ধরিত্রী_কথন #পার্ট১৮,১৯

0
1044

#ধরিত্রী_কথন
#পার্ট১৮,১৯
#পিকলি_পিকু
১৮

“রাফসান, ভাবির এই অবস্থা এত সকালে? আর তুই একা আনলি কেন? আন্টি কোথায়?”

ধরিত্রীর এই অবস্থা দেখে রাফসানের বন্ধু জিজ্ঞেস করলো। রাফসান এখন কিছুই বলতে পারবে না।

– মাকে এত সকালে বিরক্ত করিনি। এখন ও কেমন আছে?
– দুর্বল। একটু পর বাড়ি নিতে পারবি। হাইপার হলো কেন? ওনার না বারণ।
– জানি না। হয়ে গেল।
– খেয়াল রাখতে পারিস না।

রাফসান চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। ওর ফোনে এখন রুবাইয়ার কল আসলো।

– তোরা এত সকালে কোথায় গিয়েছিস?
– এমনি। বের হলাম।
– সব ঠিক হচ্ছে তোদের মধ্যে? যাক আলহামদুলিল্লাহ। দেখ, ওকে আর রাগাবি না। যা বলে শুনবি। ওর অবস্থা বোঝার চেষ্টা কর। দেখবি ও একদিন আবার আগের ধরিত্রী হয়ে যাবে।
– হুম।
– আমার মনে হয় মণির নতুন সাইকিয়াট্রিস্টটা ভালোই। ঔষধ গুলো কাজে দিচ্ছে। আগের মতো চিৎকার করে না।
– মা, এখন রাখি।
– হ্যাঁ হ্যাঁ। মণিকে সময় দে। আর শোন, হাতটা ধরে রাখিস। একটুর জন্য ছাড়বি না।
– ওকে।

রাফসান ফোনটা রেখে ধরিত্রীর কাছে গেল। ও কীভাবে বলবে ওর কোনো দোষ নেই। ও কী করে প্রমাণ করবে?

অতীতে, ধরিত্রীর এপিলেপসির চিকিৎসা সবে শুরু হচ্ছিল। ডাক্তার রিপোর্ট সব দেখলেন। ডাক্তার আব্দুল মোমিন, নিউরোকেয়ারের ডিরেক্টর। রাফসান ওনার আন্ডারেই প্র্যাকটিস করেছিল।

” রিপোর্টটা তো ভালোই। তবে ধরিত্রী, কী কারণে মেডিকেশন বন্ধ করেছিলে?”

ধরিত্রী লজ্জা পেয়েছে। রাফসান ওকে সাহস দিয়ে বলতে বলল,

– ঘুম পেত প্রচুর।
– আরে! তাই বলে মেডিকেশন ও কন্টিনিউ করবে না? পড়াশোনা জানো তো। শিক্ষিত মানুষ হয়ে এসব কাজ সাজে না। চাইলেই হুট করে এসব রোগের ঔষধ ছাড়া যায় না।
– স্যরি, আসলে আর হয়নি তো।
– তাই বলে হবে না? বুঝতে পারছি এখন স্ট্রেস ফ্রি, প্রেসার ঠিক কিন্তু প্রেসার হাই হলে রিস্ক আছে।
– জ্বী!
– হ্যাঁ। প্রেগনেন্সিতে থাকবে। মায়েদের খিচুনি অনেক বড় রিস্ক। তোমার তো হিস্ট্রি আছে। কেয়ারফুল থাকতে হবে।

রাফসান জিজ্ঞেস করলো,

– স্যার, এখন কী করব?
– ঔষধ দিচ্ছি। কন্টিনিউ করবে। আর প্রেগনেন্সির সময় এক্সট্রা কেয়ারে থাকবে। স্ট্রেস নেওয়া যাবে না। প্রেসার কন্ট্রোলে রাখবে। একটা অ্যাটাক আর সব নষ্ট করে দিতে পারে। ধরিত্রী, তোমার ঔষধ টা ছাড়া উচিত হয়নি।

ধরিত্রী লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখলো। রাফসান আবার বলল,

– স্যার, প্রেগনেন্সির কী কোনো সঠিক সময় আছে?
– সেটা গায়নোকলজিস্ট ই ভালো বলতে পারে। রুবাইয়াই তো বেটার বলতে পারবে। তবে আমি যতটুকু বলতে পারি ওর অবস্থা দেখে যে এই সময়টা বেস্ট। বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্ট্রেস আর বি পি পক্ষে নাও থাকতে পারে। তবে ধরিত্রী, বাচ্চার জন্য ওজন বাড়াতে হবে। রিস্ক হয়ে যাবে। ৪৫ কেজি, অনেক কম।

ধরিত্রী চুপ করে থাকে। সেখান থেকে বের হতেই ও রাফসানকে বলল,

– খুব তো বাচ্চা বাচ্চা করছিলে সেখানে। বাবা হওয়ার খুব শখ নাকি?
– কার নেই?
– যোগ্যতা আছে?
– কী বলতে চাও?
– বউ কে সময় দাও না, বাচ্চাকে দেবে? আগে যোগ্য হাসবেন্ড হও, দেন আমি দেখব কারো বাবা লাগবে কি না।

এই বলে ধরিত্রী মুখ বাঁকিয়ে চলে আসলো। রাফসান ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, “যাক, স্বাভাবিক তো হচ্ছে। ”

বাসায় জোহরা অপরাধীর মতো বসে আছে। ওনার সামনে রুবাইয়া বসে আছে।

– এত সুন্দর স্ট্রং একটা মেয়ের জন্ম দিয়েছ, আর তাকে কি না তুমি এমন দুর্বল বানিয়ে রাখতে চেয়েছিলে? আমার ভাবতেও অবাক লাগছে যে ধরিত্রী নিজেকে এমন ছোট মনে করত, তাও একটা মেডিকেল কন্ডিশনের জন্য।
– আপা ক্ষমা চাই। আমার বলা উচিত ছিল।
– না, তোমার ভাবা উচিত ছিল। এটা একটা মেডিকেল কন্ডিশন। ওর যদি অফিসে কখনো এমন হতো।
– হবে না তো। ওকে মুন্সী হুজুরের তাবিজ দিয়েছি। হয়নি তো এরপর।
– জোহরা, মাঝে মাঝে মনে হয় ধরিত্রী কি আসলেই তোমার মেয়ে?
– আমারই মেয়ে। চেহারা দেখুন।
– চেহারাতেই শুধু। তাবিজ দিয়ে রোগ সারানো। তাও আবার এমন। বাদ দাও। তবে আর কিছু থাকলে এখনই বলে দাও। পরে যাতে ঝামেলা না হয়।
– আর কিছু? আর কিছু বলতে সিলেটে মাজারে যাওয়ার কথা ছিল ওর বিয়ের পর।
– জোহরা!
– আর কী?
– তুমি এত অন্ধ বিশ্বাসী কেন?
– সত্যি বলতে, আমি মাজার বিশ্বাসী না। কিন্তু ঐ মাজারে যাওয়ার মানতের পর ওর জীবন বেঁচেছিল। তাই আর কি।
– আচ্ছা ঠিক আছে। শুধু ও?
– হ্যাঁ।
– স্বামী সহ করোনি তো?
– না। ওকে নিয়েই।

ধরিত্রী ওর মা বাবার সাথে মাজারে গিয়েছে। তিন দিনের জন্য। রাফসান এখন একা। শুধু ধরিত্রীকে মিস করছে। একটু সময় পেলে কল করার চেষ্টা। প্রথম দিন এভাবেই গেল। দ্বিতীয় দিন লাঞ্চ টাইমেও ব্যস্ত ও। তবুও অনেক দিন পর মীরা এসেছে। ধরিত্রীর সাথে একটু পর কথা বলবে,

– আরে! কত্তদিন পর!
– আমাকে তো ভুলেই গেছিস।
– মন খারাপ করিস না। অনেক কাহিনী হয়েছে।
– কী করেছিস? বলে দিয়েছিস?
– কী?
– কোচিং?
– হ্যাঁ। একটু দাঁড়া। আমি ওদিক থেকে আসছি। ওখানে ডাকছে।

রাফসান চলে যায়। দশ মিনিট পর আসে। মীরা সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর মীরাকে ও সব খুলে বলে। মীরা অবাক হয়ে সব শুনে,

– এখন কেমন আছে?
– ভালোই। তবে আমার না ভয় করছে।
– কীসের?
– ধর, বাচ্চা নেওয়ার সময় কিছু হলো। আমি কী করে নিজেকে ক্ষমা করবো?
– তো নিস না।
– পাগল নাকি? আমি তোর মতো? আমি বাচ্চা চাই। আমাদের বাচ্চা। কমপ্লিট ফ্যামিলি।
– যাদের বাচ্চা নেই তারা কী ফ্যামিলি না?
– কমপ্লিট না।
– এটা কোথাকার কথা?
– আমার কথা। আমার ভিউস। আমি এখন এটা নিয়ে তোর সাথে ঝগড়া করতে চাই না। কিন্তু আমি আমাদের বেবি চাই। আমার আর ধরিত্রীর বাচ্চা। আমরা প্যারেন্টস হবো। এমন স্বপ্ন দেখাতে দোষের কী?
– কিন্তু, ওর যে সমস্যা?
– ডাক্তার বলেছে আমরা যদি এখনই একটা বাচ্চা নেই তো রিস্ক কম। পরবর্তীতে এটা আরো বাড়বে।
– তোরা এডপ্ট ও তো করতে পারিস।
– এটা পরের কথা। আগে আমরা দেখব ওর শরীর নিতে পারবে কি না। ও কী বলে, ওর ইচ্ছা। কিন্তু ও খায় না তো। যখনই দেখ আনহেলদি বাহিরের খাবার। হাতটা দেখ, এই চিকন। একটা চুড়ি কিনলাম, ঢিলে হয়। আগে একটু ওজন বাড়ুক। তারপর দেখি।
– তুই ওকে খুব ভালোবাসিস, তাই না?
– হ্যাঁ। খুব। আচ্ছা, অঙ্কন ভাই কোথায়?
– মালয়েশিয়া।
– কবে গেলেন?
– কাল। বাদ দে। লাঞ্চ করবি?
– আজ হাসপাতালে করবো। টাইম নেই বাইরে করার।

মীরা মুচকি হেসে বিদায় নিয়ে চলে আসলো। এদিকে ধরিত্রী মাজারে গিয়েছে। ওরা মাজার একদম সমর্থন করে না। কিন্তু ওর মা কোন বন্ধুর থেকে শুনে এই মানত করে বসে। এখন অন্ধবিশ্বাসীর মতো আসতে হচ্ছে। নইলে মা আবার কান্নাকাটি করতে পারে। রাফসানকে ও খুব মিস করছে। একটা কল ও করেনি। রাতের বেলা একটা কল করেছে। মা পাশে ঘুমিয়ে। ফোন তো ধরবে না। এভাবে তিনদিন পর ঢাকা আসলো ওরা। এখন কিছুদিন মায়ের কাছে বেড়াবে। রাফসান বাসায় এসে দেখলো না ধরিত্রী কে,

– মা, ও কোথায়?
– এ মা! বলেনি? ও জোহরার কাছে।
– মানে? এতদিন পর এসে? বাসায় আসবে না?
– তুই কল করিস নি?
– ও কী অসুস্থ?
– একটু ক্লান্ত। জার্নি করলো। ওখানেই থাকবে।

রাফসান মন খারাপ করে মাথা নিচু করে আছে। রুবাইয়া রাফসানের কাছে গিয়ে বলল,

– ব্যাগ নে।
– কেন?
– ব্যাগ নে আর জামা কাপড় নে। শ্বশুর বাড়ি যাবি।

কী লজ্জা লাগছে। এভাবে ধরিত্রীদের বাসার সামনে। ধরিত্রী দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে। বাসার ঢিলে ট্রাউজার, টি শার্ট আর এমনি একটা ওড়নায় ধরিত্রী। রাফসানকে দেখেই বিব্রত হয়ে গেল। রাফসান এখনো বাহিরে দাঁড়িয়ে। রাত এগারোটা বাজে। “কীরে, কে আসলো বললি না কেন ?” জোহরা বলতে বলতে আসলো। এসে জামাইকে দেখে থতমত খেয়ে গেল।

রাফসান ঘরে ঢুকেছে। জোহরা টেবিল সাজাচ্ছে। লজ্জায় রাফসান বলতে পারছে না ও খেয়ে এসেছে। ধরিত্রীকে আস্তে আস্তে ডাকছে ও। ধরিত্রী শুনেও না শোনার ভান করলো। হঠাৎ ই “ধরা!” ধরিত্রী রাফসানের দিকে তাকালো। ধরা ডাকলো কেন?

– ওনাকে বলো, খেয়ে এসেছি।
– তুমি বলো।
– লজ্জা করছে।
– তোমার মাকে আমি সব বলি না?

“চিনি! ‘তোমার মা’ মানে কী? উনি তোর মা না?” জোহরা ধরিত্রী কে ধমক দিল। ধরিত্রীর চেহারা খারাপ হয়ে গেল। রাফসান এবার নিজেই বলল,

– আমি খেয়ে এসেছি।
– এ কী বাবা, একটু কিছু খাও। জামাই মানুষ।
– খিদে নেই।

রাফসান শুধু পানি খেয়ে ঘরে ঢুকল। ধরিত্রীর ঘরটা কেমন আপন আপন। রাফসান এসেই ওর খাটে শুয়ে পড়ে। ধরিত্রী ওর পাশে এসে বসে,

– খবর হলো তবে।
– স্যরি। প্রথম দিন করেছিলাম তো। দ্বিতীয় দিন সময় হয়নি। তাই তুমি আর কল ধরোনি।
– এত রাতে কেউ কল দেয়? মা ঘুমাচ্ছিল পাশে।
– ও!
– টেক্সট দিতে পারতে!
– ওওও! স্যরি! মনে ছিল না। তুমি তো দিতে পারতে।
– কে পারত, পারতো না বাদ দাও। এখন বলো, কেন এসেছ? মিস করছিলে?
– মা বলল।

ধরিত্রী মুখ বাঁকিয়ে বলল,
– মা বললেও, মিথ্যা টা তো বলতে পারতে।
– মিস করছিলাম, তাই মা বলল যা।
– সিরিয়াসলি মিস করছিলে?
– হুম।

রাফসান ধরিত্রীর কাছে এসে বলল। ধরিত্রীর নিশ্বাস যেন থেমে গেল,

– আমি কাছে না থাকলে আমাকে মনে পড়ে?
– হুম।
– তো খোঁজ নাও না কেন?
– সময় হয়নি। আচ্ছা, এখন থেকে ক্ষণে ক্ষণে মেসেজ করবো।
– জোর করে করার দরকার নেই।

ধরিত্রী উঠে আসতেই রাফসান ওকে পেছন থেকে আটকে দেয়, “ধরা, আর ঝগড়া না করি। এমনিতেই এতদিন আলাদা ছিলাম। অভিমান করো না।”
ধরিত্রী রাফসানের সামনে ফিরেই ওর বুকে ঢলে পড়ে। রাফসান ওকে কাছে টানলে ধরিত্রীর আর কিছু মনে থাকে না। সব কেমন আবছা আবছা লাগে। বরফ গলা নদী হয়ে যায়। খুব ভালোবাসে ও রাফসানকে। খুব একটা মহৎ কারণ নেই, তবুও। এত ভালো কেন বাসে? দুর্বল হয়ে যায় ধরিত্রী। দুর্বলতা থাকা খারাপ না, তবে কোনো মানুষ মানুষের দুর্বলতা হওয়া উচিত না। তখন তারা আবেগ নিয়ে খেলে। এই আবেগ দিয়ে একজন মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে। কখনো কখনো সামনের মানুষটা অজান্তেই করে থাকে।

প্রায় অর্ধ ঘুমন্ত রাফসানের বুকে মাথা রেখে ধরিত্রী শুয়ে আছে। দুজনেই একই চাঁদড় মুড়িয়ে। ধরিত্রী কিছু একটা বলতে চায়,

– রাফসান।
– হুম।

ঘুম ঘুম কণ্ঠে সে বলল। ধরিত্রী কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল,

– তুমি আমাকে ধরা কেন ডাকলে?
– ইচ্ছে হলো, তাই।
– কেন ইচ্ছে হলো?
– এমনি।
– আমি কী কখনো সোস্যাল মিডিয়াতে লিখেছিলাম যে আমার ভালোবাসার মানুষ আমাকে ধরা বলে ডাকলে আমি খুশি হবো?
– না। বললেও আমি দেখিনি। কখন বলেছিলে?
– বলিনি। এটা শুধু আমার ইচ্ছা ছিল। মনে মনে।
– তাই?
– হুম। কী করে জানলে, আমার মনের খবর?
– জানিনা। হঠাৎ ইচ্ছে হলো ডাকি, ধরা।
– আবার বলো।
– ধরা, ধরা, ধরা। আমার ধরা!
– রাফসান।
– জ্বী। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ।
– পাগল হয়েছ?
– কেন?
– আমি কোথায় যাব?
– হাসপাতালে।

এরপর ওরা দুজনেই হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে আবার চুপ হয়ে যায়। পাশের ঘরে বাবা মা না জেগে যায়।

– কাল একটু জলদি এসো। আমরা মামার বাসায় যাব।
– সত্যি?
– হ্যাঁ। সন্ধ্যায়। চাচ্চু ও আসবে। ওনারা তোমার সাথে খুব কম কথা বলেছেন।
– কী জন্য বলবে?
– ভবিষ্যতে আমার সাথে উল্টো পাল্টা কিছু করলে ধো*লাই দিতে।
– তাই?
– হ্যাঁ। একটা মাত্র মেয়ে কি না। কিছু করেই দেখো। রাফসানের রাফ একদিকে আর সান অন্যদিকে থাকবে।
– হুমকি দিচ্ছ?
– সাবধান করছি। সাবধান ডক্টর রাফসান! আমি ক্ষমা করলেও আমার মামা চাচা করবে না।
– তুমি একদম টিনেজারদের মতো কথা বলছ। মামা চাচার গরম দেখাও?
– হ্যাঁ। এরপর থেকে ফোন না করলে,
– মামা চাচা কে বলে দেবে? দাও। আমিও বলব আমাকে বান্ধবীর ছেলে বলতে।
– কিছুই হবে না। আমার জন্য সাত খু*ন মাফ। হাহাহ!

ধরিত্রী হাসতে থাকে। ইদানিং ও রাফসানের সামনে কেমন বাচ্চা মেয়ে হয়ে যায়। ওর সোস্যাল মিডিয়ার সেই ম্যাচিউর পার্সোনালিটিটা থাকে না। এই বাচ্চা মেয়েটা রাফসানের বেশি পছন্দ। রাফসানের ধরা ক্ষণে ক্ষণে বদলে যায়। বর্তমানে অন্য এক ধরা যেন। ম্যাচিউর আর বাচ্চা ধরা থেকে পুরো ভিন্ন। আশেপাশে কাউকেই সহ্য করতে পারে না সে। হুট করে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। মাঝে মাঝে ভাঙচুর ও করে। সম্পূর্ণ আলাদা এক মানুষ। এখন আবার ওর সামনে হাসপাতালের বেডে নিশ্চুপ ঘুমাচ্ছে।

(চলবে)
#ধরিত্রী_কথন
#পার্ট১৯
#পিকলি_পিকু

মামাদের বাসায় রাফসান, ধরিত্রী আর ওর বাবা মা। কোথায় এসে গল্প করার কথা। না, একদম খাওয়ার আগেই আসলো। এখন খেতে বসলো। মামা একদম বেড়ে খাওয়াচ্ছে রাফসান কে। মামার ও মেয়ে নেই, চাচার ও মেয়ে নেই। তো রাফসান একটা মাত্র জামাই। আদর ওর সবখানে বেশি। লবঙ্গর এত তেল মশলা ওয়ালা খাবার রাফসান একদম খেতে পারছে না। তবুও লবঙ্গ পাতে তুলে দিচ্ছে। রাফসান না করতে পারছে না। ধরিত্রীর সাথে যতই খুনসুটি থাকুক না কেন, রাফসানের সাথে একদম অন্যরকম। জামাই বলে কথা। লবঙ্গ মাছটাতে খুব ঝাল দিয়েছে। এমনিতেও রাফসানের মাছে গন্ধ লাগে।

চাচা ও কম যাচ্ছে না। ওনারা বসে বসে ধরিত্রীর ছোটবেলার গল্প করছে। এত ছোট ছিল। মামা চাচা ঝগড়া করতো কে কোলে নিবে। কে কত রাকাত নফল নামাজ পড়েছিল ধরিত্রীর জন্মের সময়। খুব আদরে মানুষ বুঝতে পারছে। আর কখনো একটু কিছু গন্ডগোল হলে খবর আছে তাও বুঝতে পারছে।

“বুঝলে, আমার শাশুড়ি মা আমার বিয়ের আগেই মারা গেছেন। তবে একটা শাশুড়ি রেখে গেছেন।” লবঙ্গ হাসতে হাসতে বলল। ধরিত্রী লবঙ্গের কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসছে। কী অর্থে শাশুড়ি বলছে বুঝতে পারছে। জোহরা বলল, “চিনি তো প্রথম থেকেই আম্মার সেক্রেটারি। আমার আম্মার কপি। আম্মার মতো করেই আম্মা সব তৈরী করে গেছেন।” লতিকা হাসতে হাসতে বলল, “ট্রেনিং দিয়ে গেছে আর কি। নানি আর নাতনি একদম এক রকম। তবে দাদির মতোও হয়েছে। কথায় চোখ নাড়ানোটা দাদির মতো। এইতো, এখন নাড়ালো। সার্বজনীন শাশুড়ি।”

তবে লবঙ্গকে দেখে রাফসানের খুব রাগই হচ্ছে। এখনো খোঁচা দিয়ে যাচ্ছে। ধরিত্রী ও খোঁচাচ্ছে। কীভাবে এত স্বাভাবিক ব্যবহার করে ওরা জানে। যাই হোক, কাল সকালে ওরা একেবারে বিদায় নিয়ে আসলো। রুবাইয়া ওকে খুব মিস করেছে বুঝতে পারছে। কিন্তু বিয়ের পর ধরিত্রী বাকি সবার মতো এত বাপের বাড়ি যায়নি। পরদিন দুপুরের পর ধরিত্রী রাফসানের হাসপাতালে হাজির হলো। ওর কলিগেরা সবাই ফিসফিস করছে। নীল রঙের জামা পরে এসেছে। রাফসানের বউ এত সাজুগুজু করে না। কিন্তু যাই করে, খুব সুন্দর লাগে ওকে। রাফসান বের হতেই ধরিত্রী ওদের কাছে গিয়ে বলল, “একটু হাইজ্যাক করে নিয়ে যাই?” বউ যখন বলছে তখন আর তার স্বামীকে ধরে রাখা যায় না। সাবিত্রী আর বেহুলাও তো নিয়ে এসেছিল। অনুমতি পেয়ে গেল ধরা।

– আজকে এভাবে কেন আসলে?
– কাজেই। আমার নতুন আর্টিকেলের টপিক “যুগলের বৃষ্টি বিলাস।”
– তো?
– আজকে নাকি বৃষ্টি আসবে। চলো, আজকে একটু বৃষ্টিতে ভিজব, চা খাব।
– ইউ মিন টু সে, ডেট?
– রেইনি ডে ডেট।

ধরিত্রী মাথা নাড়ে। রাফসান ধরিত্রীর হাত জড়িয়ে হাঁটতে থাকে। এরপর ওকে ঝালমুড়ির দোকানে নিয়ে যায়।

– এখানে কেন?
– কারণ, একটু পর বৃষ্টি আসলে ওনারা থাকবে না।

ঝালমুড়ি খেতে খেতে ওরা আরেকটু সামনে আসলো। রাফসান হঠাৎ করে বলল,

– কই?
– কী?
– তোমার বৃষ্টি কই?
– বললেই আসবে? মেঘ আসতে দাও। তারপর।
– “একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে।”
– হুম। এটাই টাইটেল।

ওরা এখন রাস্তার ধারের যাত্রী ছাউনিতে বসে বৃষ্টির অপেক্ষা করছে।

– ফটোগ্রাফার কোথায়?
– কেন?
– ছবি হবে না? আর্টিকেলে তো ছবি দাও।
– আমরা কী মডেল হবো নাকি। আমার আর্টিকেল অনুযায়ী মডেল হবে আলাদা।
– আমি তাহলে গিনিপিগ?
– হ্যাঁ। তোমার উপর আমি আর মেডিসিন টেস্ট করব।
– একটুও খারাপ লাগলো না?
– না।

তখনই হঠাৎই মেঘ ডাকতে শুরু করলো। আর ধরিত্রী রাফসানের হাত চেপে ধরলো। রাফসান ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
– ভয় পাও?
– চুপ করো।

আরো জোরে বজ্রপাত হলো। ধরিত্রী যেন কেঁপে উঠলো। রাফসান ওর হাত জড়িয়ে বলল,

– এই দুর্বল হৃদয় নিয়ে নাকি বৃষ্টি বিলাস করবে।
– আমার বজ্রপাত একটু ভয় লাগে। জোরে জোরে শব্দ হয় যে সে জন্য। হার্টবিট বেড়ে যায়।
– আচ্ছা, ধরেছ যখন ভালো করেই জড়িয়ে ধরো।

ধরিত্রী চোখ ইশারা করে পাশের এক আঙ্কেল আন্টি কে দেখাল। রাফসান মুচকি হাসলো। ওনারা অন্য কিছু ভাবছেন। ভাবছেন আজকালকার ছেলেমেয়েরা। রাফসান এবার ধরিত্রীকে ভালোভাবে কাছে টেনে বসিয়ে বলল, “স্ত্রী হন। এভাবে দেখবেন না।” ওনারা লজ্জা পেলেন। বৃষ্টি শুরু হতেই মানুষ ছাউনিতে আসতে শুরু করলো আর ধরিত্রী রাফসানের হাত ধরে রাস্তার দিকে দৌঁড় দিল।

– কী করছ ধরা?
– আমরা ভিজতেই এসেছি।
– প্রথমেই ভিজব? দেখব না?
– ও হ্যাঁ। তাহলে সামনে কোথাও গিয়ে দাঁড়াব।

ধরিত্রী আর রাফসান হাত ধরে দৌঁড়ে দৌঁড়ে একটা দোকানের নীচে দাঁড়ালো। ধরিত্রী ওর চুল ঝাড়তে লাগলো। খুব ঝুম বৃষ্টি হয়েছে। অল্প একটুতেই পুরো ভিজে গেছে। রাফসান হাঁপিয়ে গেছে। হাঁপাতে হাঁপাতে দেখছে ধরিত্রীকে। ধরিত্রী ওর দিকে তাকালো,

– কী দেখছ?
– কিছু না ধরা।

রাফসান নিজের মাথা ঝাড়লো। সেই ঝাড়ার সাথে সাথে কিছু জলবিন্দু আবার ধরিত্রীর উপর বৃষ্টি আনলো। রাফসান হেসে ধরিত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল,

– চা খাবে?
– হ্যাঁ। আশেপাশে চায়ের দোকান আছে?
– দুটো। একটা সামনে, আরেকটা হাতের ডানে। সিগন্যাল পার হয়ে।
– ডান দিকে চলো।

ওরা আবার দৌঁড়ে চায়ের দোকানের দিকে যাচ্ছে। দৌঁড়ে দৌঁড়ে সিগনাল পর্যন্ত এলো। কী মুষল ধারে বৃষ্টি! গাড়ি থামছে না। ওরা ছাউনিতে দাঁড়িয়ে। সিগন্যালের বাতি লাল হতেই রাফসান ধরিত্রীর কব্জি ধরে জেব্রা ক্রসিং পার হচ্ছে। সাদা কালো, সাদা কালো, গুটি গুটি পায়ে রাস্তা পার হচ্ছে। যেন পিয়ানো বাঁজছে। রাফসানের সাথে এই শহরটা ঘুরে দেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সেখানে এমন কোনো দৃশ্য ওর কল্পনাতে ছিল না।

“একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে
থাকবে না সাথে কোনো ছাতা
শুধু দেখা হয়ে যাবে মাঝ রাস্তায়
ভিজে যাবে চটি, জামা, মাথা।”

অলি গলি ঘুরে ওরা চায়ের দোকানটায় চা খেতে এসেছে। পাশে রেডিও চলছে। আর রেডিওতে গানটা বাঁজছে। শুধু ওরাই না, অনেকেই চা খেতে এসেছে। এমন ঝুম বৃষ্টিতে চা খাওয়ার মজাই আলাদা। চা খাওয়া শেষে রাফসান বলল,

“এই, তোমার আবার ঠান্ডা লাগবে না তো?”

ধরিত্রী আবার বৃষ্টির দিকে চলে গেল। দু হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে অনুভব করতে করতে জোরে জোরে বলল,

“লাগুক, জ্বর আসুক, মাথা ব্যথা হোক। আমি পাগল হয়ে যাই। তবুও একটু ভিজতে চাই রাফসান! তোমার সাথে ভিজতে চাই!”
রাফসান তাড়াতাড়ি ধরিত্রীর দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর হাত গুলো নামিয়ে ওকে নিয়ে আগাতে লাগলো,

– কী হলো?
– সবাই কীভাবে তাকাচ্ছে।
– সেটাও ঠিক। এই মানুষের চোখাচোখির জন্য কাপলরা এই ধরণের মনোরম আবহাওয়া উপভোগ করতে পারে না।

এই বলে ধরিত্রী হাঁচতে লাগলো। রাফসান ওকে নিয়ে আরেকটা দোকানের সামনে দাঁড়ালো।

– এই যে বাধিয়ে ফেললে।
– এইটা আরেকটা সমস্যা।

ও আবার হাঁচতে লাগলো। এবার রাফসান বলল বাসায় যাবে। রাস্তাঘাটে পানি জমে গেছে। একটা গাড়ি ও নেই। শহরটা যেন থমকে গেছে।

– এত তাড়াতাড়ি যাব?
– এখন কেউ এভাবে বৃষ্টি বিলাস করবো বলে বের হয় না। কোথাও বের হলেই হুট করে বৃষ্টি বিলাস হয়ে যায়। আর এই ভাঙাচোরা শহরে কী বিলাস? এখন হেঁটে হেঁটে বাসায় যেতে হবে।
– মন্দ না। সব জ্যাম লেগে গেছে। ফুটপাথ ধরে চলো হাঁটতে থাকি।

ধরিত্রী হাঁচতে হাঁচতে হাঁটতে শুরু করলো। আশেপাশে সব যানবাহন বন্ধ। বৃষ্টি এখন থেমে গেছে। আবহাওয়াটা এখনই বেশি সুন্দর। বৃষ্টি থামার পর একটা ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশ থাকে না। তেমনই। আকাশটা পরিষ্কার, কিন্তু চারপাশ একটু একটু অন্ধকার। অনেকটা কান্নাকাটি করার পর কাজল ধুয়ে যাওয়ার পর চোখের নিচে যেই অবস্থা হয় না, তেমন। রাফসান ধরিত্রীর পাশে এসে ওকে হাত দিয়ে এক পাশ থেকে জড়িয়ে নিল।

– কী করছ?
– ঠান্ডা লাগছে।
– না লাগছে না।
– আমার লাগছে।
– তোমার ঠান্ডা লাগছে?
– আমার লাগতে পারে না?
– ওকে।

ওরা দুজন মোটামুটি ভেজা অবস্থায় এবার একটা ফার্মেসির কাছে আসলো। ধরিত্রী বাইরে দাঁড়ালো, আর রাফসান ভেতরে গেল।

– জ্বী, বলুন স্যার।
– এক পাতা এলাট্রল, প্যারাসিটামল দিন।
– আর?
– আর…

রাফসান ধরিত্রীর দিকে তাকায়। ওর হাঁচি হচ্ছে এখনো।

– ভিক্সের চকলেট আর টিস্যু পেপার।
– কার জন্য? এত ঠান্ডা?
– বৃষ্টি পড়ল না। ওয়াইফ ভিজে গেছে।
– আর কিছু না?

দোকানদার মুচকি মুচকি হাসছে। আরো কয়েকজন গ্রাহক আছে। তারা কী যেন ইশারা করছে। রাফসানকে প্যাকেট টা দিতে ও খুলে দেখে গলা ঝেড়ে কাশলো। দোকানদার ওর কাশি শুনে বলল,

– কী হয়েছে?
– আমি এগুলো চাইনি। এসব কী?
– স্যরি, এটা ওনার। আপনার লাগবে না?

রাফসান লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। দোকানদার তাকে ফিসফিসিয়ে বলল,

– অনেক ভ্যারাইটি আছে।
– আমি কী বলেছি আমার দরকার? যেটা চাইলাম, ওটা দিন।

দোকান থেকে বের হওয়ার সময় রাফসানের প্রচুর হাসি পেল। বৃষ্টি হলেই সবাই এমন উদ্ভট জিনিস ভাবতে শুরু করে কেন? ধরিত্রী ওকে হাসতে দেখে জিজ্ঞেস করল,
– কী হয়েছে?
– বাসায় গিয়ে বলব।

এরপর ওরা বাড়ি ফিরল। মা দেখার আগেই বাড়ি ঢুকতেই আহসান সামনে। “জেঠিমা, ভাইয়া আর ভাবি ভিজে এসেছে।” রাফসানের মনে চাইলো একটা থা*প্পড় লাগিয়ে দিতে। বেয়া*দব ছেলে একটা। রুবাইয়া এসে রাগ ঝাড়ার আগেই রাফসান ধরিত্রীকে নিয়ে দৌঁড়ে ওদের ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিল।

– কী করছ?
– চুপ! ভেজা কাপড় ছেড়ে এসো। গ্রীজার অন করছি। গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। তোমার অলরেডি ঠান্ডা লেগে গেছে।
– ওকে।

পানি গরম হচ্ছে। কল দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। রাফসান ধরিত্রীর জন্য পানির তাপমাত্রা ঠিক করছে।

– তুমি আগে করবে না আমি?
– একসাথে?
– ছি! অসভ্য!
– দেখো, ঐ বৃষ্টি বিলাস সবাই দেখত। এটা কেউ দেখবে না। এই বৃষ্টি দিয়ে সেই সাধ পূরণ করতে পার।
– ধুর, এটা বৃষ্টি নাকি? এটাকে বলে বৃষ্টির নেটফ্লিক্স অ্যাডাপশন।
– তাই? অনেক স্টিমি, সেজন্য?
– মদন, তুমি অনেক বড় হয়ে গেছ। এসব কাহিনি আমি আর্টিকেলে লিখলে আমাকে অশ্লীল লেখিকা হিসেবে আখ্যায়িত করবে।

রাফসান ধরিত্রীকে কাছে টেনে বলে, “বৃষ্টির দিনে সবই আর্ট। ফার্মেসিতে কী হয়েছিল বলব? সেসব কথা লিখলে একটা বাস্তবধর্মী আর্টিকেল লেখার জন্য অনেক বাহবা পাবে।”

মাঝরাতে ধরিত্রীর ও জ্বর আসলো, আর রাফসানের ও। তবে ধরিত্রীর বেশি। তাই এই জ্বর নিয়েও রাফসান রুবাইয়ার বকা খাচ্ছে। ভেজার আইডিয়াটা তে ওনার পুত্রের নয়, পুত্রবধূর। রাফসান হাইজ্যাক হয়ে দুইদিন ও গেল না হাসপাতাল। ভালোই মজা করছে বউয়ের সাথে। স্বামী স্ত্রী একসাথে অসুস্থ হওয়ার মজাই আলাদা। “তুমি অসুস্থ, আমি তোমার সেবা করবো” তেমন ব্যাপার নেই। “আমরা অসুস্থ, আমরা একে অপরের সেবা করব।”

– জানো, আমার ইমিউনিটি অনেক ভালো ছিল।
– তাহলে অসুস্থ হলে কেন?
– তোমার সাথে থেকে। প্রভাব পড়ছে।
– প্রভাব টা আমার পড়ল না কেন?
– তুমি অনেক স্ট্রং পার্সোনালিটি। আনবিটেবল!

অসুস্থ শরীরে রাফসানের সাথে খুনসুটিটা করতে পারছে না। সুস্থ হয়েই এসবের শোধ নেবে।

যাই হোক এবার সুস্থ হয়ে অনেক সুন্দর একটি বৃষ্টির দিনের গল্প লিখল ধরিত্রী। যুগলদের বৃষ্টি বিলাস করতে গিয়ে বৃষ্টি বিভ্রাট। নামটা একই, “একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে…” শহরের মানুষের দুটো ছেলেমেয়েকে একসাথে দেখলেই বাঁকা চোখে দেখা। তারপর এটা সেটা ভেবে নেওয়া। তাদের এই ভাঙাচোরা শহরে ঘুরে ঘুরে জোড়াতালির বৃষ্টি বিলাস করা। তারপর ফার্মেসির বিড়ম্বনা, ঠান্ডা লাগা। খুব সুন্দর একটা নরম নরম বৃষ্টির গল্প, যেটা সত্যি সত্যি হয়েছে ওদের সাথে। আবার একটা সুন্দর গোছানো হিট স্টোরি লেখায় ধরিত্রী বাহবা তো পাচ্ছেই, সাথে সবাই প্রশ্ন করছে। এই যুগলটা নিশ্চয়ই ওরা। সিঙ্গেল মানুষেরা বৃষ্টির দিনে এই লেখা পড়ে হিংসেতে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। আহ বৃষ্টি! তুমি এত নির্মম কেন?

মীরা হঠাৎ ফোন দিয়েছে রাফসানকে,

– জ্বর ভালো হয়েছে?
– হ্যাঁ। কী করে জানলি আমার জ্বর?
– হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আর পড়েছিও।
– স্টোরি?
– হ্যাঁ। খুব মজা করেছিস। ঐ দুটো ছেলে মেয়ে, তোরা না?
– হুম। আচ্ছা, অঙ্কন ভাই?
– দেশে এখন।
– বের হ একদিন, বৃষ্টি দেখতে। ভালোই লাগবে। তুই আর অঙ্কন ভাই মিলে একটা রেইনি ডে ডেটে যা।
– দেখি। তুই ফ্রি কখন?
– জানিনা তো। এই কয়দিন ছুটি ছিল তো চাপ পড়বে।
– ও। ওকে।

মীরা মন খারাপ করে ফোনটা রেখে দিল। একা একা বসে আছে ও। আশে পাশে সবাই সবার মতো। কাজী হেল্থ কেয়ারের মালকিন হওয়ার স্বপ্ন অনেকেই দেখেছে। এত বড়লোকের বউ হতে পারলে সুখ আর সুখ। এত সুখ থাকতেও মীরা যেন পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী মানুষটা।

ধরিত্রীর ফোন বাঁজছে। অফিসেই ও। নাম্বার টা তো অপরিচিত।

– হ্যালো, কে বলছেন?
– আমি রাধা বলছি। মনে আছে?
– রাফসানের ক্লাসমেট?
– জ্বী। কেমন আছ?
– ভালো। আপনি?
– ভালো। আমি তোমার নতুন স্টোরিটা পড়েছি। অনেক সুন্দর ছিল।
– ধন্যবাদ।
– তবে আমি শুধু এটা বলতেই ফোন করিনি। একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল। রিকোয়েস্ট ছিল।
– জ্বী?
– মীরার সাথে তোমার ভালো সম্পর্ক না?
– হ্যাঁ।
– ওর সাথে ঘুরতে যাও।
– জ্বী। কিন্তু আপনি?
– ছবি দেখেছি। একটা জিনিস কী জানো ওর ব্যাপারে?
– জ্বী?

(চলবে)
(রাধার কী বলা ঠিক হবে বলে মনে হয়?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here