দেবী,৩৩,৩৪

0
352

#দেবী,৩৩,৩৪
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
৩৩ঃ

হেলালের মৃত্যুর এক মাসের অধিক হয়ে গেছে। সকলেই কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে। শনিবার ও মঙ্গলবার সিরাজপুরে বড় হাট বসে। আজ মঙ্গলবারে অনেক দিন পর রুহুল হাটে এসেছিল কাজে। ব্যবসায়িক কাজ সেড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটতে শুরু করলো রুহুল। তবে রুহুলের সঙ্গ দিয়েছে লতিফ। লতিফ রুহুলের সাথেই হাটছে। রুহুল খেয়াল করছে লতিফ কেমন চিন্তিত। রুহুল লতিফ কে বললো, “কি ব্যাপার বল তো লতিফ তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? তুই কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?”

লতিফ মাথা চুলকে বললো, ” কেমনে যে কই”

–“কিভাবে আবার বলবি। মুখ দিয়ে বল। ”

লতিফ রুহুল কে বললো, “আইচ্ছা দাদাবাই আপনে একখান কথা কইবেন। ”

–“একটা কেন দরকার হলে দুটো বলবো । ”

–“কইতেছিলাম যে ভাবিমা কি আপনেরে মাইর দেয়।”

রুহুল লতিফের কথায় ভড়কে গেলো। সাথে সাথে লতিফের মাথায় থা’পড় মে’রে বললো, ” দিন দুপুরে কিছু খেয়েছিস নাকি হ্যাঁ? ”

–“খোদার কসম আমি ওইসব ছুই ও না। ”

–“একটা মা’রবো ফালতু কথা বলবি তো।”

লতিফ করুণ চোখে চেয়ে বললো, ” খুব কষ্টের মধ্যে আছি আমি দাদাবাই । হের লিগাই কইতেছিলাম।”

— “তা আমার স্ত্রী আমায় কেন মারতে। যাবে। আর সেটা শুনেই বা তোর কি কাজ? ”

–“আসলে কি আর কইতাম, রানু পুয়াতি হইছে।দিনে যতবার বমি করে ততবার আমারে কিলায়। এহোন আমার পিঠ খালি বিস করে। খুব চিন্তার মধ্যে আছি। ”

লতিফের কথায় রুহুল হেসে দিলো। বললো, “রানু মা হতে চলেছে?”

লতিফ লাজুক হেসে বললো “হয়, কবিরাজ নাড়ি পরীক্ষা কইরা দেখছে রানু পুয়াতি। দেড় মাস হইছে কেবল। আপনে দুয়া রাইখেন দাদাবাই। ”

–“খুব ভালো খবর তবে ওর যত্ন নিস। আর কিছুদিন কাজ কম করতে বলবি রানুকে বুঝেছিস। ”

–” আইচ্ছা। ”

এরপর আর কেউ কথা বাড়ালো না। রুহুল পুরো রাস্তা ভাবলো তাদের বিবাহের পর সে নিজ দায়িত্বে রানু আর লতিফের বিয়ে দিয়েছে। আবার লতিফ তার চেয়ে বয়সে ছোট হয়েও বাবা হতে চলেছে। আর ২৯ বছর বয়স হয়ে গেছে অথচ রুহুল বাবা ডাক শুনছে না। রুহুলের কেন যেন নিজের করা পণ ভাঙতে ইচ্ছে করছে। সে পণ করেছিল কাকন উপযুক্ত না হওয়া অব্দি সন্তান নেবে না। তবে লতিফের বাবা হওয়ার খবর শুনে সেও বাবা হতে চায়। অনেকেই তো অল্প বয়সেই মা হয় কাকন ও না হয় হলো। রুহুল খুব শীঘ্রই সেও বাবা ডাক শুনতে চায়। নিজের সন্তানদের নিয়ে নিযের দুনিয়া সাজাতে চায়।

রুহুল সিরাজী মঞ্জিলে পা রাখতে না রাখতেই দুলাল সিরাজীর তলব। অন্যদিকে রুহুলের আসার কথা শুনেই কাকন রুহুলের জন্য শরবত বানিয়ে আনলো। রুহুল নিজ কক্ষ হতে যাওয়ার আগেই কাকন দৌড়ে রুহুলের সামনে চলে এলো। কাকন শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো, “আপনার জন্য লেবুর শরবত। ”

কাকনের এমন ছোট খাটো যত্ন গুলোর রুহুলের অনেক ভালো লাগে। রুহুল মুচকি হেসে শরবত টা এক ঢোকে খেয়ে নিলো। রুহুল বিছানায় পড়ে থাকা একটি থলে কাকন কে দিলো। কাকন থলে খুলে দেখবে তার আগেই রুহুল বললো, “আমি দাদাজানের কাছে যাচ্ছি। আশা করি আপনার ভালো লাগবে। ”

কাকন নিজের হাত মুছে প্যাকেটটি খুললো। খুলে দেখলো একটা সুন্দর শাড়ি আর সাথে আলতা। কাচের চুরিও আছে সাথে। কাকনের মুখে হাসি ফুটলো। আলতা চুরি পড়তে যে কাকনের অনেক ভালো লাগে। ভাবতে লাগলো এত ভালো বাসা, এত সুখ কেন দেয় রুহুল তাকে। এই সুখের ভালোবাসায় সিক্ত সে।

রুহুল দুলাল সিরাজীর কক্ষে গেলো। রুহুল কে দেখেই দুলাল সিরাজী নিজের সিন্দুক খুললো। ঢাকায় ক্রয়কৃত জায়গায় দলিল টি বের করলো। আর সাথে বেশ কয়েক হাজার টাকা।

রুহুল বললো,”আমাকে কেন ডেকেছিলেন দাদাজান?”

–“এইডা যে ফ্যাক্টরি তৈরি হইতাছে ওই জায়গার দলিল। আর এই যে টাকাডা দেখতাছো এইডা দেয়াল রঙ করা আর বাদ বাকি জিনিসের জন্য।

–” সে বুঝলাম তো এখন কি করতে পারি। ”
–“তুমি এই সপ্তাহের মধ্যেই ঢাকা যাইবা আর রঙের কাম সাইরা আসবা। ”
–“আমি যাবো না দাদাজান। এবার মহীবুলকে পাঠান।”

–“মাথা গেছে তোমার।মহী কি এগুলা বুঝবো। অর্ধেক টাকা ও নিজেই মাইরা দিবো বোঝো না তুমি। ”

–” সে দিলে দেবে। তবে আপনি সকল দায়িত্ব আমায় দিয়ে সম্পর্কে দুরত্ব সৃষ্টি করছেন সেটা কি বুঝেন?”

–“সব ই বুঝি রুহুল। কিন্তু নিজেগো জমিদারি রক্ষা করতে চাইলে নাবুঝের মতোই করতে হইবো। ”

–“সারাজীবন জমিদারি করেই গেলেন। নিজের বংশ মান সম্মান এগুলোই আপনার কাছে সব থেকে গেলো। এগুলোর জন্য যে নিজেদের মাঝে বিরোধ তৈরি হচ্ছে সেগুলো ভেবে দেখেছেন কখনো? ”

–“কি কইতে চাও কি তুমি হ্যাঁ? ”
–“কিছু না। এগুলো আপনার কাছেই রাখুন। যদি যাই যাওয়ার আগে নিয়ে যাবো।”
কথাটি বলে রুহুল আর একমুহূর্ত দাড়ালো না বেরিয়ে গেলো কক্ষ থেকে।
_________________________

‘মা’ এই দুনিয়ায় সবচেয়ে আপন। একজন মা নিজের শেষ নিশ্বাস অব্দি কেবল সন্তানের কথাই ভেবে চলে।সন্তানের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। মালেকা এমন একজন মা যে তার একমাত্র পুত্রকে সাদা কাফনে দেখেছে। একজন মায়ের কাছে এর চেয়ে বেশি কষ্টের বোধহয় কিছুই হয় না। সিরাজী মঞ্জিলের মোটামুটি সকলেই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। স্বাভাবিক হতে পারে নি কেবল মালেকা।

মালেকা নিজ কক্ষেই বেশি থাকে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না। কারো সাথে বেশি একটা মেশে ও না, কথাও বলে না। কেউ বিষয়টি পাত্তা না দিলেও সুভা বিষয়টি অবলোকন করে মালেকার কাছে আসলো। সুভা মালেকার প্রিয় ভুনা মাংস আর ভাত নিয়ে এলো মালেকার কাছে। ভাত এনে মালেকার কাছে রাখলো।

মালেকা সুভা কে দেখেই যেন মুখ কালো করে ফেললো। ভাত ফেলে দিতে চাইলে সুভা মালেকার দুহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। বললো, ” আমার ওপর রাগ তোমার ভাত কেন ফেলবে মালেকা। বেশ তুমি না হয় আমাকেই ফেলে দাও । ”

–“আপনের এইসব নাটক অন্য কাউরে দেখাইয়েন আমারে না দেখাইলেও চলবো। ”

–“আমি জানি তুমি আমায় পছন্দ করো না। এটা আজ থেকে নয়। যেদিন এ বাড়িতে বউ হয়ে এসেছ সেদিন থেকেই। কিন্তু আমি তো তোমায় পছন্দ করি। ”

–” এত কথা শুনবার চাই না। এক্ষুনি বের হন আমার ঘর থিকা।”

সুভা ভাত মাখিয়ে মালেকার মুখের কাছে ধরে
বললো, “চলে যাবো, আগে খেয়ে নাও তারপর। ”

মালেকা মুখ সড়িয়ে নিয়ে বললো, ” আমি খামু না।”

–” তুমি না খেলে হেলাল ফিরে আসবে না মালেকা। অন্তত বেচে থাকার জন্য তো খেতে হবে তোমার তাই
খেয়ে নাও। ”

–“আপনে তো খুব খুশি হইছেন তাই না। আপনের রুহুল তো বাইচা আছে আমার হেলাল তো নাই। ওরে রাইখা কেমনে খামু আমি আপনে কন। ”

–” মা হয়ে সন্তানের ক্ষতি কি করে চাইবো আমি বলো।আমার যে দুটো ছেলে ছিল। হেলাল তো আমারো সন্তান ছিল। তুমি নিজে হয়তো আমার খোকার ক্ষতি চাও কিন্তু আমি হেলালের ক্ষতি কখনো চাই নি।

–“ওহহ তাই আমি আপনের রুহুলের ক্ষতি চাই তাই না, আর আপনে খুব ভালো চাইছেন হেলালের? ”

–” আমার খোকা পেটে থাকতে আমাকে সিড়ি থেকে তুমিই ফেলে দিয়েছিলে তাই না মালেকা?”

মালেকা সুভার দিকে চাইলো। মালেকার চোখ মুখে আতঙ্ক। সুভা মুচকি হেসে জোর করে মালেকার মুখে ভাত দিলো। তারপর বললো, “আমি কিন্তু জানতাম। তবে ২৬ বছর ধরে নিজের মাঝে এই কথাটি রেখেছি। কাউকে বলিনি আমি কেন জানো? কারন আমি প্রথম দেখায় তোমাকে নিজের ছোট বোনের জায়গা দিয়েছিলাম। আজ ও নিজের ছোট বোনই ভাবি। ”

মালেকা উৎসুকভাবে বললো, “আপনে জাইনা ও কাউরে কন নাই কেন ওইদিন?”

–” বললে তোমার জায়গা এই সিরাজী মঞ্জিলে কি আদোও হতো। সিরাজীরা তো তোমায় জ্যান্ত পু’তে ফেলতো মাটিতে।বড়বোন হয়ে ছোটবোনের বেহালদশা আমি সইতে পারতাম না মালেকা। ”

মালেকা ডুকরে কাদতে শুরু করলো । বললো,” আপনে এত ভালো কেন আপা। কেমনে সহ্য করেন এত কিছু। আমি যে পারি না, পারতাছি না। ”

–“সময়ের সাথে সব সয়ে গেছে মালেকা। এই মঞ্জিলে আসার আগেই নিজের সবকিছু বিসর্জন দিয়ে আসতে হয়েছিল। সেদিন থেকেই আর কোনো রকম লাগে না।”

–” আমার খুব কষ্ট হয় আপা। আপনে তাও সুয়ামির ভালোবাসা পাইছেন। রুহুল ও আছে আমি তো কিছুই পাইলাম না।হেলাল ও চইলা গেলো। ”

–” হেলালের জন্য তোমার কষ্টটা বুঝি আমি। আমিও যে একজন মা। তবে আজ থেকে হেলালকে নিজের মনের মাঝে বাচিয়ে রাখো। আর আলেয়া আর সামিয়া তো আছেই। আমরা আছি। ভেঙে পড়লে চলবে না। হেলালের খুনির শাস্তি হবে আমার খোকা নিজে দেবে। তুমি একটু ধৈর্য্য ধরো। কি পারবে তো ধৈর্য্য ধরতে? ”

–“হুম পারমু।”

সুভা মুচকি হাসলো। কিন্তু মালেকা সুভাকে জড়িয়ে ধরে বললো, “আমি কোনোদিন আপনেরে আপন মানি নাই। সব সময় আপনের ক্ষতি চাইছি এই জন্য আইজ আমার ক্ষতি হইয়া গেছে।আইজ থিকা আপনে আমার বইন। আমারে মাফ কইরা দেন। ”

সুভাও মালেকার মাথায় হাত বুলালো। বললো, ” আমি তোমায় আজ থেকে ৩০ বছর আগেই মাফ করে দিয়েছি। কেউ অন্যায় করলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিৎ। যাতে সে ভুল বুঝতে পেরে সৎ হয়ে উঠে। তবে এই দুনিয়ায় যদি কাউকে ক্ষমা করতে না পারি তাহলে সে কেবল বিলাল সিরাজী কে।”
_____________________

রুহুল খোলা বাড়ান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। মাথা ভর্তি দুশ্চিন্তা। পারিবারিক সমস্যা গুলো হলো দুনিয়ার নিকৃষ্ট সমস্যা।কত সুন্দর পরিবার ছিল তাদের।ছয় ভাই-বোন মিলে হাসি খুশিতেই দিন পার করতে চেয়েছিল রুহুল। অথচ ভাই বোন বড় হওয়ার সাথে সাথেই কেমন পরিবারের সুখ শান্তিও যেন হারিয়ে গেলো।

তার ওপর হেলালের আকষ্মিক মৃত্যু আরো বেশি ভাবায় রুহুলকে। হেলালের হত্যাকারীকে এখনো ধরতে পারলো না রুহুল। এত চর লাগিয়েছে সিরাজপুরের আনাচে কানাচে তবুও কোনো সুত্র পাচ্ছে না এই বিষয়টি রুহুল কে প্রচুর ভাবাচ্ছে। হঠাৎ কাধে স্পর্শ পেয়ে ঘুরে তাকাল রুহুল।

রুহুল হাত বাড়িয়ে দিলো কাকনের দিকে।কাকন হাত না ধরে রুহুল কেই জড়িয়ে ধরলো। রুহুল ও কাকনের মাথায় চুমু দিলো। কাকন বললো, “একা একা চন্দ্রবিলাশ করছেন বুঝি?”

–” উহু,আপনাকে ছাড়া আমি চন্দ্রবিলাশ করতে
পারি না বিবিজান। ”
–“তাহলে কি করছিলেন?”
–” ভাবছিলাম।”
–“কি ভাবছিলেন?”

রুহুলের হাত আগলা হয়ে আসলো। কাকন কে ছেড়ে দিয়ে বললো, “ভালো লাগছে না আর এত যন্ত্রণা। মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করে দুশ্চিন্তা করলেই। মুক্তি পেতে চাইছি কিন্তু মুক্তি মিলছে না। ”

–“কেন করতে হবে এত দুশ্চিন্তা। ঝেড়ে ফেলুন সকল দুশ্চিন্তা। আমার আপনাকে এমন রুপে দেখতে ভালো লাগছে না। ”

–“কি করবো বলুন। পারিবারিক অশান্তি, ব্যবসায়িক ঝামেলা সব কিছু আমায় ঘিরে ধরেছে যেন। ”

–“সেসব আমি জানতে চাই না। আমি আমার সাহেব কে দিনশেষে প্রাণবন্ত হাস্যজ্জ্বল দেখতে চাই ব্যাস।”

রুহুল কাকনের থুতনি উচু করে কপালে চুমু খেলো।
বললো,”বেশ আজকের পর থেকে হাসি খুশি থাকবো।”

–“হ্যাঁ সর্বদা। এমনকি আমার আড়ালেও।”
–“আড়াল হতে দেবো না কখনো। ”

কাকন রুহুলের চেহারার দিকে তাকিয়ে বললো, “আমাকে ছাড়া থাকতে কেমন লাগে আপনার?”

–“ভালো লাগে না। নিজের সাথে নিজের বুকের ভেতর বিদ্রোহ শুরু হয় যেন।”

–“আমার ও আপনাকে ছাড়া ভালো না। জানেন আপনাকে ছাড়া ঘুম হয় না। আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর অভ্যাস না করালেও পারতেন মশাই।”

–“তাই, তাহলে আপনার জন্য একটা দুঃসংবাদ আছে?”
–“কি? ”
–“কাল- পরশুর মধ্যে ঢাকা যেতে পারি। হয়তো বেশ কিছু দিন থাকতে হবে। তখন তো তাহলে আপনার ঘুম আরো হারিয়ে যাবে। ”

কাকন মুখ ফুলিয়ে বলল,”আবার যাবেন?”
–“হুম”
–”এইবার থেকে যান না।”
–” যেতেই হবে। তবে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।”
–“বেশ তাহলে আমায় মহিলাশালায় দিয়ে আসুন।”

–” মোটেও না। আপনি এই মঞ্জিলেই সবচেয়ে নিরাপদ। আমি চাই না আপনার কিছু হোক। হেলালের মৃত্যুর পর আমার ভয় বেড়ে গেছে। আমি আপনাকে হারাতে পারবো না বিবিজান। ”

রুহুলের শেষ কথায় কাকন উস্কে দিতে বলল, “কেন আমি যদি হারিয়ে যাই তখন কি আর হবে, আপনি নাহয় আরেকটি বিয়ে করে নেবেন। ”

রুহুল কাকনের হাত শক্ত করে মুঠোয় নিয়ে বললো, “খবরদার আজকের পর যেন এই কথা না শুনি। আপনি ছাড়া আমি আমার জীবনে অন্য কাউকে কল্পনা ও করতে পারি না। আমি আপনাকে কোনোদিনো হারাতে দেবো না। সে আপনি চান
আর না চান আমার কাছেই থাকতে হবে। ”

–” আরে আরে আমি মজা করছিলাম ।”
–“এমন মজা আর দ্বিতীয় বার করবেন না আপনি। ”
–“আচ্ছা ভুল হয়ে গেছে। আর বলবো না। ”
–” ভুল যখন করেছেন শাস্তি পেতে হবে। ”
–“শাস্তি,কি শাস্তি?”
রুহুল মনে মনে বললো, “আপনাকে শাস্তি নয় উপহার দেবো। আপনাকে খুব শীঘ্রই আমার সন্তানের জননী বানাবো বিবিজান। ”

রুহুল মুখে বললো,” ঢাকা থেকে এসে বলবো। আপাতত শাস্তি পাওয়ার জন্য তৈরি হতে থাকুন। ”

কাকন রুহুলের কথায় হেসে দিলো। বললো, “আপনার শাস্তি আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। আমাকে আর যাইহোক শাস্তি দিতে পারবেন না আপনি। ”

রুহুল কাকন কে কাছে টেনে নিয়ে বললো, “কি করে শাস্তি দেবো বলুন। আপনাকে কষ্ট দিলে যে আপনার চেয়ে বেশি আমি নিজে কষ্ট পাবো।”

কাকন রুহুলের গলা জড়িয়ে ধরে বললো, ” ভীষণ ভালোবাসেন বুঝি?”

–” ভীষণ ভালোবাসি।”

চলবে…..

#দেবী
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
৩৪ঃ

সামিয়ার মাধ্যমিক পরীক্ষা আজ শেষ হলো। হয়তো আজ কালের মধ্যেই বকুল এসে নিয়ে যাবে। তবে সামিয়ার বকুলকে দেখার তর সইছে না। বকুল এ পর্যন্ত দুখানা চিঠি পাঠিয়েছে সামিয়ার জন্য। কিন্তু সামিয়া একটির ও উত্তর লেখে নি। ঠিক এমন নয় লেখে নি। লিখেছে, অনেকগুলো লিখেছে কিন্তু দেওয়া হয় নি। তবে নিজের ব্যক্তিগত ডাইরিটা তে রোজ বকুল কে নিয়ে কিছু না কিছু লেখে সামিয়া। অনেকবার চিঠি গুলো ডাক পিওনের কাছে দিতে চেয়েছে তবে কি ভেবে রেখে দিয়েছে আল্লাহ মালুম।

সবশেষে অংক পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরলো সামিয়া।
সামিয়া হাত মুখে পানি দিয়ে শাড়ি বদলে নিলো। সুভার কথা মতো কাকন এক গ্লাস শরবত নিয়ে সামিয়ার কক্ষে গেলো। সামিয়ার হাতে শরবত টুকু দিয়ে বললো, পরীক্ষা কেমন হলো তোমার? ”

সামিয়া শরবত পান করে বললো, ” আর কইয়ো না ভাবিজান আমি নিশ্চিত অংকে ফেল যামু।”

–“কেন ফেল যাবে কেন। মাস্টার মশাই কি তোমায় ভালোভাবে পড়ায় নি নাকি? ”

–“আরে মাস্টার তো ভালো কইরাই পড়ায় ছে। কিন্তু অংক আমার মাথায় খেলে না।”

–“কেন খেলবে না কেন। মানলাম তুমি পড়াশোনায় অমনোযোগী তাই বলে কি কিছুই পারো নি তুমি? ”

–” আমি নিজেও জানি না অংকগুলা ঠিক হইবো কি না। পরিক্ষার আগে কত ঝামেলা গেলো ভাবিজান। আমি তো ঠিকভাবে পড়তেই পারলাম না।”

কাকন আফসোস করে বললো, “হ্যাঁ সে অবশ্য ঠিক ই বলেছো।”

–“হ, এখন আরেক চিন্তা মাথায়। যদি ফেল যাই তারে মুখ দেখাইতেই লজ্জা করবো আমার। ”

–” সে তো করবেই।তবে এখন বলে আর কি হবে। তুমি যে কেন ভালো করে পড়াশোনা করলে না। তোমার দাদাভাই হয়তো কিছুটা ছাড় দেবে কিন্তু তোমার স্বামী ছাড়বে বলে মনে হয় না। ”

–” সে দুইডা চিঠিতেই স্পষ্ট লেখছে আমি জানি ভালো কইরা পড়াশোনা করি। রেজাল্ট খারাপ হইলে আমার বকবো। আর এইডাও কইছে ভালো রেজাল্ট করলে আমারে নাকি কলেজে ভর্তি কইরা দিবো।”

কাকন খুশি হয়ে বললো,”বাহ এ তো উত্তম পরিকল্পনা। তাহলে তো তোমার এটা অনেক ভালো সুযোগ ।”

–” কিন্তু আমার তো পড়াশোনা ভাল্লাগে না ভাবিজান। আমি আর পড়াশোনা করতে চাই না। ভাবছিলাম বিয়ার পর সংসার করমু তা না আমারে হেতি পড়াশোনা করাইতে চায়। ”

–” পড়াশোনা করবে সংসার ও করবে। তোমার তো ভাগ্য ভালো তুমি পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছো। ইশ আমি যদি পেতাম আমিও করতাম। ”

–“তুমি পড়াশোনা করতে চাও? ”
–“হ্যাঁ আমার অনেক স্বপ্ন ছিল অনেক পড়াশোনা করবো। যদিও সেগুলো আর কোনো দিন পুরণ হবে না। তবে সুযোগ পেলে ঠিক ই লেখাপড়া করতাম।”

সামিয়ার ব্যাঙ্গাত্মক করে বললো, “আর কিছু না লেখাপড়া,, ধুর তার চেয়ে সংসারের কাম করা
শতগুণে ভালো ভাবিজান। ”

–” তোমার কাছে হয়তো এগুলোই ভালো লাগে কিন্তু আমার কাছে না। আমার পড়তে অনেক ভালো লাগতো।”

–” আমার জায়গায় তুমি হইলে ভালো হইতো হিহিহি।”

–” হ্যাঁ তবে তোমার জায়গায় থাকলে এমন সংসার পেতাম না কিন্তু। আর না তোমার মতো ননদ পেতাম।”

–“হুম আর না আমি তোমার মতো সুন্দরী ভাবিজান পাইতাম। ”

–“হুম তুমি বিশ্রাম করো আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

–“আচ্ছা। ”
___________________

বিকেলে দক্ষিণা হাওয়া বইছে। ছাদের কিনারায় দাড়িয়ে আছে কাকন। প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর বাতাসে সকল ক্লান্তি যেন দূর হয়ে যাচ্ছে কাকনের। দুহাত মেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো কাকন। কতদিন এভাবে প্রকৃতির এমন বাতাস অনুভব করা হয় না।

আজ চারদিন হলো রুহুল ঢাকায়। কাকন সারাদিন সকলের সাথে সময় কাটালেও নিজের স্বামীর কথা রাত হলেই বেশি মনে পড়ে। রুহুলের বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর সময় রুহুল যখন মাথায় বিলি কেটে দেয় তখন মনে হয় স্বর্গীয় সুখ। হ্যাঁ রুহুল তো বলেই ছিল রুহুলের বুকে কাকনের জন্য জান্নাতের সুখ রেখেছে। শুধু একটু ভালোবাসতে হবে সেই সুখের বিনিময়ে।

কাকন রুহুল কে ভালোবাসে ভীষণ ভালোবাসে। কাকনের ও রুহুলের মতো বলতে ইচ্ছে করে আমিও আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি। কিন্তু লজ্জাবতী কাকন যে মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা বলতেই পারছে না। বোধহয় পৃথিবীতে সবচেয়ে দুর্লভ কাজ এটাই। নিজের ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসার কথা বলা। সারাজীবন এর জন্য পাশে থাকার জন্য হাত চাওয়া।ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করা কেন এত কঠিন।

কাকন চোখ খুলে তাকালো আকাশ পানে। আকাশে সাদা তুলোর পিছনে আসমানি রঙ। এত সুন্দর আল্লাহর সৃষ্টি। মেঘেরা যেন হেসে বেড়াচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই এই আকাশে আধার নেমে আসবে। কাকন পিছে ফিরলো যখনি তখনি মনে হলো কেউ ছাদের দরজার কাছে ছিল। কাকন এগিয়ে গেলো কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না। তবে কাকন নিশ্চিত এখানে কেউ ছিল কারণ কারো ছায়া ঠিক ই দেখেছে কাকন। কাকন ছাদ থেকে কাপড় তুলে নিয়ে নিচে নেমে গেলো। তবে মনের মধ্যে মধ্যে খুত খুত রয়ে গেলো যে কে তাকে গোপনে দেখছিল।
______________________

গত শুক্রবারে চল্লিশা করা হয়েছে হেলালের নামে। সিরাজপুরের সকল ফকির মিসকিন দের খাওয়ানো হয়েছে। এতিম দের জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে। আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে মালেকা তবে যখনি মনে পড়ে চোখের জল ফেলে। মালেকার প্রথম সন্তান হলো হেলাল। ছেলে কে অসম্ভব ভালোবাসে মালেকা। বিলাল সিরাজী রুহুলকে তার বাকি তিন সন্তানের চেয়ে বেশি ভালোবাসতো। মুলত রুহুল বড় সন্তান হওয়াতে ভালোবাসা,আদর, যত্ন সব কিছুই সর্বাধিক পেয়েছে। আর বিষয়টি বেশি পীড়ন দিতো মালেকাকে।

মালেকা আজ অনেক দিন পর বিলাল সিরাজীর কক্ষে এসেছে। বিলাল সিরাজীর কক্ষে ঢুকে সব কিছুতে চোখ বুলালো। এই ঘরে মালেকার খুব বেশি ঢায় হয় নি। ছোট থেকেই তো জানতো বিলালের বউ হবে মালেকা।কত স্বপ্ন ছিল অথচ বিলালের একমাত্র বউ হবার, ভালোবাসা পাওয়ার, যা জীবনেও হলো না মালেকার। মালেকা বিলালের কাছে বসলো। বিলাল সিরাজী পলকহীন ভাবে চেয়ে রইলো মালেকার দিকে। মালেকা বিলালের দিকে চাইলো। বিলালের চোখের পানি অনবরত পড়তেই থাকে সারাদিন। মালেকা নিজের আঁচল দিয়ে মুছে দিলো। তবে আবারো সেই চোখের জলের প্রস্রবণ বইতে থাকলো বিলালের চোখ দিয়ে।মালেকা এবার মুছলো না। খুতিয়ে খুতিয়ে দেখলো নিজের স্বামী কে। এই সেই চোখ যা বড় করে মালেকার দিকে তাকালেই মালেকা ভয়ে কুপোকাত হয়ে যেতো।বিছানায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে সুঠাম দেহ। নিজের স্বামীর ব্যক্তিত্বের আলাদা তেজ টাও নেই। মালেকা হাত দুটো ধরে স্বাভাবিক স্বরে বললো, ” হেলালের আব্বা”

বিলাল চোখের পলক ফেললো। মালেকা আবারো বললো ” শুনতাছেন হেলালের আব্বা। ”

মালেকা এবার ফুপাতে শুরু করলো। ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো, ” হেলালের আব্বা, এই হেলালের আব্বা।”

বিলাল আগের মতোই নিরুত্তর। মালেকা কাদতে কাদতে ক্ষিপ্ত হয়ে বললো, “কথা কন না কেন হেলালের আব্বা।আমার লগে কথা কন। আমি আপনেরে ডাকতাছি না। আমার লগে কথা কন। ”

মালেকা হাত ছেড়ে দিয়ে বললো, “আমার হেলাল রে আইনা দেন। আমি তো আমার পোলা আর আপনের মুখ দেইখা ই এই বাড়িতে আছিলাম।আপনে ভালো হইয়া যান আর না হয় আমার হেলাল রে আইনা দেন। আমার হেলাল তো আর নাই।আমি কি নিয়া থাকমু। ”

কথাটি বলে মালেকা মেঝেতে বসে পড়লো। নিজের মতো কাদতে থাকলো। তারপর আবারো বললো, “আপনে খুশি হইছেন তাই না। আপনে তো খুশি হওয়ার কথা। আমার পোলারে তো আপনে ভালোবাসেন নাই। মইরা গেছে আপনের তো আত্মা শান্তি হওয়ার কথা হইছে শান্তি। কথা কন। ”

কাকন বিলাল কে রাতের ওষুধ খাওয়াতে এসেছিল। বিলালের কক্ষে এসে মালেকার এমন কথায় কাকন এগিয়ে এলো। কাকন মালেকা কে টেনে বিলালের কাছে বসালো। কাকন মালেকা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললো, “শান্ত হন ছোট আম্মা,,শান্ত হন। ”

মালেকা কাকন কে ধাক্কা দিয়ে বললো, “কেন শান্ত হমু আমি কেন শান্তি হমু। আমার, আমার পোলাডারে কোনোদিন ভালোবাসে নাই উনি। এমন একটা বাপ সে যে বাইচা থাইকাও নিজের পোলারে এক মুঠ মাটিও দিতে পারলো না।”

–“উনি তো আর দশটা স্বাভাবিক বাবাদের মতো না ছোট আম্মা। কিভাবে দেবে বলুন। ”

–” উনি সুস্থ থাকলেও দিতো না। উনি বাপ নামের কলঙ্ক। বাইচা থাকতে ও জানাজায় গেলো না, মাটি দিবার পারলো না। সন্তানের সাথে বেইমানি করলে এমন ই হয়। ওনার পাপের বিচার এগুলা। আপা ঠিক ই কইছে ওনার কোনো ক্ষমা হয় না। ওনারে আমিও ক্ষমা দিমু না। মইরা গেলেও দিমু না।”

–“আপনারা কেন ক্ষমা দেবেন না সে আমি জানি না ছোট আম্মা। তবে এভাবে ওনার সামনে এমন করলে ওনার অবস্থা আরো অবনতি হবে। তাই দয়া করে এরকম করবেন না।”

–” ওনারে কেমনে ক্ষমা করমু কও। কোনোদিন আমারে ভালোবাইসা কাছে টাইনা নিছে। সুহাগ করছে। দেহের মিল হইলেই সংসার হয় না ভালোবাসা ডাই আসল। ভালোবাসা থাকলে দুঃখেও সুখ পাওয়া যায়। আর যেখানে ভালোবাসা নেই সেইখানে হাজার কিছু থাকলে সুখ নাই রুহুলের বউ। ”

কাকন নিরুত্তর। বিলালের দিকে চাইলো দেখলো বিলাল তাদের দিকে চোখের জল ফেলছে। মালেকা আবারও বললো, “রুহুল তোমারে কত্ত ভালবাসে বউ। তোমাগো দেইখা আমার কইতে ইচ্ছা করে হেলালের আব্বা কেন রুহুলের মত হইলো না। অন্তত আমার সংসার জীবনডা আইজ অন্যরকম হইতে পারতো।মরনের আগে সুয়ামিরে ভালোবাইসা মরতে পারতাম।”

–” ছোট আম্মা, অতীত হলো বর্তমানের কাল। এটাকে আকড়ে ধরে রাখলে নিজেই নিস্তেজ হয়ে যাবেন। তাই এগুলো না ভেবে বর্তমান নিয়ে বাচুন। আব্বাকে একটা বার ক্ষমা করে দিন। অভিমানে আব্বার কাছে আসেন না, কখনো হাত ধরে পাশে বসেন না। ভেবে দেখুন উনি যে কাদে হয়তো আপনাদের কথা ভেবেই। হয়ত অনুশোচনায় ভুগছে উনি।”

–” কিন্তু আমার যে সারাজীবন তার ভালোবাসা না পাওনের আক্ষেপ থাইকা যাইবো তার বেলা। ”

–“আক্ষেপ, আফসোস এগুলো হয়তো আব্বার ও আছে। একটা বার চোখের দিকে চেয়ে দেখুন না কেমন নিরবে চোখের জল ফেলে। মুখ ফুটে একটু কথা ও বলতে পারে না। দু’দুটো স্ত্রী থাকতেও কেউ তার দিকে হাসিমুখে তাকায় না। ”

–“ভালোবাসলে ভালোবাসা পাওন যায়। আপারে তাও ভালোবাসছে কিন্তু আমারে তাও না। ”

–“বাসে নি তাইতো। তবে স্বামী যখন ছিল আপনাদের জন্য অনুভূতিও হয়তো ছিল। তাই আপনারা দুজন ই ওনাকে ক্ষমা করে দেন। এটাই ওনার শাস্তি আপনাদের ক্ষমা হয়তো ওনাকে শান্তি দেবে।”

মালেকা আর কাকন দুজনেই চেয়ে রইলো বিলালের মুখপানে।
______________________

ঘড়ির কাটা এগারোটার বেশি। প্রত্যেক নিজ নিজ কক্ষে ঘুমে তলিয়ে গেছে। পুরো সিরাজপুর নিরব।

একের পর এক মদের গ্লাস শেষ করছে মহীবুল। জামাল ও সাথে বেশ আরামে নিজের গুপ্ত কক্ষে আধশোয়া হয়ে মদ গিলছে। মহীবুলের মদ খাওয়া আজ যেন বেশি হয়ে যাচ্ছে। তবুও খেয়েই চলেছে।

মহীবুল চোখ বন্ধ করলেই কেবল চোখে ভাসছে কাকনের ফর্সা উন্মুক্ত পেট। কাকন যখন বিকেলে দুহাত মেলে দাড়িয়ে ছিল বাতাসে কাকনের পেট এর কাপড় সড়ে গিয়েছিল। মহীবুল চিলেকোঠার ঘরে যাওয়ার জন্য ছাদে উঠেছিল। কিন্তু দরজার কাছে কাকন কে দেখেই নিজের ভেতরের কামুকতা জেগে উঠেছিল। মহীবুল চোখে যেন বার বার ভাসছে সেই দৃশ্য। মহীবুল গ্লাসে আবারো মদ ঢালল। চোখের সামনে থেকে দূর করতে চায় এমন দৃশ্য।

জামাল মহীবুলের এত খাওয়া দেখে বললো, ” কিরে মহী আইজ তুই এত গিলতাছা কেন?”

–” মাথার ভিতর জা*রা চিন্তা ঘুরতাছে আব্বা সেই জন্য আইজ এইডা খাইয়া মাথারেই উল্টায়া দিতে চাইতাছি।

–“তা আমার বাপজানের কি চিন্তা ঘুরতাছে শুনি?”
মহীবুল আবারো মদ গিলে বললো, ” আমার কাকন রে খুব ছুইতে ইচ্ছা করে আব্বাজান। ”

–” ছুইবা ছুইয়ো,, তুমিই তো ছুইবা। সব জিনিস কি একা রুহুলের নাকি,,তোমার ও হক আছে। ”

–“হের লিগাই আমি আপনেরে এত ভালোবাসি আব্বাজান। আপনে ছাড়া আমারে কেউ বোঝে না। কেউ ভালোবাসে না। ”

–“তরে ভালোবাসমু না তো কারে ভালোবাসমু। দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র পোলা তুই আমার।

–” হ,, একটাই। আব্বা আমরা এখুন একা হইয়া গেলাম তাই না আব্বাজান।”

–” হ, কপাল ডাই মন্দ হইয়া যাইতাছে দিনের পর দিন। আমাগো দলের হবি মরলো, আবার হেলাল ডাও মরলো। দিন দিন কেমন জানি একা হইয়া যাইতাছি আমরা। তার উপুর রুহুল এত চর লাগাইছে সিরাজপুরে চোরা কারবার ও করতে পারতাছি না।”

মহীবুল মদের গ্লাস ছুড়ে মারলো দেয়ালে। ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,”আমি ওই রুহুল রে খুন করমু।এখুনি খুন করমু।”

–“হ আমিও খুন করমু। ওরে খুন কইরা আমি কর্তা হমু। আমি সব্বাইরে খুন করমু।ওর ওই বউ রে আগে খুন করমু। আমার হাত ভাংছে ওই মা*র জন্য। আমি হাত দিয়া ঠিক ভাবে কাম ও করতে পারি না।”

–” হ ঠিক। ওই বান্দি রে আগে খুন করমু। আমি নাকি ওরে খারাপ নজর দেই ওর রুহুল ভা** এর কাছে বিচার দিছিলো। কি মাইর ডাই না দিছিলো। আইজ
ওরে ছাড়ুম না আমি। ”

–“হ্যাঁ যা ওরে শেষ কইরা দে। আইজ তো রুহুল ও নাই। যা ওরে খুন কইরা দে। যা এখুনি যা।”

মহীবুল শয়তানি হাসি হেসে ঢুলতে ঢুলতে বেরিয়ে গেলো জামালের গুপ্ত কক্ষ থেকে। তারপর হাটতে হাটতে সিড়ির কাছে গেলো। সিড়ি বেয়ে দোতলায় রুহুলের কক্ষের সামনে পৌছালো। কক্ষের দরজায় কয়েকবার ধাক্কালো মহীবুল কিন্তু দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারলো না মহীবুল।

মদ খেয়ে এমনিতেই মাতাল হয়ে আছে মহীবুল। তার ওপর দরজা না খোলায় মহীবুলের রাগ উঠে গেলো। মহীবুল আরো জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।

কাকন ঘুমে বিভোর ছিল। দরজায় করাঘাতে ঘুম ভেঙে গেলো কাকনের। কাকন ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলো রাত ১২টার অধিক। কাকন কিছুক্ষণ ভাবলো কে আসতে পারে। খুলবে নাকি খুলবে না। তারপরে বললো, “কে, কে দরজা ধাক্কাছেন এত রাতে? ”

কিন্তু মহীবুল কোনো উত্তর দিলো না। নিজের মতো দরজা ধাক্কাতে লাগলো। কাকন বিছানা থেকে নেমে দরজার সামনে দাড়ালো। হঠাৎ ভাবলো রুহুল এসেছে হয়তো। কারণ এর আগেও কয়েকবার কাজ থেকে অনেক রাত করে রুহুল ফিরেছিল। কাকন খুশি হয়ে দরজা খুলে দিলো কিন্তু দরজা খুলে দিলো। খোলার পর কাকনের হাসি মিলিয়ে গেলো। দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে স্বয়ং মহীবুল। কাকন মহীবুল কে দেখেই ভয় পেয়ে গেলো। দরজার পাল্লা ধরে আটকে দেবে তার আগেই দরজায় বল প্রয়োগ করেই কাকনের কক্ষে ঢুকে গেলো। কাকন বললো, “মেজোভাই,,, আ.. আপনি এত রাতে আমার কক্ষে কেন এসেছেন। বের হন বলছি। ”

মহীবুল দরজা আটকিয়ে কাকনের দিকে এগোতে এগোতে বললো, “হ আমিই আইছি। বাহির ও হমু তয় তার আগে তোমারে একটু আদর-সোহাগ করমু। ”

কাকন পিছাতে পিছাতে বললো, “কি যা তা বলছেন। দেখুন বের হন আমার ঘর থেকে। আমি কিন্তু আপনার দাদাভাই কে বলে দেবো সব। ”

মহীবুল কাকনের হাত ধরে বললো, “যা এখুনি ডাক তর ওই ভা** রে দেখি আইসে নাকি। ”

–“সরুন বলছি। আমি কিন্তু চিৎকার করবো।”
–“হাহা যা চিৎকার কর যা ডাক।”
–“দাদাজান,, আম্মা,,,আমাকে বাচান,,,, আম্মা,,দাদ উম্ম উম। ”

মহীবুল আরেক হাত দিয়ে কাকনের মুখ চেপে ধরলো। বললো,”কর চিৎকার নে কর মা*, বান্দির বেটি তরে আইজ আর ছাড়মু না। মেলা জালাইছা আমাগো। আইজ তর সব তেজ বাইর করমু আমি।”

কাকন মহীবুলের হাতে কামড় দিয়ে দরজার দিকে অগ্রসর হলো। আম্মা বলে চিৎকার করে উঠলো। দরজার খিল হালকা খুলতে সক্ষম হলো। বের হবে তার আগেই কাকন কে বিছানায় ছুড়ে ফেললো মহীবুল। কাকনের দিকে ঝুকে আবারো হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বললো, “আইজ তরে কেউ বাচাইতে আসবো না। সবাই ঘুমের রাজ্যে চইলা গেছে। কাল সকালে হেলালের মতো তর লাশ তিনতলায় পইড়া থাকবো। কেউ কিচ্ছু বুঝতে পারবো না। হাহাহাহা।”

কাকন মহীবুলের কথায় কেদে দিলো।নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। মহীবুলের স্পর্শে ঘৃণা লাগছে। রুহুলের কথা স্মরণ হলো মস্তিষ্কে। ম’রার আগে কি রুহুল কে ভালোবাসার কথাটাও বলতে পারবে না?

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here