#দ্যা_লিফট
#পর্ব_০১
#Writer_Shanta_islam
প্রতিদিনের মতো আজো দোয়া পড়তে পড়তে বাসা থেকে বের হচ্ছি যাতে ক্রাসের সাথে দেখা না হয়ে যায়।
অদ্ভুত তাই না। সবাই হয়তো ক্রাসকে দেখার জন্য পাগল আর আমি দোয়া করছি যাতে ক্রাসের সাথে দেখা না হয়। এটার পিছনেও একটা উপযুক্ত কারন আছে। ক্রাস যদি স্টুডেন্টের ভাই না হতো তাহলে হয়তো চোখ বড় বড় করে ভ্যাবলার মতো ক্রাসের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। তিন বছর হলো নেহার ভাইয়ের উপর মারাত্মক ক্রাস খেয়েছি। ছেলেটা যে আমার ক্রাসের খাতায় নাম লিখিয়েছে এতোগুলো দিন পেরিয়ে গেলো তালিকা থেকে উঠছে না। আজ ভিষণ বৃষ্টি হচ্ছে। হয়তো শীতের আমেজ পড়বে। অবশ্য শীত শীত ভাবও পড়েছে বটে। দরজায় দাঁড়িয়ে বিরবির করে বলছিলাম,,ইয়া আল্লাহ আজ যাতে সুমন ভাইয়ের সাথে দেখা না হয়। এমন সময় কোথা হতে মা এসে ছাতাটা হাতে ধরিয়ে বললো,,,কিরে তোকে ভুতে ধরেছে নাকি?এভাবে ফিসফিসিয়ে কি বলছিস?
– দোয়া দূরুত পরছিলাম,,,সয়তান যেনো বাসা থেকে বিদায় হয়। কথাটা বলতেই সাদ আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মুখ ভেঙচি কাটলো। ওকে টার্গেট করেই যে কথাটা বলেছি সেটা ও বুঝতে পেরেছে। পৃথিবীতে একা ছিলাম ভালোই ছিলাম কোথা থেকে টপাস করে এই সাদটা এসে জুটলো আমার পুরো জীবনটাই তেজপাতা, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা হয়ে গেলো। টিউশনের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হবো এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। দরজা খুলে দেখি পাশের বাসার আন্টি হানা দিয়েছে সাথে এনেছে ধামাকাধার নিউজ। আসতে না আসতেই দৌড়ে আমাকে ক্রস করে মায়ের কাছে গিয়ে বললো জানেন ভাবি পাশের বাসার মুন্নিকে পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছিলো। হাতে নাকি মাত্র পাচশ টাকা দিয়েছে। এটা বড় কথা না বড় কথা এটা যে পাত্রের মা গোল্ডেন কালার শাড়ির সাথে চোখে নীল কালার সেড দিয়েছে।
আমার মাও কম না আন্টির কথায় মা স্টার জলসার অভিনেত্রীদের মতো রিয়েকশন দিয়ে বললো,,কি বলছেন ভাবি নীল কালার সেড? গল্ডেন কালার শাড়ির সাথে নীল কালার সেড কে দেয়।
– হ্যাঁ ভাবি আমিও তো সেটাই ভাবছি। এটা দেখার পর আমি আমার হাসি আটকে রাখতে পারিনি৷ দারান খবরটা সুমাইয়ার আম্মুকে জানাই।
ওই যে কাজ সেরেছে। আজকের টপিক তাহলে পাত্রের মার চোখের সেড কালার। এখন আমার মা আর আন্টি কতোক্ষন এটা নিয়ে গবেষণা করবে। তাদের গবেষণার মধ্যে আরো চার-পাচ জন আন্টি এড হবে। তারপর শুরু হবে বৃহত্তর মহিলা মন্ডলি। দূর ছাই আমার এসবে কান পেতে কাজ নেই। এমনিতেই টিউশনে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।
নেহাদের বিল্ডিং আর আমাদের বিল্ডিং পাশাপাশি হওয়ায় পৌছাতে বেশি দেরি হলো না। ছাতাটা বন্ধ করে যেই লিফটে ডুকবো এমন সময় সুমন ভাইও লিফটে ডুকে পরলো। কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। যেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছিলাম সেটাই হলো ক্রাসের সাথে দেখা হয়ে গেলো। দেখা হলো বইকি দুজন একই সাথে লিফটে উঠলাম। দোয়াটা কাজে দিলো না। তবুও ভালো লাগছে। ক্রাসকে দেখলে কার না ভালো লাগে। ওই যে হিন্দিতে বলে না মান মে লাডু ফুটা। লিফট দিয়ে উঠার সময় সুমন ভাইয়ের দিকে একবারো তাকাইনি। সুমন ভাই ফোনে কিছু একটা করছিলো আর আমি লিফটের উপর তাকিয়ে আছি। সাদ থাকলে এতোক্ষনে হয়তো বলে ফেলতো লিফটের উপর চন্দ্র সূর্য খুজছিস? লিফট খোলার সাথে সাথে দৌড়ে বের হয়ে এলাম। এখন যত তারাতাড়ি সম্ভব নেহার রুমের দিকে এগোতে পারলেই চলে কথাটা ভেবে যেই দুকদম এগোবো ওমনি সুমন ভাই পিছন থেকে ডেকে বললো,,,এই যে আপু আপনার কলমটা পরে গেছে!
-লাইক সিরিয়াসলি? আপু? কী কপাল ক্রাসের মুখে আপু ডাক শুনতে হলো। মনে হচ্ছে দিলের মধ্যে পুতা দিয়ে কেও বারি মেরেছে। ভাঙা হৃদয় নিয়ে সুমন
ভাইয়ের হাত থেকে কলমটা নিয়ে সোজা নেহার রুমে ডুকে গেলাম। এখানে এসে দেখি আরেক কান্ড। নেহা ওর মার বেনারসি পড়ে বউ সেজে স্যানপচেটে পিক তুলছে।
-একি নেহা তুমি বউ সেজেছো কেনো?
আমার কথাশুনে নেহা একটু আতকে উঠে। ওহ সরি সরি আপু,,আমি দেখিনি আপনি যে এসেছেন। একটু বসুন আমি এখনি আসছি।
নেহা শাড়ি চেঞ্জ করে পড়তে বসলে নেহাকে আবারো জিজ্ঞেস করলাম,,,বউ সেজেছিলো কেনো?
নেহা বললো বউ সাজলে কেমন লাগে সেটা দেখার জন্য নাকি সে শাড়ি পরেছিলো।
ব্যাপরটা আমার কাছে কেমন জেনো খটছে। যাই হোক
শাড়ি পড়ে ট্রায় করতেই পারে। সবাই তো আমার মতো খ্যাত না। নেহাকে পড়ানো শেষে বাসা থেকে বের হই। মনটা একেবারেই ভালো না। ক্রাসের মুখে আপু ডাক শুনলে কীভাবে ভালো থাকে। হতাশ মন নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে দেখি লিফটের মধ্যে দুটো বাচ্চা খেলা করছে। বাচ্চা দুটো দেখতে খুব কিউট। এমন কিউট বাচ্চা দেখলে তারাতাড়ি বিয়ে করতে মন চায়। আমার মনের কোনো ভ্যালিভিশন নেই একটু আগে ক্রাসের আপু ডাকে মন খারাপ ছিলো এখন আবার দুটো বাচ্চা দেখে বিয়ের কথা ভেবে মনে বসন্ত বাতাস বইছে। বাচ্চা দুটোকে খেলা করতে দেখে ভাবছিলাম কোলে নিব। কোলে নেওয়ার জন্য যেই পা দুটো বাড়ালাম হঠাৎ লিফটের লাইট অন অফ অন অফ হতে লাগলো। আরে কী হচ্ছে বিল্ডিংয়ের লাইট তো ঠিকি আছে তাহলে লিফটের লাইট এমন করছে কেনো? হয়তো লিফটে সমস্যা হয়েছে। বাচ্চাগুলোকে বের করে আনাই ভালো। কথাটা ভেবে যেই ডান পা টা বাড়ালাম। সাথে সাথে লিফটের ভিতরের অংশ পালটে গেলো। আমার হাত থেকে ব্যাগ পড়ে গেছে। চোখ বড় বড় করে লিফটের দিকে তাকিয়ে আছি,,এটা আমি কি দেখছি? আমার মুখ আটকে গেছে। এমন মনে হচ্ছে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। এটা কি আদো পসিবল। মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের করতে পারছি না। আওয়াজ তো দূরের কথা পা দুটোও নারাতে পারছি না। মনে হচ্ছে বরফের মতো জমে গেছে। হৃদস্পন্দন বেরে যাচ্ছে। হয়তো এখনি চোখ বন্ধ করে পড়ে যাবো। না এটা কখনোই সম্ভব না। লিফটের বাইরের অংশ নরলাম আর ভিতরের অংশে পুরো ভিন্ন একটি দুনিয়া। এটা কীভাবে সম্ভব। এতোক্ষনে বাচ্চা দুটো খেলতে খেলতে লিফটের ভিতরের ওই অদ্ভুত জায়গার কিছুটা দূর চলে গেছে। আমি চেষ্টা করছি চিৎকার করার। কিন্তু পারছি না। বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে সংযত করছি। আগে বাচ্চা দুটোকে লিফট থেকে বের করতে হবে। লিফট বললে ভুল হবে। এটা আসলে কী? কোন জায়গা? লিফটের মধ্যেও কি এমন কিছু হতে পারে?
নিজেকে সংযত করে চলার শক্তিটা যোগাই। কাপা কাপা পায়ে লিফটের মধ্যে ডুকে পরি। আর সাথে সাথে লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। ভয় করছে,,,প্রচুর ভয় করছে। ভয়ে লিফটের দরজায় বারি দিতে থাকি। কাজ হচ্ছে না। লিফট খুলছে না। আমার নিশ্বাস কেমন জেনো বন্ধ হয়ে আসছে। এটা কোন জায়গা। লিফটের ভিতরে এতো বড় জঙ্গল কোথা থেকে আসলো। চিৎকার করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আওয়াজ বের হচ্ছে না। এখন আমার কি করা উচিৎ। এটা আমার সাথে কি হচ্ছে? লিফট খোলার জন্য বার বার বারি মারছি। হঠাৎ আবার সেই বাচ্চা দুটোকে দেখতে পেলাম। বাচ্চাগুলো খেলা করছে। আমি দৌড়ে যেয়ে বাচ্চা দুটোর হাত ধরে ফেলি। বাচ্চাগুলো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সময় কিছু বিদঘুটে আওয়াজ শুনতে পেলাম। অদ্ভুত এক ধরনের আওয়াজ। শব্দটার পিছু নিতে নিতে দেখলাম খোলা মাঠে একজন মহিলা শাড়ি পরে দাড়িয়ে আছে। তার কোলে দুবছরের বাচ্চা হবে। সঠিক বলতে পারছি না। আমি তাদের পিছনে দাড়িয়ে আছি। ভিতরে অনেকটা সস্থি বোধ করছি এটা ভেবে যে এখানে কোনো মানুষ আছে। উনাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করবো,,এটা কোন জায়গা?এখান থেকে বের হবো কীভাবে?
উনাকে ডাক দিব ঠিক এমন সময় লক্ষ্য করলাম মহিলাটা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানটা রক্তে ভরা। এরপর নিজ চোখে যা দেখলাম কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ হয়তো সেটা মেনে নিতে পারবে না।
-মহিলাটা মানুষের হৃদপিন্ড অর্ধেক খেয়ে বাচ্চাটার মুখে অর্ধেক দিলো।
এটা দেখার পর আমার নিশ্বাস আটকে গেছে। শ্বাস নিতে পারছি না। প্রচন্ড মাথা ঘুরাচ্ছে হয়তো এখনি পরে যাবো। হঠাৎ আমার হাতে টান অনুভব করলাম। দেখলাম বাচ্চা দুটো আমাকে টান দিয়ে এক সাইডে নিয়ে গেলো। আর সাথে সাথে মহিলাটা পিছনে তাকালো। যেখানে বাচ্চাদুটোকে নিয়ে লুকিয়েছি ওখান থেকে মহিলাটার চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মুখে রক্ত ভরা। মহিলার কোলের বাচ্চাটা এবার অন্য কিছু খাচ্ছে ও,,ও,,ওটা,,,ওটা কী হাত? কারো হাত?
ইয়া আল্লাহ রক্ষা করো,,,কোথায় এসে পড়লাম?
হঠাৎ খেয়াল করলাম যেখানে বসে আছি সেখানে কাঠির মতো কিছু একটা পায়ে বাজছে। নিচে তাকিয়ে দেখি কতোগুলো হারের অংশ। এ,,এ,,এগুলো কী মানুষের হার। এটা দেখা মাত্রই ভয়ে আতকে উঠে নিজ থেকে বাচ্চাগুলোর হাত ছেরে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। হঠাৎ অনুভব করলাম আমার একটা হাত ডিমের মতো কিছু একটার মধ্যে ডুকে গেছে। ওটা ভিষন চক চক করছিলো। হাতটা সরিয়ে নিতেই শরীরে অদ্ভুত কিছু অনুভব করলাম। নাহ নিজেকে আর সামলাতে পারছি না। বাচ্চাদুটোর হাত ধরে দৌড়ে জঙ্গল থেকে বের হয়ে লিফটের দরজার কাছে চলে আসলাম। লিফটে বারি মারছি লিফট খুলছে না। একটা পর্যায় কান্না শুরু করে দিলাম।
-কেও কি আছে প্লিজ দরজা খুলো,,,প্লিজ
লিফটে এতো লাথি মারছি বারি মারছি কিছু হচ্ছে না। কান্না করতে করতে লিফটের বাটনগুলোতে টিপ দিলাম আর সাথে সাথে সেই জঙ্গলটা গায়েব হয়ে গেলো। লিফট আবার আগের মতো নরমাল হয়ে এলো। লিফট চলছে,,আমি বাচ্চাদুটোর হাত ধরে কাপছি। লিফট খোলার সাথে সাথে আগের মতো নেহাদের ফ্লোরে চলে এলাম। বাচ্চাদুটো নেহাদের পাশের বাসায় ডুকে গেলো। আর আমি দৌড়ে বাসায় চলে আসলাম। কলিং বেল দিতেই মা দরজা খুলে দিলো। আমি কান্না করতে করতে মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে চেস্টা করলাম,,লি,,লি,,লিফট,,,ভু,,ভু,,ভুত,,, চোখ দুটোয় অন্ধকার ঘনিয়ে এলো এরপর আর কিছু মনে নেই। গল্পের অন্য পর্বগুলো খুজে না পেলে প্রোফাইলে অবশ্যই পাবেন। সাদ একটা ঝাড়ু নিয়ে দৌড়ে এসে ইশাকে মারচ্ছে।
-কি করছিস সাদ?ইশাকে এভাবে ঝাড়ু দিয়ে মারছিস কেনো?
-মা দেখছো না ইশাপুকে ভুতে ধরেছে। জলদি করে সুকনা মরিচ পুরো,,,,
চলবে,,,,