#দ্বিতীয়_পুরুষ,পর্ব ২২,২৩
_নীলাভ্র জহির
২২
জোসনা বেগম বাড়ি ফিরে দেখলেন তার মেয়ের ঘরের টিনের বেড়া কাটা। ছেলের বিয়ের কিছুদিন আগেই নতুন টিন দিয়ে তিনটা ঘর তুলেছিলেন। ঘরের সামনে লম্বা বারান্দাও ছিল। মেয়ের ঘরের এই দশা দেখে তিনি হাউমাউ করে উঠলেন। দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়লেন, হায় আল্লাহ আমার এই সর্বনাশ কে করল? কেমনে হইল এইসব?
চিত্রা ও রুবিনা যেন এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েই ছিল। রুবিনার প্রায় প্রতিদিন দুপুর বেলা ঘুমানোর অভ্যাস। সেই অভ্যাসটাকে কাজে লাগিয়ে রুবিনা উত্তর দিল, আম্মা আমি ঘুমাই ছিলাম। হঠাৎ কইরা জোরে জোরে শব্দ শুইনা ঘুম ভাইংগা গেল। দেখি কে জানি আমার ঘরের বেড়া কাটতাছে। আমি একটা চিৎকার দিছি। চিৎকার শুইনা ভাবি পুকুর ঘাট থাইকা দৌড়াইয়া বাড়ি আইছে। আইসা কাউকে দেখে নাই।
হায় আল্লাহ আমার মাইয়া এগুলো কি কয়? ঘরের বেড়ায় কে কাটব। তাও দিন দুপুরে। তুই কি দুয়ার আটকাইয়া ঘুমাইছিলি?
হ মা। আমি দুয়ার আটকাইয়া ঘুমাইছিলাম।
তোর ভাবি পুকুর ঘাটে আছিল?
ভাবী গোসল করতে গেছিল। আমি দরজা আটকাইয়া দিয়া ঘুমাইয়া গেছিলাম। শব্দ শুইনা ঘুম ভাইঙ্গা গেছে।
জোসনা বেগম ছুটে এসে মেয়েকে একবার জড়িয়ে ধরলেন। সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিয়ে তিনি অস্থির হয়ে এদিক সেদিক তাকালেন কয়েকবার। এরপর বিলাপ করতে করতে বললেন, আমার এই সর্বনাশ কে করল? কে আইছিলো বাড়িতে? তাও শব্দ কইরা কোপ দিয়া গেছে।
চিত্রা এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল। এবার সে এগিয়ে এসে বলল, আম্মা সব দোষ আমার। আমার উচিত ছিল রুবিনারে ঘুম থাইকা তুইলা তারপর গোসলে যাওয়া। আমি গোসল কইরা কেবল কাপড় শুকাইতে দিছিলাম। রুবিনার চিৎকার শুইনা বাড়ি আইসা দেখি এই অবস্থা।
– কি সর্বনাশে কথা গো? সর্বনাশটা আমার কেডা করলো? আমার ঘরে জুয়ান মাইয়া, জোয়ান বউ। কোন সর্বনাশের উদ্দেশ্যে কে যে আইছিল?
আঙিনার মাঝখানে বসে জোসনা বেগম বিলাপ করে করে কথাগুলো বলতে লাগলেন। মুহূর্তেই পাশের দুই বাড়ি থেকে ছুটে এলেন বউ-ঝিরা। সবাই ঘটনা শুনে রীতিমত অবাক। তবে অবিশ্বাস করার মত কিছু হয়নি। কিছুদিন আগেই এক বাড়িতে দুপুরবেলা যখন কেউ ছিলনা তখন যুবতী মেয়ের ঘরে ঢুকে পড়েছিল এক বয়স্ক লোক। এরকম মাঝে মাঝেই শোনা যায়। হয়তো রুবিনার সঙ্গে সেরকম কিছু ঘটার কথা ছিল। আরেক পক্ষ বলছে সেটা নাও হতে পারে। সেরকম ইচ্ছা থাকলে নিঃশব্দে তারা ঘরের ভেতর ঢুকতো। শব্দ করে টিনের বেড়া কাটতো না। হতে পারে কেউ একজন রুবিনাকে ভয় দেখাতে চেয়েছিল। ঘরে যুবতী মেয়ে থাকলে বাবা-মাকে ভয় দেখিয়ে অনেকে মজা পায়। তাছাড়া জোসনা বেগম মনে করেন তার অনেক শত্রু আছে। আড়ালে আবডালে কে কার শত্রু সেটা তো বোঝার উপায় নেই। হতে পারে কেউ শত্রুতা করে ভয় দেখাতে এসেছিল রুবিনাকে। যাতে ভয় দেখিয়ে তাদেরকে এক ঘরে করে দেয়া যায়। জোসনা বেগম কি করবেন বুঝে উঠতে পারলেন না। একজনের মাধ্যমে খবর পাঠালেন দোকানে। মুহূর্তেই বাসায় চলে এলেন তার স্বামী। ঘটনা শুনে তিনি বিহ্বল হয়ে ঘরের বেড়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন। কোন শত্রু এই কাজ করতে পারে তিনি ভাবছেন সেটা। অনেক সময় কোনো খারাপ উদ্দেশ্য না থাকলেও কেবলমাত্র ঝগড়া করার জন্য অনেকে এই ধরনের কাজ করতে পারেন।
জোসনা বেগম বলেন, আপনার মনে নাই রায়হানের মা একবার আমার লাউয়ের জাংলার গোরা কাইটা দিছিল। গাছ ভর্তি কইরা লাউ ধরছিল গো। সব বড় হইলে খাইয়া গ্রামবাসীদের দিয়াও মেলা টাকা বিক্রি করতে পারতাম। এইরকম লাউ এই গ্রামে কারো গাছে ধরে নাই। রায়হানের মা আমার গাছের গোড়ায় কাইটা দিছিল। আপনার মনে নাই?
উত্তরে রূপকের বাবা বললেন, আজকাল তো আমাগো সেরকম শত্রু কেউ নাই।
– শত্রু তো আর মুখে কইয়া বেড়াইবো না। বাজারে আমাগো বড় দোকান। আমার পোলায় আবার দোকান বাড়াইয়া দর্জি দোকান দিছে। সংসার ভালোমতো চলতাছে। পোলারে বিয়া দিছি। মাইয়াডা ডাঙ্গর হইছে। ঘরের ধানের ভাত খাইতাছি । জমিজমা বন্ধক লইসি। এখনতো শত্রু লাগবোই। আপনে বুঝতাছেন না?
চিত্রা ও রুবিনা এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলল না। তবে রুবিনা এমন একটা ভাব করতে লাগল যেন সে ভয়েই জড়োসড়ো হয়ে গেছে। তবে এই ঘটনা সাজানোর ফলের একটা লাভ হল। বাড়ির সবাই এখন এটা নিয়েই ব্যস্ত। রাত্রিবেলা রূপক বাড়ি ফেরার আগ পর্যন্ত রুবিনা চিত্রার ঘরে শুয়ে রইলো। ভাবি ও ননদ মিলে বিড়বিড় করে তারা সুখ-দুঃখের গল্প বলছিল।
চিত্রা একবার জানতে চাইল, তুমি যে কাজটা করছো। তোমার দিলে কি একটু ভয় ডর নাই? তোমার যদি অন্য কারো লগে বিয়া হইয়া যায়। সে যখন তোমার লগে থাকব। তখন তো বুইঝা যাইব।
কি বুইঝা যাইবো ভাবি?
বুঝনা তুমি? সবকিছুই তো বুঝ। এইটা বুঝতাছ না?
না, ভাবি বুঝি নাই।
আমার লগে মজা নিয়ো না রুবিনা। সব কিছু বুইঝাও না বোঝার ভান করোন আমি পছন্দ করিনা। একটা মাইয়ার লগে তার স্বামী শুইলেই বুঝতে পারে মাইয়া কি কুমারী নাকি কুমারী না। বিয়ের প্রথম রাইতে যখন আদর সোহাগ করে তখন মাইয়াগো অনেক কষ্ট হয়। রক্তে বিছানা ভিইজা যায়। আর যে মাইয়া বিয়ার আগেই এসব কাম কইরা ফালায় বিয়ের রাতে তার কষ্ট হয় না। তার জরায়ু থেকে রক্ত বাইর হয় না।
রুবিনা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, হাছা কতা কইতাছ ভাবি? এইটা কি আসলেই হয়?
কেনো তুমি জানো না?
না, জানতাম না। আপনারও হইছিল?
হ, প্রথম রাতে মেলা কষ্ট হইছিল। ভোরে ঘুম থেইকা উইঠা আগে বিছানার চাদর ঘাট বিয়া দিছিলা। ছবি তো দেখছো। আবার জিগাইতাছ?
রুবিনা নিশ্চুপ হয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না। গম্ভীর হয়ে শুয়ে রইলো। অনেক রাত পর্যন্ত রুবিনা আর কোন কথাই বলল না। রাতের নিস্তব্ধতা তখন চারপাশ ঘিরে ধরল। চোখে ঘুম চলে এসেছিল চিত্রার। হঠাৎ শুনতে পেল রূপকের গলা।
ভাত খেয়ে নিজের ঘরে শুতে এলো রূপক। জোসনা বেগম রুবিনাকে একা শুতে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। তাই আজ রাতে তিনি নিজে ঘুমালেন রুবিনার সঙ্গে।
বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে রূপক বলল, এই কাম কে করছে আমি খুইজা বাইর করমু। তুমি একদম ভয় পাইও না বউ।
আমি আমার লাইগা ভয় পাইতাছি না। ভয় হইতাছে রুবিনার লাইগা। আমার ঘরে কোপ দিলে একটা কথা আছিল। আমার ঘরেও তো দেয় নাই। দিনের বেলা কাইটা ফেলছে রুবিনার ঘরে। চিন্তা হইব না কন?
তোমার এত চিন্তা করতে হইবো না। তুমি এখন চিন্তা একদম করবা না। দুনিয়ার সব বিষয় নিয়ে চিন্তা করার লাইগা আমি আছি আব্বা আম্মা আছে। তুমি নিজের দিকে খেয়াল রাখো।
চিত্রা রূপকের গলা জড়িয়ে ধরলো। তারপর মৃদু স্বরে বলল, আপনারে একখান কথা কই?
কও।
কইতাছি রুবিনা তো বড় হইছে। এখন অর একটা বিয়ের ব্যবস্থা করলে কেমন হয়?
এত তাড়াতাড়ি? আমি আরেকটু আয় উন্নতি করি। কিছু জমিজমা কিনি তারপর।
– জমিজমা দিয়া রুবিনার কাম কি? সে থাকবো শ্বশুরবাড়ি। আপনি আবার ভাইবেন না আমি ননদরে তাড়াইয়া দিবার কইতাছি। বাড়িতে মানুষের নজর পড়ছে। কখন কি হয় কওন যায়? রুবিনার একটা বিয়ের ব্যবস্থা করলে আমার মনে হয় খারাপ হইবো না। ভালোই হইবো।। আপনি একটু চিন্তা ভাবনা কইরা দেইখেন।
– আচ্ছা, দেখবনে। আমার পোলায় কেমন আছে?
– আমি কেমনে কমু? পোলারে জিগান।
রূপক চিত্রার পেটের উপর হাত রেখে বেশ আদুরে গলায় ডাকলো, আব্বাজান ও আব্বা জান। আপনি কেমন আছেন?
চিত্রা বলল, একটা কথা কমু। ভয় করতাছে।
– কইয়া ফালাও। ও আমার আব্বাজান। কেমন আছেন আপনি?
চিত্রা বলল, আপনি খালি আব্বাজান কইতাছেন কেন? সে তো আম্মাজান ও হইতে পারে। আপনার বোধহয় অাব্বাজান নিয়ে অনেক আশা। আম্মাজান হইলে আপনি বোধহয় অনেক কষ্ট পাইবেন।
অনেকক্ষণ পর্যন্ত রূপকের কোন কথা শোনা গেল না। কেবল নিঃশ্বাসের শব্দ চিত্রা স্পষ্ট শুনতে পেল। এই শব্দে বুঝতে পারল না আসলেই কন্যা সন্তান হলে রূপক কষ্ট পাবে কিনা।
দেখতে দেখতে কেটে গেল কয়েকটা দিন। এরমধ্যে শিমুলের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি রুবিনার। ফোনে কথা বলতে গেলে তাকে বাড়ি থেকে বের হতে হবে। কিন্তু সেই সুযোগটা আপাতত পাচ্ছে না। মা সারাক্ষণ রুবিনাকে চোখে চোখে রাখছে। সতর্ক হয়ে আছে পুরো পাড়া। এই মুহূর্তে শিমুলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে নিশ্চিত ভাবে কেউ না কেউ বিষয়টা জেনে যাবে। তাই চুপচাপ নিজের মতই আছে রুবিনা। শিমুল যদি তাকে ভালোবেসে থাকে তবে নিজে থেকেই সে যোগাযোগ করবে। তবে প্রত্যেকটা মুহূর্ত কাটছে ভয়াবহ দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে। কখন সে ধরা পড়ে যায়, কোন ভয়াবহ দুর্বিসহ যন্ত্রনা নেমে আসে তার জীবনে, তাকে ও তার পুরো পরিবারকে গ্রামের সবার সামনে অপদস্ত হতে হয় কিনা সে সব ভেবে রাত্রি বেলা ঘুম হয়না রুবিনার। দুশ্চিন্তায় সে শুকিয়ে যাচ্ছে। সারাক্ষণ এলোমেলো লাগে তার। জোসনা বেগম ভাবেন আকস্মিক ঘরের বেড়া কাটার মত দুর্ঘটনায় হয়তো তার মেয়ে মানসিকভাবে কষ্ট পেয়েছে। তাই এমন দেখাচ্ছে রুবিনাকে। বিষয়টা নিয়ে তিনি খুব একটা পাত্তা দিলেন না। দিনের বেশিরভাগ সময়ে রুবিনা চিত্রার সঙ্গে কাটায়। এতে করে একটা সুবিধা হয়েছে। তার শারীরিক কোনো অসুবিধার কথা জোসনা বেগমের চোখে পড়ছে না।
চিত্রা সাহস করে পাশের বাড়ির সাবিনার মোবাইল থেকে শিমুলের কাছে কল করলো। ভেবেছিল কলটা হয়তো রিসিভ হবে না। কিন্তু তাকে আশ্চর্য করে দিয়ে রিসিভ করল শিমুল। চিত্রা ফিসফিস করে বলল, আমি তোমার ভাবি কইতাছি। চিনবার পারছ?
হ, ভাবি। কেমন আছেন? রুবিনা কেমন আছে?
– ভালোই আছে।
– সাবিনা আপার ফোনে কয়েকদিন কল দিছিলাম। আপা কইল রুবিনা নাকি বাড়ি থাইকা বাইর হয় না। কে নাকি ঘরে টিনের বেড়া কাইটা দিয়া গেছে।
– তুমি তো সবই জানো।
– হট ভাবি। সেজন্য আমিও আর চেষ্টা করি নাই।
– চেষ্টা করো নাই মানে। তুমি অহন কই আছো?
– আমি তো ঢাকায় আইছি।
– আম্মা সারাক্ষণ রুবিনা রে চোখে চোখে রাখে। সেই জন্য বেচারি তোমারে ফোন করতে পারেনাই।
– আমি সাবিনা আপার আছে শুনছি। ভাবি শুনেন। আমার এখনো কোন কাম হয় নাই। ঢাকা শহরে কাম পাওয়ার এত সহজ কথা নয়। পরিচিত ভাই বেরাদার থাকতে হয়। এইখানে আমার কেউ নাই। আমার এক দোস্তরে কইছি। কাম যোগাড় কইরা দিব। কিন্তু সময় লাগবো কিছুদিন।
– ভাই তুমি তো সবই বুঝো। বাড়ির পরিস্থিতি এখন খুবই খারাপ। এখন আর কেমনে সময় নিবা? যা করার তাড়াতাড়ি করতে হইবো।
– আমারে কি করতে কন ভাবি? ঢাকায় আইসি কয়টা দিন হইল। এখনো কোন কাম যোগাড় করতে পারি নাই। এর মধ্যে কেমনে বাড়িতে বিয়ার কথা কমু?
– তুমি কি কইছিলা মনে নাই? কাম না হইলেও তুমি বিয়ার কথা কইবা। এছাড়া আর কোন উপায় নাই। মান-ইজ্জত সবার আগে। মান ইজ্জত বাচাইতে দুই-চারটা মিথ্যা কথা কইলে কিছু হইব না। তুমি বাড়িতে কল কইরা তোমার মায়েরে কইবা তুমি রুবিনারে বিয়া করতে চাও। রুবিনা লাইগা তুমি ঢাকা শহরে গেছে। এইডাও কইবা যেদিন তুমি ঢাকায় গেছো ঐদিন রুবিনার বাড়িতে একটা ঝামেলা হইছে। কে জানি রুবিনার ঘরে দা দিয়া কোপাইয়া টিনের বেড়া কাইটা ফেলছে। এখন রুবিনার ভাই ওরে তাড়াতাড়ি অন্য জায়গায় বিয়া দিতে চায়। তুমি ওরে নিয়া ভয় পাইতাছ। তাই তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাও। বিয়া কইরা তুমি ওরে নিজের কাছে নিয়ে যাইবা। আজকের মধ্যেই কথাটা তুমি তোমার মায়েরে জানাও। আমি কি কইছি বুঝছ?
শিমুল কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল। চিত্রা বলল, ভাই তুমি তো সবই বুঝো। রুবিনা খুব বিপদের মধ্যে আছে। আমরা সবাই খুব বিপদের মধ্যে আছি। যত তাড়াতাড়ি পারো এটার ফয়সালা কইরা ফেলো।
– ঠিক আছে ভাবি। আমারে দুইটা দিন সময় দেন।
– সময় দিতে পারুম না। রুবিনার শইলটা ভাল না। শইল খারাপ হইয়া গেলে আম্মা বুইঝা ফেলবো। তুমি আর দেরী কইরো না। তুমি আজকেই বাড়িতে কথাটা জানাইয়া দাও। তোমার এই বইনের অনুরোধ টা রাখ। তোমার পায়ে পড়ি ভাই। আমাগো মান-ইজ্জতের কথা একটু চিন্তা করো।
– এমন কইরা কইয়েন না ভাবি। আমার নিজেরও তো মান ইজ্জত আছে। ঘটনা যে এমনে ঘইটা যাইব আমিতো সেটা জানতাম না। চিন্তা কইরেন না। আপনি আমারে ভাই ডাকছেন। আমি দেখতাছি।
– দেখতাছি কইলে হইব না। সত্যি সত্যি দেখতে হইবো। ভালো থাইকো। সুযোগ পাইলে কাইল আবার তোমারে কল দিমু।
চিত্রা বাড়ি ফিরে এল। তার চিন্তা হচ্ছে রুবিনার জন্য। শিমুলের কথায় যথেষ্ট ভরসা পেলেও তার দুশ্চিন্তা কমছে না। শিমুলের পরিবার বিয়ে দিতে রাজি হবে কী না সেটাই আসল কথা। এত সহজে কোনো মা বাবা ছেলের বিয়ে দিতে রাজি হয় না।
চলবে..
#দ্বিতীয়_পুরুষ
পর্ব ২৩
নীলাভ্র জহির
সন্ধ্যা পেরোতেই পুরো গ্রামজুড়ে নিস্তব্ধ অন্ধকার নেমে এসেছে। জোসনা বেগম ঘরের সব কাজ শেষ করে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এমন সময় বাড়িতে অপরিচিত কারো গলা শোনা গেল। দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলেন তিনি। মহিলাটাকে ওনার চেনা চেনা লাগছে। খুব সম্ভবত কখনো দেখা হয়েছিল। কিন্তু সঠিক চিনতে পারছেন না। দুইজন মহিলা এসেছেন। একজন মধ্যবয়সি ও অন্য একজন সদ্য যৌবনা।
জোসনা বেগম জিজ্ঞেস করলেন, কে গো? চিনবার পারলাম না।
মহিলা উত্তর দিলেন, আমি পূর্ব পাড়ার রমিজ মিয়ার ও আমার ছেলের বউ। রমিজ মিয়ারে চিনেন না?
– নাম শুনছি। বসেন ।
দাওয়ায় দুটো মোড়া এগিয়ে দিলেন জোসনা বেগম। পূর্ব পাড়ার নাম শুনে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে চিত্রা। সে মাথায় ঘোমটা টেনে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। দখিনা বাতাস লাগছে বারান্দায়। টিমটিম করে জ্বলছে হারিকেন। সেই আলোয় মহিলা দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে তার আন্দাজ সঠিক হল। ওনারা শিমুলের মা ও ভাবি। শিমুলের চেহারার সঙ্গে মহিলার চেহারার অদ্ভুত মিল রয়েছে। চিত্রা এগিয়ে এসে মহিলাকে সালাম জানালেন।
মহিলা একপলক চিত্রার দিকে তাকিয়ে জোসনা বেগমের কাছে জানতে চাইলেন, আপনার মাইয়া ?
জোসনা বেগম বললেন, উনি আমার ছেলের বউ। তা ভাবি কী দরকারে আইছেন? এর আগে তো কোনদিনও এইদিকে আসেন নাই মনে হয়। আপনার লগে আমার সাক্ষাতও হয় নাই।
– মাঝেমধ্যে দরকার হইলে এদিকে আসি। দরকার না হইলে আসা হয়না।
– তা বইন কী দরকারে আইসেন?
– কমু। কওনের লাইগাই তো আইছি। আপনার পোলা-মাইয়া কয়জন?
– বাইচা আছে দুই জন। এক পোলা এক মাইয়া।
– মাইয়া কই?
– আছে বাড়িতে। কি ব্যাপার কন তো বুবু?
– আপনার মাইয়াডারে একটু দেখতে আইছি।
– আমার মাইয়ারে? জোসনা বেগম একপলক চিত্রার দিকে তাকালেন। অনেকদিন হয়ে গেল কোন বিয়ের প্রস্তাব আসেনি তার মেয়ের। মহিলার কথাবার্তা শুনেই বোঝা যাচ্ছে তিনি বিয়ের জন্য দেখতে এসেছেন। নয়তো পূর্বপাড়া থেকে তার বাড়িতে আসার কোনো মানেই হয় না। ইতস্তত করে তিনি বললেন, বউ রুবিনারে আইতে কও তো।
চিত্রা রুবিনাকে ডাকতে গেল। তার ঘরেই রয়েছে রুবিনা। শিমুলের মায়ের উপস্থিতি তার হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিয়েছে। চিত্রার সাজসজ্জার স্যুটকেস থেকে ফেস পাউডার বের করে দ্রুত রুবিনার গালে মাখিয়ে দিলো সে। চুল আঁচড়ে খুব সুন্দর ভাবে বেণি করে দিল। আর কোনো সাজসজ্জা আপাতত প্রয়োজন নেই। মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা টেনে দিলো রুবিনা। তারপর রুবিনাকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে এল দাওয়ায়।
রমিজ মিয়ার স্ত্রী বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে রুবিনার দিকে তাকিয়ে রইলেন। হারিকেনের টিমটিমে আলোয় হলুদাভ ও লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে ওঠা রুবিনাকে বেশ সুন্দরী দেখাচ্ছে। তথাপি তাদের মনঃপুত হয়েছে কিনা সেটা আন্দাজ করতে পারছে না চিত্রা। মহিলা জোসনা বেগম কে বললেন, আপনার বাপের বাড়ি কোনখানে?
– বইন আমার বাপের বাড়ি দুই গ্রাম পরেই। এখন শুধু ভাইয়েরা রইছে।
– আপনেগো তো গঞ্জে কাপড়ের দোকান?
– হ, বোইন। ওর বাপের বহু বছরের ব্যবসা। সবাই তো এক নামে চিনে। আমার বিবাহের পর যখন বাজারে কোন কাপড়ের দোকান ছিল না তখন সে কাপড়ের দোকান দিছে। সেই দোকান আজকে মেলা বড় হইছে। এখন আমার পোলায় বসে। পোলা আবার বাপের চাইতেও ব্যবসাপাতি ভালো বুঝে। আপনেরা একটু বসেন আমি পান লইয়া আসি।
চিত্রা সঙ্গে সঙ্গে বললো, আম্মা আপনি বসেন। আমি নিয়া আসতেছি।
– রুবিনা বলল, মা আমিও ভাবীর লগে যাইতাছি।
জ্যোৎস্না বেগমের ঘরে বাক্সের ওপর পানের বাটা রাখা। অন্য একটা হারিকেন হাতে নিয়ে রুবিনা ও চিত্রা সেই পানের বাটা থেকে পান সাজাতে লাগলো। বিয়ের পর পর জোসনা বেগমের একদিনের ঝাড়ি খেয়ে চিত্রার বেজায় জ্ঞান হয়েছে। সে এখন পিরিচে করে পান সাজিয়ে একদিকে সুপারি ও চুন দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশন করে। রুবিনা বলল, ভাবি জানো আমার খুব টেনশন হইতেছে।
– টেনশন কইরো না।
ওর মায়ের যদি আমাকে ভালো না লাগে?
– কেন? লাগবো না কেন? আমার ননদিনী কি দেখতে শুনতে খারাপ নাকি। সে তো সিনেমার নায়িকা গো মত সুন্দর।
— মজা কইরো না ভাবি। আসলেই আমার চিন্তা হইতেছে।
– ধুর পাগলী। এত চিন্তা কইরা লাভ হইব। যা হওনের তাই হইব। মহিলা তোমারে পছন্দ করলেও – বিয়া হইবো না করলেও বিয়া হইবো।
– সেটাই যেন হয় ভাবি। তোমার কথায় মনে অনেক শান্তি পাই।
রুবিনা চিত্রাকে জাপ্টে ধরলো। ভালো লাগলো চিত্রার। এই বাড়িতে এখন তার আরও একজন আপন মানুষ হয়েছে , সে হল রুবিনা।
শিমুলের মা পান মুখে দিয়ে বললেন, নিজের পোলার লাইগা নিজেই কথা কইতাছি। কি আর কমু বইন? ছেলেআমার আপনার মাইয়ারে খুব পছন্দ করে। ঢাকায় গেছে এক সপ্তাহ হইল । ঢাকায় গিয়াই নাকি চাকরি হইয়া গেছে। ভালো চাকরি। বেতন তের হাজার ট্যাকা। এখন পোলায় আমার কইতাছে আপনার পোলায় নাকি বইনের বিয়ের কথাবার্তা কইতাছে। পাত্র খুঁজতাছে। এই কথা শুইনা পোলা আমার খুব চিন্তায় পইড়া গেছে। তাই আইলাম আরকি কথাবার্তা কইতে। পোলার কথা সে এই মাইয়া ছাড়া আর কোনওদিন অন্য কাউরে বিয়ে করব না। এখন কি করমু কন? আমার দুই পোলার বিয়া হইছে । এই পোলা সবথেকে ছোট। ওর বিয়া শাদীরচিন্তাভাবনা এখন ছিল না। ভাবছিলাম ব্যবসা-বাণিজ্য করব। আরও মেলা পরে বিয়ে-শাদীর চিন্তা ভাবনা করুম। ওর ভাইয়েরা তো বিয়ার কথা শুনলেই ক্ষেইপা যায়। কিন্তু পোলা আমার আপনার মাইয়ার লাইগা ঢাকায় চইলা গেছে। পোলা মাইয়া মানুষ করা বড় কষ্টের বুঝছেন।
জোসনা বেগম সব কথা নীরবে শুনলেন। বললেন, ওর বাপ বাড়িতে আসুক। আমি কথাবার্তা কইয়া দেখি। আমাগো তো এখন মাইয়া বিয়া দেওনের কোন ইচ্ছা নাই। মাইয়ার বয়স আর কতই হইবো। তাও আমি ওর বাপের কাছে কথাটা কইয়া দেখি।
– আমার পোলারে আপনার পোলায় চিনব। তার কাছে জিগায়া দেইখেন। দুই গ্রামের মানুষ ওরে খারাপ কইতে পারবো না। ছেলে আমার মানুষ ভালো। বয়স কম, এখন একটু ঘুইরা বেড়াই আর কি? চাকরি যখন হইছে এখন সংসারে গিট্টু দিব। পোলা বিগড়াইয়া যাওনের আগে আমিও বিয়ে দিয়ে দিতে চাইতেছি। বড় ভাইদেরকে আমারই রাজি করাইতে হইব। এখন আপনি আগে কথাবার্তা কন। আমার পোলারে দেখেন তারপর।
জোসনা বেগম উনাদেরকে ভাত খেয়ে যেতে অনেক অনুরোধ করলেন। কিন্তু খেলেন না তারা। অনেকক্ষণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলে উনারা চলে গেলেন। জোসনা বেগম ডেকে নিলেন রুবিনাকে। জিজ্ঞেস করলেন, ওই পোলার লগে তুই কথাবার্তা কস নি?
রুবিনা মাথা নিচু করে রইল।
– তোর ভাই তোরে আরেক জায়গায় বিয়া দিতে চায় এইডা ক্যামনে জানলো? আর তোর বিয়ে-শাদী নিয়ে আমরা তো কোনো আলাপই করি নাই।
চুপ করে রইলো রুবিনা। তবে তার মনে হলো সে শিমুলকে পছন্দ করে এটা মাকে জানান দেয়া দরকার। তাহলে কাজটা খুব দ্রুত হয়ে যাবে।
এসব ভেবে রুবিনা বলল, শিমুল আমারে পছন্দ করে। ঐদিন রাতে ভাইয়ারে দেখলাম ভাবীর লগে আমার বিয়ে নিয়ে কথাবার্তা কইতাছে। সেই জন্য আমি ওরে কইছিলাম সে যদি আমারে বিয়া করতে চায় তাইলে যেন একটা কাম জোগাড় কইরা লইয়া বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
জোসনা বেগম চিত্রার দিকে তাকালেন, হ্যাঁগো বউ রূপক তোমারে কইসিলো বিয়ার কথা?
চিত্রা ইতস্তত করতে করতে বলল, হ মা। ওইদিনের ঘটনার পর উনি আমারে কইতে ছিল মানুষের নজর পড়ছে। রুবিনা বড় হইছে তো। ভালো একটা পোলা খোঁজ কইরা ওরে বিয়া দিয়ে দিব।
– পোলাতো আমার লগে এটা নিয়ে কথা কইল না। এই কথা তুই ওই ছেলেরেও কইরা দিছোস? তুইও তাইলে ওই পোলারে বিয়া করতে চাস?
রুবিনা মাথা নিচু করে রইল। চিত্রা রুবিনাকে বলল, তুমি ঘরে যাও।
রবিনা ঘরে চলে যেতেই শাশুড়ি মায়ের পাশে দাওয়ায় বসে পড়ল চিত্রা । যথাসম্ভব নরম গলায় বলল, আম্মা একটা কথা কইতাম। রুবিনা শিমুলরে পছন্দ করে সেটা আমি আগে থেকে জানি। কথাটা আমার কানে আইছিল। ও নাকি সাবিনা গো বাড়িতে গিয়া দুইদিন কার লগে মোবাইলে কথা কইছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম শিমুলের লগে কথা কয়। এইডা নিয়া আমি রুবিনার লগে আর কথাবার্তা কই নাই। সেদিন আপনার পোলা যখন আমারে কইলো বিয়া দিতে হইব, আমি তখন ওরে কইছিলাম আরকি যে তোমার ভাইয়া তোমার বিয়ের কথা ভাবতাছে। সে নিজেও শিমুলরে বিয়া করতে চায় সেজন্য কথাটা শিমুলের কাছে কইয়া দিছে।
ও- সাবিনা গো বাড়িতে গিয়ে মোবাইলে কথা কয়?
– হ মা ।
– ওরে কইবা আর যেন কোনদিনও ওই বাড়িতে গিয়ে মোবাইলে কথা না কয়?
চিত্রার বুকটা ধ্বক করে উঠলো। সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, পোলার ব্যাপারে একটু চিন্তা ভাবনা কইরা দেখেন। পরে আবার মাইয়া উল্টাপাল্টা কোন কাম করে কিনা।
– আমার মাইয়ারে নিয়া তোমারে ভাবতে হইব না। উল্টাপাল্টা কাম করনের মত পোলা মাইয়া আমি জন্ম দেই নাই।
চিত্রা মনে মনে হাসলো। যার ভালোর জন্য কথা বলতে যায় সেই তাকে ভুল বোঝে। কিন্তু সেই হাসিটুকু মুখে ফোটাতে পারল না। কারণ এর সঙ্গে তার নিজের সম্মান ও জড়িয়ে আছে। নিঃশব্দে সে উঠে পড়ল শাশুড়ি মায়ের পাশ থেকে।
জোসনা বেগম বললেন, পোলাডারে আমি দেখছি দেখছি লাগে। শিমুল নাম না? লম্বা কইরা? শুকনা কইরা। ঢাকা শহরে কিসের কাম করে আমরা কেমনে জানমু? মাইয়ারে তো আমি ঢাকা শহরে পাঠামু না। মাইয়ারে নিজের গ্রামে বিয়া দিমু। যেন মন চাইলে যখন তখন যাইয়া দেইখা আসবার পারি। আর চাকরি করা ছেলে আমার পছন্দ না। ব্যবসা-বাণিজ্য করব। সংসারে আয় উন্নতি হইবো। একটা গেরস্থ ছেলে দেইখা মাইয়ারে বিয়া দিমু।
চিন্তায় পড়ে গেল চিত্রা। তার মানে তিনি সরাসরি শিমুলকে না করে দিচ্ছেন। প্রথমত শিমুল গেরস্থ ছেলে নয়। দ্বিতীয়তঃ সে ঢাকায় থাকবে। এই ছেলের সঙ্গে মা কিছুতেই মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হবেন না। এই বিয়েটা আয়োজন করতে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে তাদেরকে।
রূপক বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই চিত্রা তার হাতটা খপ করে ধরলো। বলল, আপনারে একটা কথা কইতে চাই। আপনি রাখবেন তো?
কও ।
আম্মা কিন্তু আপনার লগে কথা কইব। রুবিনা একটা পোলারে পছন্দ করে। তার নাম শিমুল। আপনি ওরে চিনেন।
পূর্ব পাড়ার শিমুল? লম্বা কইরা পোলাটা?
হ, আপনার বোন তার লগে মোবাইলে কথা কয়।
ও মোবাইল কই পাইল?
সাবিনার মোবাইল দিয়া কথা কয়। ওরা দুজন দুজনরে পছন্দ করে। কথা হইতেছে, ঐদিন রাতে আমি আপনেরে কইসিলাম না যে রুবিনার বিয়ের ব্যাপারটা চিন্তা কইরা দেখতে। কথাটা রবিনা শুইনা ফেলছে। সে শিমুলরে কইছে যে আপনি নাকি ওরে অন্য জায়গায় বিয়া দিবেন। বিয়ার কথাবার্তা চলতাছে। তার জন্য শিমুল ঢাকায় চইলা গেছে। একটা চাকরি শুরু করছে। আজকের শিমুলের মায়ে আইছিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
কিছুক্ষণ গম্ভীর মুখে থেকে রূপক বলল, ওই ছেলের লগে রুবিনার রিলেশন আছে?
হ,
আম্মায় কি কইলো?
আম্মা তাদেরকে কিছু কয় নাই। আমারে কইলো গেরস্থ ছেলের লগে বিয়া দিব। চাকরি করা ছেলের লগে বিয়া দিব না।
– চাকরি করাই তো ভালো। মাস শেষে বেতন পাইবো। বউরে ভালো-মন্দ কিইনা খাওয়াইতে পারব। ব্যবসা কইরা দুনিয়ার টেনশন মাথায় লইয়া না নিজের মধ্যে শান্তি আছে না সংসারে শান্তি আছে।
-আপনি একটু আম্মারে বুঝাইয়া কন।
– মনে হইতাছে রুবিনা নিজেই তোমারে পা ধইরা কইছে ভাবি আমার বিয়েটা দিয়ে দাও।
চিত্রা মুচকি হেসে বলল, আম্মারে আবার এইটা কইহেন না। রুবিনা আমার বোইনের মতো। সে এখন আমার খুব কাছের একজন মানুষ হইয়া গেছে। নিজে থাইকা আমারে কইসে ভাবি আমি ওই পোলারে বিয়া করতে চাই। আপনি একটু ভাইয়ারে রাজি করান। আমি কেমনে ওরে ফিরাইয়া দেই আপনে কন?
-এই তাহলে আসল কথা। একথা তুমি আমারে আগে কইলা না কেন?
– আগে কওনের সুযোগ পাই নাই। আমি চাইছিলাম আগে তারা আমাগো মাইয়াকে দেইখা ভালো-মন্দ একটা কিছু কইয়া যাক তারপর কমু।
– বুঝছি । খুব দায়িত্ববান ভাবী হইয়া গেছ।
– আপনি কি কষ্ট পাইছেন? রাগ করছেন আমার উপর?
– না, রাগ করি নাই। রুবিনা আমার একমাত্র বইন । ওরে ছোট থাইকা আমি খুব আদর করি। ও নিজে থাইকা কাউরে বিয়া করতে চায়, সেইটা যখন তোমারে কইছে। আমার উচিত সেটা একটু ভাইবা দেখা। আমি দেখতাছি।
চিত্রার ইচ্ছা করলো আনন্দে একটা লাফ দিতে। কিন্তু সেই আনন্দ আপাতত সংযত করতে হলো। রূপককে যেহেতু ম্যানেজ করা গেছে তারমানে বাকি কাজটা আর করতে খুব বেশি কষ্ট হবে না। রূপক নিশ্চয়ই জোসনা বেগমকে রাজি করাতে পারবেন। তবুও দুশ্চিন্তা। শেষ পর্যন্ত সবকিছু ভালোভাবে হবে তো?
চলবে..