#ধরিত্রী_কথন
#পার্ট২৫,২৬
#পিকলি_পিকু
২৫
মীরা রাফসানের হাসপাতালে যোগ দিয়েছে কয়েক সপ্তাহ। ইতোমধ্যে অনেক পরিচিতি ও পেয়ে গেছে। ডক্টর মোমিন তো মীরার কাজে মুগ্ধ। তিনি ধরিত্রীর কেসের দায়িত্ব মীরাকে দিয়েছেন। খোঁজ খবর মীরা রাখবে। এদিকে রাফসানের ও কাজে অনেক সুনাম। ওকে প্রমোশন দেওয়ার কথা ভাবছে সবাই। রাফসান সেই সুবাদে একটা কাজে আটকে গেছে। তাই ওর জায়গায় মীরাকে বাড়ি পাঠালো।
মীরা বাড়ি এসে ধরিত্রীর প্রেসার মেপে ওকে খেতে বসালো।
– কী ব্যাপার? আজকে তুমি?
– তোমার স্বামী ব্যস্ত তাই প্রক্সি দিতে এলাম। চিন্তা করো না। একটা দিন মীরাবাঈ থাকুক না পাশে।
– ভালোই লাগছে। আচ্ছা, আমার না নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়।
– কেন?
– এই যে, আমার পাশে সবাই আছে। একদম পরিবারের সবাই। এখন দেখছি স্বামীর ছোটবেলার বন্ধুরাও আছে। সেদিন দেখলে না রাধা এলো পুজোর ফুল আর প্রসাদ নিয়ে। পরশু মীম এসেছিল মোমো নিয়ে।
মীরার চেহারাটা যেন বিগড়ে গেল। ওরা কী চায়? মেয়েটা গর্ভবতী তাও এই নোংরা খেলা খেলছে।
– রাধা যে প্রসাদ এনেছিল ওটা খুব মজা লেগেছিল। এমনিতে আমি কিন্তু মিষ্টি খাই না। সেদিন ভালো লেগেছিল। অল্প ছিল বিধায়। পরে রাফসান রাধাকে ফোন দিয়ে সেই প্রসাদের মিষ্টির দোকানের খোঁজ করে সেই মিষ্টি আনলো। মিষ্টি দেখেই আমি বমি করে দিলাম।
– তাই!
– বেচারা রাফসান!
মীরা আর ধরিত্রী হাসতে থাকে। কিন্তু কোথাও একটা দুশ্চিন্তা আছে মীরার। তাই প্রসঙ্গ ঘোরাতে সে বলল,
– তোমার ঘরে খুব সুন্দর একটা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এয়ার ফ্রেশনার তো না।
– ঠিক ধরেছ। রিমাও এসেছিল মিমের সাথে। ও এনেছিল সুগন্ধি মোমবাতি। ও যখন প্রেগনেন্ট ছিল তখন নাকি এর গন্ধে ওর শান্তি লাগতো। বমি হতো না। রাধার কাছে বমির কথা শুনে এটা আনলো। তবে ওর মোমবাতির গন্ধে আমার আরো বমি আসলো।
– এরপর?
– ঐ আয়ুর্বেদিক সেন্টারের লোক আসলো। রিমা ফোন করে আনালো। আমার পছন্দ অনুযায়ী একটা সৌরভ পেলাম। এই কয়দিন আর বমি করছি না।
মীরা মুচকি হেসে কিছু বলল না। ধরিত্রী খাওয়া শেষে বলল,
– আমি না তোমার কথা চিন্তা করছি।
– কেন?
– যখন তুমি গর্ভবতী হবে তখন আরো মজা হবে।
– কেন? আমি গর্ভবতী হলে মজা কীসের?
– তখন আমি, মিম আর রিমা রাধা সবাই অভিজ্ঞ থাকবো। তোমার কোনো কষ্টই হবে না।
– সবাই যদি তোমার মতো ভাবতো ধরা।
মীরা ধরিত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তখনই রুবাইয়া আসে।
– খাবার খেয়েছিস মণি?
– জ্বী। মীরা এসে খাওয়ালো।
– এ মা! রাফসান কোথায়?
– আজকে ব্যস্ত।
– মেডিসিন গুলো নিয়েছিস?
– না। নেব।
ধরার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা গন্ডগোল করেছে। রুবাইয়া ওর কাছে এসে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়।
– খাবারের আগের ঔষধ টা খেয়েছিস?
– না। স্যরি।
– এ জন্যই আমি রাফসান ছাড়া তোকে কাউকে ট্রাস্ট করি না। খাবারের আগে একটা ঔষধ থাকে।
রুবাইয়ার চিৎকার শুনে মীরা ক্ষমা চাইলো।
– আমি জানতাম না আন্টি।
– তোমাকে কিছু বলছি না। এত বড় মেয়ে, ওর নিজের ও দায়িত্ব থাকার কথা। এটা শুধু ওর ব্যাপার না। ঔষধে গন্ডগোল করে শুধু। ওর ই যদি কাণ্ডজ্ঞান না থাকে তো বাইরের মানুষের কেন থাকবে?
মীরা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে আন্টি কথাটা ওকেই বলেছে। রাফসান আজ বাড়িতে এসে কথাটা কী করে বলবে বুঝতে পারছেনা। আজ থেকে ওর দায়িত্ব বাড়ছে। অনেক অনেক সিনিয়রদের সাথে কাজ থাকবে। খুব খুশির খবর একটা। কিন্তু শুনলেই ধরা কাঁদতে থাকবে। তাই ও কিছুই বলে নি। রুবাইয়া ধরিত্রীর জন্য নিজ হাতে রান্না করছিল। রাফসান কী ব্যাপারটা প্রথমে মাকে বলবে?
– কীরে রাফসান, আজকে নাকি ব্যস্ত ছিলি।
– হ্যাঁ।
– তোর জন্য আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুনবি?
– আমি তোমার সব সিদ্ধান্তই মানি মা।
– তো আমি ঠিক করেছি তুই আর মণি একসাথে প্যারেন্টিং স্কুলে যাবি।
– এইটা কী জিনিস?
– নতুন মা বাবা দের জন্য। সেখানে বাচ্চা লালন পালন শেখাবে। বাবার ও দায়িত্ব আছে।
– কয়দিন?
– সপ্তাহে তিনদিন। দুই ঘন্টা করে।
– এসব শেখানোর জন্য তোমরা আছ তো।
– আমরা আছি। তবে ওখানে হাতে কলমে শিখবি। তোকে আমি যা বানিয়েছি তোকে সব হাতে কলমেই শেখানো লাগবে। হাতে কলমে বাবা হবি।
রাফসান ওর মা কে তো তখন বলতে পারল না। পরে ঠিকই ওর বাবা জেনে ওর মাকে জানায়। তিনজন বসে আবার কথা বলছে,
– এই খুশির খবর বললি না কেন?
– জানি না খুশি হব কি না। ওখানে দায়িত্ব বাড়ছে। ধরা শুনলে কান্নাকাটি করবে।
– তুই নিজেই ব্যাপারটা কে কমপ্লিকেটেড করছিস। সোজা কথা বললে কী হয়? ও বুঝবে।
– তুমি জান না মা, ও আজকাল ঘরের ভেতর শুধু শুধু কান্নাকাটি করে।
– এই সময়ে হয়।
– জানি। তাই ওকে এখন বলব না। এই স্কুলে যাচ্ছি। সময় তো ওখানেও কাটানো হবে। মোমিন স্যারকে বলে একটু ছুটি নিয়ে নিব। ম্যানেজ করে চলব। যখনই শুনবে আমার প্রমোশন হয়েছে, তখনই আমর উপর ব্যস্ত হওয়ার দোষ চাপাবে।
ধরিত্রী আর রাফসান কয়েক সপ্তাহ হলো প্যারেন্টিং স্কুলে যাচ্ছে। বাচ্চা কোলে নেওয়া পর্যন্ত ওরা পৌঁছে গেছে। সামনে বাচ্চার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বুঝবে। সিলেবাস মোটামুটি ছোট। রাফসান বসে বসে সিলেবাস দাগাচ্ছে।
– হাইলাইটার লাগবে চিড়ার পাপাই?
– মজা নিচ্ছ? তুমি জান না আমি অনেক সিরিয়াস স্টুডেন্ট।
– গোল্ড মেডেল তো তুমিই পাবে। বাই দ্য ওয়ে, আইসক্রিম খাবে?
– একদম না। তোমার সব ক্রেভিংস শুনলেও আমি আইসক্রিম ঠান্ডা শুনব না।
– আচ্ছা, আচ্ছা ঠিক আছে।
ওরা সামনে তাকিয়ে দেখল একটা সত্যিকারের নবজাতক শিশু আনা হয়েছে।
“ওর নাম সাফির। ওর বাবা মা আমাদের ই স্টুডেন্ট। আপনাদের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের জন্য উনি নিজে এসেছেন। শুধুমাত্র থিওরিতে যারা স্টার পেয়েছে তারাই প্র্যাকটিক্যালে চান্স পাবে। রেজাল্ট এখন প্রজেক্টেরে।”
ধরিত্রী আর রাফসান ওদের নাম খুঁজছে। ওরা থিওরিতে স্টার পেয়েছে। দুজনেই লাফাচ্ছে এত ছোট শিশু কোলে নেওয়ার জন্য। পনের দিনের শিশু ধরিত্রীর কোলে। আনন্দে ওর চোখ ভিজে আসছে। রাফসান ও খুব যত্নে কোলে নিয়েছে। ওদের দেখে ইন্সট্রাকটর বলল, “আপনাদের বাচ্চা অনেক লাকি হবে। ওর মা বাবা ওকে কতটা ভালোবাসে।” ধরিত্রী ভাবতে লাগলো, যখন ওরা সত্যি সত্যি নিজের বাচ্চা কোলে নেবে তখন কেমন লাগবে?
রাফসানের হঠাৎ ফোন বাজতে শুরু হলো। ও সাবধানে বাচ্চা ধরিত্রীর কোলে দিয়ে বেরিয়ে পড়ল। বাইরে গিয়ে কথা বলে জানতে পারল ওর একটা বোর্ড মিটিং আছে। এখনই। কী যে করবে। মীরাকে ফোন করল,
– তুই যা না আমার জায়গায়।
– মেডিক্যাল বোর্ডে তুই আছিস। তোর রোগীর সিরিয়াস অবস্থা। আমি কী করে আসব?
– আমি ধরাকে নিয়ে ক্লাসে আছি।
– ওকে তো রেখে আসা যাবে না।
– তাই বলছি ওখানে গিয়ে তুই সামলা। ওকে আমি বাড়ি পৌঁছে আসি।
– ক্লাস কী শেষ?
– আরো আধা ঘন্টা লাগবে।
– তুই ক্লাস কর। আমি আসছি। ওকে আমি বাড়ি নিয়ে যাব।
– থ্যাংকস দোস্ত।
রাফসান ক্লাস শেষে বাইরে এসে দেখে মীরা এসেছে। ও ধরাকে নানা কথায় ঘুরিয়ে ওর সাথে নিয়ে গেল। রাফসান দৌঁড়ে হাসপাতালে গেল। কেন যে এই ঝামেলায় পড়লো। আসলে ও ধরিত্রীর সাথে নিজের বাবা হওয়ার আগ মুহূর্তের সব কিছু উপভোগ করতে চায়। কাজের চাপে একটা জিনিস ও বাদ দিতে চায় না। হয়তো একটু বেশি পরিশ্রম হবে। বাবা হওয়ার আনন্দ টা তো কম না।
ধরা আর মীরা একই রিকশায়। মীরা ধরিত্রীকে আগলে রেখেছে যাতে ও পড়ে না যায়। যেন সে তার বোন। হঠাৎ ই ওদের রিকশার সামনে একটি গাড়ি চলে আসে।
“অঙ্কন!!”
অঙ্কন বেরিয়ে আসলো। মীরা ওকে দেখেই চেঁচিয়ে বলল, “তুমি কেমন মানুষ! তুমি জানো না ও প্রেগনেন্ট। এভাবে হুট করে আসলে, ওর কিছু হয়ে যেত যদি!” অঙ্কন সবার সামনে রাস্তার মধ্যেই কান ধরে বলল, ” স্যরি! আপনারা কী আমার সাথে ডেটে যাবেন?”
ধরিত্রী খিলখিল করে হেসে উঠল। “আপনারা!”
– হাসছেন কেন ম্যাডাম?
– দুজন?
– হ্যাঁ। এখন উনি তো আর আপনাকে একা ছাড়বে না। আপনিও চলুন না, নইলে উনি আসবে না।
ওরা তিনজন একটি ক্যাফে তে বসল। ড্রিংকস আর ডেজার্ট ওদের সামনে। অঙ্কন কথা বলছে,
– ধরিত্রী, শুনেছি তুমি প্রেম কাহিনী লেখ, সত্যিকারের।
– লিখতাম। আপাতত মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছি।
– আচ্ছা, এত জনের কাহিনী লিখলেন। আমাদের টা লিখবেন না?
– আইডিয়া ভালো। বলতে পারেন। বেবি আসার পর যখন আবার ব্যাক করব। প্রথম কিন্তু এটাই লিখব।
– ডান তাহলে।
মীরার অঙ্কনকে খুব বিরক্ত লাগছে। ধরিত্রীর সামনে আলাদা প্রেম ভালোবাসা দেখাচ্ছে। ও জানলো কী করে ওরা এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। ধরিত্রীকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পর মীরা আর অঙ্কন গাড়িতে। অঙ্কন মীরার কাঁধে মাথা রাখতেই মীরা সরে এলো। অঙ্কন মীরার ঘাড়ে চুমু খেয়ে বলল,
– প্রেগনেন্ট হলে মেয়েরা কেমন সুন্দর হয়ে যায়, তাই না? তুমি ও কী এমন সুন্দর হয়ে যাবে?
– তোমার লজ্জা করে না অঙ্কন! ও প্রেগনেন্ট। অন্তত ওর দিকে নজর দিও না। আমার এখন একটাই বন্ধু আছে। একটু তো নিজেকে সংযত করতে পার।
– কী বলতে চাও? কী নোংরা অভিযোগ আনছো আমার উপর?
– তুমি কী অস্বীকার করতে পার তুমি ধরার দিকে নজর দাওনি।
– আশ্চর্য। ধরিত্রী কে আমি হাতেগোনা কয়েকবার দেখেছি। ও সুন্দরী, এটা বললেও দোষ। তোমরা মেয়েরা এত ছোট মনের। ধরিত্রী রাফসানের স্ত্রী, মানে আমার ও বন্ধু। তোমার মন এত নীচ! তুমি আমাকে ধরিত্রী কে নিয়ে সন্দেহ করো!
– ওকে। সিলভিয়া?
– কোন সিলভিয়া?
– লাস্ট ব্যাংকক ট্রিপে যে সঙ্গ দিয়েছিল।
– হোয়াট রাবিশ!
– আনিতা, সামরিন, মিহি, সুজানা, ফারহা, ক্লাউডিয়া, লরেন!
– এ কী সব হযবরল নাম বলছ।
অঙ্কন অপ্রস্তুত হয়ে গেল। গাড়ি বাড়ি পৌঁছে গেছে। মীরা গাড়ি থেকে নেমে ঘরে চলে আসে। অঙ্কন ওর সাথে ঘরে এসে বলল,
– এসব যা তা নাম বলে কী প্রমাণ করতে চাইছ তা তো বললেনা।
– বিগত কয়েক মাসে এসব মেয়েদের সাথে তুমি বিভিন্ন জায়গায় সময় কাটিয়েছ।
– মীরা! কী নোংরা অপবাদ দিচ্ছ আমাকে!
– থাক! আর অভিনয় করতে হবে না। খুব ভালো অভিনয় করতে জানো। আ’ম ইমপ্রেসড! কিন্তু আমি সত্যি টা জানি। আরো অনেক কিছু জানি।
– তো বলনি কেন?
– অপেক্ষায় ছিলাম, কবে তুমি বলবে। কিন্তু এখন নিজেই বললাম। এই যে তোমার এই নোংরা শরীর আমার থেকে দূরে রাখো। এই নোংরা হাত দিয়ে আমাকে স্পর্শ করবে না। আর এই নোংরা চোখ, নামিয়ে কথা বলবে।
– হোয়াট ডু ইউ মিন!
অঙ্কন ক্ষোভে মীরার চুলের মুঠি চেপে ধরল। মীরার কষ্ট হচ্ছে। তবুও অঙ্কনের চোখে চোখ রেখে বলল, “আই হে*ইট ইউ অঙ্কন! ডোন্ট টাচ মি!”
অঙ্কন মীরার চুলের মুঠি ছেড়ে দিল। ওর চোখ ভিজে আসছে। আজ এত দিন পর সে জানতে পারল মীরার ঘৃ*ণার কারণ। অনেক অপরাধী লাগছে নিজেকে। মীরা অঙ্কনের হাত থেকে চুল ছাড়িয়ে চলে আসলো। মীরা অঙ্কনের হাত থেকে ছুটে গেছে। অঙ্কন ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। মীরা ওর থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। আর আসবে না। মীরাকে ও আর কখনো ফিরে পাবে না। দোষটা ওর। ও কেন বোঝেনি এতদিন ধরে যে মীরা ব্যাপার গুলো জানতো?
বর্তমানে,
রাফসান ধরিত্রীর কেবিনে এসে দেখল ও নেই। ওকে না পেয়ে পাগলের মতো এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো রাফসান। হঠাৎ ওর ফোন বেঁজে উঠায় দেখল মা ফোন করেছে।
– হ্যালো মা।
– তুই কোথায়? মণি বাসায় এসে এমন কেন করছে?
– ও বাসায়? কেমন আছে?
– ও পাগলামি করছে। জলদি বাসায় আয়।
রাফসান দেরি না করে একটা সিএনজি তে উঠে পড়ল।
( চলবে)
#ধরিত্রী_কথন
#পার্ট২৬
#পিকলি_পিকু
রাফসান বাড়ি আসার পর দেখলো বসার ঘরে ধরিত্রী আর সবাই বসে আছে। রাফসান কে ঢুকতে দেখে ওর চাচা বলল, “তোকে না বলেছি ওকে বাবার বাড়ি রেখে আসতে কিছুদিন। সামনে আহসান আর রাশার পরীক্ষা আর উনি সবাইকে ডেকে এনে তামাশা করছেন।”
রাফসানের খুব ভয় হচ্ছে ধরিত্রীর সামনে যেতে। রাফসান কে দেখে ধরিত্রী ওর পেছনে তাকাচ্ছে বারবার। রুবাইয়া ধরিত্রীকে এমন করতে দেখে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে মণি? কী দেখছিস?” ধরিত্রী দরজার কাছে গিয়ে দেখল। এরপর রাফসানের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, “ও আসেনি? ওকে আনোনি? লজ্জা পাচ্ছ?”
সবাই কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে থাকে। কার কথা বলছে? রুবাইয়া ধরিত্রী কে আবার জিজ্ঞেস করল,
– কার কথা বলছিস?
– জানো না? তুমি জানো না?
– কে?
– নাটক করো না। তোমার আর তোমার ছেলের অভিনয় দেখতে দেখতে আমি পাগল হয়ে গেছি। এরপর ও নাটক করে যাচ্ছ।
– তোর সমস্যা কী?
– তুমি আমার জীবন ধ্বংস করেছ ডক্টর রুবাইয়া! তোমার ল*ম্পট ছেলেকে আমার উপর চাপিয়ে তুমি আমার জীবন শেষ করেছ।
– আশ্চর্য! মুখ সামলে কথা বল ধরিত্রী! তুই কার উপর দোষ দিচ্ছিস? রাফসান? যে রাফসান তোকে এত ভালোবাসে।
ধরিত্রী রুবাইয়ার কোনো কথা শুনছে না। পাগলের মতো নিজের ফোনে খুঁজছে। ফোন থেকে আজ সকালের তোলা ছবি আর ভিডিও গুলো রুবাইয়া আর সবাইকে দেখালো। সবাই অবাক হয়েছে। রাফসান এমন করতে পারে! রাফসান নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে লাগলো। ওকে ফাঁসানো হচ্ছে। ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এরপর সে ফোন টা ছিনিয়ে নিল। আহসান আর রাশা রাফসানের দিকে ঘৃ*ণা ভরে তাকিয়ে আছে।
“ডক্টর রুবাইয়া, তোমার ছেলের জন্য মীরাই পারফেক্ট ছিল। শুধু শুধু ওকে তখন অপছন্দ না করে বিয়েটা দিয়ে দিলেই পারতে। বা আমার সাথে ওর বিয়ে না দিয়ে অপেক্ষা করতে। ওর তো ডিভোর্স হচ্ছেই। আমার জীবন নষ্ট করলে কেন?”
ধরিত্রীর চোখ বেয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে। সবাই রাফসানের দিকে তাকিয়ে আছে। রুবাইয়া এখনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। রাফসান অশ্রু সিক্ত চোখে তার মায়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে নিজের মায়ের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করছে। রুবাইয়া রাগে ক্ষোভে একটা চ*ড় বসিয়ে দিল রাফসানের গালে। ধরিত্রী সেদিকে তাকিয়ে বলল, “থাক, তোমার আর নাটক করা লাগবে না। যা নষ্ট হয়েছে তা তুমি আর সাজাতে পারবে না। আহসান রাশা, তোমরা খুশি তো? তোমাদের মীরা আপু তোমাদের মীরা ভাবি হয়ে যাবে। চাচ্চু আপনি তো সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন আমি যদি চলে যাই। বাবা, আপনার ছেলেকে ঐ মেয়েটার সাথে বিয়ে দিয়ে দিন। আর পাপ কুকর্ম জিনা করার চেয়ে ওটাই ভালো। আজকে আমার কাছে ধরা পড়েছে। বাইরের মানুষের কাছে মুখ দেখাতে চাইলে এখনই বিয়েটা করিয়ে দিন।
রুবাইয়া কেঁদেই যাচ্ছে। পরম মমতায় সে ধরিত্রীকে জড়িয়ে ধরার সময় ধরিত্রী তাকে এক ঝটকায় সরিয়ে দিল।
– মণি! তুই আমার সাথে এমন কেন করছিস?
– কারণ তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর আমার জীবন বদলে গেছে। তোমার সাথে দেখা হওয়ার পরই আমি সব হারিয়েছি। খুব ভালো হত যদি তোমার সাথে আমার দেখাই না হতো। আমি আজ নিঃস্ব! আমার কেউ নেই এই দুনিয়াতে!
এক সময় কী ভালোবাসাই না ছিল ওদের মধ্যে। পরম মমতায় ধরিত্রীকে আগলে রাখতো রুবাইয়া। ধরিত্রী ও কখনো মায়ের মতো ভালোবাসতো। রুবাইয়ার বোনের ছেলের বিয়েতে সবাই গিয়েছিল। সেখানে এত অতিথির মাঝেও রুবাইয়া ধরিত্রীর খেয়াল রেখেছে। সবার সামনেই নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে। সবাই কত উদাহরণ দিত ওদের। বউ শাশুড়ি হলে এমন হওয়া উচিত। সেই বিয়েতেই ধরিত্রী বসে অপেক্ষা করছিল রাফসানের। রাফসানের নাম গন্ধ ও নেই। এত সব মানুষের মধ্যে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। অন্য সময় হলে সবার মুখে একটাই নাম থাকতো, ধরিত্রী। এই বিয়ে বাড়িতে পেটে বাচ্চা নিয়ে এক কোণে পড়ে আছে ও। একটু পরপর রুবাইয়া আসে আসে আর কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করে যায়। নিজের পেটে হাত রেখে ধরিত্রী করুণ দৃষ্টিতে রুবাইয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ও রাফসানকে চায়।
রাফসান তো ব্যস্ত। তাই একটা প্রোগ্রামেও আসলো না। ধরিত্রীর চোখের পানি চোখের কোণে শুকিয়ে রইল। রিসেপশনের দিন রাফসান আসলো। এতসব মানুষের মাঝে কারো সাথে দেখা না করেই সোজা ধরিত্রী যেখানে সেখানে ঢুকল। সেখানে গিয়েই ধরিত্রীর সামনে বসে পড়ল।
– স্যরি বাবা। একটা নতুন কেস ছিল।
– তুমি আবার ও প্রমিস ভেঙেছ। তুমি কী চাও? আমি ম*রে যাই?
– না না। একদম এসব কথা না। আমি ব্যস্ত ছিলাম।
– কিন্তু তুমি বলেছ আমাদের সময় দেবে।
– প্রতিদিন তো সম্ভব না। আর এখানে কত লোক আছে। ওদের সাথে চিড়া সময় কাটাতে পারে। কথা বলো, চিড়ার ভালো লাগবে।
– না! ওর বাবার সাথে কাটাতে চায়। দেখ রাফসান, তুমি এমন করলে আমি একদম আমাদের বাসায় চলে যাব। আর আসব না। চিড়াকেও আর দেখবে না।
রাফসান ধরিত্রীর হাত ধরে রাখে। কী ঝামেলা! একদম পিচ্চি বাচ্চা মেয়েদের মতো করছে। যেটা চাই ওটাই চাই। একটা বার তো ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখতে পারে যে এই দুই রাত ও ঘুমায়নি। এই বিয়ে বাড়িতে এখন সবার সামনে রাফসানের ধরিত্রীকে খাইয়ে দিতে হচ্ছে। নিজের ঘরে খাওয়ায় তা অন্য ব্যাপার। দিন দিন ওর চাওয়া পাওয়া সীমা ছাড়াচ্ছে। ঐ পরিপক্ক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মেয়েটা কোথায়? এ তো একটা শিশু।
আজ জোহরা আর ওর সাথে লবঙ্গ লতিকা এসেছে ধরিত্রী কে দেখতে। লবঙ্গ ধরিত্রী কে দেখেই বলল, “কীরে বুড়ি! অনেক মোটা হয়ে গেছিস! রুবাইয়া আপা দেখছি তোর সেই খেয়াল রাখে। এখনো তো ছয়মাস। নয়মাস আসতে আসতে বেলুন হয়ে যাবি।” লতিকা লবঙ্গের পায়ে একটা লাথি মারলো। জোহরার ইচ্ছে হচ্ছিল লবঙ্গকে একটা চ*ড় মা*রতে। এভাবে মুখের উপর বলে। তার বাচ্চা মেয়েটা। ধরিত্রী মুচকি হেসে বলল, “৬১ কেজি। ” লতিকা পরিস্থিতি সামলাতে বলল, “বেশি না। আপুর ৭৪ হয়েছিল। যাক, এই সুযোগে তোর একটু ওজন তো বাড়লো। সারাজীবন কী দিয়াশলাই থাকবি?” ধরিত্রী কিছু না বলে আবার একটু হাসলো। জোহরা ধরিত্রী কে কিছুদিনের জন্য বাড়ি নিতে চায়। কিন্তু ধরিত্রী ওর বাসায় যেতে চায় না। ওর একটাই ভয়। রাতে একা ঘুমোনোর সময় যদি কিছু হয় তো রাফসান তো থাকবে না। ওর মা বাবা ওকে নিয়ে কোথায় যাবে? এখানে রাফসান আছে। ও না থাকলে ঘর ভর্তি লোক। ওর সমস্যা হবে না। জোহরা নিজের মেয়ের গর্ভাবস্থায় তাকে বেশিদিন নিজের কাছে রাখতে পারেনি। একটু দুঃখ তো আছেই।
– রুবি, ওর তো মায়ের কাছে থাকার কথা না? ওকে একদম নিজের হাতে নিয়ে নিলে?
– আমি কী করলাম? আর মায়ের কাছে থাকবে এটাই তো কথা। আমিও ছিলাম। কিন্তু ধরিত্রী তো বদলেই গেছে একদম। আমি কোনো বশীকরণ করিনি।
লতিকা বলল, ” ও ওর মায়ের মতো। ওর চাচা বলেছিল ও হওয়ার সময় ভাবি পুরো পরিবার থেকে আলাদা সিলেটেই ছিলেন। পুরো একবছর। ”
কথাটা শুনে রুবাইয়া জোহরার দিকে তাকালো। জোহরা যেন ইচ্ছে করেই চোখ মেলাচ্ছে না।
– কষ্ট হয়নি? একা বাচ্চা নিয়ে! ও নাকি অনেক অসুস্থও ছিল।
– মানত করেছিলাম। একা থাকব। পরিবারের সাথে দেখা করিনি তাই। সেই শাস্তিটাই দিচ্ছে। শাস্তি তো শুধু আমিই পাই। সব দোষ জোহরার। জোহরাই একা থাকবে। মায়ের থেকেও মেয়ের থেকেও।
আড়াল থেকে মায়ের কথা শুনে মন খারাপ করল ধরিত্রী। থেকেই আসবে নাকি? তার আগে ওর জানতে হবে রাফসান কী করে হাসপাতালে? ওকে কী শাস্তি দিচ্ছে ছুটি করার? মীরাকে ফোন করে বসল সে,
– ও ইদানিং এত ব্যস্ত থাকে কেন? ওর কী কোনো সমস্যা? আমি চিন্তা করব বলে কিছু বলছে না?
– শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করছ। হাসপাতালে কিছু হয় নি। ও তো আগেও ব্যস্ত থাকতো।
– এখন কিছু হয়েছে মনে হচ্ছে। ও আমার সাথে এখন আর হাসপাতালের কোনো গল্প করে না।
– তুমি অহেতুক চিন্তা করবে তাই।
– প্লিজ বলো না ওখানে কী হচ্ছে? ওকে কী শাস্তি দিচ্ছে বেশি ছুটি করার?
– হাহাহাহ ধরা, হাসাচ্ছ। এটা কী স্কুল নাকি। দিন দিন বোকার মতো কথা বলছ।
– তো সুযোগ পায় না কেন? তুমি তো ছুটি পাও। তুমি আসো দেখা করতে কিন্তু রাফসান আসে না।
– উফফ! ধরা, রাফসান আর আমি এক না। ও এখন বড় ডাক্তারদের সাথে ওঠাবসা করে। আমি নরমাল ডাক্তার।
– আগে করত না?
– আমি জানিনা ছেলেটা কেন তোমাকে সোজা সাপ্টা কথাটা বলছে না। আর এদিকে তুমি শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করছ। ওর প্রমোশন হয়েছে। ওর দায়িত্ব বেড়েছে। ও এখন হাসপাতালের বড় পদে আছে। ওর আন্ডারে অনেক রোগী।
ধরা চুপ করে রইল। রাফসান এত বড় কথা ওর থেকে কেন লুকালো?
– কী হয়েছে ধরা?
– কবে হলো? রিসেন্টলি?
– না। তোমার প্রেগনেন্সির প্রথম দিকেই। তুমি হয়তো ভাববে ও ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে, ওকে ভুল বুঝবে। তাই বলেনি। ওর সাথে আবার ঝগড়া করো না। ও তোমাকে চিন্তায় ফেলতে চায় না সেজন্য। আর তো কয়েকটা মাস। চিড়া না ওর নাম? ও আসলে দেখবে ঠিক হয়ে গেছে সব।
ধরিত্রী ফোনটা কেটে দিল। তো ধরিত্রী ঝগড়া করে রাফসানের সাথে। মীরা বুঝতে পারল ও বলে ভুল করেছে। সবসময় একটা গন্ডগোল হয়ে যায়। রাফসান কে কী বলবে? কিন্তু রাফসান এর আগেই বাড়ি চলে গেছে। ঘরে ঢুকে দেখল ধরা বসে আছে। ওর মন খারাপ। এ আর এমন কী? সবসময় এখন নতুন একেকটা বিষয় নিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকে।
– আজকে আবার কী হলো ধরা? আহসান কিছু বলেছে না পাশের বাড়ির বিড়াল আসেনি?
– তোমার যে দায়িত্ব বাড়লো তা তো বলোনি।
– কীসের?
– হাসপাতালে।
– কে বলেছে?
– যেই বলুক। আমি তোমার স্ত্রী। তোমার উন্নতির খবর তুমি আমাকে না জানিয়ে সবাইকে বলেছ?
– তুমি চিন্তা করবে।
– এতে চিন্তার কী রাফসান! তুমি কী যুদ্ধে যাচ্ছ!
ধরিত্রী আবার উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। রাফসান ধরিত্রীর সামনে গিয়ে বসলো।
– এই যে, বলবে আমি তোমাকে সময় দিব না।
– তা তো এমনিতেই দিচ্ছ না।
– কে বলেছে দিচ্ছি না? এই যে এত কাজ করে এসে আমি তোমার খেয়াল রাখি। চার ঘন্টার বেশি ঘুমাই না। এগুলো তুমি কিছুই চোখে দেখ না। সারাক্ষণ শুধু তোমাকে সময় দেওয়া। এক কাজ করি, চাকরিটা ছেড়ে দেই।
– চাকরি ছাড়ার ব্যাপার আসছে কেন?
– তো তুমি কী চাও? আমি তোমার সামনে বসে থাকি সারাদিন? হঠাৎ এমন ভাব কেন করছ?
ধরিত্রীর চোখ দিয়ে জল পড়ছে। ওর মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। ওর চেহারায় বোঝা যাচ্ছে ও ঠিক কতটা কষ্ট পেয়েছে রাফসানের কথায়। ও কখনো ভাবেনি রাফসান ওর সাথে এভাবে কথা বলবে।
– এই তো, এজন্যই আমি তোমাকে বলতে চাইনি। এই যে কান্নাকাটি করবে তাই।
– রাফসান, তুমি আমাকে এমন ভাবো? ঝগড়ুটে আর ছিচকাঁদুনে!
– করছ তো এমন!
ধরিত্রী উঠে গিয়ে ড্রেসিংরুমে চলে গেল। আর দরজাটাও আটকে দিল। রাফসান কিছুক্ষণ মাটিতে বসে রইলো। একটু পর মনে হলো ওর তো ভয় করে ছোট জায়গায়। আজকে এত বাড়াবাড়ি করলো কেন? দিন দিন নিজেও ধরিত্রীর মতো হয়ে যাচ্ছে। এরপর ও উঠে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়লো,
” স্যরি ধরা, আর হবে না। আমি ওভাবে বলতে চাইনি। আমি একটু স্ট্রেসে আছি।”
ধরিত্রী শুধুই কান্না করছে। কিছু বলছে না। রাফসান আবার বলল,
“ওকে আমি চলে যাচ্ছি। বাইরে এসো। ভেতরে তোমার ভয় করবে। চিড়ার ক্ষতি হবে।”
রাফসান বাইরে চলে গেল। খুব ক্লান্ত লাগছে ওর। সোজা আহসানের খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লো। ধরিত্রী ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে আসলো। অপেক্ষা করলো অনেকক্ষণ। রাফসান আসেনি দেখা করতে। ও এতটা বদলে গেছে।
রাফসান ঘুম থেকে উঠতেই চাচার সাথে দেখা হলো।
– আরে চাচ্চু।
– বের করে দিয়েছে? কী নির্দয়! সব ভাবীর আশকারা। এত কষ্ট করে বাড়ি এলি আর তোকে নিজের ঘর থেকেই বের করে দিল।
– আমিই বের হয়েছি।
– কেন?
– চিড়ার ক্ষতি হবে তাই। বাদ দাও। তোমার কী খবর?
– আমি ভালো। চল খাবি।
খাবার টেবিলে রাফসানের মনমরা। রুবাইয়া কিছুই জানে না। রাফসান এসেছে মানে ধরিত্রী খেয়েছে। খাওয়া শেষে রাফসান চিন্তা করছে ধরিত্রী সাথে ঘুমাবে কি না। এত রাগ দেখানো উচিত না। ঘরে গিয়ে দেখলো ও ঘুমিয়ে গেছে। আজকে প্রেসার কত? ইদানিং প্রেসার ও বাড়ছে আর ওজন ও। ওর যে এমন অবস্থা হতে পারে তা রাফসান স্বপ্নেও ভাবেনি। সোস্যাল মিডিয়া তে দেখা স্বপ্নের রাজকুমারী যে এমন ও হতে পারে। আসলে ও শুধু ধরিত্রীর ভালো ভালো দিকটাকেই ভালোবেসেছিল। ওর রাগ ওর জেদকে ভালোবাসেনি। একটা মানুষ আগাগোড়া শুধু ভালোই হয়না। সকালে নাস্তা করতে গিয়ে ধরিত্রী আবার বমি করলো। সকাল বেলা বমি করে ও খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে। এমনিতেও পেটে তেমন কিছু ছিল না। বমি পরিষ্কার শেষে রাফসান ওর মাকে জিজ্ঞেস করলো,
– কাল প্রেসার কত ছিল?
– আমি কী করে বলব? তুই না খাওয়ালি।
– আমি তো আহসানের ঘরে ছিলাম। আমার সাথে রাগ করেছিল।
রাফসান বুঝতে পারলো ধরিত্রী কাল রাতে কিছু খায়নি। ওর মেজাজ এত গরম হয়ে গেল যে ও অসুস্থ ধরিত্রীর সাথে চেঁচাতে লাগলো।
“তোমার সমস্যা কী? আমার উপর রাগ আমার বাচ্চার উপর ওঠাচ্ছ কেন? ”
রুবাইয়া দুজনকেই সামলাতে পারছে না। রাফসান এরপর নিজেকে শান্ত করে বলল,
– মা, তুমি ওকে আমার প্রমোশনের কথা বলেছ?
– না।
– তোমাকে কে বলেছে ধরিত্রী? আহসান? রাশা? কে?
ধরিত্রী চুপ করে আছে। ওর খুব বিরক্ত লাগছে। রুবাইয়া বুঝে গেছে।
– মীরা বলেছে। সারাদিন ওর সাথেই তো কথা বলে।
– মীরা!!!!!
রাফসান রেগে হাসপাতালে গেল। সেখানে মীরা ওর সাথে কথা বলতে আসলেই,
“তোকে আমি বন্ধু ভেবেছিলাম। তুই আমার সবচেয়ে বড় শত্রু। তুই আর ধরিত্রীর সাথে কোনো কথা বলবি না। বাসার ধারে কাছে যাবি না। ফোন ও করবি না!”
মীরা কিছু বলার সুযোগ পেল না। ওয়াশরুমে গিয়ে কান্না করল। ও জানতো এমন কিছু হবে। তবে ধরিত্রী কে এটা আগেই বলা উচিত ছিল। ধরিত্রী সারাদিন রাফসানের জন্য অপেক্ষা করেছে। ওর অস্বস্তি লাগছে রাফসান কে ছাড়া। রাফসান ও মেসেজ করে বলেছে ও সন্ধ্যায় আসবে। বেচারি ধরিত্রী শুধু অপেক্ষাই করছে। ওর একা একা লাগছে। মীরাকেও ফোন করেছে। মীরা তোলেনি। রাত নয়টায় রুবাইয়া খাবার নিয়ে এসে দেখে ধরিত্রী মাটিতে পড়ে আছে। ও কেমন যেন করছে। খিচুনি হচ্ছে ওর। রুবাইয়া চিৎকার করে সবাইকে ডেকে আনলো। ওর মণির কী যেন হয়েছে। এত অভিজ্ঞ ডাক্তার হয়েও রুবাইয়ার হাত পা শক্ত হয়ে গেছে। ধরিত্রীকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। ধরিত্রীর বাবা মা, রাফসান, সবাই এসেছে। গুরুতর অবস্থা ধরিত্রীর। যা ভয় ছিল ওর তাই হয়েছে।
(চলবে)