#দ্বিতীয়_পুরুষ,পর্ব ২০,২১
_নীলাভ্র জহির
২০
ভরদুপুর। উত্তপ্ত গরম চারদিকে। কোকিলের কুহু কুহু ডাক ভেসে আসছে। ঘরের দাওয়ায় বসে আছে চিত্রা। হঠাৎ খেয়াল করলো গোয়ালঘর থেকে ছাগলের দড়ি হাতে নিয়ে রুবিনা ঘরের দিকে যাচ্ছে। প্রথমে বিষয়টা তার কাছে স্বাভাবিক মনে হল। কারণ সকাল বেলা ছাগলগুলোর গলা থেকে দড়ি খুলে ছেড়ে দেয়া হয় ঘাস খাওয়ার জন্য। তারপর আবার সময়মতো দড়ি গলায় বেঁধে ছাগলগুলোকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু যখন দেখল রুবিনা ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল তখন মনে খটকা লাগল চিত্রার। এই ভর দুপুরে দড়ি নিয়ে মাঠে না গিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করবে কেন?
চিত্রা কিছুক্ষণ ওর দরজার দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ সময় কেটে গেল নিরবে। এখনো রুবিনা দরজা খুলছে না। চিত্রার মনের খচখচানি বেড়ে গেল। সে ধীরে ধীরে উঠে রুবিনার ঘরের দিকে এগিয়ে আসলো। গত কয়েকদিন ধরে জোসনা বেগম চিত্রার সঙ্গে সারাক্ষণ খারাপ আচরণ করছেন। রান্নাঘরে ওকে ঢুকতে দেয়া হয় না। এমনকি বাড়ির কোন কাজে হাত দিতে দেননা জোসনা বেগম। কথায় কথায় পাড়া-পড়শিকে দেখে তিনি যৌতুকের বিষয়ে নানান আজেবাজে কথা শোনাতে থাকেন। এসব কিছু নিয়ে চিত্রার মনটা সারাক্ষণ খারাপ হয়ে থাকে। সে বেশিরভাগ সময় নিজের ঘরে বিছানায় শুয়ে বসে কাটায়। বাড়ির আর কারো দিকে তার খেয়াল ছিল না। আজকে হঠাৎ মনে হল গত কয়েকদিন ধরে রুবিনার মনটা খুব বিষন্ন। সেটা সে আগে খেয়াল করেনি। রুবিনার ঘরের দিকে আস্তে আস্তে চিত্রা সেসব কথাই ভাবছিল। তার মনের ভেতর এক ধরনের কু ডাক ভেসে আসছে।
টিনের ঘর রুবিনার। চিত্রা দরজায় ধাক্কা না দিয়ে আগে টিনের ফুটা দিয়ে দেখার চেষ্টা করল ঘরে কি ঘটছে? কিন্তু মনের কু ডাক সত্যি এভাবে ফলে যাবে সেটা কল্পনাতেও আসেনি চিত্রার। ফুটা দিয়ে ভেতরে তাকানো মাত্রই তার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। এটা কি করছে রুবিনা? উপরের বাঁশের খুঁটির সঙ্গে সে ছাগলের দড়ি দিয়ে বেঁধে গলায় ফাঁস দেয়ার চেষ্টা করছে। মুহূর্তেই পুরো দুনিয়া যেন অন্ধকার হয়ে গেল। ছোটখাটো একটা চিৎকার করে উঠল চিত্রা। তবে তার চিৎকার শুনে এগিয়ে আসার মত এই সময় বাড়িতে কেউ নেই। রুপক ও তার বাপ গেছে দোকানে। জোসনা বেগম গেছেন গরুর ঘাস কাটতে। চিত্রা দৌড়ে এসে খুব জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগলো। তবে দরজা খুব শক্তভাবে বাধা হওয়ার কারণে তার শক্তিতে কিছুই ঘটল না। চিত্রার খুব ছটফট লাগছে। পাগলের মত সে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে লাগলো। একবার দৌড়ে গেল জানালার কাছে। জানালা বন্ধ। আবার দৌড়ে এল দরজার কাছে। সে ভেবেছিল তার চিৎকার শুনে রুবিনা দরজা খুলে বের হয়ে আসবে। কিন্তু না, উল্টো শুনে রুবিনা আরো তাড়াতাড়ি রশির ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। টিনের ফুটো দিয়ে আবারও তাকিয়ে সেই দৃশ্য দেখে যেন চিত্রার গায়ে অশুরের শক্তি ভর করল। ঝড়ের বেগে ছুটে এসে দা দিয়ে টিনের উপর বড় বড় কোপ দিয়ে টিন কেটে ফেলল। ঘরের ভিতরে লাফ দিয়ে ঢুকে পড়ল চিত্রা। ততক্ষনে রুবিনা দড়ির ভেতর গলা ঢুকিয়ে ফেলেছে। কিন্তু এখনো পায়ের তলা থেকে টুল সরাতে পারেনি। চিত্রা সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে তার দুই পা জাপ্টে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। চিত্রার কান্না দেখে হতবিহ্বল হয়ে গেল রুবিনা। এর আগে কেউ কোনদিনও তাকে এভাবে ভালোবেসেছে বলে তার মনে পড়ল না । মা বাবা ভাই তাকে অনেক ভালোবাসে। তবে চিত্রার কান্না দেখে মনে হচ্ছে সে হারিয়ে গেলে সব থেকে বেশি কষ্ট পাবে তার ভাবি। এভাবে তাকে মরে যেতে দেবে না চিত্রা।
রুবিনা নিজেও হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল। চিত্রা তার দুই পা জাপ্টে ধরে রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলল, বইন তুমি এইকাম কইরো না। আমি জানিনা তোমার কি হইছে? কিন্তু এই কাম কইরো না। আমারে কও কি হইছে? কিসের কষ্ট তোমার। কেন তুমি মইরা যাইতে চাইতেছ?
রুবিনা কাঁদতে কাঁদতে বলল ভাবী আমারে ছাইড়া দাও। আমি কাউরে আর কোন কষ্ট দিতে চাইনা। আমি আমার বাপ মায়েরে কোন কষ্ট দিতে পারুম না।
বাপ মায়েরে কষ্ট দিবা ক্যান? তুমিতো খুব ভালো একটা মাইয়া। কষ্ট দেয়ার মত কোন কাম তুমি করবা না।
আমি যে কাম করছি তাতে তারা অনেক কষ্ট পাইব। এই কষ্ট পাইলে আমার আব্বা সহ্য করতে পারবো না। তিনি নিজে আমারে কাইটা টুকরা টুকরা কইরা নদীতে ভাসাইয়া দিব।
কি হইছে তোমার বইন? আমারে কও।
চিত্রার কান্না থামল না। সে বলল, তুমি উপর থাইকা নাইমা আসো নাইলে আমি কিন্তু চিৎকার করমু। তোমার পা ছারুম না।
ভাবির কান্না দেখে বাধ্য হয়ে রুবিনাকে নিচে নেমে আসতে হল । রুবিনা আসার পর তাকে বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরে চিত্রা কাঁদতে কাঁদতে বলল, কি হইছে তোমার বইন? কষ্টের কথা কেন কইতাছো?
মান সম্মান সব নষ্ট কইরা ফেলছি।
ক্যান বইন? কি ভুল করছ তুমি?
ভাবি আমি সেদিন আপনারে একটা কথা কই নাই।
কথাটা বলতে বলতে আবার ওকে কাঁদতে শুরু করল রুবিনা। চিত্রা ওর হাত ধরে বলল, কি কথা?
আপনের কাছে একটা জিনিস লুকাইছিলাম। কইছিলাম মেইন জিনিসটা বাদ দিয়ে সব হইয়া গেছে। মিথ্যা কইছিলাম। আমাগো কোন কিছুই বাদ নাই। সবকিছুই হইয়া গেছে। মেলা কয়বার আমরা একলগে থাকছি।
তাতে কি হইছে? সেই জন্য মরতে হইবো? ওই পোলায় কি কইছে তোমারে বিয়া করব না?
রুবিনা কিছু বলতে পারলো না। কান্নায় ভেঙে পড়ল। চিত্রা তার হাত চেপে ধরে বলল কি হইছে বইন। আমি তো তোমার বড় বইন। আমারে কও।
ভাবি আমি অনেক বড় সর্বনাশ কইরা ফেলছি। আমার প্যাটে বাচ্চা আইছে।
চিত্রার সমস্ত শরীর হঠাৎ করে যেন প্রচন্ড কম্পন করে সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেল। মনে হচ্ছে এই ভ্যাপসা গরম ভরদুপুরে কোকিলের ডাক সবকিছুই অবাস্তব। দরিয়ার অতল গহব্বরে সে ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে। ডুবতে ডুবতে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে রুবিনার ভয়াবহ মৃত্যু। দেখতে পাচ্ছে তার স্বামীর আর্তনাদ ও শ্বশুর-শাশুড়ির চিৎকার। দেখতে পাচ্ছে পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজন ও গ্রামবাসী সবাই কিভাবে তার স্বামীর পরিবারকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে অপমান করছে। সব কিছু ভাবতে ভাবতে তাঁর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চাইল। এবার তার পায়ের কাছে বসে কাঁদতে লাগল রুবিনা। কাঁদতে কাঁদতে বলল ভাবি আমি কি করবো আপনি কন। এই কথা আমি কাউরে কইতে পারুম না। এই কলঙ্ক নিয়া আমি কি করুম? আমি কই যামু?
রুবিনার কান্না যেন পুরো বাড়িটাকে আরো গুরুগম্ভীর করে তুলল। এ যেন অকুল দরিয়ায় তুমুল ঝড়। অবশেষে চিত্রা ফিরে এলো তার বাস্তব জগতে। ধীরে ধীরে সে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিল। ভেঙে পড়লে চলবে না। সে যদি ভেঙ্গে পড়ে তবে চোখের সামনে যা ভাসছিল সেটাই ঘটবে। বরং এই মুহূর্তে মাথা ঠান্ডা রেখে সবকিছু ধীরেসুস্থে সামাল দিতে হবে। কথা বলতে গিয়ে টের পেল তার গলা দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না।
আস্তে আস্তে সে রুবিনাকে তুলে তার পাশে বসালো। তারপর বলল আমি তোমারে যা কমু তুমি সেটা করতে পারবা?
ফ্যালফ্যাল করে চিত্রার দিকে তাকালো রুবিনা।
চিত্রা রুবিনার হাত ধরে বলল তার আগে আমারে তুমি একটু বিশ্বাস করতে হইবো। আমি এসব কথা কোনদিনও কাউরে কমু না। আমি বাইচা থাকতে তোমার মান সম্মানের হানি হয় এমন কোনকিছুই কাউরে কমু না। তুমি আমারে বিশ্বাস করো। মন একটু শক্ত করো। এইখানে একটু চুপচাপ বস। আমি যা কই শুনো
শান্ত হয়ে বিছানার উপর বসল রুবিনা। চিত্রা সবার আগে ছাগলের দড়ি দিয়ে টাঙ্গানো ফাঁসটা খুলে ফেলল।
কিন্তু ঝামেলা হল টিনের বেড়া কেটে ফেলেছে। এটা কিভাবে জোড়া দিবে? সেই চিন্তা বাদ দিয়ে দা লুকিয়ে রেখে আপাতত চিত্রা রুবিনার পাশে এসে বসল। রবিনা অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছে। চিত্রা বলল, বইন সবথেকে বড় কথা হইল এই কথাটা তুমি কাউরে কইবানা। কাউরে বুঝতেও দিবানা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, পারলে দুই-একদিনের মধ্যে ওই পোলার লগে তোমার বিয়ার ব্যবস্থা করতে হইবো।
সেটা কেমনে হইব ভাবি? সে তো বেকার। কাম কাজ কিছুই করে না। আমার বাপ ভাই জীবনেও ওর লগে আমার বিয়া দিব না।
তোমার ভাইরে আমি বুঝাই কমু । তুমি কিছু কইবানা। আমি যা কওনের কমু। তুমি শুধু আমার কথায় হ হ কইরা যাইবা। যত ঝামেলা ঝাটি যাইহোক বিয়েটা দিতেই হইবো। বিয়া হইয়া গেলে কয়টা দিন পরেই সবাইরে কইবা তুমি পোয়াতি হইছ।
কিন্তু কিভাবে ওর লগে আমার বিয়া কেমনে হইব? আমাগো বাড়ির কেউ রাজী হইবো না। ওর বাড়ির মানুষজনের কেমনে রাজি করাইব এত তাড়াতাড়ি।
ওর বাড়ির মানুষজনের রাজি করানোর দায়িত্ব তুমি কইরা দিবা। সবচাইতে বড় কথা হইলো এই মুহূর্তে মান সম্মান রক্ষা করতে হইবো। তাও এমন ভাবে করতে হইবো যেন গ্রামের লোকজন কিছু না জানে। ওই পোলা কি তোমারে বিয়া করব?
হ, করব।
তাইলে তুমি এই মুহূর্তে ওরে আমার লগে দেখা করতে কও। আমি চিন্তা করতেছি কেমনে সব কিছু সামাল দিব।
রুবিনা তার ভাবিকে জাপ্টে ধরে কেঁদে ফেলল। চিত্রা চোখ মুছে দিল রুবিনার।
রুবিনা বলল ভাবি। তুমি মানুষটা বড় ভালা। আমার মানসম্মানের কথা তুমি এমন কইরা ভাব। তোমারে আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে মন চাইতেছে।
তুমি তো আমার বোইন। তোমাগো সম্মান আমার সম্মান। আমি এই পরিবারের সম্মানের কথা ভাববো না তোকে ভাববো?
তুমি যে এত ভাল মানুষ এটা আমি আগে বুঝিনাই ভাবি। আমি ওরে একটা কল দিমু। সাবিনা আপার মোবাইল থেকে মিসকল দিলে ও কল ব্যাক করব। যেহেতু আম্মা বাড়িতে নাই, ওরে আমাগো বাড়িতে আসতে কমু?
আম্মা যদি আইসা পড়ে?
বাড়ির বাইরে বইসা কথা কইবেন। আম্মা কিছু মনে করব না। এলাকার পোলাপান। মাঝেমধ্যে তো বাড়িতে আসে। আম্মা কিছু টের পাইব না।
আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি ওরে আইতে কও। আমি কমু তোমার ভাইয়ের খোঁজে আইছিল।
শরীরে কম্পন কিছুটা কমেছে মনে হচ্ছে রুবিনার। সে মাথায় ওড়না দিয়ে পাশের বাড়ির সাবিনার কাছে গেল । সাবিনা কলেজে পড়ে। তার কাছে মোবাইল আছে। সাবিনার সঙ্গী রুবিনার সম্পর্ক বেশ ভালো। তাই ওর ফোন থেকে মাঝে মাঝে প্রেমিকের সঙ্গে ফোনালাপ করতে পারে রুবিনা।
রুবিনা বেরিয়ে গেলে নিস্তব্ধ বাড়িতে দাঁড়িয়ে চিত্রার বুকটা কেমন যেন হাহাকার করতে লাগলো। এত বড় জটিল একটা সমস্যা কিভাবে সমাধান করবে সেটা ভেবেই তার শরীর কাঁপছে। এই কথাটা রূপক কে বললে রূপক অনেক কষ্ট পাবে। রুবিনার প্রতি রূপকের ঘৃণাও জন্মাতে পারে। তাছাড়া রুবিনা কে সবার চোখে ছোট হতে দেয়া যাবে না। সবাইকে না জানিয়েই কিছু একটা করতে হবে।
উঠানে পায়চারি করতে করতে ছটফট করছিল চিত্রা। আর মনে মনে ভাবছিল কিভাবে এই জটিল সমস্যার সমাধান করবে। রুবিনার কাটা টিনের বেড়ার দিকে তাকিয়ে তার বুকের ভেতরটা আরো বেশি হাহাকার করে উঠলো। জোসনা বেগম বাড়ি এসে জানতে চাইবেন কী করে বেড়ায় এই অবস্থা হলো। তাকে মিথ্যা কথা বলে সামাল দিতে হবে। বলতে হবে রুবিনা ও চিত্রা গোসল করতে গিয়েছিল। বাড়িতে এসে দেখেছে এই অবস্থা। কে বা কারা এসে এমন করেছে তারা জানে না। এই মিথ্যা কথা বলা ছাড়া জোসনা বেগমের চোখ ফাঁকি দেওয়ার কোনও উপায় নেই।
রুবিনা বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে চিত্রা কে বলল, ভাবি আমি ওরে আইতে কইসি। ও সাইকেল লইয়া আইতাছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আইসা পড়বো।
চলবে…
#দ্বিতীয়_পুরুষ
পর্ব ২১
_নীলাভ্র জহির
বিয়ের আগে একটা মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হলে পুরো সমাজ তাকে কোণঠাসা করে ফেলবে সেই ভয়ে সে আত্মহত্যা করতে চায়। অথচ যেই ছেলেটার কারণেই সে অন্তঃসত্ত্বা হল সেই ছেলেটি দিব্যি এই সমাজে মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়ায়। কারন সে ছেলে। তার চরিত্রে কোন কলঙ্ক লাগেনা। সমস্ত কলঙ্ক কেবল একটি মেয়ের। আনমনে সেসব কথা ভাবছিল চিত্রা। এমন সময় রুবিনার প্রেমিক শিমুলকে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেখল। দাওয়ায় সাইকেলটা হেলান দিয়ে রেখে সে ভেতরে এসে জিজ্ঞেস করল কেমন আছেন ভাবী?
শিমুলের চোখমুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সে এখনো ঘটনার আগা মাথা কিছুই জানেনা।
চিত্রা ঠান্ডা মাথায় বললো, ভালো আছি। বসেন ।
বাড়ির ভেতর এক বড় আম গাছ আছে। সেই আম গাছের নিচের একটা চেয়ার নিয়ে এসে দিল চিত্রা। চেয়ারে বসতে বলে দিল শিমুলকে।
শিমুল বেশ ভালো করেই জানে ভাবি তাকে জরুরী কোন কথা বলবেন। তাই সে তার মুখভঙ্গি সিরিয়াস করে রেখেছে। কিছুটা দুশ্চিন্তার ছাপও রয়েছে তার চোখে-মুখে।
শিমুল বলল, ভাবি আমি বেশিক্ষণ বসবো না। আপনে তাড়াতাড়ি বলেন।
এত তাড়া করলে তো হইব না। সম্পর্ক যখন করছেন, ধৈর্য তো থাকতে হইব ভাই।
জি ভাবি।বলেন ।
শিমুল চেয়ারের উপর বসে পড়ল। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে রুবিনা। রুবিনার সঙ্গে এখনো তার কোনো কথা হয়নি। কেবল চোখাচোখি হয়েছে। রুবিনাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব আহত অবস্থায় রয়েছে সে।
চিত্রা বলল, রুবিনার ঘর কোনটা চিনেন?
এই প্রশ্নের কোন কারন বুঝতে না পেরে শিমুল একটু ইতস্তত বোধ করলো।
চিত্রা জিজ্ঞেস করল, চিনেন না?
শিমুল মাথা ঝাকালো।
চিত্রা বলল, ওর ঘরের বেড়ার দিকে দেখেন। দেইখা কি মনে হইতেছে? দা দিয়া কুপাইয়া কাইটা ফেলছি। কেন কাটছি বলেনতো?
শিমুল এবারও কিছু বুঝতে পারল না। কৌতুহলী চোখের রুবিনার দিকে তাকালো।
চিত্রা বলল, সে গলায় দড়ি দিছিল। আমি ঘরের বেড়া কাইটা তারে বাঁচাইছি।
চমকে উঠল শিমুল। তার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেল। অবিশ্বাস্য চেহারা নিয়ে সে তাকাল রুবিনার দিকে।
চিত্রা বলল, সে গলায় দড়ি দিয়া মরলে তার দায় কিন্তু আপনারেও নিতে হইত। সম্পর্ক করছেন ভালো কথা। এত গভীরে যাওয়ার তো কোনো দরকার আছিল না। বাড়িতে প্রস্তাব দিলেই তো বিয়া দিয়া দিত।
শিমুল এতক্ষণে বুঝে গেছে আসল ঘটনাটা কি? তাই রীতিমত ঘামতে শুরু করে দিয়েছে। বিষয়টা বুঝতে পেরে চিত্রা ঠান্ডা গলায় বলল, মাথা গরম কইরেন না। আমি কি কই সেইটা ভালো কইরা শুনেন। রুবিনার পেটে আপনার বাচ্চা আইছে । এই বাচ্চার দায় আপনি এড়াইতে পারবেন না। সব দোষ রুবিনার ঘাড়ে চাপায়া দিতে পারবেন না। যা করছেন আপনারা দুইজন মিইলা করছেন।
দিশেহারা ভঙ্গিতে শিমুল একবার রুবিনার দিকে তাকাচ্ছে আর একবার চিত্রার দিকে। এই মুহূর্তে তাকে দেখে খুবই অসহায় বলে মনে হচ্ছে চিত্রার। চিত্রা আরো কাছাকাছি এসে দাঁড়াল শিমুলের। নরম গলায় বলল ভাই তোমার একখান কথা কই। তোমরা দুইজন যে কামটা করছ এইটা ঠিক করো নাই। এখন যদি এই কথা আর কেউ জানে তাইলে মান-সম্মান সব নষ্ট হইয়া যাইবো। তোমার আর তোমার বাপ মায়ের মান সন্মান যাইবো লগে আমাদেরও যাইবো। গ্রামবাসী মুখে চুনকালি মাইখা দিবো। তখন শুধুই রুবিনা না আমাদের সবারই মরা ছাড়া আর কোন উপায় থাকব না। তুমি নিজে একবার ভাইবা দেখো। যে গ্রামে ছোট থাইকা বড় হইছো সেই গ্রামের মানুষ যদি তোমার মুখে চুনকালি মাখাইয়া দেয় মানুষের সামনে আর মুখ দেখাইবা ক্যামনে?
শিমুলকে হয়তো বোঝানো গেছে। সে গম্ভীরভাবে মাথা নিচু করে রেখেছে। চিন্তিত দেখাচ্ছে ওকে। অসহায়ের মত বললো ভাবী আমি এখন কি করমু? আপনি আমাগোরে কি করতে কন? বাসায় বিয়ের কথা ও কওন যাইবো না। আর এই কথা না কইলে বাড়ি থাইকা বিয়াও দিব না।
– ভুল তো কইরা ফেলসেন ভাই। এখন একটা উপায়ই খোলা আছে। বিয়া কইরা ফালাইতে হইব। বিয়ার কয়েকদিন পরে মানুষজনরে জানাইবেন আপনাগো ঘরে নতুন অতিথি আইবো। কেউ কিছু মনে করব না। মানুষের বাচ্চা আট মাসেও হইয়া যায়। সেইটা কোনো সমস্যা হইবো না। কিন্তু সমস্যা হইতাছে এখন তোমরা কি করবা? যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়া কইরা ফালাইতে হইব।
– কিন্তু ভাবি আমারে তো এখন বাড়ি থেকে বিয়েতে রাজী হইবো না। বাড়িতে আমি বিয়ের কথা কইতে পারমু না। আপনি কি আমাদের পলাইয়া বিয়ে করতে কইতাছেন?
– পলাইয়া বিয়া করলেও মান সম্মান থাকব না। গ্রামের নানান মানুষ নানান কথা কইব। সে সব এখন চিন্তা কইরা লাভ নাই। আগে অন্য উপায়ে বাসায় বিয়ের কথা কইতে হইবো। যদি বাড়ি থাইকা রাজি না হয় তখন তোমরা পলাইয়া বিয়া করবা।
রুবিনা এতখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিল কথাগুলো। এবার কাছে এসে চিত্রার হাত চেপে ধরে বলল এটা কী কইলে ভাবী। আমি পলাইয়া বিয়ে করবো?
– পলাইয়া পেট বাইধা ফেলছো। আর কইতাছ পলাইয়া বিয়া করতে পারবা না। এই কাম করার আগে একবারও মনে হয় নাই যে তোমরা বিয়ে করো নাই?
রুবিনা চুপ হয়ে রইল। তার চোখ টলটল করছে পানিতে।
চিত্রা বলল, কাইন্দ না। আমি তোমাগো একটা বুদ্ধি দিতাছি। এই বুদ্ধিতে কাম না হইলে পলাইয়া যাইতে হইবো।
– কি বুদ্ধি? জানতে চাইল শিমুল।
এই মুহূর্তে যে কোন কঠিন কাজ সে করতে পারবে। পরিবার ও নিজেদের মান সম্মান বাঁচানোর জন্য সেই কাজটা করতেই হবে তাকে।
চিত্রা দুইজনকে কাছাকাছি ডেকে নিয়ে এলো। তারপর বলল, শিমুল ভাই কাজটা আপনারে করতে হইবো। কারণ রুবিনা এই কাম করতে পারবোনা। আপনি বাড়িতে কইবেন আপনে রুবিনারে বিয়া করবেন। রুবিনারে ছাড়া আপনি বাঁচবেন না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রুবিনার লগে যেন আপনার বিয়ে দেয়। বিয়ে না দিলে আপনি বাড়ি ছাইড়া চইলা যাইবেন
– এইডা কি কন ভাবি? এই কথা কেমনে আমি আমার বাপ মায়েরে কমু।
– বাপ মায়েরে কইতে না পারলে ভাবি, দুলাভাইরে কইবেন। বাড়ির আশে পাশে যারা আছে তাদেরকে কইবেন। মোটকথা আপনি যে রুবিনার জন্য পাগল হইয়া গেছেন এইটা সবাইরে বুঝাইতে হইবো। একটু পাগলামি করলেই দেখবেন কয় দিনের মধ্যে আপনার বিয়া পরাইয়া দিবো। পোলায় যখন বিয়া করনের লাইগা পাগল হইয়া থাকে বাপ মায়ে চায় তাড়াতাড়ি পোলার বিয়া দিতে। তারা নিজেরাই রুবিনার লাইগা প্রস্তাব নিয়ে এই বাড়িতে আইবো। বাকিটা সবাইরে আমি এদিকে সামাল দিমু। সবাই বলতে রুবিনার বড় ভাই যদি রাজি থাকে কেউ আর বিয়া ঠেকাইতে পারব না। কিন্তু তার আগের পাগলামিটা আপনারেই করতে হইবো শিমুল ভাই।
শিমুল হতচকিত হয়ে চিত্রার দিকে তাকিয়ে আছে। সে বেকার ছেলে হতে পারে কিন্তু পরিবারে তার একটা সম্মান তো আছে। হুট করে তো কাউকে বিয়ে করার জন্য পাগলামি শুরু করে দেয়া যায় না।
শিমুল বলল, যদি আমার বাপ মায় আমারে বাড়ি থেকে বাইর কইরা দেয়? যদি কয় নিজের পায়ে না দাঁড়াইলে আমারে বিয়া দিব না?
– যদি আপনার নিজের পায়ে দাঁড়াইতে হয় তাহলে দাঁড়াইবেন। দু’একদিনের মধ্যে যেখান থেকে পারবেন একটা কাম জোগাড় কইরা ফেলবেন। আপনার বাপ মায়ে যখন দেখব আপনি একটা কাম করতাছেন তখন তারা ঠিকই বিয়ে দিতে রাজি হইব। আর যদি বাড়ি থাইকা বাইর কইরা দেয় তাইলে তো কিছুই করার নাই। তখন আপনি রুবিনারে নিয়া যেদিকে মন চায় সেদিকে চইলা যাইবেন। পলাইয়া বিয়া করন ছাড়া তো আর উপায় দেখতেছি না।
– পলাইয়া বিয়া করুম সেটাই মনে হয় ভালো হইবো ভাবি।
– এইডা কোন কথা কইলেন আপনে। মরদ মানুষের কথা তো এমন হওয়ার কথা না। আপনি কেমন মরদ? মাইয়া মানুষের মত কথা কইতাছেন। বাপ-মায়ের ভয়ে কইতাছেন পলাইয়া বিয়া করবেন।
– ভাবি তাইলে কি করুম কন আপনে। আমার জায়গায় একবার নিজেরে চিন্তা কইরা দেখেন। একটা ছেলে এমনে বাড়িতে হঠাৎ কইরা বিয়ের জন্য পাগলামি কইরা উতলা হইয়া উঠব?
– একটা ছেলে এই আকাম কুকাম করার আগে তার মাথায় এই চিন্তা আসে নাই? এখন এত বড় বড় কথা কইয়া লাভ আছে?
– কিন্তু বাড়িতে আমি কেমনে কমু বিয়ার কথা। বড় ভাই শুনলে আমারে থাপ্পর দিব।
– আর আপনি যদি না শুনেন আমরা আপনাদের থাপ্পড় দিমু। আমার বইনের যদি কিছু হইয়া যায় আপনারে কিন্তু আমরা ছাইড়া দিমু না মনে রাইখেন।
শিমুল রুবিনার দিকে তাকালো। তার দৃষ্টি দেখে মোটেও বিশ্বাসঘাতক মনে হলো না। সেই দৃষ্টি অসহায় হলেও তাতে কিঞ্চিত ভরসা রয়েছে। সে হয়তো রুবিনাকে বলতে চাচ্ছে আমার ওপর বিশ্বাস রাখো।
রুবিনা চিত্রা কে বলল, ভাবি আমরা পালায়া বিয়ে করি। সেইটাই ভালো হইবো।
– পলাইয়া বিয়া করলে তোমরা কই যাইবা? কি খাইবা? থাকবা কোনখানে। বিয়া করার লগে লগে তো বাড়িতে উঠতে দিবে না। সহজে মাইনা নিব না।
রুবিনা বলল, ভাবি আমরা ঢাকা শহরে পলাইয়া যাই। ওইখানে অনেক রকম কাম আছে। গ্রামের কত ছেলেমেয়ে ঢাকা শহরে গিয়ে কাম করতাছে চাকরি-বাকরি করতেছে। কোন কাম না পাইলে গার্মেন্টসে চাকরি করুম।
– তাইলে একখান কাম করো। শিমুল ভাইরে কও ঢাকায় যাইতে। ঢাকায় গিয়া দু-একদিনের মধ্যে একটা কাম নিতে কও। কাম একটা পাইয়া গেলে সে বাড়িতে কইব সে বিয়ে করতে চায়।
– কিন্তু সেটা তো অনেক সময়ের ব্যাপার ভাবি। ততদিনে গ্রামের মানুষ জাইনা যাইবো সবকিছু। আমি লুকাইয়া রাখতে পারুম না।
– তোমার পেট বাইর হইতে আরো মেলা দেরি আছে। চার মাসের আগে পেট বাইর হইব না। আর বমি-টমি তো সবার হয় না। তুমি সারাদিন ঘরের মধ্যে থাকবা। বাইরে যাইবানা। তাইলে কেউ কিছু জানতে পারবো না। দিন পনেরোর মধ্যে সে তোমারে বিয়া করব। শিমুলরে কও এইডা ওয়াদা কইরা যাইতে। সে ঢাকায় গিয়া দুই-একদিনের মধ্যে একটা চাকরি নিয়া যেমনে পারে তেমনে তোমারে বিয়া করব। পরেরটা পরে দেখা যাইব।
রুবিনা স্থির চোখে তাকালো শিমুলের দিকে। তার দৃষ্টিতে অবিশ্বাস। এই দৃষ্টি বলে দিচ্ছে যদি শিমুল ঢাকায় গিয়ে তাকে ভুলে যায়। এই গ্রাম থেকে বাইরে যাওয়া মানেই শিমুল রুবিনার হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়া। তখন কোনভাবেই আর তাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে না। ছেলে মানুষরা সাধারণত এই ধরনের ঝামেলা থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারলেই বেঁচে যায়। মেয়েটার কি হয় সেই কথা তারা ভাবতেও চায়না।
শিমুল অনেকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে কাছে এগিয়ে এসে বলল, ঠিক আছে ভাবি। আপনি যা কইছেন তাই করমু। আইজ রাইতে আমি ঢাকা শহরে যামু। কাম না পাইলেও আমি বাড়িতে কমু আমার কাম হইছে। তারপর মায়েরে কমু রুবিনার লাইগা আমি ঢাকা শহরে আইছি। আমারে জানি রুবিনার দিয়ে বিয়ে দেয়।
– সব কিন্তু তারাতাড়ি করতে হইবো। দেরি করলে হইবো না।
রুবিনা শিমুলের হাত চেপে ধরে বলল, তুমি ঢাকায় গিয়া যদি আর আমার খোঁজ না রাখো? যদি পলাইয়া যাও।
চিত্রা বলল, তার লগে যখন পিরিত করছিলা তখন কি এই ভয়টা মনের মধ্যে আছিল? তখন তো ঠিকই ভাবছিলা তারে লইয়া সুখে সংসার করবা। আজ এই ভয় পাইতেছ কেন? তারে একটা সুযোগ দাও।
রুবিনা কাঁদতে কাঁদতে বলল, ভাবী আপনি যা কইতাছেন সেটা যদি না হয়। তখন আমার মরা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
এবার চিত্রা গম্ভীর এবং দৃঢ় গলায় বলল, তাইলে আমিও আজ একটা ওয়াদা করতাছি। যদি শিমুল পলাইয়া যায়। যদি সে তার কথা মত কাম করতে না পারে। এক সপ্তাহ পরে রুবিনারে নিয়া আমি শিমুলের বাড়িতে গিয়ে উঠবো। আমি শিমুলের বাপ-মায়েরে কমু যে আমার বইনেরে শিমুল পোয়াতি করছে। রুবিনা ওই বাড়িতে থাইকা যাইবো। ওর বাপ-মায়ে যেমনে পারে পোলারে খুইজা তার লগে বিয়া দিব। তোমরা কি বুঝতে পারছ আমি কি কইছি?
চিত্রার কথায় ভয় পেয়ে গেল শিমুল। ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ চিত্রা যখন কথাগুলো বলেছে তখন সে আর আগের মত সেই সহজ-সরল চিত্রা ছিল না। তার কণ্ঠে যেমন ছিল কাঠিন্য তেমনি চোখে-মুখে নমনীয়তার বদলে ফুটে উঠেছিল এক দৃঢ় মনোভাব। এই চিত্রা একেবারেই তাদের কাছে অজানা, অচেনা। রুবিনা তার ভাবীর এ কথায় ভরসা পেয়ে গেল। মরে যাওয়ার চেয়ে এটা অন্তত ভালো। নিজের দাবী নিজে আদায় করে নেয়া। কারন সে শুধু একাই দোষী নয়। শিমুল নিজেও তার দোষে দোষী। সান্তনা পেল রুবিনা। সে শিমুলের হাত ছেড়ে দিল। কঠিন মুখে বলল, ভাবি যা কইছে টগিক কইছে। তুমি যোগাযোগ না করলে আমি তোমার বাড়ি গিয়া উঠব । মরতে হইলে তোমার বাড়িতে গিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে মরবো। মান সম্মান যদি না থাকে বাইচা থাইকা কি হইব?
শিমুল বলল, তোমার এইসব উল্টাপাল্টা কাম করতে হইব না। আমার উপর বিশ্বাস আছে তো নাকি? আমি আজ ঢাকা যাইতাছি এইটা ফাইনাল। আমার মায় আমারে খুব ভাল বাসে। তারে যদি আমি কই আমি তোমার লাইগা ঢাকা শহরে আইসি, আমার মা ঠিকই তোমারে আমার বউ কইরা নিয়া আসবো। বিয়েটা কইরা তোমারে নিয়া আমি ঢাকায় চইলা যাব।
– ঠিক আছে। রুবিনা শিমুলের হাত শক্ত করে ধরল। পরক্ষণে হাত ছেড়ে দিয়ে বলল, তুমি এখন যাও। আমার মা আইসা পড়বো।
সাইকেলটা নিয়ে দ্রুত উঠে পড়ল শিমুল। দ্রুত সাইকেলে টান দিয়ে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো। এই ভরদুপুরের কাঠফাটা রোদ, রৌদ্রোজ্জ্বল সোনালী দিন সবকিছুই কেমন যেন ম্লান হয়ে গেল চিত্রা ও রুবিনার আছে। কে জানে সামনে তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে? সবকিছু কি তাদের পরিকল্পনা মত হবে? নাকি ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছে তাদের জন্য?
চলবে..