#দোটানা,পর্বঃ১৪,১৫
#লেখিকাঃআরোহী_নুর
পর্বঃ১৪
মিতিঃএই মেয়ে হাউ ডেয়ার ইড,,,,আমার হাত ধরার সাহস কি করে হলো তোর,,,,
নিধীঃঅন্যায়ের প্রতিবাধ করতে নিধী কখনো ভয় পায় না,,,,,
মিতিঃঅহ তাহলে ফকিন্নির বাচ্চা হয়ে এসেছিস আরেক ফকিন্নির বাচ্চার পক্ষপাতিত্ব করতে,,,,,(কথাটা শুনে নিধী সাথে সাথে মিতির হাতটা ওর পিছন দিক থেকে মুড়ে নেয়,,,,সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে,,,,নিহান নিরবের ভালোই লাগছে নিধী এমন করায়,,,, মিতি কি করে বলতে পারে নিধীকে নিয়ে এসব)
মিতিঃআহ,,,,,(ব্যাথায় কুঁকড়ে গেছে)
নিধীঃগবীর হতে পারি কিন্তু ফক্কিনির বাচ্চা না,,,,কারন নিধী কখনোই ওর মাকে কারো কাছে হাত পাততে দেয় নি আর দিবেও না,,,,আর নিজের ফুফুকে ফকিন্নি বলতে যখন তোর মুখ কাঁপে নি তবে তোর আদবকায়দা সম্পর্কে আমার ভালোই জানা হয়ে গেছে,,,,,বেয়াদবি অন্যের সাথে করিস নিধীর সাথে আর বেয়াদবি করতে আসবি না নইলে আজ তো হাতটা মুড়েছি ভবিষ্যতে হাতটা ভাঙতেও পারি,,,,(এটা বলে নিধী ওকে ছেড়ে চলে যাবে সেখান থেকে তখন ইতি আসে ওর সামনে)
ইতিঃতোর সাহস কি করে হলো আমার বোনের সাথে এরকম ব্যবহার করার,,,,আমি তোকে আসতো রাখবো না (এটা বলে ইতি নিধীর উপর হাত তুলবে এর আগেই নিধী পাশে থাকা এক গ্লাস পানি এক ঝাটকায় ছুঁড়ে মারে ইতির মুখে ইতি ভিজে বিড়াল হয়ে আছে,,,,,নিহান নিরব সজোরে হেসে দিয়েছে,,,,ওদের হাসি দেখে সবাই অবাক মিতি ইতি তো রাগে ফায়ার,,,,)
নিধীঃপানি মেরে জাগানোর চেষ্টা করলাম,,,,কারন আমার মনে হয় আপনি এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলেন নইলে আপনার বোনের সাথে হওয়া জিনিস দেখার পর আপনি আমার সাথে লাগতে আসতেন না,,,,,কথা চলো আমার রুমে,,,,,আর হ্যাঁ আজ থেকে তুমি কারো কাজ করবে না কারন তুমি কারো চাকর নও,,,,,
(এটা বলে নিধী কথাকে নিয়ে চলে যায়)
মিতিঃআপনারা এখনও দাঁড়িয়ে আছেন,,,,দেখলেন তো ওই চাকরানি ফকিন্নিটা আমাদের কি হাল করে গেলো আর আপনারা চুপ থাকলেন,,,,
নিরবঃআরেকবার যদি ওকে চাকরানি বলেছিস না তবে আমি ভুলে যাবো যে তোমরা আমাদের ঘরের মেহমান,,,,তুই ভালো করে চিনিস আমায় মিতি,,,,,
নিহানঃআর ও চাকরানী না ও আমাদের পরিবারের অংশ,,,,,অংশ নয় ও আমাদের পরিবারের সবকিছু,,,,তাই ওকে নিয়ে এমন কথা আর যেনো না শুনি তোদের মুখে( মিতি ইতিকে উদ্দেশ্য করে)
নিরবঃ ওকে নিয়ে আমরা কোনো খারাপ মন্তব্য সহ্য করবো না,,,,(এটা বলে নিরব নিহান রেগে দুজনের রুমে চলে যায়)
ইতিঃমম ডেড তোমরা বসে বসে দেখছো ওসব এখনও,,,,মামা মামি আপনারাও যে কিছু বলছেন না ওই রাস্তার মেয়ে কি বলে গেলো ওসব,,,,নিহান আর নিরব ভাইয়াও যে কিছু বললো না বরং আমাদের কথা শুনালো,,,,,ফকিন্নিটাকে এতো সায় দেওয়া ঠিক হয় নি আপনাদের……
আদনানঃসাট আপ ইতি নিরব নিহান কি বলে গেলো শুনো নি নিধীকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য আমরা কেউ সহ্য করবো না,,,,
নিহান নিরবের মাঃআর তোমরা যে বেয়াদবি করেছো তার জবাব দিয়েছে মাত্র নিধী ও কখনোই অন্যায় সহ্য করতে পারে না,,,,
আয়শাঃকি বলছো ভাবি এই বলে ওই দুটাকার মেয়ের কাছে আমার মেয়েরা ছোট হয়ে থাকবে,,,,
মিজানঃভালোই তো,,,,নিজের মেয়েদের একটু আদব শেখালে হয়তো আজ এ দিন দেখতে হতো না,,,,যারা নিজের মৃত ফুফুকে ফকিন্নি বলতে পারে তাদের কাছ থেকে আর কি আশাও করা যেতে পারে,,,,,
আয়শাঃতুমি কিন্তু………
আদনানঃহয়েছে আর ঝগড়া বাধাতে হবে না যা হয়েছে বাদ দাও,,,,,এতোদিন পর দেখা খনিক গল্প গুজব করি,,,,(তারপর বাকিরা গল্পে মেতে গেলেও ইতি মিতি রাগে ফুলতে ফুলতে নিধীকে নিয়ে মনে ক্ষোভ জমিয়ে নিয়েছে,,,,নিধীর সাথে কথার অনেক ভাব হয়ে গেছে,,,,,তিন বছরে এই প্রথম নিধী মন খুলে কথা বলছে,,,,,কথা এই প্রথম যার সাথে নিধী মন খুলে কথা বলছে,,,,বাগানে বসে আছে নিধী আর কথা,,,,,কথা অনেক কথা বলছে ওর সাথে নিধীও অনেক কথা বলছে ওর সাথে,,,,, কথাকে পেয়ে যেনো নিধী নিজের একাকিত্ব দূর করতে পারছে,,,,কথার মধ্যে যে ও নিজের তিন বছর আগের অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছে,,,,নিধীর ভালোই লাগছে কথার সাথে সময় কাটাতে,,,,এদিকে নিরব নিহান মন ভরে তাকিয়ে আছে নিজেদের মেষপরীর দিকে,,,,নিরব এই প্রথম নিধীকে মন খুলে কথা বলতে দেখছে আর নিহান প্রায় তিন বছর পরে,,,,দুই ভাই বাগানের সাইডে দাঁড়িয়ে দেখছো নিধীকে,,,, নিধী কথা ওদের দেখে নি,,,,
নিহানঃতিনটা বছর পর আজ এতো কথা বলতে দেখছি এই হিটলারটাকে,,,,,
নিরবঃপাথরটা এতো সুন্দর করে এতো কথা বলতে জানতো নাকি আগে,,,,,
নিহানঃজানতো মানে মুখে যে সারাদিন ওর কথা নামক মুক্ত ঝরতো,,,,,ও একদম কথার মতোই ছিলো,,,,,কিউট,,,,কতো কতা বলতো কি দুষ্টুমিই না করতো,,,,,যেকোনো কারো কথায় বিশ্বাস করতো,,,,
নিরবঃআর তুই সেই সরলতার সুযোগ নিয়েছিলি হারামি কোথাকার আজ তোর জন্যই আমার নিধী এরকম,,,,,
নিহানঃহারামি আমি তোর মতোই ছিলাম এখন তো শোধরে গেছি,,,,,এখন নয় তিন বছর আগেই আর তুইতো এই শোধরালী এই মাত্র,,,,আর নিধী কিন্তু আমার তাই নিজের নিজের করিস না,,,,
নিরবঃতবে রে,,,,,(তৎক্ষনাৎ কথার চোখে পড়ে যায় ওদের)
কথাঃওমা ছোট বড় কেলেঙ্কারি সাহেব দেখছি,,,,,,
(কথাটা শুনে নিহান নিরব তেরে এসে কথার দিকে এসেই ওর কান দুটি মুড়ো দেয় কথা সাথে সাথে কেঁদে দেয়,,,,)
নিহান+নিরবঃসাহস কি করে হয় তোর আমাদের কেলেঙ্কারি বলার,,,,
কথাঃআর বলবো না আমায় ছাড়েন আপনারা প্লিজ,,,, লাগছে আমার অনেক,,,,, (কেঁদে কেঁদে)
নিধীঃ(দুজনকে কথার ধার থেকে সরিয়ে কথাকে নিজের কাছে নিয়ে এসে,,,,,)সাহস কি করে হলো আপনাদের কথার কানে মুড়ে দেওয়ার,,,,(রেগে গিয়ে)
নিহান+নিরবঃও আমাদের কেলেঙ্কারি বলেছে নিধী,,,,আমরা কি কেলেঙ্কারি করি,,,,(ইনোসেন্ট মুখ বানিয়ে)
নিধীঃনা আপনারা তো কিছুই করেন না,,,,আপনাদের মতো ভালো মানুষ আর একটাও পাওয়া যাবে না জগতে,,,,আমি বলছি আপনারা কেলেঙ্কারি,,,, শুধু কেলেঙ্কারি নয় মহা কেলেঙ্কারি এখন কি করবেন আপনারা বলেন,,,,আমারও কান মুড়ে দেবেন?? তবে দেন,,,,,
নিহানঃনা না তোমার কান কি করে মুড়তে পারি আমরা,,,, তুমি যে কষ্ট পাবে,,,,
নিরবঃ আর তুমি আমাদের যা ইচ্ছা বলতে পারো এতে আমরা কখনোই রাগবো না,,,,
নিধীঃআমি বলতে পারি আর কথা বললে সমস্যা তা কেনো বলবেন আপনারা জনাব,,,,আমি কষ্ট পাবো আর কথা বুঝি পায় না,,,,চুপচাপ দুজন কথাকে সরি বলেন,,,,এক্ষুনি,,,,,
নিহানঃসরি আর কথাকে(হা হা হা)
নিরবঃকথাকে সরি বলার কথা শুনেই আমাদের হাসি পাচ্ছে আর ওকে নাকি বলবো আমরা সরি,,,,,
নিধীঃবলতে হবে আপনাদের সরি,,,,আর আপনারাই বলবেন সরি ওকে,,,,নইলে কালকে থেকে আমি আর আপনাদের কারো সাথেই কথা বলবো না,,,,,
নিহানঃকি,,,,,,না না আমি বলছি সরি,,,,,
নিরবঃআমিও,,,,(কথার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো দুজন,,,,কথা এতে ভয় পেয়ে নিধীর পিছন আরও লুকিয়ে গেলো,,,,)
নিধীঃভালোভাবে শান্তভাবে সরি বলেন ওকে আপনারা ভয় দেখানোর চেষ্টা করলে আর বলতে হবে না সরি চলে যান এখান থেকে আর আপনাদের যেনো আমার আশেপাশেও না দেখি,,,,,
নিহান+নিরবঃনা না আমরা বলছি তো সরি ,,,,,,সরি কথা আর ওরকম করবো না তোর সাথে,,,,,
কথাঃহুম ঠিক আছে,,,,(কথা আর কিছু বললো না কারন ও জানে নিরব নিহান কখনোই ওকে এভাবে সরি বলতে পারে না,,,,,ওরা যে নিধীর ভয়ে ওসব বলছে তা বুজতে পারছে কথা,,,,,আর ও তা ভালো করেই জানে নিধী সরে গেলেই দুজন ওর সাথে আবার লাগতে আসবে,,,,যেহেতু নিধী পাশে আছে তাই কথা আর তেমন ভয় পেলো না,,,,,)
নিধীঃআর যেনো আপনাদের কথার সাথে লাগতে না দেখি,,,,চলো কথা,,,,
(নিধী কথাকে নিয়ে ভিতরে যাচ্ছে নিহান নিরব কথার দিকে শয়তানি লুক দিয়ে তাকিয়ে আছে,,,,,তখন কথাও পিছন মুঁড়ে দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে দুজনকে ভেংচি কেটে চলে গেলো নিধীর সাথে)
নিরবঃনিধীর সায় পেয়ে এতো সাহস বেড়েছে ওর…..
নিহানঃকতক্ষন থাকবে নিধীর সাথে একা পাবো তো ওকো তখন মজা দেখাবো….
নিরবঃপেত্নি আমাদের ভেংচি দেয়,,,,সরি বলায়,,,,পাই ওকে তখন দেখবি…..
(কিছুক্ষণ পর নিধী ওর মাকে ওষুধ খাওয়াতে নিজের রুমে গেছে আর কথা ড্রয়িংরুমে বসে নিধীর জন্য অপেক্ষা করছে নিধীর সাথে গল্প করবে বলে,,,,,তখনি নিরব নিহান ওর সামনে এসে দাঁড়ায়,,,,,মুখে ডেবিল হাসি)
কথাঃ(শুকনো ঢুক গিলে) আপনারা…..??
নিরবঃহ্যাঁ আমরা,,,,নিধীকে পেয়ে মাথায় উঠেছিস না,,,,,এখন তো একা এখন তোকে কে বাঁচাবে,,,,,
কথাঃআপনারা বেশি তেড়িবেড়ি করবেন না বলে দিলাম নয়তো আমি নিধী আপুকে ডাকবো,,,,,,
নিহানঃতবে ডাক,,,,,তুই ভালো করেই জানিস আমাদের বাড়ি কতটা বড়,,,,আর এখান থেকে নিধীর রুম অনেক চিপায় আর তোর যা আওয়াজ এটা নিধী পর্যন্ত পৌঁছাতে পোঁছাতে তোকে আমরা ছাঁদ থেকে ফেলেই দিবো,,,,,(কথাকে ভয় দেখিয়ে বললো,,,,আসলে ওরা তেমন কিছুই করবে না কথাকে ভয় দেখাতে ওদের ভালোই লাগে কারন কথা অনেক ভয় পায়,,,,,কথা ওদের কথা শুনে নিধী আপু বলে নিধীর রুমের দিকে যাবে এর আগেই দুজন ওর পথ আটকে দেয়,,,,কথা ভয়ে পালাবার রাস্তা না পেয়ে উপরের দিকে দৌঁড়াতে শুরু করে,,,,নিহান নিরবও ওর পিছন দৌঁড়ায় ওকে ভয় পাইয়ে একটু মজা নিবে বলে,,,,,যা ওরা ওর সাথে প্রায়ই করে,,,,,দুজনই দৌঁড়াচ্ছিলো কথাকে,,,, কথা নিধী আপু বলে বলে দৌঁড়াচ্ছে,,,,,নিধীও তখন ওর রুম থেকে বেড়িয়ে চলে এসেছিলো আর তখন কথার ডাক শুনতে পায় ছুটে এগিয়ে গিয়ে দেখে নিরব নিহান ওকে দৌঁড়াচ্ছে,,,,নিধী নিহান নিরব দুজনকেই ডাকছে কথাকে না দৌঁড়ানোর জন্য,,,,,নিধীর ডাক নিরব আর কথার কানে গেলো না নিরব কথাকে দৌঁড়ানি দিয়ে অনেক আগে চলে গেছে পিছনে ছিলো নিহান ওর কান অব্দি নিধীর ডাক গেলো আর নিহান সাথে সাথেই থেমে গেলো,,,,)
নিধীঃমি.নিহান আপনারা কথাকে দৌঁড়াচ্ছেন কেনো??(রেগে গিয়ে)
নিহানঃ(এই সুযোগ নিজে হিরো সেজে ভাইয়াকে ভিলেন বানিয়ে দেই)আসলে নিধী তুমি যে তখন আমাদের দিয়ে কথাকে সরি বলিয়েছো তখন আমি কথাকে মন থেকেই সরি বললে ভাইয়া বলে নি,,,,বরং ভাইয়া ওকে নিয়ে মনে ক্ষোভ জমিয়ে বসে ছিলো আর এখন ওকে একা পেয়ে দৌঁড়ানো শুরু করেছে বলেছেন ওকে ছাঁদ থেকে ফেলেদেবে,,,,,আমি কতো মানা করেছি আমার কোনো কথাই শুনলো না,,,,দেখো না কথাকে বাঁচাতে আমিও ওদের পিছন ছুটছিলাম,,,,,
নিধীঃকি,,,,,,,আমি জানতাম উনি কখনোই শোধরাবেন না,,,,,আমিও দেখবো ওকে কি করে ছাঁদ থেকে ফেলে দেন উনি,,,,,(এটা বলে নিধী আবার ওদের দিকে ছুটে গেলো,,,,)
নিহানঃআব তেরা কিয়া হোগা মেরে ভাই,,,,হা হা হা,,,,আজ নিধী তুজে নেহী ছরেগি,,,,
(এদিকে কথা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে নিরবের রুমে ঢুকে গেছে বেখালি হয়ে,,,, নিরবও পিছনে চলে এসেছে,,,,,কথা আবার ওখান থেকে পালিয়ে যেতে চাইলে নিরব পথ আটকে দাঁড়িয়ে থাকে কথা ভয়ে পিছু হটছে,,,,নিরব এগোচ্ছে,,,,)
কথাঃমি.বড় কেলেঙ্কারি মশাই,,,,থুক্কু বড় সাহেব আমায় যেতে দিন প্লিজ আর আর কখনো আপনার সাথে লাগতে যাবো না আমি,,,,
নিরবঃআজ তুই বাঁচলে তো আগামীতে লাগার যোগ্য থাকবি,,,,এখনই তোকে নিয়ে গিয়ে ছাঁদ থেকে নিচে ফেলবো,,,,(শয়তানি লুক নিয়ে এগোচ্ছে নিরব ওর দিকে,,,,আসলে নিরব ওকে ভয় দেখাচ্ছে ওকে ভয় দেখাতে ওর অনেক ভালো লাগে,,,,এখনও ভয় দেখাবে আর কথা ভয় পেয়ে কেঁদে দিলে হাসতে হাসতে চলে যাবে যা ও প্রায়ই করে,,,,আজকেও এটাই ভেবে কথার দিকে এগোচ্ছে,,,, কথা পিছাতে পিছাতে একদম বেডের পাশে চলে গেছে নিরবও ওর একদম সামনে চলে এসেছে তখনই ব্যালেন্স হাড়িয়ে কথা পড়ে যেতে গেলে নিরবকে ধরে বাঁচতে গিয়ে নিরব সহিতে বেডে পরে যায়,,,,নিরবও ব্যালেন্স হারিয়ে গেছিলো তখন,,,,নিরব ওর উপরে পরে গেলো,,,,দুজনেরই চোখে চোখ বাইরে থেকে বাতাস দুলিয়ে দিচ্ছে দুজনকে,,,,,কথা হারিয়ে গেছে নিরবের চোখে,,,,,নিরবের ঘোর লাগে নি ও সাথে সাথে উঠে যায়,,,,)
নিরবঃকি তোর পরাধরার অভ্যেস এখনও গেলো না নাকি,,,,,যখন তখন পরে যাস,,,,শাঁকচুন্নি কোথাকার,,,,(এটা বলে উঠে চলে যাবে তখনই পিছন ফেরে দেখতে পায় নিধী দাঁড়িয়ে আছে,,,,,কথার এখনও ঘোর কাটে নি উঠে বসে তাকিয়ে আছে নিরবের দিকে,,,,,নিধী একটু আগেই এখানে এসেছিলো যখন ওরা বেডে পরে তখন,,,,নিধী সব দেখেছে)
নিধীঃআপনি কখনো সুধরাবেন না স্যার,,,,,আপনি কথাকে বুঝি ছাঁদ থেকে ফেলতে যাচ্ছিলেন??(রেগে গিয়ে)
নিরবঃএটা আবার তোমাকে কে বললো??আমি কেনো কথাকে ছাঁদ থেকে ফেলতে যাবো??
নিধীঃকেনো মি.নিহানই তো বললেন আপনি কথাকে ছাঁদ থেকে ফেলতে যাচ্ছিলেন,,,,আর আমি তো নিজের চোখেও দেখলাম আপনি কিভাবে ওকে দৌঁড়ানি দিচ্ছিলেন,,,আপনি এতোটা নিচে যাবেন কখনো ভাবি নি এই বাচ্চা মেয়েকে নিয়েও আপনার মনে এতো ক্ষোভ জমে আছে,,,,,
নিরবঃ(শয়তান নিহান সুযোগ পেয়ে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে,,,,,পাই তোকে তখন দেখাবো),,,,,,আসলে আমি তো কথার সাথে মজা করছিলাম ওর সাথে এমন মজা আমি প্রায়ই করি,,,,আমি কি খুনি না কি যে ওকে ছাঁদ থেকে ফেলে দেবো,,,,,আমি কিন্তু এখন খুব ভালো হয়ে গেছি নিধী,,,,,ঐ নিহান আমাকে ভালো হতে দিতে চায় না তাই আমার বিষয়ে সবাইকে আবোলতাবোল বলে বেড়ায়,,,,,
নিধীঃহয়েছে আর নিজের তারিফ করতে হবে না,,,,আমি জানি আপনি কেমন আমাকে আর চেনাতে হবে না,,,,এখন যান আমার সামনে থেকে,,,,,
নিরবঃতুমি কিন্তু আমায় ভুল বুঝছো নিধী,,,,,আমি সত্যিই পাল্টে গেছি বিশ্বাস করো,,,,
নিধীঃপ্লিজ আপনি এখন আমার সামনে থেকে যান নয়তো আমি আর কখনো আপনার সাথে কথাও বলবো না,,,,,
নিরবঃআচ্ছা আমি যাচ্ছি তবে বিশ্বাস করো আমি বদলে গেছি,,,,,
নিধীঃপ্লিজ গো,,,,(বিরক্তি নিয়ে)
নিরবঃ(ধুর নিধীর চোখে নিজের মান নিজেই ডাউন করেছি আর যতোটা বাকি ছিলো তা ওই নিহান করছে ছাড়বো না বলদটাকে,,,,,আগে হাতের কাছে পাই,,,,)
(তারপর নিরব চলে যায় আর নিধী কথার কাছে গিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করতে থাকে ও ঠিক আছে কি না,,,,,কিন্তু কথার কানে যেনো নিধীর কোনো কথাই যাচ্ছে না কথা এখনও ঘোরলাগা নয়নে তাকিয়ে আছে নিরবের যাওয়ার পথপানে,,,,নিধী এবার কথাকে বেশ জোরেই ডাকলো)
নিধীঃকথা,,,,,কি হলো কথা বলছো না কেনো কি হয়েছে তোমার??ঠিক আছো তো তুমি??
কথাঃ(ঘোর কাটিয়ে লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে বললো)কিছুই হয় নি আমার আমি একদম ঠিক আছি আপু,,,,(এটা বলে আবার লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে নিধীর গালে একটা পাপ্পি দিয়ে দৌঁড় দিলো কথা,,,,নিধী যেনো কিছু একটা বুঝতে পারলো কথাকে নিয়ে,,,,কথাটা বুঝতে পেরে নিধী কথার জন্য চিন্তিত হলো কথাও যেনো নিধীর মতো ধাক্কা না খায় সেটা নিয়ে)
চলবে……
#দোটানা
লেখিকাঃআরোহী নুর
পর্বঃ১৫
(নিরবের রুমে নিরব নিহানকে ধরে এনেছে,,,,নিহান তো হেসে হেসে পাগল নিরবকে ভিলেন উপাধী পাইয়ে)
নিরবঃতোকে আমি ছারবো না আমাকে নিধীর কাছে ভিলেন বানিয়েছিস আর এখন দাঁত বের করে করে হাসছিস,,,,,তবে দাঁড়া এবার তোর শার্ট প্যান্ট খুলে তোর কাপড়হীন ছবি ফেসবুকে পোস্ট করবো তারপরই নিজের মনে শান্তি পাবো,,,,,
নিহানঃদেখ ভাইয়া আমি জানি তুই অনেক নিচু মাইন্ডের কিন্তু এতো নিচু কাজও যে তুই করবি না এ বিশ্বাস আমার আছে,,,,,,,(হেসে হেসে)
নিরবঃআমি নিচু তাইতো তবে আজ ক্রস করবো নিচু হওয়ার সব লিমিট দাঁড়া (এটা বলে নিহানকে রুমে দৌঁড়ানো শুরু করে নিহানের শার্ট প্যান্ট ধরে টানাটানি করতে শুরু করে)
নিহানঃদেখ ভাইয়া এরকম করলে কিন্তু আমিও তোর শার্ট প্যান্ট খুলে ফেলবো,,,,
নিরবঃসাহস থাকলে করে দেখা,,,,,(তারপর দুই ভাই নিজের শার্ট প্যান্ট ধরে টানাটানি শুরু করেছে দুজন বেডে পরে ধস্তাধস্তি করছে এটা ওদের নিত্য দিনের কাজ দুই ভাই এমন ফাজলামো প্রায় করে,,,,,, দুজনই হাসছে আর একে ওপরের শার্ট প্যান্ট টানাটানি করছে,,,,,তখন কথা কি যেনো কাজে নিরবের রুমে এসেছিলো এসেই এই কান্ড দেখার পর কথা সজোরে একটা চিৎকার করে দৌঁড় দিয়ে পালালো,,,,)
নিহানঃএই রে কথা উল্টাপাল্টা কিছু ভাবলো না তো,,,,,
নিরবঃকি জানি আমরা তো শুধু ফাজলামো করছিলাম,,,, এই কথাতো আবার নিধীর চেলি হয়ে গেছে গিয়েই কথাটা নিধীর কানে দিবে আর নিধী তখন কি ভাববে আমাদের নিয়ে,,,,,,,
নিহানঃচল চল নিধীকে কিছু বলার আগে শাঁকচুন্নিটাকে আটকাই,,,,,(এটা বলে দুজন নিজেদের কাপড়চোপড় ঠিক করে নিচের দিকে আসতে গেলে দেখে কথা নিধীকে সবটাই বলছে,,,,,,নিধী নিচেই ছিলো ড্রয়িংরুমে,,,,)
নিধীঃকি হয়েছে কথা তুমি এভাবে চিৎকার করে নিচে নেমে এলে যে,,,,,,
কথাঃআপুগো ওখানে গিয়ে যা দেখলাম তারপর তো আমার মাথা ঘুরছে,,,,,
নিধীঃকি দেখেছো তুমি??
নিধীঃ বড় আর ছোট কেলেঙ্কারি সাহেব একে ওপরের প্যান্ট শার্ট ধরে টানাটানি করছে,,,,,এতক্ষণে হয়তো আপু খুলেই ফেলছে,,,,,নাউজুবিল্লাহ,,,,(নিহান নিরব ততক্ষণে নিচে নেমে এসেছে)
নিহানঃবিশ্বাস করো নিধী আমরা এমন কিছুই করি নি,,,,,আমরা তো একটু মজা করছিলাম,,,,,
নিরবঃহ্যাঁ নিধী আমরা নিষ্পাপ,,,,,,,,,
(নিধী কিছুই বলছে না তিন জনের মুখের দিকেই কিছুক্ষণ হাবার মতো তাকিয়ে রইলো তারপর খক করে হেসে পড়লো,,,,,দুই ভাই অবাকের চরম সীমায় চলে গেছে,,,,,নিধী হাসছে অবিশ্বাস্য,,,,,, নিহান এই তিন বছরে প্রথম নিধীর হাসি দেখলো আর নিরবতো এর আগে কভু দেখে নি,,,,,ওরা অবাক হয়ে তাকাচ্ছে নিধীর দিকে,,,,নিধীর হাসিতে পড়া সেই টুলটা যেনো ওদের ঘোরটা আরও প্রখর করছে)
নিরবঃতুমি হাসতেও জানো নিধী,,,,,তাও এতো সুন্দর করে,,,,,
নিহানঃকতোদিন পর তোমার হাসি দেখলাম,,,,,
নিধীঃ(হাসি বন্ধনি করে নিজেকে স্বাভাবিক করে)আপনাদের বাদরামোতে কার না হাসি পাবে,,,,আর এই কথাতো যে কাউকেই হাসিয়ে ছারবে,,,,,চলো কথা তোমার সাথে অনেক কাজ আছে আমার,,,,,(তারপর নিধী কথাকে নিয়ে চলে যায়,,,,,নিহান নিরব কথার উপর অনেক সন্তুষ্ট হলো কারন ও আসার পর থেকেই যেনো নিধী সবার মতোই স্বাভাবিক বিহেব করতে শুরু করেছে,,,,,,পরদিন সকালে নিহান নিরব ছাঁদে দাঁড়িয়ে সকাল ইনজয় করছে যেহেতু আজ শুক্রবার অফিস নেই,,,,,দুজনই দাঁড়িয়ে ছিলো ছাঁদের এক প্রান্তে তখনি দুজনই পিছন থেকে কারো জড়িয়ে ধরা অনুভব করলো,,,,দুজনই পিছন ফিরে দেখে নিহানকে ইতি আর নিরবকে মিতি জড়িয়ে ধরেছে নিহান নিরব নিজেদের ছাড়িয়ে নিবে এর আগেই সেখানে নিধী আর কথা চলে আসে হয়তো কোনো কাজে এসেছিলো,,,,,কথা তৎক্ষনাৎ সেখান থেকে ছুটে চলে যায়,,,,,নিধীও মুখে একটা সরি এনে আর সেদিকে ভালো করে না তাকিয়ে চলে যায় এটা ভেবে যে হয়তো এসময়টা ওদের পার্সোনাল,,,,,নিহান নিরব বিষয়টি বুঝতে পেরে ইতি আর মিতিকে ছাড়িয়ে নিধীর পিছন যেতে চাইলে মিতি আর ইতি ওদের হাত ধরে নেয়,,,,,
নিরবঃ(নিজের হাতটা ছাড়িয়ে)মিতি তোর সাহস কি করে হলো আমাকে পিছন থেকে এভাবে জড়িয়ে ধরার,,,,,
নিহানঃহ্যাঁ ইতি তোরও সাহসটা বড্ড বেড়ে গেছে(নিহানও নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়েছে)
মিতিঃকি বলছো তোমরা তোমাদের পাশে আসার জন্য আমাদের আলাদা সাহস নিয়ে আসতে হবে নাকি,,,,,
ইতিঃআর তোমরা এতো ভদ্রতা কেনো দেখাচ্ছো,,,,,আসছি থেকে দেখছি তোমরা আমাদের দিকে চোখ তুলেও তাকাচ্ছো না,,,,,মেয়ে দেখলে যে ভাইয়েরা চোখ সরায় না তারা নাকি মেয়েদের দিকে চোখ তুলেও এখন তাকায় না বিষয়টা হাস্যকর না রে আপু…..
মিতিঃহ্যাঁ নিরব,,,,কি হয়ে গেলো তোমার,,,,,আর নিহান তুমি কেনো ইতির সাথে এমন করছো,,,,,তোমাদের মনে আছে আমরা বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে হোটেলে গিয়ে উঠতাম,,,,তারপর দুটি রুম ভাড়া করে ইতি নিহান এক রুমে আর আমি তুমি এক রুমে কত ফুর্তি করেতাম,,,,,একদিন নয় এমন আমরা প্রায় করতাম,,,,, তোমরা কি সব ভুলে গেলে,,,,,
নিরবঃসাট আপ মিতি,,,,,লজ্জা করে না তোমাদের এমন কথা বলতে,,,,,মেয়ে হয়েও নিজেদের ইজ্জত এতো সস্তা তোমাদের কাছে,,,,,যানো তোমাদের মতো মেয়েদের সাথে শুধু টাইম পাস করা যায় ভোগ করা যায় ভালোবাসা যায় না আর তার প্রমান তোমরাই করলে,,,,,আমরা দুজন তো তখন লাগামহীন ঘোড়া ছিলাম দুজনকে সঠিক পথ দেখানো কারো দ্বারা সম্ভব ছিলো না,,,,,কিন্তু এখন আমরা সঠিক পথে এসেছি আর জীবনের সব পাপ ধুয়ে ফেলার চেষ্টায় আছি,,,,,আর আশা করি তোমরা আমাদের রাস্তায় আসবে না আর নিজেরা নিজেদের মতো হয়ে থাকবে,,,,,,
নিহানঃআর আরেকটা কথা তখন আমরা কেউই এসবে সিরিয়াস ছিলাম না,,,,,আমাদের থেকে তোমরাই বেশি বলতে যে তোমরা এসবে সিরিয়াস না,,,,শুধুই টাইম পাস ছিলো ওসব তোমাদের জন্যও,,,,,আর এমনতো নয় আমরা ছাড়া তোমরা আর কোনো ছেলের সাথে থাকো নি,,,,,তোমাদের সম্পর্কে আমরা ভালো করেই জানি মিতি ইতি,,,,,প্লিজ আজ থেকে আমাদের পাশে আসারও চেষ্টা করবে না আর হ্যাঁ তোমরা যদি নিজের ইজ্জতকে সম্মান করো তবে কোনো ছেলেরই ক্ষমতা হবে না তোমাদের ইজ্জতকে সস্তা ভেবে তা ভোগ করতে আসার,,,,,আশা করি কথাটাতে আমল করবে তোমরা,,,,,,,, চল ভাইয়া,,,,,
(চলে গেলো নিহান নিরব,,,,,মিতি ইতি জায়গায় দাঁড়িয়ে রাগে হাত পা ছুঁড়ছে,,,,,)
মিতিঃআমার মনে হচ্ছে এই দুই ভাইয়ের মাথায় ঐ নিধীর ভুত চেপেছে…..(দাঁতে দাঁত চেপে)
ইতিঃআমারও তাই মনে হচ্ছে আপু,,,,,,
(এদিকে কথা দৌঁড়ে চলে যায় ওর রুমে আর ফ্লোরে লুটে পড়ে কান্না করতে শুরু করে দেয়,,,,,ওকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে নিধীও ওর সাথে আসে,,,)
নিধীঃকথা কি হয়েছে কান্না করছো কেনো,,,,,(কথাটা নিধী কথার কাছে বসে ওর কাঁদে হাত রেখে বলে,,,,,কথা তৎক্ষনাৎ পিছন মুড়ে নিধীকে আকরে ধরে কেঁদে দেয়,,,,)
কথাঃআপু,,,,,আমি উনাকে অনেক ভালোবাসি আপু,,,,,আজ পর্যন্ত কাউকেই কথাটা বলি নি কিন্তু তোমাকো কেনো যেনো নিজের আপন মনে হয়,,,,,নিজের বড় বোন মনে হয় তাই তোমাকে বলছি আপু,,,,,আমি উনাকে অনেক ভালোবাসি আপু আমার আল্লাহ কেনো আমায় এমন মানুষের প্রেমে ফেললেন যাকে আমি পাবোই না,,,,,কখনো
নিধীঃকথা বোন আমার,,,,,তুমি আমার ছোট্ট একটা বোন,,,,সবসময় বাবা-মায়ের কাছে ছোট্ট একটা বোন আবদার করতাম আল্লাহ যে এইভাবে একটা বোন দিয়ে দিবেন কখনো ভাবি নি,,,,,কাঁদে না লক্ষি বোন আমার,,,,(কথার চোখের পানি মুছে দিয়ে) এবার বলো কাকে ভালোবাসো,,,,আর তুমি কেনো তাকে পাবে না,,,,,
কথাঃবড় সাহেবকে,,,,,সেই ছোটবেলা থেকেই আমি উনাকে পছন্দ করতাম তারপর বড় হওয়ার পর এই পছন্দ ভালোবাসায় পরিনত হয়েছে,,,,,আমি উনাকে অনেক ভালোবাসি,,,,কিন্তু তা কখনো বলি নি আর কখনো বলতেও পারবো না,,,,,আর বলেও তো কোনো ফায়দা নেই উনি তো আমায় ভালোবাসেন না,,,,,উনি তো মিতি আপুকে ভালোবাসেন,,,,,
নিধীঃকে বলেছে স্যার মিতিকে ভালোবাসেন,,,,
কথাঃতুমি জানো না আপু আমার বয়স যখন ১৫ মিতি আপুর বয়স তখন ১৭ ছিলো সেই সময় থেকেই দেখে এসেছি মিতি আপুর সাথে বড় সাহেবের কারনামা,,,,,অনেক কিছুই আমি দেখতাম তারপর আড়ালে এসে এভাবে ঢুকরে কাঁদতাম,,,,, নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্যের সাথে দেখা,,,সহ্য করা কতটা কষ্টের তা তুমি বুঝবে না আপু,,,,,আর আজও তো মিতি আপু উনাকে জড়িয়ে(এটা বলে আর কিছু বলতে পারলো না কথা কান্নায় আবার ভেঙে পড়লো,,,,,)
নিধীঃআমি জানি কথা ভালোবাসার মানুষটাকে অন্যের সাথে দেখা কতোটা কষ্টকর হয়,,,,আর যখন সেই ভালোবাসার মানুষটা অবহেলা করে তখন তা যে কি পীড়া দেয় তা সেই বুঝে যার সাথে এটা হয়,,,,(কথাটা শুনে কথা খনিক অবাক হয়ে নিধীর দিকে তাকায়,,,,,নিধীর কথার গভীরতা যেনো বুঝতে চাইছে কথা,,,,কথাগুলো যেনো নিধীর মনের গভীর থেকে আসা মনে হচ্ছে,,,,যেখানে লুকিয়ে আছে যেনো কথার কষ্টের থেকেও বেশি কষ্ট,,,নিধী তখন কথার চাহনি বুজতে পেরে কথা পাল্টে নেয়)
নিধীঃশোনো কথা শরীরের মেলামেশা আঙ্গাআঙ্গি হলেই যে তা ভালোবাসা প্রমাণ করবে তা সত্য নয়,,,,,ভালোবাসা শুধু শরীরের টান না মনের টান হয়ে থাকে,,,,,হ্যাঁ আমি জানি স্যারের সাথে মিতির এমন সম্পর্ক ছিলো,,,,,কিন্তু এসব সম্পর্ক শুধু মিতির সাথে না অনেকের সাথেই ছিলো স্যারের,,,,কিন্তু এর মানে এটা নয় যে স্যার এদের সবাইকে ভালোবাসতেন,,,,,তুমি ভালো করেই জানো নিধী সবাইকে ভালোবাসা যায় না,,,,,আর আমি যতটুকু জানি স্যার এখন অনেক পাল্টে গেছেন উনি এখন আর আগের মতো অভদ্র নয়,,,,,তাই তুমি হার মেনো না আমি আছি না আমি সব ঠিক করে দেবো,,,,,
কথাঃসত্যি আপু আমি উনাকে পেতে পারি,,,,,
নিধীঃতোমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয়ে থাকে তবো তুমি উনাকে পাবেই ইনশাআল্লাহ,,,,,, সত্য ভালোবাসার জোরটা আলাদাই হয়ে থাকে,,,,,,এবার কান্না বন্ধ করো আর লক্ষি মেয়ের মতো একটা হাসি দাও,,,,
(তারপর কথা বড় একটা হাসি দিয়ে নিধীকে জড়িয়ে ধরে নিধী হাসি মুখে ওকে জড়িয়ে ধরলেও আবার মুখ ঘোমড়ো করে কথাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায়,,,,,)
(তারপর রাতে নিধী উপর থেকে নামছিলো,,,,,নিধীকে আসতে দেখে মিতি ইতি সিঁড়িতে তেল ফেলে পালিয়ে যায় যাতে নিধী পড়ে ব্যাথা পায়,,,,সিঁড়ি অনেক উপড়ে ওখান থেকে পড়লে হাত পাও ভাঙতে পারে,,,, এমনকি মাথাও ফাঁটতে পারে,,,,,নিধীর খেয়াল করে নি তেল যে পড়ে আছে ওর সাথে কথাও ছিলো দুজনই কথা বলতে বলতে আসছিলো তখনই কথার নজর পড়ে তেলগুলোর দিকে আর নিধীকে সাথে সাথে আটকে নেয় কথা,,,,, তখন নিধীকে বাঁচাতে গিয়ে কথার পা তেলে পড়ে যায় আর কথা তখন নিচে পড়ে যাবে এর আগেই চলে আসে নিরব,,,,,ও এদিকেই আসছিলো কথাকে পড়তে দেখে ধরে নেয়,,,,,,কথা আবারও নিরবের চোখে হাঁড়িয়ে গেছে,,,,,এটা আড়াল থেকে দেখছে মিতি ইতি)
মিতিঃইশ ফেলতে চাইছিলাম নিধীকে মাঝখান থেকে এই কথা পাকনামি করতে গেলো কেনো,,,,আর নিরবও আসার সময় পেলো না,,,,,ধুর,,,,,(রাগে মিতি আবারও হাত পা ছুরছে,,,,,ইতি ওকে ভুলিয়ে ভালিয়ে রুমে নিয়ে গেলো)
নিরবঃএই শাঁকচুন্নি দেখে হাটতে পারিস না এখনই কোমড়টা ভেঙে যেতো,,,,,পরাধরা ছাড়া কাজ নেই তোর,,,,,আর এই এখানে তেল ফেলে কে রেখেছে,,,,,এখানে মানুষকে মারার প্লান হচ্ছে না কি,,,,,,(খনিক চিল্লিয়ে নিরবের কথা শুনে চাকরগুলো সব দৌঁড়ে এসে সিঁড়ি ক্লিন করতে লেগে যায়,,,,)
নিধীঃ(অস্থির হয়ে) কথা তুমি ঠিক আছো তো??কিছু হয়নি তো তোমার,,,,
কথাঃ(নিধীর কথায় ঘোর ভাঙলো কথার এতক্ষণ তো ঘোরলাগা নয়নে তাকিয়ে ছিলো নিরবের দিকে,,,,,এবার আমতা আমতা করে বললো),,,,,,হ্যাঁ আপু আমি একদম ঠিক আছি,,,,,(এটা বলে নিধী আবারও লজ্জামাখা হাসি দিয়ে রুমে দৌঁড় দিলো,,,,,নিধী তাকিয়ে থাকলো ওর যাওয়ার পথ দিয়ে তখন)
নিরবঃতুমি ঠিক আছো তো নিধী,,,,,কিছু হয় নিতো তোমার,,,,,
নিধীঃনো স্যার আমি একদম ঠিক আছি,,,,,(বলে চলে গেলো নিধী)
(রাত তখন প্রায় ১২ টা নিহান রুমে বসে নিধীর ছবি আঁকছিলো,,,,,তখনই নিধী দরজায় নক করে,,,,নিহান অন্য কেউ ভেবে সাথে সাথে ছবিটা ঢেকে নেয়,,,,আর ভিতরে আসার পারমিশন দেয়,,,,নিধীকে দেখতেই নিহান হতবম্ভ)
নিহানঃআরে নিধী তুমি এতো রাতে তাও আমার রুমে,,,,,কি হয়েছে কিছু চাই বুঝি তোমার,,,,কিছু বলবে,,,,,কিছু লাগবে তোমার,,,,না কেউ কিছু বলেছে তোমায়,,,,,আসলে এতো রাতে তুমি আমার ঘরে এসেছো নিশ্চয়ই কোনো বড় কারন হবে,,,,,তুমি বলো আমায় কোনো প্রবলেম হয় নি তো তোমার সাথে,,,,তুমি তো আমাকে পশেই সহ্য করতে পারো না আর আজ এইভাবে আসলে কি হলো নিধী বলো,,,,নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে কি হয়েছে বলো নিধী,,,,,,(একশ্বাসে বললো কথাগুলো নিহান,,,,,নিধীকে এভাবে এতো রাতে ওর রুমে দেখে যে ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না,,,,,)
নিধীঃআরে আরে কি করছেন,,,,শ্বাস নিন,,,,,শান্ত হোন আমি আসলে দরকারেই এসেছি আপনার কাছে কিন্তু আমার কোনো প্রবলেম হয় নি,,,,,
নিহানঃঠিক আছে,,,,তবে বসো এখানে,,,,,(বেডের দিকে ইশারা করে)আর বলো আমি কি হেল্প করতে পারি তোমাকে,,,,তুমি একবার বলো আমি তোমার জন্য সব করবো,,,,
নিধীঃআমার জন্য আপনাকে কিছুই করতে হবে না,,,,আমি নিজের জন্য সব একাই করতে পারি(কথাটা শুনে নিহানের মুখের হাসিটা খনিকেই মলিন হয়ে যায়,,,,,নিধী আবার বলে)আমি এখানে কিছু জানতে এসেছি,,,,,
নিহানঃকি জানতে চাও বলো,,,???
নিধীঃআপনি তো নিরব স্যারের খুব ক্লোজ,,,,,আপনি কি বলতে পারবেন স্যার কথাকে নিয়ে কি ভাবেন,,,,মানে ওকে নিয়ে উনার অনুভূতি কি??
নিহানঃকথাকে নিয়ে,,,,,ওতো একটা বাচ্চাসুলভ ঢল,,,,,আমি ওকে নিজের ছোটবোনের মতোই দেখি,,,,,কিন্তু ভাইয়া ওকে নিজের বন্ধুর চোখে দেখেন,,,,জানো নিধী ভাইয়া এমন মানুষ যার বন্ধু খুব কম,,,,,ভাইয়া বন্ধু বানাতে পছন্দ করে না,,,,আর মেয়েদের তো সবসময় ভোগপণ্যই মনে করতো তবে এখন শোধরে গেছে এখন মেয়েদের সম্মান করে,,,,,কিন্তু জানো নিধী কথাকে কখনো ভাইয়া ওই নজরে দেখে নি,,,,,কথাকে সবসময় একটা সম্মানের চোখে দেখতো,,,,আর এখনও দেখে,,,,,ছোটবেলায় আমরা দুজন যা খেলাধুলা সব কথার সাথেই করেছি,,,,যখনি ও এখানে আসতো আমরা দুজন খুব খুশি হতাম কারন ও অনেক খেলা জানতো,,,,আমি নিজের ছোট বোন ভেবে ওর সাথে লাগালাগি করতাম আর ভাইয়া নিজের বন্ধু ভেবে,,,,,আমি ভাইয়াকে আমি পরে একমাত্র ওর সাথেই বাচ্চামো অবস্থা করতে দেখেছি,,,,,তবে তুমি এসব কেনো জানতে চাইছো নিধী,,,,,
নিধীঃএমনিতেই,,,,ওকে আমি এবার চলি(এই বলে নিধী উঠে চলে যেতে নিলে নিহান ওর হাত ধরে নেয়,,,,,নিধী সাথে সাথে রাগি লুকে তাকায় নিহানের দিকে,,,,নিহান সাথে সাথে হাত ছেড়ে সরি বলে,,,,, নিধী আবার চলে যেতে নিলে)
নিহানঃআসলে নিধী তুমি সকালে ছাঁদে যা দেখেছো তা সত্যি ছিলো না,,,,,ইতির সাথে এখন আর আমার কোনো সম্পর্ক নেই,,,,,ও তখন কোথা থেকে এসে আমায় জড়িয়ে ধরেছিলো আমি জানতাম না আর ওকে ছাড়ানোর আগেই তুমি চলে এলে,,,,,আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি নিধী,,,,আমি শুধুই তোমার,,,,,
নিধীঃ(কোনো রিয়াক্ট না করে)অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়েন,,,,(এটা বলে নিধী চলে যাবে আবার এর আগেই নিহান ওর সামনে আসে ওকে আটকে আরও কিছু বলবে বলে কিন্তু ব্যালেন্স হারানোতে দুজনই বেডে পড়ে যায়,,,,,দুজনেই যেনো চোখে চোখে কথা বলছে,,,,বাইরে প্রচুর বাতাস বইছে,,,,,নিহান তখন হারিয়ে গেছে নিধীর চোখে,,,,,নিধীর যেনো তৎক্ষনাৎ অতীতের সেই তিক্ত স্মৃতি মনে পড়ে গেলো আর তখন ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো নিহানকে ওর উপর থেকে,,,,তারপর উঠে চলে যেতে নিলে চোখ পড়লো সেই পেন্টিংটার উপর বাতাসে পেন্টিংটার উপর থেকে কাপড় সরে যায় আর নিধীর চোখে স্পষ্ট ভেসে উঠে নিধীর সেই নিখুঁত ছবিটা যেটা নিহান একেছে,,,,,সেই কলেজ ক্যাম্পাসে বসে থাকা সরল সহজ নিধীকে একেছে নিহান,,,,,খনিকে নিধীর অতীত যেনো ওর চোখে আরও গাঢ় হয়ে উঠলো,,,,,নিধী আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না সেখানে ছুটে চলে গেলো,,,,,,নিহান কিছুই বুঝতে পারলো না বোকার মতো তাকিয়ে রইলো,,,,,)
চলবে…….