#গল্পঃ দোটানা,পর্বঃ১০,১১
#গল্পকারঃআরোহী_নুর
#পর্বঃ১০
(পরদিন সকালে,,,,আজ শুক্রবার অফিস বন্ধ,,,,তাই সবাই আজ বাড়িতে,,,,আজকে জুতো ক্লিনিং কর্মকর্তা আসে নি তাই নিধী সবার জুতো ক্লিন করছে গার্ডেনে বসে,,,,যদিও ঘরের বাকিরা ওকে তা করতে মানা করেছে কিন্তু নিধী তো আর নিজের দায়িত্ব থেকে পিছু হটবে না,,,,হঠাৎ তা নিহানের নজরে পরলে নিহান রাগে তেড়ে আসলো ওর কাছে,,,,)
নিহানঃএই তুমি এসব কি শুরু করেছো,,,,??তুমি ভালো করেই জানো তোমার হাতটা কেটে আছে তবে কেনো এসব কাজ করছো,,,,আজ তো তুমি রেস্টও করতে পারো তা না করে সোজা জুতো ক্লিনিং এ লেগে আছো,,,,দেখো নিধী এসব কাজ তুমি না করলে আমার পরিবার তোমাকে কিছুই বলবে না তবে কেনো তুমি নিজের ক্ষতি করে এসব করছো??
নিধীঃদেখেন মি.নিহান,,,,কারো কথায় আমি আমার দায়িত্ব থেকে পিছু হটতে পারি না,,,,এগুলা আমার কাজ আর আমি করবোই,,,,আপনি প্লিজ যান এখান থেকে,,,,আমায় আমার কাজ করতে দিন,,,
নিহানঃঠিক আছে তুমি উঠবে না তো,,,,তবে আমিও তোমার সাথে বসে জুতো ক্লিন করবো,,,,(এটা বলে নিহানও বসে পরে নিধীর পাশে হাতে একটা জুতো নিয়ে ক্লিন করতে শুরু করলে)
নিধীঃআরে এটা কি করছেন আপনি,,,,এটা আপনার কাজ না,,,,আপনি পারবেনও না,,,,প্লিজ আপনি যান এখান থেকে,,,,
নিহানঃআমি যাবো না,,,,তুমি কাজ করলে আমিও করবো,,,,
নিধীঃআপনি যদি এখন এখান থেকে না যান তবে আমি নিজের হাতে ব্যান্ডেজ খুলে জুতোগুলো ক্লিন করতে শুরু করবো আর আপনি আমায় আটকাতেও পারবেন না এটা আপনি ভালো করেই যানেন,,,,
নিহানঃনিধী তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো,,,,
নিধীঃআপনি যাবেন না আমি হাজের বেন্ডেজ টা খুলবো,,,,(বলে নিধী হাতের ব্যান্ডেজ খুলতে শুরু করবে,,,)
নিহানঃখুলো না বলে দিলাম,,,,চলে যাচ্ছি আমি,,,,তবে মনে রাখো নিধী তোমার কষ্টের দিন শেষ আমিই করবো,,,,(এটা বলে রাগে নিহান সেখান থেকে চলে গেলো,,,,তারপর বাড়ি থেকেই বেড়িয়ে গেলো এখানে থাকলে নিধীর কষ্ট সহ্য করতে পারবে না বলে,,,,এদিকে এসব কিছু নিরব ওর রুমের বারন্দায় দাঁড়িয়ে থেকে দেখছিলো,,,,)
নিরবঃআমার সাথে কথা বলতে চায় না,,,,বন্ধুত্বও করতে চায় না,,,,আর নিহানের সাথে তো ঠিকই কথা বলে,,,,আমাকে এটিটিউড দেখানো না,,,,আজ বার করবো তোমার তেজ,,,,(এটা বলে নিরব নিজের সবগুলো জুতোতে কি না কি ফেলে এমনভাবে নোংরা করেছে যে ওগুলা ভালো হাতে ক্লিন করতে গেলেও হাতের ছাল উঠে যাবে আর নিধীর তো হাত প্রথম থেকে ক্ষত করা,,,,, নিরব জেদের বশে সে জুতোগুলো এনে নিধীর সামনে ছুঁড়ে দিলো,,,)
নিরবঃএগুলা এক ঘন্টার মধ্যে ক্লিন চাই,,,,(এটা বলে চলে গেলো নিরব,,,,নিধী ভালোয় বুজতে পারলো জুতোগুলো দেখে যে নিরব ইচ্ছে করেই এসব করেছে কিন্তু কিছুই বললো না বরং যে ভাবেই পারে জুতোগুলো ক্লিন করে নিয়ে গেলো ওর রুমে,,,,)
নিধীঃস্যার আপনার জুতো,,,,,
নিরবঃরেখে চলে যাও,,,,,(নিরব তখন লেপটপে কিছু কাজ করছিলো,,,,, নিধীকে একথা বলে ওর দিকে তাকালো,,,,দেখতে পেলো নিধী জুতোগুলো ঠিকই ক্লিন করে দিয়েছে কিন্তু নিজের হাতের অবস্থা রাখে নি,,,,হাতের ক্ষত বেয়ে রক্ত ঝরছে বাকি যতটুকু হাতটা ভালো ছিলো সে জায়গাগুলোরও অনেকটা ছাল উঠে গেছে,,,,নিধীর হাতের অবস্থা দেখে ভিতরটা আবার খচখচ করতে শুরু করেছে নিরবের,,,,,নিধী জুতোগুলো রেখে স্বাভাবিক ভাবে চলে যাচ্ছিলো,,,,)
নিরবঃনিধী তোমার হাতে অবস্থা তো খুবই খারাপ দাঁড়াও আমি ফাস্টএইড বক্স টা আনি,,,,,
নিধীঃআপনি তো এটাই চাইছিলেন স্যার,,,,,তবে এখন আর আলাদা অভিনয় করছেন কেনো,,,,আমি ঠিক আছি,,,,নিজেকে ঠিকই সামলে নিবো,,,,(এটা বলে চলে গেলো নিধী,,,,কিন্তু নিরবের মনের খচ খচ কমলো না,,,,,রাগে দেয়ালে সজোরে একটা ঘুষি মারলো,,,,তারপর বেডে বসে গেলো,,,,মনের কোনে ব্যাথা হচ্ছে ওর বুঝতে পারছে না তার মানে,,,,,একটু পরে নিরব ফাস্টএইড বক্স টা নিয়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে,,,,,এদিকে নিহান তারাতাড়ি বাড়িতে এসে যায় যেহেতু ও কিছুসময় নিধীকে না দেখে থাকতে পারে না,,,,এসে যখন নিধীর হাতের অবস্থা দেখলো একদম পাগলপ্রায় হয়ে পড়লো,,,,ঘরের বাকিরা নিধীর হাতটা ব্যান্ডেজ করতে চাইলে নিধী করালো না কারন কাজ করলে তো আবারও তাই হবে তবে তাই থাক ওর ভাষ্যমতে,,,,তারপর নিহান এসে যখন তা দেখলো তখন জোর করেই নিধীকে বসালো আর ওর হাতটা ব্যান্ডেজ করতে শুরু করলো,,,,নিধী না চাইলেও অনেক জোর করে বসালো,,,)
নিহানঃকি তুমি বলো এরকম কেনো হয়ে গেলো,,,,বলো না নিধী,,,,কত হাসিখুশি নিধী ছিলে তুমি,,,,একটু ব্যাথা পেলে কতো কান্না করতে আর এখন যেনো কষ্টের সাথে সম্পর্ক ঘড়ে তুলেছো,,,,নিধী এখন তো তোমার জীবনে সব ঠিকই আছে,,,এখন কি পারো না আগের মতো হয়ে যেতে,,,,পারো না আমায় একসেপ্ট করে নিতে,,,,আমরা সুন্দর করে জীবনটা শুরু করতাম,,,,সারাজীবন সুখে থাকতাম,,,(ব্যান্ডেজ করতে করতে কথাগুলো বললো নিহান)
নিধীঃআপনি যদি এসব বলতে থাকেন তবে আমি আর আমার হাতটা ব্যান্ডেজ করাবো না,,,,উঠে চলে যাবো
নিহানঃআচ্ছা ঠিক আছে আর বলছি না এবার হাতটা ব্যান্ডেজ করতে দাও,,,,,
(এদিকে এই সিনটা ফাস্টএইড বক্স হাতে নিয়ে এসে দেখে নেয় নিরব,,,,ওর মনে আবার খারাপ লাগা কাজ করতে শুরু করেছে,,,,নিহান নিধীর হাত ধরে ধরে ব্যান্ডেজ করছে তা মানতে পারছে না নিরব,,,,একটু সময় ওদের দিকে তাকিয়ে রাগে চলে গেলো রুমে,,,,হাতে একটা ফুলদানি নিয়ে ছুঁড়ে মারলো দেয়ালে,,,,ফুলদানির কোথাও লেগে ওর হাতটাও খনিক কেটে যায়,,,,কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ওর,,,,তখন ওর চোখের সামনে নিহান আর নিধীর সেই ক্ষনের ছবি ভাসছিলো আর এতে ওর ভিতরটা মোচঁড় দিয়ে দিয়ে উঠছিলো,,,,তারপর সারাদিন নিহান নিধীর পিছন পিছন থাকলো,,,কারন নিধী কাজ করা থেকে বিরত থাকছে না,,,নিহান ওকে কয়েকবার না করলেও ও তো আর কথা শুনবে না,,,,তাই নিজেও ওর সাথে ওর কাজ করতে শুরু করেছে ও মানা করলেও করছে,,,,এটা ওটা বলে ওর সাথে মসকরা করছে ওকে হাসানোর চেষ্টা করছে,,,,নিধী কোনো রিয়াক্ট করছে না,,,,কিন্তু এদের এই সিনগুলো ক্যামেরা বন্ধি হচ্ছে অন্য কারো চোখে যে আর কেউ নয় নিরব,,,,সারাদিন ধরে ওদের দিকেই তাকিয়ে তাকিয়ে ওদের দেখছে আর জ্বলছে,,,,,হঠাৎ নিধী কিছুতে হোচট খেয়ে পড়ে যাবে তখনি নিহান ওকে ধরে ফেলে,,,,সাথে সাথে নিধী নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়,,,,কিন্তু ওদের এভাবে এই সিনটা দেখার পরতো নিরব আর সহ্যই করতে পারলো না,,,,সজোরে সেই কেটে থাকা হাত দিয়ে ঘুষি মারলো দেয়ালে আবার,,,,আর নিচে নেমে ওদের সামনে দিয়েই হন হন করে কোথাও বেড়িয়ে গেলো,,,,,পাবে চলে গেলো ডিরেক্ট,,,,মনে অনেক কষ্ট হচ্ছে ওর,,,,,আজকে ড্রিংক্স এর নেশা ওকে টেনে আনে নি এনেছে মনের ব্যাথা,,,,,একের পর এক ড্রিংক করে যাচ্ছে,,,,,অনেক রাত হয়ে গেছে,,,,রোজকার মতো অনেক মেয়ে ওর পাশে আসার চেষ্টা করছে,,,,কিন্তু আজ যেনো কারো দিকেই তাকাতে ইচ্ছে হচ্ছে না ওর,,,,চোখের সামনে শুধু নিধীর চেহারা ভাসছে,,,,,নেশার ঘোরেও আজ অন্য মেয়ের দিকে তাকাতে পারছে না,,,,আজ যেনো ওর মাথায় নিধীর নেশা চলছে,,,,কিন্তু সেই নেশা নিধীর শরীর পাবার নয় ওর মন পাবার,,,,হঠাৎ একটা মেয়ে ওকে হাত ধরে টেনে নিলো ডান্স করতে,,,,ও দাঁড়িয়ে রয়েছে,,,,,মেয়েটা ওর গায়ে পরছে,,,,ওকে জড়িয়ে ধরে ডান্স করছে,,,,তারপর মেয়েটা ওর ঘাঁড়ে গলায় চুমু খেতে শুরু করে,,,,নিরবের তখন যেনো তা সহ্য হচ্ছিলো না বার বার নিধীর ছবি চোখে ফুঁটে উঠছিলো,,,,অবশেষে রাগে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় মেয়েটিকে,,,,আর তারপর বেড়িয়ে আসে ওখান থেকে,,,রাত প্রায় ১২ টা,,,,এদিকে নিধী আজ আবারও বারান্দার সিঁড়িতে বসে চাঁদ দেখছে,,,,তখন আবার নিরব সেভাবে আকাবাকা কার চালিয়ে বাড়ি আসে,,,,নিধী আজও ভালোয় বুঝতে পারছে ও ড্রিংক করে এসেছে,,,,তাই বসা থেকে উঠে চলে যাবে তখনি নিরব গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে নেশার ঘোরেই একপ্রকার ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো নিধীকে,,,,)
নিধীঃ(নিরবকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে,,,,)কি করছেন আপনি এসব,,,,ছাড়েন আমায়,,,,,
নিরবঃছাড়বোনা আমি তোমাকে,,,,কেনো নিধী কেনো আমাকে এতো ঘৃণা করো,,,,আমার সাথে কি ভালো ব্যাবহার করা যায় না,,,,আমি কি এতোই জগন্য,,,,,বলো না নিধী,,,,
(নিধী বুঝতে পারছে নিরব অনেক নেশার ঘোরে,,,,তাই ওকে স্বাভাবিক করে ওর রুমে নিয়ে যাবার চেষ্টা করলো,,,,আশেপাশে যে অন্য কেউ নেই তাই ওকেই নিরবকে নিয়ে যেতে হবে,,,,নিধী নিরবকে নিজে থেকে ছাড়ালো অনেক কষ্টে,,,, ছাড়ছেই না,,,,তারপর ওকে রুমের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করলো,,,,নিরব তখন একটা কথাই বিড়বিড় করছে নিধী তুমি আমাকে ঘৃণা করো না,,,,তারপর নিধী ওকে ওর রুমে নিয়ে বেডে শুইয়ে চলে আসবে তখনি নিরব ওর হাত ধরে নেয়,,,,নিধী আশ্চর্য হয় নিরবের এমন করায়,,,,ও নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে শুরু করে,,,,,)
নিরবঃনিধী তুমি প্লিজ আমার পাশে থাকো না প্লিজ,,,,আমার সাথে কথা বলো,,,,বন্ধুত্ব করো আমার সাথে,,,,,জানো সবাই বলে আমি সার্থপর,,,,আমি জানি তেমন কেউ আমাকে পছন্দও করে না,,,,কিন্তু আমার কখনো এতে কেনো যায় আসতো না,,,,তবে তুমি যখন থেকে বলেছো আমি শুধুই ঘৃণার পাত্র তখন থেকে কেনো যেনো জিনিসটা মেনে নিতে পারছি না,,,,আমি যে তোমার চোখে নিজের জন্য ঘৃনা সইতে পারছি না নিধী,,,,প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না,,,,,
নিধীঃ(নিধী বুঝতে পারছে না নিরবের এসব কথার কি মানে,,,,নেশার ঘোরে তো মানুষ সত্যটাই বলে কিন্তু নিরবের এমন কথা বলার কারনটা নিধী জানতে চায় না,,,,কারন নিধী এসব কথার গভীরে কখনো যেতে চায় না,,,,,নিধী যে এখন কাউকেই বিশ্বাস করে না বা নিজের জীবনে জড়াতে চায় না,,,,,নিধী স্বাভাবিকভাবেই নিরবের হাত ওর হাত থেকে ছাড়ালো,,,,নিরব বিড়বিড় করে শুধু নিধী নিধী ঝপছে,,,,,নিধী খেয়াল করলো ওর হাতটা খনিক কেটে আছে হাতের রক্তগুলো শুকিয়ে গেছে,,,,বুঝাই যাচ্ছে অনেক আগের কাটা,,,,তারপর নিধী ওর হাতে ব্যান্ডেজ করে পায়ের শো খুলে ওর গায়ে চাঁদর দিয়ে চলে যায় রুমের লাইট অফ করে,,,,,পরদিন খুব ভোরে,,,,,প্রায় সকাল ৫ টা হবে,,,,,নিধী নামায পরে ঘুমোয় নি,,,,,আজকে শরীরটা কেমন খারাপ লাগছে ওর,,,,,গায়ে জ্বর চলে এসেছে সকাল থেকে,,,,এদিকে হঠাৎ নিধী খেয়াল করলো মায়ের একটা ওষুধ নেই যেটা একটু পরেই দিতে হবে,,,,)
নিধীঃএ কি করলাম আমি,,,,,মায়ের এই ওষুধটা নেই আর আমি তা আগে খেয়াল করি নি,,,,,ওষুধটা সময়মতো না দিলে যে মায়ের শরীর খারাপ করবে,,,,না না আমাকে এক্ষুনি ওষুধটা আনতে হবে,,,,কিন্তু এতো সকালে কার দোকান খোলা পাবো,,,,হ্যাঁ রহিম চাচাতো উনার ওষুধের দোকানেই ঘুমান,,,,উনার দোকানে গিয়ে উনাকে ঢেকে ওষুধ নিয়ে আসতে পারবো,,,,হ্যাঁ তাই করি,,,,,(এটা বলে বেড়িয়ে যায় নিধী,,,,তখন এতোটা সকাল যে আশেপাশের পশুপাখিগুলোও তখন যেনো ঘুমে,,,,রাস্তাটা পুরো ফাঁকা,,,,,এদিকে নিরবের ঘুম ভেঙে যায় খুব ভোরে,,,,নিধী বলে চমকে উঠে ঘুম থেকে,,,,নিধীকে নিয়ে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছে,,,,তারপর উঠে গিয়ে কালকে রাত্রের কথা মনে করার চেষ্টা করতে থাকলো,,,,কিছুই মনে পরছে না ওর,,,,হঠাৎ হাতের ব্যান্ডেজের দিকে তাকালে কেনো যেনো ওর মনের কোনে প্রশান্তি উকি দিলো,,,,ওর যেনো মনে হলো বেন্ডেজটা নিধীই করে দিয়েছে ওকে,,,,,তারপর কি মনে করে নিধীকে খুঁজতে বেরুলো রুম থেকে,,,,,এদিকে নিহানেরও নামায পরে ঘুম লাগে নি তাই নিহানও নিধীকে খুঁজে আসছিলো ওর সাথে গল্প করার আশায়,,,,কিন্তু দুজনেই খুঁজে পেলো না নিধীকে,,,,ফোন করলে ফোনটা বাড়িতেই পেলো ওরা হয়তো নিধী ভুল করে রেখে গেছে,,,,,পরিবারের সবাই তো এখনও ঘুমে,,,,তাই ওরা গার্ডকে জিজ্ঞেস করলে গার্ড বললো ও নিধীকে বাইরের দিকে যেতে দেখেছে,,,,,এটা শুনে দুই ভাইয়েরই চিন্তা বাঁধলো,,,,এতো সকালে নিধীর এভাবে একা যাওয়া ঠিক হয় নি,,,,,রাস্তাঘাটে এখন কোনো মানুষ থাকবে না আর ওদের বাড়ির এরিয়াটাই কেমন নিজুম টাইপের যেকোনোসময় যেকোনোকিছু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি,,,,, তারপর নিহান ওর গাড়ির কাছে গেলে নিরব বললো)
নিরবঃআমার সাথেই চল একসাথেই খোঁজবো ওকে,,,,,
(তারপর দুজন একমত হয়ে বেড়িয়ে পরে,,,,,নিধী মায়ের ওষুধ আনতে যাচ্ছিলো তখনি জঙ্গলের পাশের রাস্তায় চারটে বখাটে বসে ছিলো,,,,,আশেপাশে মদের বোতল ফেলা দেখেই বোঝা যাচ্ছে সরারাত মদ্য পান করে এরা এখানে পড়ে ছিলো এখনই জেগেছে আর নিধীকে দেখে কেমন হিংস্র চাহনিতে তাকাচ্ছে ওর দিকে,,,,নিধী ওদের চাহনি উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে চাইলে ছেলেগুলো ওর দিকে আগাতে শুরু করে,,,,,নিধীর হাতটা কাটা,,,,শরীরটাও খারাপ,,,,,তাছাড়া তাড়াহুড়ায় সাথে পেপার স্প্রে বা ছুঁড়ি কিছুই আনে নি,,,,তাই আর রাস্তা না পেয়ে নিজের ইজ্জত বাঁচাতে পালাতে শুরু করে,,,,ছেলেগুলোও ওর পিছনে দৌঁড়াতে শুরু করে,,,,,রাস্তায় দৌঁড়ালে নিধী ওদের চোখের সামনে থাকবে তাই জঙ্গলের রাস্তায় নেমে আসে নিধী যাতে কোথায় লুকিয়ে যেতে পারে,,,,,ভাগ্যবশত তখনি নিহান নিরব এসে পড়ে সেখানে,,,,নিধী বাড়ি থেকে তখন বেশি দূর না আসায় ওরা সহজেই নিধীকে পেয়ে যায়,,,,ওরা দেখতে পায় নিধী সামনে দৌঁড়াচ্ছে আর পিছনে কিছু বখাটে,,,,তখনি ওরাও গাড়ি থামিয়ে নেমে পরে,,,,,নিধী জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে দৌঁড়াচ্ছে হঠাৎই হোচট খেয়ে পড়ে যায় নিধী,,,,,উঠতে যাবে এর আগেই বখাটেরা এসে যায় সেখানে,,,,,এগিয়ে আসতে থাকে নিধীর পানে আস্তে আস্তে,,,,নিধী তাও উঠে দৌঁড়াতে চাইলে ওর ওড়না ধরে নেয় একটা বখাটে,,,,ওড়নাটা টেনে নিবে এর আগেই একটা বলিষ্ঠ হাতে ঘুষি পরে সেই বখাটের মুখের উপর যাতে সে ছিটকে কিছুটা দূরে সরে যায়,,,,নিধী তাকিয়ে দেখতে পায় নিরব,,,,পাশে আরও ঘুষির শব্দে তাকিয়ে দেখে নিহান,,,,ও দুজনকেই দেখে শকড,,,,,দুজনই ওই বখাটেদের মারতে শুরু করছে তুমুলভাবে,,,, দুজনের মুখে একটা কথাই তোদের সাহস কি করে হলো নিধীর গায়ে হাত দেওয়ার,,,,,দুজনের চোখেই রাগে আগুন জ্বলছে তা বেশ বুঝতে পারছে নিধী,,,,,মারামারি চলছে তখনি একটা বখাটে পকেট থেকে ছুরি বার করে নিরবের দিকে তেড়ে আসছে,,,,নিরব তা খেয়াল করছে না,,,,,নিধী তা দেখতে পেয়েছে,,,,নিধী বার বার নিরবকে ডেকে বলছে কিন্তু নিরব তো মারামারিতে ব্যাস্ত,,,,,অবশেষে নিরবকে বাঁচাতে ছুটে যায় নিধী
নিধী,,,,,নিরবকে ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে পারলেও তখন সেই বখাটের হাতে ছুরির ঘাত নিধীকেই খেতে হয়,,,,ছুরিটা নিধীর পেটে ঢুকানোর পর বখাটেরা ভয়ে পালিয়ে যায় আর নিহান নিরব দুজনেই হতভম্ব হয়ে পড়ে,,,,দুজনেই মাটিতে পড়ন্ত নিধীকে ধরে নেয়,,,,,,দুজনই নিধীর জন্য পাগলপ্রায় হয়ে আছে,,,,,নিধী সাথে সাথে জ্ঞান হাড়িয়েছে,,,,,)
নিরবঃনিধী,,,,,, নিধী তোমার কিছুই হবে না নিধী আমি তোমাকে কিছুই হতে দেবো না,,,,,
নিহানঃভাইয়া ওকে জলদি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে,,,,ওর কিছুই হতে দেবো না আমি,,,,,,
(তারপর দুজনেই ওকে নিয়ে যায় হাসপাতালে,,,,, ডাক্তার নিধীর চিকিৎসা করছেন,,,,দুই ভাইয়েরই খারাপ অবস্থা,,,,নিহান সে কভে থেকেই চোখের পানি ফেলছে,,,,,নিরবেরও চোখ দিয়ে পানি গড়াচ্ছে নিজের অজান্তেই)
চলবে,,,,,,,,,
#দোটানা
গল্পকারঃআরোহী নুর
পর্বঃ১১
(দুই ভাই বসে আছে হাসপাতালের বেঞ্চে,,,,, বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে ডাক্তার বেড়িয়ে আসেন কি না,,,,হঠাৎ একজন নার্স বেড়িয়ে এলেন,,,,দুই ভাই অস্থির হয়ে নার্সের পাশে গেলো,,,,)
নিরবঃনার্স নিধীর কি অবস্থা,,,,,
নিহানঃনিধী ভালো হয়ে যাবে তো,,,,??
নার্সঃএখনই কিছু বলা যাচ্ছে না আপনারা আল্লাহকে ডাকুন,,,,,(এটা বলে নার্স চলে গেলো,,,,কথাটা শুনে দুই ভাইয়ের চোখের জল আরও বেড়ে গেলো,,,,নিহান চলে গেলো ওযু করতে,,,,ওযু করে হাসপাতালের নামাযের রুমে গিয়ে নফল নামায পড়তে শুরু করলো,,,, নিধীর ভালো হয়ে যাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে শুরু করলো,,,,)
নিরবঃ(আল্লাহ এ জীবনে অনেক পাপ করেছি,,,,কিন্তু সব পাপাচার থেকে দূরে সরে এসেছি শুধুই নিধীর জন্য,,,,ও যে আমার নিশ্বাসের সাথে মিশে আছে খোদা,,,,দয়া করে ওকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না,,,,ওর কিছু হয়ে গেলে যে আমি বাঁচবো না,,,,ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও মালিক,,,,,),,,,,,(কাঁদতে কাঁদতে দোয়া শেষ করলো নিহান,,,, তারপর দোয়া শেষ করে নিহান উঠে পিছনে তাকাতেই শকড,,,,ও নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না,,,,,নিরবও নামায পড়ছে,,,,চোখ বেয়ে যে তারও জল ঝরছে তা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে নিহান,,,,ব্যাপারটা নিহানের হজম হচ্ছে না,,,,নিরব নামায পড়ছে আর কান্নাও,,,,যেগুলো শেষ কখন নিহান নিরবকে করতে দেখেছে তা ওর মনে নেই,,,,,নিরব তো এক ধরনের নাস্তিক,,,,ধর্মে থাকলেও ধর্মীও কোনো কাজ ওকে কখনো করতে দেখে নি নিহান,,,,তবে আজ তা কি করে সম্ভব হলো,,,,,, নিহান আর বেশি সময় ভাবলো না এসব নিয়ে ওর তো আবার নিধীর টানও রয়েছে তাই আর সেখানে না দাঁড়িয়ে চলে এলো বাইরে এদিকে নিরব নামায শেষ করে মোনাজাত ধরলো,,,,,)
নিরবঃ(হো খোদা জানিনা শেষ কবে হাত তুলেছিলাম,,,,তুললেও কখনো আপনার কাছে কিছু চাই নি,,,,ধর্মে থাকলেও কখনো ধর্মীও কোনো রিতী পালন করি নি,,,,ধর্মের প্রতি আস্তা থাকলেও নাস্তিকের কাজ করে চলেছিলাম এতোদিন,,,,তাই হয়তো আমার দোয়া কবুল হবে না আপনার দরবারে,,,,,কিন্তু আপনি তো মহান খোদা,,,,শুনেছি গোনাহগার বান্দা মন থেকে ক্ষমা চাইলে আপনি তাকে ফিরিয়ে দেন না খোদা,,,,আমাকেও মাফ করে দিন খোদা,,,,আমি জীবনে অনেক মেয়েদের সাথে খারাপ করেছি কখনো আপনার ভয় করি নি,,,,আর আজ হয়তো একটা মেয়ের হাতেই আপনি আমাকে শোধরে দিতে চাইছেন আর তাই আজ আমার মন একটা মেয়ের মাঝে আটকে দিয়েছেন,,,,আর ওকেই এখন কেড়ে নিচ্ছেন,,,,হ্যাঁ আমি নিধীকে ভালোবেসে ফেলেছি,,,,আমার এমন অনুভব হচ্ছে যেনো আজ ছুরিটা ওকে না আমার বুকে মারা হয়েছে,,,,আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে মাবুদ,,,,আমি পারছি না ওর কষ্ট সহ্য করতে,,,,ভয় হচ্ছে আমি যেনো ওকে হাড়িয়ে না ফেলি,,,,এমন মনে হচ্ছে যেনো ওকে হাড়িয়ে ফেললে আমি পাগল হয়ে যাবো,,,,পারবো না বেঁচে থাকতে,,,,হে আল্লাহ দয়া করে ওকে বাঁচিয়ে দিন,,,,আমি পণ করছি আজকের পর থেকে কোনো খারাপ কাজ করবো না,,,,ভালো হয়ে যাবো নিধীর জন্য,,,,দয়া করেন খোদা,,,,দয়া করেন),,,,,(কাঁদতে কাঁদতে মোনাজাত শেষ করে উঠতেই নিহান ছুটে এসে হাসিমুখে বললো)
নিহানঃভাইয়া নিধী বেঁচে গেছে,,,,ডাক্তার বলেছেন নিধী এখন আউট অফ ডেঞ্জার,,,,
নিরবঃকি বলছিস তুই,,,,সত্যিই নিধী ঠিক আছে??
নিহানঃহ্যাঁ ভাইয়া,,,,ডাক্তার বলেছেন ছুরিটা ওর একটা কিডনির অনেক পাশ দিয়ে গেছে কিন্তু ওতে না লাগায় কিডনিটা ড্যামেজ হতে হতে বেঁচে গেছে,,,,ওর জ্ঞান ফিরতে না কি সময় লাগবে,,,,আর বলেছেন ওর খুব বেশি খেয়াল রাখতে ওর অনেক রেস্ট দরকার,,,,(নিরব সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করলো মনে মনে,,,,,)
(তারপর ওরা বাড়িতে ফোন করে সব জানালো,,,,বাড়ির সবাই হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালে পৌঁছালো নিধীর মা তো কেঁদে শেষ,,,,,উনাকে আদনান সাহেবের স্ত্রী আর মা সামলাচ্ছেন,,,,,তারপর নিধীর জ্ঞান ফিরলে সবাই ওর সাথে দেখা করে,,,,,ওখানে নিধীকে প্রায় ৩ দিন রাখা হয়,,,,এ ফাঁকে নিহান নিরব একবারের জন্যও হাসপাতাল ছাড়তে চায় নি,,,,,সবসময় আশেপাশে থেকেছে দুজন,,,,একা দুজনই নিধীর খেয়াল রাখছে ওরা তো যেনো নার্সকেও ফেল করে দেবে,,,,নিধী কারো কোনো কেয়ার নিতে চাইছে না কিন্তু ওরা কে শুনে কার কথা,,,,ওদের বাড়ির সবার ওদের এমন আচরনে কেমন জানি খটকা লাগছে,,,,আদনান সাহেব জেনো পুরো ব্যাপারটা বুঝতেই পারছেন,,,,,তারপর নিধীকে নিয়ে আসা হলো বাড়িতে,,,,বাড়িতে আসার পর নিধী তেমন কোনো রেস্ট করতে না চাইলেও ওকে জোর করে রেস্টে রাখা হয়,,,,মা নিজের কসম দেওয়াতে নিধী আর মানা করলো না,,,,প্রায় দুসপ্তাহ পর নিধী এখন একদম ঠিকই আছে,,,,এ দুসপ্তাহ নিহান নিরব অনেক দেখাশোনা করেছে নিধীকে,,,,,নিধীর ওদের এমন করায় বিরক্তির সাথে খটকাও লাগছে নিহানের মনের ভাব তো নিধী আগে থেকেই জানে কিন্তু নিরবের টা বুঝতে অক্ষম বেচারি,,,,এদিকে আদনান সাহেব পড়েছেন মহা টেনশনে,,,,,উনার এক ছেলে এমন করলে হয়তো উনি খুশিই হতেন,,,,ধুমধাম করে নিধীকে বানিয়ে নিতেন ঘরের বউ,,,,কিন্তু এখানে তো উনার দুই ছেলেই এক রাস্তায় নেমে পড়েছে,,,,তাই আদনান সাহেব চিন্তিত,,,,এর পরিনতিটা কি হবে ভেবে,,,,,এদিকে ভালো হয়ে নিধী আবার কাজে লেগে পড়েছে এখন কে কাকে আটকায়,,,,নিহান নিরব দুজনই ওকে আটকাতে ব্যার্থ হয়ে চলে আসে আদনান সাহেবের কাছে,,,,,)
নিহানঃডেড তুমি নিধীকে কতো বেতন দাও বলো তো,,,,ওর কি এতো টাকায় হয় না যে ও ঘরে কেয়ারটেকারের জবও করে,,,,না তুমি ওকে টাকা দিতে গাফিলতি করো??
নিরবঃআমারও তাই মনে হচ্ছে,,,,,
(ছেলেদের কথা শুনে আদনান সাহেব তো থ হয়ে গেছেন,,,,উনার ছেলেরা কেমন সন্দেহের নজরে তাকিয়ে আছে উনার দিকে ওদের তাকানো দেখে আদনান সাহেব ফুলকি দিয়ে হেসে উঠলেন,,,,,)
নিরবঃকি হয়েছে ডেড হাসছো কেনো??
নিহানঃআমরা কিন্তু মজা করছি না??
আদনানঃতোদের কে বলেছে আমি ওকে টাকা কম দেই,,,,,
নিহানঃঠিক ঠাক টাকা দাও তবে ও সারাদিন ঘোরার খাটনি খাটতে থাকে কেনো ঘরে কেয়ারটেকার হয়ে,,,,, আমাদের পি.এ হিসেবে তো ওর সেলারি অনেক,,,,,এতো টাকায় তো ওর দিব্যি দিন কাটার কথা
আদনানঃহুম,,,,কিন্তু তোরা কি জানিস ও এসব কাজ কেনো করে,,,,,তবে শোন,,,,,আমি যখন ওকে এখানে নিয়ে এসেছিলা তখন হয়তো ওকে দয়া করে প্রথমেই ওকে পি.এ এর পোস্ট দিতে চেয়েছিলাম কারন ও অনেক আত্মনির্ভরশীল এখানে ও এমনিতে থাকতে চাইতো না,,,,কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ও তখন এই পোস্টটা নেয় নি বরং নিজের কোয়ালিশন অনুযায়ী একটা পোস্ট নিয়েছিলো,,,,তার পরও ভাবতো হয়তো আমি ওকে দয়া করছি যেখানে ও আমার কোনো দয়াই নেয় নি আজ পর্যন্ত যা করেছে সব নিজের দক্ষতায়,,,,, এখানে কেয়ারটেকার এর জবও এজন্যই নিয়েছিলো যাতে ও আমার দয়ার নিচে না থাকে,,,,আগে কেয়ারটেকার এর জবের জন্য টাকা নিলেও এখন এটার জন্য ও কোনো টাকা নেয় না নিজের দায়িত্ব মনে করে করে,,,,আর ও বলেছে যতোদিন এখানে থাকবে এই কাজটা ও করবেই কারন ওর মান্য ও কখনোই আমার ঋন শোধ করতে পারবে না,,,,যেখানে ও আমার কাছে কোনোদিক থেকে ঋনি নয় তাও তা করে,,,,,মানা করার পরও,,,,
নিরবঃযতোদিন এখানে আছে মানে,,,,,??
আদনানঃও এখানে বেশিদিন থাকবে না বাবা,,,,ও আমাদের অফিসের পাশেই জায়গা নিয়েছে,,,,তোমরা জিজ্ঞেস করছিলে না ও তো অনেক টাকা পায় তাতে কি ওর হয় না,,,,,ওসব টাকা থেকে ওর মায়ের ওষুধপত্র নিজেদের যাবতীয় সবকিছু পরে যা টাকা রয়ে যেতো তা থেকে জমিয়ে জমিয়ে জায়গা কিনেছে,,,,সেখানে একটা বাড়ি বানাতে চায় নিধী যেটা ও ওর মাকে উপহার দিবে তারপর মাকে নিয়ে সেখানে দিব্যি থাকবো,,,,এভাবে ও কারো উপর নির্ভরশীল হয়ে আর থাকতে চায় না,,,,(নিরাশ হয়ে বললেন আদনান চৌধুরী নিধী থাকতে চায়না বলে,,,,,)কয়েকদিনের মধ্যে বাড়ি বানানোর কাজও শুরু হয়ে যাবে,,,,কিছু টাকার কমতি আছে এ মাসের বেতন পেয়ে কাজের শুরুটা করিয়ে দিবে মনে হয়,,,,
(কথাটা শুনে দুই ভাইয়েরই বুকটা কেঁপে উঠলো,,,,নিধী চলে যাবে তবে ওদের কি হবে,,,,,এটাই ভাবতে ভাবতে ডেডকে আর কিছু না বলে দুজন দুদিকে প্রস্থান করলো,,,,তারপর দুজনই চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়লো নিধীকে কেমনে আটকাবে,,,,,তারপর অফিসে আবারও শুরু হয়েছে নিধীকে নিয়ে টানাটানি,,,, ও অসুস্থ তাই দুই ভাই তেমন কোনো কাজ দিচ্ছে না ওকে শুধু শুধু হালকা ফোলকা এটা ওটা কাজ দিয়ে ওকে নিজেদের সামনে বসিয়ে রাখার ধান্দা আটছে,,,,এতক্ষণ নিহানের রুমে ছিলো নিধী কিছু কাজ করছিলো নিহানের টেবিলের সামনে বসে এবার নিরব ওকে ডেকে এনে ওর টেবিলের সামনে বসিয়ে রেখেছে কিছু কাজ দিয়ে,,,,নিধী কাজ করছে আর নিরব নিধীকে মন ভরে দেখছে,,,,এ চাহনিতে যে কোনো খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি নেই আছে শুধু মুগ্ধতা,,,,, এ চাহনিতে যে শরীরের কোনো টান নেই আছে মনের জন্য মনের পিপাসা,,,,,হঠাৎই নিরবের এ পিপাসা ভঙ্গ হলো নিহানের নিরবের কেবিনে এন্টার করায়,,,,,
নিহানঃনিধী আমার কেবিনে আসো কাজ আছে,,,,
নিরবঃতুই দেখছিস না নিধী আমার কাজ করছে,,,,,এতোসময় তো তোর কাজ করে এসেছে,,,,এখন আর যাবে না আমার কাজ করবে তুই যা এখান থেকে,,,,,
নিহানঃএটা কোন ধরনের কথা বলছিস ভাইয়া তুই,,,,ভুলিস না নিধী আমারও পি.এ,,,,,ও আমার কাজটাও করতে বাধ্য,,,,,
নিরবঃকিন্তু এর মানে এটা নয় ও আমার কাজ রেখে তোর কাজ করবে,,,,
নিহানঃআর এর মনে এটা না যে তুই ওকে সারাদিন নিজের কাজ দিয়ে বসিয়ে রাখবি,,,,,
নিরবঃআর তুই বুঝি ওকে কাজ দিস না,,,,আমার থেকে বেশি কাজ তো ওকে তুই দিস,,,,
নিহানঃতুই কিন্তু এখন একটু বেশি করছিস ভাইয়া,,,,
নিরবঃহ্যাঁ করছি তবে কি করবি তুই,,,,??
(দুই ভাইয়ের এসব কান্ড বসে বসে দেখছিলো নিধী এবার নিরবতা ভেঙে চিৎকার করে ধমক দিয়ে উঠলো দুজনকে,,,,,)
নিধীঃস্টপ ইট,,,,(সাথে সাথে নিহান নিরব দুজনেই চুপ,,,,)
নিধীঃঅনেক হয়েছে আর নয়,,,,,আপনারা কি পেয়েছেন আমাকে যার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ট্রিট করতে চাইছেন যেনো আমি খেলার পুতুল যার ইচ্ছাই নিয়ে নিলো,,,,ইচ্ছা মতো টানাটানি করলো,,,,আমি আর পারছি না আপনাদের দোটানায় পড়ে থাকতে আমিও মানুষ আর আমারও ধৈর্যের সীমাবদ্ধতা আছে,,,,আমি আর পারবো না আপনাদের দুজনেরই পি.এ হয়ে থাকতে,,,,থাকলে আমি একজনের পি.এ হয়ে এখানে থাকবো নয়তো জব ছাড়বো,,,,,এবার সিন্ধান্ত আপনাদের কে আমাকে নিজের পি.এ রাখবে আর কে আমাকে মুক্তি দিবে আর কোনো একজন মুক্তি দিতে না পারলে আমি দুজনের কাছ থেকেই মুক্তি নিয়ে নেবো জবটা ছেড়ে,,,,এক ঘন্টা সময় দিলাম আপনাদের ভেবে নিন,,,(এটা বলে নিধী রাগী লুক নিয়ে চলে গেলো নিজের ডেক্সে,,,,,দুই ভাই একে ওপরের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময়,,,,তারপর নিহান নিরবের পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলো)
নিহানঃতোকে একটা প্রশ্ন করতে চাই ভাইয়া দিবি,,,,,??
নিরবঃহ্যাঁ বল??
নিহানঃতুই কি নিধীকে ভালোবাসিস,,,,??
নিরবঃদেখ নিহান তোর কাছ থেকে আমি কখনো কিছুই লুকাই নি আর আজও লুকাবো না হ্যাঁ আমি নিধীকে ভালোবাসি,,,,আর আমি এটাও জানি তুইও নিধীকে ভালোবাসিস,,,,(দুটো কথা শুনেই নিহান অবাক হয়ে তাকালো নিরবের দিকে,,,,,)
নিরবঃএখানে অবাক হওয়ার কিছু নেই নিহান,,,,তুই এটাই ভাবছিস আমি নিধীকে ভালোবাসলাম কি করে আমি তো এসবে কোনো ইন্টারেস্ট রাখি না,,,,তবে মনে কর তুই আমাকে বলেছিলি ভালোবাসাতে জড়াতে হয় না এটা নিজেই মানুষকে জড়িয়ে নেয়,,,,দেখ আজ আমিও জড়িয়ে গেছি এতে,,,,আর তুইওতো আমার মতোই ছিলি এখন তো তুইও সাধু হয়ে গেছিস,,,,আসলে নিধীর মাঝে এমন কিছু আছে যা আশেপাশের সবাইকে ওর মতো ভালো হতে শিখিয়ে দেয়,,,,আর ওদের নিজের প্রতি টেনে নেয়,,,,
নিহানঃএটা তুই কি বলছিস ভাইয়া মাথা ঠিক আছে তো তোর,,,,,??আমরা দুজন কিভাবে ওকে ভালোবাসতে পারি??এটা কি করে সম্ভব??
নিরবঃআরে হাদারাম কোথাকার,,,, আমরা দুজন কেনো পৃথিবীর সব কয়টা ছেলেই নিধীকে ভালোবাসতে পারে এটা কোনো বড় কথা নয়,,,,বড় কথা হলো এটা যে নিধী কাকে ভালোবাসবে,,,,ও যাকে ভালোবাসবে নিধী তার,,,,
নিহানঃমানে কি বলতে চাইছিস ভাইয়া,,,,,??
নিরবঃসোজা কথায় তোর সাথে কম্পিটিশন করতে চাইছি,,,,দেখ নিহান আমরা ভাইয়েরা কখনোই এক জিনিস নিয়ে মারামারি করি নি,,,,,যে জিনিস তুই নিয়েছিস সে জিনিসের দিকে আমি চোখ তুলেও তাকাই নি আর যে জিনিস আমি নিয়েছি সে জিনিসের দিকে তুই চোখ তুলে তাকাস নি,,,,বড় হবার পর মেয়েদের নিয়ে আমাদের মধ্যে একই জিনিস হতো,,,,মম ডেডও সবসময় আমাদের একজাতীয় দুটি খেলনা এনে দিয়েছে যাতে আমাদের মধ্যে ঝগড়া না লাগে,,,,বড় হবার পরও আমাদের সবসময় এটা বলেছে কখনো যাতে কোনো এক জিনিস নিয়ে আমরা ঝগড়া না করি,,,,কিন্তু এখন আমাদের মধ্যে আছে নিধী,,,,আর ও কোনো জিনিস নয় জলজ্যান্ত মানুষ,,,,যার মধ্যে আমাদের দুজনেরই প্রাণ আটকে আছে সেটা বুঝতে বাকি নেই আমার,,,,দেখ নিহান আমরা কখনোই কারো প্রেমে পড়ি নি কিন্তু আজ প্রেম নামক জিনিসটা আমাদের নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছে সুধরে দিয়েছে দুজনকে,,,,,কিন্তু এই প্রেমের স্বাদ আমরা এক জনই গ্রহণ করতে পারবো আর সেটা নির্ধারণ করবে নিধী,,,,আর আমরা আজ থেকে নিধী নামক পাথরের মনে যার যার নামক ফুল ফুটানোর চেষ্টা করবো আর ফুল যার নামেরই ফুটবে ওই নিধীকে পাবে বাকি জন কেটে পড়বে,,,,আর হ্যাঁ এতে যেনো আমাদের সম্পর্কে কোনো ফাটল না আসে,,,,
নিহানঃএর মানে তুই আমাকে চ্যালেন্জ করতে চাইছিস ভাইয়া??,,,,,দেখিস আবার পরে আবার হার মেনে কান্নায় ফেঁটে পরিস না,,,হা হা হা
নিরবঃতুই ভালো করেই জানিস নিরবকে হারানো মুখের কথা নয়,,,,নিধীর মন আমিই জয় করবো দেখে নিস,,,,,ও আমার প্রথম ভালোবাসা ও আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে আর আমি ওকে নিজের থেকে কখনোই দূর হতে দেবো না,,,,
নিহানঃএ হিসাবে ও আমার জীবনে তোর আগ থেকে এসেছে ভাইয়া,,,,প্রায় তিন বছর আগ থেকে ওকে আমি ভালোবাসি,,,,ও ও আমায় ভালোবেসে ফেলতো কিন্তু আজ আমার কারনেই আমি ওকে হারাতে বসেছি,,,,কিন্তু না ভাইয়া আমি ওকে হারাবো না,,,,,এতোদিনে ওকে ফিরে পেয়েছি ওকে হারাবার জন্য নয়,,,,তাই তোর কম্পিটিশন যে খুব একটা সহজ হবে না এটা মাথায় রাখবি,,,,
নিরবঃতিন বছর??(অবাক হয়ে)
নিহানঃহ্যাঁ তিন বছর(এটা বলে তিনবছর আগের সবকিছু খুলে বলে নিহান নিরবকে),,,,,আজ নিধীর এমন হওয়ার পিছনে পুরো না হলেও একটু হাত আমারও আছে,,,,(নিরাশ হয়ে)
নিরবঃতুই ওকে এতো কষ্ট দিতে পারলি নিহান(রেগে গিয়ে)আবার তুই ওকে পেতেও চাস,,,,ছি….
নিহানঃআমার যতটুকু মনে হয় তুইও ওর সাথে ভালো কিছু করিস নি(উল্টো রেগে গিয়ে,,,কিছুটা ধিক্কার দিয়ে)
নিরবঃহয়েছে আর রাগতে হবে না,,,,কথায় কথায় এক ঘন্টা পেড়িয়ে যাচ্ছে যে জেদি মেয়ে পরে সত্যি সত্যিই যব ছেড়ে দিবে,,,,এমনিতে ঘর ছাড়ার প্লান করছে,,,,
নিহানঃহুম এটা ঠিক,,,,তবে কি করা যায়,,,,দেখ আমি ওকে আমার পি.এ থেকে বরখাস্ত করছি না,,,,,
নিরবঃআমিও না,,,,,
নিহানঃতবে কি হবে??
নিরবঃআমার কাছে আইডিয়া আছে,,,,,(তারপর দুই ভাই মিলে ডিসাইড করলো অফিসে ওরা নিধীকে দিয়ে নিজের যাই কাজ করাবে তা ওকে নিজের ডেক্সে বসে করতে দিবে এখন নিধীর ইচ্ছে যখন যার কাজ করে শেষ করুক ওরা পার্সোনালি নিজেদের কেবিনে নিয়ে ওকে কাজ করাবে না আর অফিসে ওর সাথে কোনো ধরনের ফ্লার্ট বা ওকে পটানোর কোনো ফন্দি আটবে না ওরা,,,,আর এতে ওরা একে ওপরের উপর নজর রাখবে,,,,তারপর এ চুক্তিতে রাজি হলো দুজন,,,,, নিধীকে তাদের ডিসিশন বললে নিধীও তা মেনে নিলো,,,,,যেখানে ওর ওদের কেবিনে গিয়ে পার্সোনালি কাজ করতে হবে না সেখানে তো ওর ভালোই,,,,,)
চলবে,,,,,,