দ্যা_লিফট #পর্ব_১৪,১৫

0
523

#দ্যা_লিফট
#পর্ব_১৪,১৫
#Writer_Shanta_islam
পর্ব_১৪

–ওয়াইট রিমাসদের আর্মি তৈরি করা হচ্ছে। যত তারাতাড়ি সম্ভব ওদের ক্ল্যানে এটার্ক করতে হবে।
-ঠিকাছে পৃথিবী থেকে যেসব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন আজকের মধ্যেই সবগুলো আনা হোক। রিওয়ার্ল্ডে শুধু আমার রাজ্যত্ব হবে শুধু আমার। চাইনিজ ভাষায় কথাগুলো বলে বিকট হাসিতে মেতে উঠলো লিং সান।

-উহু উহু আসতে পারি? হালকা কেশে দারজায় নক করে ভিতরে আশার অনুমতি চাইলাম। কিছুক্ষণ পর ভিতর থেকে একটা কন্ঠ ভেসে এলো-আসো।
অনুমতি পেয়ে তারাতাড়ি রুমে ডুকে পরলাম। মি.অভি ব্যাগে কিছু ভরছেন। আমি উনার পিছনে দাড়িয়ে আলতো সূরে নম্র ভাবে জিজ্ঞেস করলাম-রাগ করেছেন?
মি.অভি ব্যাগ গুছানো বন্ধ করে আমার সামনে এসে দাড়ালো একদম ফেস টু ফেস। খুব ভয় করছে,মনে হচ্ছে উনি ভিষণ রেগে আছেন।
– আই এম সরি আসলে আমি কি থেকে কি বলে ফেলেছি,,
-না ইশা তোমার সরি বলার প্রয়োজন নেই। তুমি যা বলেছো ঠিকি বলেছো,আমি আজো নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনি। যতবারি সেই দিনটার কথা মনে পড়ে ততবারি নিজেকে অপরাধী মনে হয়। বার বার মনে হয় আমার কারনেই টুসি মারা গেছে। যদি সেদিন বাসা থেকে বের না হতাম তাহলে হয়তো আজ টুসি বেচে থাকতো। টুসির চেহারা এখনো আমার সামনে ভেসে উঠে।
-টুসির মৃত্যুর পিছনে আপনার কোনো কন্ট্রিবিউশন নেই মি.অভি। যা হয়েছে সব নিয়তির খেলা। আচ্ছা একটা কথা ভাবুন তো টুসি যদি আপনার জায়গায় থাকতো তাহলে আপনি কি চাইতেন আপনার মৃত্যুর কারনে টুসি নিজেকে দোষারোপ করুক? বা সারা জীবন নিজেকে অপরাধী ভেবে কাটিয়ে দিক। নিশ্চয়ই না। পিছনের সব কিছু ভুলে সামনে এগোতে শিখুন মি.অভি।
-তুমি ঠিক বলছো ইশা আজ যদি টুসি বেচে থাকতো তাহলে ও কখনোই চাইতো না ওর ভাই ভেঙে পড়ুক। জানো ওর সামনের দুইটা দাত নেই। এর জন্য ওকে আমি কতো যে খেপিয়েছি। এমন কোনো দিন নেই খাবার টেবিলে ওর সাথে ডিম নিয়ে ঝগড়া করিনি। কথাগুলো বলতে বলতে অভির চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানির ফোটা পড়তে থাকে। অভি কিছু বলতে চাইছে কিন্তু কান্নার কারনে বার বার গলা অবধি এসে শব্দগুলো বেধে যাচ্ছে। অভিকে এভাবে কাদতে দেখে কোনো কিছু না বলে ইশা আচমকা অভিকে জড়িয়ে ধরে। এমন একটা সময় শান্তনা সরুপ এভাবে জড়িয়ে ধরাটা মন্দ নয়। একটু হলেও প্রশান্তি লাগছে কেও একজন তো আমার পাশে আছে।
-মি.অভি শক্ত হন। সামনে অনেক কিছু হতে চলেছে। আপনাকে শক্ত হতে হবে। টিম লিডার এভাবে ভেঙে পড়লে কীভাবে হবে?
ইশার কথাশুনে কান্না জরজরিত কন্ঠে একটু হাসির ছায়া ফুটে উঠে।
-আমি কোনো লিডার নই।
ইশা অভিকে ছেরে বললো- কে বলেছে আপনি লিডার নন? আপনার কথায় ডেবিড রিওয়ার্ল্ডে আর্মি তৈরি করছে। আপনার কথায় আমি ফাইট শিখছি। আপনার কথায় জেনি আপু টিমে জয়েন হয়েছে। আপনার কথায় আমরা সবাই এক হয়েছি। তাহলে কীভাবে বললেন আপনি লিডার নন?
– কারন আমার কাছে কোনো অলৌকিক শক্তি নেই যেটা তোমার কাছে আছে। তাই টিমের লিডার আমি নই তুমি। পুরো টিম তোমার উপর নির্ভর।
-আমার কাছে শক্তি আছে ঠিকি কিন্তু তা কীভাবে কন্ট্রোল করতে হয় সেটা জানা নেই। তার থেকে বড় কথা আপনার উপস্থিত বুদ্ধি অসাধারণ যার জন্য আপনাকে সবাই লিডারের চোখে দেখে।
-আচ্ছা বাবা এখন এই নিয়ে ঝগড়া করতে চাই না। তুমি জিতলে।
-বিতর্ক প্রতিযোগিতায় মেয়েরাই শেরা। এটা আপনার জানা উচিৎ ছিলো।
– আচ্ছা আমাকে বার বার আপনি করে না ডাকলেই নয়?
-আপনি করে ডাকবো নয় তো কী বলে ডাকবো? ভাইয়া?
-ও ও না, একদমি না৷ তোমার মুখে ভাইয়া ডাক অনেক অদ্ভুত লাগছে।
-তাহলে কি বলবো সিনিয়র দেখেই তো আপনি করে ডাকি।
-ফ্রেন্ড ভেবে তুমি করে ডাকতে পারো।
– মন্দ নয়। ওকে আজ থেকে তুমি করেই ডাকবো। কিন্তু আবার অন্য কিছু মনে করবেন না।
-অন্য কিছু মনে?
-মানেটা ক্লিয়ারলিই বলি আমি আপনার কাছে মানে তোমার কাছে বা দুজন দুজনের কাছে বার বার ছুটে আসি শুধু ব্লাক স্টনের পাওয়ারের টানে। অন্য কোনো টানে নয়।
ইশার কথাটা বুঝতে কস্ট হয়নি অভির। অভি মৃদ্র সরে ইশার অনেকটা কাছে এসে বললো- তুমি কি আমার প্রতি কোনো কিছু অনুভব করো না। ইশা অভির চোখ থেকে চোখ সরিয়ে বললো- না।
না শব্দটা অভির খুব লাগলো। কিন্তু সব থেকে বেশি লাগলো তখন যখন ইশা ঠোঁটে বাকা হাসি টেনে বললো-আমার বিএফ আছে। ইশার লাইফে আগে থেকেই কেও একজন আছে। কথাটা শুনার পর ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। অভির পা দুটো ইশার কাছ থেকে দু-কদম পিছু চলে গেলো। ভেবেছিলাম হয়তো আমার মতো ওরও আমার প্রতি কিছু ফিলিংস আছে। আমি ভুল ছিলাম। ওটা কোনো ফিলিংস ছিলো না শুধু স্টনের এট্রাকশন ছিলো। নিচু গলায় ইশাকে প্রশ্ন করলাম-তোমার বিএফ আছে এটা তুমি আমাকে আগে বলোনি কেনো?
ইশা একরাশ হাসি নিয়ে বললো-বারে আমার বিএফ আছে এটা কি আমি জনে জনে ঢোল পিটিয়ে বলবো?
-আমি ভেবেছিলাম হয়তো তুমি,,
-হয়তো আমি কী?
-না কিছু না। এমন সময় ব্লেক কফি নিয়ে জেনির আগমন ঘটে।
-অভি তোমার কফি। অভি ইশার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইশাও অভির চোখ থেকে চোখ সরাতে পারছে না। জেনি যে কফি নিয়ে দাড়িয়ে আছে তাদের সেদিকে খেয়াল নেই।
-অভি,,অভি,,জেনি অভির চোখের সামনে হাত নাড়াতেই অভির চোখের পলক পড়ে। ইশাও অভির চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।
-ওহ হ্যাঁ থ্যাংস,জেনির হাত থেকে কফিটা নিয়ে অভি কাপে চুমুক দিতে থাকে।
-তোমাদের মধ্যে আবার লড়াই হলো নাকি।
– না জেনি আপু,আমরা ব্লাক স্টনের পাওয়ার সম্পর্কে কথা বলছিলাম কথায় কথায় আপনি কখন এলেন টেরি পেলাম না।
-ওহ হ্যাঁ মনে পড়েছে। আচ্ছা ব্লাক স্টনের বইটার এই অবস্থা কীভাবে হলো বলো তো?
-কি হয়েছে?
-আমার লাস্টের কয়েকটা পেজ বাকি ছিলো,সেটা পড়ার জন্য বই খুলতেই দেখলাম লাস্টের কয়েকটা পেজ ছেড়া রয়েছে।
-হ্যা তুমি ঠিক বলেছো। আমিও লাস্টের কয়েকটা পেজ পাইনি। অভি আর জেনির কথার মাঝে ইশা উত্তেজিত হয়ে পাশে থাকা ট্রে টা হাতের সাথে লেগে টেবিল থেকে পড়ে যায়।
-ইশা তুমি ঠিকাছো?
-হ্যা আমি ঠিকাছি। সাদ হয়তো আমাকে ডাকছে,আমি শুনে আসি। ইশা দ্রুত পায়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
-ওর আবার কি হলো? অভি তুমি কি ওকে কিছু বলেছো?
-কই না তো? আচ্ছা জেনি শুনো যা যা প্রয়োজন তোমার ব্যাগে নিয়ে নেও আজ রাতেই আমরা রিওয়ার্ল্ডে যাচ্ছি।
-কী আজ রাতে?
-হ্যা, ওখানে যেয়ে পরিকল্পনা করে ওদের জোনেই ওদের মারবো। যুদ্ধের আগে প্রস্তুতি নিতে হবে।
-ঠিকাছে, আমি গুছিয়ে নিচ্ছি ইশাকেও বলে দিচ্ছি।
জেনি রুম থেকে বের হয়ে যায়। কফির কাপটা টেবিলে রেখে অভি আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের উপর নিজেই হাসছে। কি সব ভেবেছিস অভি? স্টুপিড এতোটুকু বুঝতে পারলি না ওটা কোনো ফিলিংস ছিলো না শুধু স্টনের টান ছিলো। ভালোই হয়েছে সব ক্লিয়ার হয়ে গেলো। নাহলে আর কি কি ভেবে ফেলতাম কে জানে। ভিতরটা কেমন যেনো লাগছে। খালি খালি, অপ্রাপ্তি কিছু। না অভি না এসব কি ভাবছিস। এখন শুধু রিওয়ার্ল্ড নিয়ে ভাবতে হবে। শুধু রিওয়ার্ল্ড।

-জেনি আপু এখন রাত একটা বাজে,এতো রাতে ঘুম থেকে উঠানোর কোনো মানে হয় না। এই শীতের রাতে এভাবে ঘুমন্ত মানুষকে উঠানো পাপ নয় মহা পাপ।
-চুপ থাকোতো সাদ সেই কখন থেকে পটর পটর করে চলেছো।
-পটর পটর করবো না তো কি করবো? এই শীতের রাতে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে কি করছি সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
-সবাই এসে গেছে? আওয়াজটা পাশের দেয়াল থেকে আসছে,জেনি আর সাদ দুজন এক সাথে দেয়ালের দিকে তাকাতেই দেখলো ডেবিড দাড়িয়ে আছে।
-ওহ ডেবিড ভাই আপনি তো জব্বর ভয় দেখাতে পারেন।
-সরি সাদ তোমাদের এভাবে ভয় দেখানোর প্ল্যান ছিলো না। যাইহোক তুমি একা কেনো ইশা কোথায়?
-ইশা আপু রেডি হচ্ছে। মেয়েরা রেডি হতে সময় নেয় জানেনি তো।
সাদ হেসে হেসে কথাগুলো বলছিলো হঠাৎ জেনির দিকে চোখ পড়তেই সাদের হাসি গায়েব হয়ে গেলো। জেনি চোখ বড় বড় করে সাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখনি গিলে খাবে।
-না মানে মেয়েরা দেরি করে না,একদমি না। মেয়েরা কখনোই দেরি করে না। ছেলেরাই সব সময় দেরি করে। সব সময়ই দেরি করে। যেমন ডেবিড ভাই আর অভি ভাই আসতে দেরি করছে তেমন। এমনে মেয়েরা অনেক ভালো।
সাদ ভয়ে ভয়ে কথাগুলো বলছে। জেনি যেভাবে তাকিয়ে ছিলো মনে হচ্ছিলো এখনি খুন করবে।
-বাহ সবাই চলে এসেছে? অভি সিরি বেয়ে নামতে নামতে কথাগুলো বললো।
-ইশা কোথায় ওকে দেখছি না?
-এই তো আমি এসে পড়েছি।
ইশা দুটো ব্যাগ হাতে নিয়ে ওদের সামনে এসে দাড়ালো,ইশা প্রতিদিনের মতো আজ নরমাল কাপড় পরেনি ফ্লেক্সিবল ড্রেস পড়ে এসেছে যেভাবে জেনি পড়ে।
-বাহ আপু তোকেতো বলিউড মুভির হিরোইন লাগছে।
ইশা সাদের দিকে একটা ব্যাগ ছুরে মেরে বললো কথা কম বল।
-এটায় কি আছে? সাদ ব্যাগ খুলে দেখলো ভিতরে অনেক ধরনের বোমা রয়েছে।
-নাওযুবিল্লাহ ইশাপু এগুলো দিয়ে আমি কি করবো?
-বোমা ফুটাবি যেভাবে নিউ ইয়ারে ফুটিয়েছিস সেভাবে।
-ওহ তাহলে সাদ এই কাজ করবে। ভালো কাজ পেয়েছো সাদ।
-দূর অভি ভাই মজা নিয়েন না তো। এমনেই ঘুমের ঠেলায় কিছু দেখছি না। আপনার ব্যাগে কি আছে?
-আছে কাজের জিনিস,তবে তোমার মতো বোমা বারুদ নেই।
-সবাই ব্যাগে কিছু না কিছু নিয়ে এসেছে,চলেন ডেবিড ভাই রিওয়ার্ল্ডে নিয়ে চলেন। ব্লেক রিমাসদের বোমা মেরে উরিয়ে দিব।
-সরি সাদ আমি তোমাদের রিওয়ার্ল্ডে নিয়ে যেতে পারবো না। ডেবিডের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়।
-মজা করছেন ভাই? আপনি নিয়ে যাবেন না তাহলে কে নিয়ে যাবে?
-মিস ইশা আপনাদের নিয়ে যাবে। আমি একজন রিমাস আমি যেকোনো দেয়াল দিয়ে রিওয়ার্ল্ডে যেতে পারি। কিন্তু হিউম্যানকে রিওয়ার্ল্ডে নেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। ওটা মিস ইশাই পারবে। উনি প্রবেশ দারের একমাত্র রক্ষক কেবলমাত্র উনিই পারবে প্রবেশ দার খুলে রিমাস আর হিউম্যানকে একসাথে রিওয়ার্ল্ডে নিতে।
অভি-ইশা তুমি কি পারবে?
-হ্যা পারবো, শুধু আমাকে ভাবতে হবে। একটু মনোযোগ লাগিয়ে ভাবলেই প্রবেশ দার খুলতে পারবো।
-তাহলে দেরি কেনো খুলে ফেলো।
ইশা স্থির হয়ে শান্ত গলায় বললো- অপেক্ষা করুন।
-ইশাপু তুই কি মজা করছিস? এতো রাতে এখানে দাড় করিয়ে অপেক্ষা করতে বলছিস? দূর সরেন তো অভি ভাই এখানেই সুয়ে পরি।
সাদ সত্যি সত্যি ব্যাগ রেখে সুয়ে পড়তে নিলে অভি ওকে থামিয়ে দেয়।
-ইশা আমরা কীসের জন্য অপেক্ষা করছি?
হঠাৎ লিফট চলতে শুরু করলো। বিষয়টা জেনির চোখে পড়ে।
-অভি এতো রাতে লিফট দিয়ে কে নামছে?
সবাই এক সাথে লিফটের দিকে তাকায়।
-সত্যিই তো লিফট দিয়ে কেও নামছে। কিন্তু এতো রাতে কে নামছে?
– সেই ষষ্ঠ ব্যক্তি,
-কীহ ষষ্ঠ ব্যক্তি? লিফট দিয়েই সেই ষষ্ঠ ব্যক্তি আসবে?
-আসবে না এসে পড়েছে। ইশার কথা শেষ হতে না হতেই লিফট খুলে গেলো।
-নেহা পেত্নী তুই?

চলবে,,,

#দ্যা_লিফট
#পর্ব_১৫
#Writer_Shanta_islam

–ইশা তুমি মজা করছো? এই মেয়ে আমাদের সাথে রিওয়ার্ল্ডে যাবে?
-হ্যা নেহা আমাদের সাথে যাবে।
-দেখ ইশাপু নেহা পেত্নী গেলে আমি যাবো না।
নেহা লিফট থেকে বের হয়ে সাদের গালে একটা চড় মারে।
-ওই পেত্নী বলিস কাকে? মেরে হাড্ডি ভেঙে দিব। নেহা থাপ্পড় মারায় প্রতিশোধ সরুপ সাদ নেহার চুল ধরে দেয় এক টান। রীতিমতো নেহা আর সাদের মধ্যে ছোট খাটো ফাইট শুরু হয়ে গেছে।
জেনি-এখানে কি হচ্ছে, কেও এদের দুজনকে থামাও। সাদ আর নেহা দুজন দুজনকে মেরেই যাচ্ছে। অভি সাদকে আটকাচ্ছে আর জেনি নেহাকে কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। হঠাৎ ইশার ডান হাত উচু করতেই সাদ আর নেহা দুজন দুদিকে ছিটকে পড়ে গেলো। মনে হলো হাওয়া এসে খুব জরে তাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।
ইশাকে এভাবে অদৃশ্য শক্তি ব্যবহার করতে দেখে নেহা চমকে যায়।
-ই,,ই,,ইশা আপু,
-দেখ পেত্নী দেখ আমার বোনের মধ্যে সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার দেখেছিস এমন পাওয়ার আমারও আছে। আমাদের চৌদ্দগুষ্টির সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার আছে। আমার সাথে লাগতে আসবি এমন জাদু করবো সাউথ আফ্রিকা যেয়ে পরবি।
ইশা নেহাকে হাত ধরে উঠিয়ে বললো-ভয় পেয়ো না। তোমাকে আমাদের প্রয়োজন। তাই তোমাকে আমাদের সাথে যেতে হবে।
নেহা কিছু বুঝতে পারছে না। নেহা একবার ইশার দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার নতুন চেহারাগুলোর দিকে তাকাচ্ছে। কে এরা? আগে কখনো তো এদের দেখিনি। পরিচিতদের মধ্যে শুধু সাদ আর ইশা। কিন্তু আজ ইশা আপুকেও অন্যদিনের থেকে আলাদা লাগছে।
-ইশা তুমি কি সত্যিই ওকে আমাদের সাথে নিবে?
-হ্যা ও আমাদের সাথে যাবে।
নেহা ইশার হাত ছেরে দূরে দাড়িয়ে বললো- না বাবা আমি কোথাও যাবো না।
– এতো রাতে এই ভারি লাগেজগুলো নিয়ে কোথায় যাচ্ছিলে নেহা?
ইশার প্রশ্নে নেহা হকচকিয়ে যায়।
-আসলে,,ইয়ে,,মানে,
-তোমাকে বলা লাগবে না আমিই বলে দিচ্ছি। আজ রাতে তুমি তোমার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে পালাতে যাচ্ছো তাই না?
নেহা শকট হয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে আছে,ইশা এসব কথা জানলো কীভাবে?
-এখন তুমি ভাবছো আমি এসব জানলাম কীভাবে?
-হায় হায় নেহা পেত্নী তুই পালাতে যাচ্ছিলি? তোর মতো পেত্নীরও বয়ফ্রেন্ড আছে ভাবা যায় এগুলো?
ইশা সাদের দিকে চোখ পাকিয়ে কথা বলতে মানা করে। -ইশা আপু আমি,,
-এর জন্যই সেদিন তুমি বেনারসি পড়ে বউ সেজে ট্রায়াল দিচ্ছিলে তাই না। নেহা এবার জোরে জোরে কান্না শুরু করে।
– বিশ্বাস করেন আপু আমি পালাতে চাই নি।
-ইশা তুমি কি সিওর ওকে রিওয়ার্ল্ডে নিয়ে যাবে।
-হ্যা হ্যাঁ হ্যাঁ আমি সিওর, দয়া করে এই প্রশ্ন আর করবে না প্লিজ। ইশা নেহার হাত ধরে চোখটা বন্ধ করার সাথে সাথে নেহার চোখও বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ড দুজন চোখ বন্ধ করে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকে। হঠাৎ নেহা চোখ খুলে আতকে দূরে সরে যায়।
-এ,,এ,,এগুলো, এগুলো আমি কি দেখলাম। এগুলো কি?
-যা দেখেছো সব সত্ত্য দেখেছো। এসব বাস্তবে ঘটেছে।
– ইম্পসিবল এগুলো বাস্তবে ঘটতে পারে না। এগুলো সব অবাস্তব।
ইশা অনেক সময় নষ্ট করছে,এভাবে চলতে থাকলে আজ আর রিওয়ার্ল্ডে যাওয়া হবে না।
অভি-ইশা অনেক হয়েছে। এসব কী করছো তুমি?
ইশা-নেহাকে সবটা দেখালাম।
জেনি-কিহ তুমি কি ওকে পুরো ঘটনা শুধু হাত ধরে দেখালে।
ডেবিড- হ্যাঁ, মিস ইশা যেকোনো মানুষের মস্তিষ্কে ডুকে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিচ্ছবি দেখানোর ক্ষমতা আছে। উনি যে এতো তারাতারি সব কিছু শিখে যাবে তা আমি ভাবিনি।
ইশা নেহার সামনে হাত বারিয়ে বললো- আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন। তুমি কি আমাদের সাহায্য করবে না নেহা?
নেহা ইশাকে জরিয়ে কান্না করে দিলো। ব্যাপারটা সবার কাছে অদ্ভুত লাগলেও তাদের দুজনের কাছে স্বাভাবিক। নেহা ইশার হাত শক্ত করে ধরে বললো- আমি তো অংকে এখনো কাচা,আমাকে তাহলে অংক করাবে কে?
ইশা নেহার গালে হাত রেখে বললো-কিছু হবে না। তোমার উপর অনেক বড় দায়িত্ব নেহা এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না।
-হ্যা আপু কিছু হবে না,আমি কিছু হতে দিব না। এভাবে আপনার হাত শক্ত করে ধরে রাখবো।
নেহা ইশার লুকুচুরি কথোপকথনগুলো মাথায় আটছে না। কি বলছে কি করছে সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তাদের কথোপকথনের মধ্যে ইন্ডিয়া পাকিস্তানের বর্ডার টেনে বললাম- তোমরা কি বলছো তা আমাদের বোঝার বাহিরে তাই দয়া করে রিওয়ার্ল্ডের প্রবেশ দার খুলে দিলে কৃতজ্ঞ হব।
ইশা অভির দিকে মায়াভরা চাহুনিতে তাকিয়ে বললো-এতো তারা কীসের?
-এই ভাই সরেন তো সরেন আমি খেতা বালিশ নিয়ে আসি এখানেই ঘুমাবো আজ। অভি সাদের হাত ধরে বলে-তোমার কস্ট বুঝতেছি ভাই,কিন্তু এই মেয়েগুলো আমাদের কস্ট বুঝতেছে না।
ইশা মুচকি হেসে লিফটের গেটে হাত রাখতেই আশেপাশের জ্বলতে থাকা লাইটগুলো অন ফন হতে লাগলো। সাদ আর নেহা ছাড়া সবাই শক্ত হয়ে তীব্র আগ্রহ নিয়ে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সাদ ব্যাগটা রেখে দুকদম পিছু হয়ে পালাতে নিলেই নেহা সাদের হাত ধরে ফেলে।
-ছার পেত্নী আমাকে ছাড়।
-মনে আছে পরিক্ষার হলে আমার খাতার কি করেছিলি?
-সেই বদলা তুই আজ নিবি। ছার বোইন আমার হাত ছাড়,এটা জীবন মরনের প্রশ্ন। কসম কাটছি আর জীবনো তোর খাতা নিয়ে কাটাছেরা করবো না।
হঠাৎ লাইট একদম অফ হয়ে গেলো,সাদ ভয়ে নেহার হাত উল্টো শক্ত করে ধরে রাখে। জেনি অভি ইশা ডেবিড সবাই অপেক্ষা করছে এর পর কি হতে চলেছে, আচমকা লাইট অন হতেই লিফট খুলে গেলো,আর এর পর ভিতরে যা দেখলো সবাই চোখ বড় বড় করে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এটা কী আদো সম্ভব? লিফটের বাইরে এক দৃশ্য আর ভিতরে অন্য দৃশ্য, এমন মনে হচ্ছে লিফটের ভিতরে অন্য এক দুনিয়া। সবার প্রথম ইশা লিফটের ভিতরে ডুকে সবুজ এক গাছের শিকরে পা রাখলো। ইশার দেখাদেখি জেনি, ডেবিড অভি নেহা লিফটে ডুকলো৷ সাদ বাইরে হা করে তাকিয়ে আছে। নেহা সাদের হাত ধরে ভিতরে টান দিতেই সাদ ভয়ে বললো- আমার মুতে ধরেছে। একটু এমারজেন্সি, এখনি যাবো এখনি আসবো। সাদের কথায় কেও পাত্তা দিলো না। সবাই সামনে এগোতে লাগলো আর পিছন থেকে অটোমেটিক লিফট বন্ধ হয়ে গেলো। উপায় না পেয়ে সাদ সবার সাথে তাল মিলিয়ে হাটতে থাকে। জাগাটা বড়ই অদ্ভুত শ্বাস নিতে কস্ট হচ্ছে। কিছুক্ষনের মধ্যে নেহা আর সাদ হাপাতে লাগলো। শ্বাস নিতে পারছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে।
-ইশাপু শ্বাস নিতে পারছি না।
-ওহ ভুলেই গিয়েছিলাম। ইশা সাদ আর নেহার হাত ধরে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা করলো। সাথে সাথে সাদ আর নেহার শ্বাস নেয়ার গতি বেরে যায়।
-এখন শ্বাস নিতে পারছি। এতোক্ষণ কি হয়েছিলো? শ্বাস নিতে পারছিলাম না কেনো?
-রিওয়ার্ল্ড হিউম্যান ওয়ার্ল্ডের থেকে আলাদা। এখানে অক্সিজেনের মাত্রা খুব কম তাই হিউম্যানরা সহজে নিশ্বাস নিতে পারে না। ডেবিডের কথাগুলো পুরোনো সৃতি জাগিয়ে তুলে। অভির চোখ দিয়ে দু-ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। কেও বুঝতে না পারলেও জেনি ঠিকি বুঝতে পেরেছে অভির চোখ দিয়ে কেনো অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। নিশ্চয়ই টুসির কথা মনে পরছে। অক্সিজেনের অভাবে টুসি মারা গিয়েছিলো। জেনি অভির হাতটা ধরে- তুমি ঠিকাছো অভি?
-এই রিওয়ার্ল্ড আমার কাছ থেকে আমার বোনকে কেরে নিয়েছে। কি অদ্ভুত আজ আমিই এই রিওয়ার্ল্ডকে বাচাতে এই মাটিতে দাঁড়িয়ে আছি। জেনি এক হাত দিয়ে অভির চোখ মুছে দিচ্ছে আরেক হাত অভির কাধে রেখে শান্তনা দিচ্ছে। দৃশ্যটা ইশার চোখ এড়ায়নি। ইশা দেখেও না দেখার ভান করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এটাই তো চেয়েছে সে,জেনি আর অভি যাতে এক হয়ে যায়। তাহলে এতো বাধছে কেনো? কেনো এতো কস্ট হচ্ছে?
-ডেবিড ভাই আপনি তো রিমাস আপনি শ্বাস নিতেই পারেন। কিন্তু জেনি আপু আর অভি ভাই শ্বাস নিচ্ছে কীভাবে? উনাদের আমাদের মতো প্রবলেম হলো না কেনো?
-তুমি অনেক প্রশ্ন করো সাদ,এর আগে উনারা ব্লাক স্টন হাতে নিয়েছিলো। তোমরা নেওনি। এখন মিস ইশা স্টনের কিছু শক্তি দিয়ে তোমাদের শ্বাস নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিলো। এভাবে টুকি টাকি কথা বলতে বলতে ডেবিড সবাইকে ওয়াইট রিমাসদের জোনে নিয়ে গেলো। জোনে আসতেই কতোগুলো হিংস্র জানোয়ার দেখা গেলো। দাতগুলো ইয়া বড় বড়, লেজ যেমন লম্বা তেমন মোটা, শরীর সাপের মতো দেখতে কি বিশ্রী।

-ভা,,ভা,,ভাইরে,,ভাই এগুলা কী? এগুলো ভূত নাকি মন্সটার?
-চিন্তা করো না সাদ এরা তোমার কিছু করবে না। এরা আমার মতো ওয়াইট রিমাস। এদের সাথেই আমরা লড়াইয়ে নামবো। ইশাকে দেখে সবগুলো রিমাস একসাথে ইশার সামনে একটু ঝুকে সম্মান জানায়। একজন রিমাস ইশাকে উদ্দেশ্য করে বললো- স্বাগতম ব্লাক স্টনের শক্তি বহনকারী কুইন। স্বাগতম ব্লাক স্টনের দ্বিতীয় ধারন কারি মি অভি,স্বাগতম সকল হিউম্যানকে যারা আমাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন। এতোক্ষন সাদ ভীতু হয়ে নেহার ওরনা ধরে থাকলেও এখন সাদ নেহাকে ছেরে সবার সামনে এসে দাঁড়ায়।
-ধন্যবাদ ধন্যবাদ,আপনারা কেও চিন্তা করবেন না আমি আছি। আমার কাছে অনেক গুলো বোমা আছে। এগুলো দিয়ে ব্লেক রিমাসদের উরিয়ে দিব। সাদ এমন ভাবে কথাগুলো বলছিলো মনে হচ্ছে বিজয় দিবসে বঙ্গবন্ধুর ভাষন চলছে।
কেও সাদের কথায় পাত্তা না দিয়ে সবাই গোল হয়ে দাড়ালো।
-টিম দুই ভাগে ভাগ হবে৷। ইশা আর্মিদের তুমি লিড করবে। আর এ কাজে সাহায্য করবে জেনি। নেহা আর সাদ কি করবে সেটা ইশার উপর ডিপেন্ড করে। আমি আর ডেবিড লুকিয়ে ব্লেক রিমাসদের জোনে যাবো। ওদের পিছনে কে আছে আর ওদের প্ল্যান কী সেটা জেনে আসবো। এর মধ্যে কিছু হলে আমরা আকাশে রেড সিগন্যাল ছুরে জানিয়ে দিব। সবার ওয়াকি টকি সব সময় সবার কাছে রাখবে। কেও হারিয়ে গেলে উপরে সিগন্যাল ছুরবে। আর হ্যা মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট হলো পিস্তল, সবার পিস্তল সবার কাছে রাখবে আর সাথে রাখবে মশাল। রিমেম্বার আগুনের মশাল শুধু ব্লেক রিমাসদের উপরি মারবে। খেয়াল রাখবে ওয়াইট রিমাসদের জেনো কোনো ক্ষতি না হয়। আর সব থেকে বড় কথা সবাই ইশাকে প্রোটেক্ট করার চেষ্টা করবে। ওরা সবাই ইশার উপর এটার্ক করবে। ইশার কাছ থেকে শক্তি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য প্রান-পন চেস্টা করবে। ইশার গায়ে যেনো কোনো টার্চ না লাগে এটা সবার খেয়াল রাখতে হবে।
-অভি ভাই আমিও আপনাদের সাথে যাবো। এই মেয়েদের মধ্যে আমাকে একা রেখে যাচ্ছেন কেনো?
-ওখানে ঝুকি আছে সাদ। ব্লেক রিমাসদের মধ্যে কিছু বিশ্বাস ঘাতক ওয়াইট রিমাস লুকিয়ে আছে। আগে ওদের ধরতে হবে। কথায় আছে এক ভাতে টিপ দিলে পুরো হারি ভরা ভাতের খবর জানা যায়। আমরাও তাই করবো।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here