#দ্যা_লিফট #পর্ব_০২,০৩

0
696

#দ্যা_লিফট
#পর্ব_০২,০৩
#Writer_Shanta_islam
পর্ব_০২

মা দেখছো না ইশাপুকে ভুতে ধরেছে। জলদি করে সুকনা মরিচ পুরো,,,,
-তুই ঝাড়ু ছাড়,,জলদি পানি নিয়ে আয়।
-পানিতে কাজ হবে না,, মনে আছে খালার জামাইয়ের ফুফাতো ভাইয়ের চাচতো বোনের ছোট ছেলেকে এভাবে ভুতে ধরেছিলো তখন সুকনা মরিচ পুরে নাকের কাছে দিয়েছিলো।
-সাদ মার খেতে না চাইলে এখনি পানি নিয়ে আয়। সাদ দরজার এক কোনায় ঝাড়ু ছুরে মেরে মনে মনে বললো,আর একটু পেটাতে পারলে মনটা ভরে যেতো। ইশার মা ইশার চোখে পানির ছিটে দিচ্ছে আর ইশাকে ডাকছে ইশা,,ইশা,,এই ইশা,,ইশা৷ কি হলো মেয়েটার চোখ খুলছে না কেনো?সাদ তোর বাবাকে ফোন দিয়ে বল ইশা মাথা ঘুরে পরে গেছে,,,হুস ফিরছে না।
-ফোনে টাকা নেই,,,
ইশার মা পা থেকে জুতোটা খোলার আগেই সাদ পকেট থেকে ফোন বের করে ওর বাবাকে কল দিলো।
-হ্যালো বাবা জলদি বাসায় আসো। ইশা আপুর কি জানি হয়েছে,,,মনে হয় না বাচবে ইমার্জেন্সি এম্বুলেন্স দরকার। হঠাৎ সাদের মাথায় কোথা থেকে একটা জুতো এসে পরলো। সাদ পিছু তাকিয়ে দেখে ওর মা আরেকটা জুতো মারার প্রস্তুতি নিচ্ছে সাদ ফোন রেখে ওখান থেকে দেয় এক ভো-দৌড়।
,
,
ইশা,,ইশা,,ইশা মা,,চোখ খোল। মায়ের আওয়াজ পাচ্ছি। না শুধু মা নয় বাবার আওয়াজও শুনতে পাচ্ছি। শব্দটা ক্রমশ বেরে যাচ্ছে। হঠাৎ সেই ভয়ংকর লিফটের কথা মনে পড়তেই ইশা আতকে উঠে,,
চোখ খুলেই দেখি বাবা মা আমার পাশে বসে আছে। কিছু না ভেবেই মাকে জড়িয়ে ধরে হাও মাও করে কান্না শুরু করি।
-মা,,,ওই যে,,,ওই লিফট,,ওখানে,,,মানুষ,,,কথাগুলো বলতে ইশার গলায় বেধে যাচ্ছে। এমন ভয়ংকর দৃশ্য কীভাবে বর্ননা করা যায় তা ইশার জানা নেই।
ইশার বাবা ইশার মাথায় হাত রেখে বললো,,আচ্ছা মা শান্ত হ,,,কিছু হয়নি। সব ঠিক হয়ে যাবে।
ইশার কান্না করতে করতে হেচকি উঠে গেছে। ইশাকে এভাবে কান্না করতে দেখে সাদ কিছু বলতে যেয়েও থেমে যায়। সাদ বুঝতে পারছে এখন কিছু বললে ঝাটার বাড়ি আগে ওর কপালে জুটবে।
ইশা ওর বাবা মাকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু খুলে বললো।
ইশার কথা শুনে ইশার বাবা মা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ঝগড়া শুরু করে দিলো,,,
-সব তোমার দোষ! কতদিন বলেছি ছেলে মেয়ের সামনে ভুতের মুভি দেখবে না। দেখেছো,,, দেখেছো তো এখন,,,
-হ্যা এখন তো সব আমার দোষ,,,তুমি প্রতিবেশী ভাবিদের সাথে যে আলোচনা করো ওমুকের ছেলেকে ভুতে ধরেছে তমুকের মেয়েকে পেত্নীতে ধরেছে ওসব শুনেই মেয়ের এই অবস্থা। মা তোকে কতোবার বলেছি তোর মা যখন পাশের বাসার ভাবিদের সাথে কথা বলে তখন তুই থাকিস না।
শুরু হলো মহাযুদ্ধ। ইশা কি করবে বুঝতে পারছে না। কেও ওর কথা বিশ্বাস করছে না৷
-প্লিজ তোমরা ঝগড়া থামাও। আমি যা বলছি সব সত্যি বলছি। বিশ্বাস না হলে তোমরা আমার সাথে চলো।
বাবা মা আমার সাথে সেই লিফটের সামনে এলো। আমি লিফটের বাটনে ক্লিক করতেই লিফট খুলে গেলো। সব নরলাম।
-কোথায় মা লিফট তো ঠিকি আছে। তোর মনের ভুল সব।
-না বাবা বিশ্বাস করো। লিফটের ভিতর অন্য একটা দুনিয়া দেখেছি আমি। তোমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না তো। দুইটা বাচ্চা,,হ্যাঁ দুইটা বাচ্চাও আমার সাথে ছিলো। বাচ্চা দুটো নেহাদের পাশের ফ্লাটে ডুকে গিয়েছিলো। চলো ওখানে চলো।
আমি বাবা মার হাত ধরে নেহাদের ফ্লোরে তাদের নিয়ে গেলাম। দরজাটা বন্ধ। নেহার আম্মু কোথাও যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিলো হঠাৎ আমাদের দেখে বললো,,আরে ভাইয়া ভাবি আপনারা এখানে।
বাবা নেহার আম্মুকে জিজ্ঞেস করলো এখানে পাচ বছরের মতো দুটো বাচ্চা আছে কি না। নেহার আম্মু বললো কই না তো। এই ফ্লাটে পাচ বছর বয়সি কোনো বাচ্চা থাকে না। আর এই বাসা নাকি এক মাস ধরে খালি পরে আছে। কথাগুলো শুনে অনেকটা আকাশ থেকে মাটিতে পড়লাম। বাবা মা আমার কোনো কথা শুনলো না। আমাকে ডক্টরের কাছে নেওয়া হলো। ডক্টর বললো বেশি স্ট্রেসের কারনে এমনটা হয়েছে। আমাকে কয়েকদিন রেস্টে থাকতে বললো। আর কিছু ওষুধ লিখে দিলো।
কি হলো ওসব আমার সাথে ওগুলো কি সত্যি ছিলো নাকি কোনো কল্পনা। ওই ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলো। আমিও ভেবে নিলাম হয়তো ওটা আমার হ্যালোসিয়েশন ছিলো। আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছি। যেই ঘটনার কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি সেটা বাস্তব কীভাবে হয়? তাই আবার আগের মতো নেহাকে পড়ানোর জন্য ওদের বিল্ডিংয়ে গেলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম এবার আর লিফট ব্যবহার করবো না। সিড়ি বেয়েই নেহাদের বাসায় গেলাম। নেহাকে পড়ানোর সময় ওর মাকে একবার ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ওদের ফ্লাটে ভৌতিক কিছু আছে বা ঘটেছে কি না? ওর মা বললো এতোবছর ওরা এখানে আছে তেমন কিছু শুনে নি বা দেখেও নি। আমারি মনের ভুল। নিজের কল্পনার জগতকে এতোটা বড় করে ফেলেছি যে উল্টো পাল্টা ভাবছি। নেহাকে পড়ানো শেষে ওদের বাসা থেকে বের হতেই দেখলাম মানুষ দিবি লিফট ব্যবহার করছে। কই তাদের সাথে তো তেমন কিছু ঘটছে না। আর এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে লিফটের বাইরে সব ঠিক লিফটের ভিতরে অন্য দুনিয়া। মা ঠিকি বলেছে। হরোর মুভি দেখা বন্ধ করতে হবে। হয়তো এসব ওগুলোর ইফেক্ট। ভিতরের ভয়টাকে কাটিয়ে উঠতে হবে। সবাই যখন লিফট ব্যবহার করছে তাহলে আমি কেনো করবো না। আমি সিওর সেদিন যা হয়েছিলো সব কিছুই হ্যালোসিয়েশন ছিলো। বিসমিল্লাহ বলে চোখ বন্ধ করে লিফটে ক্লিক করলাম। সাথে সাথে লিফট খুলে গেলো। নাহ অদ্ভুত কোনো দুনিয়া দেখতে পারছি না। সব নরমাল। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে লিফটে চরে গেলাম। গ্রাউন্ড ফ্লোরে ক্লিক করতেই লিফট বন্ধ হয়ে গেলো। আমার ভিতরটা এখনো কাপছে। মনে হচ্ছে এখনি হৃদপিন্ডটা বাষ্টো হবে। এতোটুকু পর্যন্ত লিফটটা ঠিকি চলছে ভেবে ভিতরে একটু সাহস পাচ্ছি। হাফ ছেরে যেই একটু স্বাভাবিক হলাম সাথে সাথে লিফটের লাইট অফ হয়ে গেলো। অনেক ঘাবড়ে গেলাম। লাইট আবার অফ হলো কেনো?মনে হচ্ছে আবার সেই ঘটনাগুলো আমার সাথে ঘটতে চলেছে। লাইটটা আবার জ্বলে উঠলো,,,আবার নিবে যাচ্ছে। খুব কান্না পাচ্ছে। কেনো আবার লিফটে উঠতে গেলাম। ইয়া আল্লাহ বাচাও। চোখ বন্ধ করে লিফটের এক কোনায় দাঁড়িয়ে কান্না করছি হঠাৎ লিফটটা খুলে গেলো। চোখ খুলতেই দেখলাম একটা ছেলে লিফটে উঠেছে। আমি লিফট থেকে বের হতে যাবো এমন সময় লিফটটা অফ হয়ে গেলো। আমি লিফটে বারি মারছি আর কান্না করছি৷
-প্লিজ লিফটা কেও খুলুন। প্লিজ,,,
– এক্সকিউজ মি. আপনি ঠিকাছেন?
ছেলেটা ইশার কাছে আসতে নিলে ইশা ভয়ে সড়ে যায়।
আপনি,,আ,,আ,,আপনি,,,সেই ভুত তাই না।
মেয়েটার কি হলো কিছু বুঝতে পারছি না। মেয়েটা আমাকে দেখে খুব অদ্ভুত আচরন করছে। মনে হচ্ছে আমি বাঘ ভালুক,, এখনি ওকে গিলে খাবো। মেয়েটাকে শান্ত করার চেস্টা করে বললাম,,দেখুন আপনি কান্না থামান। আমি আপনার কোনো ক্ষতি,,,আর কিছু বলতে পারলাম না তার আগেই মেয়েটা ওর হাতের ছোট ব্যাগটা নিয়ে আমাকে মারা শুরু করলো।
– যা এখান থেকে যা,,আমাকে খেতে এসেছিস কেনো? আমি তোর কি করেছি,,,আমাকে খেলে আমিও তোকে খেয়ে ফেলবো। মেয়েটা কান্না করতে করতে অদ্ভুত কীসব কথা বলছে আর ব্যাগ দিয়ে কন্টিনিউসলি আমাকে মারছে। লিফটা গ্রাউন্ড ফ্লোরে আসতেই খুলে গেলো আর সাথে সাথে মেয়েটা ওর ব্যাগটা আমার উপর ছুরে মেরে দিলো এক দৌড়।
আমি মেয়েটার ব্যাগ হাতে নিয়ে ওর পিছু যাবো এমন সময় পিছন থেকে জেনি আমার হাত ধরে বললো,,,
-উফ অভি আর কতো লেট করাবে,,,কতোক্ষন ধরে ওয়েট করছি,,,,

চলবে,,,,

#দ্যা_লিফট
#পর্ব_০৩
#Writer_Shanta_islam

-জেনি তুমি?
– কি হয়েছে? এভাবে কার পিছু ছুটছো?
– ওই যে লিফটে ওই মে,,,
-উফ রাখো তো তোমার লিফট এতোক্ষণ লাগলো নিচে নামতে? এখন চলো এমনিই অনেক দেরি হয়ে গেছে।
-কিন্তু জেনি,,
-প্লিজ অভি প্রতিবারের মতো আজো না করো না। আজ তো অফিস বন্ধ ফ্রি আছো। সেই অন্ধকার ঘরে থাকতে তোমার দম বন্ধ করে না।
অভি কিঞ্চিৎ মলিন হাসি হেসে বললো-দম বন্ধ? নিশ্বাস তো সেদিনি বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো যেদিন,,,অভি পুরো কথা বলার আগেই জেনি অভিকে বাধা দিয়ে কথা ঘুড়িয়ে বললো-আচ্ছা ঠিকাছে বেশিক্ষণ ঘুরবো না। বিকেলের মধ্যে ফিরে আসবো। জেনি জানে অভি কি বলতে চাইছে। আবার ওসব কথা মনে পড়লে অভির মন খারাপ হয়ে যাবে।
জেনিকে অভি না করতে পারলো না। জেনি অভির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো।

-ইশা দৌড়ে বাসায় এসে কম্বলের নিচে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। কম্বলের তলে ইশা কাপছে আর জোরে জোরে বলছে-“লা ইলাহা ইল্লালাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” “লা ইলাহা ইল্লালাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”
ইশাকে এভাবে কম্বলের নিচে কাপাকাপি করতে দেখে সাদ একটা লাঠি নিয়ে ইশাকে ঘুতো দিয়ে বললো-কিরে তোকে কি আবার ভূতে ধরেছে?
ইশা কম্বল পেচানো অবস্থায় কাপছে আর সাদের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বললো-লাথি খেতে না চাইলে যা এখান থেকে।
সাদ পকেট থেকে চার পাচটা শুকনো মরিচ বের করে বললো-এই দেখ এগুলো কী? যেদিন থেকে তোকে ভুতে ধরেছে সেদিন থেকে এই মরিচগুলো পকেটে নিয়ে গুরছি। বেশি পটর পটর করবি নাকের মধ্যে ডলা দিয়ে দিব এক দৌড়।
সাদ সুযোগের সদ ব্যবহার করছে। আমাকে নরম পেয়ে এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আমার উপর প্রতিশোধ তুলছে।
সাদের কান্ড দেখে ইশা ভয় পাবে কি ওর মেজাজ যাচ্ছে বিগড়ে। ইশা আবার সাদকে বললো,,দেখ সাদ মেজাজ খারাপ করবি না যা এখান থেকে।
সাদ ইশার উপর শুকনো মরিচ ছুরতে ছুরতে বললো,,যাবো না কী করবি?
-তুই যাবি তোর বাপও যাবে।
– আমার বাপ তোর কি হয়?
-আমার খালু হয়। তুই যাবি নাকি দিলাম,,, কথাটা বলে যেই ইশা সাদকে মারার জন্য তেরে আসে সাদ এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
ইশা আবার কম্বলের নিচে ডুকে দোয়া দূরুত পড়তে থাকে। এমন সময় ইশার মা লাঠি হাতে নিয়ে ইশার রুমে আসে-কিরে তুই নাকি তোর বাবাকে খালু ডেকেছিস?
ইশা কম্বল মুড়ি দিয়েই বলতে লাগলো-হ্যাঁ ডেকেছি ত,,ত,,ত,,,কম্বল খুলে উকি মারতেই ইশা ওর মায়ের হাতে লাঠি দেখে তোতলাতে থাকে।
-আস্তাগফিরুলা আস্তাগফিরুলা মা ছি ছি কি বলছো? আমি বাবাকে খালু ডাকতে যাবো কেনো?
-মিথ্যে কথা ইশাপু বাবাকে খালু ডেকেছে। আমার কাছে প্রমান আছে। সাদের কাছে কোনো প্রমান নেই তবুও সাদ ইশাকে মার খাওয়ানোর জন্য যতটুকু পারছে চেস্টা করছে।
-কি প্রমান দে দেখি।
সাদের কাছে যে কোনো প্রমান নেই ইশা এটা ভালো করেই জানে তাই ইশা ওর মার কথায় সায় দিয়ে বললো,,হ্যাঁ হ্যাঁ দে দেখি প্রমান দে।
সাদ চোখ উল্টে কথা ঘুড়িয়ে বললো,,,আজ থাক অন্য একদিন প্রমান দিব। কথাটা বলেই সাদ রুম থেকে উধাও।
-দেখেছো মা তোমার ছেলের কান্ড দেখেছো। মন চায় চার পাচটা কানের নিচে লাগিয়ে দেই।
– ওকে ছাড় তুই এই ভরা দুপুর বেলা কম্বল মুড়ি দিয়ে আছিস কেনো?
ইশা ওর মাকে লিফটের কথা বলতে যেয়েও থেমে যায়। কি বলবে ইশা? ওর মা তো ওর কথা বিশ্বাস করে না। অবশ্য আজ সেদিনের মতো ভয়ংকর কিছু না ঘটলেও ভুতটাকে তো দেখেছে সে। লাইট অন অফ হয়ে ভুতটা কীভাবে লিফটের মধ্যে ডুকলো। না না আজ কোনো দূঃস্বপ্ন দেখেনি ইশা। ওটা নির্ঘাত ভুতি ছিলো। কথাগুলো মনে পড়তেই শরীরের কাটা দিয়ে উঠছে।
-কিরে ওভাবে ওখানে তাকিয়ে কি ভাবছিস?
মায়ের কথায় হুসে ফিরলেও ইশার ভিতরে ভয়টা থেকে যায়।
-কই কি ভাবছি? কিছু ভাবছি না।
– যা রান্না ঘরে থালা বাসন পড়ে আছে ওগুলো ধুয়ে আয়।
-ওরে আল্লাহ মা শরীরটা এমন কাপছে কেনো? মনে হয় জ্বর আসবে। জ্বর আসবে কি এই দেখো এসে গেছে। কম্বল মুড়ি দিয়ে আছি দেখছো না। উফ কি শীত। ওরে বাবারে দেও তো আরো একটা কম্বল বের করে দেও।
– এরে তুই কী আমাকে বোকা পেয়েছিস? তোকে আর তোর ভাইকে আমার ভালো করে চিনা আছে। জলদি উঠ নাহলে এখনি দিলাম লাঠির বারি। ইশার মা লাঠি উচু করতেই ইশা দৌড়ে রান্না ঘরে চলে যায়।
-কি দিন এলো রে বাবা ইন্টার পড়ুয়া মেয়েকে এখনো যদি মার খেতে হয়। এর জন্যই বলে পৃথিবী ধংস হতে বেশি দিন বাকি নেই।
ইশা সেদিন আর বাসা থেকে বের হয়নি। রাতে ঘুমোনোর আগে ভূত ভাগানোর যতেষ্ট দোয়া দূরুত পাঠ করেছে সে। দোয়া পড়তে পড়তে চোখের পাতাগুলো বন্ধ হয়ে যায়।

ইশা চোখ খুলতেই দেখে চারোদিকে অন্ধকার ছেয়ে আছে। এটা কোন জায়গা? এতো অন্ধকার কিছু দেখা যাচ্ছে না। একটু এগোতেই আলো দেখা যাচ্ছে। ইশা আলোর দিকে ছুটতে থাকে। আলোর কাছে আসতেই খুব অদ্ভুত একটা জায়গা দেখা যাচ্ছে। চারোদিক গাছের শিকরে ভরা। আগের জামানায় যেমন ব্লাক এন্ড ওয়াইট মুভির কালার ছিলো ঠিক তেমনটা এখানকার পরিবেশ। বিদঘুটে গন্ধ। একটা গাছে লাল আঠালো কিছু লেগে আছে। না একটা গাছে নয় খেয়াল করলাম বেশ কয়েকটা গাছে এমন আঠার মতো কিছু লেগে আছে আবার টপ টপ করে পানির মতো পরছে। এগুলো কি রক্ত? না রক্ত নয়। জাগাটা খুব চিনা পরিচিত। এখন হয়তো আমার ভয় পাওয়া উচিৎ কিন্তু আমার ভালো লাগছে। শরীরে খুব শক্তি অনুভব করছি। এমন মনে হচ্ছে এটা আমার রাজ্য এখানে আমি যা খুশি তাই করতে পারবো। এই অদ্ভুত জাগাকে ভালো লাগার কারণ খুজে পাচ্ছি না। এমন অদ্ভুত জাগা কোনো মানুষজাতির পছন্দ হবে বলে মনে হচ্ছে না। আমার কেনো পছন্দ হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি না। আর একটু সামনে এগোতেই যা দেখলাম এটা দেখার পর হয়তো আমার দৌড়ে পালানো উচিৎ কিন্তু আমি তা না করে সেই ভয়ংকর প্রানীটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ওটা কিছু খাচ্ছে। যত এগিয়ে যাচ্ছি ততোই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ওটা একটা মানুষ চিবিয়ে খাচ্ছে। আমার এখন ভয় পাওয়া উচিৎ। শরীর আর মনের প্রতি কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছি। ভিতরে কোনো ভয় নেই। ভয়বিহীন সেই প্রানীটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যেখানে আমার পালানো উচিৎ সেখানে আমি সেই ভয়ংকর প্রানীটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ওটার কাছে যেতেই আমার পায়ের শব্দে ওটা আমার উপস্তিতি বুঝতে পারে। খাওয়া রেখে সে আমার দিকে ফিরে তাকাতেই নিজ থেকে আমার ঠোঁটের কোনায় মুচকি হাসি ফুটে উঠে। এমন মনে হচ্ছে আমি আমার শিকার খুজে পেয়েছি যাকে মেরে আমার তৃপ্তি মিটবে। এটা কি ভুত নাকি অন্য কিছু? দাতগুলো অনেক বড় বড় দেখতে খুব ভয়ংকর। ওটা লেজ দিয়ে আমার উপর আক্রমণ করতে নিলে আমি আমার একটা হাত দিয়ে ওর লেজ ধরে ফেলি। এতো বড় প্রানীর লেজ ধরা আমার শক্তির বাইরে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে আমি প্রানীটির লেজ ধরেছি এবং তাতে আমার বিন্দু মাত্র কস্ট হচ্ছে না। প্রানীটার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে৷। বুঝা যাচ্ছে ওটা আমার উপর রেগে যাচ্ছে। প্রানীটা তার ডাইনাসরের মতো বড় বড় নখগুলো দিয়ে আমার হাতে আক্রমণ করে আর সাথে সাথে আমার হাতে কয়েকটা আচর লেগে যায়। আমি পিছু না যেয়ে আমার হাত দুটো উপর করে আগুল মচরাতেই দূর থেকে প্রানীটাও মচরাতে থাকে। এমন মনে হচ্ছে আমার মধ্যে কোনো শক্তি আছে। যেটার মাধ্যমে আমি কিছু না ধরেও ওটাকে ছিরে ফেলতে পারবো। ওটার সামনে ছিরে ফেলার মতো আমার দুই হাত দু দিকে করতেই প্রানীটার দেহ দু দিকে ছিরে গেলো। গলা কাটা মুরগী মারা যাওয়ার সময় যেমন ছটফট করে প্রানীটার বিছিন্ন শরীর দুটোও ছটফট করছিলো। আমি এগিয়ে যেয়ে প্রানীটার শরীর থেকে থলির মতো কিছু একটা বের করে ওটা থেকে রক্ত শুষে নিচ্ছি। আমার সাথে এগুলো কি হচ্ছে? ছি আমি একটা প্রানীর রক্ত খাচ্ছি। এটা কীভাবে সম্ভব। না আমি না এটা আমি,,,,,
হঠাৎ চোখ দুটো বন্ধ করতেই মাথাটা কেমন ঘুরতে লাগলো। আতকে চোখ খুলে দেখি আমি বিছানায় শুয়ে আছি। শরীরটা ব্যাথা করছে। যাক এটা দূঃস্বপ্ন ছিলো। খুব পিপাসা পেয়েছে। বিছানা ছেরে লাইট অন করতেই দেখি আমার ডান হাতে রক্ত ভরা। এগুলো কীসের রক্ত? হাতটা প্রচুর ব্যথা করছে। নাড়াতে পারছি না। চোখ মুছে ভালো করে হাতের দিকে তাকাতেই দেখলাম হাতের মধ্যে চার পাচটা আচড় লেগে আছে। সেখান থেকেই রক্ত ঝড়ছে। এটা দেখার পর আমি চিৎকার দিয়ে উঠি। আমার চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে আমার রুমে চলে আসে।
-কি হয়েছে ইশা? তোর মুখে রক্ত কীসের?
মার কথা শুনে মুখে হাত রাখতেই ঠোঁটে পানির মতো কিছু অনুভব করলাম। দৌড়ে আয়নার সামনে যেতেই দেখলাম আমার মুখে রক্ত লেগে আছে।
-তার মানে ওটা স্বপ্ন নয়?

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here