দেবী,৩৫,৩৬

0
282

#দেবী,৩৫,৩৬
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
৩৫ঃ

সূর্য এখন ঠিক মাথা বরাবর। রুহুল ট্রেন থেকে নামলো। সিরাজপুর রেলস্টেশন থেকে বেড়িয়ে গরুর গাড়িতে উঠে বসলো রুহুল। কয়েকদিন পর আজ সে সিরাজপুরে আসলো। ঢাকার কারখানায় রঙের কাজ চলছে। রুহুলের চেনা এক বিস্বস্ত লোকই সেই কাজ দেখা শুনা করছে। তাই তো সে নিশ্চিন্তে সিরাজপুরে থাকতে পারছে। গরুর গাড়িতে বসেই ভালো লাগলো রুহুলের। নিজের গ্রাম, নিজের জেলা আলাদা টান।

তবে একটা জিনিস রুহুলের অবাক লাগলো যখন দেখলো অন্যদিনের তুলনায় আজ সিরাজপুরে মানুষের আনাগোনা তেমন নেই। বকুলতলায় বাঁশের মাচাতে যেখানে যুবকরা আড্ডা দেয় সেখানে তারাও নেই। আবার ফারুকের চা এর দোকান ও বন্ধ। রুহুলের মনে কেমন যেন কু ডাকছে। কি এমন হলো আজ সিরাজপুরে যার জন্য সব কিছু বন্ধ। কোনো বিশেষ কিছু ছাড়া তো এমন হওয়ার কথা না।

ভাবতে ভাবতেই রুহুল সিরাজী মঞ্জিলে গিয়ে পৌছালো। গেইটের কাছে থেমেই যখন ভাড়া মিটিয়ে ভিতরে ঢুকবে তখনই তার কানে এলো কালিমা শাহাদাত এর ধ্বনি। রুহুলের বুক কেপে উঠলো অজানা শঙ্কায়। রুহুল হন্তদন্ত ভঙ্গিতে মঞ্জিলের ভিতরে ঢুকলো। রুহুল কে দেখেই কাধে লাশ নিয়ে যাওয়া বাদ দিয়ে থেমে গেলো সকলে। সবার মুখে মুখে কালিমা শাহাদাত। হয়তো লাশ মসজিদে নিয়ে যাওয়া হবে। আর কিছুক্ষণ পরেই জানাজা এবং তার পরেই দাফন করা হবে। আর অন্দরমহলে ও কান্নার রোল।

রুহুল কে দেখেই দুলাল সিরাজী ঢোক গিললো। কালিমা যেন তার মুখ থেকে উচ্চারিত হচ্ছেই না। অন্যদিকে জামালের শরীর কাপা শুরু হয়ে গেছে। কারণ জামাল ভাল করেই জানে কাকনের কথা
শুনলে রুহুল জামালকেও জীবিত কবর দিতে
একবার ও দ্বিধা করবে না।

রুহুল দুলাল সিরাজীর কাছে এসে বললেন, “কে মারা গেছে দাদাজান, কার লাশ নিয়ে যাচ্ছেন?”

দুলাল সিরাজী আমতা আমতা করে বললেন, “আসলে রুহুল, দেখো যা হইছে হেইডা আর উইঠা আসবো না। লাশ দাফন কইরা এই বিষয়ে কথা কমু। আর পুরা সিরাজপুরের মানুষজন দিয়া ভইরা আছে মঞ্জিল।
তুমি ঘরে যাও। ঘরের কথা বাইরে কওয়া ঠিক না।তুমি গোসল সাইড়া মসজিদে আইসো। ”

–” কি হয়েছে টা কি,কে ম’রেছে বলছেন না কেন।আমার আব্বা ঠিক আছে তো? ”

–“সে ঠিক আছে। এইখানে সব কথা কওয়া যাইবো না।আর এই তোমরা দাড়াইলা কেন মসজিদে চলো। ”

–“আশ্চর্য কার লাশ দাদাজান আপ..”
রুহুল তার কথাটি সম্পুর্ন করতে পারলো না।তার আগেই সামিয়া চিৎকার করে ডাক দিলো রুহুলকে, –“দাদাভাই!”

রুহুল ফিরে সামিয়ার মলীন মুখ দেখলো। কান্নার ফলে চোখ মুখ ফুলে গেছে। রুহুল দ্রুত সামিয়ার কাছে গেলো। সামিয়া রুহুলকে দেখেই কাদতে শুরু করলো।
রুহুল বললো, “সামিয়া বুড়ি তুই কাদছিস। তুই অন্তত বল কার কি হয়েছে,,?”

সামিয়া চুপ করেই রইলো। কথা বলতেই পারছে না।
রুহুল আবারো চিৎকার করে বললো, “কথা বলছিস না কেন?”

–“দাদাভাই আসলে ভাবিজান রে.. ”
রুহুল সামিয়ার দুই বাহু ধরে বললো, ” ভাবিজান মানে,, এই লাশ কার ছিল ?”

রুহুল সামিয়াকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে অন্দরমহলে গেলো। বাড়ি ভর্তি লোকজন রুহুল বসার ঘরে গেলো দেখলো সবাই আছে অথচ কাকন নেই। রুহুল দ্রুত সিড়ি বেয়ে নিজের কক্ষে গেলো। কক্ষে যেয়ে দেখলো সুভা পাথরের মত বিছানায় বসে মেঝের দিকে চুপচাপ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আছে। রুহুল সুভার কাছে গেলো। সুভার হাত দুটো ধরে বললো, ” আম্মা,, আম্মা! ”

সুভা রুহুলের দিকে চেয়ে ফুপিয়ে কেদে উঠলো। সুভার এমন কান্না দেখে রুহুল আরো ভয় পেয়ে গেলো। ভয়ে গলা দিয়ে যেন কথা বের হচ্ছে না। রুহুল জোরে শ্বাস নিয়ে বললো, “আম্মা, আম্মা কে ম’রেছে। উনি কোথায়? কথা বলেন আম্মা!”

এরই মাঝে সামিয়া এলো। এসেই বলল, ” দাদাভাই আসলে ভাবজান রে মানে ওনারে.. ”

–” এই কি ভাবিজান ভাবিজান করছিস। কেউ পরিষ্কার ভাবে কিচ্ছু বলছে না কেন আমায়! ”

সামিয়া কাদতে কাদতে বললো, “আসলে গতকাল রাতে ভাবিজানের ঘরে..”

–“গতকাল রাতে ঘরে কি?”
_______________________
গতকাল রাতেঃ~

রক্তে রাঙা হয়ে আছে মেঝে। খাটের পাশেই বাটাম ফেলে রাখা হয়েছে যেটা রক্তে মাখা।
কক্ষ ভড়ে গেছে সিরাজী মঞ্জিলের মানুষদের দিয়ে।
খাটের কাছেই মেঝেতে জড়বস্তুর মতো পড়ে আছে নিথর মহীবুলের দেহ। ভয়ংকর ভাবে খুন করা হয়েছে মহীবুল কেও। রক্ত দিয়ে যেন ডুব দিয়ে উঠেছে মহীবুলের দেহ । মহীবুলের এমন অবস্থা দেখে সকলেই অবাক হলো। দুলাল, জামাল, সামিয়া, মালেকা, মহীবুলের মা , দাদিমা সকলেই হতভম্ব। এক শোক যেতে না যেতেই আরেক শোকের আগমন। জামাল মাতাল হলেও ছেলের লাশ দেখে ধুপ করে মাটিতে বসে পড়ে। সকল নেশা যেন গায়েব হয়ে গেছে। জামাল মহীবুলের বুকে হাত রাখলো। কয়েকবার ধাক্কিয়ে ডাকলো,”মহী, বাপজান,,আমার আব্বা,,কথা ক, ওঠ।”

কিন্তু মৃত দেহ কি আর কথা বলতে পারে,পারে না। মহীবুলের মা কাদতে কাদতে বললো, ” আল্লাহ গো, আমার মহীবুল রে কডায় খুন করলো?”
ছেলের জন্য জামাল আর জামালের স্ত্রী দুজন ই কাদতে শুরু করলো। সামিয়া লাশ দেখে বললো, “কে খুন করছে মেজো ভাই রে এইভাবে? ”

–“আ,,আমি খুন ককরেছি! ”
সকলেই আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে চলে গেলো। সকলের চোখ নিবদ্ধ হলো খাটে বসে থাকা সুভার উপর। সুভা মহীবুলের লাশের দিকে চেয়ে থেকেই কথাটি বললো। সুভার দুহাত রক্তে রাঙা হয়ে আছে।

মহীবুলের মা কাদতে কাদতে বললো, “ভাবি আপনে আমার পোলারে মারছেন? কেন ভাবি কি দোষ করছিল কেন মারলেন কন? ”

–“তোমার ছেলে একটা লম্পট,দুশ্চরিত্র। সে রাত দুপুরে নিজের বড় ভাই এর বউ কে ধর্ষণ করার জন্য ঢুকেছিল। তাই আজকে মৃত্যু উপহার পেয়েছে। ”

জামাল সুভার দিকে তেড়ে এসে বললো, “তাই বইলা তুই আমার পোলারে মারবি। নষ্ট করলে করতো তর পোলারে আবার বিয়া করাইতাম। খু’ন করলি তুই?”

সুভা জামাল কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। তীব্র ক্রোধে বললো, ” আজ যদি তোর ছেলে না মরতো তাহলে আমার ছেলে মরে যেতো। আমার খোকা বেচে থেকেও মরে যেতো। তোর লম্পট ছেলের বেচে থাকার
অধিকার নেই।”

দুলাল সিরাজীর স্ত্রী কাদতে কাদতে বললো, ” তাই বইলা তুমি খুন করবা আমার নাতি ডারে। এত বড় সাহস কই থিকা আইসে তোমার। ”

–” ওর ভাগ্য ভালো ওকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। আমার খোকা থাকলে আজ ওকে হাজার টুকরো করে রাস্তার কুকুরদের ভোগ করতে দিতো। আর সেই সাথে এই সিরাজী মঞ্জিলে প্রলয় শুরু হয়ে যেতো।”

–” আমার মহী, আমার পোলা ডারে তাই এমনে মারলেন ভাবি।আপনের হাত কাপলো না। আপনের ও তো সন্তান আছে।আমার বুক খালি করতে পারলেন। ”

–” অন্যায় কারীকে শাস্তি দিতে আমার হাত কাপবে না। আমার সন্তানের সাথে অন্যায় কারীদের কোনো ক্ষমা নেই। কাকন আর রুহুল দুজনেই আমার সন্তান।”

দাদিমা আবারো বললো,”তার মানে কি তুমিই হেলাল রেও তুমি খুন করছো বড় বউ?”

সুভা স্বাভাবিক ভাবেই বললো, “জানি না আমি।”

তারপর জামালকে উদ্দেশ্য করে বললো, “জামাল তোর ছেলের নোংরা দেহ নিয়ে বিদেয় হ আমার ছেলের কক্ষ থেকে। তোদের পচা রক্ত আমি পাড়াতেও চাই না।”

সুভার এমন হুংকারে সকলেই তাজ্জব বনে গেলো। এই কি সেই শান্তশিষ্ট সুভা যে সর্বদা মুখ বুজে সহ্য করতে এসেছে। যে কিনা মানুষ ও খুন করতে পারে।

আলমারির সাথে পিঠ ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে হাটুতে মুখ গুজে কাদছে কাকন। কাদতে কাদতে হেচকি উঠে গেছে। গায়ের শাড়ির আচল বেশ খানিকটা ছিড়ে গেছে। হাতে গলায় ক্ষতের চিহ্ন স্পষ্ট। ছেড়া শাড়িই গায়ে জড়িয়ে রেখেছে কাকন। সকলের কথাই সে শুনছে কিন্তু সেগুলোতে তার কোনো হুশ নেই। কাকন নিজের মত করে কেদেই চলেছে।

সামিয়া ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো কাকনের দিকে। কাকনের হাতে হাত রাখার আগেই কাকন সরিয়ে নিলো। সামিয়া মনে মনে আহত হলো। সামিয়া আবারো কাদতে কাদতে এগিয়ে যেয়ে জড়িয়ে ধরলো।কাকন জোরে জোরে কাদতে শুরু করলো। কাকনের এমন কান্না দেখে সুভার কলিজা যেন জ্বলে যাচ্ছে। সুভা মহীবুলের লাশের দিকে চেয়ে বললো, “আজ উচিত শিক্ষা হয়েছে। বাপের মতোই লম্পট হয়েছিল একটা।”

প্রায় ১ঘন্টা যাবৎ নির্বাক হয়ে সব দেখছে দুলাল সিরাজী। কি বলবে সে,, কাকে দোষ দেবে। একদিকে কাকনেরর এই দশা। অন্যদিকে নিজের বংশধর এর মৃত্যু।আরেক ঝামেলা তৈতৈরি হলো। সিরাজপুরের মানুষ যদি জানতে পারে নিজের ভাবিকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল মহীবুল তাহলে দুলাল সিরাজীর মান সম্মান কোথায় থাকবে। চিন্তায় ঘাম ছুটে গেছে তার।

সুভা দুলাল সিরাজীর চিন্তামাখা মুখ দেখে বললো, “তোমাদের ভালোর জন্যই বলি লাশ টা যত তাড়াতাড়ি পারো দাফন করে ফেলো। আমার খোকা আসলে না জানি লাশ ই খুজে না পাও।”

জামাল তেড়ে সুভাকে মা’রতে গেলো। কিন্তু তার আগেই দুলাল সিরাজী বাধা দিলো। জামাল হাত নামিয়ে বললো, “আব্বাজান আপনে আমারে বাধা দিলেন। এই খা*** আমার পোলারে খুন কইরা নাটক শুরু করছে আর আপনে কিচ্ছু কইতাছেন না। ”

দুলাল সিরাজী বললেন, ” কার কি হইবো সেইডা পরে ভাবা যাইবো। মহীর লাশ এইখান থিকা সরানোর ব্যবস্থা করো। ”

–“আব্বা আপনে বাইচা থাকতে এই মা* এত বড় অন্যায় করলো। আর আপনে আমারেই কইতাছেন।”

–“হ্যাঁ কইতাছি কারণ রুহুল যদি শুনে যে তার স্ত্রীরে তোমার পোলা জোর-জবরদস্তি করবার চাইছে তাইলে লাশ এর অবস্থা আরো খারাপ করতেও পারে। আর সেই সাথে তোমার ও।সিরাজপুরের মানুষ শুনলে মান আর থাকবো না আমাগো। এই ব্যাপের কোনো কিছুর ভরসা নাই। ”

দুলালের স্ত্রী, মহীবুলের মা, মালেকা সকলেই কাদছে। জামাল ও মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। মুখে সুভা আর কাকন কে নানা অশ্রাব্য গালি দিচ্ছে। তবে মনে মনে ঠিক নিজের উপর রাগ করছে। নেশার ঘোরে ছেলেকে যদি অনুমতি না দিতো অন্তত তার ছেলে জীবিত থাকতো। সে নিজেও ভাবেনি সত্যিই তার ছেলে এখানে আসবে আর নিজের করা ভুলের জন্য নিজের জীবনই হারাবে। পাপ পাপকেও ছাড়ে না।

দাদিমা বিলাপ করতে করতে বললো, “ওরে কেমনে খুন করলা বড় বউ। না জানি আমার নাতীডা কেমন করছে। আহারে কত কষ্টই বানি হইছে। ওর চিৎকার শুইনা দৌড়ায়া আসলাম সক্কলে মিলা অথচ আইসা দেখলাম মইরা গেছে। মহী দাদা আমার ওঠ।”

মালেকা চোখের পানি মুছে বললো, ” মহীবুল কি সত্যিই কাকন রে জোর করছিল আপা?”

মালেকার কথা শুনে কাকনের তখনকার কথা মনে পড়লো। কাকনের গলা দিয়ে যেন কথাই বের হচ্ছিল না। মহীবুল এক হাতে মুখ চেপে ধরেছিল। আর আরেক হাত দিয়ে হাত আটকে রেখেছিল। কাকন দুস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি রুহুল ব্যতীত অন্যকেউ তাকে স্পর্শ করবে। নিজেকে নিজের কাছেই অপবিত্র মনে হচ্ছে কাকনের। চোখের সামনে মহীবুলের নোংরা প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছে কাকনের।

সুভা কাকনের দিকে চাইলো তারপর হেলালের লাশের দিকে চেয়ে বললো, ” কাকনের চিৎকার শুনতে পাই আমি। প্রথমে মনের ভুল মনে করেছিলাম কিন্তু যখন আবার আম্মা বলে ডাক দিলো তখন আমি দোতলায় আসি। তারপর এসে দেখি মহীবুল কাকনের সাথে জোর করছে। কাকন নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করছিল কিন্তু মহীবুল ওর সাথে খারাপ কিছু করতে চাচ্ছিলো। কাকনকে এমন অবস্থায় দেখে আমার রাগ উঠে যায় তাই আমি দড়জার কাছে থাকা বাটাম টা দিয়ে ওর মাথায় আঘাত করি। রাগের মাথায় অনেকবার আঘাত করার ফলে মহীবুল মরে গেছে।”

খুব স্বাভাবিক ভাবেই কথাগুলো বললো সুভা। সুভার মাঝে যেন কোনো ভাবান্তর নেই। এটা যেন খুব সহজ কাজ ছিল সুভার জন্য।

দাদিমা কাদতে কাদতে বললো, “কত সহজে কইলা এত ডাও কি সহজ আছিল। আমার এক পোলার বউ পুত্র হারা হইছে। এখন আরেক পোলা ডাও গেছে। তুমি কেমনে করতে পারলা, নিষ্ঠুর মা তুমি। ”

মহীবুলের মা বললো, “আমার মহীরে খুন না করলেও পারতেন আপা। মানুষই তো ভুল করে। আমার মহীও না হয় করছে। তাই বইলা খুন করলেন।আমার বুক খালি করলেন আপনে।”

–“হ্যাঁ মানুষই ভুল করে কিন্তু এই সিরাজী মঞ্জিলের কোনো পুরুষই মানুষ নয়। সবগুলোই নরপিচাশ। আর নরপিশাচদের ক্ষমা করতে নেই । তোমার ছেলেও নরপিশাচ তাই সে শাস্তি পেয়েছে। মহীবুলের করা অন্যায় ক্ষমার অযোগ্য ছিল।”

দুলাল সিরাজী মনোযোগ দিয়ে মহীবুলকে পরখ করলেন। সুভার কথা গুলো শুনে দুলাল ভয় পেয়ে গেলো। তবে একটা জিনিস লক্ষণ করলো যেটি হলো সুভার কন্ঠে কোনো জড়তা নেই। দুলাল সিরাজী ভাবছে হেলালের হত্যাকাণ্ডে ও সুভার কোনো হাত আছে কিনা।চাইলে এগুলো সে প্রমাণ করতে পারবে কিন্তু তার আগে মহীবুলের লাশ দাফন করা জরুরী। রুহুল আসলে সত্যি বলতে ও পারে সকল কে। আর সিরাজপুরের মানুষকে জানানো যাবে না কে মহীবুলকে খুন করেছে এবং কেন করেছে। কারণ দুলাল সিরাজীর কাছে সবার আগে সিরাজী মঞ্জিলের মানসম্মান।

চলবে….

#দেবী
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
৩৬ঃ

নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে আগামীকাল সিরাজী মঞ্জিলের মানুষজন। দুলাল সিরাজী লতিফ আর এক প্রহরী রফিককে দিয়ে মহীবুলের লাশ কাকনের কক্ষ থেকে সরিয়ে নেয়। তারপর সিরাজী মঞ্জিলের পিছনের দিকে লাশ ফেলে রাখা হ্য়। লতিফ আর রফিককে স্পষ্ট ভাবে দুলাল সিরাজী জানিয়ে দেয় তারা কেউ যেন এ কথা পাচকান না করে। দুলাল সিরাজীর নিরব শাসানি তে দুজন ই স্বীকার করে তারা কাউকে কিছুই বলবে না। তারপর এক প্রহরী কে পরকল্পনা মাফিক শিখিয়ে দেওয়া হয় সে যেন বলে লাশ এখানেই ফেলে রাখা হয়েছিল। সকালে ফজরের নামাজের পর উঠোন এবং বাগান ঝাড় দেওয়ার সময় সে মহীবুল কে দেখতে পেয়েছে।

দুলাল সিরাজীর কথা শুনে লতিফ আর রফিক দুজনেই অবাক হয়। অন্দরমহলের গোপন কথা জানার আগ্রহ হয় তাদের মনে। কে খুন করলো মহীবুল কে। তবে তারা মুখে প্রকাশ করে না। মহীবুলের লাশ দেখে তারা দুজনেই ভয় পেয়ে যায়। কি ভয়ংকর অপঘাতে মৃত্যু। তবে মৃত্যুর কারণ রহস্য থেকে যায়।

সকালে পরিকল্পনা মতো সিরাজপুরে জানানো হয় যে আজ ও সিরাজী মঞ্জিলে খুন হয়েছে। আর সেই খুনটি হয়েছে মহীবুলের। জানানো হয় মহীবুলের লাশ পাওয়া গেছে সিরাজী মঞ্জিলের পিছনে। সিরাজপুর বাসী মৃত্যুর খবর শুনেই ছুটে আসে সিরাজী মঞ্জিলে। থানা থেকে পুলিশ মরার খবর শুনে সকালেই ছ আসে । এসে কিছু জিজ্ঞাসা করে চলে যায়। আর মহীবুলের লাশ ও নিয়ে যাওয়া হয় ময়নাতদন্তের জন্য। দুলাল সিরাজী বাধা দেয় না। কিন্তু সকলের অগোচরে ঠিক ই পুলিশকে জানিয়ে দেয় লাশ যেন জোহরের আগেই দেওয়া হয়। দুলাল সিরাজীর কথার বরখেলাপ তারা করতে পারে না। তাই সকল কাজ শেষে দিয়ে যাওয়া হয় এবং লাশ ধুয়ে কাফন করে রাখা হয়। জানাজার উদ্দেশ্যে যখন কাধে তুলে নিয়ে যাবে ঠিক তখন ই রুহুল এসে হাজির হয় সিরাজী মঞ্জিলের আঙিনায়।
_________________

সামিয়ার থেকে সকল ঘটনা শুনে রাগে রুহুলের শরীরের রগ জেগে উঠেছে। রুহুল নির্বাক হয়ে গেছে মহীবুলের স্পর্ধা দেখে। ভেবে পাচ্ছে না মহীবুল কি করে পারলো এই জঘন্য কাজ করতে। তবে খারাপ লাগছে কাকনের জন্য। কত বড় সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল তার স্ত্রী। যেখানে সে স্বামী হয়েই কাকনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে , সম্মতি ছাড়া কখনো জোর করে না সেখানে তার অনুপস্থিতিতে তার বিবিজানকে মহীবুল জোর করেছে। রুহুলের রাগে মাথা যেন গরম হয়ে গেছে। রুহুল নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বললো, ” আমার বিবিজান কোথায়? ”

সামিয়া সুভার দিকে চাইলো। তারপর বললো, “গোসলঘরে গোসল করতে গেছে। বড়াম্মা নিজে কইছে ওনারে গোসল করতে। ”

রুহুল কক্ষ থেকে বেরিয়ে সোজা নিচতলায় গোসল খানার সামনে গেলো। দেখলো তড়িপা সেখানে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো পাহারা দিচ্ছে কাকন কে। রুহুল কে দেখেই তড়িপা সেখান থেকে সড়ে এলো। রুহুল গোসল খানার দরজা খুলে সরাসরি ভিতরে ঢুকলো। যেয়ে কাকনের বিদ্ধস্ত রুপ দেখলো। টিউবওয়েল কাছে বসে আছে চুপটি করে কাকন। গায়ের শাড়িটি কেমন হয়ে পড়ে আছে আছে। চুলের বেনী আধখোলা অবস্থায়। গলায়, হাতে দাগ স্পষ্ট। রুহুল এগিয়ে যেয়ে কাকনের কাছে বসলো। কাকনের গালে হাত রেখে বললো, “বিবিজান!”

রুহুলের কন্ঠ পেয়েই কাকনের যেন জান ফিরে এলো। কাকন মুখ উঠিয়ে রুহুল কে দেখেই ঠোঁট উল্টিয়ে কাদতে শুরু করলো। রুহুল কাকনকে নিজের বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কাকন যে কাপছে রুহুল তা ঠিক ই উপলব্ধি করলো। রুহুল কাকনের পুরো মুখে চুমু খেলো। কাকন রুহুলের পিঠের শার্ট ঘামচে ধরে জড়িয়ে ছিল তা ছেড়ে দিলো। রেগে গিয়ে রুহুলকে সড়িয়ে দিয়ে বললো, “বলেছিলাম আমাকে রেখে যাবেন না। তবুও গিয়েছিলেন। দেখুন মেজোভাই, মেজো ভাই আমাকে আমাকে অপবিত্র করে… ”

তার আগেই রুহুল ঠোঁটে হাত রেখে বাধা দিয়ে বললো, “চুপ , কিচ্ছু হয় নি আপনার। কিচ্ছু হয় নি। ”

–“না উনি আমাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করেছে।”
এই বলে কাকন নিজের দুহাত মেলে ধরলো রুহুলের সম্মুখে। শাড়ির আচল নামিয়ে দেখালো বেশ খানিকটা আচরের দাগ।রুহুল আলতো করে হাতের আর গলায় লাল হয়ে যাওয়া দাগে হাত রাখলেন। ফর্সা হাতে নখের আঁচড় লেগে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে।

রুহুল কাকন কে নিজের বুকে নিয়ে বললো, ” কাদবেন না,, কিচ্ছু হয় নি। আপনি আমার পবিত্র ফুল, পবিত্রই আছেন। নর্দমার কীট গায়ে পড়লেই কেউ অপবিত্র হয় না। আপনি আমার কাছে সারাজীবন সদ্য ফোটা পবিত্র ফুলই থেকে যাবেন। ওর মতো পশুর জন্য নিজেকে অপবিত্র মনে করবেন না। ”

রুহুল নিজ হাতে কাকনকে গোসল করিয়ে দিলো।তারপর কক্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য গোসলখানা থেকে বের হলো। কাকন কে দেখেই দাদিমা অভিশাপ দিতে শুরু করলো। সেই সাথে নানা গালি গালাজ করলো। অপয়া,কুফা আরো নানা কিছু বলতে লাগলো। সিরাজপুরের সবাই কটু কটুবাক্য শুনালো। ভাবতে লাগলো বোধহয় কাকন আসলেই অপয়া যার কারনে আসার পর দুজন যুবক মরলো।

রুহুল কোনো কিছু না বলেই কাকনকে নিজের সাথে করে নিয়ে কক্ষে নিয়ে গেলো। সুভা এখনো সেখানে বসে আছে। রুহুল কাকন কে বিছানায় শুইয়ে দিলো। গায়ে কাথা ছেটে দিয়ে বললো, “আপনার কিচ্ছু হয়নি। আপনি বিশ্রাম করুন। আমি আসছি।”

কাকন রুহুলের হাত টেনে ধরলো। রুহুল নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কাকনের হাতে হাত রেখে বললো, “আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো। ”
কথাটি বলে রুহুল কক্ষ থেকে বের হবে তখন সুভা ডাকলো,”খোকা। ”

রুহুলের পদযুগল থেমে গেলো। কত বছর পর তার মা এত সুন্দর শান্ত সুরে ডাকলো। রুহুল পিছে ফিরে তার মায়ের দিকে তাকালো। সুভা আবারো বললো ” মহীবুল তার শাস্তি পেয়েছে খোকা। এই সিরাজী মঞ্জিলে আর কোনো খুন চাই না আমি। ”

–” আপনি শাস্তি দিয়েছেন আম্মা। আমার স্ত্রীর সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি আমি তো দেইনি। ”

–” সে মৃত তাকে ক্ষমা করে দাও। কোনো রকম ঝামেলা ছাড়া তাকে দাফন করো। এটা আমার আদেশ। ”

–“আম্মা,, এত কিছুর পরেও আমি চুপ থাকবো। মহীবুলের লাশ হয়তো দাফন করলে শেষ হবে। কিন্তু আপনার পাশে শুয়ে থাকা আমার স্ত্রীর সঙ্গে যা হয়েছে তার ভাগিদার কে হবে। কাল রাতে যদি আপনি না আসতেন আজ মহীর জায়গায় আমার স্ত্রী থাকতো।
হয় মহী হত্যা করতো না হয় আমার স্ত্রী নিজে আত্মহত্যা করতো। ”

–“বললাম তো লাশ দাফন করে আয়। কাকনের এখন সবচেয়ে বেশি তোকে প্রয়োজন।”

–” আমি ভেবে পাচ্ছি না ওর লাশ আপনি কি করে নিয়ে যেতে দিলেন আম্মা। আর আমায় বলছেন ওকে শান্তি পুর্ণ ভাবে দাফন করতে ওর মতো পাপীর লাশ দাফন হতে দেওয়া ও পাপ।”

–” হ্যাঁ ও পাপী।পাপ করেছে কাকনের সাথে।শাস্তি ও পেয়েছে।ভয়াবহ মৃত্যুর চেয়ে বড় শাস্তি কি হতে পারে।”

–” মৃত্যু কখনো শাস্তি হতে পারে না। মৃত্যু হলো মুক্তি যা মানুষকে জগৎ সংসারের সবচেয়ে বড় মুক্তি দেয়।”
_______________________

অন্যদিকে রুহুল অন্দরমহলে যাওয়ার পরপর ই দুলাল সিরাজী সকল মানুষদের লাশ মসজিদে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর দেয়। অগত্যা সকলেই লাশ নিয়ে মসজিদে যায়। নামাজ শেষে মহীবুল কে দাফন করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যায় গোরস্থানে। সেখানেই হেলালের কবরের পাশে মহীবুলের কবর খোদাই করা হয়। মহীবুলের লাশ কবরে নামানো হয়। দুলাল সিরাজী সবার আগে মাটি দেবে তার আগেই রুহুল বাধা দেয় বলে, “দাড়ান দাদাজান। ”

রুহুলের ডাকে দুলাল সিরাজীর হাতের মাটি পড়ে যায়। সিরাজপুরের অধিকাংশ মানুষই এখানে বিদ্যমান। দুলাল সিরাজী বার বার আল্লাহর নাম নিচ্ছে রুহুল যেন মহীবুলের হত্যার বিবরণ এখানে উল্লেখ না করে।
রুহুল দুলাল সিরাজীর সম্মুখে এসে ডান হাতের মুঠোয় মাটি নিলো। তারপর বললো, ” সবার আগে আমি মহীবুলকে মাটি দেবো।”

রুহুলের এমন শান্ত রুপ দেখে ভয় যেন আরো ঘিরে ধরলো জামাল সিরাজীর। জামালের অন্তরাত্মা কেপে উঠলো। রুহুল সবার আগে এক মুঠ মাটি দিলো। তারপর ধীরে ধীরে সকলেই মাটি দিলো।
মাটি দিয়ে সকলেই মঞ্জিলে ফিরে এলো। মঞ্জিলে এসে রুহুল সবার আগে নিজের কক্ষে গেলো।
কাকন ঘরে ঘুমিয়ে আছে। আর তার পাশেই সামিয়া রয়েছে। সামিয়া কাকনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
রুহুলকে দেখে সামিয়া আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলো। রুহুল কাকনের পাশে আধশোয়া হয়ে বসে কাকনের মাথায় হাত রাখলো। কপাল অত্যধিক গরম। রুহুল হাত দিয়ে দেখলো বেশ জ্বর। রুহুল একটা বাটিতে পানি আর কাপড় নিয়ে জলপট্টি দিয়ে দিলো।

ঠান্ডা পানি পেয়েই কাকনের ঘুম যেন হালকা হয়ে গেলো। কাকন জ্বরের ঘোরেই কথা বলছে,”মা,মা,বাবা” কাকন বার বার কাপছে। কাকনের এমন অস্থিরতা রুহুলের সহ্য হচ্ছে না। তার প্রাণবন্ত স্ত্রীকে এমন অবস্থায় দেখে রুহুলের খুব কষ্ট হচ্ছে। না রুহুলের দ্বারা এ কষ্ট সহ্য করা সম্ভব না।

রুহুল কাকনের গায়ের কাথা ঠিক করে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। নিচে আসতেই কান্নার আওয়াজ। মহীবুলের মায়ের কান্না দেখে রুহুলের এই মানুষ টার জন্য আফসোস হচ্ছে। যে ছেলে কোনোদিন মাকে ভালো অব্দি বাসলো না সেই ছেলের জন্য তার মা দিব্যি কেদে যাচ্ছে। রুহুল সুভার দিকে তাকালো ভাবলো সে মরলে কি তার আম্মা ও এভাবে কাদবে হয়তো কাদবে আবার হয়তো না। তার মা যে সিরাজীদের ঘৃণা করে। আর রুহুল ও তো সিরাজী মঞ্জিলেরই বটে।

রুহুল দুলাল সিরাজীর খোজ করলো। শুনলো দুলাল সিরাজী ভোজন কক্ষে খাচ্ছে।
রুহুল ভোজন কক্ষে যেয়ে দুলাল সিরাজীর পাশেই বসলো। দুলাল সিরাজীর খাবার যেন গলায় আটকে গেলো। দুলাল সিরাজী পানি দিয়ে খাবার গিললো। বললো, “আরে রুহুল যে বইসো খাইয়া নেও তুমি। সেই কখুন ঢাকা থিকা আইছো।”

রুহুল একটি গ্লাসে পানি ঢেলে পান করলো তারপর বললো, ” আপনাকে দেখে সত্যিই খুব অবাক হই দাদাজান। এতটা অমানবিক কিভাবে হতে পারেন? ”

–” রুহুল মুখ সামলায়া কথা কও। ভুইলা যাইয়ো না তুমি কার লগে কথা কইতাছো। আমি অমানবিক?”

–“আমি ভুলিনি আমি কার সাথে কথা বলছি। আমি একজন মানুষ নামক অমানুষের সঙ্গে কথা বলছি যার কাছে নিজের বংশের নিয়ম জমিদারি সবার আগে।যার কাছে একজন মানুষের প্রাণের মুল্যও নেই।”

–“রুহুল! তুমি কি কইবার চাও হ্যাঁ? ”
–“আমার বলার মতো তো কিছু নেই দাদাজান। সব রাস্তা তো আপনি নিযে বন্ধ করে দিয়েছেন। আমার অনুপস্থিতিতে আমার স্ত্রী কে রক্ষা করার দায়িত্ব আপনার ছিল। কিন্তু আপনি সেটা করেন নি।”

–” দেখো রুহুল আমি খাইয়া তোমার লগে সকল বিষয়ে কথা কইতাম। মহী যেইডা করছে সে তার সাজা পাইছে। তোমার আম্মায় নিজে তারে খুন করছে। এর পরেও আমার আর কি ই বা করার আছে কও? ”

–” আমার আম্মা ওকে শাস্তি নয় বরং আমার হাত থেকে রেহাই দিয়েছে। ওর শাস্তি যদি দিতে পারতাম অন্তত আমার রাগ কিছুটা উপশম হতো। কিন্তু আমি ব্যার্থ কারণ আমি মহীবুল কে নিজ হাতে শাস্তি দিতে পারলাম না।”

–“তাইলে কি তুমি ওরে কবর থিকা উঠাইয়া আইনা সাজা দিবার চাও?”

–“আল্লাহ তায়লা সেই ক্ষমতা আমায় দিলে অবশ্যই দিতাম। ”

–” রুহুল তোমার ভাই হয় মহী। নেশার ঘোরে ভুল কইরা ফালাইছিল তোমার আম্মায় খারাপভাবে খুন করছে।এখন তুমি কি চাও তোমার আম্মা জেলে যাইক। যদি না চাও তাইলে এই বিষয় গুলা ভুইলা যাও। ”

রুহুল অবাক হয়ে গেলো। দুলাল সিরাজী ঠিক আগের মতোই স্বার্থপরই হয়ে আছে। কোনোদিন ও ঠিক হবে না।রুহুলেত দুর্বলতার সুযোগ নিলো।সুভা কে পুলিশে দিলে যে সে আরেক ঝামেলার সম্মুখীন হবে।রুহুল বললো, “আমার আম্মা কোনো অন্যায় করে নি।
বরং আপনার বংশের কুলাঙ্গার অন্যায় করেছে। ”

–” আমার বংশ আর তোমার বংশের পার্থক্যডা কি হুনি। তুমিও তাও এই বংশধর। ”

–“এজন্যই তো আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হয় কারন আমি সিরাজী বংশের। নিজেকে কখনো এই রক্তের বাধন থেকে আলাদা করতে পারবো না।”

দুলাল সিরাজী খাওয়া শেষ করে হাত মুছলেন। রুহুলের হাত ধরে বললেন, “তোমার বিবির লগে অন্যায় হইছে। তোমার আম্মা খুন করছে। শোধবোধ হইয়া গেছে। এখুন আমার করার মতো কি আছে কও তুমি। আইজ হোক কাল হোক তোমারে আমি সব দিমু তুমি খালি কোনো অশান্তি কইরো না। ”

–” আপনার কি মনে হয় না এগুলো তে চাচাজানের হাত নেই। তার কুপুত্র তার অনুমতি ব্যাতিত আমার স্ত্রীর ঘরে আসার সাহস কখনোই পাবে না। আর আপনি আমি আপনার ছেলেকে ছেড়ে দেবো?”

–“হ্যাঁ দিবা। জামাল আর মহী দুজনেই নেশা করছিল। আর তোমার বউ অতি সুন্দরী দেইখা মহী নিজেরে সামলাইতে পারে নাই। পুরুষ মানুষ সুন্দরী মাইয়া দেখলে কেমন হয় জানোই তো। এখুন তুমি যদি অশান্তি করো তোমার আম্মার কথাও জানাজানি হইয়া যাইবো আর সেই সাথে কাকনের ও বদনাম হইবো। লোকে নষ্টা কইবো তোমার বউ রে। ”

রুহুল চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো। বললো, “ঘৃণা হয় যে আপনি আমার দাদাজান। আম্মা ঠিকই বলে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল এই মঞ্জিলে বউ হয়ে আসা। এখানে মানুষ না জানো’য়াড় দের বাস।”

দুলাল সিরাজী রুহুল যাওয়ার পর পানি গিললো। তারপর শয়তানি হাসি দিলো। দুলাল সিরাজী ভালো করেই জানে রুহুলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো তার আম্মা। আর এখন কাকন ও আছে। রুহুল কখনো চাইবে না তার আম্মা জেলে পচুক। আর কাকনের ও বদনাম হোক। কারন সবাই কাকনের ই দোষ দেবে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here