#দ্বিতীয়_পুরুষ,পর্ব ৪
নীলাভ্র জহির
মহাসমারোহে গায়ে হলুদ হলো রুপক ও চিত্রার। ভাবি ও বোনেরা মিলে কাঁচা হলুদ বাটা ডলে ডলে লাগিয়ে দিলো তাদের গায়ে। কাঠের লম্বা একটা তক্তার ওপর বসিয়ে রেখে তাদের গায়ে পানি ঢালা হল। জারি,সারি গানের সঙ্গে বিয়ে বাড়ির খাবারের ঘ্রাণ মিলে মিশে একাকার। গায়ে হলুদের পর একটা হলুদ শাড়ি পরে চিত্রাকে রোদে বসিয়ে রাখা হলো।
আজ বৌভাতের দাওয়াত। একটু পরে লোকজন আসতে শুরু করবে। বাবুর্চিরা খাবার-দাবার রান্না বান্না করছে। রুবিনা স্যুটকেস নিয়ে এসে হাজির হলো চিত্রাকে আরো একবার বউ সাজানোর জন্য। এতবার সাজগোজ করতে বিরক্ত লাগার কথা থাকলেও চিত্রার মোটেও বিরক্ত লাগছে না। এই সাজগোজ করতে পারাটাও সৌভাগ্যের ব্যাপার। যদিও ঘুমে তার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।
বধু সেজে চিত্রা বসে রইল বিয়ের স্টেজে। গ্রামবাসীরা আসছে, আত্মীয়-স্বজন আসছে বৌভাতের দাওয়াত খেতে। সবার হাতেই একটা করে উপহার এর প্যাকেট। দাওয়াত খেয়ে নিজের নাম লিখিয়ে উপহার দিয়ে যাচ্ছে সবাই। চিত্রার আজ খুব আনন্দ হচ্ছে। এভাবে যখন কারো বিয়ে হতো, সে মনে মনে চাইতো একদিন তারও যেন এমন ধুমধাম করে বিয়ে হয়। তার পাগল বাবার পক্ষে সেটা সম্ভব ছিল না। অবশেষে তারও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়েছে। মহাসমারোহে বিয়ে হচ্ছে তার।
সন্ধ্যাবেলা কনে পক্ষের লোকজন আসলো। চিত্রার ফুপাতো ভাই বোন, ভাইয়ের বউ, তার বাবা সোহরাব উদ্দিনও এসেছে। সবাইকে এক ঝলক দেখেই মনে শান্তি বয়ে গেল চিত্রার। সবার সঙ্গে বসে খাবার খেলো চিত্রা। তারপর চলে এলো নিজের ঘরে। রুপক বন্ধুবান্ধব নিয়ে বিছানায় বসে মোবাইলে ছবি দেখছে। একটা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল আছে রূপকের। সেই মোবাইলটাতে চিত্রার বেশ কয়েকটা ছবি তুলেছে রূপক।
চিত্রাকে দেখে ছেলেপেলেরা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। চিত্রা বলল, আমার বাড়ির লোকজন তো আমাগোরে নিতে আইছে। নাইওর যাইতে হইবো। আপনের কি কি জিনিস নিতে হইব আমার একটু কন?
– কিছু নিতে হইবো না। শুধু আমার বউডারে নিলেই হইবো।
মুচকি হেসে কথাটা বলল রূপক। চিত্রা খুব লাজুকভাবে হাসলো। ভীষন রোমান্টিক একটা বর পেয়েছে চিত্রা। তার বিয়ের সুটকেসের ভেতরে সে স্বামীর কিছু শার্ট প্যান্ট ও লুঙ্গি গুছিয়ে ভরে নিল।
রূপক আচমকা চিত্রাকে জাপটে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিল। চিত্রা বলল, আপনে এমন কেন?
– আমি কেমন?
– এখন ছাড়েন। দরজা খোলা আছে। কেউ আইয়া পরবো।
– আইলা আহুক।
– সরেন তো।
স্বামীকে ধাক্কা দিয়ে চিত্রা বিছানা থেকে উঠে পড়ল। থরথর করে গা কাঁপছে তার। চিত্রা ঘর থেকে বেরিয়ে তার ভাবিদের সঙ্গে দেখা করতে এলো। চিত্রার ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে অদূরে মুখোমুখি দুটো চেয়ারে বসে আলোচনা করছে রূপকের দুলাভাই ও চাচারা। চিত্রা অবাক হয়ে সে দিকে তাকিয়ে রইল। তার ভাইয়ের মুখটা শুকনো। কী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কে জানে? চিত্রার বিয়েতে যৌতুক হিসেবে ছিল একটা সাইকেল। বিয়েতে বর পক্ষ থেকে খুব বেশি মেহমান যায়নি। তবুও তাদের সবাইকে খাওয়ানো, বর ও কনের জন্য বিয়ের কেনাকাটা করতে তার ফুফুর সংসার থেকে অনেক টাকা ঢালতে হয়েছে। ফুফাতো ভাইয়েরা যে যার মত চেষ্টা করেছে বিয়েটা ভালোভাবে উঠিয়ে দেয়ার। চিত্রাকে একটা সুন্দর বিয়ের শাড়ি ও দিয়েছে তারা। বর ও কনের জন্য গায়ে হলুদের শাড়ি কিনে দিয়েছে চিত্রার ফুপু। কিন্তু ঝামেলা বেঁধেছে সাইকেল দেয়া নিয়ে। সাইকেলটা দিতে হবে সোহরাব উদ্দিনকে। অনেক কষ্টে দুবেলা দুমুঠো ভাত খেতে পারা সোহরাব উদ্দিনের পক্ষে সাইকেল কিনে দেয়া সম্ভব না। চিত্রা সেটা ভালো করেই জানে। তাই চিত্রার ফুপাতো ভাই এরা পনের/ বিশদিন সময় নিয়েছে সাইকেল দেয়ার জন্য। সোহরাব উদ্দিন কিছু টাকা দিলে বাকিটা চিত্রার ফুপাতো ভাইয়ের মিলে দিয়ে একটা সাইকেল কিনে দিবে রূপককে। ফুপাতো ভাইয়ের কাঁধে এরকম উটকো বোঝা চাপিয়ে দেয়া চিত্রার নিজের জন্য অপরাধবোধ কাজ করছে। এত আনন্দের বিয়ের মুহূর্ত এই একটা কারণেই তার কাছে কেমন যেন অন্ধকার হয়ে গেল। তার স্বামী বাজারে দোকান করতে যায়। একটা সাইকেল তার ভীষণ দরকার। কিন্তু তার পরিবারের কেউ যদি এই সাইকেলটা দিতে না পারে তাহলে শ্বশুর বাড়িতে মান-সম্মান কমে যাবে চিত্রার। অন্যদিকে ভাই কিংবা বাবার ওপর কোন দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে চাইছে না চিত্রা। এসব কথা ভেবে চিত্রার মন খারাপ হয়ে গেল।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে। শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রূপক ও চিত্রা কনে পক্ষের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ল। তিনটা অটো গাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে। একটা গাড়িতে পাশাপাশি বসেছে চিত্রা ও রূপক। সেই গাড়িতে আরো আছে চিত্রার দুই ভাবি। তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হাসি মশকরা করছিল রূপকের সাথে। রূপকের বোন রুবিনা ও নাজমা ও যাচ্ছে চিত্রার বাপের বাড়িতে। বাপের বাড়ি বলতে চিত্রার ফুফুর বাড়ি। সোহরাব উদ্দিনের ভাঙ্গা বাড়িতে চিত্রার শশুর বাড়ির লোকজনকে নিয়ে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, সেকথা বলে দিয়েছেন চিত্রার ফুফু। চিত্রাদের আর্থিক অবস্থার কথা শ্বশুরবাড়ির সবাই জানে। সবকিছু জেনে শুনেই রুপক বিয়ে করেছে চিত্রাকে। তাই এটা নিয়ে সেও কোন ঝামেলা করেনি।
ফুফুর বাড়িতে আজকে একটা পৃথক ঘর দেয়া হলো চিত্রা ও রূপককে। এতদিন চিত্রা ফুফুর সঙ্গে ঘুমাতে। ফুফুর খড়ের ঘর। ফুপাতো ভাইয়ের টিনের দোচালা ঘর। ঘরে একটা খাট ও শোকেস আছে। শোকেস ভর্তি ভাবির অনেক শখের জিনিস। বড় ভাবি অনেক সৌখিন মানুষ। উনার ঘরটাতেই থাকতে দেয়া হয়েছে নতুন বর বউকে।
বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে আছে তারা দুইজন। চিত্রার ঘুম পাচ্ছে। মাত্রই ঘুমে চোখ বুজে এসেছে এমন সময় রূপকের হাতের স্পর্শ অনুভব করল। চিত্রা বলল, এখন কিছু কইরেন না। আমারে ঘুমাইতে দেন।
– ঘুমাইবা তো। একটু সোহাগ করতে দাও।
– দিনের বেলা অনেক সোহাগ করছেন। এহন একটু শইলটা ছাইড়া দেন।
– মনডা তো মানতাছে না।
– মন এত উচাটন হইলে হইব? সারাটা দিন ম্যালা ধকল গেছে। এহন একটু ঘুমাইয়া লন। কালকে আবার যত মঞ্চায় সোহাগ কইরেন।
চিত্রার বাধা শুনলোনা রূপক। সে চিত্রার শরীরের উপর উঠে পড়ল। চিত্রার সুডৌল বুকে মুখ গুঁজে দিল। দুই হাত দিয়ে সমানে চাপতে লাগল তার বক্ষস্থল দুটো। চিত্রার শরীর শিউরে উঠছে। ফোসফোস শব্দ করতে লাগলো সে। ঘুমের ঘোরে সে তার স্বামীর চুল চেপে ধরল। সমস্ত ক্লান্তি তখন কোথায় যেন মিলিয়ে যায়। রূপক আবারও পরম সোহাগ করলো তাকে। তারপর ক্লান্ত হয়ে সে চিত্রাকে ছেড়ে দিল। পরিস্থিতি মেনে নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। সে আর কোন নড়াচড়া না করে চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করে।
ঘুমের ভেতর দেখল একটা অদ্ভুত স্বপ্ন। জয়নাল একটা বড় দা হাতে নিয়ে তার পিছুপিছু দৌড়াচ্ছে। জয়নালের চেহারাটা মনে নেই চিত্রার। তবে স্বপ্ন বলে দিচ্ছিল ওইটা জয়নাল। দা দিয়ে সে চিত্রাকে কুপিয়ে মেরে ফেলতে চায়। পিছু পিছু ছুটতে ছুটতে জয়নাল বারবার বলছিল, তুই আমার বউ। তুই আমারে থুইয়া আরেকজনের লগে বিয়া বইছস, আরেক পোলারে সোহাগ করোস? আমি তোরে আইজকা কাইটা ফালামু।
চিত্রা ভয়ে-আতঙ্কে চিৎকার করতে করতে দৌড়াচ্ছে। কিন্তু স্বপ্নের ভিতরে দৌড়িয়ে সে কোন কূলকিনারা করতে পারে না। যতই দৌড়াচ্ছে পথ একটুও এগোচ্ছে না। এদিকে জয়নাল তার পিছনে দা নিয়ে তাকে তাড়া করছে। এই বুঝি কোপ দেয় তার শরীরে।
চিত্রা হঠাৎ করে পা ফসকে একটা দরিয়ার মধ্যে পড়ে গেল। দরিয়ায় পরতে পরতে ঘুম ভেঙে গেল তার। সে দেখল তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। চিত্রা চোখ মুছলো। রূপকের ঘুমের শব্দ পাচ্ছে সে। অন্ধকার ঘরে চিত্রার ভয় লাগে। এত ভয়ঙ্কর একটা স্বপ্ন সে কেন দেখল? রূপকের হাত দুইটা সে শক্ত করে ধরে নিজেকে রূপকের বুকের মধ্যে ঠেলে দেয়। ঘুমের ঘোরেই রুপক চিত্রাকে তার বুকের মধ্যে টেনে নিল। একটা পা তুলে দিলো চিত্রার গায়ের উপর। চিত্রার থলথলে শরীরটা রূপকের শক্তপোক্ত শরীরের ভিতরে জায়গা করে নিল। অনেকটা ভয় কেটে গেল চিত্রার। নির্ভরতার স্বস্তি পেতে লাগল সে। দুইহাতে সে রূপককে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভাবল, আমার কোন ভয় নাই। রুপক আমারে অনেক ভালোবাসে। কোন ভয় নাই।
দুইদিনের নাইওর শেষ করে শ্বশুর বাড়িতে ফিরে এল চিত্রা। আসার সময় তার সঙ্গে হরেক রকম পিঠা পুলি ও এক হাঁড়ি শিন্নি পাঠানো হয়েছে। গ্রামবাসীদের বাড়ি বাড়ি পাঠানো হলো সেই পিঠা ও শিন্নি। চিত্রা ঘরে ঢুকে দেখল তার বিছানার উপরে বিয়েতে পাওয়া সব উপহার সামগ্রী সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রত্যেকটা বাক্স থেকে র্যাপিং পেপার ছেঁড়া। তার মানে এই বাড়ির লোকজন সবাই তারা অগোচরেই প্যাকেট গুলো খুলে দেখেছে কে কি পাঠিয়েছে। দেখা শেষ করে প্যাকেটগুলো তার ঘরের মধ্যে রেখে দেয়া হয়েছে। তথাপি চিত্রার মনে হল নিশ্চয়ই এখান থেকে দু একটা ভালো ভালো জিনিস সরিয়ে ফেলেছে অনেকে। এসব তার জানার কোন প্রয়োজন নেই। সে যে কয়টা উপহার পেয়েছে তাতেই তার অনেক আনন্দ।
চিত্রা ও রূপক উপহার গুলো খুলে খুলে দেখতে লাগলো। কাচের প্লেট, বাটি, গ্লাস থেকে শুরু করে টিফিন বাটি পর্যন্ত। অনেক কিছু উপহার পেয়েছে তারা। চিত্রার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। যৌথ পরিবারে বিয়ে হয়েছে তার। তবে এই জিনিসগুলো শুধুমাত্র তার নিজের। একদিন এইগুলো দিয়ে সেও সুন্দর করে সংসার করবে। এগুলো তার সংসারের জিনিস। বুকটা তার আনন্দে ভরে গেল।
চিত্রা সব জিনিস গুলো বিছানার নিচে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখল। চিত্রার শাশুড়ি দরজায় দাঁড়িয়ে সব দেখলেন। তিনি বললেন, মেলা জিনিস পাইছো। আমগো আত্মীয়-স্বজন সবার দিল ভালা। সবাই ভালা ভালা জিনিসই দিছে। তোমগো বাড়িত যদি বৌভাত করতা, তাইলে ওইখান থাইকাও পাইতা। নাও পাইতা। তোমার তো কোনো আত্মীয়-স্বজন নাই। খালি একটা বাপ, তাও পাগলা।
চিত্রার খুব খারাপ লাগলো কথাগুলা শুনতে। কথাগুলো নিষ্ঠুর রকমের সত্য। তবে অন্য কারো মুখ থেকে শুনলে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই মুহূর্তেই কথাগুলো মন থেকে ঠেলে দূর করে দিল। বিয়ের প্রথম রাতেই সে রূপককে কথা দিয়েছে শ্বশুর-শাশুড়ির কথায় সে কখনো কষ্ট পাবে না। সে মনে কোন কষ্ট রাখতে চায় না।
চিত্রার শাশুড়ি জোসনা বললেন, সন্ধ্যা হইয়া যাইতাছে। আসো চুলার পারে। ভাতের চাল ধুইয়া দেও। বইসা বইসা ভাত জ্বাল দাও। সংসারের কাজ-কাম সব শিখতে হইব। আমার সংসারে কয়দিন থাকবা। তোমার নিজের সংসার বুইঝা লইতে হইব হাছায় কইছি?
খুশিমনে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো চিত্রা। সে শাশুড়ির সঙ্গে রান্নাবান্না করতে ভীষণ আগ্রহী। সংসার খুব গৌরবের জায়গা। অনেক ছোটবেলা থেকেই সে সংসার করার স্বপ্ন দেখে। এখন সেই স্বপ্ন পূরণ করার পালা।
ভাতের চাল ধুয়ে দেয়ার সময় চিত্রার খুব ভয় হচ্ছিল। যদি চালে কোন পাথর পাওয়া যায় তাহলে নতুন শাশুড়ির কাছে তার মান সম্মান থাকবে না। শাশুড়ি ভাববে সে বোধহয় কোন কাজ ঠিকমতো করতে পারেনা। অনেকক্ষণ সময় নিয়ে চাল থেকে ধান ও পাথর বেছে বেছে খুব সুন্দর করে চাল ধুলো চিত্রা। তার শাশুড়ি এসে বললেন, এতক্ষণ সময় লাগাইয়া দিতাছো। চাল ধুইতেই যদি রাত হইয়া যায়, ভাত হইবো কি ফজরে?
চিত্রা তার শাশুড়ির মুখের দিকে তাকালো। জোসনার মুখে হাসি। হাসি মুখ দেখেই ভয় কেটে গেল চিত্রার। সে আতংকিত ভঙ্গিতে চালগুলো নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলো। রান্নাঘরে মাটির চুলা। লাকড়ি দিয়ে জ্বাল দিতে হয়। পাতিলে চাল গুলো তুলে দিয়ে সে জোসনাকে জিজ্ঞেস করল, আরো পানি দিমু?
– আরেকটু পানি দেওন লাগবো। তোমারে পানি মাইপা দেওন শিখাইয়া দেই। হাতের এই চার আংগুলের সুমান কইরা পানি দিবা ভাতে। নতুন ধান হলে আরেকটু কম কইরা দিবা। বুজছ?
চিত্রা মাথা ঝাঁকাল। রুপক ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলল, মা খিদা লাগছে। কিছু খাওয়ান দাও।
জোসনা বললেন, মুড়ি দিয়া শিন্নি খা। ভাতের চাউল কেবল ধুইয়া দিতাছি। তোর বউরে সেই কখন পাঠাইছি চাল ধুইতে। এহন আইলো। শশুর বাড়ি থাইকা যা আনছস ঐগুলাই খা। আইনা দিমু?
– দেও
রূপকের মা একটা ছোট গামলায় করে শিন্নি ও একপাশে মুড়ি আর কয়েকটা পিঠা নিয়ে এলেন। খাবারটা রূপকের হাতে দিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে বসলেন তিনি। চিত্রা চুলার পাড়ে বসে ভাত জ্বাল দিচ্ছে। উনুনের আগুনে তার মুখটা লালচে আকার ধারণ করেছে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে রূপক। নতুন বউটাকে উনুনের আলোয় কি অপূর্ব সুন্দরী না দেখাচ্ছে।
চলবে..