দ্বিতীয়_জন
পর্ব_৫
#Meherika_Ayat_(আরাধ্যা)
অনু রুমে ঢুকে দেখলো, এতো আদির কার্বন
কপি। দেওয়ালে বড় করে আদিত্যের ছবি লাগানো। ঠিক আদির রুমে যেমন ছবি লাগানো।
অনু দেখলো সব আদির রুমের মতো করে সাজানো এই রুম টাতেও।
এই রুমের বারান্দাতেও একটা শিমুল গাছ আছে। পুরো বারান্দায় শিমুল ফুল ছিটিয়ে আছে, শিমুল ফুলের ঘ্রানে সব সুভাষিত হয়ে আছে।
কি সুন্দর করে গোছানো সব কিছু মনে হচ্ছে এই রুমে কেউ থাকে।
অনু আলমারি খুলে দেখলো, সব আদির জামা-জুতোর মতো জামা-জুতো সাজানো।
কিন্তু কার এসব? মনে মনে ভাবছে অনু।
.
অনু আজ লাল মসলিনের শাড়ি পরেছে।
সাথে লাল পিট কাটা ব্লাউজ, গলায় লাভ লোকেট, কানে দুল, হাতে একটা ব্রেসলেট।
অসাধারণ লাগছে অনুকে।
অনু রিডিং টেবিলে বসে আছে। হঠাৎ ওর চুল গুলো আপনা-আপনি উড়তে শুরু করেছে,
আবার সরেও যাচ্ছে।
অনু মনে হচ্ছে বারান্দার চেয়ারে বসে তাকে কেউ দেখছে।
ভয় পেলে চলবে না, আমাকে আসোল রহস্য খুঁজে বের করতেই হবে। মনে মনে কথা টা বলে,
আয়াতুল কুরসি পড়ে নেয় অনু।
.
কারণ আয়াতুল কুরসি কুরআন শরীফের সর্ববৃহৎ আয়াত। এই আয়াতের ফজিলতের কথা অনেক হাদীসে পড়েছে অনু।
প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়লে কেউ তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
.
অনু এবার ফিল করছে ওর পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে, শুধু চোখের আড়াল করে আছে।
সে রিডিং টেবিলের কেবিনেট খুলে একটা ডায়েরি দেখতে পেল, সাথে একটা ছবির এলবাম।
অনু ডায়েরি টা খুলতেই চমকে উঠে।
তারপর এক এক করে সব গুলো পাতা উল্টে উল্টে পড়তে থাকে আর অবাক হয়ে যায়।
ডায়েরির শেষ পাতা উল্টাতেই অনু একটা মেয়ের ছবি দেখে। ছবিটাতে লাল কালি দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেওয়া।
ডায়েরি পড়া শেষ করেই এলবাম টা খুলে অনু,
এলবামের সব ছবি দেখে অনুর আর বুঝতে বাকি থাকে না আসোল রহস্য টা কি।
তবে এখনও অনেক কিছু জানার আছে অনুর,
আর এই সব কিছু বলতে পাবরে একমাত্র টুনি। মনে মনে ভাবছে অনু।
অনু সব কিছু খুব সুন্দর করে গুছিয়ে
খাট টা ঝেড়ে, এসি অফ করে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অনু দেখে ওর পায়ের আছে আচমকা কতো গুলো তাজা শিউলি ফুল এসে পড়ে আছে। অনু তো অবাক,
এগুলো এখানে এলো কি ভাবে? জোরেই কথা টা বলে অনু।
ফুল গুলো উঠানোর জন্য নিচে ঝু্ঁকে বসে অনু।
ওর ছোট ছোট চুল গুলো বার বার সামনে এসে পড়ছে দেখে, চুল সব এক সাথে করে খোপা করতে ওর খোপা খুলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করেই ওর খোপা খুলে দিচ্ছে।
অনু বিরক্ত হয়ে ফুল গুলো না তুলেই বেরিয়ে যায়।
.
অনু নিচে নেমে আসে।
পাখিঃ আরে বউমণি আপনে কই আছিলেন?
অনুঃ টুনিকে ডাকে আন তো।
পাখিঃ আইচ্চা।
টুনি দাঁড়িয়ে আছে অনুর সামনে, আমারে কেন ডাকছে বউমণি? বলল টুনি।
অনুঃ অভিক ভাইয়ার কি হয়েছিল টুনি?
উনি এখন কোথায়?
টুন অবাক ও ভয়ের চোখে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে।
কে কইছে এসব আপনেরে বউমণি? বলল
টুনি (তুতলিয়ে)
অনুঃ আমি জানি,
আমি ওই রুম থেকেই এসেছি মাত্র। আমার থেকে তোমরা কেন লুকাচ্ছো এসব আমি বুঝতে পারছি না।
টুনিঃ কারণ আগের বউমণি সব জানতো,
আর হেতেনও হেই ঘরে যাইতো। আর একদিন হেই ঘরেই মরি গেছিল।
অনুঃ মানেহহহহ?
টুনিঃ অভিক ভাইজান মরি গেছে ছ মাস আগে।
অনু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
টুনিঃ অভিক ভাইজান মারার পর থেইকাই আদিত্য ভাইজান পাগলের মতো ওই গেছিল,
কারণ অভিক ভাইজান ও আদিত্য ভাইজান ছিল জমজ ভাই। ছোড থেইক্কাই দুজন এক সাথে থাইকতো, একই রকমের জিনিস ব্যবহার করতো হেরা। আদিত্য ভাইজান ও আগে মেল্লা হাঁসি খুশি ছিল, চঞ্চল মনের মানুষ ছিল দুই ভাই ই। এই বাগানের শিমুল গাছের নিচে সব সময় দুই জনে খেলতো, কথা কইতো, বইয়া থাকতো।
হেগো বাইরের কোনো বন্ধু ছিল না,
হেরা দুজনই দুজনের বন্ধু ছিল।
অভিক ভাইজান মরি যাইবার পর, খালাম্মা খালু দেখলো আদি ভাইজানের অবস্থা ভালো না। এক মাস পার হই গেছিল তাও ঠিক হয় নাই আদি ভাইজান।
সারাদিন অভিক ভাইজানের ঘরে যাই বইয়া থাকতো আর কানতো।
হেরলাই খালাম্মা খালু রিহা বউমণি আদি ভাইজানের বউ কইরা আনে।
মুটামুটি ঠিক হইছিল আদি ভাইজান বিয়ার পর,
কিন্তু তখন অভিক ভাইজানের ঘর খোলা থাকতো,
আর রিহা বউমণি নাকি অভিক ভাইজান রে দেখছিল অনেক বার। একদিন আদি ভাইজান রে খুঁজতো গেছিল ওই ঘরে, আর হেই দিনই দূরর্ঘটনা খান ঘটে। বিয়ার ২ মাসের মাথায় রিহা বউমণি মারা যায়।
হেই দিন থেইক্কা অভিক ভাইজানের ঘরে তালা লাগই রাখে।
আর আইজ আপনে দরজা খুইলছেন হেই ঘরের। বউমণি আবার কোন বিপদ আইতে চইলছে, আমার মেল্লা ভয় করের।
অনুঃ অভিক ভাইয়া কি ভাবে মারা গেছিল?
টুনিঃ রোড একসিডেন্টে, হেতেন লাশ ও আমারা পাই নাই। আর হেরলাই সবাই কয় হেতেন ভুত হই গেছে।
.
অনু উঠে চলে গেল নিজের রুমে।
কি চায় অভিক ভাইয়া? মারা যাএয়ার পরও আবার কেন ফিরে এসেছে? ওই রুম টাতে নিশ্চয়ই কোনো ক্লু পাওয়া যাবে।
মনে মনে কথা টা বলে অনু ওই রুমের দিকে গেল।
অনু দরজা খুলে দেখলো, রুমটা অন্ধকার হয়ে আছে। কিন্তু আমি তো লাইট জ্বালিয়ে গেছিলাম,
অফ করলো কে? মনে মনে বলল অনু।
রুমে ডুকে অনু লাইট দিবে মাত্র।
অনুর চিৎকার শুনে পাখি ও টুনি দৌড়ে উপরে গিয়ে দেখলো…….
চলবে…….