দ্বিতীয়_জন পর্ব_৬

0
1849

দ্বিতীয়_জন
পর্ব_৬
#Meherika_Ayat_(আরাধ্যা)
অনু চিৎকার শুনে টুনি ও পাখি এসে দেখলো,
পুরো রুম অন্ধকার হয়ে আছে।
টুনিঃ বউমণি আপনার কি হইছে?
অনু লাইট অন করে বলল,
উফফফ আর বলো না। একটা তেলাপোকা আমার পায়ের উপর দিয়ে চলে গেছে।
টুনিঃ আপনে কি জোরে চিল্লাইছেন, আমি তো খুব ডোরাই গেছি।
অনুঃ ভয়ের কি আছে? আমার কি হবে বলো?
এতো ভয় পেও না। যাও আমি ঠিক আছি।
.
টুনি ও পাখি নিচে চলে গেল, অনু আলমারি খুলে খুঁজতে থাকলো কোনো ক্লু পাওয়া যায় কি না।
অনেক খুঁজাখুঁজির পরও অনু কিছুই পেল না।
মন খারাপ করে বসে আছে অনু।
কি করবে বুঝতে পারছে না সে।
খাটের পাশের ড্রায়ার খুলে অনু দেখলো,
একটা সিগারেটের প্যাকেট।
ও তার মানে অভিক ভাইয়া স্মোকিং করতো?
কাল রাতে তাহলে ওনি অভিক ভাইয়াই ছিল?
মনে মনে ভাবছে অনু।
.
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, এখনও আদি আসেনি। অনু নামাজ পড়ে জায়নামাযে বসে বসে ভাবছে, কি ভাবে অভিককে সরানো যায়। এভাবে তো অভিক সবাইকে শেষ করে দিবে। আর কি চায় অভিক?
আগে সেটাই জানতে হবে। তাহলেই ওকে থামানো যাবে।
কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দিল টুনি।
আদিত্য অফিস থেকে এসেছে।
সোফায় বসে আছে আদি।
হঠাৎ আদির চোখ গেল উপরে, সে দেখলো
অভিকের রুমের দরজা টা খোলা।
আদি কাউকে কিছু না বলে অভিকের রুমে চলে গেল।
অনেক দিন পর এই রুমে আসা, কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই রুমে। ভাবতেই আদির চোখে পানি চলে এলো।
আদি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো, হঠাৎ করে আদি কেমন জানি অসস্থি ফিল করতে থাকলো।
.
অনু নিচে এসে বলল, বেলের শব্দ শুনতে পেয়েছি। কে এসেছে টুনি?
টুনি কিচেন থেকে বলে উঠলো,
ভাইজান আইছে বউমণি।
অনু বুঝতে পারলো আদি কোথায় আছে,
আদিকে গিয়ে দেখতে হবে, না হয় উনি আগের মতো ভেঙে পড়বে।
অনু অভিকের রুমে গিয়ে দেখে, আদি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।
অনুঃ আপনি সিগারেট খাচ্ছেন? অভিক ভাইয়ার জন্য মন খারাপ করে এসব করছেন?
আপনাকে এভাবে দেখে অভিক ভাইয়ার কি ভালো লাগছে বলুন? আপনি আর কখনও সিগারেট খাবেন না। আমি একদম পছন্দ করি না এটা।
আদিত্যঃ এই ফেলে দিয়েছি, আর কখনও খাবো না, পিংকি প্রমিজ।
আদিকে এমন হাসতে দেখে খুব ভালো লাগছে অনুর। বিয়ের পর থেকে এই প্রথম হাসতে দেখছে আদিকে। হাসলে ছেলেদের এতো ভালো লাগে জানা ছিল না অনুর।
কিন্তু অনু খুব অবাক হচ্ছে, কি ভেবে আদি এতো খুশি।
আদিত্যঃ কি ভাবছো প্রিয়তি?
আদির মুখে প্রিয়তি শুনে অনুর ভালোই লেগেছে।
অনুঃ না, দেখছি আপনাকে। এভাবে সব সময় হাসি খুশি থাকলেই তো পারেন। অমন মন খারাপ করে থাকেন কেন?
আদিত্যঃ আমাকে কি দেখছো? আমি তো তোমাকে দেখছি। ভিষণ সুন্দর দেখাচ্ছে তোমায়।
তুমি যে এতো টা সুন্দরী আমার জানাই ছিল না।
অনু নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আদির কথা গুলো আজ অন্য রকম লাগছে অনুর কাছে।
আদি অনুর দিকে এগোচ্ছে আর অনু পিছাচ্ছে।
অনুর কেমন জানি ভয় ভয় করছে,
অনু দেয়ালের সাথে মিশে দাঁড়িয়ে আছে,
আদি ওর খুউউউব কাছে চলে এসেছে। আদির নিশ্বাস এসে পড়ছে অনুর মুখে।
অনু চোখ বন্ধ করে ফেলেছে, আদি ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল।
প্রায় দশ মিনিট পর টুনি ডাকে ঘোর কাটে অনুর।
আদিকে সরিয়ে সে নিচে নেমে এলো।
.
কেন ডেকেছিলে আমায়? টুনির উদ্দেশ্যে বলল,
অনু।
টুনিঃ খাওনা অই গেছে বউমণি।
অনু টেবিলে খাবার সাজিয়ে নিল।
আদিত্য নিচে নেমে এলো। অনু দেখলো,
আদি ওর দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে।
টুনি আদির দিকে তাকিয়ে চমকে গেল।
টুনিঃ বউমণি আমরা শুইতাম? আমনে গো কি কিছু লাগবো আর?
অনুঃ না যাও।
অনু দেখলো টুনি ভয়ে ভয়ে আছে, সে পাখিকে নিয়ে এক প্রকার দৌড়েই নিজেদের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিল।
অনু ঠিক বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে আজ।
খাওয়া শেষ করে আদি রুমে চলে গেল।
অনু সব গুছিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো।
.
অনু রুমে ঢুকে দেখলো, ডিম লাইট জ্বলছে।
সে ভাবলো আদি হয়তো ঘুমিয়ে গেছে,
তাই আর লাইট না দিয়ে মাথা আঁচড়াতে নিল অনু।
কারো স্পর্শ পেল অনু, সে ঠিক বুঝতে পেরেছে
পিছন থেকে আদি ওর কোমর চেপে ধরে ওর ঘাড়ে মুখ গুজে দিয়েছে।
অনুঃ কি করছেন? আমার ভালো লাগছে না।
আদিত্যঃ কেন আমাকে তুমি ভালোবাসো না?
অনুঃ তা না, আসোলে…
আদিত্যঃ কি আসোলে? হসসসসসসস,
কোনো কথা না আজ শুধু তুমি আর আমি। ( অনুর মুখ চেপে ধরে)
আদি অনুকে কোলে করে খাটে নিয়ে গেল।
নিজের ভর টা অনুর উপর দিল………….
.
আদি ক্লান্ত হয়ে শুয়ে আছে। অনু উঠে গোসল করতে গেল। গোসল করে এসে সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে আর ভাবছে,
উনি আজ এমন টা কেন করলো আমার সাথে?
করতেই পারে, ওনার অধিকার আছে আমার উপর। কিন্তু এভাবে?
আয়নার দিকে চোখ পড়তেই অনু দেখলো আদি ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
অনু পিছন ফিরে দেখলো, আদিত্য খাটে ঘুমিয়ে আছে। তাহলে আমার পিছনে কে ছিল?
মনে মনে ভাবছে অনু।

.
সকালে ঘুম থেকে উঠে আদির মাথা টা কেমন ভার ভার লাগছে। দেখলো অনু পাশে নেই।
নিজেকে এভাবে দেখে অবাক হয়ে গেছে আদি।
কাল রাতে কি করেছে ও? অফিস থেকে এসে অভির রুমে গেছিল, এরপর আর কিচ্ছু মনে পড়ছে না আদির।
আদি আজ অফিসে গেল না।
.
এদিকে অনু একজন বড় হুজুরের কাছে কল দিল। কি ভাবে অভি থামানো যায়, এর কোনো উপায় যদি হুজুর বের করতে পারে।
হুজুরের সাথে কথা বলে অনু পিছন ফিরে দেখলো, আদি দাঁড়িয়ে আছে।
কিন্তু অনুর ঠিক মনে আছে সে দরজাটা লক করে এসেছিল। তাহলে আদি ভেতরে কি করে এলো?
আদিত্য দাঁত কাটতে কাটতে বলল,
এমন টা কখনও আদিকে করতে দেখেছো?
অনু ভাবলো, ঠিকই তো আদিকে তো সে কখনও দাঁত কাটতে দেখেনি। কিন্তু কাল সন্ধ্যা থেকে এমন টা করছিল আদি।
আদিত্য বলল, আমি অভিক।
অনু ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে অভিকের দিকে।
অভিকঃ ভয় পেও না প্রিয়তি, তোমার আর আমার কলিজা ভাই আদির আমি কোনো ক্ষতি করবো না।
তুমি আমাকে তাড়ানোর জন্য হুজুরের থেকে উপায় খুঁজছিলে না? যদি দ্বিতীয় বার এমন কিছু করার চেষ্টা করো তবে আদিকে আমি সাথে নিয়েই যাবো।
অনুঃ কি চান আপনি? ( ভয়ার্ত কন্ঠে)
অভিকঃ জানতে চাও?
তাহলে শুন……
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here