দেবী,২৫,২৬

0
352

#দেবী,২৫,২৬
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
২৫ঃ

সকাল থেকেই তোরজোড়। বকুল রা ঢাকায় ফিরে যাবে। রুহুল নিজ দায়িত্বে তাদের স্টেশন অব্দি নিয়ে যাবে। বেলা ১১টার দিকে বকুল রা বাড়ি থেকে বেরোবে। আর ১২টার ট্রেনে চলে যাবে ঢাকা।
সামিয়া ভদ্রতার খাতিরে হবু শশুড় শাশুড়ীর কাছে দাঁড়িয়ে আছে। তবে মনে মনে ভীষণ লজ্জা লাগছে তাদের সাথে কথা বলতে। কাকন ভদ্র গৃহবধুর ন্যায় স্বামীর পাশে দাড়িয়ে আছে।আর কাকনের পাশেই সুভা। বকুল দাদিমাকে সালাম করার জন্য এগিয়ে গেলো। সামিয়ার পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় সামিয়ার হাতে কিছু একটা দিয়ে গেলো। সামিয়া হাত মুঠো করে নিলো সঙ্গে সঙ্গে। বকুল এমন ভাবে চলে গেলো যেন কিছু ঘটেই নি। কিন্তু সামিয়ার বুকে ঠিক ই ধুক ধুক করছে এটা ভেবে যে তার বাড়ির সদস্যরা দেখলো কি না। সাম্মিয়া সকলের মুখপানে তাকালো দেখলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক। বিন্তি বার বার রুহুলের দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু রুহুলের নজর অন্যদের দিকে। রুহুলের দিকে যে বিন্তি তাকিয়ে আছে তাতে রুহুলের কোন হেলদোল নেই। এখন চলে যাওয়ার পালা। রুহুল তার আম্মা আর বিবিজান এর দিকে মুচকি হেসে তাদের সাথে চললো স্টেশন অব্দি এগিয়ে দিতে। বকুল পরিবার সহ যখন সিরাজী মঞ্জিলের গেইট পার করলো তখন সামিয়া দৌড়ে নিজ কক্ষে চলে গেলো। সামিয়ার কেমন যেন লজ্জা করছে চিঠিটা খুলতে। এতদিন তো চলচিত্রে দেখেছিল নায়ক নায়িকাকে চিঠি দিতে। আর আজ সামিয়াও চিঠি পেলো জীবনের প্রথম চিঠি। সামিয়া হাতের মুঠো হতে চিঠিটা বের করলো। তারপর পড়া শুরু করলো —

” দুষ্টু সামিয়ারানি,
ঘর থেকে বের করে দিয়ে কাজ টি ঠিক করো নি। তুমি বড় অবুঝ পাগলি। আমার ভালোবাসা কি বোঝো না। একটু মজাই তো করেছিলাম। তাই বলে ঘর থেকে বের করে দিতে দিবে। জানো তোমার সাথে না বলা কত কথা ছিল।গত দু’মাস তুমিহীনা থাকার পর কত ইচ্ছে ছিল মন ভরে আমার প্রাণের মানুষটাকে দেখবো কিন্তু তুমি দেখতেই দিলে না। সে যাক গিয়ে, আর পনের দিন তারপরেই আমার নামে কবুল করে তুমি সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে যাবে তারপর দেখবো কিভাবে আমায় এড়িয়ে চলো। আর হ্যাঁ বিয়েতে কিন্তু আমার দেওয়া নীল শাড়ি পড়বে তুমি। নীল রঙ আমার ভীষণ প্রিয়। আমি নীল রঙ পরিহিত আমার সামিয়া রানি কে দেখতে চাই। অনেক সুন্দর করে সাজবে ঠিক আছে। এবার আমি খালি হাতে চলে যাচ্ছি কিন্তু আগামীবার দোকলা যাবো সঙ্গী হবে তুমি। তখন দেখবো কিভাবে আমাকে তাড়িয়ে দাও। আর গতবার আমাকে ঝাল খাওয়ানোর কথা মনে আছে কি,আমার কিন্তু ঠিক ই মনে আছে তাই সেই শাস্তি টা কিন্তু এখনো তোলা আছে, যেটা চক্রবৃদ্ধি মুনাফা হারে বাসর রাতে শোধ নিবো। বিদায় বেলা একটা বার কথা বলার ও সুযোগ দিলে না কতটা ভালোবাসি। কতটা চাই। এ ব্যাথা নিয়েই চললাম সুদুর ঢাকা শহরে। নিজের খেয়াল রেখো, ভালোবাসি প্রিয়তমা।

ইতি
বকুল আহমেদ। ”

চিঠিটা খোলার আগে যতটা হৃদয় ধুকধুক করেছে তার চেয়েও শতগুণে এখন শুরু হয়েছে। সেই সাথে অজস্র ভালো লাগা। সামিয়া চিঠিটা বুকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো। আবারও চিঠিটার দিকে চেয়ে চেয়ে হেসে দিল, চুমু খেলো। প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোলাগা, প্রথম ভালোবাসা এর চেয়ে সুন্দর অনুভূতি আর কোনো কিছুতেই নেই। সামিয়াও এমন ভালোবাসা প্রথম অনুভব করতে ব্যস্ত।
___________________

ঘটে গেছে এক অঘটন। আজ গুদাম ঘর থেকে আসার সময় পথে জমে থাকা পানিতে পা পিছলে জামাল পড়ে যায়। হাত টা বেকায়দায় পড়ে ভেঙে গিয়েছে। সেই সাথে পা ও মচকে গেছে। জামাল সিরাজী হাতের ব্যাথায় চিৎকার করে কাদছে সেই চিৎকারে সিরাজী মঞ্জিলের সকলে জামালের সম্মুখে হাজির হলো। কর্মচারী রা জামালকে ধরে নিয়ে এসেছে। ডাক্তার স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছে টানা একমাস পা এভাবেই রাখতে হবে। হাত একদম সাদা কাপড়ে মোড়ানো । জামালের এমন অবস্থা দেখে কেদে কেটে হয়রান দাদিমা আর মহীবুলের মা।

দুলাল সিরাজীও কিছুটা চিন্তিত। তার এক ছেলে শয্যাশায়ী। আরেক ছেলে হাত পা ভেঙে গৃহবন্দী। তবে এমন অবস্থা দেখে ভালো লাগছে কেবল কাকনের। অন্যায়কারী যখন শাস্তি পায় কাকন এর মনে আলাদা তৃপ্তি অনুভব হয়। কাকন মনে মনে একপ্রকার খুশিই হয়েছে ওর মনে হচ্ছে গতকাল করা নিজ স্ত্রীর উপর অন্যায়ের শাস্তি হয়েছে আল্লাহ কতৃক জামালের।

দাদিমা কাকন কে জামালের জন্য হলুদ মেশানো দুধ আনতে বললেন। কাকন সেই কথা মতো জামালের কক্ষ থেকে বের হলো। তবে সামনেই মহীবুলকে দেখলো। মহীবুল কাকনের দিলে ক্রুদ্ধ চোখে তাকালো।
তারপর বললো , “খা*** ঝি, তরে..”।

হেলাল মহীবুলকে বাধা দিয়ে বললো, ” ভাবিমা তুমি তোমার কামে যাও। ঘরে চল মহী। ”

কাকন কিছুটা ভড়কে গেলো ওর কি দোষ। ওকে বিনা কারণে এগুলা বলা হলো কেন। মহীবুল ওর শকুন চোখ দিয়ে কাকন কে ভস্ম করে দেবে এমন ভাবে চেয়ে রইলো।

কাকন চলে গেলো। পিছন ফিরে দেখলো মহীবুল এখন ও ওভাবেই দাড়িয়ে আছে। আর হেলাল হাত ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
কাকন দুধ গরম করছে চুলোয় কিন্তু মহীবুলের এমন আচরণ এ মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। বিনা কারনে এমন নোংরা গালি শুনলে যে কেউ মন খারাপ করাটা স্বাভাবিক কাকনের তাই হয়েছে। তবে সেখানে যেহেতু হেলাল ছিল কাকন ভাবলো হেলাল কে জিজ্ঞেস করবে। হেলাল অন্তত কাকন কে কিছুটা হলেও সম্মান করে।
কাকন দুধে হলুদ মিশিয়ে নিয়ে গেলো জামালের জন্য। জামালের ঘরে সিরাজী মঞ্জিলের সকলের যেন ঘাটি হয়েছে। সকলেই উপস্থিত সেই কক্ষেই। রুহুল জামাল সিরাজীর মাথার কাছে বসে আছে। আর কিভাবে কি করতে হবে সব বুঝিয়ে দিচ্ছে। কাকন মহীবুলের মা এর হাতে দুধ টুকু দিলো। তারপর সে তার স্বামীকে খাইয়ে দিলো।
কাকন দেখলো হেলাল বেরিয়ে যাচ্ছে। কাকন ও হেলালের পিছে পিছে বেরোলো। কাকন দৌড়ে হেলালের সামনে গেলো। তারপর বললো, ” ছোট ভাই আপনার সাথে কিছু কথা ছিল?

হেলালের কাকনের এভাবে আসা দেখেই ভড়কে গেছে। তবুও বললো, “হ্যাঁ কও কি কইবা ”

–“আসলে মেজোভাই আমাকে তখন গালি দিলো কেন। আর পরেই বা কি বলতে চেয়েছিল। আপনি বাধা দিলেন কেন? ”

–“সেইগুলা তোমার শুনা লাগবো না। ”

–“না আমি শুনতে চাই।কেন সে আমাকে গালি দিলো?”

–” কইলাম তো কিছু না। ”

–” দেখুন মিথ্যে বলবেন না একদম। আর আমাকে না বললে আমি কিন্তু আমি আপনার দাদাভাই কে বলে দিবো তখনকার ঘটনা।”

কাকন যে বলে দিতে পারে এটাতে হেলাল নিশ্চিত তাই বললো, “আসলে মহী তোমায় পছন্দ করে না তো।চাচাজান এর হাত ভাঙছে রাগে তোমারে ওগুলা কইছে। তুমি কিছু মনে কইরো না। ”

–“কেন আমাকেই কেন বলবে। আর কিছু একটা তো বলতেও চেয়েছিল। আপনি বলতে দিলেন না কেন।”

–“দেখো ভাবিমা তুমি দাদাভাই এর বউ বইলা অনেকক্ষণ ধইরা কথা শুনতাছি। ও তোমারে কিছু কইতে চায় নাই। চাচাজানের হাত পাও ভাংছে তাই ওমন করছে। আর কিছু না।”
কথাটি বলেই হেলাল চলে গেলো। কিন্তু কাকনের মন ঠান্ডা হলো না। কাকন কাধে কারো হাত এর ছোয়া পেলো। ফিরে দেখলো রুহুল।
রুহুল কাকন কে ভ্রু কুচকে বললো, “কি হয়েছে? ”

কাকন মেকি হাসি হেসে বললো, “না কিছু না।

–” হেলালের সাথে কি কথা বলছিলেন শুনি। ”

–“না তেমন কিছু না। কিছু বলবেন?”

রুহুল হেসে বললো, “হুম, চলুন নিজ স্বামী সেবা করবেন এখন। ”

কাকন কিছুটা অবাক হয়ে বললো, “কেন আপনি কি অসুস্থ। শরীর খারাপ করছে আপনার?”

–স্ত্রীর সেবা পাওয়ার জন্য কি আমায় অসুস্থ হতে হবে। বেশ আল্লাহ দয়া করে আমায় অসুস্থ বানিয়ে দিন।”

কাকন রুহুলের মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে বললো,”এমা ছি ছি কিসব বলছেন। বালাইষাট আপনার মাথা ঠিক আছে। আপনি কেন যেচে অসুস্থ হতে চান?”

রুহুল কাকনের হাতটিতে চুমু দিয়ে বললো,” মজা করছিলাম।এটা অসুস্থ হওয়ার সেবা না। অন্য সেবা করতে হবে।তাই কক্ষে যেতে হবে আপনার।কক্ষে চলুন দেখতে পাবেন এখন স্বামীর কি সেবা করতে হবে।”

কাকন নিজেকে রুহুলের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, “ছি, মাথা ঠিক আছে আপনার। দিনের বেলা কিসব আবোল তাবোল বলছেন বলুন তো। ”

রুহুল কাকনের কথায় উচ্চস্বরে হেসে বললো, ” বাহ আমার বিবিজান দেখি বড় হয়ে গেছে।তবে আপনি যে সেবা ভাবছেন সেই সেবা এখন করতে হবে না। আপাতত এখন আমায় গোসল করিয়ে দিতে হবে।”

কাকন নিজের বলা কথার জন্য লজ্জা পেলো।আমতা আমতা করে বললো, “তো আপনি কি ছোট বাচ্চা নাকি যে আমায় আপনাকে গোসল করিয়ে দিতে হবে?”

–“হ্যাঁ হবে স্বামীকে গোসল করিয়ে দিতে ছোট বাচ্চা হওয়া লাগে না। এখন যদি আপনি আমাকে গোসল করিয়ে না দেন তবে আজ আমি আপনাকে গোসল করিয়ে দেবো। আমার কোনো আপত্তি নেই।”

–“না না চলুন আমিই গোসল করিয়ে দিচ্ছি আপনাকে।”

রুহুল কাকনের হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বললো,”হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন বিবিজান আপনার পতিসেবা করুন।”
______________________

সন্ধ্যায় কাকন নিজ কক্ষ থেকে মাগরিবের নামাজ পড়ে বের হলো। এখন আর কোনো কাজ নেই তাই সামিয়া অথবা রন্ধনশালায় সময় পার করতে হবে। নিচে নামবে তখনি সেই সিড়ির দিকে চোখ গেলো যা তিনতলা অব্দি যায়। সন্ধ্যাবেলা সাধারণত এই সময়ে সকলেই যার যার ঘরে থাকে। পুরুষ মানুষগুল সকলেই মঞ্জিলের বাইরে নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকে । গতকাল এর গুপ্তকক্ষের কথা মনে পড়ে গেলো কাকনের। কাকনের এক মন বলছে ওখানে যা আরেক মন বলছে যে না ওখানে যাস নে। কিন্তু কাকনের যে ওখানে যাওয়ার ইচ্ছে টাই প্রবল। কাকন এদিক ওদিক উঁকি দিয়ে দেখলো না কেউ নেই। কিছু একটা ভেবে কাকন কক্ষ গেলো। একটা হারিকেন আর দেশলাই হাতে নিলো। তারপর সিড়ির কাছে যেয়ে হারিকেন ধরালো। হারিকেন টা হাতে নিয়ে সিড়ি বেয়ে তিনতলার উদ্দেশ্যে গেলো চারিদিকে অন্ধকার দেখে বেশ ভয় পাচ্ছে কাকন। যত সেই কক্ষেই দিকে এগোচ্ছে ততই যেন ভয় ঘিরে ধরছে কাকন কে। হাতের হারিকেন টা নিয়েই সেই জায়গায় দাড়ালো। তারপর হারিকেন টা নিচে নামিয়ে রাখলো। কিন্তু এত গুলো আসবার সে সড়াবে কি করে। কারো সাহায্য ও তো চাইতে পারবে না সে। ফিরে যাবে নাকি সে কক্ষের সামনের স্তুপ সড়িয়ে ভিতরে যাবে। অনেক ভাবার পর কাকন সিধান্ত নিলো সে এই কক্ষে প্রবেশ করবেই। কাকন আস্তে আস্তে সকল আসবাব সড়াতে লাগলো এর ই মধ্যে আকাশে বাজ পড়ার আওয়াজ হলো। কাকন আরো ভয় পেলো এমন আওয়াজে। কেমন ভয়ংকর ভয়ংকর লাগছে মনের মধ্যে। ধীরে ধীরে বৃষ্টির আওয়াজ শোনা গেলো। সেই সাথে বাজ এর ভয়াবহ শব্দ। কাকন এর কাছে যেন এটা একটা দারুণ সুযোগ কক্ষে প্রবেশ করার। যেহেতু বৃষ্টি হচ্ছে তাই পুরুষেরা আসতে দেরি হবে। কাকন আবারো নিজের সব শক্তি দিয়ে সব কিছু সড়াতে লাগলো। ঘেমে একাকার ক্লান্ত লাগছে তবুও হাল ছাড়ে নি কাকন। প্রায় আধ ঘন্টা পর সকল স্তুপ সড়াতে সক্ষম হলো কাকন। হারিকেন টা নিয়ে এগিয়ে গেলো কক্ষের দিকে। পুরাতন রাজকীয় ডিজাইনের দরজা সাথে তালা লাগানো। কিভাবে খুলবে বুঝতে পারলো না কাকন। না জানি এর চাবির ঝোপা কার কাছে আছে। রুহুল কে বললে হয়তো রুহুল দেবে আবার না ও দিতে পারে। আর রুহুলকে কাকন বলতেও চায় না। তবে কাকনের মন ও বলছে রুহুল দেবে না। কাকন হারিকেন নিয়ে ইট বা ভারী কিছু খুজলো। কিছুক্ষণ খোজাখুজির পর ভারী কাঠের মোটা একটা অংশ পেলো। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে তালাতে বারি দিতে থাকলো। পুরণো জং ধরা তালা টি কিছুক্ষণ পর ই খুলে গেলো। নিজেকে এখন কাকনের স্বার্থক মনে হচ্ছে। কাকনের হৃদয়ের গতি যেন কেন বেড়ে গেলো হঠাৎ করেই। এত কষ্ট করে কক্ষটিতে ঢোকার প্রয়াস চালালো অথচ এখন যেন পা চলছেই না। কাকন ঢোক গিললো মেঝেতে রাখা হারিকেন টি হাতে নিলো। আস্তে করে দরজার পাল্লা খুললো। কেমন পচা পচা দুর্গন্ধ নাকে এলো। বাম পা ফেলে কক্ষে প্রবেশ করে চারপাশ দেখতে লাগলো। কেমন পোকামাকড় দিয়ে ভড়ে আছে কক্ষ টি। বাম হাত দিয়ে আঁচল দিয়ে নাক ঢাকলো কাকন। কক্ষে আলোর ছায়া পেয়ে পোকামাকড় গুলো কেমন ছুটোছুটি করে পালাচ্ছে। কাকন আরো এগিয়ে গেলো তবে কিছুদুর যাওয়ার পর শক্ত কিছু একটার সাথে পা বেজে নিচে পড়ে গেলো কাকন। অসাবধানতায় পায়ে হালক ব্যাথা ও পেলো। হারিকেন এর কাচে ফাটল ধরলো। তবুও কাকন হারিকেন টা হাতে নিলো। তারপর হারিকেনের আলো মেঝেতে ফেললো। আর তারপর যা দেখলো তা দেখে ভয়ে হাত থেকে হারিকেন টা নিচে পরে গেলো।

চলবে…
#দেবী
#শবনম_রাবাহ

#দেবী
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
২৬ঃ

বিদঘুটে পচা দুর্গন্ধে ভরা কক্ষটিতে মেঝের মধ্যে বসে আছে কাকন। যে জিনিসটার সাথে পা বেজে কাকন পড়ে গিয়েছে সেই জিনিসটা হলো কংকাল। হ্যাঁ একজন মানুষের কংকাল। তবে একটা নয় মেঝেতে আরো অনেক গুলো মানুষের কংকাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এগুলো দেখে ভয়ে কাকন হাতের হারিকেন টাও ফেলে দিয়েছে। কেমন যেন শরীর নড়ছে না কাকনের। এখান থেকে যে বের হবে সেই শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। হারিকেন টা আবারও তুললো কাকন। কংকাল গুলোর পোশাক ও কেমন পচে ছিড়ে গেছে। মাংস গুলো যে পোকামাকড়ের পেটে গেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।কাকন আরো এগিয়ে গেলো। ভালোভাবে সব গুলো কংকাল পরখ করলো। কিছুদূর এগিয়ে আরো দুটো কংকাল একসাথে দেখলো। সামনের কংকালের হাত দুটো দেখতে না দেখতেই কেমন যেন হয়ে গেলো কাকন। অতিরিক্ত উত্তেজনায় কাকনের শরীর কেমন যেন অসার হয়ে গেলো। হাতের হারিকেন টা আবারো মেঝেতেই পড়ে রইলো। আর মেঝেতেই লুটিয়ে পড়লো কাকন। জ্ঞান হারিয়ে সেই গুপ্ত কক্ষের মেঝেয় দু চোখের পাতা বন্ধ হয়ে গেলো কাকনের। এই গুপ্ত ঘরে অজ্ঞান কাকন কে পোকামাকড় ধীরে ধীরে ছেয়ে ধরলো।
______________________

অন্যদিকে সামিয়া তার চিঠির বিষয়টা কাকন কে বলতে চায়। যেহেতু এখন রুহুল নেই আর বৃষ্টি ও হচ্ছে তাই এখন দুজন মিলে মুড়িমাখা খাবে আর গল্প করবে। সামিয়া চিঠিটা কোমড়ে গুজলো তারপর মুড়ি মাখিয়ে নিয়ে চললো কাকনের উদ্দেশ্যে। কয়েকবার ডাকলো কাকন কে। কিন্তু কাকন কে ডাকার পরেও কক্ষ থেকে কোনো সাড়াশব্দ এলো না। অতপর সামিয়া দরজা খুলে কক্ষে ঢুকলো। কিন্তু কক্ষের কোথাও কাকন নেই।বাড়ান্দায় উঁকি দিয়েও কাকন কে দেখতে পেলো না। ওর খটকা লাগলো এই বৃষ্টির মধ্যে ভাবিজান গেলো কোথায়। সামিয়া তবুও পুরো দোতলা খুজলো। নিচতলার সকল কক্ষে গিয়ে ও কাকন কে খুজে পেলো না। এবার সামিয়ার ভয় হতে লাগলো কাকন কোথায় গেলো।যদি কারো অনুমতি ব্যাতিত কোথাও যেয়ে থাকে তাহলে কেলেংকারী হয়ে যাবে।সিরাজী মঞ্জিলের বউ রাতের বেলা না বলে কোথাও গিয়েছে সর্বনাশ।

এখন তো বাড়িতে তেমন কোনো পুরুষ মানুষ ও নেই। জামাল ও অসুস্থ। সামিয়া একা এখন কোথায় খুজবে কাকন কে। তার উপর বৃষ্টি ও হচ্ছে বাইরে। রুহুল কে কি খবর দেবে। না তার আগে সুভাকে জানাতে হবে।
সামিয়া হন্তদন্ত হয়ে সুভার কাছে গেলো। সুভা সবে বিলালের কাজ সেড়ে রন্ধনশালায় পা রেখেছে। সামিয়া সুভার কাছে রন্ধনশালায় ছুটে গেলো।

সামিয়ার এমন অবস্থা দেখে সুভা বলল, “কি হয়েছে সামিয়া বুড়ি, এত হয়রান হয়েছিস কেন?”

সামিয়া হাপাতে হাপাতে বললো, “বড়াম্মা ভাবিজান রে কোথাও পাইতাছি না”

সুভা স্বাভাবিক ভাবেই কাজে মন দিয়ে বললো,”পাচ্ছিস না মানে,, আছে কোথাও হয়তো। ভালো করে খুঁজে দেখ গিয়ে। ”

সামিয়া ব্যাকুল হয়ে বললো, “না বড়াম্মা ভাবিজান সত্যি নাই । আমি পুরা মঞ্জিল খুজছি।”

সামিয়ার কথা সুভা হাতের কাজ ফেলে উঠে দাড়ালো।বললো, “কাকন মঞ্জিল নেই। তাহলে যাবে কোথায়। মহিলাশালায় গেলেও তো বলে যায়। কোথাও না বলে যাওয়ার মতো মেয়ে তো কাকন নয়।”

–‘সেইডা তো আমিও ভাবতাছি বড়াম্মা।”
–“চল আমি কাকন কে খুজবো তোর সাথে। ”
–“ঠিক আছে বড়াম্মা।তয় দাদাভাই রে কি খবর দিমু”।
-“না আগে আমরা খুজি। যদি মঞ্জিলেই থাকে। ”

সুভা আবারও আরেক দফা কাকন কে খুজতে লাগলো। সামিয়া ও বেশ হয়রান এখন। সেই সাথে চিন্তা ও বেড়ে যাচ্ছে। সুভা নিরুপায় হয়ে ভাবলো রুহুল কে খবর দিবে এবং রুহুল কে জানানো দরকার। দোতলা থেকে সিড়ি বেয়ে নিচে নামবে সুভা কিন্তু তখনি কিছু একটা ভেবে দৌড়ে তিনতলার সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। আকষ্মিক এমন ভাবে সুভার যাওয়া তে সামিয়া অবাকের চরম পর্যায়ে। তার চেয়ে বড় কথা তিনতলায় সকলের যাওয়া নিষেধ অথচ সুভা এভাবে গেলো। সামিয়া আর সাহস পাচ্ছে না তিনতলায় উঠার। তবুও মন কে শান্ত করে সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে রইলো।

অন্যদিকে সুভা অন্ধকার কেও ভয় করছে না। ছুটে চলছে। কাকন কাকন করে কয়েকবার ডাকলো তবুও সাড়া পেলো না। সুভা অন্ধকারেই সেই কক্ষের দিকে ছুটে গেলো। আলোর রেশ পেয়ে বুঝতে বাকি রইলো না কাকন সেখানে। সব কিছু সড়ানো ছিটানো দরজার বাইরে। সুভা ঢোক গিলে কক্ষ টিতে প্রবেশ করলো। হারিকেন টি নিচে পড়ে আছে। তার সাথেই কাকন মাটিতে লুটিয়ে আছে। সুভার সব ভয় উবে গেলো। দ্রুত কাকনের কাছে বসে কাকনের মাথা নিজের কোলে তুলে নিলো। কাকনের গালে হালকা চাপড় মেরে জ্ঞান ফেরানোর প্র‍য়াস করলো। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর ও জ্ঞান ফিরে এলো না। সুভা কাকন কে ফেলে রেখেই দৌড়ে নিচে নেমে এলো।

সিড়ির কাছেই বসে ছিল সামিয়া। সুভা কে দেখে সামিয়াও সাথে সাথে নিচে নামলো।জিজ্ঞেস করলো, “বড়াম্মা ভাবিজান কে পাইছেন। এত দোড়ায়তাছেন কেন, কি হইলো বড়াম্মা কথা কন। ”

কিন্তু সুভার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে স্টিলের জগ ভর্তি পানি নিয়ে আবারো ছুটলো তিনতলায়। কেউ সিরাজী মঞ্জিলে আসার আগে কাকনের জ্ঞান ফেরাতে হবে তা না হলে বিপদ।

সুভা তিনতলার সেই কক্ষে গিয়ে পানির ছিটা দিতে লাগলো কাকনের চোখ মুখে। কিছুক্ষণ পর কাকনের জ্ঞান ফিরলো। মাথাটা কেমন ভার ভার করছে। জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকলো।পিটপিট চোখ খুলে আবছা আলোয় সুভার মুখখানি দেখলো। চোখের কোণা বেয়ে দু ফোটা জল প্রস্রবণ হলো। কাকন মাথায় হাত দিয়েই সুভার কোল থেকে মাথা তুলে বসলো। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে আবারো দেখলো। গায়ের লোম গুলো দাড়িয়ে গেলো কাকনের। কত গুলো মানুষের দেহ এখানে পোকামাকড়ের ভোগ হয়েছে। না জানি এদের পরিবার গুলো শেষ দাফন টাও করতে পারে নি।

সুভা কাকনের হাত ধরে টেনে তুললো। এক প্রকার জোর করেই বের করিয়ে আনলো কক্ষ থেকে। দরজা আটকিয়ে দিয়ে কাকন কে নিয়ে তিনতলা পার করে দোতলায় এসে রুহুলের কক্ষে নিয়ে বিছানায় ছুড়ে ফেললো কাকন কে। তারপর দরজা আটকে দিলো।

কাকন কিছু বলবে তার আগেই সুভা কাকন কে জড়িয়ে ধরে কাদতে শুরু করলো।কাকন অবাক হলো সুভাব এহেন কান্ডে। কাকন চাইলেও বাধা দিতে পারলো না। কিন্তু সুভা এভাবে কাদছে কেন। না জানি কত দিনের কান্না যার কারনে সুভা আজ কাকনকে জড়িয়ে ধরে কাদছে। বহুদিনের চাপা কষ্ট যখন চোখের পানি হয়ে বের হয়, হৃদয়ে তখন আলাদা শান্তি লাগে। সুভাও আজ খুব কাদছে। সে কাকন কে ধরে নিজের সকল কষ্ট পানিরুপে ছাড়লো দুচোখ বেয়ে। সুভার এমন কান্নায় কাকন ও কেদে দিলো। সেও সুভাকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো। এভাবে দুজন চোখের পানি ফেলল।

বেশ কিছুক্ষন পর সুভা নিজের মনকে আবারও আগের ন্যায় শক্ত করলো। তারপর কাকন কে ছেড়ে দিয়ে আচলে নিজের চোখ মুছে কাকন কে জিজ্ঞেস করলো , “ওইখানে কেন গিয়েছিলে কাকন?”

কাকন মাথা নিচু করে ফেললো। এই প্রশ্নের উত্তর যে সে দিতে পারবে না।
সুভা আবারো বললো, ” আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি উত্তর দাও কাকন । ”

কাকন সুভার চোখে চোখ রেখে বললো, “বন্ধ দরজার পেছনের সত্য দেখতে গিয়েছিলাম।”

সুভা কাকনের এমন চাওনি আগে কখনো দেখে নি। সুভা কাকন কে বললো, “যে সত্যি দেখেছো সে সব ভুলে যাও । আমি আর তুমি ব্যতীত কেউ যেন না জানে সেই কক্ষে তুমি গিয়েছিলে। কিছু জিনিস দেখেও হজম করতে হয় কথাটা মাথায় রেখো। ”

কাকন সুভার দিকে তাকিয়ে আবারও বললো,”সবার তো আপনার মতো হজম করার ক্ষমতা নেই আম্মা।কেউ কেউ হজম নয় বরং ওগরাতে চায়। ”

কাকন সুভার হাত দুটি ধরে মিনতির সুরে বললো, “ওগড়াতে পারলে অনেক কিছুই ওগড়ানো যায়। কিন্তু সেই ওগড়ানো তে যদি প্রলয় শুরু হয় সেই প্রলয় বন্ধ করতে রক্তারক্তি হয়ে যায় কাকন। আর রক্তক্ষয় হয় নির্দোষ ব্যক্তিদের। ”

–“তাই বলে কি সারাজীবন অন্যায়ের হজম করেই যেতে হবে আম্মা।”

–“হ্যাঁ, এই সিরাজী মঞ্জিলে তাই করেই যেতে হবে। খোকা কে জানালেও সমস্যা নেই কিন্তু খোকা ব্যতীত কাকপক্ষী টিও যেন টের না পায় তুমি সেই কক্ষে গিয়েছিলে।”

–“তাদের কে কেন মারা হয়েছিল আম্মা?”

–“আগেই বলেছি সিরাজী মঞ্জিলে মান-সম্মান কে সবার আগে রাখা হয়। তাদের বংশের মান এর চেয়ে বড় কিছুই নয় তাদের কাছে।”

–“কিন্তু আ….”

–“কোনো কিন্তু নয়, পারলে হাত মুখে পানি দিয়ে শুয়ে থাকো। ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোমায়। ”

কথাটি বলেই সুভা দরজা খুলে চলে গেলো। কিন্তু কাকন সুভার যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো। মুখ ফুটে বললো, –” সত্যিই আপনি আমার দেখা সেরা অভিনেত্রী আম্মা ”
কথাটি বলেই চোখের পানি মুছে নিলো কাকন । তারপর বিছানা থেকে নেমে দাড়ালো কারন তাকে
যে এখন তৈরি হতে হবে।
_______________________

আজ রাতে কাকন আর কক্ষ হতে বের হয় নি। রানু একবার এসে ডেকে গেছে কিন্তু সে বলে দিয়েছে খাবে না।তার মাথা ব্যাথা করছে তাকে যেন ডাকা না হয়। কাকন এর মনে অশান্তি অনুভব হচ্ছে। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। এত গুলো লাশ কি ভাবে খুন করতে পারলো সিরাজীরা। ওর জানা মতে কেবল দুজন মানুষকে খুন করেছিল। আদোও কি সিরাজপুরের মানুষ জানে এদের নিষ্ঠুরতা। জানলে বোধহয় এতটা সম্মান করতো না। পুরনো জমিদারি সব কিছুতেও আভিজাত্য অথচ তাদের ভিতর টা নর্দমার কীট মনে হচ্ছে কাকনের কাছে।

মাথায় দুশ্চিন্তারা কিলবিল করছে। কাকন সিদ্ধান্ত নিলো সে কিছুদিন এখান থেকে দূরে থাকবে। বেশ কিছুদিন হলো মহিলাশালায় ও যেতে পারছে না। সারাদিন এই চার দেওয়ালের মাঝে ভালো লাগছে না কাকনের। মনে মনে ঠিক করে নিলো মন শান্ত না হওয়া অব্দি সে সিরাজী মঞ্জিলে আসবে না। কিছুদিন ফাতিমার কাছে যেয়ে থাকবে এতে অন্তত তার শান্তি।

শরীর টাও কেমন দুর্বল লাগছে তাই কাকন বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। মাথার মধ্যে নানা চিন্তা ঘুরপাক করছে। কাকন এক্ষেত্রে রুহুল কেও বিশ্বাস করতে পারছে না। কিন্তু সুভা কে বললে সাথে যে কাকন কে আরো অনেক কিছুই বলতে হবে। এভাবে নানা চিন্তা ভাবনা করতে করতে ক্লান্তিতে কাকনের চোখ কখন যে লেগে গেলো সে নিজেও বুঝলো না।
_______________________

রুহুল রাতের খাবার খেয়ে বসার ঘরে গেলো। আসার পর থেকে একবারের জন্য ও বিবিজান কে দেখে নি। দাদাজানের সাথে কথা শেষে রোজকার ন্যায় আজ ও বিলাল সিরাজীর কক্ষে গেলো আব্বার খোজ করতে। বিলাল সিরাজীর কান্নারত চোখ দুটি রুহুলকে ভীষণ পীড়ন দেয়। সে বোঝে না তার আব্বা কেন এত কাদে। রুহুল নিজ পিতার চোখ মুছে দিলো। সব গুলো ওষুধ দেখলো আর যা যা শেষের দিকে সেগুলো দেখে রাখলো কাল সেগুলো আনার ব্যবস্থা করবে। বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে একবার আম্মার দিকে চাইলো। তার আম্মার পানসে চোখ-মুখ দেখে বুঝতে বাকি রইলো না তার আম্মার মন খারাপ। রুহুলের খুব ইচ্ছে করলো জিজ্ঞেস করতে কিন্তু সাহস পেলো না। নিজ গর্ভধারিণী মা সুভা অথচ মায়ের মন খারাপের কথা জিজ্ঞেস করতে কত জড়তা রুহুলের।

রুহুল ছোট নিশ্বাস ফেলে কক্ষ থেকে বের হয়ে গেলো। শুধু কানে ভেসে আসলো মায়ের বাণী,”কাকনের শরীরটা ক্লান্ত। ঘুমিয়ে থাকলে ডাকিস নে যেন। ”

কাকনের কথা শুনে একবার মায়ের পানে তাকালো। তারপর দ্রুত পা চালালো নিজ কক্ষের দিকে। আস্তে করেই দরজা খুললো। দরজা খুলে ঘুমন্ত বিবিজান কে দেখলো। নাক আর গাল কেমন লাল হয়ে আছে। কাকন কি তাহলে কেদেছে কিন্তু কেন। রুহুলের নিজের উপর রাগ লাগলো। ইদানীং সে কাজের ব্যস্ততায় কাকনের দিকে নজর ই দিতে পারে না।

রুহুল কাকনের পাশে বসে ওর দিকে ঝুকে ঘুমন্ত মুখোশ্রী দেখলো। মুখে পড়া চুল গুলো কানের পিছে গুজে দিলে কাকন কিছুটা নড়ে উঠলো। কাকন মুখে গরম নিশ্বাস অনুভব করতেই চোখ খুলে চাইলো। কখন চোখ লেগে গিয়েছিল টের ই পায় নি।

কাকন বিছানার চাদর ধরেই উঠে বসলো। এখনো রুহুল তার দিকে কিছুটা ঝুকে আছে। কাকনের গালে হাত রেখে রুহুল বললো, “আপনার কি হয়েছে বিবিজান?”

কাকন নিজের ভেতর টাকে শক্ত করলো। তারপর বললো, “কই কিছু না তো ”

–“মিথ্যে বলছেন কেন।আম্মা নিজে বলেছে আপনি ক্লান্ত। খুব বেশি কাজ করতে হচ্ছে কি আপনার। আর আপনার চোখ মুখ ও প্রমাণ আপনি কেদেছেন। ”

–” আসলে তেমন কিছু না। আর আমি ক্লান্ত নই।”
–“তাহলে চোখমুখ এমন কেন?স ত্যি করে বলুন কেন কেদেছেন। দয়া করে লুকাবেন না। ”

–“আসলে আমি ফাতিমা আপার কাছে যেতে চাই। এ জন্য ওনার কথা মনে পড়ে কেদেছিলাম। ”

–“আপনি কি এখনো ছোট বাচ্চা যে কোথাও যাওয়ার জন্য কাদবেন। ফাতিমা আপার কাছে যেতে চান আমাকে বললেই তো আমি নিয়ে যেতাম। এভাবে কাদার কি আছে বলেন দেখি। ”

কাকন বিরক্তিতে বললো, “কিছুই নেই। ইচ্ছে হয়েছিল তাই কেদেছি হয়েছে। ”

কাকনের এমন কথায় রুহুল কাকনের হাত ধরলো। বলল,”কি হয়েছে এমন করছেন কেন আমার সঙ্গে।”

কাকন কিছুক্ষণ নিরব থাকলো তারপর কেদে দিলো।বললো, “আজ আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমাকে কয়েকটা দিন থাকতে দেবেন ফাতিমা আপার কাছে। ”

রুহুল কাকন কে জড়িয়ে ধরে বললো, “আবার কাদছেন আপনি কান্না থামান। আমি কাল ই নিয়ে যাবো আপনাকে মহিলাশালায়। ”
–“হুম”

রুহুল কাকনের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
–” আপনাকে বলেছিনা আপনি কাদবেন না। আপনি শুধু হাসবেন। আমি আমার বিবিজানের চোখে পানি দেখতে চাই না। আমি চাই না আমার সন্তান যেন তার মাকে কাদতে দেখে বুঝেছেন আপনি। আজকের পর থেকে আর কাদবেন না মনে থাকবে। ”

কাকন রুহুলের চোখে চোখ মিলিয়ে বললো, “আপনি সত্যিই আম্মার মতো হয়েছেন। জীবনসঙ্গী কে স্বার্থহীন ভাবে ভালোবাসেন।”

–“আপনাকে আগেই বলেছি আমি আপনাকে বিশ্বাস করি। আর বিশ্বাস ভালোবাসাকে পরিপূর্ণতা দেয়। আমার সেই পরিপূর্ণ ভালোবাসা কেবল আপনি ”

কাকন মৃদু হেসে বললো, “ভালোবাসেন আমাকে? ”
রুহুল মুচকি হেসে কাকনের মাথায় চুমু দিলো।
বললো, “ভীষণ ভালোবাসি।”

কাকনও রুহুলকে জড়িয়ে ধরলো। এই মানুষটা এত কেন ভালোবাসে তাকে। এত বিশ্বাস,এত ভালোবাসা।

চলবে…

#দেবী
#শবনম_রাবাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here