#দোটানা,পর্বঃ৬,৭
#লেখিকাঃআরোহী_নুর
#পর্বঃ৬
(নিধী বারান্দায় বসে আছে,,,,নিহান একটু এগিয়ে গেলো ওর দিকে তখনই নিহান খেয়াল করলো একটা বেশ বড়সড় মাকড়সা আস্তে আস্তে নিধীর কাছে আসছে মনে হয় নিধীর পায়ের পাতায় চড়ে বসবে তখনি তেড়েহুড়ে নিহান এগিয়ে যেতে থাকে নিধীর ধারে কারন ওর জানামতে নিধী মাকড়সা অনেক ভয় পায় তাই,,,, কিন্তু তখনই নিহানের ভাবনাতে ছেদ ঘটায় নিধী,,,, মাকড়সাটা ওর পায়ের পাতায় উঠে নেওয়ার আগেই নিধী ওকে দেখে ফেলে তারপর ওর দিকে আলতো করে হাত বাড়ায় মাকরসাটাও তৎক্ষনাৎ হাতে উঠে পরে,,,,তারপর নিধী উঠে গিয়ে ওটাকে বাগানের সাইডে ছেড়ে আসে,,,,নিহান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো নিধীর দিকে,,,,এটা কেমনে সম্ভব হলো,,,,তারপর নিধী আবারও এসে বসলো সেখানে তখন পিছন থেকে নিহানও এসে বসলো ওর পাশে,,,,নিহানকে ওর পাশে বসতে দেখে নিধী উঠে নিতে গেলে নিহান ওর হাত ধরে ফেলে,,,,তৎক্ষনাৎ নিধী রাগী লুক নিয়ে একবার নিহানের দিকে আর একবার নিহানের নিধীর হাত ধরে থাকার দিকে তাকায়,,,,বিষয়টা বুঝতে পেরে নিহান সরি বলে হাত ছেড়ে দেয় তারপর আবার নিধী চলে যেতে গেলে নিহান পিছু ডাক দেয়,,,,)
নিহানঃবসো না নিধী,,,,একটু কথা বলবো তোমার সাথে,,,,,
নিধীঃঅনেক রাত হয়েছে মি.নিহান,,,,,ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন,,,,
নিহানঃআমার ঘুম আসছে না আর আমি জানি তোমার ও আসছে না তবে কেনো না দুজন মিলে একটু গল্প করি এখানে,,,,এখান থেকে চাঁদটা দেখতে খুব ভালো লাগছে দেখো,,,,,আর হ্যাঁ প্রমিজ করছি যে এই মুহুর্তে ভালোবাসো ফিরে আসো এসব বলে তোমাকে বোর করবো না,,,,তবুও বসো একটু,,,,,(নিধী কিছু একটা ভেবে বসলো নিহানের কাছে কিন্তু কোনো কথা বলছে না শুধুই চেয়ে আছে চাঁদের পানে,,,,নিরবতা ভেঙে নিহান বললো)
নিহানঃতুমিতো মাকড়সা অনেক ভয় পেতে তবে সেই ভয়ে জয় করলে কিভাবে??,,,,,মনে আছে তোমার একদিন আমরা কলেজের পিছনে লুকিয়ে দেখা করতে গিয়েছিলাম যাতে কেউ না দেখে,,,,আমরা দুজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কতো কথা বলছিলাম আর তখন একটা বড় মাকড়সা কোথা থেকে এসে তোমার পায়ের পাতায় চড়ে বসেছিলো এতো তুমি কতো চিৎকার করেছিলে মনে আছে,,,,এক চিৎকার দিয়েই আমার কোলে চড়ে গিয়েছিলে,,,,তোমার চিৎকার শুনে মাকড়সাটা প্রাণ বাঁচিয়ে না জানি কোথা থেকে কোথায় পালিয়েছিলো আর তুমি তখন কি কান্নাই না জুরে দিয়েছিলে আমি তো তোমায় শান্তই করতে পারছিলাম না,,,,তারপর হাতের কাছে যাই পেয়েছো তাই দিয়ে পা টা মুছেছো মনে আছে তোমার আর আমি তোমার ওসব দেখে কি হাসিটাই না হেসেছিলাম,,,,,কিন্তু আজকে দেখি মাকড়সা দেখে ভয় পেলে না বরং সযত্নে ওকে হাতে তুলে নিলে,,,,??এমনকি তুমি তো অন্ধকারও কতো ভয় পেতে কিন্তু আজকে এই অন্ধকার রাতে একা বারান্দায় বসে চাঁদ দেখছো ভাবলেই অসম্ভব লাগছে,,,,,
(নিহানের কথায় নিধী কল্পনায় চলে গেলো,,,,,ঢাকায় আসার প্রথম সপ্তাহে ও অনেক কষ্টে একটা কাজ জুটিয়েছিলো,,,,একটা ফ্লাটে কাজের মেয়ের কাজ পেয়েছিলো ও,,,,বাড়িতে শুধু একজন পুরুষ আর একজন মহিলা ছিলেন তাদের একটা বাচ্চাও ছিলো ১০ বছরের,,,,,একটু টাকাপয়সা ছিলে বটে উনাদের তার সাথে হিংস্রতারও কমতি ছিলো না উনাদের মনে,,,,বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় কখনো তেমন কোনো ঘরের কাজ করে নি নিধী তাই ওসব কাজে দক্ষ ছিলো না তখন,,,,অনেক কাজেই একটু ভুলত্রুটি হয়ে যেতে যার ফলে ওকে বাড়িওয়ালার স্ত্রীর মারও খেতে হতো,,,,সেদিনও ভুলবশত একটা পুরাতন গ্লাস হাত থেকে পড়ে ভেঙে গিয়েছিলো নিধীর,,,,এটা দেখে ওই মহিলাটা ওর বাবা-মা তুলে কি না কি গাল দিতে লাগলেন,,,,গ্লাসের দামের সাথে নিধীর দামের তুলনা করতে থাকলেন যেখানে নিধীর মূল্যকেই তুচ্ছ করলেন তারপর একটা গরম ইস্ত্রি এনে ওর হাতে চেপে ধরলেন,,,,অনেকটা অংশই নিধীর হাতের পুড়ে গিয়েছিলো তখন,,,,নিধী শুধু আর্তনাদ ভরা বুক ফাঁটা চিৎকার করেছিলো তখন,,,,কিন্তু উনার মন তখনও ঠান্ডা হয় নি উনার স্বামীকে ডেকে আনলেন অফিস থেকে এনে নিধীর নালিশ দিলেন তারপর উনি নিধীকে উনাদের ফ্লাটের একটা অন্ধকার খুঁটখুটে স্টোররুমে বন্ধ করে দিলেন,,,,,সেখানে অনেক অন্ধকার ছিলো,,,,স্টোররুমের উপরের সাইডের কিছু ফুটোগুলো দিয়ে বাইরে থেকে যা আলো আসছিলো সেটা দিয়ে ওখানে শুধু হরেক রকমের পশুই দেখতে পেয়েছিলো নিধী,,,,,আর তাদের মধ্যে মাকড়সাই প্রধান ছিলো,,,,সে রাত নিধীর জন্য যেনো এক অভিশপ্ত রাত ছিলো,,,, কতো কেঁদেছিল নিধী ওকে বাইরে বের করা আর্তনাদ করছিলো বার বার,,,,চিৎকার করে বলছিলো ও ওখানে মারা যাবে বলে কিন্তু কারোই ওর জন্য কোনো যায় আসছিলো না,,,,কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলো সেখানে,,,,পরদিন সকালে ওর মা ওর খুঁজে সেখানে পৌঁছে গেলে নিধীকে স্টোররুম থেকে বের করে সবার সামনে চোর অপবাদ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হলো সেখান থেকে এমনকি মাসের বেতনটাও দেয় নি,,,,আশেপাশের মানুষগুলোও তখন উনাদের কথাই বিশ্বাস করেছিলো যে নিধী চোর,,,,সেদিন নিধী চিৎকার করে করে আসল সত্যটা বললেও কেউ বিশ্বাস করে নি,,,,সেদিন নিধী বুঝে গিয়েছিলো যে গবীরের আওয়াজ সবসময়ই ধনীদের কানে কম যায়,,,,ওদের সাথে হওয়া অন্যায়ের বিচার আশা করাও অনেক দূরুহ,,,সে বিচার পৃথিবীতে না হলেও আল্লাহ করবেন এই আশায় সব ব্যাথা ভুলে থাকে নিধী,,,,সেদিন নিধীর সাথে অনেজ খারাপ হলেও একটা ভালো হয়েছিলো নিধীর মতে,,,, সেই এক ঘটনার পর থেকে নিধীর মন থেকে অন্ধকার আর বিভিন্ন ছোট ছোট পশুর ভয় নেমে গিয়েছিলো,,,,ওর তখন মনে হয়েছিলো যে পৃথিবীর মানুষের চেয়ে ওসব পশুও অনেক ভালো,,,,যাদের ও এতো ভয় পেতো তারা ওকে কিছুই করে নি,,,,কিন্তু মানুষেরা কখনো অত্যাচার করার কোনো পথ ছাড়ে না,,,,,আবার নিহানের কথায় নিধী বাস্তবে ফিরে আসে,,,,,চোখ পড়ে নিজের হাতের উপর জ্বলার সে দাগটা এখনও তাজা আছে,,,,শরীরের কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখে নিধী,,,,হটাৎ তা বেড়িয়ে এসেছে দেখে ঝটপট তা আড়াল করে ফেলে নিহান দেখে ফেলার আগে,,,,)
নিহানঃকি হলো নিধী কিছু বললে না যে,,,,,কিভাবে জয় করলে তোমার ভয়গুলোকে,,,,??
নিধীঃমানুষ একা থাকলে অনেক কিছুই জয় করতে শিখে যায় মি.নিহান,,,,আমিও অনেক কিছুই জয় করতে শিখে গেছি,,,,পরিস্থিতি শিখিয়ে দিয়েছে,,,,ওকে তবে চলি আমার ঘুম পাচ্ছে,,,,,(বলে উঠে চলে দুপা বাড়িয়ে গেলে নিহান পিছনে বলে উঠে)
নিহানঃআমায় কি ক্ষমা করা যায় না নিধী,,,,??
নিধীঃ(স্বাভাবিক ভাবে পিছন মুড়ে)আমি আপনার উপর রেগে নই মি.নিহান যে আপনাকে ক্ষমা করবো,,,,আমার মনে কাউকে নিয়েই কোনো ক্ষোভ নেই,,,,আমি আপনাকে আগেও বলেছি আমি অতীত মনে রাখতে চাই না সে হিসাবে কারো দেওয়া আঘাতও মনে করতে চাই না আমি আর যখন আঘাতগুলোই ভুলে আছি তবে সে আঘাত দেওয়া মানুষদের উপর ক্ষোভ নিয়ে কিভাবে বসে থাকতে পারি,,,,,ওকে গুড নাইট,,,,,(এটা বলে চলে গেলো নিধী,,,,নিহান আবারও অসহায়ের মতো চেয়ে আছে নিধীর যাওয়ার পথে,,,,চোখে জল ছলছল করছে ওর,,,,নিধী ওর কষ্টগুলো মুখে না বললেও নিহান যেনো তা অনুভব করতে পারলো,,,,,)
(পরদিন সকালে আজকে ঘরের সার্ভ কর্মকর্তা আসেন নি,,,, নিধী ঘরের কেয়ারটেকার তাই সবার কাজ ও তদারকি করে আর যে কর্মকর্তা একদিন আসেন না সেদিন তার কাজ নিধী নিজেই করে,,,,,নিধীর এসব যোগ্যতা অর্জন করার পথ সহজ হয় নি,,,,তবে অনেক অবহেলা অপমান অত্যাচার সহ্য করে হলেও নিধী আজ যোগ্য হয়ে উঠেছে এটাই ওর বড় পাওয়া ও মনে করে,,,,যাইহোক নিধী আজকে সার্ভ ম্যান না আসায় উনার কাজ করছে,,,,,সকালে উঠে আগে সবার রুমে রুমে চা কফি পৌঁছানোর কাজ করছে,,,,নিধী কফি নিয়ে গেলো নিরবের রুমে নিরব তখনও পরে পরে ঘুমোচ্ছে তখন সকাল ৮ টা,,,,নিধী ওর দিকে না তাকিয়ে ওর বেডের পাশে কফিটা রেখে নিরবকে একটা ডাক দিয়ে বললো স্যার আপনার কফি রেখে দিয়েছি উঠে খেয়ে নিন,,,,এটা বলে নিধী পিছন মোড়ার আগেই নিরব টান দিয়ে নিধীকে নিজের উপর নিয়ে এলো,,,,নিরব তখন চোখ বন্ধ করে আছে,,,,পুরো ঘুমে না থাকলেও সজাগও নয়,,,,নেশাটা এখন অব্ধি কিছু আছে,,,,আর রাতের মেয়েটিকে এখনও পাশে আশা করছে,,,,,আর নিধীকে ওই মেয়ে মনে করে ঝাপটে ধরেছে,,,,নিধী নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে শুরু করে দিয়েছে,,,,,নিরব তো চাড়ছেই না,,,,)
নিধীঃকি অসভ্যতা শুরু করেছেন আপনি আবার,,,,ছাড়েন আমায় ছাড়েন,,,,
নিরবঃকি বেবি,,,,,কাল রাতে তো এতো অসভ্যতা করলাম কিছুই বললে না আর এখন একটু জড়িয়ে ধরলাম বলে আমি অসভ্য,,,,আমার কাছ থেকে ছাড়াপেতে চাচ্ছো,,,,আমি তো তোমায় ছারবো না তোমার সাথে আর একটু অসভ্যতা করবো,,,,,(নিধী ভালোয় বুঝতে পেরেছে কাল রাতের ওই মিতির ভুঁত এখনও যায় নি বাদরটার ঘাঁড় থেকে মিতি ভেবেই নিধীকে জড়িয়ে ধরেছে নিরব,,,,নেশাটা যে ওর এখনও মিটে নি,,,,)
নিধীঃ(দাঁতে দাঁত চেপে)অসভ্যতা করবে না,,,,, আমি দেখাচ্ছি অসভ্যতা কাকে বলে,,,, এখনি নামবে মিতির ভুঁত ঘাঁড় থেকে,,,,,(এটা বলেই নিধী নিরবকে ধাক্কা দিয়ে নিজে থেকে ছাড়িয়ে পাশে থাকা জগটা হাতে নিয়ে এক জগ পানি ছুঁড়ে দেয় নিরবের মুখে নিরব সাথে সাথে হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিস বলে চিৎকার করে ঘুম থেকে জেগে উঠে বসে,,,,নেশাটাও হয়তো নিধীর পানির ঝাপটায় ততক্ষণে পালিয়েছে,,,,নিরব রাগী লুক নিয়ে নিধীর দিকে তাকিয়ে দেখলো নিধীও লাল লাল চোখে চেয়ে আছে ওর দিকে হাতে জগ,,,,, দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও অনেক রেগে আছে,,,,
নিরবঃএই রাস্তার মেয়ে তুমি আমার মুখে পানি ঢাললে কেনো??
নিধীঃআপনি আমাকে আপনার বেডে টানলেন কেনো??
নিরবঃহয়েছে আর অভিনয় করতে হবে না,,,,,তোমার মতো রাস্তার মেয়েদের কারো বেডে যাওয়াটা বড় কোনো ব্যাপার মনে হয় না আমার কাছে,,,,(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
নিধীঃমাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুইজ স্যার,,,,হতে পারি আমি গরীব রাস্তার মেয়ে,,,, কিন্তু আপনার গার্লফ্রেন্ডদের মতো সস্তা না যে টাকার লোভে নিজের স্বতিত্ব বিক্রি করে দেবে,,,,আপনার মতো মানুষের কাছ থেকে এমন কথা শুনে আমার একদম তাজ্জব যাচ্ছে না কারন আপনিই এসব ভাবতে পারেন,,,,,জানেন আমি জীবনে অনেকের কাছ থেকে অনেক কষ্ট পেলেও আজ পর্যন্ত কাউকে ঘৃণা করি নি কিন্তু আপনিই প্রথম ব্যক্তি যাকে নিধী শুধুই ঘৃণা করে,,,,ছি,,,,কখনো ভাবাও যায় না যে আপনি মি.আদনানের সাহেবের ছেলে,,,,,
নিরবঃহয়েছে সকাল সকাল তোমার লেকচার শোনার মুড নেই আমার তুমি আসতে পারো,,,,,(নিধী আর কিছু না বলেই রেগেমেগে বের হয়ে যায় সেখান থেকে তারপর নিহানের কফি নিয়ে যায় ওর রুমে বাকি সবাইকেও ততক্ষণে চা কফি দিয়ে এসেছে,,,,,নিহান তো নিধীকে কফি হাতে ওর রুমে দেখে মহাখুশি,,,,ও ভেবেছে নিধী ওকে আপন ভেবে ওর জন্য কফি নিয়ে এসেছে,,,,)
নিহানঃআরে নিধী তুমি এখানে,,,,আমার জন্য কফি নিয়ে এসেছো বুঝি,,,,তা হঠাৎ আমার জন্য এতো কেয়ার??
নিধীঃআপনি ভুল কিছু ভাবেন এর আগেই আপনাকে বলে দেই মি.নিহান আমি আলাদা করে আপনার জন্য কফি নিয়ে আসি নি,,,,আজকে সার্ভ কর্মকর্তা আসেন নি তাই আমিই উনার সব কাজ দেখছি,,,,আর তাই আপনার জন্য আমি কফি নিয়ে এসেছি,,,,,(কথাটা শুনে নিহানের মুখের উজ্জ্বল হাসিটা খনিকে উধাও হয়ে গেলো,,,,,নিধী সেদিকে না তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই চলে গেলো সেখান থেকে কফিটা টেবিলে রেখে,,,,নিহান দীর্ঘ একটা শ্বাস ছাড়লো তখন,,,, নিহান নিরব আর ওদের বাবা তিনজনই আজকে অফিস যাবেন নিরব তো অফিসের সব ভার আগে থেকেই নিয়ে নিয়েছে আর নিহানও চাচ্ছিলো পড়ালেখার মাঝে অফিসের কাজটাও কিছু দেখবে ভাইয়ের সাথে থেকে,,,,এই কারনটা সবার সামনে দেখালেও নিহানের অফিস যাওয়ার আসল কারন নিধী,,,,ওর সাথে সারাদিন থাকার সুবিধার্থে এটা করলো নিহান,,,,তারপর তিনজনই তিন গাড়িতে অফিস গেলেন,,,, আদনান সাহেব গেলেন ছোট সাহেবকে কিছু কাজ বোঝাবেন বলে,,,,নিধী ওর রোজকার মতো রিক্সায়ই গেলো যেহেতু ও পার্সোনাল কাজে বাড়ির গাড়ি ইউজ করবে না প্রাণ গেলেও না,,,,,নিধী তো আর নিধীই,,,,,তারপর অফিসে গিয়ে আদনান সাহেব নিহানকে কাজ বুঝিয়ে দিলেন,,,,বড় ভাইয়ের অন্ডারে থেকে কাজ শুরু করবে নিহান যেহেতু ও এখনও এসব কাজে কাঁচা,,,,,ওর জন্য একজন পি.এ সিলেক্ট করতে চাইলে মানা করে দিলো নিহান বললো যে ও যখন নিরবের আন্ডারে কাজ করছে তবে নিজের পি.এ হিসেবে নিরবের পি.এ মানে নিধীই পার্ফেক্ট,,,,যেহেতু নিধী অনেক যোগ্য,,,,,নিহানের কাজ শিখতেও অনেক লাভ হবে,,,পরে যখন ও সত্যি সত্যিই অফিসের সব কাজ বুঝে নিবে তখন না হয় নতুন পি.এ রাখা যাবে,,,,,এসব কারন বলে নিধীকে ওর পাশে রাখার সব রাস্তা ক্লিয়ার করে নিলো,,,, নিধীর আর কি বলার আছে ওকে স্যারেরা যা বলবে ওকেতো তাই করতে হবে,,,,তাই নিধী আর কিছু বললো না,,,,তারপর আদনান সাহেব চলে গেলেন বাড়িতে অফিসে নিহান আর নিরবের টানাটানিতে ফেলেগেলেন নিধীকে,,,,একজন ডেকে নিয়ে কি না কি নিয়ে শুধু শুধু রাগারাগি করে আর অন্যজন ডেকে নিয়ে কাজ না করে নিধীর সাথে সুন্দর সুন্দর ভালোবাসাময় কথা বলার ট্রাই করে,,,,,নিধীর দুজনকেই অসহ্য লাগছে,,,,হঠাৎ একটা কাজে নিধী স্টোররুমে যায়,,,,তারপর নিজের একটা কাজে নিরবও স্টোররুমে যায়,,,,নিধী তখন একটা টুলে উঠে বড় একটা সেল্ফের উপর থেকে কিছু ফাইল্স বের করছিলো,,,,তখনই নিরব ওখানে প্রবেশ করে আর সাথে সাথে লক্ষ্য করে নিধীর টুলটা অনেক নড়ছে,,,,নিধীও ব্যালেন্স হাড়িয়ে ফ্লোরে পড়ে যাবে তখনি কি একটা ভেবে দৌঁড়ে গিয়ে ওকে ধরে নেয় নিরব,,,, নিরব এটা কেনো করলো তা ও নিজেও জানে না,,,,নিধী পরে ব্যাথা পেলেতো ওর ভালোই লাগতো,,,,তাছাড়া নিরব কখনোই এমন কোনো ঘটনায় কাউকে ধরে বাঁচায় না,,,,কারন ওর মানুষকে কষ্ট পেতে দেখতে ভালোই লাগে,,,,কিন্তু আজ ও এমনটা করলো,,,,নিধী একদম নিরবের কোলে পড়ে গেছে একটুর জন্য দুজনের চোখ একে অপরের মধ্যে হাড়ালো,,,,নিধীর তেমন কোনো ঘোর লাগে নি,,,,নিরব তো একদম নিধীর চোখে ডুবে গেছে,,,,নিধী তখন খনিক অসস্থি নিয়ে তাকাচ্ছিলো নিরবের দিকে কারন নিরব তখন ঘোরলাগা নয়নে তাকাচ্ছিলো ওর দিকে,,,,, নিহাও কিছু সময় নিধীকে দেখতে না পেয়ে স্টোররুমে এসে পড়েছিলো নিধীর খোঁজে তখন ওই মুহূর্তটা ওর চোখে আটকা পরে,,,,তখন যেনো নিহানের চোখে মরিচ পড়লো,,,,,নিহানের বুকটা মোঁচড় দিয়ে উঠলো দুজনকে এভাবে দেখে,,,,যাকে বলে জেলাস হওয়া নিহান জেলাস হচ্ছিলো তখন,,,,,তাই নিহান কিছু বলে ওদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে তার আগেই নিধী বলে উঠে,,,,
নিধীঃএই যে আপনি আমায় এভাবে কোলে নিয়েছেন কেনো??নামান আমায়,,,,,??
নিরবঃ(নিধীর কথায় ঘোর ভেঙে যায় নিরবের) আমারও তোমাকে কোলে নিয়ে ঘুরার কোনো শখ নেই,,,,(এটা বলে ঝটপট করে নিধীকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো নিরব,,,ঝটপট নিধীকে নিজের কাছ থেকে দূর করতে একটু অসচেতনভাবেই নামায় ওকে যাতে ও পরে যেতে গেলে নিহান দৌঁড়ে এসে ওকে ধরে নেয়,,,,)
নিহানঃতুমি ঠিক আছোতো নিধী,,,,??(অস্থির হয়ে)
নিধীঃ(নিহানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বললো,,,,) আমি একদম ঠিক আছি মি.নিহান আপনাকে আমার জন্য কেয়ার করতে হবে না,,,,,
নিরবঃহুহ কি নাটক করতে জানো না তুমি,,, এটা বলো না কেনো ইচ্ছে করেই ছেলেদের কোলে উঠার জন্য,,, ওদের কাছে আসার জন্য এসব ড্রামা করো,,,,আর তারপর স্বতী নারী হবার ডং করো,,,,
নিধীঃও হ্যালো মি.স্যার আমার এতো শখ না আপনার মতো ছেলের কোলে উঠার আর আপনাদের দুই ভাইয়ের মতো মানুষের কাছে আসার,,,,নিধীর জীবনে চলার জন্য কোনো পুরুষের দরকার নেই ও একাই একশ,,,,আর আপনার মতো মানুষেরা তো নিজেরা যে রকম অন্যকেও সে রকম মনে করবেই এতে আমার তাজ্জব হওয়ার কিছু নেই,,,,,
নিরবঃএই মেয়ে এখন কিন্তু তুমি অসভ্যতার সীমা লঙ্ঘন করছো,,,,আমি কিন্তু পরে,,,,
নিধীঃকি করবেন আপনি,,,,,কি করবেন শুনি,,,,ভয় পাই না আমি আপনাকে,,,,,মনে আছে সকালে আমার সাথে অসভ্যতার জন্য আপনার কি হাল করেছিলাম সেই হাল এখন আবারও করবো,,,,(এটা বলেই নিধী পাশের টেবিল থেকে নেয় একটা পানির বোতল যেটা নিধী এখানে সাথে করে এনেছিলো পানি খাবে বলে,,,,এটা নিয়ে আবারও পানি ছুঁড়ে মারে নিরবের মুখে,,,,নিরব ঠান্ডা পানির ঝাটকা পেয়ে ঠান্ডা হওয়ার বদলে আরও গরম হয়ে যায় রাগে,,,,)
নিরবঃইউ স্টুপিড গার্ল,,,,,(নিরব রেগে গিয়ে নিধীর হাতথেকে পানির বোতলটা কেড়ে এনে অবশিষ্ট পানি ওর মুখে দিয়ে মারে,,,,,)নেও এবার হয়েছে সমান সমান,,,,টিট ফোর টাট,,,,,(তারপর দুজনেরই মধ্যে শুরু হয় তুমুল ঝগড়া,,,সে কি কথা কাটাকাটি,,,,,আসলে নিহান সে কখন থেকেই দুজনকে থামানোর চেষ্টায় আছে কিন্তু কে শোনে কার কথা,,,,এবারও নিহান ওদের থামালে কেউ থামছে না দুজন তো তুমুল ঝগড়ায় ব্যাস্ত,,,,দুজন কি না কি বলছে একে ওপরকে,,,শেষমেষ নিহান সাট আপ বলে জোরে একটা চিৎকার করে ধমক দেয় দুজনকেই যাতে দুজনই খনিকের জন্য অফ হয়,,,,,)
নিহানঃনিধী তুমি এখনই আমার কেবিনে যাও আর ওখানে টেবিলে কিছু ফাইল্স আছে সেগুলা দেখো,,,,আমি আসছি নাও গো,,,,(নিধী এখনও সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে নিরবের দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে নিরবও ঠিক একই কাজ করছে,,,,,দুজনের মুখ বন্ধ করলে কি হবে চোখে চোখেও যেনো ঝগড়া চলছে ওদের,,,,তারপর বিষয়টি বুঝতে পেরে নিহান বললো)
নিহানঃনিধী যাও এখান থেকে ইট’স মাই ওর্ডার,,,,(ও জানে নিধী ওর বসদের কথা কখনো অমান্য করে না,,,,যেহেতু ও একজন বেষ্ট এমপ্লোয় নিহান জানে তাই ওকে ওর্ডার করলো,,,, নিধীও আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো,,,,,,তারপর নিহান নিরবকে বললো…….
চলবে…….
#দোটানা
লেখিকাঃআরোহী নুর
পর্বঃ৭
(নিহান নিরবকে বললো)
নিহানঃদেখ ভাইয়া তুই বার বার নিধীকে ছোট করিস কেনো বলতো,,,??ও গবীর এটাই কি ওর দোষ,,,গবীর বলে কি ও মানুষ না??
নিরবঃএকথা তুই বলছিস নিহান??,,,,তুই কি সত্যিই আমাদের নিহান,,,,??মনে আছে গবীরদের নাম শুনলেই তুই নাক চুটকাতি,,,আর তুই নাকি আজ একটা রাস্তার মেয়ের সাইড নিচ্ছিস,,,তুই আসার পর থেকেই খেয়াল করছি আমি তুই কেমন ভদ্র টাইপ হয়ে থাকিস সারাদিন,,,, এমনকি নামাযও পরিস,,,,মেয়েদের দিকেও তো তাকাতে দেখি না তোকে,,,,মনে আছে তোর আমাদের মধ্যে কিভাবে ড্রিংক করা নিয়ে কম্পিটিশন হতো,,,,কো কতো বেশি ড্রিংক করতে পারে আর পরে টাল হয়ে দুজন বাড়ির রাস্তাই ভুলে যেতাম,,,,কতো রঙিন রঙিন রাত কাটিয়েছি আমরা কতো ক্লাবে,,,,কতো সুন্দর সুন্দর আইটেমেরা পাগল ছিলো আমাদের জন্য,,,,আমাদের তো গার্লফ্রেন্ড নিয়েও কম্পিটিশন হতো যাকে আমি পছন্দ করতাম তাকে আমার আগে তুই পটিয়ে নিয়ে যেতি,,,,হা হা হা,,,,এখনও মেয়েরা মরে আমাদের উপর আর তুই নাকি সাধু হয়ে বেড়াচ্ছিস,,,,কাম ওন মাই ব্রাদার হেব সাম ফান,,,,
নিহানঃব্যাস ভাইয়া,,,,সেসব দিন চলে গেছে,,,,না জেনে না বুঝে জীবনে কতো ভুল করেছি আর আজ এই ভুলের মাসুলই হয়তো দিচ্ছে আমার এই মনটা,,,,
নিরবঃতুই কি বলছিস নিহান এসব,,,কি হয়েছে তোর পাগল টাগল হলি না তো,,,???আসলে তোকে কতো করে বললাম আমার সাথে লন্ডন যেতে কিন্তু তুই চট্টগ্রাম চলে গেলি আর সেখান থেকে সাধু হয়ে ফিরলি,,,,জিনিসটা কেমন যানি নিতে পারছি না আমি,,,,দেখ তুই জানিস আমি তোর ২ বছরের বড় হলেও আমরা ভাই কম ফ্রেন্ডসই বেশি তবে এবার তোর আসার পর থেকে তেমন কোনো কিছুই যেনো আমার ফিলই হচ্ছে না,,,,তুই তো কোনো কিছুতেই আমার সঙ্গী হচ্ছিস না,,,,না ক্লাবে যাস,,,,না ড্রিংক করিস,,,,না অসহায়দের মারদোর করিস,,,,কি করে পাল্টে গেলি তুই
নিহানঃভালোবাসা মানুষকে পাল্টে দেয় ভাইয়া মানুষকে সঠিক রাস্তা দেখায়,,,,আর আমাকেও দেখিয়েছে,,,,
নিরবঃভালোবাসা,,,,হা হা হা,,,,এসব আবার কোথা থেকে শিখলি,,,,হা হা হা,,,,,মেয়েরা শুধুই ভোগ পণ্য হয় ওদের আবার ভালোবাসা যায় না কি,,,,,জীবনে এনজয় করতে শিখ বাঁধনে জরাস না,,,,
নিহানঃভালোবাসার বাঁধনে জরাতে হয় না ভাইয়া ওটা নিজেই জড়িয়ে নেয় মানুষকে,,,,, আর একবার যে এর পাল্লায় পরে সে যত বড়ই ব্যক্তিত্ব হোক না কেনো তাকে হার মানতেই হয়,,,,তুই এখনও কারো প্রেমে পরিস নি তাই এসব বুঝবি না কিন্তু দেখিস ভাইয়া একদিন তুইও কারো প্রেমে পরবি আর তুইও সেদিন কিভাবে তার জন্য সব বিলিয়ে দিতে রাজি হয়ে যাবি তা নিজেও বুজতে পারবি না তুই,,,,
নিরবঃতা কখনোই সম্ভব নয় তোর ভালো করেই জানা আছে,,,,নিরব কখনোই কারো হাতে আসে নি আর আসবেও না,,,, কোনো বাঁধনই নিরবকে আটকাতে পারবে না,,,,,তা এটা বল তোকে কে এমন বাঁধনে জরালো??নাম টা শুনি মালটার,,,,হা হা
নিহানঃপ্রথম কথা এটা যে ও মাল না ভাইয়া,,,,ও অনেক নম্র ভদ্র মায়াবীনী পরী,,,,আর জানিস ও কে,,,,(এটা বলে নিহান নাম বলবে তখনি পিছন থেকে ডাক দেয় অফিসের পিয়ন রাজিব,,,,নিধী ওকে পাঠিয়েছে নিহান নিরবকে ডেকে নিয়ে যেতে নতুন প্রোজেক্টের জন্য ক্লায়েন্ট এসেছেন বলে,,,, তাই আর নিহানের নামটা বলা হলো না দুজনই পিয়নকে আসছি বলে রওয়ানা হলো,,,,)
(অফিসের কাজ তো ভালোই চলছে,,,, এদিকে নিরব কোনো পথ ছাড়ছে না নিধীকে নিচু করার ওর কাজে দোষ বার করার,,,কিন্তু ওকে বিনা কারনে অপমান করতে পারলেও ওর কাজে কোনো ভুল বার করতে পারছে না নিরব,,,,ক্ষনে ক্ষনে দুজনেরই হচ্ছে তুমুলঝগড়া,,,,,আর নিহান তো দিন রাত লেগেই আছে নিধীর মন জয় করার ধান্দায়,,,,আর নিধী বেচারি তো আছে দুজনের টানাটানিতে,,,,এভাবেই দু-তিন দিন গেলো আজকে সবাই একটা মিটিং এ বসেছে,,,,মিটিং টা ভালোই যাচ্ছে যেহেতু নিরব বস তো ও সবাইকে নিজের কাজের ধারনাটা বললো নতুন প্রোজেক্টা নিয়ে,,,,তারপর সবাইকে জিঙ্গেস করলো যে এখানে কারো কিছু বলার আছে কি না কেউ হাত না উঠালেও নিধী উঠালো,,,,মিটিংটাতে মি.আদনান সাহেবও আছেন,,,,উনি আনন্দের সহিত বললেন)
আদনানঃহুম বলো নিধী,,,,আমি জানতাম তুমি নিশ্চয়ই নিরবের আইডিয়ার সাথে মিল রেখে আরও ভালো কিছু বলার চেষ্টা করবে তবে বলো,,,,,
নিধীঃহুম আমি স্যারের আইডিয়ার সাথে একমত,,,,কিন্তু আমরা চাইলে এই চিন্তাকে আরও বিকশিত করে তা কাজে লাগাতে পারি,,,,
নিহানঃতা কিভাবে,,,,??
(তারপর নিধী নিরবের বলা কথাগুলোর সাথে মিল রেখে আরও ভালো কিছু চিন্তা দিলো সবাইকে প্রোজেক্টা নিয়ে,,,,সবাই নিধীর চিন্তাগুলো নিয়ে প্রশংসায় মেতে উঠলেন সবার ওর কথা ভালো লাগলো সবাই ওর সাথে একমত,,,,নিহানের মনে তখন নিধীকে নিয়ে গর্ববোধ কাজ করছিলো,,,, আদনান সাহেবেরও তাই,,,,কিন্তু বিষয়টি একমাত্র ভালো লাগে নি নিরবের,,,,ওর আইডিয়ার উপর নতুন আইডিয়া যোগ করে দিয়েছে নিধী,,,,কোথায় ও ওযোগ্য প্রমান করে নিধীকে অফিস থেকে বার করার প্লান করছে,,,,কিন্তু নিধী তো উল্টো ওর থেকেও বেশি খ্যাতি লাভ করে নিচ্ছে,,,,,নিরবতো একদম জ্বলেপুড়ে নেই,,,,কিন্তু সবার সামনে কিছু বলছে না,,,,,তারপর সবাই নিধীর তারিফ করতে করতে চলে গেলেন,,,,,নিহান নিধীকে সাথে সাথে নিজের কেবিনে ডাকালো,,,,,নিধীও গেলো,,,,)
নিধীঃমে আই কাম ইন মি.নিহান,,,,,
নিহানঃআসো আসো নিধী আমার রুমে আসতে তোমাকে নক করতে হবে না কি,,,,,??
নিধীঃকি কাজে ডেকেছেন বলেন??
নিহানঃবসো,,, (নিধী বসলো),,,,তা আজকে তুমি প্রোজেক্টটা নিয়ে যা বললে সত্যিই তোমার প্রশংসা না করে থাকা যায় না,,,,এমন চিন্তা তো আমার মাথায়ও আসে নি,,,,ভাবতেই অবাক লাগে সেই তিন বছর আগের পিচ্চি নিধী আজ কতো দায়িত্বজ্ঞান আর কতো দক্ষতা অর্জন করে নিয়েছে,,,,,তোমাকো যতো দেখি ততই গর্ব হয় আমার,,,,,
নিধীঃমি.নিহান আপনি কি আমায় শুধু এসব কথা বলার জন্য ডেকেছেন,,,,এমন হলে আমি এখানে আর বসতে পারবো না আমার অনেক কাজ আছে,,,,আপনার কোনো কাজের দরকার হলে আমাকে ডেকে নিবেন নয়তো আগামীতে এমনিতে ডাকবেন না আমাকে আশা করি,,,,(বলে নিধী চলে যেতে গেলে নিহান ছুটে এসে নিধীকে আটকানোর চেষ্টা করে)
নিহানঃআরে নিধী আমার কথা শুনো,,,,একটু বসে কথা বলো আমার সাথে বেশি কিছু তো চাইছি না তোমার কাছে,,,একটু কথা বলতে চাই ব্যাস,,,(এটা বলে নিহান নিধীকে হাত ধরে আটকাতে চাইলে নিধী হঠাৎ ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যাবে তখনি নিহান ধরে ফেলে ওকে,,,,,বাইরে থেকে তখনি একটা নেশালো বাতাসও আসতে শুরু হলো যা নিধীর মেষের ন্যায় ঘন চুলগুলো দোলাচ্ছে,,,,,নিহান তো খনিকের জন্য নিধীর চোখে হাঁড়িয়ে গেলো,,,,ঘোর লেগে গেছে ওর নিধীর চোখে তাকিয়ে আর নেশালো বাতাসটাও যেনো ওর ঘোর আরও পাকা করছে কিন্তু নিধীর এতে কোনো হেলদুল নেই,,,,ও অসস্থিবোধ করছে নিহানের এভাবে তাকানোয়,,,,দরজাটা তখন একটু খোলা ছিলো আর নিরবও তখন নিহানের কেবিনে আসছিলো দরজার কাছে আসতেই ওর চোখে দৃশ্যটা ধরা দিলো,,,,নিরব জানে না কেনো কিন্তু দৃশ্যটা দেখে ওর খনিক ফারাপ লাগলো,,,,খারাপ লাগার কারনটা নিরব জানতে ব্যার্থ,,,,তখনি নিরব নিহান বলে ধমকের সুরে ডাকলো,,,,নিধীও এতোক্ষণ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় ছিলো,,,, বার বার নিহানকে ডাকছিলোও কিন্তু নিহান তো ঘোরের রাজ্যে ছিলো,,,,নিরবের ডাকে নিহান ঘোরের রাজ্য থেকে বেড়িয়ে স্বাভাবিক হয়ে নিধীকে ছেড়ে দিলো,,,,,তারপর নিধী আর কিছু না বলে চলে গেলো ওখান থেকে,,,,)
নিহানঃকি হয়েছে ভাইয়া কোনো কাজে এসেছিস বুঝি??
নিরবঃনা তেমন কোনো কাজ না (এটা বলে নিরব মুখটা কেমন ঘোমড়ো করে চলে গেলো,,,,নিহান নিরবের এমন করার মানেটা বুঝতে ব্যার্থ হলো,,,,)
(নিরব কেবিনে চলে গেলো,,,,এতোক্ষণ ওর মাথায় শুধু নিধীর কাজের উন্নতি নিয়ে হিংসা চলছিলো আর এখন তো চোখের সামনে নিধী আর নিহানের সেই দৃশ্যটা ভাসছে বার বার,,,,এটা ভেবে ওর কেমন একটা খারাপ লাগছে কিন্তু এমনটা কেনো হচ্ছে ওর সাথে ও বুঝতে পারছে না,,,,সব মিলিয়ে ও নিধীকে সাজা দিতে চাইছে,,,,ও বুঝে উঠতে পারছে না ও এখন নিধীর সাথে কি এমন ব্যাবহার করলে ও নিজের মনে শান্তি পাবে,,,,শুধুই রাগে ফুলছে,,,,, তারপর কল করে নিধীকে কেবিনে ডাকিয়েই নিলো,,,,দরজাটা ফাঁক করাই ছিলো,,,,নিধী দরজায় নক করতে যাবে তখনই নিরব ওকে টান দিয়ে নিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো,,,,, নিরব সেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো নিধী আসার,,,,আসলেই এসব করলো,,,,নিরব নিধীর দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরলো দেয়ালের সাথে,,,নিধী শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে,,,,,এদিকে নিরব বলতে লাগলো,,,,)
নিরবঃএই মেয়ে কি মনে করিস নিজেকে,,,,একটা রাস্তার মেয়ে হয়ে চাঁদ ধরতে চাস,,,,তবে শোন তোর মতো মেয়েকে শুধু পায়ের জুতো বানিয়ে রাখা যায়,,,,ছেঁড়া চাদরের নিচে থেকে লাখের সপ্ন দেখিস তুই,,,,তোদের মতো সস্তা চালাক মেয়েকে ভালো করেই চেনা আছে আমার,,,,ফকিন্নি হয়ে রাজরানী হবার সপ্ন দেখিস তোরা,,,,তুইও তাই করতে চাইছিস না,,,,প্রথমে আমার বোকা বাবাকে ঠকিয়ে এখানে চাকরি পেয়ে গেলি আর এখন আমার ভাইকে মায়াজালে ফেলে আমাদের সম্পত্তির অংশও পেতে চাস না,,,,কিন্তু তোর এই চাল সাকসেসফুল হতে দিবো না আমি,,,,তোর তো টাকা চাই তাই না,,,,নাম চাই তবে আমার সাথেও কিছু রোমাঞ্চ কর না,,,,একটু আমার পাশেও আয়,,,আমি তোকে টাকা দিয়ে ভরিয়ে দেবো আর তারপর ছুঁড়ে ফেলবো তোকে,,,,(এটা বলে নিরব নিধীর ঠোঁটের দিকে এগোতো শুরু করেছে,,,আসলে নিরবের মাথায় তখন শুধু নিহান আর নিধীর সেই দৃশ্যটা ঘুরছিলো আর তারই জের ধরে এসব করছে নিরব,,,,ওর এমন রিয়াকশনের মানে ও নিজেও জানে না,,,,,নিধী সে কখন থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে,,,,নিরব তো ওকে ছাড়ছেই না,,,,এবার শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে নিরবকে ছাড়িয়ে ফেললো নিধী,,,,নিজের থেকে জোড়া একটা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরালো নিরবকে,,,,আর গালো বসিয়ে দিলো কষা একটা থাপ্পড়,,,,,নিরব সাথে সাথে একসাইড হয়ে ঝুঁকে গেলো)
নিরবঃতুমি কিন্তু ঠিক করো নি নিধী এটা(গালে হাত দিয়ে রক্তালো চোখে নিধীর দিকে তাকিয়ে,,,, ওর চোখ রাগে রক্তবর্ণ ধারন করেছে,,,,)
নিধীঃএকদম ঠিক করেছি,,,,মানুষরুপি পশু আপনি,,,,সাহস কি করে হলো আমার গায়ে হাত দেওয়ার,,,,আমার দিকে ওভাবে আগানোর,,,,,আপনার মতো অমানুষ আর কি করতে পারে,,,মেয়েদের ভোগপণ্য মনে করা অমানুষ আপনি যার নিজস্ব এই জ্ঞানটুকুও নেই যে নিজের ওই তুচ্ছ জিবনটুকুও একটা মেয়েরই দান,,,,আপনার যদি নিজের মায়ের প্রতি একটু সম্মান থাকতো তাহলে অন্য মেয়েকে নিয়ে এসব কখনোই ভাবতেন না,,,,,
নিরবঃআমি কাকে নিয়ে কি ভাবী বা ভাববো ওটা ভাবা বাদ দিয়ে এটা ভাবো যে তোমাকে এখন কে বাঁচাবে,,,,কারন নিরব চৌধুরীকে থাপ্পড় মারার সাজাতো তোমায় পেতেই হবে,,,,,এমন সাজা যা হয়তোবা তুমি কখনো কল্পনাও করতে পারো না,,,,
নিধীঃআপনার যা করার করে নিন,,,,নিধী কাউকেই ভয় পায় না,,,,,(এটা বলে সেখান থেকে চলে যায় নিধী,,,,নিহান সাথে সাথেই কাউকে কল করে,,,,তারপর কিছু কথা বলে সে নাম্বারে নিধীর ছবি পাঠিয়ে দেয়,,,,আর ঠোঁটের কোনে একটা শয়তানি হাসি আনে,,,,তারপর অফিস টাইম শেষ হতেই নিহান বাড়ি চলে আসলো নিধীকে ছাড়া আসতে চায় নি,,,,কিন্তু নিরব নিধীকে অনেক কাজ দিয়ে রেখেছে যা আজ ওকে অফিসেই পুরো করে যেতে বলেছে যেহেতু নিধীকে ওর যোগ্যতা প্রমান করতে হবে তাই এখন যেতে মানা করলো নিধী,,,,আর এখন গেলেও তো নিধী নিহানের সাথে যাবে না রিক্সায় করেই যাবে তাই নিহান চলে গেলো না চাইতেও,,,,যাবার আগে নিধীকে একটু জলদি কাজ শেষ করে চলে আসতে বললো,,,,নিধী এতে কোনো রিয়াক্ট করলো না বরং নিজের কাজে মেতে থাকলো,,,,তারপর নিহান চলে গেলো নিরাশ হয়ে,,,,এদিকে কাজ শেষে নিরবও চলে গেলো,,,,সবাই চলে গেছে শুধু নিধীই রয়ে গেছে,,,,রাত হয়ে গেলো নিধীর কাজ শেষ করতে করতে,,,,,বাড়িতে নিহান শান্তি পাচ্ছে না নিধীর জন্য,,,ছটফট করছে,,, নিধীকে কয়েকবার কলও করেছিলো ও উঠায় নি,,,,আদনান সাহেব আর উনার স্ত্রী মাও খনিক চিন্তিত নিধীর এখনও না আসায়,,,,,নিধীর মাও অনেক চিন্তা করছেন পথপানে চেয়ে বসে আছেন মেয়ের জন্য,,,,উনারা ওকে ফোন করলে ও উনাদের ফোন উঠালো আর বললো ওর অনেক কাজ ছিলো শেষ হয়ে গেছে একটু সময়ে বাড়ি ফিরবে তাই বাড়ি থেকেও কাউকে আসতে মানা করলো আর আসলেও তো ও জাবে না উনাদের সাথে সবাই একথা জানে,,,,এদিকে আদনান সাহেব এটা নিয়ে নিরবকে জবাবদিহি করলে ও বলে যে ও শুধু নিধীর যোগ্যতা প্রমাণ করছে এখানে ওকে জবাবদিহি করে কোনো লাভ নেই,,,,,রাত ১০ টা হয়ে গেছে নিধীর কোনো খোঁজ নেই,,,,সবাই এখন অস্থির,,,,নিধীর ফোনটাও অফ যাচ্ছে সবাই এখন চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেছেন,,,নিধীর মা কান্না জুড়ে দিয়েছেন,,,,নিহানতো এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না,,,,নিরব প্রথমপ্রথম খুশি হলে এখন কেনো ওর মনে খচখচ করছে বুঝে উঠতে পারছে না,,,,যেহেতু ও জানে নিধীর সাথে কি ঘটতে চলছে আর তাই এমন খারাপ লাগছে ওর কিন্তু হঠাৎ করে ওর এমন খারাপ লাগাটা মেনে নিতে পারছে না নিরব,,,,ওর তো কখনোই কারো জন্য খারাপ লাগে না,,,,ও তে ডেবিল,,,,আর নিধী এই সাজাটা ডিজার্ভ করে,,,,এসব বলে নিজের মনকে শান্তনা দিচ্ছে নিরব,,,,নিহানতো কোনো মতে শান্তি পাচ্ছে না তাই অবশেষে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়বে নিধীর খোঁজে তখনি,,,,,,,,
চলবে…..