড়া আদেশ এ কয়দিনেই সামিয়া কে সংসারের সকল কাজ শেখাতে হবে। সামিয়াও প্রতিবাদ করে নি।
মালেকা এদিকে বিরক্ত হচ্ছে। মেয়ে তার একটা অকর্মা হয়েছে। কাজে মন না দিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।মালেকা বলল,”যত জ্বালা সব আমার। এইডা রে বিদায় করতে পারলে বাচি। কিন্তু একটা কামে মন নাই। শশুড় বাড়ি গেলে ফিরা দিন ই ফেরত দিয়া যাইবো। ”
সুভা বললো, “আহ মালেকা এভাবে বলছো কেন তুমি। কদিন পর পরের বাড়ি যাবে। আয় তো সামিয়া বুড়ি তোর কাজ করতে হবে না।”
সামিয়া যেন এই সুযোগেই ছিল।খুশিতে সুভার পাশে গিয়ে বললো, ” হ্যাঁ বড়াম্মা দেখো না তুমি কত ভালো।আর আম্মা খালি কথা শুনায়। তুমি কেন আমার আসল আম্মা হইলা না কও দেখি।”
সামিয়ার শেষের কথায় মালেকার মন ভারী হলো। তবুও বললো, “আপা আপনে এইডা রে এত আশকারা দিয়েন না তো। রুহুল আর আপনে এই দুইজনে মিলাই আমার মাইয়াডারে মাথায় তুলছেন। একখান কাম করে না খালি হাতপায়েই বড় হইছে।”
সুভা হেসে বললো, “বারে আমার সামিয়া বুড়ি এ বাডির সকলের ছোট। কত আদরের। ওকে মাথায় তুলবো না তো কাকে তুলবো। ”
দাদিমা মুচকি হেসে বলে উঠলেন, “তয় যা ই কও তোমরা সবচেয়ে বেশি আদরের আছিল আমাগো রুহুল। আমার মানিক। দাদার পরাণ আর বাপের কইলজা আছিল মানিক আমার। মাটিতে কেউ পা ফেলবার দিতো না। কান্ধে চড়ায়া ঘুরাইতো সক্কলে।”
মালেকা বরাবরই রুহুল কে অপছন্দ করে। সামিয়ার প্রথম কথা এবং শাশুড়ির কথায় বলল, “হ হেইডা তো আমরা সকলেই জানি। রুহুলরে এই মঞ্জিলে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা হইছে। সম্পত্তি তেও হয়তো তাই ই হইবো। ”
দাদিমা এমন কথার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি বললেন, “মালেকা তুই কি সম্পত্তি বেশি পাওনের কথা কইতাছা। ভালো কইরাই জানোস সিরাজী মঞ্জিলে কোনো ভাগাভাগি হয় না। আর না কোনদিন হইবো। সবাই একসাথে থাকবো এইডাই নিয়ম।”
মালেকা আবারো বললো, “কিন্তু সিরাজী বংশের কর্তার দায়িত্ব তো রুহুল রেই দিবেন আমার হেলাল রে তো আর দিবেন না।”
–“কেন হেলাল রে দিমু কেন। নিয়ম মতো বাড়ির বড় পোলা পাইবো।”
–“নিয়ম মানোন লাগবো তা তো না। আমার হেলাল ও তার বাপের সন্তান। হেলাল ও…”
–“চপ আর কথা না। চুপ কইরা কাম কর কইয়া দিলাম হেলালের মা। আর হ্যাঁ আমার মানিক রে নিয়া কিন্তু কোনো কথা শুনমু না আমি। ”
সুভা বলল,” দয়া করে চুপ করুন আপনারা। বাড়িতে মেহমান। আর এতই যখন অসুবিধে বেশ আমি আমার খোকা কে বলব দায়িত্ব ছেড়ে দিতে। দরকার নেই এমন রেশারেশির।”
দাদিমা ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন,”চপ আর একখান কথা কেউ কইলে সিরাজী সাব এর কানে কথা যাইতে সময় লাগবো না। আমার মানিক ই হইবো এই বংশের পরের কর্তা আর এইডাই শেষ কথা ”
তারপর আবারো বললেন,”এই রানু কই তুই, মহীর মারে ডাইকা পাঠা ”
এতক্ষণ নিরব হয়ে সব শুনছিলেন কাকন। মালেকার কথায় সে স্তব্ধ। এতটা অপছন্দ করেন সে রুহুলকে।রুহুলের মতো সরল মনের মানুষ প্রতি এত ঘৃণা তাও সম্পত্তির জন্য। কাকন সুভার দিকে তাকাচ্ছে ছেলের প্রতি সতীনের এমন ঘৃণা অথচ কিছুই বলছে না। এই মানুষ টা সম্পর্কে বড় হয়েও প্রতিবাদ করে না কেন।
এর ই মাঝে মহীবুলের মা এলো। চোখ মুখ কেমন শুকনো লাগছে। এত মার খাওয়ার পর ও কিভাবে হেটে হেটে এখানে কাজ করতে আসছে কাকনের মায়া লাগল। কাকন হাতের কাজ ফেলে মহীবুলের মাকে ধরলো। কাঠের টুলে বসতে দিলো।
কাকনের এভাবে এগিয়ে যাওয়া দেখে সকলেই তাকিয়ে থাকলো।
সুভাও ভালোভাবে মহীবুলের মা কে পরখ করল।তারপর বলল,”কি হইছে মহীর মা,,তোর চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন?”
মহীবুলের মা ঢোক গিলে বলল,”কিছু না বড় ভাবি। শরীর ডা একটু খারাপ আর কি।”
কাকন মিথ্যে বলা টা পছন্দ করলো না।আর তার চেয়ে বড় কথা সে চায় চাচিআম্মা বিচার পাক। তাই বললো, “মিথ্যে কথা বলছে চাচি আম্মা। চাচাজান চাচিআম্মা কে মেরেছে আমি স্বচোক্ষে দেখেছি।”
কাকনের কথা শুনে সকলেই কাকনের দিকে চাইলো।
সুভা মহীবুলের মায়ের দিকে এগিয়ে যেয়ে বললো,
” কথটা কি সত্যি মহীর মা, জামাল ভাই আবার তোকে মে’রেছে। ”
মহীবুলের মা সুভাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো। সে যে নিরুপায়। বিয়ের পর থেকে এগুলোই সহ্য করতে হয়।মুখফুটে বললেও কিছুই হবে না।
দাদিমা আফসোস এর সহিত বললো, “পোলাডা আর মানুষ হইলো না। পশুর চেয়েও অধম হইছে। এই বয়সে আইসাও বউ এর গায়ে হাত তোলা বাদ দিলোনা। ওর বাপেরে জানান লাগবো। ”
কাকন বললো, ” দাদিমা চাচাজান বলেছে এই বাড়িতে স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা নাকি নতুন কিছু না। তাহলে সব স্বামীই কি এভাবে গায়ে হাত তুলতো? ”
–” সুয়ামির মাইর আর সুহাগ দুইডাই আশীর্বাদ। তয় তর দাদাজান এই বয়সে মারে নাই। সে আমারে মারছে পোলা বিয়া করানোর আগে অব্দিই। শেষ মাইর খাইছিলাম বিলালের বিয়ার দিন। ”
শেষ কথাটা দাদিমা সুভার দিকে চেয়ে বললো।
কাকন বললো, “তাহলে কি আব্বা ও আম্মা দের গায়ে হাত তুলতো? ”
মালেকা ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বললো, “হ আমার গায়েই খালি তুলছে তয় তার বড় বউ পেয়ারির আছিল তো তাই তারে কম ই মারছে।”
কাকন সুভার দিকে চাইলো। সুভা চোখ নামিয়ে নিল ছেলের বউ এর সামনে কথাটা লজ্জাজনক তার কাছে। সুভার গায়েও হাত তোলা হয়েছে এ কথাটি কাকনের সহ্য হলো না। কাকন রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এলো।
________________________
রুহুল বসার ঘরে বকুলের সাথে বসে আছে। সেখান বিন্তি, তার বাবা-মা আর সামিয়া ও রয়েছে। রুহুল বসার ঘর থেকে দেখলো কাকন মন মরা হয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। বিষয়টি রুহুলের সুবিধা লাগলো না তাই রুহুল ও নিজের কক্ষে যাওয়ার জন্য বেরোলো। রুহুল এখন একা যাবে এই সুযোগ টি বিন্তি কাজে লাগাতে চায়। বিন্তি কথা বলতে চায় রুহুলের সাথে । শুধু কারণ জানতে চায় ওকে বিয়ে না করার। এছাড়াও ওর প্রতি কি কোনো দিন মায়া হয় নি।
রুহুল সিড়ি পার করে দোতলায় উঠে গেছে তখনি শুনতে পেলো বিন্তির ডাক।
–“রুরুহুল ভভাই! ”
রুহুল পিছনে বিন্তিকে দেখলো। বললো,
–“কিছু বলবে বিন্তি? ”
–“জজি ”
–“হ্যাঁ বলো কি বলতে চাও? ”
–” আআমাকে কেন ভাভালোবাসলেন না রুরুহুল ভাই। আআমাকে কি ভালোবাবাসা যেতোতো না।”
–“দেখো বিন্তি তোমাকে আগেও বলেছি আমি তোমাকে বোনের চোখে দেখি। আবারও বলছি এগুলো আর বলো না আমাকে। আর তাছাড়া আমি এখন বিবাহিত।”
–” আআমি জাজানি আআপনি বিবাহিহিত, শুশুধু এএটুকু জাজানতে চাচাই আআমার মমধ্যে কিকি কমতি ছিছিল।শুধু ককি তোতোতলা বলে? ”
–“ভুল ভাবছো। তোমার মধ্যে কোনো কমতি নেই বিন্তি। আমি তোমার জন্য নই। তুমি পরিপূর্ণ কিন্তু তোমায় কখনো সেরকম ভাবিই নি।”
–“কেন ভাবলেন না বলুন। আপনি কেন আমার হলেন না। আমার যে আপনার একান্ত হওয়ার ইচ্ছে।”
–” আমি আর কখনোই তোমার হবো না। আমি কেবল আমার স্ত্রীর। আরেকটা কথা বলবো বকুলের দেখানো পাত্র টাকে বিয়ে করে নিও বিন্তি। ছেলেটা যথেষ্ট ভালো। সে তোমায় অনেক পছন্দ করেছে।”
–“ওওইটা ভাভাইয়ার দেখানো পাপাত্র না। আআমি জাজানি ওওইটা আআপনিই ভাইয়াকে ববলেছিলেন।”
রুহুল ভাবলো বিন্তি সত্যিটা কিভাবে জানলো। সত্যিই তো পাত্র টা রুহুল ই দিয়েছিল। রুহুল বলল,”তুমি ভুল জানো। আমি কাউকে পাঠায় নি। ”
–“আমাকে জুজুবিন নিজে ববলেছিল যেযে আআপনি আমাকে বিয়ে ককরতে ববলেছিলেন। কিকিন্তু আমি তো আআপনাকে অনেক ভভালোবাসি। ”
–” বিন্তি এধরণের জেদ ছেড়ে দাও। আমার আশা না করে জীবনে আগে বাড়ো। তিন-চার বছর হয়ে গেছে ভেবেছিলাম তুমি ভুলে গেছো এখনো সেই জেদ ধরে আছো। আগে ছোট ছিলে কিন্তু এখন তো তুমি সব বোঝো। না বুঝের মতো আচরণ করছো কেন? ”
–“আআমি তো আয়াপনার আশা ককরি না। কিকিন্তু আআপনাকে খুব মমনে পড়ে, ভুভুলতে পারি না।”
–“নতুন কাউকে হৃদয়ে স্থান দাও আর মনে পড়বে না।
জুবিন অনেক ভালো ছেলে।”
–“যযতটা সসহজভাবে ববলছেন ততত সসহজ না। আআপনার হৃদয়ের মামানুষ যখন আআপনাকে কথাটাটা ববলবে তখন দেদেখবেন কতটা ককঠিন এই কাজ।”
–“আমার হৃদয়ের মানুষ কখনোই আমাকে বলবে না।কারণ আমি আমার হৃদয়ের মানুষ কে পেয়ে গেছি।”
বিন্তির কথাটিতে খারাপ লাগলো। সাথে রাগ ও। তাই বললো,”পেপেয়ে ও যদি হাহারান বুঝবেন ককেমন লালাগে। আআমি যেমন আআপনাকে না পাওয়ার ককষ্টে কাকাতরাচ্ছি গত চারববছর যাবৎ আআপনিও পাপাবেন দেদেখে নিয়েন। ওই কাককন কেও যেন কেকেড়ে নেয় আআপনার থেকে। তাতাহলে আআপনিও বুবুঝবেন বিরহের বেবেদনা। ”
ঠাস করে থাপ্পড় মারলো রুহুল বিন্তিকে।কাকন কে হারাবে একথা যেন রুহুলের শরীর জ্বালিয়ে দিয়েছে। রাগান্বিত হয়ে বললো, “আমার বিবিজান কে কেউ কেড়ে নেওয়া তো দূর ওর দিকে কালো ছায়া দিলেও তাকে রুহুল সিরাজীর মুখোমুখি হতে হবে। আমার শেষ নিশ্বাস অব্দি সে আমার সাথে থাকবে। ”
কথাটি বলেই চলে যেতে নিলো। তারপর আবার ফিরে বললো, “আর কাল সকালের পর যেন আর কোনো দিন তোমাকে সিরাজী মঞ্জিলের ত্রিসীমানায় না দেখি। না হলে আমার রাগ সম্পর্কে ধারণা আছে তোমার। নতুন করে বলতে হবে না আশা করি। ”
আর এক মুহুর্ত ও দাড়ালো না রুহুল। হয়তো পিছনে ফিরলে বিন্তির অশ্রুসিক্ত চেহারা টা দেখতে পারতো।
___________________________
রুহুল নিজের সকল রাগ দরজার কাছে দাড়িয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে ঝেড়ে ফেলল যেন।মুখে মেকি হাসি নিয়ে তারপর দরজা খুলে ভিতরে গেলো। কিন্তু কক্ষে কাকন কে না দেখে বুঝতে বাকি রইলো না যে বাড়ান্দায় গেছে। রুহুল বাড়ান্দায় উঁকি দিয়ে দেখলো কাকন দাঁড়িয়ে। রুহুল পিছন থেকে যেয়ে জড়িয়ে ধরলো। রুহুলের স্পর্শ কাকনের বড্ড চেনা হয়ে গেছে। কাকন রুহুলের স্পর্শ পেয়েই সামনে ফিরে রুহুল কে জড়িয়ে ধরলো। রুহুল ও পরম আবেশে জড়িয়ে নিলো অর্ধাঙ্গিনীকে।রুহুল কাকনের মাথায় চুমো দিয়ে বলল, “এত রাতে এই বাড়ান্দায় কি করছেন বিবিজান?”
কাকন নিরুত্তর রইলো।
রুহুল আবারো বললো, “কি হলো জবাব দিন ”
–“আমার মন টা ভালো লাগছে না। কেন যেন অন্যরকম খারাপ লাগা অনুভব হচ্ছে মনের ভেতর।”
–” কেন শরীর খারাপ আপনার? ”
–“না, শরীর ভালো। তবে..” কথাটি বলে কাকন রুহুল কে ছেড়ে দিলো।
রুহুল জিজ্ঞেস করলো, “তবে কি বিবিজান? ”
কাকন বাড়ান্দার কিনারে দাঁড়িয়ে বললো, “আপনাদের সিরাজী মঞ্জিলে স্ত্রীদের এত নির্মম ভাবে কেন পেটানো হয়। দাদাজান ও নাকি দাদিমা কে মারধর করতো। আব্বা ও নাকি একই রকম ছিল। অথচ পুরো সিরাজপুরে আপনাদের মঞ্জিলের কত সুনাম।”
কাকনের কথা শুনে রুহুল মাথা নিচু করে ফেললো। তারপর বললো, ” কে কার স্ত্রীকে পেটাতো সেগুলো নিয়ে দয়া করে আপনি ভাববেন না। যা যেমন চলছে চলতে দিন। এগুলো ঘাটতে গেলে সংসারে অশান্তি হবে। আর এইটুকু নিশ্চিত থাকুন আমি কোনোদিন আপনার গায়ে হাত তোলা তো দূর আপনাকে টোকাও দিবো না। ”
–” আমি জানি আপনি ওনাদের মতো না। কিন্তু আব্বাও আম্মাদের মারধর করত। তখন আপনি কিছু বলেন নি কেন?”
–“আব্বা আমার সামনে কখনোই আম্মা কে মারতো না। আর ছোটআম্মাকে মারলে আমি প্রতিবাদ করতাম। কিন্তু বন্ধ দরজায় যদি আব্বা আম্মাদের অত্যাচার করে আমি কি করতে পারতাম বলেন দেখি।”
–“জানেন আজ চাচাজান চাচিআম্মাকে
খুব খারাপ ভাবে মে’রেছে। আমি নিজ চোখে মা’রতে দেখেছি ”
–“কিহ চাচাজান আজকেও মেরেছে চাচিজান কে।
বাড়ি ভর্তি মেহমান তার কোনো হুশ জ্ঞান নেই। ”
–” হ্যাঁ শুধু মারেই নি। আমি ধাক্কা দেওয়াতে ওনার কপাল কেটে রক্ত বেড়িয়েছিল বলে আমার চুলের মুঠি ও ধরেছিল। বিশ্বাস করুন আমি বুঝতে পারি নি ওনার কপাল কেটে যাবে। ”
কাকনের কথা শুনে রুহুল কাকনের চুলে হাত বুলিয়ে দিল।বললো, “আপনার দোষ নেই নিশ্চিন্তে থাকুন।”
–” চাচাজান এটাও বলেছে যে আপনিও সুযোগ বুঝে আমার গায়ে হাত তুলবেন।”
রুহুল কাকনের দু’হাত ধরে খুব কাছে আনলো।ললাটে চুম্বন দিয়ে বললো,”আমার রুহ আপনি, আর রুহ কে আঘাত করা মানে নিজের মৃত্যুকে আমন্ত্রণ করা।”
কাকন রুহুলের হাত ধরে বললো, “সারাজীবন এভাবে ভালোবাসবেন তো আমায়? ”
–“শেষ নিশ্বাস অব্দি এই রুহুল সিরাজী শুধুই তার বিবিজানের।শুধু তাকেই ভালোবেসে যাবে বুঝেছেন।”
কাকন পলক হীন ভাবে রুহুলের দিকে চেয়ে রইলো। কালো শার্টে অন্ধকারে রুহুল কে স্নিগ্ধ লাগছে। তবে কাকনের মনে রুহুল কে সাদা রঙে বেশি মানায়। কাকন রুহুলকে বললো, “আপনি কালো রঙ পড়েছেন কেন। সাদা রঙ ও তো পড়তে পারেন। ”
রুহুল ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো, “কেন? ”
–“আপনাকে সাদাতে বেশি মানায়। ”
–“তাই বেশ এখন থেকে সব রঙ বাদ। কাল ই ঢোল পিটিয়ে সব রঙের পোশাক বিলিয়ে দিবো। আর আমার বিবিজানের বলা সাদা রঙ পড়বো শুধু ঠিক আছে।”
কাকন বললো, “আরে না না বিলিয়ে দিতে হবে না।আপনি ওগুলোও পড়বেন। তবে সাদা রঙ আমার সামনে বেশি বেশি পড়বেন। ”
–“ঠিক আছে তাই হবে। এবার একটু হাসেন দেখি বিবিজান, আপনার হাসি মুখ দেখার জন্যই কিন্তু সুদুর নিচতলা হতে দোতলায় আসা। কিন্তু এখনো আমার কোহিনুরের ঝলকখানি দেখলাম না। ”
কাকন প্রাণখুলে হেসে বললো, “আপনার এইসকল দুষ্টুমিষ্টি প্রেমময় কথাই আমাকে হাসায়। ভালোবাসার সুখের হাসি হাসায়। হৃদয় হতে নির্গত হয় সুখময় হাসি।”
চলবে……
#দেবী
#শবনম_রাবাহ