দোটানা #পর্বঃ০১

0
3019

#দোটানা
#পর্বঃ০১
#লেখিকাঃআরোহী_নুর

নিহানঃএই মেয়ে তোমার সাহস তো কম নয়,,,,,, বড় লোকের ছেলে দেখলেই প্রেম করতে ইচ্ছা জাগে না,,,,,আমি কয়েকদিন থেকে ফলো করছি তুমি আমায় দেখলেই মুচকি মুচকি হাসো,,,,,কি একটা নজরে তাকাও আমার দিকে,,,,,ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠাও,,,হোয়াটসঅ্যাপে আমাকে টেক্সট পাঠাও,,,,,, কারনে অকারনে কথা বলার চেষ্টা করো আমার সাথে,,,,,,এখন তো সব লিমিট ক্রস করে দিয়েছো তুমি,,,,,কলেজের সবাইকে বলে বলে বেড়িয়েছে যে আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড,,,,, কি কোয়ালিটি আছে তোমার আমার গালফ্রেন্ড হবার,,,,থাকো তো বেহেনজি টাইপ হয়ে,,,,দেখেই মনে হয় বাবার পকেটে দুটাকা নেই তোমাকে কাপড় চোপড় কিনে দেওয়ার মতো,,,,হাতে বেশি হলে ১০ হাজার টাকার ফোন হবে হয়তো কেউ ওটা ভিক্ষা হিসেবে দিয়েছে,,,, ওটা দিয়ে আবার ফেসবুকও চালাও,,,,আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দাও,,,,(তাছিল্যের হাসি দিয়ে)জানো তোমার মতো মেয়েকে আমি নিজের জুতো ক্লিন করার জন্যও রাখবো না আর তুমি না কি হবে আমার গালফ্রেন্ড,,,,,নিজেকে দেখেছো কভু আয়নায়,,,,
,
,
(নিধী কিছুই বলছে না শুধু ওর জায়গায় দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে কথাগুলো শুনছিলো,,,,,চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি ঝরছে ওর,,,,,এতোগুলো অপবাধ একসাথে যে ওর মাথায় উঠে যাবে তা ও জানতো না,,,,নিহান কলেজের সবথেকে হ্যান্ডসাম ছেলে কলেজের প্রায় সব মেয়েই ফিদা ওর উপর,,,,বড়লোক বাবার ছেলে,,,,তাই অহংকারের কমতি নেই ওর মধ্যে,,,, মেয়েদের তো নিজের পকেটেই রাখে,,,,,নিধী অনেক গরীব ঘরের মেয়ে,,,,গরীব বললে ভুল হবে মা-বাবার একমাত্র মেয়ে,,,,ওর বাবা একটা সরকারি চাকরি করতেন মেয়েকে পড়ানোর খুব ইচ্ছে ছিলো তাই এতো বড় কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন,,,,,ওর কোনো আশা পুরনে কখনো কোনো কমতি রাখেন নি ওর বাবা হাতেও ওর অনেক দামী ফোন ছিলো,,,,কিন্তু ৪ মাস আগে হঠাৎই ওর বাবা ট্রাক এক্সিডেন্টে মারা যান,,,,নিহান তা জানে না,,,,তারপর ওর মায়ের আর নিজের ভার ও নিজেই সামলাচ্ছে টিউশন করিয়ে,,,,হাতের দামী ফোনটাও বিক্রি করে সেকেন্ড হ্যান্ড একটা ফোন কিনেছে চলার মতো,,,,,আগে অনেক ভালো কাপড় পরে ঘুরাফিরা করলেও এখন পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে ওর এ দূর্দশা,,,, নিধী ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের ছাত্রী,,,,নিহান ওর দুই ইয়ার সিনিওর,,,,,নিধী দেখতে খুব সুন্দর,,,,, কলেজের প্রায় সব ছেলেই ওর সাথে প্রেম করতে চায়,,,,কিন্তু ও সব ছেলেদের এড়িয়ে চলে ও অন্যান্য মেয়েদের মতো না,,,,সারাদিন হাসি খুশি আর পড়ালেখা নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে চায়,,,,ও অনেক বোকা টাইপেরও,,,,যার তার কথায় বিশ্বাস করে,,,,ওর ক্লাসের বেশিরভাগ মেয়েই ওর সাথে জেলাস কারন ওর বাকিদের মতো বড় স্ট্যাটাস না থাকলেও ছেলেরা ওর পিছন পাগল তাই ক্লাসের কিছু মেয়ে মিলে ওকে নিচু করার একটা বড়সড় প্লেন করে,,,,ও গরীব বলে কেউ ওর সাথে বন্ধুত্বও করতে আসে না,,,,কিন্তু এ কদিন হলো ক্লাসের মেয়েদের একটা গ্রুপ ওর সাথে খুব মেলামেশা করতে শুরু করেছে,,,,,ও তো মনে করেছিলো হয়তো ওরা ওকে বন্ধু মেনে নিয়েছে তাই খুশি হয়ে ওদের সাথে থাকতে শুরু করলো,,,,ওই মেয়েগুলো প্রায়ই ওকে বলতো নিহান ওকে ভালোবাসে ওকে নিয়ে সারাদিন কথা বলে,,,,নিহানকে নিয়ে এটা ওটা বলতো সারাদিন ওকে,,,,,ও প্রথম প্রথম সেসবে কান না দিলে আস্তে আস্তে নিহানকে লাইক করা আরম্ভ করে,,,,,নিহান অহংকারী হলেও অনেক মিশুক আর হেল্পফুল ছিলো,,,,নিহানের পারসোনালিটি কেনো যেনো ওর খুব ভালো লাগতো,,,নিধী ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ কিছুই ব্যবহার করতো না,,,,কিন্তু একদিন মেয়েগুলা জোর করেই নিধীর ফোনে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ খুলে এসব করে,,,,নিধী বার বার বারন করলে মেয়েগুলা বলে নিহান নিজেই না কি ওদের বলেছে তা করতে কারন নিহান নাকি লজ্জায় নিজে থেকে নিধীকে কিছু বলতে পারছে না,,,,এমনকি মেয়েগুলাই এসব রটিয়েছে যে নিধী নিজেকে নিহানের গার্লফ্রেন্ড বলে দাবী করছে,,,,,যার জের ধরে নিহান আজ সমস্ত কলেজের সব স্টুডেন্টদের সামনে ওকে এভাবে ওপমান করছে সবাই তা দেখে জোরে জোরে হাসছে,,,,, তারপর নিধী এই অপমান সহ্য করতে না পেরে সেখান থেকে ছুটে চলে যায়,,,,,সবাই তখনও সজোরে হাসছে,,,,এতো অপমান করার পরও যেনো নিহানের জেদ কমে নি,,,,নিধীর জায়গায় বড়লোকের মেয়ে হলে হয়তো নিহান এমনটা করতো না বরং ওর সাথে তাল মেলাতো নিধী গবীর বলেই ওকে ধিক্কার করলো,,,,,তারপর পরদিন থেকে নিধী কলেজে আসলেও নিহানের দিকে আর তাকায়ও নি,,,,কারো সাথেই কথা বলে নি,,,,ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপে নিহানকে ব্লক করে দিয়ে সেগুলো কেটে দিয়েছে,,,,,বিষয়টা বুঝতে পেরে নিহান তা সহ্য করতে পারছে না,,,,একটা ফকিন্নির মেয়ে হয়ে ওকে এটিটিউড দেখাচ্ছে তা নিহান মানতে পারছে না,,,,তাই নিহান মনে মনে ঠিক করলো ওকে আস্তা করে জব্দ করবে,,,,,আর কি করবে তা নিহান কাউকেই বললো না,,,,পরেরদিন থেকে ও নিধীর সাথে ভালোভাবে কথা বলা শুরু করলো ওকে সরি পর্যন্ত বললো তাও সবার সামনে এনে যেভাবে ওকে অপমান করেছিলো সেভাবেই,,,,সবাই তো তা দেখে অবাক,,,,কিন্তু কেউ তো জানে না নিহানের মনে কি চলছিলো,,,,নিধী সেদিন সবার সামনে নিহানকে ক্ষমা করে দিলেও ওর কাছ থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতো কিন্তু নিহান বার বার ওর পাশ ঘেষতে শুরু করে,,,,ওর সাথে আস্তে আস্তে ভালো বন্ধুত্ব স্থাপন করে নেয়,,,,তারপর একদিন ওকে প্রপোজ করে দেয় কোনো এক জায়গায় একান্তে ডেকে নিয়ে নিধী সাথে সাথে মানা করে দিলে নিহান ওকে ভয় দেখায় যে নিধী ওর সাথে প্রেম না করলে ও আত্নহত্যা করবে,,,,হাতে ছুঁড়িও ধরে,,,,নিধী আবারও বোকার মতো সব বিশ্বাস করে ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করে নেয়,,,,তারপর নিহান নিজেই ওকে ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্ট খুলে দেয় আর ওর সাথে কথা বলতে বলে,,,,এই ফাঁকে নিহান অনেক বার নিধীকে কিস করতে চেয়েছে কিন্তু নিধী করে নি ও বলেছে যদিও কিছু করতে হয় তবে পবিত্রভাবে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে করবে তা না হলে ওর পাশে না আসতে,,,,,নিহান ওকে ওর কিছু পার্সোনাল পিকও দিতে বলে ও তাতেও মানা করে দেয়,,,নিধী বলে এমন হলে ওর সাথে ব্রেকআপ করে দিবে,,,,নিহান বুঝতে পারে ও খুব ভদ্র মেয়ে তাই ওকে জব্দ করতে অন্য কিছু ট্রাই করতে হবে,,,,তাই একদিন ও নিধীকে বলে যে ও আর কখনো ওর কাছে কিস বা ওর পার্সোনাল পিক চাইবে না কিন্তু ওকে এর জন্য ওর ভালোবাসার একটা ছোট্ট পরীক্ষা দিতে হবে,,,,নিধী তা জানতে চাইলে নিহান বলে নিধীকে কলেজ মাঠে পুরো কলেজের সবার সামনে হাটু গেড়ে হাতে ফুল নিয়ে ওকে প্রোপোজ করতে হবে,,,,,নিধী প্রথমে না মানলেও নিহান ওকে ইমোশনালী ব্লেকমেইল করে তা করিয়ে নেয়,,,,নিহান ওর আর নিধীর সম্পর্কের কথা কাউকে জানায় নি,,,,,নিধীকেও জানাতে মানা করেছে,,,,,বলেছে সময় হলেই সবাইকে জানাবে,,,,আর আজ নিহান বলেছে নিধী সবার সামনে ওকে প্রপোজ করলে ও নিধীর প্রপোজাল একসেপ্ট করে নিবে,,,,,তারপর নিধী না চাইতেও তা করতে বাধ্য হয়,,,,নিহান সেদিন কলেজের সবাইকে মাঠে ডেকে এনেছে তারপর নিধী ভয়ে ভয়ে সবার সামনে বসে হাতে একটা লাল গোলাপ নিয়ে নিহানের সামনে তুলে ধরে আর ওকে আই লাভ ইউ বলে,,,সবাই এটা শুনে সজোরে হেসে উঠে কারন ওরা জানে নিহান ওকে মানা করে দেবে কোথায় নিহান আর কোথায় ও,,,,কিন্তু নিধীর মনে অনেক আশা ছিলো কারন সে তখন নিহানকে নিয়ে মনে অনেক বিশ্বাস স্থাপন করে নিয়েছিলো,,,,মনের কোনে নিহানের জন্য সত্য ভালোবাসাটা উকি দিতে যাচ্ছিলো,,,,,কিন্তু ওর সব ধারনা ভুল করে দেয় নিহান,,,, নিহানও সজোরে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে উঠে তারপর ওকে যা তা অপমান করে,,,,,পুরো কলেজকে জানায় যে ও কিভাবে নিধীকে বোকা বানিয়ে এতোদিন প্রেমের নাটক করেছে,,,,তারপর ওকে ফকিন্নির মেয়ে আরও কি কি বলে অপমান করে,,,,নিধী সেদিনও কিছু বলে নি শুধু মাথা নিচু করে সব শুনেছে চোখের জল ফেলতে ফেলতে তারপর সবার হাসি তাচ্ছিল্য সহ্য করতে না পেরে চলে আসে সেখান থেকে পালিয়ে,,,,,সেদিন হয়তো নিহান অনেক মজা পেয়েছিলো,,,,,কিন্তু পরেরদিন আর নিধীকে কলেজে না দেখতে পেয়ে ওর কেমন জানি খারাপ লাগলো,,,,এমনি আরও তিনটি দিন গেলো নিধী কলেজে আসলো না,,,,এদিকে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপেও আবার ওকে ব্লক করে দিয়েছে নিধী,,,,,নিহান কেনো যেনো নিধীর খোঁজ নিতে চাইলো,,,, ওর ক্লাসের কেউই ওর খোঁজ জানে না,,,,ওকে তো কেউ হিসাবেও ধরে নি তবে ওর খোঁজ নিবে কোথা থেকে,,,,নিহান জানতে পারলো নিধী কলেজ ছেড়ে দিয়েছে ওর মনে কেমন যেনো খচ করে উঠলো,,,,,তারপর নিহান খুঁজতে খুঁজতে ওর বাসায় চলে গেলো তারপর ওকে ওখানেও পেলো না আশপাশ থেকে জানতে পারলো নিধী আর ওর মা শহর ছেড়ে চলে গেছে কোথায় গেছে তা কেউ জানে না,,,,,নিহানের কথাটা শোনার ওর এক নিমিষের জন্য মনে হলো ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু হাড়িয়ে ফেলেছে…….

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here