দ্বিতীয় স্ত্রী,৩য় পর্ব

0
4104

দ্বিতীয় স্ত্রী,৩য় পর্ব
লেখাঃ সাদিয়া

নুপুর বাজারের ব্যাগ এনে হিমেলের হাতে ধরিয়ে দিতেই গর্জে উঠলো হিমেল, ‘ তোমাকে স্পষ্ট বলে দিয়েছি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে আমি মেনে নেইনি, তারপরও লজ্জা হয়না, বেহায়ার মতো পেছনে লেগে আছো।’

নুপুর তেমন একটা রিএক্ট না করে শান্ত মেজাজে বললো, ‘ আচ্ছা স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না বুঝলাম, বন্ধু হিসেবে মেনে নিন। আপনি স্ত্রী হিসেবে মানতে পারছেন না বলে বাজার না করে না খাইয়ে মারবেন?’

: কেন বাড়িতে বাজার করার আর কেউ নেই?

: থাকলেও তাদের বলি কিকরে, আপনি আমার স্বামী তাই আপনাকেই বললাম।

: এহ ওনার স্বামী!

: তো কী, আপনি আমার ভাসুর নাকি দেবর?

: নীলা আমার স্ত্রী, ওর স্থান কেউ নিতে পারবে না, আর দ্বিতীয় বার কাউকে স্ত্রী হিসেবে মানতেও পারবো না।

: তাহলে আমাকে বিদায় দিয়ে দিন।

: তোমাকে ধরেই বা কে রেখেছে শুনি, একটা আগাছা হয়ে অস্বস্তিকর ভাবে জড়িয়ে রেখেছো, যত্তসব!

আগাছা কথাটা নুপুরের অন্তরে বিষাক্ত তীর হয়ে বিঁধল। চোখের কোণে জল টলমল করে উঠলো। ব্যাগটা ফেলে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো নুপুর।

রায়হান এসে হিমেলকে টিটকারি করে বললো, ‘ ইস ভাবীর মতো একটি লক্ষী মেয়ে যদি আমার বউ হতো!’

হিমেল চোখ গরম দিতেই রায়হান কেটে পড়লো।

দাদী রুমের বাইরে এসে হিমেলকে বললো, ‘ দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দিতে না জানলে পরে পস্তাতে হয়।’

হিমেল ভ্রু কুঁচকে বললো, ‘ তুমি এত মর্যাদা দিয়েও তো বত্রিশটা দাঁতের ষোলোটাও রাখতে পারলা না বুড়ি।’

দাদী বললো, ‘ ফাউল টক করবি না ননসেন্স নন্দলাল কোথাকার।’

হিমেল হেসে ফেলে বললো, ‘ ইংলিশ বলতে গিয়ে যেকয়টি দাঁত আছে তাও যেন পড়ে না যায় সুইট বুড়ি।’

দাদী রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। সকাল গড়িয়ে বিকেল, নুপুরের আর খবর নেই। সেই যে সকালে রুমে ঢুকেছে তারপর আর রুম থেকে বের হয়নি।

হিমেল রুমে ঢুকে নুপুরকে না দেখে ভীষণ অবাক হলো, নুপুর রুমে নেই, তাহলে কি রুম থেকে গায়েব হয়ে গেল!
হঠাৎ শুনতে পেলো নুপুরের কণ্ঠস্বর, বিড়বিড় করে কিছু বলছে। কিন্তু নুপুর কোথায়?

একটু এগিয়ে হিমেল বুঝতে পারলো নুপুর আলমারির অপর পাশে দাড়িয়ে আছে। এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে নুপুরকে ডাকলো। নুপুর ঘুরে তাকাতেই হিমেলের প্রাণ পারমানেন্টলি দেহ ছেড়ে পরপারে যাই-যাই করতে শুরু করলো। ‘ মা-গো ’ বলে হিমেল ফ্লোরে চিৎ হয়ে পড়লো।

নুপুরের চোখের মনি সাদা হয়ে আছে, মুখে রক্ত মাখা, চোখের নিচের কালো আরও গভীর স্পষ্ট, তার ওপর বিড়বিড় করে কিসব বকছে। তাহলে কি নুপুরের কাঁধে ভূত ভর করেছে?

‘ মা-গো ’ বলে চিৎকার শুনে সবাই হিমেলের রুমে এসে নুপুরের অবস্থা দেখে অবাক! এখন খাটের ওপর বসে চুল খোলা রেখে নুয়ে পড়ে চুল ঝাঁকাচ্ছে আর বিড়বিড় করে কিসব বকছে।

রায়হান বললো, ‘ অবস্থা ভালো না, নিশ্চিত ভূত ভর করেছে ভাবীর কাঁধে, ওঝা ডাকতে হবে এক্ষুনি।’

ওঝা ডাকার কথা শুনে নুপুর এমন ভাবে তাকালো যে ভয়ে সবার নাড়িভুড়ি হজম হবার উপক্রম।

হিমেল উঠে দৌড়ে গিয়ে সবার পাশে দাড়ালো। বাবা রায়হানকে বললো, ‘ ওঝা কোথায় পাবি এত আর্জেন্ট?’

: অনলাইনে আব্বু।

: অনলাইনে ওঝা!

: তো কি, বদনা থেকে বাদাম, চড়া দাম থেকে আদাম; আলু, পটল, ঝিঙে সবই যদি পাওয়া যায়, ওঝা কেন পাবোনা।

: কি অদ্ভুত রে বাবা!

রায়হান মোবাইল বের করে কি যেন টেপাটেপি করলো।

নুপুর একলা রুমে, তাছাড়া সবাই এসে ড্রইং রুমে বসে আছে ওঝার অপেক্ষায়।

কলিং বেল বেজে উঠলো, রায়হান গিয়ে দরজা খুলতেই হ্যাংলা-পাতলা কাঁধে ঝোলা ঝোলানো একটা লোক গড়গড় করে ভেতরে এসে বললো, ‘ এই যে এসে গেছি আমি O-O-O, ভয় নেই, বিলকুল ভয় নেই গোওওও।’

বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘ তা এই ও-ও-ও এর মানেটা কী এ্যা?’

: আজ্ঞে স্যার এটা আমার নামের সংক্ষিপ্ত রুপ, হাতে সময় কম কাজ বেশি, তাই সংক্ষেপে পরিচয় দিতে ভালোবাসি।

: ও আচ্ছা, তো O-O-O এর পরিপূর্ণ কি?

: স্যার, এই O-O-O মানে “ওঝা-অদ্ভুত কুমার-অধিকারী।”

: আসলেই অদ্ভুত!

হিমেল বললো, ‘ অদ্ভুত অদ্ভুত করলে চলবে? আগে নুপুরের কাঁধের ভূত ছাড়াতে হবে।’

সবাই ওঝাকে নিয়ে নুপুরের রুমে এসে হাজির, নুপুর মাথা নুইয়ে চুপচাপ বসে আছে খাটে।

ওঝা কাঁধের ঝোলা নামিয়ে নুপুরের উদ্দেশ্যে বললো, ‘ কিরে বটগাছ ছেড়ে এসি রুমে এসে এসির হাওয়া খাবার সখ হয়েছে বুঝি, ঝাঁটা চালান দিয়ে তোর প্যারেন্টস মানে পিতামাতার নাম ভুলিয়ে দেবো কিন্তু খবিশ।’

নুপুর অদ্ভুত ভারী কণ্ঠে বললো, ‘ ও।’

: শুধু ‘ও’ না, ও-ও-ও, ওঝা অদ্ভুত কুমার অধিকারী, সময় থাকতে পালা।’

: তাহলে তুই এসেছিস আমাকে তাড়াতে, মারবো কানে তিনদিনেও পারবিনা উঠে দাড়াতে।

: ঝাঁটার বারি খাবি নাকি পালাবি।

: ঝাঁটার বারি, হাহাহা, তুই যে তোর বাড়ির পাশের কিসলুর বউয়ের পেছনে লাইন মারিস, সেটা কি তোর বউ জানে? নাকি আমি গিয়ে জানিয়ে দেবো। তারপর দেখবি ঝাঁটার বারি কাকে বলে, উহা কত প্রকার, এবং কি কি।

নুপুরের মুখের কথা শুনে ওঝা আঁতকে উঠে হিমেলকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘ ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, সর্বনাশ হয়ে যাবে।’

হিমেল অবাক হয়ে বললো, ‘ ও মানে কে? আপনার ঘাড়েও কি ভূত চেপেছে?’

: আরে ও মানে আমার বউ, নুপুরের ঘাড়ে চাপা ভূতটা আমার গোপন কথা সব জানে, যদি গিয়ে আমার বউকে এসব বলেই দেয়, তাহলে বউ তো চলে যাবেই, যাবার আগে আমাকে পিটিয়ে পাটিসাপটা করে যাবে।

: তাহলে নুপুরের ঘাড়ের ভূতের কী হবে?

: নুপুরের ঘাড়ের ভূত ঘাড়ে থাক, আমার ঘরের বউ ঘরে থাক। কথায় আছে– যার নাই বউ, তার নাই কেউ। এই বয়সে বউ হারিয়ে এতিম হতে চাইনা।

ওঝার কথা শুনে দাদী রাগে গজগজ করে বললো, ‘ আমার তো ইচ্ছা করছে ঝেটিয়ে ওঝাটাকে এক্ষুনি বিদায় করতে, নিজের চরিত্রের ঠিক নাই, আমার তো মনে হয় ওঝার ঘাড়েই চার পাঁচটা শয়তান বসবাস করে আনলিমিটেড।’

ওঝা বললো, ‘ তবে যাবার আগে একটা কথা বলে যাই, নুপুরের ঘাড়ে যে ভূত চেপেছে ওটা SS ভূত।’

রায়হান অবাক হয়ে বললো, ‘ SS ভূত মানে কি! স্ক্রিনশট ভূত?’

ওঝা ধমক দিয়ে বললো, ‘ আরে ধুর, এ যুগের পোলাপান স্ক্রিনশট ছাড়া কিচ্ছু বোঝেনা। আরে এই SS ভূত মানে সেলফ সুইসাইট ভূত।’

হিমেল বললো, ‘ এখন তবে আমরা কি করবো?’

ওঝা গম্ভীর গলায় বললো, ‘ এই সেলফ সুইসাইট ভূত যার ঘাড়ে চেপে বসে, তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে। কেউ তো বুঝবেনা এটা ভূতে করিয়েছে, সবাই ভাববে নিজেনিজে আত্মহত্যা করেছে।’

রায়হান বললো, ‘ ভাবীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হলে কী করতে হবে বলুন।’

ওঝা বললো, ‘ বেশি বেশি টক জাতীয় খাদ্য খাওয়াতে হবে।’

ওঝার কথায় সবাই অবাক হয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে দাদী ওঝাকে বললো, ‘ বজ্জাত, ও কি অন্তঃসত্ত্বা যে ওকে টক খাওয়াতে হবে, কিসব আবোলতাবোল বলছিস।’

ওঝা ধমক দিয়ে বললো, ‘ আরে ধুর! এই ভূত যার ঘাড়ে চাপে তার প্রেশার সবসময় হাই থাকে, তাই বেশি করে টক খাওয়াতে বলেছি। খালি বেশি বোঝে।’

হঠাৎ নুপুর বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে এসে ওঝার গলা চেপে ধরে সেই মোটা ভয়ংকর গলায় বললো, ‘ অনেকক্ষণ তোর বকবকানি সহ্য করেছি, এবার তোকে উচিৎ শিক্ষা না দিলে আর হচ্ছে না।’

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here