দেশলাই -০৬,০৭
জবরুল ইসলাম
৬ষ্ট পর্ব
রাফসান ঘুম থেকে উঠে আড়মোড় ভেঙে চারদিকে তাকাতেই বিস্মিত হয়ে গেল। তার পাশে কেবল শফিক হোসেন শুয়ে আছে। আর কেউ নেই। তাহলে বাকীরা গেল কোথায়?
– ‘শফিক, এই শফিক, উঠ বেটা বাল উঠ।’
শফিক পাতলা কম্বল সরিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে বলল, ‘কি রে? ডিউটির সময় হয়ে গেছে না-কি?’
– ‘আরে না, ডিউটি টাইম হয়নি। কিন্তু বাকীরা কোথায় গেল রে?’
– ‘মানে?’
– ‘দেখ, এখানে তো কোনো কাপড়-চোপড় নেই। ওরা সবাই কোথায় গেল?’
শফিক কোনো সদুত্তর দিতে পারলো না। তবুও আমতা-আমতা করে বললো, ‘ওরা ক’দিন থেকে নেপাল বর্ডার পাস হওয়ার জন্য দালালদের সঙ্গে কথা বলতে শুনেছি৷ কিন্তু আমাদের ফেলে চলে যাবে ভাবিনি তো।’
– ‘চলতো ক্যান্টিন দেখে আসি।’
দু’জন হন্য হয়ে চারদিকে খোঁজেও কোনো সন্ধান না পেয়ে ফোর ম্যান অনিমেষকে গিয়ে ডেকে তুলে বলল, ‘আমাদের লোকদের তো খোঁজে পাচ্ছি না দাদা।’
ফোর ম্যান লাফ দিয়ে উঠে। দিলশাদদের মোবাইলে কল দেয়। নাম্বার বন্ধ দেখায়।
তাদের সঙ্গে এসে চারপাশ দেখে বলল,
‘তোমরা বাঙালি কি মাদারচোদ দেখেছিস বাড়া? কাল রাতেই এ মাসের পেমেন্টের সঙ্গে অগ্রীম টাকা নিয়েছে। আজই পালিয়ে গেল। এখন আমি কন্ট্রাক্টরকে কি জবাব দেবো বল? আমার গুদ মেরে চলে গেল মাইরি।’
শফিক চমকে উঠে বলল, ‘কি? পেমেন্ট নিয়ে পালিয়েছে? তাইলে আমাদের পেমেন্ট কই?’
– ‘তোদের সবার পেমেন্ট সহ অগ্রীম টাকা নিয়েছে।’
শফিক মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল। অনিমেষ বিমল মুখে পুরে সিগারেট টানছে। রাফসান কোনো কথা বলতে পারছে না। এখনে আসার আগে এতো ঝামেলায় পড়বে বুঝতে পারেনি৷
ভেবেছিল মানুষ মিডলইস্টেও তো গিয়ে কাজকর্ম করে। সুতরাং ইন্ডিয়া কিছুদিন কাজ করে ঘুরে-ফিরে চলে যাবে। বাড়িতে তার দমবন্ধ লাগছিল। বারংবার ইচ্ছা করছিল যেদিকে দু-চোখ যায় চলে যাবে। কিন্তু পাসপোর্ট ছাড়া এখানে এসে বুঝতে পারে কি ভুলটাই না করেছে। ইন্ডিয়ান পুলিশরা এখন বাঙালি ধরতে পারলেই সর্বনাশ। এমনিতেই বহুকাল আগে থেকে আসামে বসবাসরত বাঙালিদের নাগরিকত্ব বাতিল নিয়ে ঝামেলা চলছে। অথচ তারা সয়ং পাসপোর্টবিহীন বাংলাদেশী৷
অনিমেষ সিগারেটে শেষ টান দিয়ে বলল, ‘তোদের তো রান্নাবান্না হয়নি। ক্যান্টিনে চা-টা খেয়ে কাজে চল। কাকাকে আমার নামে লেখে রাখতে বলিস।’
বছর খানেক আগে বাসর রাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে মেইন রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে রাফসান। চারদিকে ঘন কুয়াশ পড়েছে। একা একা হাঁটছে৷ এই পাকা রাস্তা গিয়ে লেগেছে মহাসড়কে। তাদের গ্রাম পেছনে ফেলে মীরাপুর এসেছে। তখনই দেখতে পেল চারজন লোক গল্প করতে করতে তাকে পেছনে ফেলে সামনে চলে গেল। সবার সঙ্গে একটা করে ব্যাগ। রাফসানও আনমনে তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটতে থাকে।
চারজন থেকে বয়স্ক একজনের ফোন এলো। সে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে অন্যদের বলল, ‘ফোর ম্যান কল দিছে।’
তারপর রিসিভ করে বলল, ‘আদাব দাদা। কেমন আছো?’
তাদের ফোনালাপের কিছুই বুঝতে পারলো না রাফসান। ফোন রেখে লোকটি অন্যদের বলল, ‘ফোর ম্যান বলছে আরও লোক হলে ভালো হতো। মাত্র চারজনকে এতো খরচা করে নিচ্ছে বাংলাদেশ থেকে।’
একজন বলল,
— ‘লোক কোথায় পাবে৷ বেশি হলে তো ভালোই ছিল। পাসপোর্ট ছাড়া একটা দেশে কাজ করতে যাবো৷ দেশের মানুষ বেশি থাকলে সাহস থাকে৷ আগেরবার আমরা পনেরোজন এক সঙ্গে ছিলাম।’
রাফসান কিছুই বোঝেনি। শুধু এটা বুঝতে পারছে এদের লোক দরকার। তারও দরকার দূরে, বহুদূরে কোথাও চলে যাওয়া। বাড়িতে দমবন্ধ হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছে চোখ যেদিকে যায় চলে যেতে।
পেছন থেকে বলল, ‘এইযে ভাই। আপনারা কোথায় যাবেন। লোক লাগলে আমারে নিতে পারেন।’
তারা পেছন ফিরে তাকায়। বিড়িতে লম্বা একটা টান দিয়ে একজন বলল, ‘আপনি ইন্ডিয়া যাবেন? দেখে তো কাজকাম করবেন বলে মনে হয় না।’
– ‘করবো ভাই। আপনারা যেখানে যাচ্ছেন আমাকে সঙ্গে নিন।’
ওরা চারজন মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে বলল, ‘বাড়ি কোথায়? আর এখনই এভাবে রাস্তা থেকে চলে যাবেন না-কি?’
– ‘বাড়ি বকুল পুর। আমি এভাবেই চলে যাব।’
– ‘বর্ডার পাস হয়ে একেবারে মুম্বাই যেতে তো পনেরো হাজারের উপরে টাকা লাগবে। টাকা এখন কোত্থেকে পাবেন?’
– ‘টাকা তো দিতে পারবো না।’
– ‘না দিতে পারলেও নেয়া যাবে। ফোর ম্যান টাকা দিয়ে নেবে৷ কিন্তু প্রথম মাসের পেমেন্ট থেকেই কাটিয়ে রাখবে।’
– ‘সমস্যা নেই। আমি যাবো।’
সেদিনই এই চারজনের সঙ্গে রাফসান যশোর বেনাপোল চলে যায়। দলপতি দিলশাদ দালালকে ফোন করলে বাস স্টেশন থেকে অফিসে নিতে দালাল আসে। দালাল দেখতে বেশ ভদ্রলোক। মুখে দাড়ি। মাথায় টুপি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। রাতে তাদেরকে বর্ডার পাস করাতে পারলো না। পরের পুরোটা দিনও চলে গেল বর্ডারের লাইন ক্লিয়ার হচ্ছে না। ইতোমধ্যে বর্ডার পার হওয়া বাবত মাথা পিছে সাত হাজার করে টাকা নিয়েছে। রাফসান সহ তারা পাঁচজন। দু’জন ছাড়া বাকী তিনজন ইন্ডিয়া প্রথম যাচ্ছে। টাকা মার যাওয়া নিয়ে তারা খানিকটা চিন্তিত, তবে রাফসান ভাবলেশহীন।
সন্ধ্যায় হঠাৎ দালাল এসে বলল, ‘ব্যাগ-প্যাক নিয়ে আসো।’
তারা সবাই বের হলো।
দালাল বললো, ‘সিএনজিতে ব্যাগ রাখো। আর এই নাও টোকন। কলকাতা চাইলে দেবে।’
সিএনজিতে তারা উঠলো। সিএনজির সামনে এবং পেছনে বাইক৷ বাইককে অনুসরণ করে সিএনজি একটা গলি দিয়ে ঢুকলো। একজন বিজিবিকে সামনের একটি দোকানে দেখা গেল। বাইক ওয়ালা গিয়ে সালাম দিয়ে কথা বলে ব্যস্ত রাখলো। তখনই সিএনজি পাস হয়ে গেল। খানিক দূরে গিয়ে বললো নামো সবাই। আমার পেছন পেছন আসো। গাছ-গাছালিতে এদিক অনেকটা জঙ্গলের মতো। তবুও বাড়ি-ঘর আছে। সবার অগোচরে চুপিচুপি তাদেরকে জঙ্গলের ভেতরের একটি বাড়িতে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে রাফসান অবাক হয়ে খেয়াল করলো ঘরভর্তি মানুষ। সবাই অন্ধকারে চুপচাপ বসে আছে। তাদের নতুন সঙ্গী দু’জন ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। একজন ফিসফিস করে দিলশাদকে বলল, ‘সীমান্ত রক্ষীরা দেখতে পাইলে কি গুলি করবো?’
দিলশাদ সাহস দিয়ে বলল, ‘আরে না। এরকম কিচ্ছু হবে না। ভয় পাইছ না।’
অন্ধকার চোখ সয়ে যাওয়ার পর দেখা গেল বেশ কয়েকজন মেয়েও আছে। ওরাও ইন্ডিয়া যাবে। যুবতী, মধ্যবয়সী মহিলা। খানিক পর দু’জন লোক এসে বললো, ‘রাস্তায় পানি আছে, মোবাইল, পার্স ব্যাগে ভরে চুপচাপ পেছন পেছন আসো। হাঁটার সময় আওয়াজ যেন না হয়। আর বিএসফের গাড়ি দেখলে দাঁড়িয়ে দৌঁড় দেয়া যাবে না। কনুই মেরে শুয়ে শুয়ে যেতে থাকবে।’
সবাই বুক দুরুদুরু বুকে বেরুলো৷ জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাঁটছে। দালালরা নিয়ে লাইনের লোকদের হাতে দিয়ে চলে গেলো। ওরা ডান-বাম, সামন-পেছন থেকে খেয়াল করে নিয়ে যাচ্ছে। কখনও কোমর আবধি পানি। জঙ্গলের পর জঙ্গল৷ জমির পর জমি। কোথাও দৌড়িয়ে, কোথাও লুকিয়ে রেখে প্রায় ঘন্টা খানেক হাঁটিয়ে বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ার সিমান্তের কাছাকাছি এসে লাইন ম্যানরা ঝোপঝাড়ের আড়ালে সবাইকে বসতে বললো। সীমান্তের ওপারে বাতি জ্বলছে।
আচমকা ভারতের বিএসএফের গাড়িকে টহল দিতে দেখা গেল। ভয়ে একজন আরেকজনকে জাপ্টে ধরে কাঁপছে। বিড়বিড় করে বিপদের দোয়া পড়ছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাহ আনতা সুবহানাকা ইন্নি কোনতু মিনা-জালিমিন। রক্ষীরা ওপার থেকে চারদিকে টর্চ লাইটের আলো মারে। লাইনের লোক অস্ফুটে সবাইকে বলছে, ‘চুপচাপ বসে থাকো।’
নীরব নিস্তব্ধ রাতে একজন আরেকজনের বুকের ধুকপুকানি যেন শুনতে পাচ্ছে। খানিক পর বিএসএফ চলে যায়। একজন এসে বলল, ‘তাড়াতাড়ি আসো আমার সঙ্গে।’
সবাই পেছনে ছুটলো। কাটাতারের দুই পাশে মই লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। সবাই তাড়াতাড়ি করে মই বেয়ে কলকাতার লাইনের লোকদের হাতে চলে যাচ্ছে। রাফসানের আগে একজন মহিলাকে পাছা ঠেলে মই পার করিয়ে দিলো। সবাই ওপারে চলে যাওয়ার পর জঙ্গলে নিয়ে বলল, ‘এখানে চুপচাপ বসো।’ তারপর দেখা গেল একদল ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশেও মই বেয়ে যাচ্ছে। সীমান্ত পার করার পর্ব চুকিয়ে তাদেরকে গহীন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাঁটাতে লাগে। চারপাশ ঘিরে রাখা অন্ধকার। বাতিও জ্বালানো যাচ্ছে না। কেউ আছাড় খেয়ে পড়ছে। কেউ কেউ পেছনে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। লাইনের লোকরা অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে পুনরায় খোঁজে নিচ্ছে। মহিলারা আর কতদূর বলে কান্না জুড়তে গেলেই লাইনের লোক লাত্থি মারার ভঙ্গিতে তেড়ে আসছে। সিমান্ত এরিয়ায় চারদিকে বর্ডার গার্ডের আনাগোনা। তাদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে ঘন্টা কয়েক হাঁটিয়ে নিয়ে গেল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা বনগাঁর কাছাকাছি এক জঙ্গলে। সেখানকার জঙ্গলের ভেতরের একটি অন্ধকার খুপরি ঘরে তাদেরকে রাতে ঘুমোতে দিল। যারা প্রথম এসেছে তাদের ভয়ে বুক ধুকপুক করছে। একজন আরেকজনের সঙ্গে নানান বিষয়ে ফিসফিস করছে। এখানে বেশিরভাগ পুরুষ মানুষ যাচ্ছে কাজের জন্য৷ কেউ যাচ্ছে কলকাতায় আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে। কেউ কেউ ইন্ডিয়া থেকে যাবে অন্য দেশে। আর যুবতীরা বেশিরভাগই দেহ ব্যবসায়ী। খানিক্ষণ যেতেই পুরাতন ছেলেরা মেয়েদের পাশ ঘেঁষতে শুরু করল। অনিচ্ছার ‘ছাড়েন’ শব্দও শোনা যাচ্ছে। খানিক পর আবার ধস্তাধস্তি আর গোঙানির শব্দ।
রাফসান সবকিছু উপেক্ষা করে একপাশে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে গেল।
ভোরে লাইনের লোক এসে টোকন চায়। দিলশাদ তাদের টোকন দিলো। একজন লাইন ম্যান বললো তোমরা পাঁচজন আমার পেছন পেছন আসো। তাদেরকে নিয়ে দিলো কলকাতার দালালের হাতে। দালাল লোকটি লম্বা হালকা-পাতলা। চোখে সাদা ফ্রেমের চশমা। ক্লিন সেভ। সাদা চুল৷ দেখতে প্রাইমারী স্কুলের হেড মাস্টার লাগে। তাদেরকে আলগা নিয়ে এখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে খানিক্ষণ বক্তব্য দিলো। জানালো কথাবার্তা খুব সাবধানে বলতে হবে। বাঙালি বুঝতে পারলেই লোকজন থানায় ফোন দিয়ে ধরিয়ে দেবে। তাছাড়া ইন্ডিয়ার আদার কার্ড পাসপোর্ট বানিয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে যেসব দেশে ভিসা পাওয়া যায় না ইন্ডিয়া থেকে যাওয়া যাবে। ইন্ডিয়া থেকে সকল দেশে যেতে টাকাও অনেক কম লাগে। বাংলাদেশী অসংখ্য মানুষ ইন্ডিয়া থেকে এভাবে যায়। সুতরাং যেতে চাইলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে।
তাদেরকে বনগাঁ থেকে বাসে করে হাওড়া রেলস্টেশনে নিয়ে গেল। এই পুরো রাস্তা রাফসান চোখবুঁজে ঘুমিয়েছে। অন্য চারজনের মধ্যে দু’জন নতুন। তারা এই দিনেদুপুরেও ভয়ে চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে। চারদিকে পুলিশ ঘুরঘুর করছে। দালাল ট্রেনের টিকেট কেটে দিয়ে প্লাটফর্ম দেখিয়ে দিয়ে চলে যায়৷ কিন্তু একটা সমস্যা হয়ে গেল। ভীড়ের কারণে তারা ট্রেন মিস করে ফেললো। চারদিকে পুলিশ হাঁটছে। পরের ট্রেন কখন আসবে তারা জানে না। এই টিকিট দিয়েই যাওয়া যাবে না-কি নতুন করে কাটতে হবে তাও জানে না৷ যদি নতুন টিকেট কাটতে হয় তাহলে মহাবিপদ৷ কারণ তাদের কাছে ইন্ডিয়ান কার্ড নেই৷ দালালকে যে ফোন দিয়ে সাহায্য চাইবে সিমও নেই। এখানকার কার্ড ছাড়া সিম কিনতেও পাওয়া যায় না। দিলশাদ কয়েকজন যাত্রীকে ট্রেনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো। এরা কেবল বলল, ‘কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন মশাই।’
কিন্তু কাউন্টারের পাশে দালাল নিষেধ করেছে যেতে। সেখানে ক্লাবের ছেলেরা নজরদারি করে অবৈধ বাংলাদেশীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।
দিলশাদ তাকিয়ে দেখলো তাদের থেকে খানিকদূরে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। লোকজন টিকিট দেখিয়ে ট্রেন সম্পর্কে জেনে নিচ্ছে। দিলশাদ সাহস করে পুলিশের দিকেই এগিয়ে গেল।
চলবে….
দেশলাই – ৭ম পর্ব
( সতর্কতা: দুইটি পর্বে অতিরিক্ত ১৮+ থাকবে। আপনারা আগেই ভাবুন এখনকার উঠতি বয়সের প্রেম কত লুতুপুতু হয়। তাছাড়া রাফসানের সঙ্গে ইন্তিশার শারীরিক সম্পর্ক। “ইন্তিশা” বাস্তব একটি চরিত্র অবলম্বনে ছদ্মনামে লেখা হচ্ছে। আপনারা অবশ্যই জানেন গল্প/উপন্যাস থেকে বাস্তবে এইসব প্রেমিক-প্রেমিকার ফোনালাপ বেশি অশ্লীল হয়। বাস্তবতা হজম করার ক্ষমতা না থাকলে পর্বগুলো এড়িয়ে যান )
দিলশাদ সাহস করে পুলিশকে ট্রেনের টিকেট দেখিয়ে লোকাল লোকদের মতো বলল, ‘সাব আমরা মুম্বাই দাদরের ট্রেন মিস করেছি। এখন কি করতে হবে?’
পুলিশ তাদের দিকে বিশেষভাবে না তাকিয়েই টিকেটে চোখ বুলিয়ে বলল, ‘ওই প্লাটফর্মে গিয়ে বসে থাকো। ট্রেন এলেই লাইনে দাঁড়াবে।’
শেষ পর্যন্ত তারা ট্রেন পেল। হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে মুম্বাই দাদর যেতে আটচল্লিশ ঘন্টার বেশি লাগে। ট্রেন জার্নির অবস্থাও করুণ। তারা তৃতীয় শ্রেণির ট্রেনে উঠেছে। চারদিকে মানুষে গিজগিজ করছে। যাত্রীরা ঘাদাঘাদি করে বসা৷ শরীর নাড়ানো যাচ্ছে না। প্রস্রাব করতে যেতে হলেও যুদ্ধ করে যেতে হয়। কারণ হাঁটার পথেও যাত্রী বসা, দাঁড়ানো। রাতদিন জেগে থাকতে হচ্ছে। হিজরারাও যন্ত্রণা করছে৷ একেক স্টেশনে একেক দল উঠে। চুল ধরে টানে। গালে হাত দেয়। কোলে বসে যায়। টাকা না দিলে অযথাই কাপড় তুলে গোপনাঙ্গ দেখায়। চানাচুর, বিমল, বাদাম, চা ওয়ালারা সুরে সুরে চেঁচায়।
একদিন যেতেই পেছনে ব্যথা ধরে গেল। বারংবার তাদের মনে হচ্ছে চামড়া বুঝি ছিলে গেল। অথচ ইন্ডিয়ার মানুষদের খুব বেশি বিরক্ত মনে হচ্ছে না। যদিও এই ট্রেনে বেশিরভাগ শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। তাদের এমনিতেই ধৈর্য বেশি। তবে ভারতের সৌন্দর্য রাফসানকে মুগ্ধ করছে। ট্রেনের জানালার বাইরে চোখ রাখলেই আখের বাগান, নারিকেল বাগান, উঁচু পাথরের পাহাড়, সবুজ ঘাসে ঘেরা মাটির পাহাড়, মাঝে মাঝে পাহাড়ের ভেতর দিয়ে ট্রেনের রাস্তা। এতো বড় দেশ যে কোনো রাজ্যে শীত আবার কোনো রাজ্যে গরম। এগুলো উপভোগ করছে। মাঝে মাঝে চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে ইন্তিশার স্মৃতি। তখন জানালার বাইরে পাহাড়ের চূড়ায় তাকালে যেন ইন্তিশার নগ্ন দেহ আবছা ভেসে উঠে। সিনেমার নায়িকাদের মতো পাহাড়ের পর পাহাড়ে নেচে বেড়াচ্ছে সে। ইন্তিশাকে ভীষণ মনে পড়লে তার এমনই হয়, স্পষ্ট চোখের সামনে সবকিছু দেখতে পায়। ওর শরীরের কড়া গন্ধ নাকে আসে। ওই দেহের সমস্ত অলিগলি যে তার নখদর্পনে। দীর্ঘদিন ওর সঙ্গে যে তার মানসিক, শারীরিক সম্পর্ক ছিল। জীবনের প্রথম প্রেম। ওর খুব মধ্যখানে ডুব দিয়ে যে ওই পাড়ায় পেয়েছিল তার স্বর্গসুখের ঠিকানা। চোখ বুঁজলে স্পষ্ট দেখে সেই সুখের দিনগুলি। প্রথম যেদিন ইন্তিশার সঙ্গে সন্ধ্যায় দেখা করে গাড়িতে এসে উঠে। তখনই ইন্তিশা মেসেজ দেয়, ‘তোমার ঠোঁট অনেক অনেক মায়াবী রাফসান। ছাড়তে ইচ্ছা করছিল না৷ কিন্তু কেউ এসে পড়ার ভয়ে তাড়াতাড়ি যেতে দিতে হলো।’
ইন্তিশার প্রতিটি কথা রাফসানের শরীরের সমস্ত লোমকূপ পর্যন্ত নাড়িয়ে তুলে। কোনো মেয়ে এভাবে অকপটে কথা বলতে পারে ধারণাতেই ছিল না৷ তার কাছে যে খারাপ লাগে, তা না। বরং ইন্তিশার প্রতি আগ্রহ আরও হাজারগুন বাড়িয়ে দেয়। এই যে ওর সঙ্গে চুমু, জড়াজড়ি করে বিদায় নিয়ে বাসে এখন আরেকজনের পাশে বসে আছে। তবুও ইন্তিশার মেসেজ আর খানিক আগের উষ্ণতায় তার শরীরের আরেকটি স্বাধীন অঙ্গ নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। স্থানচ্যুত ঘটছে। পুরুষ মানুষ কি অসহায় সেই স্বাধীন অঙ্গটির কাছে। মানুষ যখন কোনো কিছুতে হাত দিতে চাইবে না হাত নিজ থেকে সেদিকে যায় না। মানুষ যদি কথা বলতে না চায়, মুখ থেকে কথা বেরুবে না। মানুষ যদি চায় সে আর হাঁটবে না, পা নিজ থেকে হাঁটতে শুরু করবে না। কিন্তু পুরুষের শরীরে কেবল একটি অঙ্গ নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। সেই অঙ্গ নিজের মতো স্বাধীন। একটি নগ্ন নারী দেহ যদি নিজ থেকে সামনে এসে দাঁড়ায়। পুরুষ নিজের সেই স্বাধীন অঙ্গকে হাত, পা, মুখের মতো আঁটকে রাখতে পারে না। অঙ্গটি নিজেই ফণা তোলা সাপের মতন গর্জে উঠবে। সে স্বাধীন। কাউকে ভয় পায় না। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে নিজের ইচ্ছার জানান দেওয়ার সাহস তার আছে৷ সে বেপরোয়া।
রাফসানও ব্যতিক্রম নয়।
ইন্তিশাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু খেয়ে আসার পর থেকে রাফসান বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। বাজারের চারপাশে মানুষ। তবুও বারংবার ফণা তুলছে স্বাধীন বেপরোয়া অঙ্গটি। সে যেন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। অথচ রাফসানের কাছে বারংবার মনে হচ্ছিল এই মুহূর্তে পৃথিবীর সকল মানুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে। কি লজ্জা! কি লজ্জা! কোনোভাবে হেঁটে এসে বাসে বসে। এখন ইন্তিশার মেসেজটি আবার তাকে উস্কে দিয়েছে।
রাফসান মুচকি হেঁসে রিপ্লাই দেয়, ‘তুমি এতো নরম কেন?’
– ‘কি নরম?’
– ‘তুলতুলে গাল, নরম গরম শরীর।’
– ‘কিন্তু তুমি তো শরীরের কোথাও হাত দাওনি।’
রাফসান আর পারছে না। ইচ্ছে করছে আবার ফিরে যেতে ইন্তিশার কাছে।
– ‘আমি ভেবেছি তুমি হাত দিলে রাগ করবে।’
– ‘একা একা এতো ভাবো কেন বলো তো? প্রথম দিন থেকেই তো আমি বলেছিলাম ন্যাকামো পছন্দ করি না। আমার সবকিছু তো তোমারই।’
রাফসান মোবাইল পাশে রেখে দুই হাত আঁজলা করে মুখ ঘষে, চুল টানে৷ কেমন অস্থিরতা, অশান্তি। মোবাইল হাতে নিয়ে মেসেজ দিলো,
– ‘ইন্তিশা জান, সোনা ময়না পাখি। আমি আর পারছি না বউসোনা। আর পারছি না৷ কবে আর আমাদের দেখা হবে?’
– ‘পরে বলবো। বাসায় যাও, ফ্রেশ হয়ে কল দিয়ো। উম্মাহ বাবু। আমাকেও মায়া দাও।’
– ‘এত্তগুলা উম্মাহ বউটা আমার।’
ইন্তিশা চ্যাট থেকে বিদায় নেয়।
রাফসান নিজেকে শান্ত করতে ইয়ারফোন কানে গুঁজে। চোখবুঁজে গান শুনতে শুনতে রাত দশটার দিকে সিলেট মেসে ফিরে আসে৷ গোসল খাওয়া-দাওয়া শেষে বিছানায় গা হেলিয়ে দিতেই রুমমেট এসে বলল,
– ‘দোস্ত চল মাজারে যাব।’
– ‘কোন মাজারে?’
– ‘শাহজালাল।’
– ‘রাতে আবার কেন যাবি?’
– ‘রাতে হাঁটাহাঁটির একটা মজা আছে না? তুই শালা বের হতেই চাস না। আগের রুমমেট থাকতে রাতে আমরা হেঁটে হেঁটে রেলস্টেশনে গিয়ে চা খেতাম। শীতের রাতে হাঁটতে অন্য রকম মজা আছে৷’
– ‘না রে ভাই আমি যাব না৷ ভাল্লাগছে না।’
সাদ বাজে ঈঙ্গিত করে বলল,
– ‘তোমার ভাল্লাগবে কীভাবে? মাইগোর লগে ফোনে কথা বলে এগুলো করা ছাড়া তোমার কিচ্ছু ভালো লাগবে না।’
– ‘দেখ সাদ, এসব আজেবাজে কথা আমাকে বলবি না। মাইয়াগো লগে কথা বলি মানে কি? আমি প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলি। তোর মতো গ্রামের বন্ধুদের এনে দলবেঁধে পতিতালয়ে যাই না৷’
– ‘রাফসান তুই এই কথাটা আরেকদিনও বলেছিস৷ অযথা এগুলো বললে মেজাজ খারাপ হয়। আমি যাইনি। গ্রামে থাকতে ওদের সাথে একটু চলাফেরা ছিল৷ এখন ওরা পড়ালেখাই করে না। একজন বিদেশ থেকে এসেছে। বাকীরা কেউ দোকান দিয়েছে, কেউ কৃষি জমি করছে। কেউ বেকার। বিদেশি বন্ধুর সাথে ওরা এক সাথে এসেছে। এখানকার লাইনঘাট কেউ ভালো জানে না। শহরে আছি বিধায় আমার কাছে এলো, তাই গলিটা শুধু তাদের দেখিয়ে দিয়ে চলে এসেছি।’
– ‘হ্যাঁ, তুমি পীর আউলিয়া লেভেলের মানুষ। শুধু জায়গা দেখিয়ে চলে এসেছিলে।’
– ‘ধুর বাল৷ এসব আলাপ রাখ তো, এখন যাবে কি-না বল৷ চা-টা খেয়ে আসি।’
– ‘চা-সিগারেট-পান বিল তুই দিবি৷ তাইলে যাব।’
– ‘শালা ফকির৷ চা-পানের বিল আমি দেবো তুই শুধু সিগারেট বিল দিবি৷ চল যাই।’
– ‘না যাবো না, তুই চলে যা।’
– ‘আচ্ছা আয়৷ আমিই দেবো।’
রাফসানের যেতে ইচ্ছে করছিল না। ইন্তিশাকে ফোন দিতে চাচ্ছিল৷ তবুও সাদের জন্য আসতে হলো। বাইরে শীত পড়েছে। চারদিকে টমটমে আবছা বাতির আলো জ্বলছে। মাজার গলির ভ্রাম্যমান চাওয়ালাকে সাদ বলল,
– ‘বাতের ভাই দু’কাপ চা দাও।’
গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ে চুমুক দেয় তারা। চা পর্ব শেষে পান সিগারেট নিয়ে সাদ বলল,
– ‘মামা কাল দেবো টাকা।’
– ‘ভাই আগের টাকাটাও রইছে।’
– ‘আরে ভাই তুমি এতো কথা বলো কেন? সব এক সাথেই দিয়ে দেবো।’
বাতের আর কিছু বললো না৷ তারা সিগারেট টেনে হাঁটছে।
– ‘তুই শালা ছ্যাচড়া। বাকী খাস কেন?’
– ‘আরে এক সাথেই দিয়ে দেবো। আর তোর এতো দরদ থাকলে তুই দিয়ে দে। পরে ব্যাক দেবো৷ ব্যস।’
– ‘হায় হায়। আমারে ভোদাই মনে হয় তোর?’
দু’জন মাজারের আশেপাশে খানিক্ষণ হাঁটার পর রাফসান বলল, ‘মামা চল বাসায় যাই।’
– ‘হুর বাল, মেসে কি বউ রেখে আসিস? যাওয়ার জন্য পাগল কেন বলতো? চল মাজারের পেছনের গেইট দিয়ে বাইর হয়ে চৌহাট্টার দিকে ফিরে যাবো ‘
না পারতে রাফসান রাজি হয়। সাদের রাতে হাঁটাহাটির অভ্যাস আছে সে জানে।
মেসে ফিরতে ফিরতে তাদের বারোটা বেজে গেল। রাফসান চাদর মুড়িয়ে ছাদের চিলেকোঠায় মোবাইল আর কয়েল নিয়ে চলে যায়। কয়েল জ্বালিয়ে ইটে বসে ফোন দেয় ইন্তিশাকে। ওপাশ থেকে মিষ্টি কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল, ‘হ্যালো, কি করছো?’
– ‘উফ, মনে হচ্ছে আমার পাশে শুয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে কথা বলছো আর তোমার উষ্ণ শ্বাস যেন আমার কানে আঁচড়ে পড়ছে৷’
– ‘আমি কম্বলের নিচে মোবাইল নিয়ে ফিসফিস করে কথা বলি তো, তাই এমন লাগে।’
– ‘ভাল্লাগে আমার।’
– ‘কিন্তু বালিশের পাশে থাকলে তো কানের কাছে শুধু ফিসফিস করবো না।’
– ‘কি করবে?’
– ‘বলবো না। তুমি বলো পাশে থাকলে কী করবে?’
– ‘কিছু না, ঘুমিয়ে যাব।’
– ‘এই বলবে না? তাইলে ফোন রাখছি।’
রাফসান বলতে শুরু করলো কাছে পেলে কি কি করবে। রসালাপ চলছেই তো চলছে। দু’জন উত্তেজনার চরম পর্যায়ে।
ইন্তিশা সবকিছু শুনে আবেগী সুরে বলল, – ‘ইশ, তোমার এগুলোর অনেক শখ তাই না? তোমার এখন একটা বউ থাকার দরকার। কিন্তু চাইলেই তো বিয়ে করতে পারবে না, মাত্র ইন্টারে পড়ো।’
– ‘আমি তো তোমাকেই বিয়ে করবো।’
– ‘কিন্তু সেই বিয়ে আর আমাকে কাছে পাওয়ার তো অনেক দেরি। তুমি তো পারবে না থাকতে। আমারও ভালো লাগবে না তুমি দূর থেকে এভাবে কষ্ট পাও।’
– ‘কি আর করার ইন্তিশা।’
ইন্তিশা ফিক করে হেঁসে বলল,
– ‘একটা কিছু তো করতেই হবে। বিয়ে হচ্ছে না বলে আমার বরটা আমাকে ছাড়া কতভাবে চাহিদা মেটাবে৷ তা তো হতে দিতে পারি না।’
– ‘এই আমি কীভাবে শখ মেটাবো?’
– ‘ছেলেদের এগুলো আমি জানি স্যার। তাই চাই না আমি থাকতে তুমি মাস্টারবেশন করো।’
রাফসান হাসতে হাসতে বলল,
– ‘তুমি এতোকিছু জানো?’
ফিক করে হেঁসে বলল,
– ‘আরও জানি। ছেলেদের স্বপ্নদোষও হয়। আচ্ছা তোমার কি এগুলো হয়?’
– ‘কিছুদিন পর পরই হয়। আচ্ছা তোমাদের..।’
‘এই থামো থামো’ ইন্তিশা থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘আমাকে জিজ্ঞেস করবে না ওগুলো।’
– ‘কোনগুলো?’
– ‘চুপ দুষ্টু। আগে বলো স্বপ্নে কি দেখো তোমরা। তারপর কি হয়?’
– ‘কতকিছু দেখি। ওইদিন দেখলাম তোমার সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা বাসর ঘরে আছি। এগুলো দেখতে দেখতে হয়ে গেল।’
– ‘হা-হা-হা সত্যিই এগুলো দেখছো? ইশ, তোমার ওগুলোর অনেক শখ মনে হচ্ছে৷ কিন্তু বিয়ে তো অনেক দেরিতে হবে।’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘তুমি এইসব শখ কতভাবে মেটাবে। ভাবতেই আমার হিংসা হচ্ছে।’
– ‘আমাদের আর কবে দেখা হবে তা তো বললে না?’
– ‘আমার তো এখনই কাছে পেতে ইচ্ছে করছে রাফসান। উড়ে চলে আসো প্লিজ।’
– ‘মজা করো না তো। বলো না কোনদিন আসবো।’
– ‘মজা করছি না। সত্যিই ইচ্ছা করছে।’
– ‘আমারও ভীষণ ইচ্ছে করছে।’
– ‘তুমি সত্যিই যদি এখন আসতে পারতে আমি আলগোছে দরজা খুলে ভেতরে নিয়ে নিতাম।’
– ‘তোমার পাশে কেউ থাকে না। তুমি কি একা?’
– ‘আমার ছোট বোন আছে৷ ও মরার মতো ঘুমায়। রুমের বাতি বন্ধ থাকলে আর আমরা কথা না বললে কেউ বুঝবেই না।’
– ‘ওয়াও, এটা সম্ভব?’
– ‘তোমার জন্য তো সম্ভব করতেই হবে। সবেমাত্র ইন্টারে পড়ো। তবুও বুঝা যাচ্ছে তোমার অনেক ইচ্ছা আমাকে কাছে পাওয়ার। এদিকে আমাদের বিয়ে হতে কত বছর যাবে ঠিক নাই। তুমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে কতকিছু করবে। শুধু কি মাস্টারবেশন। পতিতায় যদি চলে যাও? এর থেকে বাবা আমার কাছেই আসো। বিয়ে তো একদিন হবেই। তুমি কাল রাতে চলে আসবে নীলগঞ্জ বাজারে। হাঁটাহাঁটি করে সময় কাটাবে। আমাদের তো মেসেজে যোগাযোগ হবেই। যখন সবাই ঘুমিয়ে যাবে আমি বলবো আসতে। তুমি চুপচাপ আমাদের বাড়ির বাম দিকে এসে আম গাছের নিচে দাঁড়াবে। তারপর আমি বের হয়ে তোমাকে রুমে নিয়ে আসবো।’
রাফসানের চোখটা পানিতে ভরে গেল। ধরে আসা গলায় বলল,
– ‘শিওর? তুমি আমার জন্য এতো ভাবো ইন্তিশা? তুমি এতো ভালো কেন বলো তো? একটা মেয়ে এতো ভালো হবে কেন?’
– ‘এতো ইমোশনাল হইও না তো রাফসান। তোমার জন্য আমি ভাববো না তো কে ভাববে? আমি থাকতে তোমার স্বপ্নদোষ হোক চাই না৷ তুমি না পারতে মাস্টারবেশন করো আমি চাই না। যাইহোক, আসার সময় মনে করে নিয়ে আসবে।’
– ‘কি নিয়ে আসবো?’
– ‘বুঝো না? বিয়ের আগে বাচ্চা না হওয়ার জন্য কি লাগে?’
রাফসান খানিক হেঁসে বলল,
– ‘আচ্ছা আনবো। কিন্তু ফার্মেসিতে গেলেই তো লজ্জা করবে।’
– ‘তুমি শহর থেকেই কিনবে। সুতরাং এগুলো কেউ খেয়ালই করবে না।’
– ‘আচ্ছা। কিন্তু আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। তাছাড়া তুমি এগুলো শিখলে কীভাবে?’
– ‘সুলতানা সহ সবার বিএফের সঙ্গে তাদের যা যা হয় সব কাহিনী শুনে শুনে আমি শিখছি৷ আর ভার্সিটির বান্ধবীরা তো আছেই।’
– ‘বাব্বাহ, ভালো।’
– ‘আচ্ছা রাখি এখন উম্মাহ। কাল তুমি আসছো ঠিকাছে?’
– ‘হ্যাঁ।’
ওপাশ থেকে কল কেটে যায়। রাফসান চিলেকোঠা থেকে নিচে নামে।
চলবে….