#দ্যা_লিফট
#পর্ব_০৮,০৯
#Writer_Shanta_islam
পর্ব_০৮
ইশা জলদি ওষুধের বাক্সটা নিয়ে আয়।
হঠাৎ মার ডাক পড়লো সাদের নাকি হাত কেটে গেছে। আমি দৌড়ে ফার্স্টএইড বক্সটা নিয়ে এলাম।
-একি এ তো অনেক কেটেছে,কই দে তো হাতটা এখানে দে। আমি এন্টিসেপ্টিক নিয়ে সাদের আঙ্গুলটা ধরেছি সাথে সাথে শরীরটা ঝাকি দিয়ে উঠলো আর উষ্ণ অনুভব করলাম। আমার নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। মাথাটা ঠিক রাখতে পারছি না। চোখ দুটো আঙ্গুলের টপ টপ করে পড়া রক্তের মধ্যে আটকে আছে। তিব্রভাবে রক্তের গন্ধ পাচ্ছি। খুব তেষ্টা লাগছে মনে হচ্ছে সাদের হাতের সবটুকু রক্ত সুষে নেই।
– ইশা, ইশা, ইশা?
মার ডাকে চোখের পলক পড়লো। তৃষ্ণাতক গলা নিয়ে আমি ওখান থেকে উঠে পরলাম।
-কিরে কোথায় যাচ্ছিস?
মার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলাম না। রুমে এসে ডক ডক করে প্রায় চার গ্লাস পানি খেলাম। কাজ হলো না,তেষ্টা মিটছে না। এ কেমন তেষ্টা যা পানিতে মিটছে না?
চোখে বার বার সাদের রক্ত মাখা হাতটা ভেসে উঠছে। সেই রক্তের প্রতি লোভটা যে বেড়ে গিয়েছিলো সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারছি। আমি কি দিন দিন মনুষ্যত্ব হারাচ্ছি?
-অভি তুমি একটা মেয়ের জন্য এতোকিছু কেনো করছো? আবার সেই বিপদের মাঝে নিজেকে কেনো জড়াচ্ছো? অভি জেনিকে সবটা খুলে বলার পর জেনি ইশার কাহিনির উপর বিশ্বাস করতে পারছে না। জেনির ধারনা ব্লাক স্টনের সাথে সাথে রিমাসরাও মারা গেছে। তাই জেনি বার বার অভিকে বাধা দিচ্ছে।
-এদিকে দেও এই বই ধরার কোনো দরকার নেই। জেনি অভির হাত থেকে বই নিতে গেলে অভি বইটা সরিয়ে নেয়।।
-জেনি প্লিজ।
-তুমি কি পাগল হয়ে গেছো অভি? ব্লাক স্টন আর নেই তাই রিমাসদেরও থাকার কোনো প্রশ্ন উঠে না। রিমাসরা ব্লাক স্টন থেকে পাওয়ার নিত। ব্লাক স্টন ছাড়া ওরা বেচে থাকতে পারে না। তাই পুরোনো চাপ্টার আবার খোলা বোকামির কাজ হবে।
অভি ডাইনিংয়ে বসে ব্লাক স্টনের বই পড়ছে আর তার পাশে দাড়িয়ে জেনি অভিকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। অভির সেদিকে কোনো কর্নপাত নেই। সে মনোযোগ দিয়ে বইয়ের মধ্যে ডুবে আছে।
এতো বকবক করার পরও অভির কোনো জবাব না পেয়ে জেনি রেগে যায়। জেনি আচমকা বইটা বন্ধ করে অভির হাত থেকে কেরে নেয়।
-জেনি কি করছো?
-আমারো একি প্রশ্ন তুমি এসব কি করছো? একটা মেয়ের মুখের কথার উপর বিশ্বাস করে তুমি এতো বড় ঝুকি নিতে চাচ্ছো কেনো?
-ইশার কথাগুলো মিথ্যে ছিলো না।
-ও আচ্ছা ওই মেয়েটার কথা মিথ্যে ছিলো না আর এটা তুমি কীভাবে জানলে?
-কারন ওর হাতে আমি রিমাসের আচর দেখেছি।
-ইম্পসিবল স্টনের সাথে সাথে রিমাস জাতিও শেষ হয়ে গেছে।
-তুমি কি সিওর হয়ে বলতে পারবে স্টন শেষ হয়ে গেছে?
-অভি আমার মাথা গরম করো না। চলো বাহিরে কোথাও যাই। জেনি অভির হাত ধরতেই অভি জেনির কাছ থেকে ওর হাত সরিয়ে নিয়ে বললো,,সরি জেনি আমার কাজ আছে।
জেনি বিরক্তের সাথে হাসি নিয়ে বললো,,অভি প্লিজ এবার বলো না যে ওই ইশা নামে মেয়েটার জন্য তুমি আবার ব্লাক স্টন খুজতে চাইছো।
-যদি বলি হ্যাঁ আমি চাইছি? অভির কথাশুনে জেনির হৃদয়টা মোচর দিয়ে উঠলো। যার জন্য জেনি সব কিছু ফেলে এ দেশে পড়ে আছে সে যদি অন্যের হয়ে যায়। ব্লাক স্টনের মিশন শেষে জেনিকে নিজের দেশে ফিরার কথা থাকলেও জেনি যায়নি। রবিন জেনিকে অনেক বার নিয়ে যেতেও এসেছিলো কিন্তু জেনি যায় নি। তার ভালোবাসার মানুষটা যে এখানে। তাকে রেখে জেনি কীভাবে থাকবে? জেনি অভিকে কতোটা ভালোবাসে সেটা মুখ ফুটে বলতে না পারলেও মনের মধ্যে দুজনকে নিয়ে কত ছবি যে সে একে ফেলেছে। জেনি রাগ হয়ে অভির উপর বই ছুরে মেরে ওখান থেকে বের হয়ে যায়। থাকবো না আর এখানে,থাকো তুমি তোমার ইশাকে নিয়ে। জেনি কথাগুলো ভেবে কান্না করতে করতে বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য দরজা খুলতে নিলে দরজার সামনে একটা মেয়েকে দেখতে পায়।
– ওহ হাই! এখনি বেল দিতে নিয়েছিলাম আর দরজাটা খুলে গেলো কো-ইনসিডেন্স। আসলে মি. অভির কিছু কাপড় আমার কাছে রয়ে গিয়েছিলো ওগুলো ফিরত দিতে এসেছি। উনি কি বাসায় আছেন?
– হ্যাঁ কিন্তু আপনি?
-আমি ইশা।
ইশা নামটা শুনে জেনির মাথাটা গরম হয়ে যায়। তাহলে এটাই সেই মেয়ে যার জন্য অভি আর আমার মধ্যে তর্ক বিতর্ক হয়েছে।
-আমি অভির গার্লফ্রেন্ড। অভি একটু বিজি আছে কথাটা বলে জেনি ইশার হাত থেকে কাপড়গুলো নিয়ে নেয়।
– মি.অভিকে সরাসরি একটা থেংস জানানোর ছিলো। উনি যদি,,ইশা আর কিছু বলার আগেই জেনি ধপাস করে মুখের উপর দরজাটা মেরে দেয়।
-স্ট্রেঞ্জ এভাবে মুখের উপর দরজাটা মেরে দিলো কেনো? যাই হোক আমার কী? অন্য একদিন ধন্যবাদ জানিয়ে দিব।
জেনি কাপড়গুলো নিয়ে টেবিলের উপর রাখতেই অভি জেনিকে বললো- জানতাম বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারবে না। তবে রাগটা যে এতো তারাতারি ভাঙবে এটা আশা করি নি।
জেনি অন্য দিকে মুখ করে অভীমানি গলায় বললো-আমি কারো উপর রাগ করিনি।
বইটা বন্ধ করে টেবিল থেকে উঠতে নিলে অভির চোখ পড়ে কাপড়গুলোর উপর। এসব কাপড় তো ইশাকে দেওয়া হয়েছিলো। তার মানে ইশা এসেছিলো?
অভি কঠোর গলায় প্রশ্ন করলো- জেনি ইশা কী একটু আগে এসেছিলো? জেনি বিপরীত দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো-জানি না।
অভি জেকেট হাতে নিয়ে বাইরে বের হতে নিলে জেনি অভিকে প্রশ্ন করে-কোথায় যাচ্ছো?
অভি জেকেট গায়ে জড়িয়ে উত্তরে বললো-ইশার পিছু।
অভি বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এদিকে জেনির গা জ্বলে যাচ্ছে। একটা মেয়ের জন্য অভি এতো এফোর্ট দেখাচ্ছে কেনো?
লিফট ফাকা তার মানে ইশা সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে। তারাতারি করলে হয়তো ইশাকে ধরতে পারবো। অভি দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে যাতে ইশার সাথে দেখা করতে পারে। গতকাল রাতে মেয়েটার উপর দিয়ে অনেক কিছু গেছে। ওর সাথে একটু কথা বলা দরকার। অভি নিচে নেমে এলো কিন্তু ইশাকে দেখতে পেলো না। হয়তো দেরি হয়ে গেছে। অভি আবার দু-পা সিড়ির উপর রাখতেই ইশার সাথে ধাক্কা খায়।
– আওউচ,,
– সরি সরি সরি,কোথায় লেগেছে দেখি?
-মি.অভি আমি ঠিকাছি। আপনি এখানে?
– তোমাকে খুজতেই নিচে নেমেছি। ভেবেছিলাম চলে গেছো।
– আসার সময় নেহাদের বাসায় গিয়েছিলাম। তাই নামতে দেরি হলো। আপনার জিএফ বললো আপনি বিজি আছেন, তাই ডিস্টার্ব করিনি।
-আমার জিএফ?
-হ্যা আপনার জিএফ। এমন ভাবে রিয়েক্ট করছেন যেনো এই প্রথম বার শুনলেন আপনার জিএফ আছে।
– হ্যাঁ প্রথম বারি শুনছি। আমার জিএফ আছে অথচ আমি জানি না?
– আশ্চর্য! ছেলেরা এতো অদ্ভুত কেনো বুঝি না। জিএফ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে সিংগেল দাবি করে।
– এক্সকিউজ মি আমি পিওর সিংগেল।
অভি কথাটা একটু জোরে বলে ফেলে।
-এখন একটা ঢোল এনে দেই। ঢোল পিটিয়ে এলাকা বাসিকে জানাবেন আপনি সিংগেল। আপনার সরম করছে না জিএফ থাকার পরও কীভাবে নিজেকে পিওর সিংগেল বলছেন।
– আজব বুঝতে পারছি না তুমি আমার উপর এমন জটিল অপরাধ লাগাচ্ছো কেনো?
-যেটা সত্যি সেটাই বলছি।
– জীবনো না, এটা একশ পার্সেন্ট মিথ্যা কথা।
– আমি আপনার সাথে মিথ্যা কথা বলতে যাবো কেনো? আপনার জিএফি বললো যে উনি আপনার জিএফ।
– কেও বললো আর তুমি বিশ্বাস করে নিলে?
– বিশ্বাস না করার কি আছে? আপনার বয়সি ছেলেদের জিএফ থাকতেই পারে। আপনাকে কাল রাতের জন্য ধন্যবাদ বলতে এসেছিলাম। কিন্তু আপনি জিএফের সাথে বিজি ছিলেন তাই বলতে পারিনি। এখন বলে দিচ্ছি ধন্যবাদ।
– আবার জিএফ, কয়বার বলবো আমার কোনো জিএফ নেই।
-আপনার জিএফ আছে আছে আছে।
-নেই নেই নেই।
-আছে আছে আ,,,অভি ইশার মুখ চেপে ধরে।
– হয়েছে থামো। এভাবে সিরির মধ্যে ঝগড়া শুরু করেছো কেনো?
ইশা মুখ থেকে অভির হাত নামিয়ে বলে- ঝগড়া আমি শুরু করেছি নাকি আপনি করেছেন?সব আপনার দোষ।
-ওহ আল্লাহ! ঠিকাছে সব আমার দোষ। এর জন্যই বলে মেয়েরা বুঝে কম চিল্লায় বেশি।
-এই কি বললেন আপনি? আপনার মাথা একদম ফাটিয়ে দিব। অভি ইশার কথাশুনে হেসে উঠে।
-আরে হাসছেন কেনো? এতোদিন ভাবতাম আমি পাগল এখন দেখি আপনিও আমার খাতায় নাম লিখাছেন। ইশার কথাশুনে অভি থেমে যায়।
-না ইশা তুমি পাগল না। আমি তোমার কথায় বিশ্বাস করি।
-কি? আপনি মজা করছেন তাই না?
– না ইশা আমি মজা করছি না। অভি আশে পাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে ওর ডান পায়ের প্যান্টটা একটু উঁচু করে দেখায়। ইশা অভির পা দেখে অবাক হয়ে যায়। ঠিক ইশার হাতের মতো অভির পায়ের আচর।
– এটা তো,,
-হ্যা ঠিক ভেবেছো এই আচর আর তোমার হাতের আচর দুটো এক।
-তার মানে আপনিও স্বপ্নে ওই ভূতের রক্ত খেয়েছেন?
-কিহ? স্বপ্নে ভূতের আচর মানে? রিমাস তোমার উপর আক্রমণ করেনি?
ইশা অভির কথা বুঝতে পারছে না৷ এই রিমাসটা আবার কী? ইশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই কোথা হতে একটা কন্ঠ ভেসে আসে,,বাহ ব্লাক স্টনের পাওয়ার ধারন কারি দুজন ব্যক্তি এক সাথে,,,কন্ঠটা পিছন থেকে আসছে। অভি আর ইশা এক সাথে তাকিয়ে দেখে একজন ওয়াইট সুট পড়া লোক হাতে তালি দিয়ে তাদের সামনে এসে দাড়ালো।
– ব্লাক স্টনের শক্তি বহনকারী দুজন ব্যক্তি এক সাথে, এর থেকে বেশি আর কি লাগে?
চলবে,,,
#দ্যা_লিফট
#পর্ব_০৯
#Writer_Shanta_islam
অভি লোকটার কলার টেনে লোকটাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে ক্ষিপ্ত গলায় প্রশ্ন করে- কে তুমি? ব্লাক স্টন সম্পর্কে কীভাবে জানো?
কিছু বুঝতে পারছি না,অভি এভাবে ক্ষেপে গেলো কেনো? আর লোকটাই বা কে?
-অভি কি করছেন? ছাড়ুন উনাকে,
অভি ইশার কথায় কর্নপাত না করে লোকটাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রেখেছে।
-আমাকে এভাবে চেপে ধরে কোনো লাভ নেই। আপনি আমার কিছু করতে পারবেন না।
-কথা ঘুরানোর চেষ্টা করো না,বলো কে তুমি? আর ব্লাক স্টন সম্পর্কে কীভাবে জানো?
-আমি কে এটা জানার থেকে বেশি প্রয়োজন আগে আপনাদের সত্ত্যটা জানা।
-কীসের সত্ত্য?
-ব্লাক স্টনের শক্তির ধারক দুজনকে এক সাথে পাবো এটা আশা করিনি। মিস ইশা ব্লাক স্টনের শক্তি ব্যবহারকারী তৃতীয় ব্যক্তি এখন থেকে আপনাকে সাবধানে,,
লোকটা আর কিছু বলার আগেই অভি ওয়াইট কোট পড়া লোকটার কলার ছেরে দিয়ে ইশার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,, তুমি আগে থেকেই সব কিছু জানতে। তাহলে এতোদিন নাটক করলে কেনো? ওহ বুঝেছি আমি ব্লাক স্টনের দিত্বীয় ব্যবহারকারী বলে আমাকে ইউস করতে চেয়েছিলে? ছি,তোমার মতো নিম্ন শ্রেনীর মানুষ আমি দেখিনি।
কথাগুলো বলে অভি সিড়ি বেয়ে চলে গেলো। আমি অবাক হয়ে মি.অভির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। একটু আগে উনি কি আমাকে নিম্ন শ্রেনীর মানুষ বলে অপমান করলো কিন্তু কেনো? আমি কী করলাম। না এভাবে উনি আমাকে এতোগুলো কথা শুনিয়ে যেতে পারে না। উনাকে এর জবাব দিতে হবে।
-মিস ইশা আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো?
-কিন্তু আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না। কথাটা বলে ইশা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো।
-কি হলো অভি? তুমি এতো রেগে আছো কেনো?
-তুমি ঠিকি বলেছিলে ওই মেয়েটা একটা মিথ্যেবাদী।
-কোন মেয়ে? কার কথা বলছো?
-আমি ইশার কথা বলছি। ও ব্লাক স্টন সম্পর্কে সব কিছু জানতো। এতোদিন আমার সাথে অভিনয় করেছে। এখন মনে হচ্ছে সেদিন সুইসাইড করতে যাওয়ার ঘটনাটাও ওর অভিনয়ের একটি অংশ ছিলো। মানুষ কতোটা নিচে নামতে পারে জেনি।
-হ্যা অভি মানুষ নিজের সার্থের জন্য নিচে নামতে দ্বিধা বোধ করে না। এখন ছাড়ো এসব কথা। তুমি ঠান্ডা হও,আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে আসছি।
জেনির খুব ভালো লাগছে। আপদ আসার আগেই বিদায় হয়েছে। এখন ওই মেয়েটাকে নিয়ে আর কোনো টেনশন নেই। জেনি চা বানানোর জন্য রান্না ঘরে যেতে নিলে সাথে সাথে একটার পর একটা কলিং বেল বেজে যাচ্ছে।
-আরে এভাবে কলিং বেল বাজাচ্ছে কে?
অভি উঠতে নিলে জেনি অভিকে উঠতে না করে বললো-তুমি বসো আমি দেখছি।
জেনি দরজা খুলতেই ইশাকে দেখলো।
-তুমি এখানে এসেছো কেনো?
জেনির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ইশা ওকে ক্রোস করে ডাইরেক্ট বাসার মধ্যে ডুকে যায়। আচমকা ইশাকে দেখে অভি বসা থেকে উঠে দাড়ায়।
-তুমি এখানে এসেছো কেনো?
-নিচে আমাকে এতোগুলো কথা শুনানোর কারণ জানতে এসেছি। আপনার কোনো অধিকার নেই আমাকে ওভাবে কথা শুনানোর।
-ও আচ্ছা। তাহলে তোমারো কোনো অধিকার নেই আমার সাথে অভিনয় করার।
– অভিনয়? কীসের অভিনয়?
-একেই বলে চোরের মায়ের বড় গলা।
ইশা পিছু তাকিয়ে দেখে জেনি এক পা দু পা করে সামনে আসতে আসতে কথাটা বলছে।।
– এক্সকিউজ মি,আপনি কি কথাটা আমাকে বললেন?
জেনি- এখানে তুমি ছাড়া এ কথা আর কার সাথে মানায়? অভি জেনিকে ইশারা দিয়ে থামতে বলে ইশাকে কঠোর গলায় বললো-চলে যাও এখান থেকে,আমি তোমার মুখটাও দেখতে চাই না।
কথাটা ইশার ভিতরে কাটার মতো বিধলো। ইশা নিজেকে সামলে অভির কথায় তাল মিলিয়ে বললো
-আপনার মুখটাও দেখার কোনো শখ নেই আমার। আপনি আমার জান বাচিয়েছিলেন তাই আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে এসেছিলাম। কিন্তু আপনার আর আপনার গার্লফ্রেন্ডের আজ এই অপমানের কথা আমি কখনো ভুলবো না।
অভি অট্টো হেসে জবাব দিলো- জান বাচিয়েছি? ওটাকে জান বাচানো বলে না ওটাকে প্ল্যান করে অভিনয় করা বলে। যাতে তুমি আমার কাছে আসতে পারো।
-ওয়াট?
-হ্যা তুমি আমার কাছে এসে ব্লাক স্টনের পাওয়ার ব্যবহার করে কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলে তাই না?
-অনেক হয়েছে আর না। মি.অভি আপনার এই আচরন আমি কখনো ভুলবো না। ইশার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি ঝড়তে থাকে। ইশা কাদতে কাদতে ওখান থেকে দৌড়ে চলে যায়।
মেয়েটার কান্না দেখে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। কেমন যেনো লাগছে। জেনি আমার কাধে হাত রেখে বললো-চিন্তা করো না। আমি এই মেয়ের ব্যাপারে সব ডিটেইল বের করবো। ব্লাক স্টনের ব্যাপারে ও কীভাবে জানে সেটাও বের করবো।
-প্রয়োজন নেই জেনি ও এখন ব্লাক স্টনের তৃতীয় ধারনকারী।
-মানে? কি বলতে চাইছো? ব্লাক স্টন এখন ওর কাছে?
-ওই লোকের কথাশুনে এটাই মনে হলো।
-কোন লোক?
-বাদ দেও জেনি,আমার মাথা ব্যাথা করছে। এসব বিষয়ে ভাবতে চাই না।
-ইম্পসিবল অভি, ওই মেয়ে স্টনের পাওয়ার কিছুতেই পেতে পারে না। আমি সিওর ওর কাছে কোনো স্টন নেই। ব্লাক স্টন পাওয়া এতো সহজ ব্যাপার নাকি?
– ওর কাছে ব্লাক স্টনের পাওয়ার আছে আর এটাই সত্যি।
-তুমি এতোটা সিওর হয়ে বলছো কীভাবে?
– সেদিন রাতে ইশা যখন রক্তাক্ত লিফটে পড়ে ছিলো তখন হয়তো স্টনের টানেই আমি বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। স্টনের শক্তি আমাকে ওর দিকে টানছিলো। এর জন্যই আমি না চাইতেও ওর পিছু ছুটতাম।
-কিন্তু অভি ও যদি সত্যি ব্লাক স্টনের তৃতীয় বাহক হয় তাহলে ওর উদ্দেশ্য জানতে হবে। যদি খারাপ উদ্দেশ্য হয় তাহলে কী হবে সেটা ধারনার বাইরে।
-কিছুক্ষনের জন্য আমিও এ কথা ভেবেছিলাম। আমি যখন প্রথম ব্লাক স্টন জোড়া লাগিয়ে হাতে নেই তখন ওটার ভিতর থেকে এক ধরনের উষ্ণতা অনুভব করি। ব্লাক স্টনের পাওয়ার এক ধরনের নেশা। যেটার শক্তি হাতে পেলে ইচ্ছে করে সব কিছু তছনছ করতে। ওটার উপর কন্ট্রোল করা খুবি মুসকিল ছিলো। ইমোশন ছাড়া স্টনের শক্তি কন্ট্রোল করা সম্ভব না। নাহ সেই আগের ঘটনাগুলো আর ভাবতে চাই না। আমি আমার রুমে চলে যাচ্ছি।
-অভি আমি,,
-প্রয়োজন নেই জেনি, আমি একা থাকতে চাই।
জেনি আর কিছু বললো না অভি ওর রুমে চলে গেলো। জেনিও ওর ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেলো। শুধু রয়ে গেলো টেবিলে রাখা বড় বড় অক্ষরে লিখা সেই ব্লাক স্টনের বই।
-ইশা থাক না আজ কলেজে না গেলেও চলবে। তোর চোখ দুটো ফুলে গেছে। আবার অসুস্থ হয়ে যাবি।
-ইশাপু আজ যাস না। আমার এক্সাম শেষ পার্টি করবো অনেক মজা হবে। ইশা তার মা আর ভাইয়ের কথা শুনলো না সে তার মতো ব্যাগ গুছিয়ে যাচ্ছে।
-ঠিকাছে গেলে যা। কিন্তু যদি শুনেছি ক্লাসের মধ্যে আবার বেহুশ হয়েছিস তাহলে এক লাথি মেরে হসপিটাল পাঠাবো আর বাসায় ডোকাবো না। কথাটা বলে ইশার মা চলে যায়।
-ইশা আপু যাস না প্লিজ।
-দেখ সাদ মেজাজ খারাপ করবি না যা এখান থেকে।
– কি হয়েছে তোর?
– কিছু হয়নি,অনেক দিন গেপ দিয়েছি আর দিব না তাই আজ কলেজে যাবো। আর কিছু শুনতে চাস।
-ঠিকাছে ঠিকাছে আর কিছু বলবো না।
ইশা ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। আজ ইশার কলেজে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু অভির ব্যবহার ইশা মেনে নিতে পারছে না। তাই নিজেকে শান্ত করার জন্য ইশা বাসা থেকে বের হয়েছে। রাস্তায় হাটতে হাটতে হঠাৎ ইশার হৃদপিন্ডের বেগ বেরে যায়। ভিতরটা কেমন যেনো করছে। এমন মনে হচ্ছে কোনো বিপদের আবাস পাচ্ছি। নিজ থেকেই চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এলো,আমার থেকে প্রায় বিশ কদম দূরে একজন মানুষ রুপি প্রানী দাড়িয়ে আছে। আর এক মিনিট পর সে আমার উপর এটাক করবে। শরীরের সমস্ত বডি পার্টস দেখতে পাচ্ছি। সব থেকে লোভনীয় অংশ ওর শরীরের রক্ত যেটা আমাকে খুব টানছে। না না এসব আমি কি দেখছি তারাতাড়ি চোখটা খুলতেই নাকে গন্ধ পাচ্ছি। কীসের গন্ধ? না এসব আমি কী ভাবছি। ভাবা বন্ধ করে নিজের মতো হাটতে থাকি। এ আমি কোথায় যাচ্ছি? এটা আমার কলেজে যাওয়ার পথ নয়। হঠাৎ আমার পা দুটো এক সুনসান জায়গায় এসে থামলো। এখানে কোনো মানুষ নেই। ফাকা নির্জন জায়গা। পিছু ফিরে দেখি একটা লোক দাড়িয়ে আছে। একটু আগে যার চেহারা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিলো।
-অবশেষে তোকে পেয়েছি। ভাবতেই অবাক লাগছে তোকে কুইন মানতে হতো। তোর মতো একটা মানুষকে আমাদের কুইন মানতে হতো। হা হা এখন তোকে মেরে আমি স্টনের সব পাওয়ার নিয়ে নিব। সব শক্তি আমার হবে, আমি হবো রিমাস রাজ্যের নতুন রাজা।
এখন ইশার ভয় পাওয়া উচিৎ কিন্তু ভয়ের বদলে তার ঠোঁটের কোনায় মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। এটা দেখে রিমাস একটু চিন্তায় পড়ে যায়। যার সামনে মৃত্যু দাঁড়ানো তার ঠোঁটে মুচকি হাসি।
-তুই কি ভেবেছিস আমি তোর জালে ফেসেছি? ভুল, এই নির্জন জায়গায় এনে আমি তোকে আমার জালে ফাসিয়েছি।
চলবে,,,