দেবী,৪০

0
321

#দেবী,৪০
লেখিকাঃ শবনম রাবাহ (স্রোতস্বিনী)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।

‘আমাকে ছাড়ুন, বাচান কেউ,, হাত ছাড়ুন’। ঘুমের মধ্যে বার কেপে উঠছে আর এগুলো বলছে কাকন। কাকন ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করে বিছানায় উঠে বসলো। হৃদগতি যেন কয়েকগুন বেড়ে গেছে কাকনের। রুহুল কাকনের এমন চিৎকারে বললো, ” কি হয়েছে এমন করছেন কেন? ”

কাকন জোরে জোরে শাস নিতে নিতে বললো, “আমি আমি প,পানি খাবো।”

রুহুল কাকন কে পানি খেতে দিলো। কাকন পানি খেয়ে নিলো। রুহুল কাকনের দিকে তাকালো। রুহুল নিশ্চিত দুঃস্বপ্নে কাকন অনেক ভয় পেয়েছে যার কারনে ঘেমে একাকার দশা কাকনের।
রুহুল কাকন কে বললো, “শান্ত হন। আসুন আমার বুকে মাথা রাখুন। ভালো লাগবে। ”

কাকন রুহুলের বুকে মাথা রাখলো। অত্যন্ত ভয় পেলে মানুষ যেমন আচরণ করে কাকন ঠিক তেমনটিই করছে। রুহুল কাকনের মাথায় হাত বুলাতে বললো,
” ভয় নেই। এটা কেবল দুঃস্বপ্ন ছিল। আপনি একটু শান্ত হয়ে ঘুমান সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

রুহুল কাকন কে বুকে নিয়েই শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর রুহুল অনুভব করলো কাকন কাদছে। রুহুল নিজের হাতে কাকনের চোখ মুছে দিয়ে বললো, “আবার কাদছেন, কতবার বলবো আপনি কাদলে কষ্ট হয়। ”
–“কাদছি না।”
–“তাহলে চোখের পানি এলো কোত্থেকে।”
-“কাল একটু ফাতিমা আপার সাথে দেখা করার সুযোগ করে দেবেন। ওনাকে অনেকদিন হলো দেখি না আমি। ”

রুহুলের বলতে ইচ্ছে করছিল না কিন্তু কাকনের মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে বলল, “দেবো। ”

–” আপনি যখন সিরাজপুরের কর্তা হবেন তখন কি আব্বার মতো পরিবর্তন হয়ে যাবেন নাকি এমন ই থাকবেন।”

–“আমি তো গিরগিটি নই। তাই আমি পরিবর্তন ও হতে পারবো না। আমি সারাজীবন এমন ই থেকে যাবো। ”
–“আমার কিছু কথা রাখবেন আপনি?”
–“আদেশ করুন বেগম।”
–” আপনি কর্তা হবার পর সবার আগে মহিলাশালার অসম্পূর্ণ ভবন টি মেরামত করবেন।”
–“কিন্তু সেইটা তো অসম্ভব। দাদাজান যে সে কাজ নিষিদ্ধ করেছে। ”
–“কিন্তু তখন তো আপনি কর্তা হবেন। সেই দালান টি হলে সব মেয়েরা অনেক ভালো ভাবে সেখানে থাকতে পারবে। দোচালা টিনের ঘরটা অনেক জায়গায় জং ধরে ভেঙে গেছে।”
–“ঠিক আছে করবো। আপনি এখন ঘুমান।”
–” না আমার কিছু কথা শুনতে হবে।”
–“বেশ বলুন।”
–” মেয়েদের কে ভালো ভাবে লেখা পড়ার সুযোগ করিয়ে দেবেন। আর মেয়েদের বিবাহ দেওয়ার আগে অন্তত তাদের একবার অনুমতি নেবেন।”

কাকনের মাথায় বুলিয়ে দেওয়া হাত থেমে গেলো। রুহুল হাত নামিয়ে বললো, “আপনি কি কোনো ভাবে আমাদের বিয়েতে আপনার অসম্মতির ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিবিজান? ”
–” না ঠিক সেটা নয়। আসলে অনেক মেয়েদের ই পছন্দের মানুষ থাকতে পারে। ”
রুহুল হেসে বললো, ” ওহহ ঠিক আছে। ”

কাকন আবারো বললো, “আর মহিলা শালার গেইট টি মেরামত করবেন। ”
–“বড় গেইট লাগাবো কেমন।”
–” ফাতিমা আপাকে একটা ডাক্তার দেখাবেন। আপার নাকি বুক ব্যাথা করে।”

রুহুল এবার বললো, “আপনার সব ইচ্ছা দেখছি মহিলাশালা ঘিরেই। নিজের জন্য কিছু চান। ”

–” আমি না চাইতেও জীবনে এত কিছু পেয়েছি যে কোনো কিছুই আর চাওয়ার নেই। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর যে স্থান আমায় ঠায় দিয়েছে সে স্থান এর জন্য কিছুতো চাইতেই পারি।পুরণ করবেন না চাওয়া। ”

–“বেশ কথা দিলাম আমি সব ঠিক করে দেবো।আপনার সকল চাওয়া পুর্ণ করবো।”
–” হুম, ধন্যবাদ। ”

–“বিবিজান, মহিলাশালার কাজ প্রায় শেষের দিকে। এইটা শেষ হলে অন্যটার অসম্পূর্ণ কাজ সেড়ে ফেলবো। আর সবার আগে আপনাকে নিয়ে যাবো। আপনি নিজ হাতে উউদ্বোধন করবেন কেমন।”

–” আমি যাবো না। তবে আপনি উদ্বোধন করার সময় মনে করবেন আমি আপনার পাশে আছি। আপনি উদ্বোধন করলেই আমার হবে। ”

–“উহু ওইটা আপনি করবেন।”
–” যদি উদ্বোধন করার সময় আমি না থাকি। ”
–“কেন থাকবেন না অবশ্যই থাকবেন। ”

কাকন উঠে বসলো আবারো। রুহুল ও সাথে আধশোয়া হয়ে বললো, “কি হয়েছে আবার।”
–“জানি না ভালো লাগছে না। ”
রুহুল বললো, “বাহিরে যাবেন? ”
–“এত রাতে বাহিরে মানে? ”

রুহুল মশারির ভেতর থেকে বেরিয়ে পড়লো। তারপর বললো, “কিছু না চলুন আমার সাথে।”

রাত তিনটার অধিক। রুহুলের কথা মতো কাকন বোরকা পরিধান করলো।রুহুলও শার্ট পড়ে হাতে একটা হারকেন নিয়ে বেরিয়ে পড়লো কাকনের সাথে।
দোতলা পার করে নিচে এলো। তারপর অন্দরমহলের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো রুহুল-কাকন। গেইটের কাছে এসে রুহুল প্রহরী কে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। গেইটের কাছে দাড়য়ে থাকা দুজন প্রহরীই ঝিমুচ্ছে। রুহুল খুব সন্তপর্ণে গেইট খুললো। তারপর বেরিয়ে গেলো সিরাজী মঞ্জিল থেকে।

রাস্তায় ঘুটঘুটে অন্ধকার। শেয়ালের হাক শোনা যাচ্ছে। রুহুল এক হাতে হারিকেন টা রাখলো আর বাম হাত দিয়ে কাকনের হাত ধরে রাখলো। কাকন এই প্রথম এভাবে এত রাতে এভাবে রুহুলের সাথে বাইরে হাটছে। মনে কোনো ভয় ভ্রান্তি নেই। ভালো লাগা কাজ করছে । কাকন রুহুল কে বললো, ” আপনি আমায় এভাবে এত রাতে হাটতে নিয়ে এলেন যে আজ? ”

রুহুল বললো, “সত্যিই বলতে এটা আমার অনেক দিনের ইচ্ছে বলতে পারেন ”

–“বাহ রে রাত-বিরাতে এভাবে অন্ধকারে হাটা কারো ইচ্ছে ও হতে পারে? ”
–“কেন বিবিজান, ভয় লাগছে আপনার? ”
–“না আমি অন্ধকার কে ভয় পাই না! ”

রুহুল হেসে বললো, “বাহ বাহ আমার বিবিজান তো দেখছি বেশ সাহসী।”
–“আমি সাহসী নই তবে অন্ধকার ভয় পাই না। কেন আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না আমাকে? ”

–“আপনাকে বাসর রাতেই বলেছিলাম আমি আপনাকে বিশ্বাস করতে চাই।আর সেদিন থেকেই আমি আপনাকে বিশ্বাস করি নিজের থেকেও বেশি।”

কাকন আর উত্তর দিলো না। হারিকেন টা নিজের হাতে নিলো। তারপর রুহুলের ডান পাশে দাড়ালো।
রুহুল বললো , এই যে এভাবে আমার হাত ধরে হাটছেন কেমন লাগছে?”

–“ভীষণ ভালো লাগছে। রাতের এমন আধার রূপে হেসে হেসে প্রকৃতি বিলাশ করা হয় নি আগে। ”

রুহুল বললো, ” আমরা জান্নাতে ও এভাবে হাটবো।”

কাকন রুহুলের দিকে তাকালো। রুহুল আবারো বললো, ” কি হাটবেন তো আমার হাত ধরে জান্নাতে?

–“হুম আমি জান্নাতেও আপনার হাত ধরে পায়ে পা মিলিয়ে হাটবো ঠিক আছে ।”

–“ইন শাহ আল্লাহ বিবিজান। আপনাকে এখন বলি কেন আমার ইচ্ছে ছিল এভাবে হাটার। ”

–“হুম বলুন, শুনি? ”
–“আমি অনেক বছর আগে শুনেছিলাম যে নবীজি(সাঃ) তার বিবিজান কে নিয়ে রাতে হাটতো। দৌড় প্রতিযোগিতা দিতো। সেদিন থেকেই ইচ্ছে ছিল আমিও মাঝে মাঝে আমার বিবিজানকে নিয়ে হাটবো।”

–“আপনি এত কিছু ভেবে রেখেছিলেন আমার জন্য।”
–“হুম, আরো অনেক কিছু ভেবে রেখেছি আরেকটু বড় হন। তারপর সেগুলো ও পুরণ করবো।”

কথা বলতে বলতে রুহুল কাকন বকুল তলায় পৌছে গেলো। কাকন বকুল গাছের নিচে দাড়ালো। প্রায় ৫০ বছর আগের বকুল গাছটি এখনো জীবিত। কাকন বকুল গাছটির দিকে তাকালো। শীতল বাতাস রুহুল- কাকনের গা জুড়িয়ে দিলো। রুহুল কাকনকে বললো,
” আপনার আর আমার বিবাহ এর সুচনা এখানেই। যদি না আক্কাস দেখতো তবে দাদাজান বলতো ও না আর আমাদের বিয়ে হতো। এই জায়গা টি সেদিন থেকেই আমার প্রিয়।”

কাকন বললো, “আর আমার সবচেয়ে অপছন্দের।”
রুহুল বললো, “কেন? ”

–“জানি না, তবে এই বকুল তলায় আসলেই আমার কেমন যেন অদ্ভুত লাগে। আমার কাছে দুনিয়ার নরক মনে হয় এই বকুল তলা। ”

রুহুল ভাবলো হয়তো তাদের বিবাহে এখনো অসন্তুষ্ট। তাই রুহুল বললো,”এত কিছুর পর ও বোধহয় আপনার মন জয় করতে পারিনি আমি তাই না?”

কাকন রুহুলের হাত আরো শক্ত করে ধরলো। বললো, “আপনি কেবল আমার মন নয় আপনি আমার হৃদয় এমনকি আমাকেও জয় করেছেন সিরাজী সাহেব। ”

–“আর আপনার ভালোবাসা?”
–” সে জানি না। ”
রুহুল আফসোসের সহিত বললো, “আপনার মুখে ভালোবাসি শব্দটা শোনার আক্ষেপ বোধহয় আজীবন থেকে যাবে বিবিজান।”

কাকন মনে মনে বললো, খুব বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু কেন যে বলতে পারি না।’ কাকন মুখফুটে বললো,
” এভাবে বলবেন না মশাই। আপনার এই আক্ষেপ অপুর্ণ রাখব না আমি। ”
–“তার মানে বলবেন। ”
–“হয়তো!”
–“আপনি বড় নিষ্ঠুর বিবিজান! ”
–“হাহাহাহা,,,আর আপনি অনেক মহৎ। এতটা মহৎ না হলেও পারতেন সিরাজী সাহেব।”
–“চলুন না দৌড় প্রতিযোগিতা দেই? ”
–” হ্যা, চলুন। ”

রুহুল কাকন কে নিয়ে দোড় দিলো। সিরাজপুরের আশেপাশের সকল এলাকা ঘুরলো। হয়তো খুব তাড়াতাড়িই ফজরের আজান দেবে। কাকন বললো,
“এখন আমাদের মঞ্জিলে যাওয়া উচিৎ।”
–“হ্যাঁ আজান দেবে একটু পর। ”
–“আজকের রাত টা শেষ না হলেও পারতো।”

–“আবার আসবো কোনো একদিন এভাবে পুর্ণিমার রাতে সাথে আমার বিবিজান কে নিয়ে। ”

–” পুর্ণিমার রাতে হাটবো কি না জানি না। তবে কথা দিন জান্নাতে আপনি আর আমি একসাথে হাটবো। একসাথে দৌড় প্রতিযোগিতা দেবো।”

কাকনের হাতটাতে চুমু দিয়ে রুহুল বললো, “কথা দিলাম আমরা জান্নাতেও ওকসাথে হাটবো। কারন আমি কোনো হুর চাই না। আমি জান্নাতেও আমার সুন্দরী হুরপরী বিবিজান কেই চাই। ”

কাকন হারিকেন ফেলে রুহুল কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,” আপনার ভালোবাসা আমার নিশ্বাসে রুপান্তর হয়েছে। নিস্বাস ছাড়া যেমন আমি বাচতে পারবো না আপনার ভালোবাসা ছাড়াও বাচতে
পারব না।”
_________________

সকালে পুরুষেরা ভোজন কক্ষে খাচ্ছে আর মহিলারা রন্ধনশালায় খাচ্ছে। সামিয়াকে মালেকা খাইয়ে দিচ্ছে। আর এটা সেটা বুঝোচ্ছে কিভাবে কি করতে হবে।তবে সামিয়ার এমন উদাস। তা দেখে কাকন বললো, “এভাবে মন খারাপ করছো কেন? ”

সামিয়া মুখ ফুলিয়ে বললো, “আমার যাইতে ইচ্ছা করতাছে না ভাবিজান। ”

সুভা বললো,” কিন্তু যেতে তো হবে সামিয়া বুড়ি।সংসার জীবনে পদার্পণ করেছ।তাই এগুলো বলা চলবে না”

সামিয়া বললো, “তখন তো খুশিতে খুশিতে বিয়া করছিলাম কিন্তু এখন আমার আর ভাল্লাগছে না।”

মহীবুলের মা বললো, ” সুয়ামির সংসার ই তো সব রে সামিয়া। তাই এইভাবে কইবি না। সুয়ামির সেবা করবি। দেখবি সে তরে অনেক ভালোবাসবো।”

সামিয়া বললো, “চাচি আম্মারে আইজ খুব খুশি দেখতাছি। আমি চইলা যামু দেইখা সব্বাই দুখী আর চাচি আম্মা এত্ত খুশি কেন হ্যা? ”

মহীবুলের মা বললো, “না রে মা আমি এই জন্য খুশি হমু কেম। আমি তো এমনেই খুশি। ”

কাকম ও লক্ষ করলো আজ খুব খুশি। কাকন বললো, ” সামিয়া ঠিক ই বলেছে চাচি আম্মা। আপনাকে অনেকদিন পর আজ অনেক খুশি দেখাচ্ছে। ”

মহীবুলের মা লাজুক হেসে বললো, “আমি যে আমার সুখ পাইয়া গেছি কাকন বউ। তাই খুশি তো হমুই। আমার সারাজীবনের সুখ পাইছি। ”

মালেকা বললো, “কি পাইছা রে মহীর আম্মা?”

–“মহীর আব্বা আরা আগের মত নাই। সে এখুন অনেক ভালা হইয়া গেছে।তাই আমার আর কোনো দুঃখ নেই।”

দাদিমা খুশি হয়ে বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ, যাইক আল্লাহ রহম করছে। আমার ছুটো পোলা ডাও মানুষ হইছে।মঞ্জিলে আর কোনো দুঃখ কষ্ট আইবো না। ”

মালেকা বলল,”হ্যাঁ আম্মা তাই জানি হয়। সিরাজী মঞ্জিলে এত ঝড়ের পর সুখ আইছে সব ঠিক হইবো।”
_________________

সামিয়া গেইটের কাছে দাড়িয়ে কাদছে সেই সাথে মালেকাও। মেয়েকে বিদায় দিতে যেয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে।

দুলাল সিরাজী বকুল কে উদ্দেশ্য করে বললেন,”শুনো নাতজামাই খুব শীঘ্রই তোমার বন্ধুরে সব দায়িত্ব দিমু। বড় অনুষ্ঠান করমু। হয়তো মাহফিলের ও আয়োজন করতে পারি। তোমারে চিঠি দুমি নি। তুমি তোমার বাপ-মাও রে নিয়া আইবা কিন্তু।”

বকুল বললো, “জি দাদাজান আমি চেষ্টা করবো। মা -বাবা সবাই কে নিয়েই থাকার চেষ্টা করবো।”

–“উহু চেষ্টা না আসতেই হইবো। আমার সব আত্মীয়রা আসবো, সব মাইয়া, জামাই গো দাওয়াত দিমু তাই তুমিও আসবা। ”

–“জি দাদা আমি আসবো।আজ তাহলে আসি।”
–“হ্যাঁ আইসো। লতিফ তোমাগো লগে যাইয়া তোমাগো আইগা দিয়া আইবো কেমন।”

–“জি ঠিক আছে দাদাজান। আসসালামু আলাইকুম। ”
–“ওয়া আলাইকুমুস সালাম।”

সামিয়া চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বিদায় নিল সিরাজী মঞ্জিল থেকে। মালেকাও মেয়ের যাওয়ার
পানে চেয়ে কাদলো।

রুহুল বকুকে গাড়িতে উঠিয়ে দিল।বকুল রুহুল কে বললো, “আগামী বার আসলে কিন্তু আমি সুখবর চাই।”

–“তুই কি ভালো হবি না। এখনো বলতে হবে।”
–” হ্যাঁ বলতে হবে তাই বলছি।”
–“আচ্ছা সুখবর দেবো তোকে। সাবধানে যাস।”
–“আসছি।”
_________________

সামিয়া বকুলকে বিদায় দিয়ে কাকন রন্ধনশালায় আসতেই সুভা বললো, ” আযানের কিছু সময় আগে দেখলাম তুমি আর রুহুল উপরে উঠছো। কোথাও কি গিয়েছিলে তোমারা? ”

কাকন মাথা নিচু করে বললো, “আসলে আম্মা, মানে রাতে আমরা একটু হাটতে বেরিয়ে ছিলাম। উনিই নিয়ে গিয়েছিল আমায়। ”

–“ভালোবাসো আমার খোকাকে?”‘

কাকন সুভার দিকে চাইলো। যেখানে রুহুল কেই মুখফুটে বলতে পারলো না সেখানে সুভা কে কিভাবে বলবে। কাকন মুখে বললো, “আসলে আম্মা আমি.”

সুভা কাকন কে বললো, ” আমার ছেলেকে কখনো কষ্ট দিও না কাকন। ভালো না বাসলেও কখনো ছেড়ে যেও না। আমার খোকা সইতে পারবে না।”

–” আমায় এগুলা কেন বলছেন আম্মা? ”

–“জানি না, তবে তোমায় বললাম আর কি। আমার খোকা তোমায় নিয়ে অনেক সুখে আছে। অন্তত তুমি সেই নারী টি হও যে আমার খোকা কে ভালো রাখতে পারবে। এই দুনিয়ায় আমার খোকার কষ্ট আমায় সবচেয়ে বেশি পীড়া দেয় কাকন । আমার খোকার কষ্ট কিন্তু আমি মেনে নেবো না।”

–“আমি চেষ্টা করবো আম্মা। আপনার ছেলে যেন কখনো কষ্ট না পায় আমার দ্বারা। ”

–“জীবন টা তত টা সহজ নয় কাকন যতটা তুমি ভাবো। এমন অনেক কিছু আছে যা কিছু তোমার কল্পনার বাইরে। তোমার ছোট্ট মস্তিষ্ক অপরিপক্ক। আমার কথা মত খোকাকে ভালোবেসে দেখো কষ্ট তোমায় স্পর্শ ও করতে পারবে না। ”

–“আমি জানি উনি আমার সাথে থাকলে দুনিয়ার কোনো কষ্ট আমায় স্পর্শ ও করতে পারবে না। ওনার মাঝেই আমার সুখ,ওনার মাঝেই আমার শান্তি।”

সুভা কাকনের সন্তুষ্ট হলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, ” প্রথম দেখায় তোমায় আমার ভালো লেগেছিল কারন তোমার জন্য আমার খোকার মুখে খুশির ঝলক দেখেছিলাম। আমার গর্ভের কোনো মেয়ে নেই। তবে জানি না কেন রুহুলের মতোই তোমার প্রতি টান। নিজেকে কখনো পর এতিম ভাববে না। মনে করবে এ মঞ্জিলে আমিই তোমার সবচেয়ে বেশি আপন।”

–“আপনিই আমার আপন আম্মা, সবচেয়ে আপন।”
_________________

রুহুল সব কাজ সামলাচ্ছে। বিভিন্ন পাইকারদের কাছে ফসল বিক্রি করছে। আর রুহুলের পাশেই জামাল দাঁড়িয়ে আছে। রুহুল কর্মচারী দের দিয়ে সব বস্তায় করে ভিতর থেকে বাইরে নিয়ে আসছে। আর দূর থেকে সব দেখে যাচ্ছে দুলাল সিরাজী।
রুহুলের কাজে দুলাল সিরাজী খুব খুশি। সে তো খুব চেয়েইছিল যেন রুহুল সকল দায়িত্ব কাধে নেয়। বংশের দুই কুলাঙ্গার নাতি মারা গেছে তাতে সামান্য আফসোস থাকলেও রুহুলের কাজে দুলাল সিরাজী বেশ সন্তুষ্ট। সেদিন জামাল আর রুহুলের কথোপকথন দুলাল সিরাজী নিজ কানে শুনেছিল। মনে মনে তৃপ্তির হাসি হেসেছিল। অবশেষে তার পরিবারে কোনো বাধা বিপত্তি নেই। সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে দুলাল সিরাজীর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। সিরাজী মঞ্জিলে সকলে মিলেমিশে আছে। রুহুল ও আর বিদেশ যাওয়ার জেদ করছে না। শীতের শুরুতেই বড় মাহফিলের আয়োজন করবে। রুহুল কে সিরাজপুরের প্রধান বানিয়ে দেবে। তারপর বলবে বংশধর দিতে। সিরাজী বংশের নতুন প্রদিপের জন্ম হবে। সেদিন বলবে দুলাল সিরাজী রুহুলের আম্মা সুভাকে, ” তার বংশের বিনাশ হবে না। ”

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here