#দোটানা,পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃআরোহী_নুর
(কথার নিস্তেজ শরীর পড়ে থাকতে দেখে নিরব নিধী ছুটে গেলো ওর কাছে নিধী কাপর দিয়ে ভালো করে ওর হাত পেঁচিয়ে নিলো যাতে বেশি রক্ত না যায়,,,,,নিরব আর দেড়ি না করে ওকে কোলে তুলে নিলো আর নিয়ে গেলো ওকে হাসপাতাল,,,,,,আদনান নিরব নিধী আর মিজান ওর সাথে হাসপাতাল এসেছেন,,,,,নিহান আসতে চাইলেও নিধী আর বাকিরা ওকে আনে নি যেহেতু ও অসুস্থ ওর রেস্ট দরকার,,,,,ডাক্তারেরা কথাকে দেখছেন বাইরের বেঞ্চে বসে আছে নিরব,,,,মিজান আদনান বাইরে গেছেন হয়তো কোনো প্রয়োজনে নিধী দাঁড়িয়ে আছে নিরবের পাশে,,,,,নিরব এক ধ্যানে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে কোথাও না কোথাও নিজেকেই দোষী মনে হচ্ছে এসবের জন্য,,,,,কথা আজ ওর কষ্ট দূর করতে গিয়ে নিজেই সমাজের চোখে খারাপ উপাধী টা পেয়ে গেলো যে জায়গায় ওরা এমন কিছুই করে নি,,,,,কিন্তু এসব কি হলো কেমনে হলো তাই ভেবে পাচ্ছে না নিরব,,,,হঠাৎ নিরব ওর কাঁধে কোনো এক সাহারার স্পর্শ পেলো চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে নিধী,,,,,আবারও চোখ নামিয়ে ফেললো,,,,,হয়তোবা নিধীর সাথে চোখ মিলানোর ক্ষমতা ওর নেই,,,,তারপর নিধী ওর পাশে বসলো,,,,,)
নিরবঃআমি জানি না নিধী এসব কি থেকে কি হয়ে গেলো,,,,,কিন্তু বিশ্বাস করো আমাদের মাঝে এমন কিছুই হয় নি,,,,,কিন্তু আজ এই এক মিথ্যার জন্য কথা মরতে বসেছে,,,,,শুধু আমার জন্যই সব হলো নিধী,,,,,
নিধীঃআপনার জন্য কিছু হয় নি স্যার,,,,,আসলে পৃথিবীটাই এরকম আসল সত্য কেউ জানতে চায় না যা চোখে দেখে তাই বিশ্বাস করে,,,,,কেউ সত্যটা যাচাই করতে চায় না,,,,আর একটা মেয়ের কোনো খারাপ সাইড দেখতে পেলে যতক্ষণ তার বাঁচার আশাটা শেষ না করে দিয়েছে ততক্ষণ সমাজের কিছু হিংস্র মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে না,,,,,এখানে আপনার কি দোষ,,,,আমি জানি আপনাদের মাঝে এমন কিছুই হয় নি,,,,কিন্তু সমাজের চোখে তো কথা খারাপের তালিকায় চলে গেছে আর তাকে বাঁচাতে শুধু আপনি পারেন,,,,,(কথাটা শুনে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায় নিরব নিধীর পানে,,,,নিধী আবার বলে উঠে)
নিধীঃআশা করি আপনি আমার কথা বুঝতে পারছেন যে আমি কি বলতে চাইছি আপনাকে,,,,,দেখেন স্যার আমি জোর পূর্বক আপনার ঘাড়ে কথাকে চাপিয়ে দিতে চাইছি না,,,,,কিন্তু কথাকে নতুন জীবন দান করতে চাইছি,,,,,ও এমন মেয়ে যে এ কলঙ্ক নিয়ে বাঁচতে পারবে না,,,,,ওর কাছে কলঙ্ক নিয়ে বাঁচার চেয়ে মরাটাই সহজ মনে হয়েছে তাই ও তা করেছে জ্ঞান ফিরলে যে তা আর করবে না তার কি গ্যারান্টি,,,,আর বেঁচে থাকলেও কি হবে এই সমাজ ওকে শান্তিতে বাঁচতে দিবে না,,,,,আমি চাই না এই সমাজ ওকে আমার মতো পাথর বানিয়ে দেক,,,,আমার জীবনে না হলেও আলো এসে গেছে কথার জীবনে যে আলো ফিরে আসবে তার কি কোনো আশা করা যায়,,,,তাই যাতে ওর জীবনের আলোটা না নিভে তার চেষ্টা করতে চাইছি আমি,,,,
নিরবঃহ্যাঁ আমিও ওকে নতুন জীবন দিতে চাই,,,,,কিন্তু ও তো আমায় ভালোবাসে না,,,,,আর আমিও তো তোমা,,,,,(কথাটা বলতে গিয়ে আর বললো না,,,কিন্তু নিধী ঠিকই বুঝতে পারলো,,,,)
নিধীঃকথা আপনাকে ভালোবাসে,,,,,(কথাটা শুনে নিরব অশ্চর্যের সহিত তাকায় নিধীর দিকে) হ্যাঁ স্যার কথা সেই ছোটবেলা থেকেই আপনাকে পছন্দ করে,,,,,তারপর ধীরে ধীরে আপনাকে ভালোবেসে ফেলে,,,,,কখনো বলে নি আপনাকে হয়তো ভিতরে এতোটা আত্নবিশ্বাস ছিলো না ওর আপনাকে পাবে বলে তাই হয়তো হারাবোর ভয়েই বলতো না,,,,,আপনাকে দূর থেকে ভালোবেসে কাটিয়ে দিতে চাইছিলো সারা জীবন,,,,,আমি জানি আপনি ওকে ভালোবাসেন না কারন আপনি আমাকে(নিধীও কথাটা পূর্ণ করলো না,,,,একটু থেমে গিয়ে বললো),,,,,আসলে স্যার ভালোবাসাটা আজব হয়ে থাকে কাউকে সুখ দেয় তো কাউকে কষ্ট,,,,,, কিন্তু এর সাথে মানিয়ে নেওয়াই জীবন,,,,,আমি হয়তো আপনার কষ্টটা কমাতে পারবো না কিন্তু আপনি চাইলে কথার কষ্টটা কমাতে পারবেন,,,,,আর ভালোবাসার কি ওটা তো এমনিতেই হয়ে যায়,,,,,আপনি জানেন এই দেশের বেশিরভাগ মানুষের এখনও এরেন্জ মেরেজ হয় কিন্তু ওদের সংসার কি টিকে না,,,,,ওদের মধ্যে কি ভালোবাসা জন্মায় না,,,,আসলে জানেন কি স্যার একই ঘরে একই ছাঁদের নিচে একজন মানুষের সাথে থাকতে গেলে তার জন্য মনের কোনে একটা টান এসেই যায়,,,,,হয়তোবা আজ আপনি কথাকে ভালোবাসেন না কিন্তু এমনওতো হতে পারে কথার ভালোবাসা আপনাকেও একদিন বাধ্য করবে ওকে ভালোবাসতে,,,,,জানেন স্যার প্রথম ভালোবাসার স্থান কাউকেই দেওয়া যায় না এটা আমিও জানি কিন্তু মানুষের জীবনে যে প্রেম দ্বিতীয় বার আসে না এমন তো নয়,,,,,আর কেউ কাউকে কারো জায়গা দিতে পারে না স্যার মানুষ নিজেদের জায়গা বানিয়ে নেয়,,,,,দেখেন স্যার আমি আপনাকে বাধ্য করছি না শুধু আমার অপিনিয়ন টা বললাম এখন ডিসিশন আপনার আপনি যে ডিসিশন নিবেন আমি সেটার সাথেই থাকবো,,,,,(নিরব নিরবে বসে রইলো নিধীর বলা কথাগুলো ভাবছে কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বেড়িয়ে বললেন কথা এখন আউট অফ ডেঞ্জার,,,,,, দুজনই কথার সাথে দেখা করতে গেলো ওর এখনও জ্ঞান ফিরে নি,,,,,,নিধী গিয়ে কথার পাশে বসলো,,,,,নিরবও কিছু সময় সেখানে দাঁড়িয়ে কথার মাথায় হাত বুলিয়ে বেড়িয়ে এলো কেবিন থেকে হয়তো বেশি সময় সেখানে থাকতে পারবে না কারন নিধী সেখানে বসে আছে ওর সামনে থাকলে নিজের আবেগ আটকে রাখতে পারবে না,,,,বাইরে গিয়ে বেঞ্চে বসলো একটু পরেই ভিতর থেকে চেচামেচির শব্দ পেয়ে ছুটে ভিতরে গেলো গিয়ে দেখে কথার জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু নিজেকে শেষ করে দিতে চাইছে আবার দুজন নার্স আর নিধী মিলে ওকে আটকাতে পারছে না,,,,,)
কথাঃছেড়ে দাও আমায় নিধী আপু আমি আর বাঁচবো না,,,,,,কি লাভ আমার এই জীবন রেখে বাবা মা ছোট বেলাই রেখে চলে গেছে মানুষের মারধর খেয়ে বাঁচার জন্য,,,,যাকে ভালোবাসি সেও অন্য কাউকে ভালোবাসে,,,,,,যেভাবেই পারি হাসিখুশি জীবনটা কাটাতে চেয়েছিলাম তাও ও হলো না এই পুড়া ভাগ্যে,,,,,কলঙ্কের ছাঁপ লেগে গেলো মাথায় এবার কি করে বাঁচবো এই কলঙ্ক নিয়ে,,,,,আমি যে এই কলঙ্ক নিয়ে বাঁচতে পারবো না আপু,,,,,কেউ মুছতে পারবে না এই কলঙ্ক তাই আমি নিজেকেই মুছে দিবো,,,,,
নিরবঃআমি মুছবো তোর কলঙ্ক,,,,,(দরজার দিক থেকে গম্ভীর আওয়াজটা আসায় সবাই দরজার দিকে নজর দিলো নিরব দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথাটা বললো,,,,,কথাটা শুনে কথা ওর দিকে প্রশ্নমাখা একটা দৃষ্টিতে তাকালো,,,,,কিছুই ও বুঝতে পারছে না,,,,,নিরব এবার ওর কাছে গেলো আর বললো)
নিরবঃআজ আমার জন্যই তোর মাথায় কলঙ্ক লেগেছে না আর আমিই তোর এই কলঙ্ক মুছবো,,,,,আগামীপরশুই আমাদের বিয়ে হয়ে,,,,,সবার সামনে আমি তোকে স্ত্রীর মর্যাদা দেবো,,,,,(কথাটা শোনার পর কথা নিজের কানকে যেনো বিশ্বাস করতে পারলো না কিছু সময় সেখানে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তারপর ঝাপটে পড়লো নিরবের বুকে,,,,,শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে দিলো,,,,,নিধী তখন ওদের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে,,,,তখন নিরব নিধীর দিকে তাকালো,,,,,নিধী ঠোঁটের কোনে একটা সুন্দর মুচকি হাসি টেনে নিরবে ইশারা করে চোখ ঝাপটে বুঝালো যে ও যে ডিসিশন নিয়েছে একদম ঠিক নিয়েছে,,,,,তারপর নিরবও সাহারাময় হাতে জড়িয়ে ধরলো কথাকে,,,,,সেখানে কথাকে একদিন রাখা হলো পরেরদিন সকালে ওকে ছেড়ে দেওয়া হলো,,,,,,আর এর পরেরদিন বিকেলেই তাপঝাপ করে ওদের বিয়ের কাজটা সেরে ফেলা হলো ঘরোয়া ভাবেই,,,,,হুট করে এসব তাই ধুমধাম করে বিয়েটা মানাবে না,,,,,পরিস্থিতি তো মানতে হবে,,,,,সবাই ডিসাইড করলো নিধী নিহানের বিয়ের সময় ওদের বিয়েটাও আবার ধুমধাম করে দেওয়া হবে,,,,,এখানে নিধী নিহানের জোরটাই বেশি ছিলো,,,,,নিধী নিহান একাকিত্বে ডিসাইড করেছে যে ওরা এখন বিয়ে করবে না কারন নিরবের জখমটা এখন তাজা তাই ওদের বিয়েটা নিরব সহ্য করে উঠতে পারবে না,,,,,ওদের নিরবকে নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা,,,,, ওরা তো এটাও ডিসাইড করেছে যে নিরবের সামনে ওরা একসাথে আসবেই না যাতে নিরবের ওদের দেখে কষ্ট না হয়,,,,যাতে নিরব নিজের পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারে সেদিকে ওরা খেয়াল রাখবে আর নিহানেরও মাস্টার্স কমপ্লিট করতে এখনও আরও ছয় মাস বাকি তাই ওরা ডিসাইড করলো বিয়েটা ছয় মাস পরেই করবে,,,,,এদিকে বিকেলে বিয়ের আগেই আয়শা ওর মেয়েদের নিয়ে চলে যাবার বায়না ধরলো একপ্রকার অভীমান করে চলে গেলো যেহেতু ওর মেয়েদের ডাল এখানে গলে নি,,,,,মিতি ইতি যেতে চাইছিলো না প্রথমে কিন্তু নিরব বাড়ি আসার পরই ইতি মিতিকে আড়ালে ডেকে নিয়ে ওয়ার্নিং দিয়ে দিয়েছে যাতে কথা বা নিধীর পিছন ওরা আর লাগতে না আসে,,,,,নিরবের কাছে কোনো প্রমান না থাকলেও ও এটা ভালোয় বুঝতে পেরেছে যে কাজটা ওরা করেছে কারন ও ওদের ভালো করে চেনে,,,,,নিরব ওদের ওয়ার্নিং দিয়েছে যে যদি আবার ওদের কোনো কিছুতে দেখেছে তবে ও ওদের নিজের আসল রুপ দেখাবে,,,,,নিরবের রাগটা দুজনের ভালোই জানা আছে তাই আর এখানে থাকতে চাইলো না কারন ওরা জানে এখানে থাকলে ওরা তো আর নিধী কথার সাথে লাগতে যাবেই আর নিরব ওদের ছাড়বে না,,,,,,তারপর ওরা চলে গেলো আদনান সাহেব উনার স্ত্রী মা সবাই ওদের আটকাতে চাইলেও ওরা থাকলো না,,,,,আয়শা বেগম রাগ করেই চলে গেলেন,,,,,উনাকে আর উনার মেয়েদেরকে ডেকে এনে না কি অপমান করা হয়েছে,,,,,মিজান সাহেবও নিজের স্ত্রীকে বুঝাতে ব্যার্থ হলেন,,,,,তারপর ওরা চলে যাওয়ার পর নিরবের বিয়ে হয়ে গেলো কথার সাথে,,,,,কোনে ধুমধাম না হলেও নিধী কথাকে সুন্দর করে সাজাতে ভুললো না,,,,,কথার মায়ের বিয়ের শাড়ী পড়িয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো ওকে,,,,,একজন কাজি ডেকে এনেই বিয়ে সম্পন্ন হলো ওদের,,,,,ওদের বাসর ঘরটাও খনিক ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিলো নিধী,,,,,বিয়ের পর নিরব না জানি কোথায় বেড়িয়ে গেলো হয়তো এতোকিছু অল্পক্ষণে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো তাই বাইরের কিছু খোলা হাওয়া খেতে গেছিলো,,,,,এদিকে রাতে নিধী কথাকে নিরবের রুমে বসিয়ে রেখে গেলো,,,,,কথা নিধীকে ধরে তখন অনেক কাঁদলো)
কথাঃআপু উনি আমায় বিয়ে করেছে ঠিকই কিন্তু শুধু দায়িত্ব মনে করে উনি তো আমায় ভালোবাসেন না,,,,
নিধীঃবাসেন না তো কি হয়েছে তুমি কি পারবে না সে ভালোবাসা আদায় করতে,,,,,বিশ্বাস রাখো তোমার ভালোবাসা একদিন উনাকে ঠিকই তোমার করেই দিবে ইনশাআল্লাহ এবার কান্না বন্ধ করো আর উনার অপেক্ষা করো,,,,কেমন,,,,এখনি হয়তো চলে আসবেন উনি,,,,(তারপর নিধী ওর চোখের কান্না মুছে দিয়ে চলে গেলো,,,,একটু পরে নিরব রুমে প্রবেশ করলো,,,,,কথা বেড থেকে নেমে এসে ওকে সালাম করলো,,,,,,)
নিরবঃআসলে কথা আমার স্ত্রী হিসেবে তুই যা যা মান্য করবি আমি কখনো তাতে বাধা দিবো না,,,,যেহেতু আমি তোকে বিয়ে করেছি তবে একদিন না একদিন তোকে স্ত্রীর মর্যাদা দিবোই,,,,,,কিন্তু আমার তোকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে খনিক সময় লাগবে আশা করি তুই বিষয়টা বুঝতে পারছিস,,,,,নিধীর জায়গা হয়তো তোকে কখনো দিতে পারবো না কিন্তু তোকে তোর প্রাপ্য ভালোবাসা দেওয়ার চেষ্টা নিশ্চই করবো,,,,,কিন্তু তোকে আমায় একটু সময় দিতে হবে,,,,,,,
কথাঃআপনার যত সময় লাগে আপনি নিন আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই,,,,, আপনার ছায়াটা মাথায় পেয়েছি এটাই অনেক,,,,,তবে আজ একটা জিনিস চাই আশা করি তার জন্য মানা করবেন না,,,,
নিরবঃবল??
কথাঃদুরাকাত নফল নামায পড়তে চাই,,,,,আসলে বিয়ের রাতে নামায পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে হয় তাই আমি আপনার সাথে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে চাই আপনার মতো একজন ভালোমানুষ কে আমার জীবনসাথী করে দেওয়ার জন্য,,,,কিন্তু যদি আপনি চান তবে,,,,,
নিরবঃহুম এতে আমার কোনো প্রবলেম নেই,,,,,যা গিয়ে ফ্রেস হয়ে আয়,,,,,(তারপর দুজন ফ্রেস হয়ে ওযু করে নামায পড়ে নেয়,,,,,তারপর নিরব বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ে,,,,,কথা বালিশ নিয়ে সোফায় চলে যাবে তখনি)
নিরবঃতুই আমার সাথে বেডেই ঘুমাতে পারিস,,,,,আমার এতে কোনো সমস্যা নেই,,,,,(কথা কথাটা শুনার পর নিরবের বেডের এক পাশে এসে শুয়ে পড়লো ঘরের লাইট ওফ করে ডিম লাইট ঝালিয়ে কিন্তু দুজনেরই ঘুম আসছে না দুজন দুদিকে মুখ করে শুয়ে আছে দুজনেরই চোখ বয়ে জল গড়াচ্ছে,,,,,একজনের ভিতর ভালোবাসা হারানোর কষ্ট কাজ করছে আর অন্যজনকে ভালোবাসাকে কাছে পেয়েও ওর থেকে দূরে থাকার কষ্ট আঁকড়ে ধরেছে,,,,,কিছুক্ষণ পর নিরব বলে উঠলো)
নিরবঃআমি জানি তুই ঘুমাস নি,,,,যদি কিছু মনে না করিস তোর কোলে একটু ঠাই দিবি আমায়,,,,(কথা নিরবের কন্ঠে বেদনা অনুভব করতে পারছে,,,,,বুঝতে পারছে নিরব সাহারা খুঁজছে,,,,,তাই কথা উঠে বসে বললো)
কথাঃআমি কেনো কিছু মনে করবো,,,,,আমার কোলে ঘুমানোর অধিকার যে আজ আপনি তিন বার কবুল বলেই কিনে নিয়েছেন,,,,,আপনাকে নিজের কোলে ঠাই দিয়ে যে নিজের মনেই তৃপ্তি পাবো,,,,কথাটা শুনার পরই নিরব চট করে চলে এলো কথার কোলে বাচ্চাদের মতো আঁকড়ে ধরলো ওকে,,,,,মুখটা গুজে নিলো ওর কোলে,,,,কথা বুঝতে পারছে ওর কষ্টটা,,,,কিন্তু ওর কি আর করার আছে,,,,মাথায় হাত বুলাতে থাকলো শুধু,,,,,নিরবে চোখের জল ফেললো মানুষটার কষ্টে,,,,,নিরব যেনো কথার কোলেই হারানো শান্তিটা খুঁজে পায় তাই আবদার করে ওর কোলে আসলো,,,,,তারপর ঘুমিয়ে পড়লো ওর কোলে,,,,,কথাও বিছানার সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো,,,,,এদিকে নিহান নিধী ছাঁদে বসে আছে,,,,,,নিধী নিহানের বুকে মাথা গুজে চাঁদ দেখছে,,,,,)
নিধীঃজানো নিহান অনেক ভয় হচ্ছে আমার স্যার আর কথাকে নিয়ে ওরা সুখী হবে তো,,,,,
নিরবঃএতো বড় কষ্ট কাটিয়ে সুখটা আসতে দেড়ি হলেও আসবে তুমি দেখে নিও,,,,,
নিধীঃসত্যিই আসবে,,,,,
নিহানঃহুম,,,,,হয়েছে এখন এসব চিন্তা বাদ দাও সবার চিন্তা করতে করতে নিজের কি হাল করেছো দেখতে পাচ্ছো,,,,,খাওয়া দাওয়ারও অনিয়ম করছো না তুমি,,,,আমি অসুস্থ থাকায় তো কদিন ধরে এসব খেয়াল করা হয় না আর তাই তুমি যা ইচ্ছা তা করছো,,,,,দাঁড়াও কাল থেকে তোমার ক্লাস নেওয়া শুরু হবে,,,,,
নিধীঃতুমিও না আমি একদম ঠিক আছি,,,,,এতো চিন্তা করতে হবে না আমায় নিয়ে,,,,,
নিহানঃ(নিধীর দুগাল ধরে ভালোবাসার স্পর্শ করে,,,,,)আমি খেয়াল না করলে কে করবে শুনি মেডাম,,,,,আমিই তো খেয়াল করবো আমার মেঘপরীকে,,,,ভালোবাসবো তাকে অসীম,,,,,(এটা বলে ঘোরলাগা অবস্থায় নিধীর ঠোঁটের দিকে আগাতে শুরু করে কিন্তু খনিকে ওর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে আটকে নেয় নিধী,,,,,)
নিহানঃএটা কি হলো??
নিধীঃআটকানো হলো,,,,,বিয়ের আগ পর্যন্ত নাথিং,,,,,
নিহানঃএকটা কিসও না,,,,,(ইনোসেন্ট মুখ বানিয়ে),,,,,বিয়ের তো এখনও ৬-৮ মাস বাকি,,,,,
নিধীঃতো এতোদিন কি ওয়েট করা যায় না মিস্টার,,,,,,
নিহানঃযাবে না কেনো আমি তো তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতেও রাজি,,,,,
নিধীঃআই লাভ ইউ নিহান,,,,,
নিহানঃআই লাভ ইউ টু নিধী,,,,
(তারপর একে ওপরকে জড়িয়ে ধরলো,,,,,তারপর থেকে স্বাভাবিক ভাবে চলতে শুরু করলো সবকিছু,,,,,নিধী এখন নিরবের সামনে তেমন আসে না,,,,,নিরবের কষ্ট হবে ভেবে,,,,,নিরবও ওদের সামনে যথেষ্ট শক্ত থাকার চেষ্টা করে কিন্তু কিছু লুকাতে পারে না কথার কাছ থেকে,,,,,দিনশেষে কথার সাহারায়ই শান্তি খুঁজে,,,,,অফিসেও নিধী এখন শুধু নিহানের পি.এ,,,,,নিরব অন্য পি.এ নিতে চাইলে নিধী কথাকে ওর পি.এ করার প্রোপোজাল দিলো যেহেতু ওর কোয়ালিশনও খারাপ না,,,,,নিরবও তাতে আর মানা করলো না যেহেতু কথা পাশে থাকলে নিরব যেনো ওর কষ্ট থেকে কিছুটা হলেও দূরে থাকে,,,,,প্রায় দু- মাস পরে নিধী আর নিহান মিলে ওদের হানিমুনে পাঠানোর প্লান করে কথাটা শুনে কথা অনেক খুশি হয় কিন্তু জবাবের আশায় চেয়ে থাকে নিরবের মুখপানে নিরব হয়তো প্রথম মানা করতো কিন্তু কথার এমন চাহনি দেখে মানা করতে পারলে না,,,,চলে গেলো হানিমুনে ওকে নিয়ে,,,,,অবশ্য ওদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক এখন অব্ধি হয়ে উঠে নি এমনকি হানিমুনেও না,,,,,নিরব কথাকে নিধীর জায়গা কখনোই দিতে পারবে না ও জানে,,,, কিন্তু আস্তে আস্তে কথা নিরবের মনে নিজের জন্য একটা জায়গা তৈরী করেই নিচ্ছে,,,,,নিরব একা থাকলেই নিধীর চিন্তা এসে ওকে ঘিরে ধরে কিন্তু কথার সাথে থাকলে নিধীর চিন্তা আর ওর মাথায় আসে না,,,,তাই সবসময় কথার সাথেই থাকার চেষ্টা করে,,,,,হয়তোবা নিধীকে কখনো ভুলতে পারবে না কিন্তু কথা পাশে নিধীর দেওয়া কষ্টটা ঠিকই ভুলে থাকতে পারবে,,,,,কথার মাঝে সুখ খুঁজতে খুঁজতে যে ও কথার মাঝেই হারাচ্ছে তা ও নিজেও জানে না,,,,,কথার দুষ্টুমি,,,,বেশি বেশি কথা বলা,,,,,পাগলামি করা,,,,বোকার মতো এটা ওটা প্রশ্ন করা ওর সবকিছুই আনন্দ দেয় নিরবকে,,,,,ও নিজের কর্মকাণ্ড দিয়ে হাসতে বাধ্য করে নিরবকে,,,,,নিরবতো হাসতে ভুলে গিয়েছিলো সেই নিরবকে সামলে নিচ্ছে কথা পরম যত্নে,,,,,তারপর প্রায় দুমাস পর ওরা হানিমুন থেকে ফিরলো,,,,,ওদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক না থাকলেও ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্কটা অনেক আগেই গড়ে উঠেছে,,,,,দুজনই যেনো আদর্শ কাপল,,,,,একে ওপরের কেয়ার করে,,,,একে ওপরের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে,,,,,দুজন দুজনাতে মানিয়ে নেওয়ার সব ধাপ যেনো পার করছে,,,,,নিরবতো এখন কথাকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করেছে,,,,,ওকে যেনে এখন চোখে হারায়,,,, সব রাগ অভিমান অভিযোগ মায়া এখন শুধু ওকেই দেখায়,,,,,ভালোবাসার টানটা যে এখন কথার হাতে চলে গেছে নিরবের,,,,,নিধীর জন্য রাখা মনের সেই জায়গাটায় নিরব কাউকে কখনোই বসাতে পারবে না এটা ও জানে এটা যে অসম্ভব,,,,,নিধীর জন্যে ওর মনে একটা সফ্ট কর্ণার সবসময় থাকবে তা ওর জানা আছে,,,,,কিন্তু নিধীর দেওয়া কষ্ট ভুলাতে গিয়ে নিরব যে কথাকেও নিজের মনের সাথে জুড়িয়ে নিয়েছে তা ও আস্তে আস্তে বুঝতে পারছে,,,,,এখন নিরব স্বাভাবিক বিহেব করে নিধীর সাথে,,,,,নিধীর সামনে গেলেও নিজের ওর প্রতি থাকা ইমোশন কন্ট্রোল করে নিয়েছে,,,,,এখন নিধী নিরব খুব ইজিলিই কথা বলতে পারে,,,,,সবকিছুই স্বাভাবিক চলছে,,,,, নিরবও এখন কথাকে একটু একটু করে স্ত্রীর অধিকার দিয়ে দিবে বলে ভাবছে,,,,,তারপর নিহানও নিজের এক্সামটা দিলো তারপর ফাস্ট ক্লাস পেয়ে পাশ করলো,,,,,অফিসে দুই ভাই ৫০- ৫০% শেয়ারের মালিক,,,,,দুজনই একসাথে নিজেদের কোম্পানি দেখছে,,,,,তারপর নিহান নিধী ঠিক করলো ওরা বিয়ে করবে,,,,,তারপর চারজনেরই বিয়ের দিন ঠিক হলো,,,,অনেক ধুমধাম করে মোটা অংকের দেনমোহর দিয়ে ছেলেবউদের ঘড়ে তুললেন মিস্টার এন্ড মিসেস চৌধুরী,,,,, বাসর ঘরে বসে আছে নিধী লম্বা ঘোমটা টেনে,,,,,নিহান রুমে ঢুকলেই ওকে সালাম করলো,,,,,তারপর নিহান ঘোমটা তুলে ওর কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে ওকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো,,,,এরপর দুজনই ফ্রেস হয়ে ওযু করে নামায পড়ে নিলো,,,,সারাজীবন একে ওপরের সাথ চাইলো আল্লাহর কাছে,,,,, নিধী বিয়ের ভারী শাড়ী চেন্জ করে খয়ারী কালারের সুন্দর হালকা একটা শাড়ী পড়েছে,,,,,দুজনই রুমের বারান্দার দোলনাতে কিছু সময় গিয়ে বসে চাঁদ দেখলো,,,,,নিহান একটা স্বর্নের পেনডেন্ট এনেছে যেটা নিহান ও নিধীর নাম দিয়ে বানিয়ে এনেছে ,,,,,অনেজ সুন্দর পেনডেন্টটা,,,,নিহান ওটা নিধীর গলায় পড়িয়ে দিলো,,,,,নিহান চাঁদের সাথে নিজের পরীটার তুলনা করে নিজের পরীটার সৌন্দর্যে চাঁদকেও উপেক্ষা করলো নিধী শুধু লজ্জায় মুখ লুকালো নিহানের বুকে,,,,,নিধীর লজ্জামাখা চেহারা দেখে ঘোরের রাজ্যে আরও তলিয়ে গেলো নিহান,,,,,নিধীর কপালে একটা ভালোবাসার স্পর্শ করলো নিজের ঠোঁটে যাতে নিধী শিহরিত হয়ে উঠলো,,,,,তারপর নিহান নিধীর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট জমিয়ে দিলো,,,,,কিছুক্ষণ পর ওকে কোলে তুলে নিলো আর রুমে দিকে চলে আসলো,,,,,নিধী লজ্জায় নিহানের বুকে মুখ গুজে রইলো,,,,,তারপর নিহান ওকে বিছানায় শুইয়ে দিলো আর আস্তে আস্তে সব লাইট্স অফ হতে শুরু হলো,,,,,নিহান তলিয়ে গেলো নিধীর ভালোবাসায়,,,,,আর ওদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো,,,,,এদিকে আজও ঘুম আসছে না নিরবের,,,,,বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে চাদের পানে চেয়ে আছে এক পলকে,,,,মনের ভিতর আজ বয়ে যাচ্ছে হাজারো ঢেও,,,,,আজ যে নিজের প্রথম ভালোবাসা হয়ে গেছে অন্য কারো,,,,নিধীর জন্য ওর মনে থাকা টানটা আজ যেনে আবার কষ্ট দিচ্ছে,,,,নিরব কথা দুজনে অনেক আগেই চেঞ্জ করে আজ আবারও নফল নামায পড়ে আল্লাহর কাছে শোকরিয়া করলো,,,,,কথা গেছিলো নিচে হয়তো কোনো কাজে এসে দেখে নিরব এভাবে দাঁড়িয়ে আছে,,,,,কথা বুঝতে পারলো নিরবের মনে অবস্থা,,,,,তাই আর কিছু না বলে শুধু শুধু এটা ওটা নিয়ে দুষ্টুমি শুরু করে দিলো নিরবের সাথে,,,,,যাতে নিরবকে কিছুটা স্বাভাবিক করতে পারে,,,,,নিরব বুঝতে পারছে কথার মোটিভ,,,,,মনে মনে ভাবতে লাগলো)
চলবে,,,,,