ধরিত্রী_কথন #পার্ট১৩,১৪

0
1077

#ধরিত্রী_কথন
#পার্ট১৩,১৪
#পিকলি_পিকু”
১৩

ধরিত্রী! তুমি খাটে আসছ না কেন? নাকি ঠিক করেছ কাউচেই ঘুমাবে?”

ধরিত্রী রাফসানের দিকে তাকালো। এরকম কিছু তো ওর মাথায় ও আসেনি। কী বলছে?

“যদি না আসো তো শোনো। ওখানে থাকার দরকার নেই। তুমি খাটেই ঘুমাও। ওটা নড়াচড়া করার মতো কমফরটেবল না। আমার চিন্তা করো না। আমি নীচেই ঘুমাব।”

ধরিত্রী ওর কথায় কান দিল না। হাস্যকর! এ মা! রাফসান সত্যি সত্যি বেড শিট বের করে নীচে বিছানা করছে। কিন্তু ধরিত্রীর আর্টিকেল টা আরেকটু এডিটিং দরকার। ও সেটা করতে লাগলো। রাফসান নীচে থেকে ধরিত্রীকে দেখছে। অতঃপর কাজ শেষে ধরিত্রী খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লো। রাফসান নীচেই শুয়ে রইলো,

– আমি কাউচে ঘুমাচ্ছিলাম না। আমি খাটেই ঘুমাতাম।
– তুমি কী আমাকে ক্ষমা করেছ?
– না।
– কেন?
– এমনি। উপরে আসো।
– ক্ষমা না করলে আসবো না।
– প্লিজ আসো।
– আগে ক্ষমা করো।

রাফসান কী এখনো বুঝতে পারছে না ও ক্ষমা করেছে? ক্ষমা না করলে কী উপহার নিত? হাসতো? ধরিত্রী তাও কিছু বলল না। কিছুক্ষণ পর রাফসান ঘুমিয়ে পড়লো। অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙতেই রাফসান টের পেল ওর পাশে কেউ শুয়ে আছে। ও অ্যালার্ম বন্ধ করে দেখল ধরিত্রী। ও তো নীচে ঘুমিয়েছিল। নীচেই তো আছে। ধরিত্রী নীচে নেমে এসেছে। রাফসান চিন্তা করলো আরো কিছুক্ষণ শুয়ে থাকবে। ধরিত্রীর ঘুম ভাঙলে ওকে প্রশ্ন করবে। অবশেষে ঘুম ভাঙার পর,

– হ্যালো। এখানে কী করছো?
– আমি? জানি না তো।
– উপর থেকে পড়ে গিয়েছিলে?
– মনে হয়।

ধরিত্রী তড়িঘড়ি করে উঠে যাচ্ছিল। রাফসান ওর হাত টেনে ওকে উঠতে দিল না। এরপর ধরিত্রী লজ্জা পেয়ে বলল,

– সকাল সকাল এসব ভালো লাগে না। ছাড়ো।
– আগে বলো, বালিশ সহ পড়েছিলে?
– না। নিজে নিজেই নেমেছি।
– কেন?

রাফসান ওর হাত ছেড়ে দিল। ধরিত্রী রাফসানের দিকে তাকিয়ে বলল,

– তুমি মাটিতে শোবে, আর আমি খাটে। আমার খারাপ লাগছিল।
– আমার স্যরি এক্সেপ্ট করলে আমরা একসাথে খাটেই ঘুমাতে পারতাম।

ধরিত্রী যেন পাত্তাই দিল না। রাফসান ওর কাছে গিয়ে বলল,

– আমাকে ক্ষমা করেছ?
– তুমি কী বোঝ না? মদন! আমি তোমার গিফ্ট নিয়েছি।
– গিফ্ট নেওয়া মানেই স্যরি।
– হ্যাঁ। আর, আমি ও স্যরি।
– কেন?
– ঐদিন আমার মাথা গরম থাকায় আমি তোমাকে যা তা বলে ফেলেছি।
– ওহ!
– কালকের কফিটাও খুব ভালো ছিল।
– থ্যাংকস।
– আ’ম স্যরি। কিন্তু তুমি তো তোমার কথা খুলেই বলো না। আমার তখন মনে হয়েছিল তুমি অন্য সব পুরুষের মতোই।
– নারীকে ভোগ বস্তু মনে করে। ধরিত্রী, তোমার না অফিসের সহানুভূতির দৃষ্টি অফিসেই রেখে আসা উচিত। আমি জানি আমি নিজেকে প্রকাশ করতে পারি না। কিন্তু আমি এমন না।
– রাফসান, তুমি আমাকে কেন বিয়ে করেছ?

রাফসান ধরিত্রীর চেহারায় তাকিয়ে থাকে। ধরিত্রী লজ্জায় ওর চোখে আর চোখ রাখতে পারে না। রাফসান ধরিত্রীর চুল ওর হাতে নিয়ে এর ঘ্রাণ নিয়ে বলে,

– এটার জন্য।
– মানে?
– এই জিনিসটার জন্য। যে, তুমি কাছ থেকে কেমন ধরিত্রী? এটাই অনুভব করার জন্য।

ধরিত্রী কিছুই বুঝতে পারল না। ও কাছ থেকে কেমন? দূর থেকে দেখেছিল কী?
– ধরিত্রী, তুমি কী এখনো রাগ করে আছ?
– আরে! আমার চেহারা দেখে কী মনে হচ্ছে আমার মন খারাপ?

ধরিত্রী খুব বিরক্ত হয়ে বলল। রাফসান গোবেচারা চেহারা করে বলে,

– আমি কী করে বুঝব?
– বুঝতে হবে। লুক অ্যাট মি। আমি রেগে নেই। তবে তোমার আমার সাথে কথা বলা উচিত।
– বলতে তো চাইলাম। কাল তো বললে না।
– আমার কাজ ছিল। আমি আর্টিকেল লিখছিলাম। তোমার আমার বন্ডিং করার সময় কখন? রাতের বেলা। শুধু রাতটাও মাঝে মাঝে বুকড থাকবে। তখন তো আমরা কথা বলতে পারব না। আমার লেখাই রাতে ভালো হয়। রাতটা মাঝে মাঝে আমি ব্যস্ত থাকবো। তাই অন্য সময় বের করতে হবে।
– কখন?
– লাঞ্চ টাইমে। আমার আজ লাঞ্চ পর্যন্ত, এরপর ছুটি।
– তো?
– আমি তোমার সাথে লাঞ্চ করতে আসবো।

রাফসান তাকিয়ে থাকে। কারণ লাঞ্চে এসে যদি আবার আগের মতো হয় তো,
– কী ভাবছো?
– আই উইল ট্রাই।

রাফসানের কথার ধরিত্রী নাক টানতে লাগলো। নাস্তার টেবিলে যেতে যেতেই ওর আবার হাঁচি শুরু। ও হাঁচি দিচ্ছে আর আলহামদুলিল্লাহ বলে স্যরি বলছে। রুবাইয়া প্রশ্ন করলো,

– কী হলো আবার?
– ঐ যে ফ্লোরে, হাঁচু!! আলহামদুলিল্লাহ! স্যরি।

রাফসান ধরিত্রীর হাত চেপে ধরলো। মাটিতে ঘুমোনোর কথা বলা যাবে না।

– এসি। টেম্পারেচার কম ছিল।
– তুই এত দায়িত্বজ্ঞানহীন কেন? জানিস না ওর ঠান্ডা লাগে।

ধরিত্রী বুঝতে পারলো, “স্যরি মা, আমিই বলেছিলাম। ওর দোষ নেই।” রাফসান ও ধরিত্রীর দিকে তাকালো। বোঝাপড়া হচ্ছে আস্তে আস্তে।

লাঞ্চ টাইমে ধরিত্রী রাফসানের হাসপাতালে হাজির হলো। এই প্রথম ওর বউ ওর সাথে হাসপাতালে দেখা করতে এসেছে। ওর কলিগেরা সবাই ফিসফিস করছে। রাফসান হাসপাতাল থেকে বের হতেই ধরিত্রী ওর হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো,

– কোথায় যাচ্ছ?
– এখানে একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে। এখানে যাব।
– তুমি জানো?
– গুগলে দেখেছি। গুগলে শুধু আজেবাজে জিনিসই না, ভালো জিনিস ও পাওয়া যায়।

ওরা দুজন রেস্টুরেন্টে বসলো। কথা বলল, খাবার খেতে খেতে কথা বলল। কথা শেষে আবার রাফসান কে হাসাপাতালে পৌঁছে দিয়ে চলে গেল। আজকে তো ভালোই গেল সময়। এভাবে ওদের কথা হচ্ছে, গল্প হচ্ছে। জানা হচ্ছে একজন একজনকে। ধরিত্রী একদম রাফসান যেমন ভেবেছিল তেমনই। ওর সব বিষয়ে ইন্টারেস্ট আছে। কাল লাঞ্চ টাইমে ওরা নিউক্লিয়ার বোমা নিয়ে কথা বলছিল। আজকে ধরিত্রী রাফসানকে কাজী নজরুল আর নার্গিসের প্রেম কাহিনী শোনানোর কথা। কথা কোথা থেকে কোথায় যায় কেউ জানে? কাল রাতে রাফসান শুনছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কথা। সেখান থেকেই হয়তো। কাল রাতেই প্রেম কাহিনীটা শুনতে পারলে ভালো হতো। প্রেম কাহিনী শুনতে তো রাতেই ভালো লাগে।

– বলো না, নার্গিস তো বাংলাদেশের ছিল। কাজী নজরুল ইসলাম তো পশ্চিমবঙ্গ।
– সেটাই তো। নিয়তির লেখা কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যায় ঠিক আছে? আমি তোমাকে চিনতাম? তুমিও চিনতে না। মা চিনলো বলেই তো। তেমনি কাজী নজরুল তার বন্ধুর নিমন্ত্রণে তারপর বাংলাদেশে।
– তারপর দেখা হলো। আর প্রথম দেখাতে প্রেম?

রাফসানের ফোন বেঁজে উঠলো। মীরার ফোন। রাফসান ফোন তুলে বলল,

– কী অবস্থা? ভুলে গেছিস?
– তুই ভুলেছিস না আমি? কোনো খবর নেই?
– আসলে, আমি ব্যস্ত।
– দেখতেই পারছি। প্রেম করছিস।
– কোথায়?

রাফসান পাশে তাকিয়ে দেখে রাস্তার ও পারে মীরা।

– তুই এখানে?
– দেখা করতে এসেছিলাম। দুদিন ফেরত গেলাম। ফোন দেইনি, বউয়ের সাথে থাকবি। আজ তো দেখলাম।
– আয় না।
– পাগল নাকি! তোর বউ কী বলবে?

ধরিত্রী রাফসানের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফসান কিছু বলছে না,
– কী বলল?
– ও এখানে। আসবে না।
– প্লিজ বল না আসতে। আমাদের সাথে লাঞ্চ করতে বল না।
– তুমি বলো।

ধরিত্রী ফোন নিয়ে বলল,

– মীরা, আই মিন মীরা আপু। প্লিজ আপনি আজ একটু আসুন না।
– আমি তোমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কী করবো? তোমরা তোমাদের কথা বলো।
– আমরা ইম্পরটেন্ট কিছু বলছিলাম না। আসুন না। গল্প করবো।
– আমি দেখছি ওকে ফোন করে ভুল করেছি।

মীরা ও যোগ দিল ওদের সাথে। ওরা তিনজন খুব সুন্দর সময় কাটালো। সত্যি মীরা অনেক ইন্টারেস্টিং। ধরিত্রীর অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল ওর সাথে গল্প করার।

– ধরিত্রী, তুমি অনেক মজার মানুষ।
– আপনিও অনেক ভালো।
– আপনি বলো কেন আমাকে? ওকেও কী আপনি বলো?
– না।
– তো আমি কেন? এই, আমি কী খুব বড়?
– না না।
– তুমি করেই বলো। আর আসো না একদিন আমার বাসায়।
– অবশ্যই আসবো।

মীরা বাসায় এসে ভাবতে লাগলো, ওদের দুজনকে কী ভালো লাগছে। নবদম্পতিদের দেখতে একটা অসাধারণ সুন্দর লাগে। তাদের ভালোবাসার একটা অন্যরকম রঙ আছে, গন্ধ আছে। আশেপাশের মানুষ ও বুঝতে পারে। নতুন চালের পিঠের মতো নতুন ভালোবাসার গন্ধ। মীরা অঙ্কন আর ওর বিয়ের ছবি দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

রাতের বেলা অঙ্কনের সাথে ডিনার টেবিলে মীরা। ওদের ডাইনিং রুমে শুধুই চামচ আর বাটির শব্দ। এতটা নিস্তব্ধতা ওদের মাঝে। অঙ্কন ও কোনো কথা বলছে না। মীরা আস্তে আস্তে কিছু বলার প্রস্তুতি নিচ্ছে,

– অঙ্কন।
– জ্বী।
– তুমি কী এই শুক্রবার ফ্রি?
– হ্যাঁ। কী দরকার? কোথাও যাবে?
– না। আসলে, ইনভাইট করবো।
– কাকে?
– রাফসান আর রাফসানের বউকে।

অঙ্কন তাকিয়ে থাকে মীরার দিকে। ওর কী একটুও খারাপ লাগছে না? ও কী মেনে নিয়েছে? ও কী সামনে আগাতে চাইছে?

– ওদের সাথে আজকে লাঞ্চ করেছি। তো তাই,
– ওদের সাথে?
– জ্বী।
– ওর বউ ও ছিল?
– হ্যাঁ। হুট করেই দেখা হলো। ওরা খুবই ভালো তো। বিশেষ করে ধরিত্রী। জোর করলো, তাই না করলাম না।
– তুমি সত্যিই কী ওদের ইনভাইট করবে?
– হুম।
– তো আমার মামার যে ফাইভ স্টার হোটেল আছে সেখানে ওদের ইনভাইট করি?
– না বাসায়। তুমি বোধহয় জানো না, আমরা মিডেল ক্লাসরা নব দম্পতি কে বাসায় নিমন্ত্রণ জানাই। বাইরে না।
– জানি। কিন্তু তোমার তো কষ্ট হবে। বাসা গোছানো, এসব অ্যারেঞ্জ করা। অনেক সময়।
– আমি পারবো। আর লোক আছে তো। রাফসান ও খুব একটা আমার বাসায় আসেনি। ধরিত্রী ও প্রথমবার।
– ওকে। তুমি যা চাও মীরা।
– ধন্যবাদ।

মীরা হাসলো। ওকে অনেক দিন পর হাসতে দেখল অঙ্কন। ওর এই হাসির জন্য সব করতে পারে অঙ্কন।

ধরিত্রী আর রাফসান তৈরী হচ্ছে মীরার বাসায় যাওয়ার জন্য। ধরিত্রীর কালো শাড়ির বিমোহিত রূপে নিজেকে সামলানো মুশকিল। আজকেও ড্রেসিংরুমে রাফসান ধরিত্রীকে বাহুডোরে বেঁধে রেখেছে,

– আবার শুরু?
– কী করব? তুমি এত সুন্দর কেন?
– রাফসান, একটা কথা বলব?
– বলো।
– তোমার এই ড্রেসিংরুমে এত আসক্তি কেন?

রাফসান ধরিত্রীকে আয়নার সামনে ফিরিয়ে আবার জড়িয়ে ধরে,

– দেখো।
– কী?
– আমাদের।
– হ্যাঁ।
– এখানে রোমান্স করলে আমি দেখতে পাই আমাদের কেমন লাগছে। আমাদের ভালোবাসাটা এই আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়।
– কী?
– হ্যাঁ। তোমার ঘরের সেই আয়না থিওরির মতো।

ধরিত্রী রাফসানের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাফসান ওকে অনেক ভালোবাসে।

– এভাবে কী দেখছ?
– ভাবছি। তুমি আমাকে কেন ভালোবেসেছ?

রাফসান চুপ করে থাকে। এখন বলতে নিলে আর যাওয়া হবে না।

– বলো না। আমি কোনো বিশেষ কারণ দেখছি না।
– আছে। অনেক সুন্দর কারণ আছে। সেই কারণটা এখন শুনতে চাইলে মীরাকে ফোন করে মানা করে দেই?
– যাহ! অসভ্য! চলো। দেরি হয়ে যাচ্ছে।

রাফসান আর ধরিত্রী মীরার বাসায় এলো। মীরা আর অঙ্কন ওদের হাসিমুখে আমন্ত্রণ জানালো। অঙ্কন শুধু ধরিত্রীকে দেখছে। ওর মতো একজন। মায়া হচ্ছে ওর। এভাবে কীভাবেই যেন ওদের চারজনের জীবন জড়িয়ে গেল।

বর্তমান সময়,

রাফসান ঘুম থেকে উঠেছে শেষ পর্যন্ত। ওর ফোনের অ্যালার্ম বাজলো এতক্ষণে। ঘুম থেকে উঠতেই ওর মাথায় তীক্ষ্ম একটা ব্যথা অনুভব করলো ওর মাথায়। মাথা ঝমঝম করছে। চোখ খুলতেই ও দেখতে পেল ওর সামনে ধরিত্রী আর ধরিত্রীর সামনে মাটিতে বসে আছে মীরা। ও আস্তে আস্তে প্রশ্ন করছে,

– কী হয়েছে ধরা?
– নিজেকেই প্রশ্ন করো না। নিজের অবস্থা টা একবার দেখো।

রাফসান নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো। আর আশেপাশে নিজের পোষাক দেখল। এরপর ও ধরিত্রীর দিকে তাকালো। ধরিত্রী রাফসানের জামা কাপড় নিয়ে ওকে পরতে দিল। রাফসান জামা কাপড়গুলো পরার পর ধরিত্রী বলল,

– ভাবতেও পারোনি আমি এখানে থাকবো, তাই না? লজ্জা করে না? নির্ল*জ্জ, বেহা*য়া, কা*পুরুষ, ল*ম্পট, দু,শ্চরিত্র!
– চুপ করো! কী যা তা বলছ!
– তোমাকে আর মীরাকে এই অবস্থায় একই বিছানায় দেখেও আমি কিছুই বলতে পারব না? নাকি এখনো বলবে আমার নোংরা মানসিকতা। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে একই ঘরে, একই বিছানায়, এরকম নোংরা অবস্থায় থাকা মানে এই না যে ওদের মধ্যে কোনো বাজে সম্পর্ক আছে।

রাফসান মীরার দিকে তাকায়। মীরা রাফসানের চোখে চোখ না মিলিয়ে শুধুই কান্না করছে।

– হয়তো অনেক পবিত্র সম্পর্ক ও থাকতে পারে। কিন্তু ডক্টর রাফসান, এধরণের পবিত্র সম্পর্ক শুধু স্বামী স্ত্রীর হয়। তুমি আমাকে কেন বিয়ে করেছিলে?
– আমি তোমাকে ভালোবাসি ধরা।
– ভুল। মীরার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, কয়দিন আর অপেক্ষা করতে। সেজন্য। কেন তুমি মীরাকে বিয়ে করোনি। ওর তো ডিভো*র্স হচ্ছিল। কেন আমার জীবন নষ্ট করলে।
– ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে ধরা।
– আমাকে ধরা ডাকবে না! সেই অধিকার তোমার নেই। তুমি একটা মিথ্যেবাদী। ধরা পড়েও মিথ্যে কথা থামাচ্ছ না। সারাজীবন বলে এসেছ তোমার সময় নেই। তুমি ব্যস্ত। আমাকে কোনো সময় দাওনি। এখানে ব্যস্ত ছিলে, তাই না?
– আমাকে বিশ্বাস করো। আমাদের ফাঁসানো হচ্ছে।
– কে ফাঁসাচ্ছে? আমি? আমার আর কী বাকি আছে রাফসান? আমি নিঃস্ব! আমার তো সন্দেহ হচ্ছে সেদিন তুমি ব্যস্ত ছিলে না। ওর সাথে ছিলে। সেদিন তুমি থাকলে আমার জীবনটা অন্যরকম হতে পারতো! তুমি না থাকলেই তো আমার জীবনটা অন্যরকম হতে পারতো!

ধরিত্রী চিৎকার করতে থাকে। রাফসান ওকে থামাতে পারছে না। ধরিত্রী রাগে ঘৃণায় রাফসানকে আঘাত করছে। রাফসান ওকে সামলাতে পারছে না। একটু পরেই ধরিত্রীর শ্বাস কষ্ট শুরু হলো। ধরিত্রী শ্বাস নিতে পারছে না। এই জিনিসটা ওর সেই ঘটনার পর প্রায় হয়। রাফসান জানে। তাও ও বিচলিত হয়ে গেল। আস্তে আস্তে ধরিত্রীর কাঁপুনি শুরু হলো। ধরিত্রী মাটিতে বসে গেল। এখনই ওর খিচুনি শুরু হবে। ওর খিচুনি হচ্ছে। রাফসান চিৎকার দিয়ে উঠল। “ধরা! ধরা! ” সেই দিন ও ওর খিচুনি হয়েছিল। সেদিনের ঘটনা মনে করলেই ওর খিচুনি আসে। রাফসান ধরিত্রীকে এভাবে দেখতে পারে না। মীরা ওদের কাছে গিয়ে বলল, “ওর খিচুনি হচ্ছে। ওকে রিল্যাক্স করতে হবে।” রাফসান ধরিত্রীকে কোলে উঠিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। এরপর ওর জামা কাপড় ঢিলে করে দিল। মীরা ধরিত্রীকে হাতের কাছে পাওয়া জানিস দিয়ে বাতাস করতে লাগলো। একটু পর ধরিত্রীর খিচুনি থেমে গেলে। কিন্তু ও অজ্ঞান হয়ে গেছে। মীরা এবার রাফসান কে বলল, “ওকে একটু পর হাসপাতালে নিয়ে যা।” রাফসান মীরার দিকে তাকাতে পারে না আর মীরাও।

(চলবে)

#ধরিত্রী_কথন
#পার্ট১৪
#পিকলি_পিকু

মীরা ওর ঘর সাজাচ্ছে। ওর কাজের লোকেরা হাঁপিয়ে গেছে কাজ করতে করতে। সেখান থেকে একজন বলল,

– ম্যাম, আপনি হঠাৎ এত ব্যস্ত হয়ে পড়লেন যে। আমরাই করে নিতাম।
– না। আমিই করবো। চিন্তা করো না।
– কে আসবে ম্যাম?
– আমার বেস্টফ্রেন্ড। ও আবার আমাকে বড়লোকের বউ বলে অনেক খেপায়। আমার ভালো লাগে না। আমি সেই আগের মীরাই আছি সেটা ওকে বোঝাতে চাই। আমি এখনো ও বাসায় এলে ওকে নিজের হাতে আপ্যায়ন করবো।

এই বলে মীরা গেল রান্নাঘরে। ও বিরিয়ানি রান্না করছে। রাফসানের পছন্দের কাচ্চি বিরিয়ানি। অঙ্কন বাইরে থেকে নানা স্ন্যাকস এনেছে। মীরা এসে সেই স্ন্যাকস দেখছে।

– ভালোই, তবে রাফসান মেইবি পছন্দ করবে না।
– কেন?
– আমি জানি। ওর পরিবারের লোক খুব স্বাস্থ্য সচেতন।
– বিরিয়ানি তো খায়।
– সেটাও লুকিয়ে। আঙ্কেল আন্টি ডক্টর তো।
– তোমার বাবাও তো ডক্টর ছিল।
– ছিল। কিন্তু ওদের পুরো পরিবার। ওরা এত মিষ্টি, নোন্তা, গ্রিজি খাবার খায় না।
– মানুষ তো বদলে যায়।
– রাফসান বদলাবে না। এটা হাই সোডিয়াম। রাফসান খাবে না। এগুলো দিও না।
– অনেক কিছু জানো ওর ব্যাপারে।
– ২৬ বছর ধরে চিনি!
– ও হ্যাঁ। তাও রাখো। সব কী রাফসানের পছন্দ অনুযায়ী?
– তো। ও ! ধরিত্রী ও তো আসছে। ও খেতে পারে।

ধরিত্রী আর রাফসান আসার পর মীরা আর অঙ্কন ওদের হাসিমুখে আমন্ত্রণ জানালো। ঘরে ঢুকেই ধরিত্রী অবাক হয়ে গেল। এত সুন্দর! রাফসান ধরিত্রীর কানে কানে বলল,

– বলেছিলাম না বড়লোকের বউ।
– চুপ!

মীরা ওদের দিকে তাকালো। রাফসান আর ধরিত্রী সোজা হয়ে গেল,
– কী বলছিলি?
– বলছিলাম তুই কত বড়লোকের বউ।
– হ্যাঁ। ইলন মাস্কের বউ।
– অঙ্কন ভাই কী কম নাকি।

অঙ্কন ও হাসলো। ওদের দুজনের কথার মধ্যে ও কোথায় যেন হারিয়ে যায়। যেন ছিলই না। আজকে ধরিত্রী ও আছে। মীরা আর রাফসান, দুইজন দুইজনের দুনিয়া। বাইরের দুটো উপগ্রহকে চোখে না পড়ারই কথা। ধরিত্রী ও তাকিয়ে আছে ওদের কথার দিকে। ওদের সম্পর্কটা অনেক সুন্দর। কত বোঝে ওরা একজন একজনকে।

একটু পর স্ন্যাকস আসার পর মীরা বলল, “লজ্জা পেও না। নিজের বাসা ভাবো ধরিত্রী। এগুলো সব অঙ্কন এনেছে তোমার জন্য।” ধরিত্রী তবুও লজ্জা পাচ্ছে। রাফসান মীরার দিকে মুখ বাঁকিয়ে বলল, “লজ্জা পেও না! আন্টিদের মতো কথা বলছিস। যেন আন্টি হয়ে গেছে।” মীরা ওর কথা শুনে রেগে গেল। এবার ওরা দুজন ঝগড়া করছে। অঙ্কন ওদের দুজনের ঝগড়া দেখছে। আর এদিকে ধরিত্রী স্ন্যাকস গুলো খেয়ে দেখছে। ও খুব উপভোগ করছে খাবারগুলো। অঙ্কনের চোখ ধরিত্রীর দিকে গেল। ওর যেন কিছুই আসে যায় না। এতটা নিশ্চিন্ত ও কী করে? ওর স্বামীর অন্য একজন মহিলার সাথে এত গভীর সম্পর্ক। ওর কী একটুও গায়ে লাগেনা? হঠাৎ ধরিত্রী বলল, “রাফসান, এটা খেয়ে দেখ না। ” রাফসান সাথে সাথে মীরার সাথে ঝগড়া বন্ধ করে ধরিত্রীর দিকে মন দিল। মীরাও ওদিকে তাকালো, “আরে তোর পছন্দ হবেনা। এটা অনেক নোনতা।”

রাফসান ধরিত্রীর দিকে তাকালো। ধরিত্রী বলল,

– তুমি নোনতা খাওনা?
– না ধরিত্রী, ও বেশি নোনতা, মিষ্টি তৈলাক্ত কিছুই খায় না।
– সত্যি!
– ও কী, ওর পুরো পরিবারই খায় না। আন্টিও না। বাইরের খাবার ওকে কখনো খেতে দিত না। তুমি জান না?
– মা তো সেদিন ও বিরিয়ানি খেল। আর রাফসান ও সেদিন মোমো খেলো। আরে, ও তো প্রতিদিন আমার সাথে বাইরে লাঞ্চ করে এখন। মা ও করে। ওরা খায়।
– তাই?

মীরা তাকিয়ে দেখলো রাফসান স্ন্যাকস গুলো খাচ্ছে। অঙ্কন মীরার চোখ দেখে বুঝলো ও ঠিক কতটা কষ্ট পেয়েছে। রাফসান বদলে গেছে। বিয়ের পর ও আর আগের মতো নেই। এই জিনিসটা মীরাকে কষ্ট দিচ্ছে। রাফসান খেতে খেতে বলল,

– ধরিত্রী, ঠিক বলেছ। এটা অনেক মজা। ধন্যবাদ অঙ্কন ভাই।
– আরে ধন্যবাদ কেন। তোমাদের ভালো লেগেছে মানে আমার মীরার ও ভালো লেগেছে। তাই না মীরা?

মীরা জোর করে হাসলো। রাফসান অনেক বদলে গেছে। ওরা অনেকক্ষণ গল্প করার পর এবার মীরা গেল খাবার বাড়তে। ধরিত্রী ও ওর রান্নাঘরে গেল।

– ওয়াও! কাচ্চি! রাফসান বলেছে এটা আমার পছন্দ?
– না। এটা তো রাফসানের পছন্দ।
– তাই? বলেনি তো।

মীরা একটু পর বুঝতে পারলো, কাচ্চি কেন রাফসানের পছন্দ। ধরিত্রী। হ্যাঁ এটাই। রাফসান মীরার কাছ থেকে কফি বানানো ও শিখেছিল একদিন। ধরিত্রী ওকে খুব প্রভাবিত করে। ওর মধ্যে সকল পরিবর্তন ধরিত্রীর জন্যই।

টেবিলে খাবার আসার পর ওরা আবার গল্প করছে,

– আপানারা সত্যি অনেক ভালো। আসলে রাফসানের অন্য বন্ধুরাও অনেক ভালো।
– অন্য? আর কাদের সাথে দেখা হয়েছে?
– ঐ যে, মিম রিমা রাধা। পাওয়ার পাফ গার্লস! হাহাহ! তিনজন একসাথে। বাবলস, ব্লসম আর বাটারকাপ।
– সত্যি! ওরা কবে থেকে একসাথে?
– মানে?
– হ্যাঁ রে রাফসান, ওরা কী একসাথে ছিল?

রাফসান ওর চশমা ঠিক করতে করতে বলল, ” রাধা তো আমাদের সাথে বসত। মিমের গ্রুপ ভিন্ন ছিল আর রিমাও ওদের সাথে এত ঘুরত না। কী জানি? হয়তো বন্ধু হয়ে গেছে। আমাদের কী?” ধরিত্রী বলল,

– রাধা তো আমার ফোন নাম্বার ও নিয়েছে।
– কী! তুমি কেন দিয়েছ ধরিত্রী?

মীরা ধমক দিয়ে উঠল। রাফসান অঙ্কন ধরিত্রী ওরাও থতমত খেল। অঙ্কন বুঝতে পারল কিছু কিন্তু আছে। তাই ও বলল,

– রাধাকে ফোন নাম্বার দিলে কী সমস্যা?
– কোনো সমস্যা না। রাধা ভালো না।
– কী করেছে?
– কিছু না। জাস্ট একটু অন্যরকম। স্যরি ধরিত্রী, ওরা ফোন করলে ধরার দরকার নেই।

রাফসান জানে, ও আসলে সেদিনের জন্যে রেগে গিয়েছে। কিন্তু রাফসান মনে করে রাধা এখন বিবাহিত। ওর বাচ্চা আছে। অভিরূপ আর ওর সন্তানকে নিয়ে ও খুব সুখেই আছে। ও মুভ অন করেছে। ওর আর রাফসানের প্রতি কোনো মোহো নেই। রাফসান কথা ঘুরাতে অন্য কথা শুরু করলো। খাওয়া দাওয়া শেষে মিষ্টির পালা। ধরিত্রী ওর প্রিয় চকলেট কেক খাচ্ছে। আর এদিকে রাফসান মীরার সাথে কথা বলতে গিয়েছে। মীরা ওর খাবার গুলো ফ্রিজে ঢুকাচ্ছিল,

– তুই এখনো রাগ?
– কীসের জন্য?
– রাধা।

মীরা কিছু বলে না। রাফসান তাই বলল,

– ও আমাকে অনেক আগে পছন্দ করতো। সেই মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পরের ঘটনা। এখন তো ও অনেক দিন পার হয়ে গেছে। আমার মনে হয়, এখন আর কোনো ফিলিংস নেই ওর কাছে।
– কে বলেছে নেই? ও বিয়েতে কেন এসেছিল জানিস? তোর বউ দেখতে।
– মানে কী এসবের? বউ দেখতেই তো আসে, তাই না?
– এটা সেই বউ দেখা না। এর অন্য মানে আছে। ও দেখতে এসেছে তোর বউ ওর থেকে বেটার কি না। শুধু এটাই না, মীম রিমাও তোকে পছন্দ করতো। ওরাও একই কারণে এসেছে। আর ওরা সবাই মনে করে আমার জন্য ওরা তোকে পায়নি। তাই ওরা সবাই মিলে আমাকে অপমান করেছিল সেদিন।
– কী! আমাকে বললি না কেন? সবাইকে দেখে নিতাম।
– তুই বিয়ের আসরে ছিলি। কী বলতাম? যাই হোক, ওদের সাথে ধরিত্রীকে মিশতে দিস না। ওরা আবার কী উল্টা পাল্টা বোঝায়।
– আমি তো শুধু জানতাম শুধু রাধা আমাকে পছন্দ করে। মীম রিমা কখন?
– আমি কী জানি?
– এতদিন আমি ভাবতাম আমার কপাল খারাপ। কেউ আমাকে পছন্দ করে না। ধরিত্রী আমাকে পছন্দ করার পর শুনছি এ পছন্দ করতো, ও পছন্দ করতো।
– যাই হোক। সব পুরনো কথা। ওরা বিবাহিত আর তুই ও। ধরিত্রী জানলে শুধু শুধু অশান্তি হবে।

অঙ্কন আড়াল থেকে সব শুনছিল। এই কারণেই মীরা এত রেগে ছিল। রাফসানই এর কারণ। কবে বুঝবে মীরা যে রাফসান আর ওর নেই। ধরিত্রী আর রাফসান বাড়ি চলে আসে। মীরা আর অঙ্কন ও ওদের ঘরে যায়। অঙ্কন মীরার পাশে শুয়ে বলে, “রাফসানের বউ অনেক সুন্দরী, তাই না?”

অঙ্কনের মুখে এই কথা শুনে মীরার কপালে চিন্তার ভাজ এলো। অঙ্কন আবার বলল,

– ও অনেক ফেমিনিন। আমি কখনো ভাবিনি রাফসান এমন একজন নারীসুলভ মেয়েকে পছন্দ করবে।
– কেন?
– মানে, রাফসানকে দেখে মনে হয়নি। ও নিজেই নম্র স্বভাবের। ওর সাথে রাফ এন্ড টাফ কেউ হলে ভালো হতো। তবে ধরিত্রীকে বেশ রাফসানের সাথে মানিয়েছে। এত সুন্দর লাগে দুজনকে।
– অঙ্কন, ধরিত্রী রাফসানের স্ত্রী। আস্তে কথা বলো।
– সেটাই তো বললাম। ওরা খুব সুন্দর দম্পতি। মীরা, আমাদের মতোই।
– আমাদের মতো না।
– কেন?
– কারণ ওদের নতুন বিয়ে হয়েছে। আমাদের সময় হয়েছে।

অঙ্কন মীরার চেহারা স্পর্শ করে দেখে। মীরা চোখ বন্ধ করে নেয়। কিন্তু আবার অন্য দিকে ফিরে গেল।

পরদিন ধরিত্রী খুব তাড়াতাড়ি ওর কাজ শেষ করে রাফসানের হাসপাতালে গেল। সেখানে গিয়ে ও দেখল রাফসান দৌড়াদৌড়ি করছে। ধরিত্রীকে দেখে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল,

– আমি আজকে ব্যস্ত। দেখতেই পারছ।
– জ্বী। লাঞ্চ করেছ?
– না। তুমি বাসায় চলে যাও।

রাফসান চলে যাচ্ছিল। আবার এসে বলল,

– তুমি খেয়েছ?
– না।
– খেয়ে নাও।

রাফসান আবার ছুটলো। ও স্ট্রোক নিয়ে কাজ করছে। আজ ওর নতুন রোগী এসেছে। তার তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দরকার। ধরিত্রী এখনো বাসায় যায়নি। ও দেখছে রাফসান কত যত্নে কাজ করছে। ও ধরিত্রীর সামনে দিয়েই কয়েকবার গেল। কিন্তু ওর খেয়ালই নেই। প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা বসে থাকার পর রাফসান এলো ওর সাথে দেখা করতে,

– পাগল নাকি তুমি! এখনো বসে আছ?
– জ্বী।
– খেয়েছ?
– না।
– কেন?
– তুমিও তো খাওনি।
– আমার তো কাজ।
– তাই বলে অনিয়ম করবে?
– তা না। চলো, খাবে।
– বাড়ি যাবে না?
– না। আজকে আমি এখানে থাকবো। সকালে আসবো।
– তুমি রাতেও থাকো?
– স্যরি। মাঝে মাঝে থাকতে হয়। অবজারভেশনে যারা থাকে তাদের জন্য থাকা লাগে। এতদিন দরকার হয়নি। এই যে উনি, ওনার মোট তিনবার স্ট্রোক হয়েছে। এখানে আসার পর দুবার। উই ক্যান লুজ হার। থাকতেই হবে।
– কেন? এতবার স্ট্রোক কেন করেছে?
– অনেক দুঃখের কাহিনী। ওনার পঁচিশ বছরের সংসার। ওনার স্বামী ওনার ছোটবোনের সাথে ওনাকে চিট করেছে।
– কী বলো!
– জ্বী। উনি এই আঘাত নিতে পারছেন না। খারাপ লাগছে।

রাফসান দেখলো ধরিত্রীর ও মন খারাপ। রাফসান ধরিত্রীর চেহারা স্পর্শ করে ওকে বলে,

– তুমি মন খারাপ কেন করছ? উনি ঠিক হয়ে যাবেন। আসো কিছু খাবে।
– ওকে।

মীরা বলেছিল, ঐ শুধু রাফসানের অপেক্ষা করতে পারে। কিন্তু আজ ধরিত্রী ওর জন্য সর্বোচ্চ সময় অপেক্ষা করলো। দরকার ছিল না। খারাপ লাগছে ওর। তবে আজ ধরিত্রী বুঝতে পেরেছে, ওর সত্যিই অনেক কাজ। খাবার খাওয়ার পর ধরিত্রী বাড়ি চলে আসলো। সারারাত ওর মাথায় শুধু ঐ মহিলার কথাই ঘুরছিল। কতটা কষ্ট পেয়েছিলেন নিজের খুব কাছের দুজন মানুষকে তার সাথে প্রতারণা করতে দেখে? তাই মাঝরাতেই ধরিত্রী ফোন করে বসলো রাফসানকে,

– হ্যালো, তুমি কেমন আছ?
– ওকে। তুমি এখনো ঘুমাওনি কেন?
– ঘুম আসছিল না।
– তুমি বেশি দুশ্চিন্তা করছ।
– উনি কেমন আছেন?
– মোটামুটি। এখনো বিপদ কাটেনি।
– ওনার পাশে ওনার পরিবারের কে আছে?
– ওনার বিশ বছরের ছেলে আর পনের বছরের মেয়ে।
– আশ্চর্য! টাকা পয়সা কে দিচ্ছে?
– ওনার দেবর আছেন। খুব বেশি পারবে না হয়তো। শুধু মানবতার খাতিরে।
– স্বামী?
– এখানে নেই। এই কাজ করার পর কেন থাকবে? তুমি এখন ঘুমাও তো।
– আচ্ছা, আমি কাল সকালে এসে কথা বলব।
– কেন? কী করতে যাচ্ছ?
– জাস্টিস।

ধরিত্রী ফোনটা রেখে দিল। ও জাস্টিস দেবে। এ ধরণের প্রতারকদের শাস্তি হওয়া উচিত। কাল সকালে ধরিত্রী ওর জাগরণ পত্রিকার সহকর্মীকে নিয়ে চলে গেল হাসপাতালে। আজ একজন নারী হিসেবে তুলে ধরবে আরেক নারীর কাহিনী। ধরিত্রীর লেখা অনেক ইন্টারনেট আর্টিকেলের মতো এটাও ছড়িয়ে পড়লো পুরো সোস্যাল মিডিয়াতে। কিন্তু এবার ও নেটাগরিকরা বিভক্ত দুই দলে। কেউ দোষ দিচ্ছে নারীর স্বামীর, আবার কেউ দোষ দিচ্ছে নারীর বোনের। দিন শেষে নারীরাই নারীর সবচেয়ে বড় শত্রু এটাই মূখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ালো। কোথাও যেন হারিয়ে গেল সেই নিপীড়িত নারীর কষ্ট টা। ধরিত্রীর মূল লক্ষ্যটাই পথ ভ্রষ্ট হলো। আবার কোথা থেকে এক পক্ষের উদয় হলো। শুধু এক পক্ষের বক্তব্য ছাপাচ্ছে এই নারীবাদীরা, সেই পুরুষটা কেন এই কাজ করলো? সেই পুরুষের বক্তব্য কী প্রকাশ করেছে? পুরুষ বলে কী তার আকাঙ্ক্ষা থাকতে নেই?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here