#দোটানা,পর্বঃ৪,৫
#গল্পকারঃআরোহী_নুর
#পর্বঃ৪
(নিধী দাঁড়িয়ে আছে এয়ারপোর্টের বাইরে তৎক্ষনাৎ নিহান বেড়িয়ে এলো,,,,,নিহানের মনে যেনো তখন আলাদা একটা অনুভুতি খেলা করছিলো,,,, ওর মনে হচ্ছিলো যে নিধী ওর আশেপাশেই আছে,,,,নিহান হয়তোবা তখন ওর পরিবারের কাউকে আশা করছিলো ওকে নিতে আসবে বলে কিন্তু ওর কি জানা ছিলো ওর মনে তখন নিধীকে নিয়ে চলা অনুভুতি সত্য হয়ে যাবে,,,, এয়ারপোর্ট থেকে বেরুতেই সামনে দেখলো নিধী দাঁড়িয়ে,,,,, নিহানের পৃথিবী যেনো মূহুর্তেই থমকে গেলো,,,,নিজের চোখে ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না,,,,নিধীর কোনো হেলদুল নেই তখন স্বাভাবিক ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে নিহানকে দেখে যেনো ওর সাথে নিধীর আগে আর কখনো দেখাও হয় নি,,,,নিহানের ঠোঁটের কোনো প্রশান্তির হাসি ফুঁটে উঠে নিমিষেই,,,,,হাতে থাকা সবকিছু ফেলে ছুটে আসে নিধী বলে,,,,এসেই ওকে জড়িয়ে ধরবে এর আগেই নিধীর দুকদম পিছিয়ে যায় আর সামনে হাত দিয়ে নিরবকে ওর পাশে আসতে আটকায়,,,,নিরব সেই মুহুর্তে কিছুটা অবাক হয়ে তাকায় নিধীর দিকে,,,,,কারন নিধীর রিয়াকশন একদম নরমাল,,,,ও যেনো নিহানকে এর আগে দেখেও নি,,,,
নিহানঃনিধী আমি তোমার নিহান নিধী,,,,, এতোদিন কোথায় ছিলে তুমি??,,,,জানো আমি তোমায় কতো খুঁজেছি,,,,তুমি চলে আসার পর আমি বুজতে পেরেছিলাম যে আমি কতো বড় ভুল করেছি,,,,নিধী আমি তো নির্বোধ ছিলাম বুঝতাম না আসল ভালোবাসাটা কি হয়,,,,আমার কাছে টাকা আর স্ট্যাটাসই সবকিছু ছিলো,,,,কিন্তু তুমি আমায় ভালোবাসার আসল মানে শিখিয়ে দিয়েছো নিধী,,,,তোমার কাছ থেকেই বুঝতে পারলাম ভালোবাসা টাকা পয়সা ধনি গরীব দেখে হয় না ওটা শুধুই হয়ে যায় নিধী,,,,আর আমিও যে তোমায় সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি ,,,,,তুমি যে আমার আত্নার সাথে মিশে গেছো নিধী,,,,,
নিধীঃদেখেন মি.নিহান আমি জানি না আপনি কোন নিধীর কথা বলছেন কিন্তু আপনি যে নিধীর কথা বলছেন আমি সে নই,,,,আমি আপনাদের অফিসের পি.এ আর আপনাদের ঘরের কেয়ারটেকারও,,,,আপনার বাবা আমায় পাঠিয়েছেন আপনাকে নিয়ে যাবো বলে,,,,,তাই চলেন,,,,,(এটা বলে নিধী নিহানের জিনিসপত্র গুলো গাড়িতে উঠাতে গেলে নিহান নিধীর হাতে ধরে নেয়,,,,,নিধী সাথে সাথে ঝাপটা দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়,,,,
নিধীঃএটা কোন ধরনের অসভ্যতা করছেন মি.নিহান,,,,,,
নিহানঃতুমি কেনো এমন করছো নিধী,,,,,আমি জানি তুমিই আমার নিধী,,,,তুমি আমার উপর রাগ করে আছো না সেদিনের ওটা নিয়ে,,,,তবে প্লিজ তুমি তার জন্য আমায় সাজা দাও,,,,তুমি যে সাজা দিবে আমি তা মাথা পেতে নেবো তবুও আমার সাথে কথা বলো নিধী,,,,ঠিক আগের নিধীর মতো আপন করে নাও আমায়,,,,,প্লিজ নিধী এই তিন বছর অনেক কষ্ট পেয়েছি তুমি ছাড়া আর কষ্ট সহ্য করতে পারবো না,,,,আমার যে তোমাকে প্রয়োজন….
নিধীঃদেখেন মি.নিহান আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আপনার কি প্রবলেম কিন্তু আপনি আমাকে যে নিধী মনে করছেন আমি সে নয়,,,,প্লিজ এবার আপনি আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠুন বাড়িতে সবাই আপনার অপেক্ষায় বসে আছেন,,,,(এটা বলেই গাড়িতে নিহানের জিনিসপত্র রেখে গাড়ির দরজাটা খুলে দিলো নিহান উঠবে বলে,,,,নিহান অদ্ভুত অবাক নজরে তাকিয়ে আছে নিধীর দিকে নিধীর এখনও কোনো আলাদা প্রতিক্রিয়া নেই,,,,নিহান ভেবেই যাচ্ছে ও কি করে নিজের নিধীকে চিনতে ভুল করতে পারে,,,,নিহান জানে ও নিহানেরই নিধী,,,,নিহানের ঘোর ভাঙে নিধীর কথায়)
নিধীঃকি হলো উঠেন,,,,(তারপর নিহান নিধীর দিকে অবাক চাহনি দিতে দিতে গাড়িতে উঠলো,,,,নিধীও স্বাভাবিকভাবে গাড়িতে উঠে পড়লো ঠিক ড্রাইবারের সাইটের সিটে বসলো,,,,,এখনও কোনো হেলদুল নেই নিধীর,,,,ড্রাইবার গাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন,,,,নিহান অবাক চাহনিতে চেয়েই আছে নিধীর পানে বার বার ভাবছে ও কিভাবে ভুল করতে পারে নিধীকে চিনতে,,,,সেই টানাটানা দুটো চোখ,,,,সরু একটা নাক,,,,গোলাপের পাপড়ির ন্যায় চিকন দুটি ঠোঁট,,,ফর্সা সেই গায়ের রং,,,, ঘন কালো লম্বা চুলগুলো,,,,সেই কন্ঠ,,,,, আর নিহানের ওর পাশে আসার সেই অনুভুতি সবই তো একই তবে ও নিধী কেমনে হতে পারে না,,,,তবে এই নিধীর মধ্যে কিছুটা অমিল দেখছে নিহান,,,,সেই নিধীর মুখে যে সবসময় একটা হাসি থাকতো আর সেই হাসিতে পড়া গালের টুলটা ভেসে থাকতো সারাদিন ওর চোখের সামনে কিন্তু আজ সেই টুলটা নিহান দেখতে পাচ্ছে না কারন নিধীর মুখে হাসির কোনো আকারনিকার নেই,,,,সেই নিধীর চোখে যে সবসময়ই একটা ভয় বিরাজ করতো,,,,নিহানের মনে আছে ও নিধীকে নিয়ে কতো দিন লং ড্রাইবে যেতে চেয়েছিলো,,,,কিন্তু নিধী যায় নি দুটি ভয়ে একটি হলো লোকে দেখলে কি বলবে আর অন্যটি ও গাড়ি চড়তে ভয় পায়,,,,গাড়ী চড়তে এটোটাই ভয় পেতো যে কখনো না কি গাড়ী চরবে বলে কোথাও বেড়াতেও যেতো না,,,,, কলেজ পাশেই ছিলো তাই কখনো রিক্সায় বা কখনো পায়ে হেঁটে কলেজ আসতো,,,,একদিন নিহান মজা করে নিধীকে ওর গাড়িতে বসিয়ে দিলে নিহান ওর গাড়ি স্টার্ট করার আগেই কেঁদে উঠেছিলো নিধী আর প্রায় আধাঘন্টা কেঁদেছিল,,,,নিহানের সেদিন বড্ড হাসি পেয়েছিলো নিধীর এমন করা দেখে,,,,কিন্তু আজ এই নিধীর মধ্যে যে ও কোনো ভয় দেখতে পাচ্ছে না,,,,যে নিধী একমিনিটও কথা না বলে থাকতে পারতো না সে নিধী আজ কতো চুপচাপ বসে আছে,,,,কান্নাটাও মনে হয় এখন আর ওর আসে না,,,,নিহান শুধু ভাবছে কেনো নিধী নিজেকে এমন পরিবর্তন করে নিলো,,,,কেউ কিভাবে নিজেকে এতোটা পরিবর্তন করতে পারে,,,,কি করে নিজের অনুভুতি সামলে নিতে পারে,,,,,নিহান তখন মনে মনে শপথ করে নিয়েছিলো ও ওর পুরাতন নিধীকে ফিরিয়ে আনবেই,,,,নিধীকে মানতেই হবে যে ও ই নিহানের নিধী,,,,,নিহানের ভাবনার পরিসমাপ্তি ঘটার আগেই ওরা বাড়িতে পৌঁছে গেলো,,,,নিধী গাড়ি থেকে নেমে নিহানের সামনের দরজা খুলে দিলো,,,,নিহান এখনও নিধীর পানে অদ্ভুত নজরে তাকাচ্ছে,,,,কি করে মেনে নিবে নিধীর এই ব্যবহার বুঝে উঠতে পারছে না,,,,নিধী স্বাভাবিকভাবেই নিহানের সব জিনিসপত্র নিয়ে গেলো ভিতরে এদিকে নিহান নিধীর পিছনে ঘরে প্রবেশ করতেই উপর থেকে ফুলের পাঁপড়ি ঝড়ে পরে ওর উপর,,,, পরিবারের সবাই ওর আসার খুশিতে বেলুন ফাঁটাতে শুরু করে আর ওয়েলকাম হোম ছোট নবাব বলে চিৎকার করতে থাকে,,,,,নিধীর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই,,,,ও নিহানের জিনিসগুলো ওর রুমে পৌঁছে দিয়ে নেমে আসে অফিস যাবে বলে,,,,নিহান অন্য কোনো দিকে খেয়ালই করছে না এখনও অবাক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে নিধীর দিকে,,,,,নিধী অফিসের উদ্দেশ্য বেরুবে তখনি আদনান সাহেব উনার স্ত্রী দিদুন সবাই ওকে বলে যে আজ অফিস যেতে হবে না,,,,উনাদের সাথে এখানে থেকে পার্টি এনজয় করতে বলেন উনারা,,,,কিন্তু নিধী তা যে কখনোই মানবে না,,,,,আদনান সাহেব ও তার পরিবার মানে উনার স্ত্রী আর উনার মা ওকে নিজের পরিবারের সদস্যই মনে করেন ওকে অনেক আদর করেন,,,,নিধীও উনাদের অনেক সম্মান করে,,,,ভালোওবাসে,,,, সবসময় উনাদের সব পরিস্থিতিতে সাথে থাকে কিন্তু কখনো উনাদের খুশিতে,,,,, বা আনন্দ উল্লাসে অংশীদার হতে চায় না,,,,,সবসময় নিজের দায়িত্ব আর কর্তব্য নিয়ে থাকে,,,,,সব কাজেই সিরিয়াস থাকে জীবনের কোনো কিছুতেই যে এখন আর সুখ খুঁজে না,,,,অনেক হাঁড়িয়েছে তাই এখন আর কিছু পাওয়ার আশাটাও করে না,,,,এদিকে আদনান সাহেব অনেক করে বলছেন ওকে থেকে যেতে আজ অফিস ম্যানেজার সাহেব দেখে নিবেন,,,,কিন্তু নিধী একটুর জন্যই মানলো না,,,,বরং আদনান চৌধুরীকে ভালো করে বুঝিয়ে চলে গেলো,,,,
নিধীঃবড় সাহেব আপনি ভালো করেই জানেন আমি এসবে কখনোই সামিল হই না,,,,,আর আপনি এটাও জানেন আমি আমার দায়িত্ব একমিনিটের জন্যও স্থগিত রাখতে পছন্দ করি না,,,,আর এসব হাসি আনন্দ আমার জন্য নয়,,,,আমার এসব পছন্দ না,,,,তাই আমি অফিস চলে যাচ্ছি আপনারা কেউ ওখানে নেই আর ম্যানেজার সাহেব সব একা দেখতে পারবেন না,,,,,তাই চলি বড় সাহেব,,,,,আপনারা এনজয় করেন
(এটা বলে চলে গেলো নিধী অনেক স্বাভাবিক লুক নিয়ে,,,,নিহান অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে ওর যাওয়ার পথ দিয়ে আর নিরব ডেবিল লুক নিয়ে তাকাচ্ছে,,,,একজনের মনে ওকে আবারও নিজের করে পাওয়ার জোয়ার এসেছে আর অন্যজনের মনে ওকে হারিয়ে দেওয়ার ক্ষোভ এসেছে,,,,,নিধী চলে যাবার পর নিহানও বেশি সময় পার্টিতে থাকলো না,,,,সবার মন রাখতে একটু সময় থাকলো তারপর আর পারলো না খুশি হবার অভিনয় করতে তাই নিজেকে সামলে চলে গেলো নিজের রুমে,,,,, এদিকে নিরবও সেখানে বেশি সময় থাকলো না কাজের বাহানা দেখিয়ে চলে গেলো অফিসে সবাই অনেক মানা করা সত্তেও,,,,কারন অফিস যাওয়ার যে ওর অন্য আরেক মোটিভ আছে,,,,তারপর নিরবও চলে যায় অফিসে,,,,,নিধী তখন নিরবের কেবিনের একটা সেল্ফ থেকে কিছু ফাইল্স বার করে নিচ্ছিলো,,,, ফাইল্সগুলো নতুন প্রোজেক্টের যা ওকে দেখতে হবে তাই,,,, নিধী একটু খাটো হওয়ার সেল্ফের উপরের ফাইল্সগুলো নাগাল পাচ্ছিলো না তাই পা দোখানা একটু উঁচু করে ওগুলা আনার চেষ্টা করছিলো এতে হাতগুলো উপুর করায় ওর ড্রেসও কিছুটা উপরে উঠে গিয়েছিলো যাতে নিধীর পেটের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিলো,,,,নিধী তখন নিরবের রুমে একা ছিলো তাই ওটা নিয়ে এতো ভাবে নি,,,,,কিন্তু ও তো আর জানতো না নিরব দরজা খোলা থাকায় এমনিতেই ভিতরে ঢুকে যাবে আর নিধী তা বুঝতেই পারবে না,,,,,নিরব কেবিনে ঢুকতেই ওর নজর পড়ে নিধীর বেড়িয়ে থাকা খালি ফর্সা পেটের দিকে,,,,,এটা দেখে ওর মাথায় একটা শয়তানি চিন্তা বিরাজ করে,,,,,নিধীকে জ্বালাবার একটা ফন্দি করে,,,,আস্তে করে নিধীর পিছনে যায় আর ওর ধারে হাত নিয়ে ওর পেটে স্পর্শ করবে তখনি নিধী তা বুঝতে পেরে ঝটপট পিছন মুড়ে একটা ধারালো ছুড়ি ঠিক নিরবের গলায় ধরে যা নিধী ওর কাপড়ে থাকা পকেট থেকে বের করেছে,,,,নিধী সবসময় নিজের কাপড়ে এক্সট্রা পকেট রাখে আর ওটাতে ছুড়ি রাখে,,,, যাতে নিজের রক্ষা করতে পারে,,,,
নিরবঃএই এই করছো কি,,,,পাগল না কি তুমি,,,,গলায় ছুড়ি ধরেছো কেনো মেরে ফেলবে না কি আমায়,,,,
নিধীঃআপনার সাহস কি করে হলো আমার দিকে হাত বাড়ানোর,,,,,
নিরবঃকি করবো তুমি যে অনেক হট,,,,আর এভাবে কাউকে আকর্ষণ করলে কেউ নিজেকে কিভাবে আটকাবে,,,,,(কথাটা বলতেই নিধী ওর গলায় ছুড়িটা আরও শক্ত করে ধরে নেয়,,,,)
নিধীঃআমায় নিয়ে এমন বাজে মন্তব্য আবার যদি করেছেন তবে পরক্ষণেই আপনার গলায় ছুড়িটা চালিয়ে আর তা করতে আমার হাত একদম কাঁপবে না মি.স্যার,,,,,হয়তোবা আপনি আজ পর্যন্ত যে কটা মেয়ের সাথে ঘুরেছেন তারা সবই আপনার কোয়ালিটির যারা এমন কমেন্ট শুনে খুশি হয়,,,,কিন্তু নিধী এমন নয় তাই ওর সামনে এসব বলতে বা ওকে ছুঁতে কখনোই আসবেন না,,,,,
নিরবঃতোমার মতো স্ট্যাটাসহীন মেয়েদের মুখে এমন কথা মানায় না মিস নিধী,,,,,আর তুমি কি করে ভাবলে যে নিহান চৌধুরীর টেস্ট এতোটাই খারাপ যে তোমার মতো রাস্তার মেয়ের দিকে নজর দিবে,,,,
নিধীঃআপনার মতো বড়লোকদের নজর নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই আমার,,,,আপনার মতো মানুষের দ্বারা সবই সম্ভব,,,,,,
নিরবঃঅল্প সময়ে অনেক জেনে গেছে দেখছি আমায় নিয়ে,,,,গুড,,,,আরও অনেক কিছুই যে তোমার জানার আছে আমার সম্পর্কে মিস নিধী,,,, এবার চাকুটা নামিয়ে ফাইল্সগুলো নিয়ে আসো অনেক কাজ বাকি আছে,,,,
(নিধী তারপর স্টোরুম থেকে একটা টুল এনে ওটাতে চড়ে ফাইল্সগুলো নামায়,,,,যাতে নিরব ওর দিকে আর খারাপ নজরে তাকাতে না পারে,,,,তারপর ওড়না দিয়ে নিজেকে ভালো করে ঢেকে নিরবের সামনে বসলো ফাইল্সগুলো নিয়ে,,,,নিধীর এমন অবস্থা দেখে নিরবের বড্ড হাসি পাচ্ছে,,,,,নিরব নিজের হাসি চেপেই রাখলো)
নিরবঃ ফাইল্সগুলো দেখি একটাও কমপ্লিট না,,,,(রেগে গিয়ে)
নিধীঃস্যার এই প্রোজেক্টের কাজ সামনের মাসে তাই ফাইল্সগুলো নিয়ে এখনও ভালো করে কাজ শুরু হয় নি,,,,আস্তে আস্তে তা পুরন করা হচ্ছে,,,,
নিরবঃআস্তে আস্তে পুরন করা হবে মানে(ধমক দিয়ে)??আমি প্রোজেক্টাটা কালকেই শুরু করবো আর ফাইল্সগুলো কালকে সকালের মধ্যে আমার পুরো চাই,,,,এবার ফাইল্সগুলো নিয়ে যাও আর কালকে সকালের মধ্যে সবগুলো ফাইল্স পুরন চাই আমি,,,,,
নিধীঃএটা আপনি কি বলছেন স্যার এখানে তো প্রায় ৫০ টার মতো ফাইল্স এতোগুলো ফাইল্স কালকের মধ্যে পুরন করা অসম্ভব,,,,,,
নিরবঃএটা দেখা আমার বিষয় না,,,,আমি কাজ দিয়েছি আর তা পুরন করা তোমার দায়িত্ব,,,, এখন যদি তুমি তা পুরন করতে না পারো তাহলে ওযোগ্যতা দেখিয়ে জবটা ছাড়তেই পারো আমার তাতে কোনো প্রবলেম নেই,,,,আর আমার ডেড এর মন্তব্য অনুযায়ী তুমি তো সব অসম্ভবকেই সম্ভব করতে সক্ষম আমি শুধু তাই যাচাই করতে চাই,,,,,
নিধীঃযদি কথাটা আমার যোগ্যতা দেখানোরই হয়ে থাকে তবে নিধী কখনোই পিছু হটবে না,,,,আপনার মতো মানুষকে আমি নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে চাই না তবে ওযোগ্যতা দেখিয়ে যাওয়ার পাত্রীও যে নিধী না,,,,ফাইল্সগুলো কালকের মধ্যেই আপনি পুর্ণ করা পাবেন,,,,(এটা বলে নিধী ফাইল্সগুলো নিয়ে কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায়)
নিরবঃ(আমি জানি মিস নিধী তুমি ফাইল্সগুলো পুর্ণ করেই নিবে,,,,কিন্তু তোমার যোগ্যতার প্রশ্ন উঠানোর অন্য ব্যবস্থা যে আমি করেই রেখেছি,,,),,,,( ঠোঁটের কোনে শয়তানি হাসি দিয়ে)
(এদিকে রাতে নিধী মাকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে ছাঁদে বসে ফাইল্সগুলোর কাজ করছিলো যেহেতু তা রুমে করলে মায়ের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে তাই,,,,,তখনি নিধী ছাঁদের দরজা লাগানোর শব্দে পিছনে মুড়েই দেখে নিহান,,,,,)
নিধীঃআপনি এখানে??
নিহানঃ(নিধীর পাশে গিয়ে ওর হাত ধরার চেষ্টা করে কিছু বলবে তখনি নিধী নিজের হাতটা সরিয়ে নেয়)
নিধীঃআবার কি অসভ্যতা শুরু করেছেন মি.নিহান,,,,
নিহানঃকেনো এমন করছো নিধী,,,,আমি জানি তুমি আমার নিধী,,,,আমি তোমাকে চিনতে ভুল করতে পারি না,,,,আমি জানি আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ করেছি কিন্তু বিশ্বাস করো নিধী আমি একদম পাল্টে গেছি আমি যে তোমায় নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি নিধী,,,,আমি থাকতে পারবো না তুমি ছাড়া,,,,
নিধীঃদেখেন মি.নিহান আমি বুঝে উঠতে পারছি না যে আপনাকে আর কিভাবে বললে আপনি ঠিক বুঝতে পারবেন যে আমি আপনার নিধী না,,,,,
নিহানঃতুমি যতই বলো নিধী আমি তা বিশ্বাস করবো না,,,, আমি জানি তুমি আমার নিধী,,,,তুমি কি অস্বীকার করতে পারবে যে তুমি তিন বছর আগ পর্যন্ত আমার সাথে আমার কলেজে পড়তে না,,,,আমার সাথে ভালোবাসা নামক সুন্দর সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলে না,,,,সেটা হয়তোবা আমার তরফ থেকে অভিনয় আর তোমার তরফ থেকে একপ্রকার জোর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সৃষ্টি হয়েছিলো কিন্তু সম্পর্কটাযে সত্য ভালোবাসার সম্পর্কে রুপ নিতে যাচ্ছিলো যা আমার কারনেই,,,,(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে),,,,যাকগে এই অপরাধের জন্য আমি তিনটা বছর কষ্ট পেয়েছি কিন্তু আর যে সহ্য করতে পারছি না নিধী আমি,,,,পারছি না তোমায় কাছে পেয়েও দূর হয়ে থাকতে,,,,প্লিজ ফিরে এসো,,,,,
নিধীঃদেখেন মি.নিহান,,,,আপনি যে নিধীর কথা বলছেন সে নিধী তিন বছর আগেই মারা গেছে আর এখন আপনি যে নিধীকে দেখছেন সে নিধী অতীতকে কখনোই মনে রাখতে চায় না,,,,তাই প্লিজ আপনি চলে যান,,,,আমি আপনার কোনো সাহায্য করতে পারবো না,,,,,,প্লিজ আপনি চলে যান আমার অনেক কাজ আছে,,, (হাত দিয়ে যাবার রাস্তা দেখিয়ে প্রস্থানসূচক ইশারা দিয়ে বললো নিধী,,,,নিহানও আজ হারে হারে বুঝতে পেলো কারো অবহেলা করাটা কেমন লাগে আর মানুষটা যদি অনেক কাছের হয় তখন তার অবহেলাটা বুকের মধ্যে কেমন ঝড় তুলে দেয়,,,, আজ বুঝতে পারছে নিহান সেদিন নিধীর কেমন লেগেছিলো,,,,নিহান তো নিধীকে অপমান আর অবহেলা করার কোনো কমতিই রাখে নি,,,,সব সীমা লঙ্ঘন করেছে,,,,আর আজ নিধীর সামান্য অবহেলা সহ্য করতে পারছে না ও,,,,,এটাই ভাবছে এতো পাহাড় সমান কষ্ট কি করে পারলো নিধী সহ্য করতে,,,,নিহান আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না,,,,তাই বুকে অনেক কষ্ট নিয়ে চলে এলো সেখান থেকে,,,,,যাবার আগে নিধীকে বলে গেলো যে ও নিধীর রাগ ভাঙিয়ে নিধীকে ঠিকই নিজের করে নেবে,,,,,নিধী এতে কোনো রিয়েক্ট করলো না স্বাভাবিক ভাবেই আবার বসে কাজ করতে শুরু করলো,,,,নিহান চলে গেলো)
চলবে…..
#দোটানা
#গল্পকারঃআরোহী_নুর
#পর্বঃ৫
(নিহান রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে নিলো আর সবকিছু ভাঙচুর করতে শুরু করলো,,,,নিহানের রুম উপরে তাও অনেক কর্ণার সাইডে থাকায় কারো কানে শব্দ গেলো না,,,,কিছুক্ষণ ভাঙচুর করার পর সেই ভেঙে যাওয়া ধ্বংসাবশেষের মাঝে বসে পড়লো নিহান,,,,কষ্টে বুকটা ছিঁড়ে যাচ্ছে ওর,,,,, তিন বছর আগে নিধীকে দেওয়া কষ্টের কথা মনে পরছে ওর আর চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে,,,,প্রচন্ত রাগ হচ্ছে নিজের উপরই,,,,,আজ নিজের জেদের আর অহংকারের কারনে নিজের এই দশা,,,,ও নিজেকেই মাফ করতে পারছে না নিধী কি করে ওকে মাফ করবে এটাই ভাবছে নিহান)
নিহানঃহ্যাঁ নিধী আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে আর সেই কষ্টই তোমাকে ভুলিয়ে দেবো আমি,,,,আমার মনের সত্য ভালোবাসা দিয়ে জয় করে নেবো আবার তোমার মন আর এটা তোমার কাছে নিহান চৌধুরীর ওয়াদা,,,নিহান শুধুই তোমার নিধী,,,আর নিধী শুধুই নিহানের,,,,,
(পরদিন অফিসে নিরব ফাইল্সগুলো দেখছে যেগুলো নিধীকে কাল পুরন করতে দিয়েছিলো,,,,নিধী সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিরবের সামনে,,,,দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও জানে ওর কাজে নিরব কোনো ভুল বার করতে পারবে না,,,এতোটা আত্নবিশ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিধী,,,,নিরবের প্রথম ফাইল্সগুলো হাতে নেওয়ার সময় ওর মুখে একটা শয়তানি হাসি থাকলেও যতই ফাইল্স দেখছে ততই সেই হাসিটার মাত্রা কমে গিয়ে মুখে সন্দেহের ছাঁপ ফুঁটে উঠছে,,,,দেখতে দেখতে সব ফাইল্স দেখা শেষ নিরবের,,,,কিন্তু নিরব নিধীর কাজে কোনো ভুল বার করতে পারলো না সব ব্যবস্থা তো ও করে রেখেছিলো তবে কি হলো এটাই ভাবছে নিরব তখনি নিধীর কথায় ঘোর কাটলো ওর,,,,
নিধীঃকি মি.স্যার এটাই ভাবছেন যে আপনার সব রকম ব্যবস্থা করে রাখা সত্ত্বেও আমার কাজে ভুল কি করে হলো না তাই তো,,,,এই নিন এড্রেসটা এখানে গেলে হয়তো আপনার সব প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন,,,,,(একটি কাগজ রাখলো নিহানের ঠিক সামনে যেটাতে একটা হাসপাতালের এড্রেস লিখা কেবিন নাম্বার সহিত,,,,নিরব ওটা দেখে ডেবিল লুকের সাথে প্রশ্নবোধক লোকটা নিয়েও তাকালো নিধীর দিকে,,,) আসলে এখানে যে রোগীটা আছে সে কিন্তু আপনার রোগী উনার না হাসপাতাল বিল অনেক এসেছে যা অবস্থা উনার তাই,,,,,আসলে আমি বিল টা পে করে দিতাম কিন্তু কি করবো আপনার মতো এতো টাকা তো আর আমার নেই আর রোগীটাও তো আপনার তাই ভাবলাম আপনাকেই এড্রেস টা দেই,,,,ওকে তো আমি চলি স্যার আমার অন্য কাজও আছে,,,,ফাইল্সগুলো কিন্তু সেল্ফে রেখে যাচ্ছি,,,,দরকার হলে ডাকবেন আমায়,,,,(এটা বলে নিধী ফাইল্সগুলো সেল্ফে রেখে চলে গেলো খুব স্বাভাবিকভাবে,,,,নিরব বুঝতে পারছিলো নিধী ওকে তাচ্ছিল্য করে কথাগুলো বলছিলো,,,,,কিন্তু তখন তেমন কিছু বুঝতে না পেরে নিরব নিধীকে কিছু বললো না শুধু রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে থাকলো নিধীর দিকে,,,,,নিধী চলে গেলে বেড়িয়ে গেলো এড্রেসটা হাতে নিয়ে,,,,,তারপর জায়গাটাতে পৌঁছে যা দেখতে পেলো তা হয়তো কখনো কল্পনাও করতে পারে নি নিরব,,,,নাজিম আসলে নিরবের হায়ার করা একটা লোক যাকে নিরব নিধীর পুরন করা সেই ফাইল্সগুলোতে কিছু নকল ফাইল্স যেগুলোতে অনেক ভুলত্রুটি থাকবে সেগুলো রেখে কিছু আসল ফাইল্স সরিয়ে নিয়ে আসতে বলেছিলো,,,,কিন্তু এখন তো নাজিম নিজেই নিজের জায়গা থেকে সরে অন্যত্র যাওয়ার যোগ্য রয়ে যায় নি,,,,,বেচারা নাজিমের একটা হাত ভেঙে গেছে,,,,,নাকটা পুরো বেন্ডেজ করা,,,,গালেও,,,,,একটা পাও মনে হয় গেছে কতোদিনে ঠিক হবে তা শুধু আল্লাহ মালুম,,,,,নিরব প্রশ্নসুচক লুক নিয়ে নাজিমের কাছে গিয়ে ওকে প্রশ্নই করে দিলো ওর অবস্থাটার জন্য দায়ী কে??নাজিম জবাবে কাল রাতের কথা সবকিছু খুলে বললো)
ফ্লাসবেকঃ(নিধী ছাঁদে কাজ করতে করতে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো,,,,তখনি নাজিম সুযোগ বুঝে ছাঁদে ঢুকে পড়ে নকল ফাইল্সগুলো নিয়ে,,,,নিধী তখন ঘুমিয়ে,,,,নাজিম বার বার নিধীর মুখের সামনে হাত নাড়িয়ে দিয়ে চেক করলো নিধী সত্যিই ঘুমিয়ে আছে কি না,,,,যখন বুঝতে পারলো যে নিধী সত্যিই ঘুমিয়ে আছে তখন ফাইল্সগুলো সরাতে যাচ্ছিলো তখনি কেউ ওর হাতে ধরে নিলো,,,,চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো নিধী,,,,,, তখন নাজিম ভালো করে নিজেকে ঢেকে এসেছিলো বটে যাতে কেউ ওর মুখ দেখতে না পায় সিসিটিভিতে ধরা পড়লেওতো সমস্যা হতো,,,,কিন্তু নিধী তৎক্ষনাৎ টান দিয়ে ওর মুখের কাপড় সড়িয়ে নেয়,,,,নাজিম পালিয়ে যেতে চাইলে নিধী ওকে ধরে সে কি মারটাই না মারলো),,,,,(আসলে নিধীর কাছ থেকে ওর যোগ্যতা কেড়ে নেওয়া আর বাঘিনির মুখ থেকে স্বীকার কেড়ে নেওয়া দুটোই এক ব্যাপার যা করতে গেলে মরার সাহস বুকে থানতে হবে,,,,আসলে গত তিন বছরে নিধীর নিজের আত্নরক্ষায় প্রয়োজনে এসব শিখে নেওয়াটা বড় কোনো ব্যাপার না,,,,,নিরব কথাগুলো শুনে রাগে দাঁতে দাঁত চাপতে লাগলো)
নিরবঃতুমি ওকে আমার বিষয়ে কিছু বলো নি তো??
নাজিমঃনা স্যার তবে ও বুঝেই গেছিলো কাজটা আপনিই করাতে চেয়েছিলেন,,,,ও বললো আপনাকে বলে দিতে যে টক্কর বরাবরের কারো সাথে নিতে নইলে হারটা আপনার নিশ্চিত হবেই,,,,,স্যার ওই মেয়েটা অনেক ডেঞ্জারাস আমার মনে হয় ওর সাথে পাঙ্গা নেওয়াটা ঠিক হবে না আপনার,,,,
নিরবঃ(উঠে গিয়ে হাসপাতালের বেডে লাথি মারে যাতে ওখানে বসে থাকা নাজিমও একটু ব্যাথা পায়)তুমি শিখাবে আমায় কার সাথে কি করা উচিৎ,,,,, তুমি তো কাপুরুষ যে একটা মেয়ের হাতে মার খেয়ে এসেছো,,,,কিন্তু আমি কাপুরুষ না,,,,নিরব চৌধুরী কখনোই হার মানতে পারে না ওই রাস্তার মেয়ের কাছে,,,,,ওকে তো আমি উচিত শিক্ষা দিয়েই ছাড়বো,,,,,(এটা বলেই হন হন করে বেড়িয়ে গেলো নিরব,,,,,সারাদিন অফিসে এসে নিধীকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়েছে নিধী সব কাজই সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছে যা নিরবের কোনো মতেই সহ্য হচ্ছে না,,,,নিরব চেয়েও যে কিছুই করতে পারছে না নিধীর কাজে যে কোনো ভুল বার করাই এখন একটা অসম্ভব কাজ,,,,,নিরব শুধুই রাগছে কয়েকবার বিনা কারনে নিধীকে ধমকও দিলো কিন্তু নিধীর তো আর কোনো কিছুতে তেমন কোনো রিয়াকশন থাকে না তাই স্বাভাবিকভাবেই নিজের কাজ করে যাচ্ছে,,,,,তারপর অফিস আওয়ার শেষে নিরব রেগেমেগে বেড়িয়ে গেলো কোথাও নিধীও বাড়ি আসছিলো রিক্সা করে হঠাৎই পিছন থেকে একটা গাড়ি এসে রিক্সাটার সামনে এসে ব্রেক কষে দাঁড়ায়,,,,,তখন রিক্সাটাও থামে তারপর গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে নিহান,,,,,এগিয়ে যায় নিধীর দিকে)
নিধীঃকি ব্যাপার মি.নিহান আপনি এখানে কি করছেন,,,,,??পথ ছেড়ে দাঁড়ান বাড়ি যেতে হবে অনেক কাজ আছে আমার,,,,,
নিহানঃকি সারাদিন শুধু কাজ কাজ কাজ,,,,,কি নিধী থেকে কি নিধী হয়ে গেছো তুমি,,,,,কোথায় সেই বাচ্চাসুলভ কিউট পিচ্ছি নিধীটা ছিলো আর কোথায় এখন রোবটের মতো সারাদিন মুখ ঘোমড়ো করে বসে থাকো,,,,কিভাবে এতো রুক্ষ করে নিলে নিজেকে,,,,চলো এবার নামো রিক্সা থেকে তোমার সাথে অনেক কাজ আছে আমার,,,,(এটা বলে নিধীকে হাত ধরে নামাতে চাইলো)
নিধীঃখবরদার হাত বাড়াবেন না আমার দিকে,,,,,আর আমি কোথাও যাচ্ছি না মি.নিহান আপনার সাথে,,,,,আপনার বাবার অনেক টাকা আছে তাই বাচ্চামি করাটা আপনাকে শোভা দেয়,,,,আমার মতো গবীরের মেয়েকে বাচ্চামি আহ্লাদী করে বেড়ানো শোভা দেয় না,,,,সরেন পথ থেকে আমায় যেতে হবে,,,,আর না সরলে কোনো ক্ষতি নেই আমি অন্যরিক্সায় অন্যপথে চলে যাবো(এটা বলে নিধী রিক্সা থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করে অন্যরিক্সার খোঁজে,,,,,নিহানও সাথে সাথে আছে)
নিহানঃশুনো না নিধী নেমেই যখন পড়েছো তবে চলো না পাশেই একটা ফুচকার দোকান আছে ওখানে গিয়ে ফুচকা খাই দুজনে,,,,তোমার মনে নেই একদিন আমরা দুজন কিভাবে ফুচকা খেয়েছিলাম,,,,আমার তো ফুচকা একদম পছন্দই ছিলো না আর তুমি তো ফুচকার জন্য পুরো পাগল ছিলো,,,,একদিন জোর করেই তুমি আমায় ফুচকার দোকানে নিয়ে গেছিলে,,,তারপর ঝাল করে দুপ্লেট ফুচকা বানিয়ে আনিয়েছিলো আমি না খেতে চাইলেও তুমি জোর করে একটা ফুচকা আমায় খাইয়ে দিয়েছিলে মজা করে,,,,প্রথমে খেতে অনেক স্বাদ লাগলেও পরে ঝালে আমার যা অবস্থা হয়েছিলো,,,,পানি খেতে খেতে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছিলো আর তা দেখে তুমি কতো হেসেছিলে মনে আছে তোমার??তারপর আমার বেশি কষ্ট হচ্ছিলো দেখে তোমারও খারাপ লাগা শুরু হয়ে গেছিলো আর তারপর কোথা থেকে দৌঁড়ে গিয়ে চিনি এনে খাইয়েছিলে তুমি আমায় মনে আছে তোমার)
(নিধী তখন রিক্সা আটকাতে ব্যাস্ত ছিলো নিহানের কথায় নিধী কি যেনো একটা ভেবে খনিকের জন্য আটকে গেলো,,,,নিহানের ঠোঁটে একটা হাসি ফোঁটে উঠলো)
নিহানঃতোমার মনে পড়েছে না নিধী সেই দিনটার কথা,,,,কতো সুন্দর ছিলো না সেই দিনটা,,,,চলো না আজকেও দুজনে ফুচকা খাই একসাথে,,,,আর আজ তুমি যতোটাই ঝাল ফুচকা খেতে বলবে আমায় আমি ততোটাই খাবো,,,,চলো(বলে নিধীর হাত ধরলে নিধী রাগী লুকে তাকায় নিহানের দিকে আর ঝট করে নিহানের হাত ছাড়িয়ে নেয়,,,,আর রাগি কন্ঠে বলে উঠে,,,)
নিধীঃআপনাকে কতোবার বলবো মি.নিহান আমার কাছে না আসতে,,,,দেখেন আমি শুধুই আপনার ঘরের সামান্য কর্মকর্তা মাত্র আর কিছুই নয়,,,আশা করি আপনিও এর থেকে বেশি কিছু আমায় নিয়ে আর ভাবতে যাবেন না,,,,আর ওসব ফুচকা টুচকা আমি খাই না,,,,আর আমি তখন আপনার বলা সেই ফালতু কথাগুলো মনে করতে যাচ্ছিলাম না বরং তখন আমার মনে পড়ে গেছিলো যে আমার মায়ের কিছু ঔষুধ নিয়ে যেতে হবে,,,,,তাই আমার পথ ছাড়ুন,,,,,আর আপনার যা করার নিজেই করে নিন,,,,,আমাকে কিছুতে টানবেন না প্লিজ,,,,,
নিহানঃওকে ঠিক আছে,,,,কিন্তু চলে যখন যাবে আমার গাড়িতে আসো আমিও তো বাড়ি যাচ্ছি একসাথেই চলে যাবো,,,,যাওয়ার রাস্তায় তোমার মায়ের জন্য
ওষুধও নিয়ে নিবে,,,,
নিধীঃসরি মি.নিহান,,,,কিন্তু আমি অফিস বা বাড়ির কোনো কাজ ছাড়া নিজের ব্যাক্তিগত কোনো কাজে আপনাদের বাড়ির কোনো গাড়ি ইউজ করি না ,,,, থ্যাংক্স ফোর ইওর প্রপোজাল বাট আই কান্ট একসেপ্ট ইট,,,, (এটা বলে নিধী আরেকটা রিক্সা দাঁড় করিয়ে চলে যায়,,,,,নিহান অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে চেয়ে রইলো নিধীর যাওয়ার পথ দিয়ে,,,,,)
রাত তখন ২টা ঘুম আসছে না নিধীর,,,,প্রায় রাতেই আসে না এটা ওর যেনো নিত্যদিনের সাথি,,,,,তাই ঘুম না আসলে বাইরের বারান্দার সিঁড়িতে বসে থেকে চাঁদ দেখতে ওর ভালোই লাগে,,,,,চাঁদটাকে ওর নিজের মতোই মনে হয়,,,,,চাঁদটা যেমন হাজারটা তারার মাঝে থেকেও একা হয়ে থাকে অন্ধকারের মাঝে,,,,নিধীও ঠিক তেমন আশেপাশে অনেক মানুষ থাকা সত্ত্বেও নিধী একা,,,,অনেক একা অন্ধকারাচ্ছন্ন এই জীবনটাতে,,,,ওই চাঁদটাই যেনো নিধীর বন্ধু হয়তোবা ওর ওই চাঁদটাকে বলার মতো কোনো কথা নেই কারন নিজের জীবনকে নিয়ে কিছুই ভাবে না নিধী,,,,কিন্তু ও জানে না কেনো ওই চাঁদটার দিকে তাকিয়ে নিজের মনের কোনে শান্তির একটা ছোঁয়া পায় নিধী,,,,নিধী চাঁদটাকে দেখছিলো আপন মনে তখনই ওর শান্তি ভঙ্গ করে বাড়িতে প্রবেশ করলো নিরব,,,,গাড়ি চালিয়ে আসা দেখেই নিধী বুঝতে পেরে গেছে নিরব স্বাভাবিকভাবে আসে নি,,,,,যে আঁকাবাঁকা ড্রাইব করে নিরব বাড়িতে ঢুকলো নিধী বুঝতে পারলো হয়তোবা ড্রিংক করে এসেছে,,,,,নিধী নিহানের আসা দেখেই ভিতরে চলে যাচ্ছিলো,,,,,তখনই গাড়ি থেকে নেমে পিছন দিক থেকে ডাক দিলো নিরব,,,,
নিরবঃ(নেশলো কন্ঠে)আরে রাস্তার মেয়ে দেখি বাইরে বসে ছিলো,,,,আমায় দেখে ভয়ে পাল্লাচ্ছে বুঝি,,,,হা হা হা,,,,,(নিধী বুঝতে পারলো নিরব অনেক ড্রিংক করে এসেছে নিজস্ব জ্ঞানে নেই তাই আর কোনো কিছু না বলে ভেতরে যেতে গেলো,,,,নিরবও ওকে আর কিছু না বলে হেলেদুলে ভেতরে ঢুকছিলো তখনি সিঁড়িতে হোচট খেয়ে পড়ে যাবে তৎক্ষনাৎ ওকে ধরে নেয় নিধী,,,,,নিধী তখন ওর পাশেই ছিলো তাই ধরে নিলো সময়মতো,,,,,আশেপাশে তো কাউকেই দেখছে না নিধী সবাই হয়তো এতক্ষণে ঘুমের ঘরে,,,,আর নিরব এভাবে অর্ধেক রাতে পুরো মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরেছে জানলে হয়তো আদনান সাহেব অনেক দুঃখ পাবেন উনি যে উনার ছেলেদের ভালো শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু উনি যে ব্যার্থ হয়ে গেছেন তা নিধী উনাকে বুঝতে দিতে চায় না,,,,তাই আর শোরগোল না করে নিরবকে সাহারা দিয়ে ওর রুমের দিকে নিয়ে যায়,,,,নিরব তো পুরো জ্ঞানে নেই তাই নিধীকে আলাদা করে কিছু বললো না,,,,আবোলতাবোল কিসব যেনো বকছে,,,,নিধী ওকে ওর রুমে নিয়ে গিয়ে বেডে শুইয়ে দিয়ে ওর পায়ের শো জুড়ো খুলে ওর উপর চাদরটা দিয়ে দিলো লক্ষ্য করলো ওর হাতে গালে শার্টে শরীরে অসংখ্য লিপস্টিক এর দাগ,,,,,কিছুটা বুঝতে পারলো যে ক্লাবে হয়তোবা কোনো নর্তকি মেয়ের সাথে থেকে এসেছে,,,,,এই বজ্জাতটার কাছ থেকে আর কি আশা করা যায় এটাই ভাবছে নিধী,,,,,আদনান সাহেবের মতো একজন ভালো মানুষের ঘরে এমন দুটি ছেলে জন্মাবে কে ভাবতে পারে,,,,,খনিকের জন্য নিহানের কথাও মনে করলো নিধী,,,,,নিহানও ঠিক নিরবের মতোই ছিলো,,,,সবকিছু জানার পরও নিধী ওকে ভালোবাসতে চেয়েছিলো কিন্তু হয়তোবা ভালোই হয়েছে সেই ভালোবাসাটা শুরু হবার আগেই নিজ হাতেই শেষ করে দিয়েছিলো নিহান,,,,,আর এখন তো নিধী নিহান কি কারো উপরই বিশ্বাস করে না,,,,তারপর নিধী লক্ষ্য করলো নিরব বিড়বিড় করে ওকে নিয়ে কি সব যেনো বলছিলো)
নিরবঃজানো মিতি,,,,,আমাদের ঘরে না একটা রাস্তার মেয়ে আছে,,,,যাকে আমার ডেড মাথায় তুলে রেখেছে আর এখন সে আমার মাথায় উঠে নাচতে চাচ্ছে,,,,কিন্তু ওকে আমি এমন নাচ নাচাবো না যে নাচতেই ভুলে যাবে,,,,(নিধী বুঝতে পারলো নিরব হয়তো ক্লাবে এতক্ষণ মিতি নামের কোনো একটা মেয়ের সাথে ছিলো আর নিরব এখনও মনে করছে ও ওর সাথেই আছে আর মিতি ভেবেই এসব কথা বলছে নিরব,,,,,নিধী এতে কোনো রিয়াক্ট করলো না কারন ও জানে নিরব ওকে নিয়ে ভালো কিছু ভাববে না তা হোক না হয় স্বজ্ঞানে না হয় নেশার ঘোরে,,,,,আর কে নিধীকে নিয়ে কি ভাবছে এতে ওর কোনো যায় আসে না,,,,কারন নিধী যে এখন কাউকেই ভয় পায় না আল্লাহ পরে,,,,,তাই রুমের লাইটটা অফ করে ডিম লাইটা অন করে মিতি রুম থেকে বেরুবে তখনি দরজার সামনে দেখতে পায় কাউকে,,,,,আসলে নিহানেরও ঘুম আসছিলো না,,,,নিধী চলে আসার পর থেকেই প্রায় রাতেই ঘুম হতো না নিহানের,,,,,আর এখন তো নিধীকে সামনে পেয়েও ওর থেকে দুরে থাকার কষ্টে ঘুম আসে না ওর দুনয়নে,,,,তাই বাড়িতে হাটছিলো হঠাৎ নিধীকে নিরবের হাত নিজের কাঁধে নিয়ে ওকে সাহারা দিয়ে নিরবের রুমের দিকে নিয়ে যেতে দেখে এগিয়ে আসে নিহান আর এতোসময় ও ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো,,,,নিধী নিহানকে দেখে শুধু একটা কথাই বললো)
নিধীঃমি.নিহান আপনার ভাই অনেক ড্রিংক করে এসেছেন,,,,বড় সাহেব বিষয়টি শুনলে মনে অনেক কষ্ট পাবেন তাই পারলে একটু কষ্ট করে উনার কাপড়গুলো পাল্টে দিবেন আর পারলে উনার গায়ে লেগে থাকা দাঁগগুলোও সড়িয়ে দিবেন,,,,,নয়তো সকালে উনাকে এমন অবস্থায় কেউ দেখতে পেলে কারোই বুঝতে বাকি থাকবে না যে রাতে উনি কোথায় ছিলেন,,,,,(এটা বলে সেখান থেকে আবারও স্বাভাবিক ভাবে চলে গেলো নিধী,,,,,নিহান কিছু সময় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো নিধীর যাওয়ার পথ দিয়ে,,,,,বুঝতে পারলো এখন এটাই নিধীর আসল রুপ,,,,,জীবনের চরম সত্যগুলো নিধীকে পাথর করে দিয়েছে,,,,,তারপর দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে ঢুকে পড়লো নিরবের রুমে তারপর ওর কাপড় পাল্টে শরীরের লিপস্টিক এর দাঁগগুলো মুছে দিলো,,,,তারপর ওকে ভালো করে শুইয়ে দিয়ে লাইট অফ করে দরজাটা আটকিয়ে চলে গেলো নিচের দিকে,,,,,,মেইন দরজা খোলা দেখে বাইরের দিকে তাকালো দেখলো নিধী বসে আছে বারান্দার সিঁড়ির উপর আকাশের দিকে তাকিয়ে,,,,, নিধী তখন আবারও চাঁদ দেখতে ব্যাস্থ হয়ে পড়েছিলো,,,,,
চলবে……