দ্যা_লিফট #পর্ব_০৬,০৭

0
777

#দ্যা_লিফট
#পর্ব_০৬,০৭
#Writer_Shanta_islam
পর্ব_০৬

বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলাম হঠাৎ কি যে হলো গভীর রাতে ঘুমটা ভেঙে গেলো। চোখ মেলতেই ভিতরটা কেমন করছিলো। মনে হচ্ছিলো কিছু একটা আমাকে বাহিরের দিকে বার বার টানছে। কোনো এক শক্তি আমাকে বাহিরের দিকে টানছে। খুবি চেনা পরিচিত। সেই উষ্ণ অনুভূতি। নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না। মন বিছানা ইশারা করলেও পা দুটো বাহিরের দিকে ইশারা করছে। জানি না কোন টানে এতো গভীর রাতে আমি বাহিরে বের হলাম। বের হয়ে লিফটের বাটনে ক্লিক করছিলাম কিন্তু লিফট খুলছিলো না। ভাবলাম এতো রাতে বাহিরে বের হওয়ার কোনো মানেই হয় না। তাই আবার বাসায় যাওয়ার জন্য যেই পা দুটো বাড়াবো ওমনি লিফট খুলে গেলো আর লিফটের মধ্যে রক্ত মাখা শরীরে ইশাকে দেখতে পেলাম। ইশা আমাকে কিছু একটা বলার চেস্টা করে বেহুশ হয়ে যায়। এতো গভীর রাতে মেয়েটার হাতে-মুখে এভাবে রক্ত মাখা দেখে অবাক হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ স্পিসলেস হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। মেয়েটা এতো রাতে এই অবস্থায় এখানে কি করছে? ও কি কোনো ভাবে আহত হয়েছে। কথাটা ভাবতেই দৌড়ে ইশার কাছে ছুটে গেলাম। কোথায় ব্লাডিং হচ্ছে বুঝতে পারছি না। হাত মুখ এমনকি পুরো শরীরে রক্ত মেখে আছে। লিফটের চারোদিকেও রক্তের ছিটেফোঁটা লেগে আছে।
ভাবলাম হসপিটালে নিয়ে যাবো। কিন্তু ইশা কোথাও আঘাত পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। অভি ইশার হাত পা ভালো ভাবে চেক করে দেখলো কিন্তু ব্লাডিং হওয়ার মতো কোনো ক্ষত খুজে পেলো না। এভাবে ইশাকে ওদের বাসায় নিয়ে গেলে পরিস্থিতিটা অন্য দিকেও যেতে পারে। সবার আগে আমাকেই প্রশ্ন করা হবে এতো রাতে কোথায় বের হয়েছিলাম? ইশাকে কীভাবে পেলাম। না ওকে এভাবে ওদের বাসায় নেওয়া যাবে না। আগে ইশার কাছ থেকে এ সব কিছুর কারণ জানতে হবে। অভি ইশাকে কোলে করে ওদের বাসায় নিয়ে গেলো।
,
,
জ্ঞান ফিরতেই ইশা নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে। মাথাটা খুব ধরেছে। ভাগিস ওটা স্বপ্ন ছিলো। ইদানীং এতো অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি কেনো? প্রতিটা স্বপ্ন কেমন যেনো বাস্তব মনে হয়। ইশা তার হাত দুটো ভালো করে চেক করছে। না হাতে কোনো রক্ত লেগে নেই। তার মানে ওটা স্বপ্নই ছিলো। ইশা আবারো চাদরটা টেনে চোখ বন্ধ করে।
-উহু উহু
কারো কাশির শব্দ শোনা যাচ্ছে। কিন্তু আমার রুমে কাশবে কে? ইশা চোখ খুলে একটু পাশ ফিরতেই দেখে অভি একটা টেবিলের উপর হেলান দিয়ে চা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
ইশা অভিকে ওর রুমে দেখে ভয় পেয়ে যায়।
ইশাকে দেখে মনে হচ্ছে এখনি একটা চিৎকার দিবে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে অভি কাপ দুটো টেবিলে রেখে ইশার চিৎকার করার আগেই ওর মুখ চেপে ধরে।
-আল্লাহর দোহাই লাগে ভাই চিৎকার করো না। আর হ্যাঁ প্লিজ এবারো মারতে এসো না।
অভি ইশার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিতেই ইশা কাপা কাপা গলায় বললো,,ভূ,,ভূ,,ভূত,,,
অভি ওর আশেপাশে তাকিয়ে বললো,,কই ভূত? কোথায় ভূত?
-আ,,আ,,আ,পনি,,ভূ,,ভূ
-হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না বুঝতে পেরেছি। আমি কোনো ভূত নই। আমি জলজেন্ত একজন মানুষ। অভি ইশার হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে বললো,,এখন বলো তো তুমি এতো রাতে লিফটের মধ্যে ওভাবে পড়ে ছিলে কেনো?
– লিফটের মধ্যে মানে আমি তো আমার রুমে ছিলাম। ইশা নিজের চারোদিক ভালো করে তাকিয়ে দেখে। না এটা ওর রুম নয়। তাহলে এটা,,,
-এটা আমার রুম। তুমি আমার রুমে আছো।
অভির কথা শুনে ইশা ঘাবড়ে উঠে। এবার নিজের দিকে একটু ভালো ভাবে লক্ষ্য করে দেখে ওর গায়ে সাদা গেঞ্জি পড়া। ও রাতে এসব পরে ঘুমায়নি। তাহলে ওর জামা চেঞ্জ করলো কে?
ইশা চায়ের কাপ ছুরে মেরে অভির কলার চেপে ধরে।
-তুই,,তুই,,সয়তান। আমার সাথে কি করেছিস বল।
ইশা অভির অনেক কাছে যেয়ে কথাগুলো বলায় অভি ইশার নিশ্বাস অনুভব করছে। মেয়েটা রেগে গেলে ওর কথা বলার ভঙি অন্য রকম হয়ে যায়। ইশার দু-তিনটে চুল সামনে এসে পরেছে। নাকের ডগাটাও লাল হয়ে গেছে। অভি ইশার লাল নাকের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশা কি বলছে তা তার কান পর্যন্ত পৌচাচ্ছে না। ধারাম করে অভির গালে একটা ঘুশি পড়লো। ইশার ঘুশি খেয়ে অভি হুসে আসে।
-তোর সাহস হয় কি করে তুই আমার সাথে,,,
-আরে দাড়াও দাড়াও মেয়ে। আমাকে মেরে ফেলবে নাকি? আমি তোমার সাথে কিছুই করি নি।
-তাহলে আমি এখানে কীভাবে এলাম। আর আমার জামা চেঞ্জ করেছে কে?
– আমার মা চেঞ্জ করেছে। এখন তো আমাকে মারা বন্ধ করো। অভির কথাশুনে ইশা থেমে যায়।
– কিহ,,,
-তুমি লিফটে রক্ত মাখা অবস্থায় পরে ছিলে। তোমাকে অভাবে দেখে আমি আমাদের বাসায় নিয়ে আসি। মা তোমার জামাকাপড় পাল্টে দেয়। আম্মা একটু অসুস্থ তাই চা দিয়ে রেস্ট নিতে চলে গেছে। বিশ্বাস না হলে তুমি পাশের রুমে যেয়ে আমার মা কে দেখে আসতে পারো।
অভির কথা শুনে ইশার সেই লিফটের কথা মনে পড়ে। হ্যাঁ প্রথমবার যখন চোখ খুলে তখন সে লিফটের মধ্যে রক্ত মাখা অবস্থায় ছিলো। তার মানে ওটা কোনো স্বপ্ন ছিলো না। ওটা বাস্তব ছিলো।
-তাহলে কী এবারো আমি রক্ত খেয়েছি? কথাগুলো ভাবতেই ইশার চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
কিছু একটা ভেবে ইশা নিজেকে শক্ত করে নেয়।
– আপনাকে ধন্যবাদ।
কথাটা বলে ইশা অভির রুম থেকে বের হয়ে আসে।
মেয়েটাকে এমনি এমনি অদ্ভুত বলি না। কখন কি করে বুঝা মুসকিল। অভিও ইশার পিছু নেয়। একি মেয়েটা সিড়ি বেয়ে উপর উঠছে কেনো? ও কি এখন ওর বাসায় যাবে না? মেয়েটা কি করতে চাইছে? অভি ইশার পিছু নিতে নিতে ছাদের উপর উঠে যায়। ইশা ছাদের দেয়ালের উপর উঠতে যাচ্ছে।
-একি মেয়েটা কি সুইসাইড করতে চাচ্ছে?
অভি ইশাকে পিছন থেকে ডাক দেয়,,ইশা কি করছো? থামো,,,
-আপনি এখানে কেনো এসেছেন? চলে যান এখান থেকে,,,
-দেখো ইশা মাথা ঠান্ডা করো। আমার কথা শুনো। তুমি এখান থেকে পড়ে গেলে মারা যাবে। নিচে নেমে আসো।
-বাচতে চাইছে কে? এমন ভয়ংকর জীবন থাকার থেকে না থাকাই ভালো।।
হায় আল্লাহ মেয়েটা তো সুইসাইড করতে চাচ্ছে। কি করি এখন?
-দেখো ইশা তুমি যদি ভেবে থাকো আমাদের মধ্যে উল্টো পাল্টা কিছু হয়েছে আর এর জন্য সুইসাইড করতে যাচ্ছো তাহলে এটা পুরোটাই ভুল৷ আমাদের মধ্যে কিছুই হয় নি।
– আমি জানি অভি। আপনাকে বলতে হবে না। আপনি এখান থেকে চলে যান। কথাটা বলে ইশা এক পা সামনে এগোতেই অভি চেচিয়ে বলে,,ইশা,,ইশা প্লিজ থামো। প্লিজ একটু শান্ত হয়ে ভাবো। তুমি যা করতে চাইছো এতে তোমার ফ্যামিলির উপর কি প্রভাব পড়বে। সবাই বলবে মেয়েটা আত্নহত্যা করেছে হয়তো এর পিছনে কোনো কলংক ছিলো। আরো অনেক কিছু তোমার ফ্যামিলিকে ফেস করতে হবে। তাছাড়া তোমার পরিবারের কথা একবার ভাবো। তারা তোমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছে৷
অভির কথাশুনে ইশা কান্নায় ভেঙে পরে। কাতর কন্ঠে কান্না করতে করতে ইশা বললো-আমি কি করবো অভি? আমার সাথে এসব কেনো হচ্ছে? আমি কী জানোয়ার হয়ে যাচ্ছি?
অভি ইশার দিকে এক হাত বারিয়ে দিয়ে বললো- ঠিকাছে আমি তোমার সব কথা শুনবো। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু কিন্তু তার আগে তোমাকে নিচে নামতে হবে এসো আমার হাত ধরো।
-আপনিও আমাকে পাগল বলবেন।
-না একদমি না। আমরা আস্তে ধীরে শান্ত হয়ে কথা বলবো। তারপর একটা সমাধান খোজার চেস্টা করবো। আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করবো।
ইশা কান্না করছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। অভিকে সব কিছু বললে অভিও তাকে পাগল ভাববে। ভাববে নাই বা কেনো? এসব অবাস্তব ঘটনা কেই বা বিশ্বাস করে? এভাবে পাগল হয়ে বেচে থাকার থেকে মরে যাওয়াও অনেক ভালো।
-ইশা শুনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমার কথাগুলো একটি বার শুনো। তারপর আমি তোমাকে আর বাধা দিব না। আমার জন্য আমার বোন মারা গেছে। ওর মৃত্যুর পিছনে আমি দায়ি। আমি ওকে বাচাতে পারিনি। আমার ব্যর্থতার কারণে টুসিকে বাচাতে পারি নি। আমার একটা ভুলের জন্য আমার বোনটা আজ নেই। টুসির মৃত্যুর পর আমিও অনেক বার সুইসাইড করার চেস্টা করেছি। কিন্তু পারিনি মনে হচ্ছিলো টুসি আমাকে বাধা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর ভাইয়া। সবাই পৃথিবীর সৌন্দর্য বেশি দিন দেখতে পারে না। তাই যতদিন বেচে আছো পৃথিবীর এই সৌন্দর্যকে দেখে নেয়। টুসি নেই ঠিকি কিন্তু আমি আছি। ওর পছন্দের জায়গাগুলোয় আমি যাই। ওকে অনুভব করি। ছোট বোনটাকে নিজের মধ্যে বাচিয়ে রাখার চেষ্টা করি। তাই বলছি এমন কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিও না যেটার কারণে তোমার জীবনটাই শেষ হয়ে যায়। কে জানে হয়তো তোমার জন্য জীবনে এর থেকেও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। ইশা প্লিজ একটি বার আমার হাত ধরো। বিশ্বাস করো আমাকে প্লিজ,,,
ইশা অভির দিকে হাত বারিয়ে দেয়। অভি সেদিন টুসিকে বাচাতে পারেনি কিন্তু আজ একজনকে বাচাতে পেরেছে। হয়তো টুসি বেচে থাকলে অভির প্রতি গর্ববোধ করতো।
ইশা অভির হাত ধরে দেয়াল থেকে নেমে কান্না করতে করতে অভিকে জড়িয়ে ধরে।
-আমাকে বাচান প্লিজ। এভাবে আমি মরে যাবো,,,

চলবে,,,

#দ্যা_লিফট
#পর্ব_০৭
#Writer_Shanta_islam

ঘটনাটা শুরু হয় নবেম্বর ২০ থেকে। আমি নেহাকে পড়িয়ে বাসায় ফিরছিলাম। লিফটে উঠার আগেই পাচ থেকে ছয় বছর বয়সী দুটো বাচ্চা সেখানে খেলা করছিলো। হঠাৎ লিফটের লাইট অন অফ হতে থাকে। ভেবেছিলাম লিফটে প্রবলেম তাই বাচ্চা দুটোকে লিফট থেকে বের করে আনতে চেয়েছিলাম। তার আগেই লিফটের ভিতরের দৃশ্য পাল্টে যায়। লিফটের মধ্যে অন্য একটা দুনিয়া দেখতে পাই। প্রথমে দু-চোখে বিশ্বাস করতে না পারলেও পরে যখন লিফটের মধ্যে ডুকলাম তখন সব স্পষ্ট হলো। ওটা শুধু লিফট ছিলো না ওটা অন্য দুনিয়ার দরজার মতো ছিলো। দরজার এপারে স্বাভাবিক ওপারে প্রবেশ দোয়ার। আমি লিফটে ডুকলাম। বাচ্চা দুটোকে খুজতে খুজতে একটা মহিলাকে দেখতে পেলাম যার কোলে একটা বাচ্চা ছিলো। দুজনি মানুষের রক্ত আর বডি পার্ট খাচ্ছিলো।
ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে ইশা থর থর করে কাপছে আর কান্না করতে করতে অভিকে কথাগুলো বলছে। অভি এতোটুকু বুঝেছে যে ইশা একজন মানসিক রোগী। ইমিডিয়েটলি ওর ট্রিটমেন্ট দরকার।
-ইশা কান্না থামাও। এখন আমাদের বাসায় যাওয়া উচিৎ।
-আপনিও ভাবছেন আমি পাগল তাই না?
অভি ইশার চোখ থেকে ওর চোখ সরিয়ে নেয়। অদ্ভুত চাহুনি এই মেয়ের চোখে। তাকিয়ে থাকলে হৃদপিন্ডের বেগ বেরে যায়।
শীতের হাওয়া বইছে অভির পাশে ইশা দাঁড়িয়ে আছে। আজ ঠান্ডাটা গতকালের থেকে একটু বেশি। অভির গায়ের হুডিটা খুলে ইশার কাধে জড়িয়ে দিয়ে বললো,,ঠান্ডা পড়েছে এটা জড়িয়ে নেও।
ইশা হুডিটা পড়ে নিলো।
-অনেক রাত হয়েছে। চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।
-প্রয়োজন নেই। এখান থেকে এখানে আমি একাই যেতে পারবো।
-সরি ইশা এতো রাতে আমি একটা মেয়েকে এভাবে একা ছাড়তে পারবো না। আমিও তোমার সাথে যাবো।
অভি ইশাকে বাসায় পৌছে দেওয়ার জন্য ইশার সাথে হাটছে।
-মি.অভি
-হুম
-আপনি কিছু বললেন না যে?
-কোন বিষয়ে?
-আপনিও আমাকে পাগল ভাবেন কি না?
অভি কিছু বললো না শুধু ইশার দিকে তাকিয়ে থাকলো। পাগলের সামনে কি তাকে পাগল বলে সম্বোধন করা যায়? ইশা অভির উত্তর না পেয়ে অনেকটা হলেও বুঝতে পেরেছে অভিও ইশাকে পাগল ভাবছে।
-জানেন আমিও প্রথম প্রথম নিজেকে পাগল ভাবতাম। কিন্তু এখন আর নিজেকে পাগল ভাবি না। ইশা হুডির হাতাটা টেনে তার ক্ষত হাতটা বের করে অভির সামনে তুলে ধরে।
-এটা দেখছেন? নিশ্চয়ই দেখে বুঝতে পারছেন এটা কোনো বিড়ালের আচর নয়। এটা সেই মানুষ রুপি ভূতের আচর। এটা ছাড়া আমার কাছে আর কোনো প্রমান নেই যেটা দিয়ে নিজেকে সঠিক প্রমান করবো। অভি ইশার হাতের আচর দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এ আচর যে তার খুব চেনা-পরিচিত। ঠিক এমন আচর অভির পায়ে আছে। তবে কি ইশা, না এটা হতে পারে না। #ব্লাক_স্টনের সেই পুরোনো পাতা আবার খুলতে পারে না।
বাসায় ডোকার আগে ইশা অভির দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাসে মুখে মৃদু হাসি টেনে বললো,,,মানুষ কল্পনাতেই অনেক সুখি তাই না? যদি সেদিন লিফটে না উঠতাম। যদি সেদিন বাচ্চাগুলোর পিছু না নিতাম। যদি,,
ইশা চলে যাচ্ছে অভি ইশার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে জরজরিত কন্ঠে বললো,,হ্যাঁ ইশা মানুষ কল্পনাতেই অনেক সুখি। যদি সেদিন বাসা থেকে বের না হতাম। যদি সেদিন টুসি আমার পিছু না নিতো। যদি,,অভির চোখ থেকে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।

রুমে ডুকতেই ইশা লাইট অন করে দেখে সাদ বসে আছে।
-কোথায় ছিলি?
ইশা কোনো উত্তর না দিয়ে উল্টো সাদকেই প্রশ্ন করতে লাগলো,,তুই আমার রুমে কি করছিস?
-দেখ আপু কথা ঘুরাবি না। তোর পড়নে এগুলো কার কাপড়? আর এতো রাতে তুই কোথায় ছিলি?
– আমি যা বলবো তা তুই বিশ্বাস করবি না। তাই কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করছি না।
সাদ ইশার রুম থেকে বের হয়ে যায়।
সাদের মুখটা আরেকবার দেখতে ইচ্ছে করছে। একটু আগে আমি কি করতে যাচ্ছিলাম? মরে গেলে তো একেবারেই দেখতে পেতাম না। মা বাবা সাদ কাওকেই আর দেখা হতো না। একটা ভুল সিদ্ধান্তের কারনে আজীবনের জন্য নিজের ফ্যামিলিকে হারাতে যাচ্ছিলাম।
মাথাটা আর ব্যাথা করছে না। একটু পরেই মনে হয় আজান দিবে। পোশাক পাল্টালাম না, ওভাবেই হুডি পরে বিছানায় সুয়ে পরলাম।

ইশার হাতের আচরটা দেখার পর কিছুতেই সস্থি পাচ্ছি না। কীভাবে সম্ভব? সেদিনের পর রিমাসদের শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তাহলে কী রিমাসরা এখনো বেচে আছে? কিন্তু কীভাবে? না ভাবতে পারছি না। আবারো সেই পুরোনো পৃষ্টা খুলে যাচ্ছে। তিন বছর আগে যেটার কারনে আমি টুসিকে হারিয়েছি। আবার সেই কাহিনি ভেসে উঠেছে। যদি রিমাসরা সত্যিই বেচে থাকে তাহলে স্টন এখনো আছে। কিন্তু কোথায়? নাকি সব মিথ্যে। ইশার মনের ভুলও তো হতে পারে। না ভুল হবে কীভাবে সেই আচরটা তো রিমাসের। অভি চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে চিন্তা করে। কিছু একটা ভেবে হঠাৎ অভি উঠে দাঁড়ায়। ল্যাপটপ হাতে নিয়ে ট্রেনের দুটো টিকেট বুকিং করে। এরপর জেনির ফোনে একটা কল দেয়।

সকাল এগারোটা,,
জেনি কলিং বেল দিতেই অভি দরজা খুলে দেয়।
-আরে বাহ আজ অভি সাহেব নিজ থেকেই তলব জানিয়েছেন? আন্টি কোথায়? আন্টি,,আন্টি,,,জেনি রুমে ডুকেই অভির মাকে খুজতে লাগলো।
-জেনি বাবা মা বাসায় নেই।
-বাসায় নেই মানে?
-উনারা আজ সকালে ট্রেনে করে গ্রামে চলে গেছে।
-কি বলছো? আন্টি গ্রামে গেছে? কিন্তু আমাকে কিছু বললো না। ওয়েট আমি কল করছি।
অভি জেনিকে কল করতে বারন করে বললো,,
বাবা মার কাছে ফোন নেই। আমি মানা করেছি যতদিন পর্যন্ত আমি নিজ থেকে তাদের নিয়ে না আসবো ততোদিন পর্যন্ত উনারা কারো কন্টাকে থাকবে না।
-এসবের মানে কী অভি?
-জেনি এতো প্রশ্ন করছো কেনো? তোমাকে যেটা আনতে বলেছি সেটা এনেছো?
– এতো বছর পর আবার কেনো অভি,,,
অভি জেনিকে থামিয়ে দিয়ে বললো,,,প্লিজ ওটা দেও।
জেনি ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে অভির হাতে ধরিয়ে দেয়।
বইয়ের উপর খোচা খোচা ইংরেজি অক্ষরে নিখুঁত ভাবে লিখা #ব্লাক_স্টন।
-কী করতে চাইছো অভি? তুমি কী আবার সেই #ব্লাক_স্টনের সন্ধান করতে চাইছো?
অভির চোখ মুখে রহস্যের ছাপ ফুটে উঠে। অভি বইয়ের দিকে এক নজরে তাকিয়ে বললো,,,
-তৈরি হয়ে নেও জেনি। পুরোনো সেই কাহিনি আবার শুরু হতে চলেছে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here