#দ্বিতীয়_পুরুষ,পর্ব ৫,৬
নীলাভ্র জহির
০৫
উনুনের আলোয় রাঙা হয়ে উঠেছে নতুন বউয়ের মুখ। সেদিকে তাকিয়ে রূপক শিন্নি দিয়ে মুড়ি খাচ্ছে। তার হঠাৎ মনে পড়ল তার বউটার নিশ্চয়ই অনেক ক্ষুধা পেয়েছে। কিন্তু মায়ের সামনে সে তার নতুন বউকে খেতে বলতে পারছে না।
অনেক ভাবনাচিন্তার পর রূপক বলল, আমারে এক গ্লাস পানি দিয়া যাও।
কথার সুর শুনেই বোঝা যাচ্ছে সে তার বউকে বলেছে কথাটা। জ্যোৎস্না বিষয়টা বুঝতে পেরে চিত্রাকে বললেন, যাও ওরে এক গ্লাস পানি দিয়া আসো।
চিত্রা কাঁপা কাঁপা হাতে একগ্লাস পানি নিয়ে এসে রূপকের পাশে দাঁড়ায়।
ভর সন্ধ্যা। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। রান্নাঘরের জ্বলন্ত কুপির আলো খানিকটা বাইরে এসে পড়েছে। সেই আলোয় বসেই শিন্নি খাচ্ছিল রূপক। নতুন বউ পাশে এসে দাঁড়াতেই সে গ্লাস ধরার অজুহাতে বউয়ের হাতটা খপ করে ধরলো।
হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল চিত্রা। কিন্তু তার ভয় ভয় লাগছে। পরে যদি গ্লাসটা হাত থেকে পড়ে ভেঙে যায়। চিত্রা ফিসফিস করে বলল, কি করেন? কি করেন? হাত ছাইড়া দেন। আম্মায় দেইখা ফেলবো।
রূপক চিত্রার হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে একটা নরম মোচড় দিলো। এইটুকুতেই সে কি আনন্দ পেল বুঝতে পারল না চিত্রা। রূপক মুচকি হেসে তার খেয়ে অর্ধেক করে রাখা শিন্নির গামলাটা তার বউয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, আর খামু না। প্যাট ভইরা গ্যাছে। এইটা তুমি খাইয়া লও।
চিত্রার লাজে রাঙা মুখ আরো টকটকে লাল হয়ে উঠলো । আবছায়া অন্ধকারেও সেই রক্তিমতা টুকু দেখতে ভুল করল না রূপক ।
ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিল সে। নিজের অর্ধেক করে ফেলে রাখা খাবারটা বউকে ভালবেসে দিতে পেরে সে গর্ববোধ করছে। এই খাবার খেলে তার প্রতি বউয়ের মহব্বত বাড়বে। এই কথা সে ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছে। কারো অর্ধেক খাওয়া খাবার অন্য কেউ খেলে দুজনের প্রতি একটা নতুন মহব্বত কাজ করে। যদিও তার বউ তাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু মানব মনের বৈশিষ্ট্য হলো, সে যত ভালোবাসা পায় আরো বেশি ভালোবাসা পেতে চায়।
চিত্রা রান্নাঘরের চালায় গিয়ে ঢুকলো। শিন্নির গামলাটা রেখে দিল এক পাশে। শাশুড়ির সামনে স্বামীর দেয়া শিন্নি খেতে তার লজ্জা লাগছে। তাছাড়া এখন কাজের সময়। রান্নাঘরের কাজ ফেলে খেতে বসে গেলে শাশুড়ি মা রাগ করবেন।
তাকে অবাক করে দিয়ে জোৎস্না বললেন, হাত ধুইয়া চারটা খাইয়া লও। আমি তরকারি রানমু। কেমনে রান্ধে সেইটা শিইখা লও। আমরা কিন্তু তরকারিতে নুন একটু বেশি খাই।
চিত্রা ঘাড় বেঁকিয়ে সায় দিল। তারপর হাত ধুয়ে শিন্নি খেতে বসলো সে। শাশুড়ি মা একহাতে মাঝে মাঝে ভাতের জ্বাল ঠেলে দিচ্ছেন। তরকারি কুটছেন তিনি। চিংড়ি মাছ দিয়ে মিষ্টি কুমড়া। সঙ্গে আছে আলু ভর্তা। রূপক উঠে যাওয়ার সময় জোসনাকে বলল, বেশি কইরা ধইনা পাতা কুঁইচা দিয়া ভর্তা কইরো মা।
রুপক ঘরে চলে গেলে চিত্রার কেমন শূন্য শূন্য লাগে। মানুষটা যতক্ষণ আশেপাশে থাকে অস্থির হয়ে থাকে ও। তবুও সবকিছুই ভালো লাগে তার। কিন্তু মানুষটা একটু আড়ালে গেলেই কেমন যেন হাহাকার কাজ করে। মন চায় সারাক্ষণ শাড়ির আঁচলে তাকে বেঁধে রাখতে। কিন্তু সমাজের নিয়ম বলে একটা কথা আছে। আগামীকাল থেকে রূপক আবারও নিয়মিত দোকানে বসবে। স্বামীকে না দেখে সারাদিন সে কি অস্থিরতায় সময় কাটাবে সেটাই ভাবছিল চিত্রা।
রাতে ঘুমাতে এসে চিত্রা রূপককে বলল, আপনি তো কাল থাইকা ব্যস্ত হইয়া যাইবেন। দোকানে গিয়া কি আমার কথা আপনার মনে পড়ব?
– ক্যান মনে পড়বোনা? আমি যহন একটা সুন্দর কাপড় কাস্টমাররে দেখামু , তোমার কথা মনে হইবো। মনে মনে ভাববো এই কাপড়টা আমার বউয়ে পিনলে না জানি কত সুন্দর লাগতো।
– ইস আপনার খালি ঢং এর কথা।
– ঢঙের কথা না কইলে কিসের কথা কমু। পিরিতি তো খালি ঢং আর ঢং।
কথাটা বলেই সে বউয়ের থলথলে পেটে জোরে চাপ দেয়।
চিত্রা রূপকের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে, আপনে এমন ক্যান?
কথাটা শুনে খিলখিল করে হাসে রূপক। সেই হাসি চুড়ির রিনিঝিনি শব্দের মত অনেকক্ষণ বাজনা বাজায় চিত্রার কানে। আস্তে আস্তে রূপক ঘুমে ঢলে পড়ে। চিত্রা ওর স্বামীর ঘুমের শব্দ শুনে। সে জানে মাঝরাতে হঠাৎ তার উপর চড়াও হবে রূপক। অনেক আদরে আদরে তাকে ভরিয়ে দিবে। চিত্রার ভালো লাগে তার স্বামীর প্রত্যেকটা স্পর্শ। মনে হয় এই স্পর্শগুলো গৌরবের। পরম সুখের। পৃথিবীতে এর চাইতে কোন সুখ নাই।
খুব সকালবেলা গরম ভাত খেয়ে কাজে বেরিয়ে গেল রূপক। রূপক বের হওয়ার সময় জোসনা বলছিল, আর কয়টা দিন। সাইকেলটা পাইয়া গেলে তোর অনেক সুবিধা হইবো। তখন আর ভ্যানে করে যাইতে হইবো না। ট্যাকাও বাঁচবো।
মায়ের কথা শুনে রূপক আড়চোখে একবার চিত্রার দিকে তাকালো। চিত্রার বুকটা হাহাকার করে ওঠে। তার ভাইয়েরা কি পারবে রূপকের জন্য সাইকেল এর ব্যবস্থা করে দিতে? এমনিতেই বিয়ে বাবদ তাদের অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে।
সারাটা দিন অনেক ছটফট করে কাটলো চিত্রার।রুবিনা ও নাজমার সঙ্গে টুকিটাকি গল্প আর সংসারের কাজকর্ম করে সে দিনটা কাটানোর চেষ্টা করল। পাড়া-প্রতিবেশী দু একজন এসেছিল তার সঙ্গে দেখা করতে। সবকিছুর ভিড়েও বারবার রূপকের কথা মনে পড়ছিল চিত্রার। দুপুরের খাবার রূপক সঙ্গে করে নিয়ে গেছে। বিয়েতে উপহার পাওয়া নতুন টিফিন ক্যারিয়ারে করে রূপকের জন্য ভাত বেড়ে দিয়েছে চিত্রা। একেবারে রাত্রিবেলা দোকান বন্ধ করে তারপর বাড়িতে আসবে রূপক। সারাদিন তার কথা ভেবে চিত্রা ছটপট করেছে সেটা কি রূপক জানবে?
রাত দশটা। কুন্দনপুর গ্রামে তখন নিশুতি রাত। প্যাঁচার ডাক শোনা যাচ্ছে। ঝিঝি পোকার ডাকে রাত হয়ে উঠেছে অনেক গভীর। সন্ধ্যার পর থেকে পায়ের আওয়াজ শোনার জন্য অপেক্ষা করছে চিত্রা। এখনো সেই পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। তার চোখে ঘুম লেগে এসেছে। না খেয়ে শুয়ে পড়েছিল সে। রূপককে ফেলে খেতে ইচ্ছে করছিল না। জোসনা নিজেও এখনো না খেয়ে আছেন। জেগে আছেন পেটে খিদা নিয়ে। স্বামী-সন্তান ফিরলে তারপর তাদেরকে নিয়ে একসঙ্গে বসে ভাত খাবেন বলে।
গলার আওয়াজ শুনে চিত্রার ঘুম ভেঙে গেল। রূপকের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। বিছানার উপর ধরমর করে উঠে বসল সে। দরজায় শব্দ হওয়ার আগেই সে দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিল।
রূপক দরজা ঠেলে দিয়ে তার বউকে জাপটে ধরলো। বউয়ের নরম শরীরের এখানে সেখানে হাত দিয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিলো। তার অস্থির হয়ে ওঠা বৌ স্বামীর বুকে মাথা রেখে শান্তি খুঁজে বেড়ায়।
রুপক বলল, ঘুমাইয়া পড়ছিলা?
– চোখ লাইগা আইছিল।
– খাওন দাও। খিদা লাগছে।
– আপনি মুখ হাত ধুইয়া আসেন। খাওয়ান দিতাছি।
রুপক দাঁত বের করে হেসে বলল, এই খাওয়ন সেই খাওয়ান না।
– তাইলে ?
রুপকের মুখের হাসি দেখেই চিত্রা বুঝে ফেলল তার স্বামী কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে। স্বামীকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে চিত্রা বলল, অহন সরেন। আগে দুইটা খাইয়া লন।
– খাওয়ন তো অনেক খাইবো। আগে আমার মিষ্টি বউটারে একটু দেহি।
দেখার ছল করে রূপক তার বউকে জাপটে ধরে। বউয়ের গলায় মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নেয়। ক্রমাগত মাথা নাড়িয়ে অস্থির করে তোলে চিত্রাকে। এমন সময় শোনা যায় জোসনার গলা, খাইতে আয় বাবা । তোর বউ ঘুমাইয়া পড়ছে নাকি। ওরেও নিয়া আয়। ভাত না খাইয়া বইসা আছে।
রূপক বলল, চলো খাইয়া আসি। তারপর দেখামু মজা।
চিত্রা মাথায় ঘোমটা টেনে দেয়। ঘোমটার নিচে চুল ঠিক করে। বিয়ের পর থেকেই তার স্বামীর ভালোবাসার অত্যাচার সে পিষ্ট। নতুন নতুন বউ পেলে নাকি ছেলেরা এমন করে। তার ফুফাতো ভাইয়ের বউ বলেছে আর কয়েকদিন পরেই এত সোহাগ থাকবে না। তখন বাসায় ঢুকেই সবার আগে বলবে ভাত দে। সারাদিন তার বউটা কিভাবে অস্থিরতায় ছটফট করেছে সেই কথা মনে থাকবে না। ভাত খেয়ে বিছানায় শুয়েই নাক ডেকে ঘুম দেবে তার স্বামী। কথাগুলো শুনে চিত্রার খুব মন খারাপ হয়েছিল । রূপকের ওরকম হয়ে যাওয়া মোটেও মেনে নিতে পারবে না সে। রূপককে এমনই ভালো লাগে। সে মনে মনে প্রার্থনা করে আজীবন যেন তার স্বামী এ রকমই থাকে।
ভোরের দিকে একবারে চিত্রার ঘুম ভেঙে গেল। ঘর অন্ধকার। রূপকের গলায় হাত বুলিয়ে চিত্রা মনে মনে বলল, তোমারে পাইয়া আমি যে কি পাইছি। এ আমার জীবনের সবচাইতে বড় পাওয়া।
কোন এক অজানা কারণে চিত্রার চোখে পানি আসল। খুব আবেগপ্রবণ হয়ে উঠল সে। তার অতীতের কালো অধ্যায়ের কথা মনে পড়ল। মনে জাগলো অনেক আতঙ্ক। রূপক যেন সারা জীবন তাকে এভাবেই আগলে রাখে সেটাই কামনা করছে চিত্রা। এ ছাড়া তার আর কিছুই চাওয়ার নেই।
সুড়সুড়ি পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল রূপকের। রূপক স্ত্রীর হাতটা ধরে বলল, কি হইছে? ঘুমাও নাই?
– ঘুম ভাইঙ্গা গেছে।
– ঘুমাইয়া পড়ো।
চিত্রার হাত নিজের হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে রেখে রূপক আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করে। চিত্রা হাত সরিয়ে নেয়।
রুপক বলল, কি হইছে বউ? তোমার কি মন খারাপ?
চিত্রা চমকে উঠে বললো, আপনি কেমনে বুঝলেন আমার মন খারাপ?
ঘুম জড়ানো কন্ঠে রূপক উত্তর দিল, তুমি যে আমার কলিজার পাখি। আমি বুঝবো না কে বুঝবো। মন খারাপ লাগতাছে ক্যান? আব্বার কথা মনে পড়ছে?
– আপনের কথা মনে পড়ছে।
– কি কও? আমি তো তোমার লগেই আছি।
– আপনেরে যদি কখনো হারাইয়া ফেলি।
অন্ধকারের মাঝেই রূপক বউয়ের মুখ চেপে ধরল। অভয় দিয়ে বলল, রাত-বিরাতে এসব অলক্ষুণে কথা কইও না তো। তুমি আমার বউ। আমার জনম জনমের সাথী। এইসব খারাপ কথা মনের মধ্যে আনবা না।
– আপনে কালকে সকাল বেলা উইঠাই দোকানে চইলা যাবেন। সারাটা দিন আপনার কথা মনে পড়ে। বাড়িতে আইবেন সেই নিশি রাইতে।
– ওরে আমার আদরের বৌ রে। দোকানের মধ্যে বইয়া আমিও সারাদিন তোমার কথাই ভাবি। তোমারে ঘরে রাইখা বাইরে যাইতে আমার মন টানে না। না যাইলে তো হইবো না। কাম কাজ না করলে খামু কি?
চিত্রা কোন উত্তর দিল না। এইসব ছেলেমানুষি কথাবার্তা বলা ঠিক না। এতে স্বামীর মন হালকা হয়। মন হালকা হইলে তারা ভালোমতো কাজকর্ম করতে পারেনা।
সে বলল, আপনি আমার কথা চিন্তা কইরেন না। ভালো কইরা আপনের কাজটা কইরেন।
– দোকানে বইয়া থাকোন ছাড়া আমার কোন কাম নাই। বইসা বইসা শুধু তোমার কথাই ভাবি।
– এত ভাবতে হইব না।
– ঠিক আছে। অহন ঘুমাইয়া পড়ো।
চিত্রার তবুও মনটা খচখচ করে। মনে হচ্ছে কথা বলে মন ভরেনি তার। আরো কিছুক্ষণ যদি সে কথা বলতে পারতো মন খুলে।
রূপক বলল, তোমারে একটা মোবাইল কিইনা দিবো। তুমি আমার লগে মোবাইলে কথা কইবা।
– কি কন?
চিত্রার যেন বিশ্বাস হতে চায় না তার স্বামীর কথা। একটা মোবাইল ফোনের অনেক দাম। তাছাড়া তার কোনো মোবাইলের প্রয়োজন নেই।
রুপক বলল, সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইলের দাম কম। আমি খোঁজ লাগাইছি। একটা পাইলে তোমারে দিমু। আমার কথা যহনই তোমার মনে হইবো তুমি আমারে শুধু একটা মিস কল দিবা। আমি কল ব্যাক দিয়া তোমার লগে কথা কইব।
– আপনি তো আর বিদেশে থাকেন না। মোবাইলে কল দিলে মানুষে কি কইবো?
– এখনকার দিনে সবাই সবার বউয়ের লগে মোবাইলে কথা কয়। আমার বন্ধু আরমানরে দেখছো? বিয়া খাইতে আইছিল। লম্বা কইরা, হ্যাংলা কইরা। ওরে দেখছি। স্কুলের মাঠে বইসা বউয়ের লগে কথা কয়। আমাগো সামনে কয়না। একটু দুরে গিয়া কয়। আমরা ওরে লইয়া বহুৎ হাসাহাসি করছি। অহন মনে হইতাছে, বউয়ের লগে কথা কইতে পারাটাই শান্তির। এই কথাগুলান মানুষের সামনে কওন যায় না।
চিত্রা শক্ত করে তার স্বামী রূপককে জড়িয়ে ধরল। মানুষটা ভীষণ ভালো। এই মানুষটাকে পেয়েছে সে অনেক সৌভাগ্য করে। মানুষটা যেন আজীবন তার সাথে থাকে।
সবকিছু ভালই চলছিলো। একদিন ঘটলো বিপত্তি।
চলবে..
#দ্বিতীয়_পুরুষ
পর্ব ৬
নীলাভ্র জহির
রূপক বউয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দোকানের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। এমন সময় জোসনা এসে বললেন, খাড়া, কথা আছে। তোর বউরে ডাক।
রূপকের ডাকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো চিত্রা। জোসনা বললেন, তোমার বাপের বাড়িত খবর দেও। মেলাদিন তো হইয়া গেল। আমার পোলাটা ভ্যানে কইরা দোকানে যায়। তাড়াতাড়ি সাইকেলটা দিতে কও । আমরা তো তোমার কাছে বেশি কিছু চাই নাই বাপু। তোমার বাপে যে কিছুই দিতে পারব না সেটা তো আমরা জানি । এইজন্য খালি একজন সাইকেল চাইছি। তাড়াতাড়ি দিতে কইয়ো।
চিত্রা চুপ করে রইলো। সে কার সঙ্গে যোগাযোগ করবে ভেবে পেল না। তার তো বাপের বাড়ি বলে কিছু নেই। সোহরাব উদ্দিন অবুঝ মানুষ। কোন মত খেয়ে পড়ে দিন যায়। উনি মেয়েকে সাইকেল কিনে দিতে পারবেন না। ফুফাতো ভাইদেরও অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। তাদের কাছে কিভাবে কথাটা তুলবে সেটা ভেবে অস্থির হয়ে গেল চিত্রা।
সে মৃদু স্বরে বলল, আচ্ছা, ঠিক আছে।
খুশিমনে দোকানে গেল রূপক কিন্তু আজ চিত্রার মনে কোন খুশি নেই। সারাটা দিন সে অনেক দুশ্চিন্তায় কাটিয়ে দিলো। যতবার জোসনা তাকে ডাকে ততবার তার শুধু ভয় বুকটা কেঁপে ওঠে। এই বুঝি শাশুড়ি তাকে সাইকেলের কথা জিজ্ঞেস করবে। আজকে সাইকেল নিয়ে আর কোন কথা হল না।
রাতের খাবার খেয়ে দেয়ে ঘুমানোর জন্য বিছানায় শুয়েছে তারা দুইজন। রূপক আজ অনেক ক্লান্ত। আজ শহর থেকে মাল এসেছে। সেগুলো দোকানের গোডাউনে ভর্তি করতে হয়েছে। সারাদিন অনেক খাটনির মধ্য দিয়ে গেছে সে। চিত্রা খুব ভয়ে ভয়ে বলল, আপনের কি আইজ শইলটা খারাপ?
রূপক উত্তর দিল, না গো বউ। একটু বেশি পরিশ্রম হইছে।
আপনে অনেক খাটনি করেন সারাদিন। আপনের মাথাটা একটু টিপে দেই।
দেও
চিত্রা রূপকের মাথা টিপে দিতে শুরু করলো। গরমে রূপকের ঘামে ভেজা কপালে টিপতে গিয়ে তার খুব ভালো লাগছে। স্বামীর সেবা করতে পারাটা খুবই সৌভাগ্যের ব্যাপার। এই সৌভাগ্য নিয়ে সবাই জন্মায় না। সে খুব মনোযোগ দিয়ে রূপকের মাথার টিপছিল।
রূপক তার হাত ধরে বাধা দিয়ে বলল, খাড়াও । তোমারে একখান কথা কই?
কন
চিত্রার বুক ধক ধক করতে লাগলো। রূপক হয়তো তাকে সাইকেলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে।
রূপক বলল, তুমি কি কোন ওষুধ দাওয়াই খাইতেছো?
কিসের লাইগা।
পোলাপান না হওয়ার লাইগা?
লজ্জায় রক্তিম হয়ে উঠল চিত্রা। এসব তো লজ্জার কথা। তার স্বামীর সঙ্গে কিভাবে এসব নিয়ে কথা বলবে। গভীর অন্ধকার রাতেও লজ্জায় চিত্রা কোথায় মুখ ঢাকবে ভাবতে লাগলো।
রূপক বলল, তোমারে আজ একখান কথা কই। আমার শখের কথা। আমার পোলাপাইনের অনেক শখ। ছোট ছোট পোলাপাইন দেখলে আমার খুব কোলে নিয়া আদর করতে মন চায়। তুমি আমার পোলার মা হইবা। কোন ওষুধ দাওয়াই খাইবানা। কারো বুদ্ধি হুনবা না। আমারে তুমি পোলার ডাক শোনাইবা ।
তীব্র অন্ধকারের মাঝেও চিত্রার লাল টকটকে মুখখানা অনুভব করতে রূপকের কোন সমস্যা হল না। লজ্জায় একদম লাল হয়ে গেছে চিত্রা। সে রূপকের সন্তানের মা হবে। অবশ্যই তাকে হতে হবে। সৃষ্টিকর্তার কাছে আজ থেকে মনেপ্রাণে একটা জিনিসই চাইবে সে। রূপকের স্বপ্ন পূরণ করতে তার কোল জুড়ে যেন একটা সন্তান আসে।
রূপক চিত্রাকে জড়িয়ে ধরল । ওর গরম নিশ্বাস পড়তে লাগল চিত্রার কানের উপর। উত্তেজিত হয়ে উঠলো চিত্রা।
রূপক বলল, কথা কওনা কেন? ও বউ।
চিত্রা লাজুক গলায় উত্তর দিল, আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন আমারে আপনার সন্তানের মা হওয়ার তৌফিক দেন।
চিত্রার কেমন যেন কান্না পেয়ে যাচ্ছে?।
রূপক বলল, তুমি কোন ওষুধ দাওয়াই খাওনা ত?
– না,
– ভালো করছ। কেউ তোমারে বুদ্ধি দিলেও খাইবানা।
– জি আচ্ছা।
চিত্রাকে কেউ ঔষধ খাওয়ার বুদ্ধি দেয়নি। বরং গুরুজনরা অনেকেই তাকে বলেছে কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না। তাড়াতাড়ি একটা বাচ্চা নিতে হবে। বাচ্চা হইল গিয়া পুরুষ মানুষের পায়ের বান্ধন। গলার রশি। পুরুষ মানুষরে সংসারে বাইন্ধা রাখনের একমাত্র উপায় হইতেছে পোলাপাইন। পোলাপাইন হইয়া গেলে এরা সংসারী হয়। ঘরে যতই সুন্দরী বউ হোক না কেন মানুষের বউরে তাদের বেশি ভালো লাগে। বাচ্চার বাপ হয়ে গেলে এই স্বভাব আর থাকেনা। তখন বাচ্চার দিকেই সব ভালোবাসা মায়া-মহব্বত থাকে। বাচ্চার কথা চিন্তা কইরা কেউ বউরে তালাক দিতে চায় না। তালাক নিতে না চাইলে তাড়াতাড়ি একটা বাচ্চা নিয়ে নেয়া ভালো। তার ফুফাতো ভাইয়ের বউ, চাচি শাশুড়ি সবাই তাকে এই বুদ্ধি দিয়েছে।
রুপক চিত্রাকে বুকের মধ্যে টেনে নিল। সারাদিনের ক্লান্তি যেন মুহূর্তেই বিদায় হয়ে গেল তার এই মিষ্টি বউটকে বুকে জড়িয়ে ধরে। স্ত্রীর প্রতি মহব্বত একটা অন্য রকম জিনিস। ভালবাসলে সবকিছুই ভালো লাগে। বিয়ের পর এই কয়েকদিনে সেটা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছে রূপক। তার শুধু সারাক্ষণ এই মেয়েটার সঙ্গে থাকতে মন চায়। মেয়েটাকে দেখতে মন চায়। মনটা ঠিক সারাক্ষণ কেমন অস্থির হয়ে থাকে রূপক সেটা বুঝতে পারে না।
পরেরদিন চিত্রা একজন লোকের মাধ্যমে তার ফুফুর কাছে সংবাদ পাঠিয়ে দিলো। সে জানালো এখানে সে খুব ভালো আছে। শ্বশুরবাড়ির সবাই তাকে অনেক আদর যত্ন করে। ফুপু যেন সোহরাব উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে একটা সাইকেলের ব্যবস্থা করে দেয়। তার জামাইয়ের প্রতিদিন কাজে যেতে দেরি হয়। একটা সাইকেল হলে নিজের মত আরামে যেতে পারত সে। সোহরাব উদ্দিন যেন মেয়ের দিকটা চিন্তা করে দ্রুত একটা সাইকেলের ব্যবস্থা করেন। ফুফুকে এই সংবাদ পাঠিয়ে দিয়ে দুশ্চিন্তায় ডুবে রইল। ফিরতি কোন সংবাদ না আসা পর্যন্ত যেন তার কোনো স্বস্তি নেই।
দুপুরে দুইজন মেয়ে আসলো চিত্রার সঙ্গে দেখা করতে। ওরা চিন্তার প্রতিবেশী। এসেই হাসতে হাসতে বলল ভাবি আপনার লগে দেখা করতে আইলাম।
চিত্রার মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগে। সম্ভবত বিয়েতে দেখা হয়েছিল। কিন্তু কারো নাম মনে করতে পারলো না চিত্রা।
চিত্রা বলল, বসেন ।
বসতে তো আইছি। আপনার লগে গল্প করতেও আইছি। কেমন আছেন ভাবী?
চিত্রা হাসিমুখে উত্তর দিলো, খুব ভালো আছি। আপনারা ভালো আছেন?
মেয়ে দুইটা একই সঙ্গে হেসে উত্তর দিলো, হ। আপনি যে খুব ভালো আছেন সেটা আপনারে দেখলেই বুঝা যায়। অনেক হাসিখুশি একটা মানুষ আপনে। তা ভাবি, নার্গিসের লগে আপনার দেখা হইছে?
চিত্রা মনে করতে চেষ্টা করলো নার্গিস নামের কারো সঙ্গে তার দেখা হয়েছে কিনা। দুজনের মধ্যে থেকে একটা মেয়ে বলল, নার্গিস রে চিনেন আপনি?
না,
– আমাগো এই এলাকাতেই বাড়ি। এই ধরেন যাইতে দশ মিনিট লাগবো। নার্গিস যদি বাড়িতে আসে আপনি ওর সঙ্গে ভালো কইরা কথা কইবেন না । বাড়িতে আসতে নিষেধ কইরা দিতে তো আর পারবেন না। ভালো কইরা কথা না কইলে সে নিজেই লজ্জায় আর আসব না।
চিত্রা কিছুই বুঝতে পারলো না। হতভম্ব হয়ে এসে মেয়ে দুটোর দিকে তাকিয়ে রইল।
একজন মেয়ে বলল, আমার নাম সীমা। বিয়ের দিন সাজাই ছিলাম মনে নাই?
না,
– কি কন? এত তাড়াতাড়ি ভুইলা গেলেন। তাইলে তো নারগিসরে দেখছেন কিন্তু মনে করবার পারতাছেন না। শুনেন ভাবি, নার্গিসের লগের রূপক ভাইয়ের একটু কানেকশন আছিল। এই কথা আপনেরে কেউ বলবেনা। আপনেরে দেইখা আমার খুব ভালো মানুষ মনে হইছে। সাদাসিধা মানুষ আপনে। সাদাসিধা পাইয়া যদি আবার কেউ আপনার ঘারের উপরে চাইপা বসে। তাই একটু সচেতন করতে আইলাম। রূপক ভাইরে একটু চোখে চোখে রাখবেন। সে এমনে মানুষ ভালা। তয় পুরুষ মানুষের কথা কওন যায় না। ঘরে যতই সুন্দরী বউ হোক, কেউ একটু গুতা মারলে সে ঠিকই গুতায় নইড়া উঠবো। আপনি তারে চোখে রাখবেন।
চিত্রার বুকের ভিতর দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো। অপরিচিত দুটো মেয়ের কথাতেও কেমন হিংসায় মরে যাচ্ছে সে। কে হতে পারে এই নার্গিস? যার ব্যাপারে ওরা তাকে সতর্ক করতে এসেছে। মন খারাপ হয়ে গেল চিত্রার।
মেয়ে দুইটা বলল, আপনে চিন্তা কইরেন না। শুধু রূপক ভাইরে একটু টাইট দিয়া রাইখেন।
ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে। তাও কি নার্গিস আসবে বাড়িতে?
– কি যে কন ভাবি। পিরিত কি আর ভোলা যায়? নার্গিস তো জীবনেও রূপক ভাইরে ভুলতে পারব না। নার্গিসের বাপে দুই বিয়া করছে। তার বাপের চরিত্র ভালনা। এইজন্য চাচী আম্মা রূপকের সঙ্গে নার্গিসের বিয়া দিতে রাজি হয় নাই। তাই সে কিন্তু মনে অনেক কষ্ট পাইছে। কষ্ট পাইলে রূপক ভাইয়ের পিছু ছাইড়া দিব এমন মনে কইরেন না। পিরিতের দাগ সাত সমুদ্দুর ধুইলেও যায়না।
কথাগুলো বলে মেয়ে দুটো চলে যায়। কিন্তু চিত্রার মনে দিয়ে যায় অগ্নিদগ্ধ। তার আর কোন কিছুই ভালো লাগেনা। সে ভেবেছিল রুপক তাকে একান্তই আপন করে নিয়েছে। স্বামীর ভালোবাসার ভাগ অন্য কাউকে দিতে পারবে না। এখনো রূপকের মনে সেই মেয়ের জন্য কোন মায়া আছে কিনা সেটা জানতে হবে চিত্রাকে। রূপক শুধুই তার।
আজ রাতে বাড়ি ফিরতে দেরি হলে রূপকের। দোকানে নতুন আসা মালগুলো সুন্দর করে গোছাতে লেট হয়ে গেছে। চিত্রার দুশ্চিন্তা বাড়ছিল। মনে মনে ভাবছিল আসার পথে আবার মেয়েটির সঙ্গে দেখা করে আসে কিনা। নার্গিসের কথা সরাসরি রূপককে জিজ্ঞেস করবে কিনা সেটাও বুঝতে পারছেনা চিত্রা। অবশ্য অপরিচিত দুটো মেয়ের কথাকে এত গুরুত্ব দেওয়ার কোন দরকার নেই। তারা হয়তো সংসারে অশান্তি বাড়ানোর জন্য এসেছিল। কিন্তু তা ভাবলেই চিত্রার মনে স্বস্তি হয়না। নার্গিসের সাথে একটা সম্পর্ক নিশ্চয়ই ছিল। নয়তো মিথ্যা কথা কেন বলতে আসবে ওরা। তাকে অনেক খোঁজখবর নিতে হবে নার্গিসের সম্পর্কে।
রাত্রিবেলা রূপক বলল, তোমার ভাই কল করছিল। কইলাম আমি তো দোকানে আছি। বাড়ি গিয়ে কল ব্যাক দিমু। তুমিও ওর লগে কথা কও।
চিত্রার চোখদুটো আনন্দের চকচক করে উঠলো। নিশ্চয়ই তার ভাইয়েরা তার খোঁজ নেবে, তাকে সাইকেল এর ব্যাপারে কিছু জানাবে। মনে অনেকটা শঙ্কা আবার একই সাথে আনন্দ নিয়ে চিত্রা তার ভাইয়ের ফোনে কল দিতে বলল।
রূপক কল দিলো তার ভাইকে। ফোন হাতে নিয়ে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো চিত্রা।
– হ্যালো ভাই
হ চিত্রা কেমন আছো?
ভালো আছি। আপনেরা কেমন আছেন?
ভালা । তোর বাড়ির লোকজন সবাই ভাল আছেন?
হ, ভালো আছে। ফুফুজির শরীর কেমন?
হ ভালা । খাওয়া-দাওয়া হইছে?
হ ভাইয়া। আপনাদের খাওয়া দাওয়া হইছে?
হ হইছে। এখন বইন কথা হইতেছে গিয়া, রূপক রে তো একটা সাইকেল দেওয়ার কথা ছিল। তালই সাহেবরে কইছিলাম একটু সময় বাড়াইতে। সবই তো জানিস। নিজেদের অনেক টানাটানির মধ্যে এই বিয়েতে খরচাপাতি হইছে। সাইকেল একটা কিনে দিতে গেলে তো টাকা পয়সা লাগবো। তুই আমারে কইছস তোর বাপের লগে যোগাযোগ করতে। তোর বাপের স্বভাব-চরিত্র তো জানোস। তার লগে যোগাযোগ কইরা কোন লাভ নাই। এক টাকাও দিব না। সব দিতে হইব আমারেই। আম্মার কাছে তো কোন টাকা পয়সা নাই। সেও দুই চারশো টাকা দিয়া কোন সহযোগিতা করতে পারবোনা।
চিত্রা চুপচাপ কথাগুলো শুনছিল। ভাই এখন কি বলবে সেটা ভেবে শঙ্কায় বুক কাঁপছে। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে এখন পর্যন্ত মাথা উঁচু করে চলাফেরা করতে পারছে সে। এবার কি তার মাথাটা নিচু হয়ে যাবে? শাশুড়ির সামনে অসম্মানিত হতে হবে। কিন্তু এতকিছুর পরও ভাইদের কাছ থেকে সে কিছুই চাইতে পারবে না। তার একটা বিবেক আছে।
চিত্রার ভাই বলল, বোন সাইকেল দিতে তো একটু টাইম লাগব। আমরা দিবোনা, দিতে পারব না এগুলো তো কই নাই। একটু টাইম দিতে হইব আরকি? তুই একটু তোর স্বামীরে ভালো কইরা বুঝাইয়া ক। তোর ভাবী কইলো সে নাকি তোরে খুব ভালো জানে। তুই তারে বুঝাইয়া কইলে সে হয়তো বুঝবে। আর কয়েকটা দিন একটু ধৈর্য ধরতে ক। বুঝছিস বোন।
এর উপরে আর কিছুই বলা যায় না। চিত্রার বুক কাঁপছে। চোখ ছলছল করছে। তার স্বামী তাকে খুব ভালোবাসে এটা সত্যি কিন্তু এটাও সত্যি যে সে তার স্বামীকে অনুরোধ করে কিছু বলতে পারবে না। এখনো তার স্বামীর সঙ্গে এতটা ফ্রি সম্পর্ক তার হয়নি। রূপকের সঙ্গে খোলামেলা এটা নিয়ে কথা বলতেও তার লজ্জা করবে। তবুও চিত্রা ভাইকে আশ্বাস দিয়ে বলল, আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি কথা বলতেছি। তাও আপনারা একটু দেইখেন।
হ বইন । আমরা তো দেখতাছি। তুমি সুখে শান্তিতে থাকো আমরা তো সেইটাই চাই।
চিত্রের চোখ দিয়ে টপটপ করে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। সে আর কিছুই বলতে পারলোনা। নিঃশব্দে ফোনটা রেখে দিল। রূপক তার শালা বাবুর সঙ্গে দু’চারটা কথা বলে ফোন কেটে দিল। তারপর বুকে টেনে নিল চিত্রাকে। চিত্রার নরম কোমরে, বুকে হাত ছুঁইয়ে রূপক বলল , সারাদিন তোমার কথা অনেক মনে পড়ছে।
স্পর্শটুকু আজ কেন যেন চিত্রার পুরোপুরি ভালো লাগলো না। বরং তার মনে জেগে উঠলো একটা আশংকা। রূপকের সঙ্গে নার্গিসের সম্পর্ক কি রকম অন্তরঙ্গ হয়েছিল? নার্গিসকেও এভাবে স্পর্শ করেছিল তার স্বামী? এসব ভেবে চিত্রার আরো বেশি কান্না আসলো। সে আজ স্বামীর সঙ্গে মেতে উঠতে পারল না। তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল কয়েক ফোটা জল।
চলবে..