#দ্বিতীয়_পুরুষ,পর্ব ১০,১১
নীলাভ্র জহির
১০
চিত্রা এখন নতুন বউ। তাই আত্মীয়-স্বজন সবার বাড়ি থেকে তার দাওয়াত আসছে। আজকে সে রূপকের বড় খালার বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাবে। সকালবেলা খাওয়া দাওয়া সেরে গোসল করে খুব সুন্দর একটা শাড়ী পড়ল চিত্রা। এই শাড়িটা সে বিয়েতে পেয়েছিল তবে কখনো পড়া হয়নি। রূপক তাকে গত রাতেই বলেছে বউ তোমার নীল শাড়ীটা পিন্দো। শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজ ছিলনা তাই চিত্রা রূপককে জানিয়েছিল কথাটা। রূপক গতরাতে তার জন্য নীল রঙের ব্লাউজ পিস এনেছিল। সেই রাতেই স্বামীর সঙ্গে পাশের বাড়িতে গিয়ে এক মহিলাকে ব্লাউজ বানাতে দিয়েছিল চিত্রা। এক রাতেই মহিলা ব্লাউজ তৈরি করে দিয়েছে তাকে। একটু আগেই মহিলা ব্লাউজ দিয়ে গেছে। সেটা পরে এখন রানীর মত করে সাজবে সে। সে কোন রাজার রানী নয় সত্যি। তবে রূপক তো তার কাছে একজন রাজা। সে রূপকের রাজ্যের রানী ।
আজকে রূপক দোকানে গেল না। ভাত খেয়ে গোসল করার পর সে নিজেও তার সুন্দর একটা শার্ট পরে নিল। বিয়ে উপলক্ষে শার্ট টা বানিয়েছিল যত্ন করে। ভেবে রেখেছিল বউয়ের সঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময় এই শার্টটা পরবে।
চিত্রা সুন্দর করে চুল বেঁধে মুখে একটু পাউডার লাগাচ্ছিল। রূপক এসে বলল, বউ তোমার ত্যালডা দাও তো।
চিত্রা বিয়েতে পেয়েছে একটা বড় নারিকেল তেলের বোতল। বোতলটা এগিয়ে দিল রূপকের দিকে। রূপক হাতের তালুতে তেল নিয়ে মাথায় মেসেজ করল। গোসলের পর মাথায় তেল দেয়াটা তার অভ্যাস। বেশিরভাগ সময়ই তার মাথাতে তেল জবজব করে। তৈলাক্ত হাত মুখে ডলতেই চিত্রা চেঁচিয়ে উঠল, আপনি এটা কি করতাছেন?
কেন বউ?
মুখে কেউ ত্যাল দেয়? মুখটা কালা হইয়া গেল।
তাইলে মুখে কি দেয়?
আপনি দেখি কিছুই জানেন না। মুখের স্নো লাগায়।
আমিও ছোনো লাগাবো?
হ, আমার এইখান থাইকা একটা ছোনো লাগান মুখে। একটু পাউডার দিয়া দিই আসেন।
রূপক শার্টের বোতাম খুলে হাত উচু করে তার বগলের নিচ এগিয়ে দিল পাউডার লাগানোর জন্য। চিত্রা রূপকের গলা ও বগলের নিচে পাউডার মাখিয়ে দিল। সাদা রংয়ের ধবধবে পাউডারে কাল শরীরটা একদম একাকার হয়ে গেল। রূপকের বুকের দিকে তাকালে চিত্রের শরীর কেমন টনটন করে ওঠে। চিত্রা নিজের চিরুনি দিয়ে রূপকের মাথাটা ব্রাশ করে দিল।
শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে রূপক বললো, আপনেরে একটা কথা কইতাম।
কও।
এখন ছেলেদের কিরিম পাওয়া যায়। আপনি একটা কিইনা আইনেন।
কেন আমি কি এমনিতে কম সুন্দর?
না, তাও। আপনি তো আল্লাহ দিলে অনেক সুন্দর। তাও কইলাম আরকি।
আইচ্ছা বউ ঠিক আছে।
চিত্রার ব্লাউজের উপর দিয়ে তার বুকের ওপরের অংশ বের হয়ে আছে। রূপকের দৃষ্টি সেখানে চলে গেল। সেখানে চোখ রেখে মিটমিট করে হাসতে লাগলো রূপক। চিত্রার ভরা যৌবন। সতেজ সৌন্দর্য্যে ভরপুর হয়ে আছে তার শরীর। রূপকের বড় ভালো লাগে তার বউকে দেখতে। বউয়ের দিকে তাকালেই তার শরীরে একধরনের জোয়ার আসে। নিজেকে তখন তাগড়া জোয়ান মনে হয়।
চিত্রার সাজগোজ শেষ হলে রূপক বলল তোমারে আইজ সুন্দর লাগতাছে। তুমি সবসময় এমন সাইজা গুইজা থাকবার পারো না?
লজ্জায় রক্তিম হয়ে ওঠে চিত্রার গাল। মাথার ঘোমটা দ্রুত সামনে টেনে দিলো। রূপক তার ঘোমটাটা পিছন দিকে সরিয়ে দিয়ে বলে, নিজেরে ঢাইকা রাখছো কেন? আমার একটু দেখবার দাও।
চিত্রার আরো লজ্জা লাগে। মুচকি মুচকি হাসি লেগে রইল চিত্রার ঠোঁটে। একটা অটো রিক্সা নিয়ে তারা দুজনে বেরিয়ে পড়ল খালার বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। চিত্রাকে সেখানে দুটো দিন থাকতে হবে। দোকান রেখে রূপক থাকতে পারবে না। তাই চিত্রার শুধু নিজের জন্য দুটো শাড়ি ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে করে নিয়ে নিয়েছে।
মতির দোকানের সামনের রিকশা দাঁড় করালো রূপক। খালার বাড়িতে যাচ্ছে সে। এক কেজি জিলাপি নিয়ে যেতে হবে। রূপক জিলাপি কেনার ফাঁকে দৌড়ে এসে চিত্রা কে বলল, বউ তুমি জিলাপি খাইবা?
চিত্রা দুদিকে মাথা নাড়লো, না খামুনা।
সেদিন কইছিলা খাইবা। মাত্র গরম গরম জিলাপি ভাজছে। তোমারে দুইটা আইনা দেই খাও।
আরে না লাগবো না। আমরাতো জিলাপি লগে নিয়া যাইতেছি। ওইখানে গেলে ওরা খাইতে দিবো।
যদি না দেয়? তুমি এইখানে দুইটা খাইয়া লও।
ধুর আপনি যে কি কন? এ রাস্তার মধ্যে গাড়ি খাড়া করাইয়া আমি জিলাপি খামু।
আচ্ছা, ঠিক আছে। তাইলে বেশি কইরা নেই।
খালি জিলাপি নিয়া যাওয়া যাইবো না। এক কেজি আপেল না নিলে কেমন দেখায়? আপনে জিলাপি এক কেজিই নেন। বেশি নেওয়া লাগবো না।
আচ্ছা, বউ।
রূপক রাস্তা পেরিয়ে দৌড়ে গিয়ে মতির দোকান থেকে গরম গরম এক কেজি জিলাপি প্যাকেটে তুলে নিল। আবারো দৌড়ে এসে রিক্সায় উঠল সে। জিলাপির প্যাকেটটা রাখলও বউয়ের কাপড়ের ব্যাগের ভেতর।
চিত্রা লজ্জায় মুখ লাল টকটকে করে রেখেছে। রুপক তার প্রতি যে ভালোবাসা গুলো দেখায় সেগুলো ভালো লাগে তার। নিজের সৌভাগ্যকে এখনো তার খুব ঈর্ষা হচ্ছে।
ফলমূলের দোকানে দাঁড়িয়ে রূপক এক কেজি আপেল কিনল। বড় বড় দুই প্যাকেট বিস্কুট এক প্যাকেট চানাচুর ও কিনলো। তার খালাতো ভাইয়ের দুটো বাচ্চা আছে। বাচ্চাদের জন্য চকলেট কিনে নিল রূপক। চিত্রা রূপকের এত কিছু কেনা দেখে মুগ্ধ হলো। তার স্বামীর দিলটা অনেক বড়। এই মানুষটাকে সে তাই অনেক সম্মান করে।
বড় খালার পাকা বাড়ি। তিন ছেলে ও ছেলের বউ নাতিপুতি নিয়ে তার সুখের সংসার। উঠানে রিকশা এসে দাঁড়াতেই তারা দৌড়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলেন। বাচ্চা-কাচ্চারা হইচই করতে লাগলো। শুরু হলো নতুন বউকে বরণ করার তোড়জোড়। চিত্রা রিকশা থেকে নেমে খালা খালুকে সালাম জানায়। খালাতো ভাইয়ের বউ রা এসে সসম্মানে চিত্রাকে বাড়ির ভিতর নিয়ে গেল। সবার সঙ্গে বিয়ের দিনই পরিচয় হয়েছিল চিত্রার। তাই আজ কথা বলতে খুব একটা অসুবিধায় পড়তে হলো না।
খালার বড় বউ তার ঘরে বসতে দিলে ওদের। খোলা দরজার বাইরে কিছু মহিলা এসে দাঁড়িয়েছে নতুন বউকে দেখতে। ছোট ছোট বাচ্চা কাচ্চারা চিত্রার আশে পাশে এসে ভিড় করছে। তাদের সবাইকে এড়িয়ে গিয়ে কেবলমাত্র চিত্রা ও রূপককে দুই গ্লাস শরবত দেয়া হলো। সবার সামনে শরবত খেতে চিত্রার লজ্জা লাগছিল। কিন্তু কিছু করার নেই। তারা অতিথি বলে তাদের বরণ করতেই শুধু দুইজনকে শরবত দেয়া হয়েছে। রূপক তার নিজের গ্লাসের শরবত ঢকঢক করে খেয়ে নিল। খাওয়া শেষে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলল, শরবত টা ভালো হইছে। খাও বউ।
রূপকের কথা শুনে তার খালাতো ভাইয়ের বউ ফোড়ন কেটে বললেন, দেখছো বউয়ের জন্য পিরিতি দেখছো।
বউ দেখতে আসা মহিলারা হেসে ফেললেন। অনেকেই বউ দেখে তখন চলে যাওয়া শুরু করেছেন। কারণ মেহমানকে এখন নাস্তা দেয়া হবে। রুপকের ভাবি সবাইকে থাকতে বলছিলেন নাস্তা খেয়ে যাওয়ার জন্য।
বড় ট্রেতে করে বিস্কুট, চানাচুর, আপেল, জিলাপি ও পেয়ারা খেতে দেয়া হলো।
নাস্তা খাওয়ার পর চিত্রা বাইরে রান্নাঘরের পাশে এসে বসলো। আদা রসুন বাটার ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে। বাড়িতে মেহমান এলে একসঙ্গে অনেকগুলো আদা রসুন পেঁয়াজ কাটা হয়। মসলা বাটাবাটির এই সুঘ্রাণ চিত্রার খুবই ভালো লাগে। বড় খালা একটা পাতিলে করে মুরগির মাংস ধুচ্ছেন। অন্য একটা গামলায় লাল টকটকে গরুর মাংস। কিছুক্ষণ আগে মাছ ভাজি হয়েছে। মাছ ভাজার ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে।
দুইটা চুলার একটা চুলায় খালা করাইতে তেল তুলে দিয়েছেন। তেল গরম হয়ে ধোয়া উঠতেই সেখানে ছেড়ে দিলেন পিঠা। নারিকেলের পুলি পিঠা। অন্য একটা পিঠা তৈরি করছেন ভাবীরা। পিঠা গুলো ভাজা হতেই একটা পিরিচে করে ঘরে রূপককে দিয়ে আসা হলো। রুপক বিছানায় শুয়ে তার মোবাইলের ছবি দেখছে। মচমচে পিঠা গুলো দেখে খুশি হয়ে উঠল রূপক।
খালা বললেন মা তুমি ঘরে যাও। পিঠা খাইয়া লও।
সমস্যা নাই খালা। আমি পরে খাব।
পরে কি খাইবা? একলগে খাইয়া লও। আমি আরো ভাইজা পাঠাইয়া দিতাছি। ঘরে যাও গা।
সমস্যা নাই তো খালা। আপনেরা আছেন। ভাবির আছে। আমি আপনের লগে খামু।
চিত্রার বড় ভাবী বললেন, আমরা তো আর মেহমান না।
চিত্রা সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল আমারে মেহমান বানায়া দিয়েন না ভাবি। মনে করেন আমিও আপনেদের বাড়ির মানুষ।
ও তাই আর মনে করলে হইল। প্রথমবার আইসেন আমাগো বাড়িতে। যান ভাবি আপনি নাস্তা খাইয়া লন।
এখুনি তো নাস্তা খাইছি।
পিঠা গুলা গরম গরম খাইতে ভালো লাগবো।
খালা আরো এক বাটি পিঠা চুলা থেকে নামিয়ে দিলেন। সেগুলো চিত্রার হাতে দিয়ে বললেন, ঘরে যাও।
এবার আর চিত্রা মানা করতে পারলো না। নতুন শাড়ির আচল বারবার মাথা থেকে পড়ে যাচ্ছিল। এভাবে শাড়ির আঁচল টেনে ধরে রাখল সে। রূপক তাকে দেখে খুশি খুশি গলায় বললো, তুমি আইসো। একলা খাইতে মন চাইতাছে না।
হইছে। কইতে হইবো না। ভাবীরা আমারে শরম দিতাছে।
আমার বউরে খাইতে কইসি। মানসের বউরে খাইতে কই নাই।
চিত্রা মাথায় ঘোমটা টেনে দিয়ে চৌকির উপর এসে বসলো। গরম গরম পিঠা খেতে শুরু করল। পিঠা গুলো খুবই মজা হয়েছে। লবণ একটু বেশি লাগলেও খেতে খুবই সুস্বাদু।
হঠাৎ গত সন্ধ্যার কথা মনে পড়ল চিত্রার। খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। রূপকের সব আত্মীয় স্বজন তাকে দাওয়াত দিচ্ছে। গতকালও একজন এসেছিলেন চিত্রাকে নিয়ে যেতে। রূপকের মা বলেছেন অন্য একদিন যাবে, যাওয়ার দিন শেষ হয়নি। কিন্তু তখনই কঠিন একটা কথা বলেছিলেন তিনি, বিয়ের এক মাস প্রায় হইয়া গেক। বিয়ের পরের দিন সেই যে একবার নাইওর নিয়ে গেল এরপর আর কোনদিনও দাওয়াত দিল না । আমার পোলাটার কপালটাই এমন খারাপ শ্বশুরবাড়িতে একবেলা কারো ঘরে দাওয়াত খাওয়ার সৌভাগ্য তার হয় নাই।
শাশুড়ির মুখের কাটা কাটা কথাগুলো শুনে চিত্রার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
সে বলেছে, মা আপনি মন খারাপ কইরেন না। আমার তো সেরকম কোনো আত্মীয়-স্বজন নাই।
হ, আমার চেয়ে পোলাডার কপাল খারাপ। অন্য জায়গায় বিয়া দিলে কত দাওয়াত পাই তো। খালি কি দাওয়াত কত আদরও পাইত।
চিত্রা তখন খুব বলতে ইচ্ছে করছিল তাহলে অন্য কোথাও বিয়ে দিতেন। কিন্তু সেটা বললে শাশুড়ি নিশ্চয়ই অনেক রেগে যাবে। তাই সে আর কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো।
মহিলা তখন বললেন পোলাডা আমার জীবনে শশুরের বাড়ির দাওয়াত পাবো না। জৈষ্ঠ মাসে আম কাঁঠাল খাইতে পারবো না। শ্বাশুড়ীর হাতের পিঠা পুলি খাইতে পারবো না। এমন কপাল কইরা জন্মাইছে।
চিত্রা কোন কথার উত্তর দেয়নি। চুপচাপ শুনেছে সবকিছু। এসব কথা শোনার পর তার নিজেরও আজকে খালার বাড়িতে যাওয়ার কোনো মন মানসিকতা ছিল না। কিন্তু গতরাতে রূপক তার জন্য ব্লাউজ পিস নিয়ে এসে তার হাতে দিয়ে বলেছে কালকে খালার বাড়ি যাইতে হইবো। তুমি খুব সুন্দর কইরা সাজবা। আমার অনেক দিনের শখ আছিল আমি খালার বাড়িতে বউ নিয়া যামু। খালা খুব ভালা মানুষ।
রূপকের কথা শুনে না করতে পারেনি। সকালবেলা খুশিমনে তাই তৈরি হয়ে নিয়েছে।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর রূপক চিত্রা বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিয়েছিল। চিত্রার খুব লজ্জা লাগছিল। কিন্তু আর ভাবিরা তখন গোসল করতে গেছে। খালাও বাড়িতে নেই। তাই স্বামীর সঙ্গে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার জন্য শুয়েছে সে। অনেক মজার মজার খাবার খাওয়ার পর শরীরে এক ধরনের ভাব এসে গেছে। রূপক দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে বলল, আমার খালা বড় ভালা মানুষ কইছিলাম না।
হ, আমার তো ভালোই লাগলো।
তোমারে ও তার ভালো লাগছে।
হাতের কাশিটা রূপক ফেলে দিয়ে চিত্রাকে তার বুকের মধ্যে টেনে নিল। চিত্রার থলথলে পেটে হাত দিয়ে মৃদু চাপ দিতে দিতে বলল, শইলডা কেমন জানি করতাছে?
কেমন করতাছে?
বুঝতাছ না? হইবো নাকি?
চিত্রা জিভে কামড় দিয়ে বলল মাথা খারাপ হইছে নি আপনার। মেহমানের বাসায় আইসা এগুলা।
রূপক চিত্রাকে আরো কাছে টেনে নিতে নিতে বলল তাতে কি হইছে? বেশীক্ষন লাগবেনা। অল্প একটু। তুমি দুবার আটকায় দিয়ে আসো।
আমি পারুম না। এখন ঐসব হইব না।
কেন? অল্প একটু।
কইলাম তো এখন ঐসব হইবো না। ভাত খাইছেন এখন শুইয়া একটা ঘুম দেন। আর যদি বেশি মন চায় তাইলে থাইকা জান। কাল বাড়ি যাই।
রূপক হতাশ হয়ে বউকে ছেড়ে দিল। তারত দু-একটা দিন মন আরাম আয়েশ করতে মন চায়। ইচ্ছে করছে খালার বাসায় একটা রাত থেকে যেতে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত দোকান করা আর এসবের মধ্যে থাকতে তার ভালো লাগে না। বউয়ের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটিয়ে ধান ক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে বেড়াতে তার ইচ্ছা করছে। আজকে সে দোকান কামাই দিয়েছে। আগামী কাল যদি সে দোকানের না যায় তাহলে ঝামেলা হয়ে যাবে। তার বাবা এখন তাকেই সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছে। সে এখন একা নয়। ঘরে নতুন বউ এসেছে। বাপ মা-বোন নিয়ে তার সংসার। এতগুলো মানুষের দায়িত্ব নেয়াটা কম কথা না। সবকিছু ভেবে সে কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে দোকানে যাওয়া থেকে বিরত থাকে না। কিন্তু আজ তার খুব ইচ্ছা করছে বউয়ের সঙ্গে সুন্দর মুহূর্ত কাটাতে। পুকুর পাড়ে গিয়ে কিছুক্ষন বসে গল্প করতে।
রূপক বলল, উঠ বউ। চলো পুকুর পাড়ে যাই। খালার বাড়ির পুকুর পাড় টা খুব সুন্দর। চলো টং এর উপর বইসা একটু বাতাস খেয়ে আসি।
ঘুমাইবেন না আপনি।
না, ঘুম ধরতেছে না। আইজ একটু ছুটি পাইছি। দিনটা ঘুমায়া কাটাইতে চাইতেছি না।
রূপকের কথা শুনে চিত্রে স্পষ্ট বুঝতে পারল আজকেই রূপক চলে যাবে বাড়িতে। তাকে এখানে একা রেখে যাবে। খালা শ্বাশুড়ীর বাড়ীতে সে দুইদিন নাইওর করবে। কিন্তু রূপককে ছাড়া থাকতে হবে ভেবেই চিত্রার কেমন যেন বুকের ভেতর ব্যথা করতে থাকলো। রূপককে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকার কথা সে ভাবতে পারেনা। রূপক দোকানে গেলে সারাদিন ছটফট করে কখন বাড়িতে ফিরবে। অথচ দুদিন দেখা হবে না তার প্রিয় স্বামীর সঙ্গে। চিত্রার বুকটা হঠাৎ করে ফাঁকা হয়ে যেতে লাগল। কিন্তু কিছুই করার নেই। সে দ্রুত বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলল, আসেন।
গল্প বরাবরই আমি পাঠকের চাহিদামতো করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি। সুতরাং যেমনটি মনে হয় মন্তব্য করুন নেক্সট না লিখে পরামর্শ কিংবা উত্সাহিত করবেন।
চলবে..
#দ্বিতীয়_পুরুষ
পর্ব ১১
_নীলাভ্র জহির
খালাবাড়ির পুকুর পাড়টা খুব সুন্দর। ছোট্ট পুকুর অথচ চারপাশে সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো রয়েছে সুপারি ও আম গাছ। একপাশে শান দিয়ে বাঁধাই করা ঘাট। ঘাট থেকে একটু উঁচুতে খানিকটা দূরেই বাঁশ দিয়ে বানানো রয়েছে টং। টং এর উপর বসে এখানে বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় আড্ডা চলে। গরমকালে ভরা জোছনায় রাত্রি বেলাও বসে এখানে হাওয়া খেতে খেতে গল্প গুজব হয়। রূপক চিত্রাকে নিয়ে টং এর উপর এসে বসলো।
দুপুরের রোদ কেবল কমতে শুরু করেছে। ভাবীরা গোসল সেরে উঠে কাপড় ধুচ্ছে। শিরশির করে বাতাস লাগছিল গায়। টং এর উপর শুয়ে পড়ল রূপক। তার ভাবির ছেলে দৌড়ে গিয়ে ঘর থেকে একটা বালিশ নিয়ে এসে দিল। চিত্রা বসে রইল রূপকের পাশে। গরম গরম পোলাও, গরুর গোশত ও মাছ ভাজা দিয়ে ভাত খাওয়ার পর এই রকম শিরশিরে বাতাসে ঘুম চলে আসে। সঙ্গে তার প্রেমিক স্বামী। ভীষণ সুখী সুখী মনে হচ্ছে নিজেকে চিত্রার। ভাবীরা কাপড় শুকাতে দিচ্ছেন। মাথায় গামছা বাঁধা। গামছা খুলে চুল ঝাড়ছিলেন মেজ ভাবি। চিত্রা রূপককে বলল, এইখানে আইসা আমার খুবই ভালো লাগতাছে।
দুইটা দিন থাকো। ভালো লাগবো। খালা অনেক আদর যত্নে রাখবো তোমারে।
হ, তা তো জানি। ভাবিরাও আমার অনেক খেয়াল রাখব।
কিন্তু তোমারে রাইখা গিয়ে আমি যে কেমনে থাকমু?
তাইলে আমারে রাইখা যাইয়েন না। আমারে লগে নিয়ে যান আর নয়তো আপনেও থাইকা যান।
পোলাপাইনের মতো কথা কইও না বউ। দোকানে যাইতে হইবো। কাম কাজ না করলে তোমারে খাওয়ামু কি? ৬ জন মানসের সংসার আমাগো। কাম কাজ করতে হইব না?
চিত্রা কোন কথা না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এই বাস্তবতা সে নিজেও বোঝে। মনটা মানতে না চাইলেও তাকে মানিয়ে রাখতে হলো।
রূপক বলল, মুখটা কেমন হইয়া আছে। এত ভালা ভালা খানা খাইলাম। আরসি কোলা খাওন লাগতো।
সবচেয়ে ছোট খালাতো ভাইকে ডেকে রূপক পকেট থেকে৷ পঞ্চাশ টাকা বের করে দিয়ে বলল, দোকান থাইকা একটা আরসি কোলা নিয়া আয়। একটা সিগারেটও আনিস।
ছেলেটা টাকা নিয়ে দৌড়ে চলে গেল। মেজ ভাবী বাটাতে করে পান নিয়ে এসেছেন। রূপক বলল,, বসেন ভাবি। পান একটু পরে খাব। আরসি কোলা আনতে দিছি। আগে আরসি খাইয়া লই।
আপনের ভাইয়ে পেপসি কিনা দোকানে রাখছে। তার নাকি বাড়ি আসতে লেট হইবো। কি একটা ব্যাপার আপনারে আরসি দিতে পারলাম না।
রূপক হাসতে হাসতে বলল আরে সমস্যা নাই বিকেলে আবার খামু। খাওয়ান কি একবেলা? খাওয়ন অনেক বেলাই খামু।
হ, ভাই। নতুন বউ নিয়া আইছো। আইজ রাতটা থাইকা যাও। আমার আম্মায় কইছিল বউরে নিয়া যাইতে। আমাগো বাড়িতে একবেলা ভাত খাইও।
না, ভাবি। অহন আর দাওয়াত খাওনোর সময় নাই। আইজ দোকান ফালাইয়া আইছি। রাতে বাড়ি ফিরতে হইবো। কাল দোকানে যামু।
তাইলে তোমার বউরে নিয়া আমি একদিন বাপের বাড়ি থাইকা ঘুরে আসি।
ও তো দুইদিন থাকবো।
খালি দুই দিন থাকবো? কইলেই হইলো? আমরা যাইতে দিতাছি না। সপ্তাহ খানেক থাকুক। সামনের শুক্রবার আপনি আইসা ওরে নিয়ে যাইয়েন।
আরে না। ওরে এখানে রাইখা আমার মায়ের ঘুমে ধরব না।
খালারে পাঠায় দিয়েন।
বাড়িতে সংসার আছে। গরু ছাগল হাঁস মুরগি আছে। মারে তো আর এখানে পাঠানো যায় না।
অত কথা বুঝি না ভাই। আমি ওরে নিয়া আমার বাপের বাড়িতে বেড়াইতে যামু। আমার মা বারবার কইরা ডাকছে।
ঠিক আছে। আপনে ওরে কালকে নিয়া ঘুইরা আইসেন। পরেরদিন মা আইসা ওরে নিয়া যাইবো।
এসব উল্টোপাল্টা কথা কইয়েন না ভাই। কয়েকটা দিন থাকুক ও এইখানে।
কথাটা বলেই ভাবি চিত্রাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। ভাবির এই পরম স্নেহে নিজেকে মাখিয়ে ফেলল চিত্রা। মহিলাটাকে তার খুব আপন বলে মনে হল। ওনার গা থেকে বেরোচ্ছে লাক্স সাবানের ঘ্রাণ। খুব ভালো লাগলো চিত্রার।
চিত্রা বললো ভাবী আপনি ভাত খান নাই। এত কইরা কইলাম আমার লগে খাইয়া লইতে। আপনি যান। গিয়া খাইয়া লন।
না বইন। তোমার ভাই দোকান থাইকা আসুক।
ভাইজান দুপুরে বাড়িতে ভাত খায়?
হ, বাড়িতে আইসা খাইয়া যায়।
চিত্রার মনটা কেমন যেন করে উঠলো। তার স্বামীও যদি দুপুরবেলা বাড়িতে এসে ভাত খেয়ে যেত তাহলে কতই না ভালো হতো। দুপুরের আগেই রান্না-বান্না শেষ করে গোসল করে সে সেজেগুজে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতো। তার স্বামী খেতে বসলে সে পাখা দিয়ে বাতাস করতে পারত। ভাত খাওয়ার পর এক খিলি পান বানিয়ে দিত সে স্বামীকে। পান খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়তো রূপক। কখনো বা ঘুমের ফাঁকে তাকে একটু জড়িয়ে ধরে সোহাগ করতে চাইত। দশ মিনিট বিশ্রাম নিয়েই আবার দৌড়ে দোকানে যেতে হতো তাকে। চিত্রার ইচ্ছে করতো না স্বামীকে ছাড়তে তবুও ছেড়ে দিত সে। কারণ তাকে আবার কাজে ফিরতে হবে। প্রতিদিন সারাটাদিন অপেক্ষায় না থেকে যদি দুপুরবেলা একবার রূপক বাসায় ভাত খেতে আসত তাহলে দিনটা আরো সুন্দর হয়ে যেত তার। কথাগুলো কল্পনা করেই চিত্রার অন্যরকম আনন্দ হতে লাগলো। কিন্তু তাদের দোকান বাড়ি থেকে অনেক দূরে। যাতায়াত খুব কষ্টকর হয়ে যাবে। ভালো হবে যদি রূপকের একটা সাইকেল হয়ে যায়। সাইকেল থাকলে সে স্বামীকে অনুরোধ করে বলবে দুপুরে বাড়িতে খাইতে আসেন। তাহলে নিশ্চয়ই সাইকেল চালিয়ে তার স্বামী প্রতিদিন না হলেও অন্তত সপ্তাহে দু তিন দিন বাড়িতে খেতে আসবে। এবার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে বাবাকে সাইকেলের ব্যাপারে একটু চাপ দিতেই হবে। অনেক দিন তো হয়ে গেল। শুধু ফুপাতো ভাইদের আশায় বসে থাকলে চলবে না। আনমনে কথাগুলো ভাবছিল চিত্রা।
এমন সময় রূপকের খালাতো ভাই আরসি কোলা নিয়ে ফিরলো। মেজ ভাবী দৌড়ে ঘরে গেলেন গ্লাস নিয়ে আসতে। ঢকঢক করে এক গ্লাস কোক খেয়ে সিগারেট ধরালো রূপক। চিত্রা আবার কোক খেতে পারে না। সামান্য একটু খেয়ে সে ভাবিকে খেতে অনুরোধ করল। ভাবি আরসির বোতলটা হাতে করে নিয়ে বাড়ির ভিতরে গেলেন। বললেন তার স্বামী বাড়িতে ফিরলে ভাত খেয়ে তারপর খাবে।
রূপকের সিগারেটের গন্ধে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল চিত্রা।
রূপক বলল তোমার কি গন্ধ লাগতাছে। তুমি একটু ঐদিকে গিয়া খাড়াও।
সমস্যা নাই। আপনি খান।
সিগারেট শেষ করে পানের খিলি মুখে দিল রূপক। তার মুখ থেকে এখন পানের ঘ্রান বের হবে। চুন মুখে দিতেই তার উপরের ঠোট লাল হয়ে গেল। একটু পানের পিক মাটিতে ফেলল সে। শিরশির করে বাতাস আসছে। টঙের বালিশে মাথা রেখে রূপক শুয়ে পড়ল। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। চিত্রাকে বলল বউ কেমন লাগতেছে তোমার।
চিত্রা বলল, আমার তো খুবই ভালো লাগতাছে। যদি আপনেরে লইয়া এইখানে আরো দুইটা দিন থাকতে পারতাম তাইলে আরো ভালো লাগতো। আপনে চইলা গেলে আমার মনটা বড় খারাপ হইয়া যাইবো। মন চাইতাছে আপনারে আমার শাড়ির আচল এর লগে বাইন্ধা রাখি।
রূপক চিত্রার কথার কোন উত্তর দিল না। চিত্রা খেয়াল করে দেখল ঘুমে ঢলে পড়েছে রূপক। তার ভীষণ মায়া লাগলো রূপকের ঘুমন্ত মুখ দেখে। চিত্রার ও খুব লোভ হচ্ছে এখানে শুয়ে শিরশিরে বাতাসে একটু ঘুম দিতে। কিন্তু এখানে এসে এসব ছেলেমানুষি মানায় না। সে নতুন বউ এই বাড়ির মেহমান। রুপক ঘুমিয়ে পড়লে চিত্রা উঠে বাড়ির ভিতরে এল। মেজো ভাই বাড়িতে ফিরেছেন। বারান্দায় বসে ভাবি সহ ভাত খেতে বসেছেন তিনি। চিত্রা ওনাকে সালাম দিতেই তিনি হাসিমুখে বললেন আরে ভাবি কি অবস্থা?
চিত্রা বলল জি ভাই ভালো। আপনি ভালো আছেন?
হ, ভাবী ভালো আছি। বসেন ভাত খান।
আমরা খাইছি ভাইজান। আপনেরা খাইয়া লন।
চিত্রাকে একটা চেয়ার নিয়ে এসে দিল একজন। বারান্দায় বসল চিত্রা। ইটের পাকা ঘর খালাদের৷ কিন্তু মেঝে কাঁচা মাটি দিয়ে তৈরি। বারান্দার উপরে টিনের ছাউনি। নিচে মাটি। বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা একটা পরিবেশ পুরো বাড়িতে। গাছগাছালি রয়েছে অনেক। তবে বাড়িতে লোকজন বেশি থাকায় সব সময় একটা গমগমে ভাব বিরাজ করে।
প্রায় ঘণ্টাখানেক পর একটা বাচ্চা এসে চিত্রাকে বলল রূপক তাকে ডাকছে। চিত্রা তখন খালার সঙ্গে বসে গল্প করছিল। মুরুব্বির সামনে থেকে উঠে যেতে তার লজ্জা লাগলেও খালা ইশারায় বললেন যাও ওর ঘুম ভাঙছে মনে হয়।
চিত্রা তৎক্ষণাৎ পুকুর পাড়ে এসে দেখল রূপক বালিশে শুয়ে তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
চিত্রা বলল, আপনার ঘুম হইল
হ, বউ খুব আরামের একটা ঘুম দিসি। মনে হইতাছে বেহেশত থাইকা ঘুইরা আইলাম।
ভালো হইছে। মেজো ভাই বাড়িতে আইছিল। আপ্নারে ডাকতেছিল কথা কওনের লাইগ্যা। আপনি ঘুমাইছেন শুইনা আর ডাকে নাই।
ভাইয়া কই?
উনিতো ভাত খাইয়া দোকানে চইলা গেছে।
ও আচ্ছা।
রূপকের চেহারায় ঘুমের দাগ স্পষ্ট। সে টং থেকে নেমে ঝোপের আড়ালে গিয়ে প্রস্রাব করল। তারপর পুকুরের ঘাটে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে কুলি করে চিত্রা কে বলল, কত সুন্দর বাতাস আইতাছে খেয়াল করছো?
হ, খুব সুন্দর বাতাস লাগতাছে।
এইডারে কয় বেহেশতী হাওয়া।
আপনারে কইসে?
কইছে তো। আমি আবার তোমারে কইলাম।
আপনারে কে কইছে? ফেরেশতা আইসা কইছে?
হ,
ঘুমের মধ্যে কি ফেরেশতার লগে কথা কইতে ছিলেন?
রূপক হাসতে হাসতে বলল হ।
কি কইলো ফেরেশতা?
কইল আমার নাকি একটা পোলা হইবো।
ধুর আপনে খালি প্যাক প্যাক করেন।
চিত্রা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। স্বামীর কথায় সে খুশি হল নাকি বিরক্ত হল বোঝা গেল না। তবে ঘোমটার আড়ালে রাঙ্গা হয়ে উঠল তার লাজুক মুখ খানা। রূপক তখন বাড়ির ভেতরের দিকে যেতে যেতে চিত্রাকে বলল, আসো ভিতরে যাই।
খালা বললেন, জমেনা দের বাড়ি থাইকা বউরে নিয়ে ঘুইরা আয়।
খালার বাড়ির আশেপাশে দু একজন মহিলার সঙ্গে রূপকের বেশ ভালো পরিচয়। মুরুব্বী মহিলাগুলো রূপককে একসময় অনেক স্নেহ করতেন। নতুন বউকে নিয়ে তাদের ঘর থেকে একটু ঘুরে না আসলে হয় না। রুপক তার মেজ ভাবী ও বউকে সঙ্গে নিয়ে পাড়া ঘুরতে বের হলো। বের হওয়ার আগে মাথার চুল আঁচড়ে মুখে আরেকটু ক্রিম লাগিয়ে নিল চিত্রা। নতুন শাড়িতে তখন কুঁচকে গিয়ে বেশ কিছু ভাঁজ পড়েছে। তবুও তাকে বেশ নতুন বউ এর মতই দেখাচ্ছে। কানে ও গলায় ইমিটেশনের গয়না। হাত ভর্তি কাচের চুরি রিম ঝিম করছে। মাথায় লম্বা করে ঘোমটা টেনে দিল চিত্রা।
আশে পাশের বাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে বিকেল গড়িয়ে এলো। কোন কোন বাড়িতে খেতে দিল মুড়ি চানাচুর কেউবা দিল বিস্কুট। নাস্তা খেয়ে পেট ভরে গেছে। তারওপর বাড়িতে ফিরতেই খালা আবার কিছু পিঠাপুলি খেতে দিলেন। দুপুর জুড়ে তিনি নানান রকমের পিঠা তৈরি করেছেন। খালার আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছে চিত্রা ও রূপক।
সন্ধ্যাবেলা সবাই মিলে আড্ডা দিতে বসল। গল্পগুজব চললো রাত পর্যন্ত। রাত প্রায় ন’টা বাজে তখন রূপক ভাত খেয়ে বলল, আমি বাড়ি যাই।
চিত্রার মনটা কেমন যেন করে উঠলো।
খালা তখন রূপককে বললেন, এত রাইতে আর বাড়ি যাইতে হইবো না। মেলাদিন পর আইছোস। একটা রাত থাইকা যা। কোন দিন বাঁচি কোন দিন মরি কওন যায় না।
খালা কাইল দোকানে যাইতে হইবো।
সকাল সকাল দুইটা ভাত খাইয়া দোকানে যাইস। আমি মেহেদিরে কইয়া দিমু তোরে হুন্ডাই কইরা কুন্দনপুর বাজারে রাইখা আইতে।
রূপকেরও মনটা চাইছে আজকের রাতটা এখানে থেকে যেতে। এত ভাল ভাল খাবার খাওয়ার পর তার শরীরে যে জোয়ার এসেছে, বউকে কাছে পেয়ে তা মেটাতে হবে। আজকে অনেকক্ষণ ধরে বউকে সে আদর সোহাগ করতে পারবে। শরীরে যেন নতুন করে লোভ জাগলো। অলসতায় বিছানায় শুয়ে পড়ল রূপক। বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। আজকের রাতটা থাইকাই যাই। মেজ ভাবী আমারে একটা লুংগি আইনা দেন। আমিতো জামাকাপড় কিছুই নিয়া আসি নাই।
মেজ ভাবী তার ঘর থেকে একটা গেঞ্জি ও লুঙ্গি নিয়ে এসে দিলেন। সেগুলো পরে হাতমুখ ধুয়ে এসে বিছানায় শুলো রূপক। রাত বেড়ে যাচ্ছে। সারাদিন অনেক ঘোরাঘুরি খাওয়া-দাওয়া ও গল্প গুজব হয়েছে। এখন একটু বিশ্রাম নেয়া দরকার। চিত্রা ঘরে ঢুকতেই রূপক বলল বউ দুয়ার আটকাইয়া দিয়া আসো।
এত তাড়াতাড়ি? বাড়ির সবাই জাইগা রইছে।
তাতে কি হইছে? সবাই ভাববো আমরা ঘুমাইয়া পড়ছি। তুমি দরজা আটকাইয়া দিয়া আসো আমরা একটু ছবি দেখি।
দরজা বন্ধ করে দিয়ে চিত্রা বিছানায় এল। খালার বাড়িতে সৌর বিদ্যুতের আলো আছে। টিমটিম করে জ্বলছে একটা সাদা রঙ্গের বাতি। বিছানার পাশেই বাতির সুইচ। হাত বাড়িয়ে আলোটা নিভিয়ে দিল রূপক। তারপর সে তার বউকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। স্বামীর আলিঙ্গন পেয়ে চিত্রার শরীরটাও যেন হঠাৎ করেই জেগে উঠলো। সেও খুব করে চাইছিল তার স্বামীকে। আর এক মুহূর্ত দেরি করল না রূপক। ভালোবাসার অন্য রকম স্পর্শে চিত্রাকে ভরিয়ে দিতে লাগলো।
চলবে..