#দ্যা_লিফট
#পর্ব_০৪,০৫
#Writer_Shanta_islam
পর্ব_০৪
হাসপাতালের বেডে সুয়ে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ভাবছি কাল রাতে যা ঘটেছে তা যে মোটেও স্বপ্ন নয় এটার জলজেন্ত উদাহরণ আমার হাত। আচরগুলো বেশ তীক্ষ্ণ ভাবে লেগেছে। যেভাবে স্বপ্নে ভুতটা কেটেছিলো হুবহু সেভাবেই কাটা। এটা যদি শুধু স্বপ্নই হতো তাহলে হাতে আচর আর মুখে রক্ত আসলো কি করে। ভেবে কুল পাচ্ছি না আমার সাথে এগুলো কি হচ্ছে। কেনোই বা হচ্ছে? যত ভাবছি ততোই মাথায় যন্ত্রণা করছে। আর এদিকে আমার পাশে বসে সাদ রাজকীয় হালে আঙ্গুর গিলছে।
”ননসেন্স কোথাকার” এতোটুকু জ্ঞান নেই যে ফলগুলো রোগী মানে আমার জন্য আনা হয়েছে। তার বোনের এতো বড় দূর্ঘটনা ঘটে গেলো তার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। গা জ্বলে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে এখনি একটা লাথি মেরে ফেলে দেই।
মা এসে আমার পাশে বসে কঠোর গলায় বললো,ভালোই হয়েছে,কতোবার বলেছি ঘুমোনোর আগে জানালাটা বন্ধ করে ঘুমোবি নাহলে বিড়াল চলে আসে। কে শুনে কার কথা। এখন ভালো লাগছে তো?
-দূর জ্বালা,কীভাবে বুঝাই এই কাজ কোনো বিড়ালের নয়। কাল রাতে একটা ভুত মেরে তার রক্ত গিলেছি এটা মা কখনোই বিশ্বাস করবে না। শুধু মা কেনো, কোনো সুস্থ মানুষি এ কথা বিশ্বাস করবে না।
মা কতোক্ষন ঘ্যানঘ্যান করে আবার ডাক্তারের সাথে কথা বলতে চলে গেলো। আজ মনে হয় রিলিজ দিবে।
কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না। বাসাটাও এখন সেফ নয়। লিফটের মতো বাসাতেও একি অবস্থা। একবার মাকে বলতে চেয়েছিলাম ফকির টকির দেখাবো। যদি আসল কেস ধরতে পারে। আমার এই অবস্থা কোনো নারমাল মনুষ্য বুঝবে বলে মনে হয় না। ফকির কবিরাজ যদি বুঝতে পারে। কথাগুলো ভাবছিলাম হঠাৎ খেয়াল করলাম সাদ আমার দিকে কেমন সন্দেহ ভাজন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-কি হয়েছে এভাবে পেচার মতো তাকিয়ে আছিস কেনো?
সাদ একটা আঙ্গুর আমার মুখের সামনে এনে বললো,, খা। বিশ্বাস হচ্ছে না সাদ আমাকে খেতে বলছে। আমি আমার ভাইকে এতোদিন ভুল বুঝেছি। হাজার হোক সে আমার ভাই আমার কিছু হলে তার কস্ট তো হবেই। আমার প্রতি সাদের এমন কেয়ার সুলভ স্বভাব দেখে খুব ভালো লাগলো। খুশিতে চোখে জল চলে এলো এলো ভাব। আ করে আঙ্গুরটা মুখে দিতেই সাদ খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। সাদ শুধু একা হাসছে না পাশে থাকা নার্সটাও হাসছে। ওদের এভাবে হাসার কারণ বুঝলাম না। বিষয়টা জানার জন্য আমি মাথা নাড়িয়ে নার্সকে জিজ্ঞেস করলাম কি হলো? নার্স স্যালাইনে ইঞ্জেকশন দিতে দিতে বললো, তোমার ভাই ওই আঙ্গুরটা চেটে দিয়েছে তুমি খেয়াল করো নি?
সাথে সাথে ওয়াক ওয়াক করতে করতে মুখ থেকে আঙ্গুরটা বের করে ফেললাম।
-কুত্তার বাচ্চা, দেখছিস আমি অসুস্থ তবুও তোর ফাজলামো যাচ্ছে না। কথাগুলো বলেই একটা লাঠি খুজতে লাগলাম। সাদ বললো,আরে থাম থাম লাঠি খোজা লাগবে না। তোকে একটু টেস্ট করে দেখলাম,যে তুই এই দুনিয়ায় আছিস নাকি অন্য দুনিয়ায় চলে গেছিস।
এমনিতেই ভালো লাগছে না তার উপর সাদের এমন ফাজলামো। অন্য দিন হলে হয়তো ওকে মেরে শোধ তুলতাম। কিন্তু আজ সাদকে কিছু বললাম না। বেডে সুয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
-ইশাপু তুই ঠিকাছিস?
সাদ হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি ভালো নেই। তাই এভাবে জিজ্ঞেস করলো। আমি কিছু বললাম না। সাদ আমার হাত ধরে বললো,ইশাপু তোর কিছু একটা হয়েছে, আন্দাজ করতে পারছি সিরিয়াস কিছু?
আমি সাদের কথাশুনে নিজেকে আর আটকাতে পারলাম না। চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় হু হু করে কেদে ফেললাম।
-আপু দেখ এভাবে কাদিস না। মা এসে দেখলে ভাববে আমি তোকে কাদিয়েছি পরে আমাকে ক্যালানি খেতে হবে।
-সাদ আমি সত্যি ভালো নেই। আমার সাথে এসব কি কি হচ্ছে,কেনো হচ্ছে তা আমি নিজেও জানি না৷
-আপু আগে তুই শান্ত হ। শান্ত হয়ে আমাকে সবটা খুলে বল।
কি করবো? সাদকে সবটা খুলে বলবো? সাদ যদি বিশ্বাস না করে? কিন্তু ভিতরে এতো বড় কথা লুকিয়ে রাখতেও পারছি না। ভিতরটা কেমন ভার ভার হয়ে আছে। দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে সাদকে বললাম, লিফটের ঘটনাটা কোনো হ্যালোসিয়েশন ছিলো না সাদ, পুরোটাই সত্যি ঘটনা৷
– এসব কি বলছিস আপু?
– হ্যাঁ সত্যি বলছি, ইনফেক্ট আমার হাতের এই অবস্থা কোনো বিড়াল করে নি। সাদকে সেদিন রাতের স্বপ্নে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বললাম। সাদ আমার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
– তুই হয়তো এ মূহুর্তে আমাকে পাগল ভাবতে পারিস কিন্তু লিফটে ঘটে যাওয়া ঘটনা আর এখন ঘটা ঘটনাগুলো সত্যি। সাদ আমার কথাগুলো শুনে কিছু একটা চিন্তা করে বললো, তুই বলছিস স্বপ্নে তুই ভুতের রক্ত খেয়েছিলি। কিন্তু ভুতের রক্ত হয় কীভাবে? এজীবনে কখনো শুনিনি ভুতের রক্ত আছে।
সাদের কথায় বুদ্ধিহীন মস্তিষ্কের টনকটা নড়ে উঠলো। সত্তিই তো ভূতের রক্ত হয় কীভাবে? এর মানে ওটা কোনো ভূত প্রেত ছিলো না? কিন্তু সেটা যে স্বপ্নও নয় এটা কীভাবে বলি?
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেরে নীচু স্বরে বললাম, হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। আসলে সবি আমার হ্যালোসিয়েশন নাহলে এমন অবাস্তব ঘটনা ঘটে নাকি?
-হ্যা ঘটে,,
সাদের কথা শুনে কিছুটা চমকে উঠলাম আমার সাথে সাথে ছেলেটারও মাথাটা গেছে নাকি?
-পাগল হয়েছিস নাকি?
-দেখ আপু এটা যে কোনো বিড়ালের আচর নয় তা আমি সিওর কারণ বেড়াল যদি আচর কাটতো তাহলে আচরের দাগ এতো বড় বড় হতো না। তাছাড়া তোর হাতেই কেটেছে মুখে কাটেনি অথচ মুখেও রক্ত লেগেছিলো ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত লাগছে না।
-সাদের পয়েন্টগুলো মারাত্মক সত্যি। কিন্তু এটা যদি ভূত না হয় কিন্তু ভূতের মতো সব একটিভিটি করছে এটা কি হতে পারে?
-সাদ তুই কি কিছু আন্দাজ করতে পারছিস?
– না কিছু আন্দাজ করতে পারছি না। তবে এটা আন্দাজ করতে পারছি তোর সাথে যা কিছু হচ্ছে সব প্যারানরমাল। আর হয়তো সবকিছুর মূলে রয়েছে ওই লিফট।
সাদ ঠিকি বলছে যবে থেকেই লিফটের ওই ঘটনাটা ঘটেছে তবে থেকে আমার সাথে এসব প্যারানরমাল ঘটনা ঘটছে। কি হয়েছে? কেনো হয়েছে? বা এরপর কি আরো এমন কিছু হবে কি না জানি না। কিন্তু ভিতরটা অনেক হালকা লাগছে। সাদ আমার কথাগুলোর উপর বিশ্বাস করেছে এটাই অনেক।
,
,
প্রায় পাচ দিন হয়ে এলো বাসা থেকে বের হয়নি। নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্ধি করে নিয়েছি। নেহার আম্মুকে মানা করে দিয়েছি নেহাকে আর পড়াতে পারবো না। কিছুই ভালো লাগে না। মাঝে মধ্যে সাদ এসে খোচা মেরে চলে যায় কিন্তু আগের মতো রেসপন্স করি না। শরীরের ভিতর অদ্ভুত অনুভূতি হয়। যা প্রকাশ করতে পারছি না। ইদানীং শরীরে কিছু পরিবর্তনও লক্ষ্য করছি। তাপ একেবারে সহ্য করতে পারি না। কখনো কখনো মনে হয় ফ্রিজের মধ্যে ডুকে যাই। এই তো সেদিনের ঘটনা। মা বললো রান্না ঘর থেকে চামুচ নিয়ে আয়। চুলোয় তরকারি বসানো ছিলো। রান্না ঘরে ডুকতেই শরীরটা জ্বলে যাচ্ছিলো। এমন মনে হয়েছে কেও আমার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এর আগে কখনো এমনটা হয়নি।
ইদানীং প্রচুর তৃষ্ণা পায়। পানি খাই তবুও কাজ হয় না। মনে হয় আমার অন্য কিছু চাই যা সামান্য পানিতে মিটবে না।
সুয়ে সুয়ে হুমায়ুন আহমেদের একটা বই পড়ছিলাম এমন সময় মা এসে বললো,এভাবে ঘরে বসে বসে প্রতিবন্ধী হতে চাস? যা ছাদে যেয়ে কাপড়গুলো নিয়ে আয়।
অনেকদিন হলো ছাদে যাওয়া হয় না। তেমন একটা আলো-বাতাসও লাগানো হচ্ছে না। ভাবলাম যাই বসে না থেকে কাপড়গুলো নিয়ে আসি, এ ফাকে ছাদ থেকে ঘুরে আসাও হবে। চাইছিলাম সাদকে সাথে নিয়ে যাবো। কিন্তু পড়শু জনাবের এসএসসি তাই একাই ছাদে উঠলাম।
আজকের আবহাওয়াটা বেশ চমৎকার,পরন্ত বিকেলে সূর্য হেলে পড়েছে। শীতের বাতাস সাই সাই করে বইছে। অন্য দিন হলে কাপাকাপি শুরু করতাম। অদ্ভুত হলেও সত্ত্য এখন ঠান্ডায় কমফোর্ট ফিল করি। কিছুক্ষণ মনোরম দৃশ্যটাকে পর্যবেক্ষণ করে কাপড়গুলো উঠাতে শুরু করলাম। হঠাৎ বাবার লুঙিটা টান দিতেই লিফটের সেই ভুতটাকে দেখতে পেলাম। মাথাটা গুল্লি দিয়ে চারোদিকে কেমন অন্ধকার ছেয়ে এলো,,,
অভি ওদের ছাদ থেকে দেখতে পেলো ইশা অভিকে দেখে বেহুশ হয়ে পড়ে গেছে। অদ্ভুত একটা মেয়ে,
সেদিন লিফটে কোনো কারন ছাড়াই আমাকে মেরে পালালো আবার এখন আমাকে দেখা মাত্রই বেহুশ হয়ে গেলো। মেয়েটার মাথায় গন্ডগোল আছে হয়তো। অভি কিছুক্ষণ ইশাকে ডেকে উঠানোর চেস্টা করলো কিন্তু কোনো কাজ হলো না।
-কি করবো বুঝতে পারছি না এভাবে একটা মেয়েকে ফেলে রেখে যাওয়াও যাচ্ছে না।
অভিদের ছাদ আর ইশাদের ছাদ পাশাপাশি হওয়ায় এক লাফে এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে যাওয়া যায়। অভি লাফ দিয়ে ইশাদের ছাদে এসে ইশাকে কোলে তুলে নিলো,,,
চলবে,,,
#দ্যা_লিফট
#পর্ব_০৫
#Writer_Shanta_islam
অভি সাদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে ইশার মা আহাজারি কান্না করছে। সাদ একটু পর পর অভির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে অভি আর দারোয়ান ইশাকে ওদের বাসায় নিয়ে এসেছে। গেট ফাকা তাই দারোয়ান অভিকে রেখে তার কাজে চলে যায়। অভি এক গ্লাস পানি ইশার মার হাতে ধরিয়ে বললো,,পানি ছিটিয়ে দিন। পাশ থেকে সাদ বলে উঠলো লাভ নেই,এই এক মাসে ও যতবার বেহুশ হয়েছে একবারো পানিতে কাজ হয় নি। এবারো হবে না।
সাদের কথাশুনে ওর মা চোখ রাঙিয়ে সাদের দিকে তাকিয়ে বললো,,তোর বাবাকে ফোন দিয়ে বল ইশা আবার বেহুশ হয়েছে।
-ব্যালেন্স নেই।
সাদের মা পা থেকে জুতোটা খুলতে নিলে সাদ তারাতাড়ি পকেট থেকে ফোনটা বের করে ওর বাবাকে কল দেয়,,হ্যালো হ্যা,,তোমার মেয়েতো আবার বেহুশ হয়েছে। আসার সময় সাথে করে একটা এম্বুল্যান্সের গাড়ি নিয়ে এসো। এবার সাদের উপর ধরাম করে একটা জুতো পড়লো।
মেয়েটার ব্যাপারে আমার ধারনা ভুল ছিলো। মেয়েটা একাই অদ্ভুত নয় ওদের পুরো ফ্যামিলিটাই অদ্ভুত।
তাদের মেয়ে বেহুশ হয়েছে অথচ এদের কান্ড কারখানা দেখে পাবনার পাগলের থেকে কম মনে হচ্ছে না। সাদের কথাগুলো শুনে বুঝা যাচ্ছে ইশা নামে মেয়েটা এর আগেও এভাবে অনেক বার বেহুশ হয়েছে। অদ্ভুত মেয়ে কিছু বলা যায় না কখন কি করে বসে। এখানে থেকে আমার কাজ নেই। তাই কেটে পড়াটাই ভালো।
-আন্টি আমি আসি।
–তোমার নামটা যেনো কি বললে বাবা?
-অভি,,,
–তুমি আমাদের পাশের ফ্লাটে থাকো না?
-জি আন্টি,,
-তুমি না থাকলে আমার মেয়েটার যে কি হতো। ওভাবেই ছাদে বেহুশ হয়ে পড়ে থাকতো। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ বাবা।
– ধন্যবাদের প্রয়োজন নেই আন্টি। ওর জায়গায় অন্য কেও হলে আমি এটাই করতাম। আজ তাহলে আসি।
-সেকি বাবা তুমি এভাবে কিছু মুখে না দিয়ে চলে যাচ্ছো। একটু বসো এখনি আসছি।
-আরে না এন্টি আমি,,,
অভি পুরো কথাটা কমপ্লিট করার আগেই ইশার মা জোরপূর্বক বসতে বলে চলে যায়।
সাদ অভির দিকে কেমন সন্দেহ ভাজন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা যেভাবে তাকিয়ে আছে চোখে চোখ পরতেই আন-কমফোর্টেবল ফিল হচ্ছে। একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেস্টা করে ছেলেটার সামনে ডান হাতটা এগিয়ে দিয়ে বললাম,,হায় আই এম অভি!
ছেলেটা একটু তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে তার হাতটাও আমার দিকে বারিয়ে দিয়ে বললো,,,আমি সাদ।
সাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর সাদ আমার সাথে ফ্রি হলো। কথায় কথায় সাদকে জিজ্ঞেস করে ফেললাম,,তোমার বোনের কী মাথায় সমস্যা আছে।
প্রশ্নটা করে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। এটা কী করলাম? একজন ভাইয়ের কাছে তার বোন সম্পর্কে এমন অপ্রীতিকর প্রশ্ন করাটা যুক্তিযুক্ত নয় তা আমার আগে ভাবা উচিত ছিলো। ভেবেছিলাম সাদ হয়তো প্রশ্নটা শুনে রিয়েক্ট করবে। কিন্তু আমাকে ভুল প্রমান করে সে কৌতুহলি স্বরে বললো,,
-আমার কাছে ও জন্ম থেকেই পাগল। কিন্তু ইদানীং ও অবাস্তব সব কথা বলে। ও নাকি অন্য দুনিয়ায় চলে গিয়েছিলো যেখানে মানুষের রুপ ধরে ভূত রক্ত খায়, মানুষ খায়। সব উল্টো পাল্টা কথা। আগে এমন ছিলো না। কিন্তু রিসেন্ট এসব কথা বলছে। বাবা এই নিয়ে পাচটা সাইকোলজিস্ট দেখিয়েছে। সবাই বলছে অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারনে এমনটা হচ্ছে। কিন্তু মাঝে মাঝে ওর কথাগুলো সত্ত্য মনে হয় কারন ইশাপুকে আমার থেকে ভালো কেও চিনে না। ও কখন সত্যি বলে আর কখন মিথ্যা বলে সেটা আমি পরক্ষ করে বলতে পারি।
সাদের কথাগুলো শুনে পুরোনো কিছু সৃতি আবার ভেসে উঠলো। সাদ কি বলতে চাইছে? মানুষের রুপ ধরে রক্ত খায়। বিষয়টা আমার কাছে কেমন জেনো খটছে। তিন বছর পর আবার সেই পুরোনো সৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠছে। না না এসব আমি কী ভাবছি। এই ঘটনার সাথে আগের ঘটনার কোনো মিল নেই। না অভি এসব নিয়ে আর ভাবা যাবে না। ভাবতে ভাবতেই জীবনের মূল্যবান মানুষটাকে তুই হারিয়েছিস আর না।
-আল্লাহ রেএএএএএ,,,ভুত,,ভুত,,,ভুত
সাদ আর অভি কথা বলছিলো হঠাৎ ইশার জ্ঞান ফিরে আচমকা অভিকে দেখায় ইশা আতকে উঠে।
– আল্লাহ বাচাও,,,লা ইলাহা ইল্লালাহ,,লা ইলাহা ইল্লালাহ।
– আপু থাম উনি,,,
ইশা ওর বিছানার পাশে থাকা ঝাড়ুটা নিয়ে অভিকে পিটাতে থাকে। ঝাড়ুটা সাদ ইশার জন্য রেখেছিলো। ছোট বেলায় নানু ভাইয়ের কাছে সাদ শুনেছে ঝাড়ু আর জুতোর মালা বানিয়ে রাখলে ভূত আশে পাশেও আসে না। ইচ্ছে ছিলো ইশাকে জুতোর মালা পড়াবে। কিন্তু তা করলে মা আগে ওর কপালে জুতো মারবে। তাই উপায় না পেয়ে সাদ বাসার সব কটা ঝাড়ু আর জুতো ইশার খাটের তলায় রেখে দিয়েছে। কিন্তু মিস্টেকে একটা ঝাড়ু বিছানার উপর রয়ে গিয়েছিলো। সে ঝাড়ু দিয়েই ইশা অভিকে পিটাচ্ছে।
-আরে,,আরে,,,থামো,,আহ,,উহ,,আহ
ইশা চোখ বন্ধ করে ঝাড়ু দিয়ে অভিকে এক টানা মেরেই যাচ্ছে। অভি উপায় না পেয়ে ইশাদের বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
-পাগল মেয়ে একটা। যখন যেভাবে পাচ্ছে সেভাবেই মেরে যাচ্ছে। একেই বলে উপকারের গারে লাথি। আল্লাহ করুক এই মেয়ের মুখ যেনো আর কখনো দেখতে না হয়।
,
,
-ইশা তুই এটা কি করলি? ছেলেটাকে এভাবে ঝাড়ু মেরে তারালি কেনো?
-মা ও কোনো ছেলে নয়,,
ইশার কথায় সাদ ঠাট্টা করে বললো,,এখন বলবি অভি ভাই ছেলে নয় হিজলা। সাদের মা ওর গালে একটা চড় মেরে বললো,,বেশি বেরে গেছিস। যা পড়তে বয়। সাদ গালে হাত দিয়ে ওর রুমে চলে যায়।
-এমন বেয়াদবির মানে কী ইশা?যে ছেলেটা তোর সাহায্য করলো তুই তাকেই ঝাটা পেটা করে বের করলি।
-কিন্তু মা ও তো মানুষ নয়। ও একটা ভূত,,সেদিন লিফটে লাইট অন অফ হওয়ার পর,,,,
-রাখ তোর লিফট,,সব সময় সেই লিফট লিফট। ও ভূত হলে তোকে অজ্ঞান দেখে আমাদের বাসায় নিয়ে আসতো না।
মায়ের কথা শুনে কিছুটা অবাক হলাম। উনিই আমাকে বাসায় নিয়ে এসেছে? তাহলে আমিই ভুল ছিলাম। উনি কোনো ভূত নয় মানুষ। ইস ইশা কি করলি এটা? এখন হয়তো ছেলেটা নির্ঘাত ভাবছে আমি পাগল।
-অভির সাথে দেখা হলে ওর কাছে ক্ষমা চাইবি,,ভারি গলায় কথাটা বলে মা চলে গেলো।
কাল দেখা হলে অবশ্যই ছেলেটাকে সরি বলে দিব। সরি বললে তো কেও ছোট হয়ে যায় না। কয়েকদিন ধরে মা আমার সাথে ঘুমোচ্ছে। আজ নিজ থেকেই বললাম এখন আমি একাই ঘুমোতে পারবো। আজ মাকে আমার সাথে ঘুমোনোর প্রয়োজন নেই। মা আমার সাথে ঘুমোয় বলে সাদ আমাকে ভীতু বলে ভেঙায়। বিরক্ত লাগে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম একাই ঘুমোবো। ঘুমোনোর আগে দোয়া দূরুত যা আছে সব পরে নিয়েছি। এক মগ পানিও এনে রেখেছি। যাতে পিপাসা লাগলে কেও ডিস্টার্ব না হয়। ইদানীং খুব তেষ্টা পায় বিশেষ করে রাতে। কাল কলেজে যাবো। অনেক দিন মিস দিয়েছি। কতোগুলো চাপ্টার জড়ো হয়ে গেছে। এভাবে সাত পাচ ভাবতে ভাবতে চোখের পাতাদুটো ভারি হয়ে এলো।
মাথাটা খুব যন্ত্রণা করছে। চোখ দুটো খুলতে পারছি না। শরীরটা উষ্ণ লাগছে। গলাটাও কেমন ভিজা ভিজা লাগছে এতোদিন যেই তৃষ্ণাটা ছিলো সেটা আর নেই। আজ মনে হচ্ছে তৃপ্তি পাচ্ছি। অনেক কষ্টে চোখ দুটো মেলে দেখি আমি লিফটের ভিতরে। এটা কীভাবে সম্ভব? আমি তো বিছানায় সুয়ে ছিলাম। হাত দিয়ে চোখদুটো কচলিয়ে দেখলাম নাহ আমি লিফটের ভিতরি আছি। হাতে লাল পানির মতো কিছু একটা লেগে আছে। হাতটা নাকের কাছে ধরতেই রক্তের গ্রান পাচ্ছি।
ঘুম ভাঙার পর ইশা নিজেকে রুমের মধ্যে না পেয়ে লিফটের মধ্যে আবিষ্কার করায় অনেকটা ঘাবড়ে যায়। আদ ঘুম চোখে ইশা যখন নিজের হাত রক্তে মাখামাখি দেখে তখন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি। ইশা চিৎকার করে কান্না করতে করতে লিফটে বসে পড়ে। লিফটের চারোদিকে রক্তের ছিটেফোঁটা। এমন মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে এখানে গন হারে মানুষ খুন করা হয়েছে। পুরো লিফট বিদঘুটে গন্ধে ছড়িয়ে আছে। এমন সময় লিফটের দরজা খুলে যায়। ইশা কান্না করতে করতে লিফটের দরজায় তাকিয়ে দেখে অভি দাঁড়িয়ে আছে।
– ইশা তুমি এখানে?
চলবে,,,