#ধরিত্রী_কথন
#পার্ট ১১,১২
#পিকলি_পিকু
১১
সিনেমা দেখা শেষে বের হচ্ছে মিম রিমা আর রাধা। রিমা ইতস্তত করে রাধাকে একটা প্রশ্ন করেই ছাড়লো, “তুই ধরিত্রীর নাম্বার টা কেন নিয়েছিস?” রাধা কিছু বলল না। মিম বলল, “আমি জানি কেন। তুই এটা ঠিক করবি না রাধা।” “কেন ঠিক করব না?” রাধা বলল। রিমা কিছুই বুঝতে পারল না। “তোরা কী আমাকে কিছু বলবি না?”
“রিমা, রাধা ধরিত্রীর নাম্বার টা নিয়েছে কারণ ও মীরার কথাগুলো ধরিত্রী কে বলে দিবে।”
“কী! এমনটা করিস না।”
রাধা জোর করে হেসে বলল, “তো কী করবো? আমাদের মতো ধরিত্রীকেও রাফসান থেকে দূরে সরে যেতে দেখব? আমি চাই ধরিত্রী সাবধান হোক।”
“কিন্তু এটা কোনো প্রসেস না।” মিম বলল। রাধা ওর কথার কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। রিমা রাধার কাঁধে হাত রেখে বলল, “তোর কথা আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু মিম ও ঠিক।”
“হ্যাঁ। আর আমিও ঠিক আর রাধাও ঠিক। রাধার উদ্দেশ্য উপকার করা, আর উপকার করতে গিয়ে অনেক সময় অনেক বড় বড় ক্ষতি হয়ে যায় যা আমরা কল্পনা ও করতে পারি না। ধরিত্রী আর রাফসানের জন্য এই সময়টা অনেক নাজুক। বিয়ের প্রথম দিকের সময়। এ সময় সবই মিষ্টি লাগে। এই সময় টাতে ও যখন শুনবে ওর স্বামীর বেস্টফ্রেন্ড ওর স্বামীকে ভালোবাসে আর ও ওদের সম্পর্কে ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে তখন ওর কেমন লাগবে? না চাইতেও ওর মধ্যে ইনসিকিউরিটি চলে আসবে। ও ভাববে রাফসান ও চায়। সব কিছু কেমন টক্সিক হয়ে যাবে।” এই বলে মিম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
“আজকে যে ও ক্যান্সেল করে দিল। আজ ওর চেহারা দেখে আমার চোখে আগের আমির চেহারা ভেসে উঠল। এভাবেই ছলছল করছিলাম আমি। মীরার জন্য রাফসান আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। ধরিত্রীর চোখে আমি সেই কষ্টটা দেখেছি। আমি শিওর এখানেও মীরার হাত আছে।” রাধা খুব রেগে বলল এসব কথা।
“আ’ম স্যরি রাধা, এটা পুরোটাই অনুমান। আর হলেও রাফসান তো দুধের শিশু নয় যে বেস্টফ্রেন্ডের কথায় স্ত্রীকে দাঁড় করিয়ে প্ল্যান ক্যান্সেল করে দেবে? আজকে হয়তো ও সত্যিই ব্যস্ত ছিল। এভাবে যদি ধরিত্রীও মীরা আর রাফসান কে সন্দেহ করে তো ওদের মধ্যে অশান্তি হবে। যা হচ্ছে যেভাবে হচ্ছে হোক। মীরার ঝামেলা ওকে নিজেকে আবিষ্কার করতে দে।” মীম ওর কথা শেষ করতেই রাধা বলল, “কিন্তু পরে যখন ও জানবে তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে।” “পরের টা পরে রাধা। ভবিষ্যতের ব্যাপারে চিন্তা করতে গিয়ে ওদের সুন্দর আজটা কেন নষ্ট করা?” রিমার কথায় মিম ও সম্মতি দিল। রাধাও বুঝতে পারল।
“এবার ধরিত্রীর নাম্বার টা আমাদেরকে ও দে।” মীমের কথা শুনে রাধা অবাক হলো। “তুই ওর নাম্বার নিয়ে কী করবি?” “খোঁজ রাখব, তুই উপকার করছিস কিনা। ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দে। মনে রাখবি, নিজের মানুষটা ঠিক তো সম্পর্ক ঠিক। রাফসান ভালো থাকলে মীরা কিছুই করতে পারবে না।”
রাফসান রাত দেড়টায় বাড়ি ফিরল। গত দুইদিন গরুর মতো খেটে আজ তো ছুটি দেওয়া হলো না, আবার লেট ও করলো। কী বা করবে। হাসপাতালে হঠাৎ ইমার্জেন্সি। সবাই ভাবে নিউরোলজিস্টদের তেমন কোনো কাজ নেই। ওরা তো সার্জারি ও করে না। কিন্তু নিয়মানুযায়ী একজন রোগীর মস্তিষ্কের রোগ সনাক্ত না করা গেলে কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে এটা ওনারা জানেন। ঘরে ঢুকতেই দেখল রুবাইয়া খাবার টেবিলে বসে ঘুমাচ্ছে।
– মা, ঘরে যাও।
– আজকে তুই কী করেছিস?
– কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
– কেন? জবাবদিহি করবি না কেন? মেয়েটা আজ রাতে খাবার পর্যন্ত খেল না।
– কেন? আমি তো বললাম আমার ইমার্জেন্সি।
– কী এমন ইমার্জেন্সি তোর?
– আজ আমি আগে আগেই বের হচ্ছিলাম। হঠাৎ একজন বৃদ্ধ রোগী এলো। সামির তাকে দেখছিল। আমার ও থাকার কথা। আমি তো বের হচ্ছি। হঠাৎ একটা কমবয়সী ছেলে আসলো। সামির ওকে গুরুত্ব দেয়নি। ও বৃদ্ধ লোকটার সাথেই ছিল। আমি চলে আসতাম যদি আরেকজন থাকতো। কিন্তু আর কেউ ছিল না।
– তো?
– ছেলেটা স্ট্রোক করেছিল। ভার্সিটিতে হুট করে পড়ে গেল। প্রচন্ড মানসিক চাপে ছিল। এত কম বয়সে মানুষ স্ট্রোক করবে আমরা ভাবি না। ওর চিকিৎসার দরকার ছিল। এতক্ষণ আমি ছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমত ও বেঁচে আছে। আমি ইচ্ছে করে ক্যান্সেল করিনি।
– এখন এটা তুই ওকে বুঝিয়ে বলবি।
– বলব। আচ্ছা মা, ও কী খুব রাগ করেছে?
– আমি তো ওকে দেখলামই না। দেখাই করেনি। খেতেও আসেনি।
রাফসান তাড়াতাড়ি ওর ঘরে গেল। ঘরে গিয়ে বাতি জ্বালিয়ে দেখলো ধরিত্রী ৪৫৹ কোণে উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। মোট কথা পুরো খাটটাই ওর দখলে। ধরিত্রীকে এভাবে দেখে রাফসান ওর পাশে বসলো। ওর মুখটা নিজের দিকে ফিরাতেই দেখল ওর চোখের আশেপাশে কাজল শুকিয়ে আছে। রাফসান ধরিত্রীকে আস্তে আস্তে সোজা করে শোয়ালো। এরপর ফ্রেশ হয়ে এসে নিজেও ওর পাশে ঘুমিয়ে পড়লো। সকাল বেলা রাফসানকে নিজের পাশে দেখে চমকে উঠলো ধরিত্রী। মনটা চাইছে ওর গলা চেপে ধরতে। নাস্তার টেবিলে ধরিত্রী আহসানকে ওর চেয়ারে পাঠিয়ে রাশার পাশে বসলো। রাফসান বুঝতে পেরেছে ও রাগ করেছে। রুবাইয়া বুঝলেও কিছু বলবে না। ওদের সমস্যা, ওরা সামলাক। “ধরিত্রী, পাউরুটি না খেলে নুডলস খাবি? রাতে কিছুই খাসনি।” মনমরা ধরিত্রী শুধু মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানালো। আজকে ধরিত্রীকে অফিসে নামিয়ে দেওয়ার সময় সবার বলার ইচ্ছে থাকলেও ওর দেরি হয়ে যাচ্ছিল। তাই বলতে পারেনি। ধরিত্রীর মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। অফিসে একটা কাগজে রাফসান নামটা লিখে অনবরত কাটাকাটি করে নিজের মনকে শান্ত করছে।
“চোখের জলের অনেক দাম। এমন ফালতু জিনিসে নষ্ট করা উচিত না।”
আজকেও তেমন কোনো কাজ নেই ধরিত্রীর। ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে আসলো তাই। বাড়ি আসার পর ধরিত্রী ওর বারান্দার দোলনাতে পা তুলে বসে আছে। এখানে পা তুলে বসতে ওর ভালোই লাগে। রাশা আর আহসান বুঝতে পেরেছে ওদের ভাবির মন ভালো নেই। তাই ওরা ধরিত্রীর কাছে এসে আজ রাতে ওর সাথে মুভি দেখার আবদার করলো। রাফসান যেমনই হোক, ওর ভাইবোন ধরিত্রীকে কখনো ধোঁকা দেবে না। তাই ও হ্যাঁ বলে দিল। ওরা সবাই আজকে আটটা বাজেই রাতের খাবার খেয়ে নিল। কারণ নয়টা থেকেই মুভি দেখবে। বেশি রাত জাগা উচিত না। রাশার বাবা খুব কড়া এসব বিষয়ে।
রাতের খাবার শেষে ধরিত্রী ওর ড্রেসিংরুমে বসে ময়শ্চারাইজার মাখছিলো। হঠাৎ ড্রেসিংরুমে রাফসান উপস্থিত হলো। সেখানে ঢুকেই ও ধরিত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। ধরিত্রী ওর দিকে একবার তাকিয়ে আর তাকালো না। কিন্তু ও চলে যাওয়ার সময় রাফসান ওর হাত টেনে ধরে ওকে আটকে দেয়। এরপর ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ধরিত্রী কিছুই বলছে না। তাই ওকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরলো রাফসান,
– কেমন আছ?
– ছাড়ো?
– রাগ করেছ? আ’ম স্যরি।
– বিরক্ত লাগছে।
– বল না।
– আমাকে ছেড়ে দাও।
– ছাড়ব না আমার পোষা বিড়াল। আমাকে ক্ষমা করে দাও।
রাফসান খুব আদর করেই কথাটা বলল। আর সাথে সাথে ধরিত্রীকে পশমি বিড়ালের মতোই আদর করতে লাগলো। যেন ওকে ভেতরে শুষে নিচ্ছে। রাফসান যেন ওর পোষা বিড়ালের সাথেই খেলছে। কারণ ধরিত্রীর কোনো উচ্ছ্বাস নেই। ঠিক একটা বিড়াল যেমন। বিরক্ত হচ্ছে।
একটু পরই রাশা আসলো। ও প্রথমে দরজায় কড়া নাড়লো। এরপর আস্তে আস্তে ঢুকে বলল, “ভাবি, মুভি দেখবে না? আমি আর আহসান বসে আছি।”
মুভি দেখবে? এখন? এখন তো রাফসান আর ধরিত্রী সময় কাটানোর কথা। রাফসান এসব ভাবতেই ধরিত্রী রাফসানকে ছেড়ে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।
– চলো।
– কীসের চলো? এত মুভি দেখা ভালো না। যা, ঘুমিয়ে পড়।
– তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। আমরা মুভি দেখব।
– না! তুমি আমার সাথে থাকবে।
– আ’ম স্যরি। আমি ওদের আগে কথা দিয়েছি।
ধরিত্রী আর রাফসানকে একসাথে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে রাশা বুঝলো ও ভুল সময়ে এসেছে। আর এখন তো ওরা ঝগড়া ও করছে। রাফসান রেগে যাওয়ার আগেই কেটে পড়া ভালো। রাশা যাওয়ার আগেই ধরিত্রী বলল,
– এই রাশিয়া! আমাকে রেখে যাবে না।
– ও রাশিয়া কবে থেকে?
– অনেক আগে থেকে। আমি আদর করে ডাকি।
– আমাকে তো ডাকো না।
– ইউ ডোন্ট ডিজার্ভ ইট।
ধরিত্রী রাশার সাথে চলে গেল। রাফসান খুব অপমান বোধ করল। ধরিত্রী আর ওর দেবর ননদ একসাথে ছবি দেখছে। ওরা রাশার ঘরে। তখনই রাশা দেখল রাফসান রাশার দরজার বাইরে। রাশা বলল, “ভাইয়া!” ধরিত্রীর চোখ সেদিকে গেল। ধূসর টি শার্ট আর চেক ট্রাউজার পরে ও দাঁড়িয়ে আছে।
“আমিও কী সিনেমা দেখতে আসতে পারি?”
রাশা জানে ওর আজ ভাইয়াকে বারণ করলে কী হতে পারে। রাফসান ঘরে ঢুকে বলল,
– আমরা বসার ঘরে হোম থিয়েটারে দেখি?
– কিন্তু ভাইয়া, শব্দ হলে?
– আওয়াজ কমিয়ে দেখব।
ওরা সবাই বসার ঘরে সিনেমা দেখতে বসেছে। ধরিত্রী রাফসানকে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। তাও রাফসান এসে ওর পাশে বসলো। আহসান সিনেমা ছাড়ার আগে রাফসান বলল, “আজকে যেহেতু আমি প্রথম বার ছবি দেখছি তো আমার প্রিয় ছবি দেখব।” “কী ছবি ভাইয়া?” রাশা আর আহসান প্রশ্ন করলো। ” দ্য কনজ্যুরিং ! ”
ধরিত্রীর সাথে একসাথে হরর মুভি। ভয় পেয়ে ও রাফসানের কাছেই আসবে। আর এই রাশা আর আহসান ভয়েই পালিয়ে যাবে। আর জীবনেও ধরিত্রীর সাথে মুভি দেখতে চাইবে না।
“না ভাইয়া! আমি ভয় পাই।” আহসান বলল।
“ট্রাস্ট মি! অনেক মজা হবে।” রাফসান ওকে অভয় দিল।
রাশা বুঝতে পারল এখন এটাই দেখতে হবে। সিনেমা শুরু হতেই ওরা দুই ভাইবোন কাঁচুমাচু হয়ে আছে। আস্তে আস্তে ভয়ংকর দৃশ্য আসতে শুরু হলো। ওরা দুজন আর পারলো না। ওরা ওদের ঘরে চলে গেল। রাফসান সফল। ও হাতের মুষ্টি এক করে উদযাপন করলো। একটু পর ধরিত্রীও উঠে চলে গেল। রাফসান হোম থিয়েটার বন্ধ করে ওর পেছনে পেছনে আসলো। ধরিত্রী গিয়ে সোজা ওর জায়গায় শুয়ে পড়লো। রাফসান ও ওর পাশে শুয়ে পড়লো। ধরিত্রী যেতে যেতে একদম কোণায় চলে গেল। রাফসান ও ওর সাথে কোণায় চলে গেল। এরপর ওকে পেছন থেকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
– কী হলো পোষা বিড়াল? সিনেমা দেখবে না?
– কী বললে?
– বললাম সিনেমা দেখবে না? আসো, তোমাকে একটা সিনেমার গল্প বলি। সিনেমাতে একটা ছেলে থাকে, সে তার মায়ের বান্ধবীকে পছন্দ করে। আর তার মায়ের বান্ধবী ও তাকে পছন্দ করতো। তাদের মধ্যে অনেক সুসম্পর্ক তৈরী হয়। অনেক বেশি গভীর সুসম্পর্ক। কিন্তু সেই মায়ের বান্ধবী হঠাৎ তার বান্ধবীর ছেলের ওপর রাগ করে বসে। বান্ধবীর ছেলে কিন্তু স্যরি বলেছে। তাও সে তাকে অবহেলা করতে লাগলো। মায়ের বান্ধবী থেকে অবহেলিত হয়ে ছেলেটির মাথা পাগল হয়ে যায়। আর সে মায়ের বান্ধবীকে খুন করে ফেলে।
ধরিত্রী ওর এই গল্প শুনেও কিছু বলল না। তাই রাফসান নিজেই বলল,
– মোরাল অফ দ্য স্টোরি কী জানো?
-….
– বান্ধবীর ছেলেকে ক্ষমা করে দিতে হয়। নইলে বান্ধবীর ছেলের খুব কষ্ট হচ্ছে। আ’ম স্যরি ধরিত্রী।
ধরিত্রী তবু কিছু বলল না। রাফসান আবার বলল,
– আমি অনেক কষ্টে সময় পাই। তুমি কেন ঐ সময়েও ওদের সাথে মুভি দেখছ? আজকে যা হয়েছে তার জন্যও স্যরি। তবে এরপর থেকে আমি যখন বাসায় থাকবো তখন তুমি শুধু আমার সাথেই সময় কাটাবে। আর কারো সাথে না।
– কেন? আমি তোমার পোষা বিড়াল তাই! হাউ ডেয়ার ইউ কল মি পোষা বিড়াল!
ধরিত্রী খুব চিৎকার করেই বলল কথা গুলো। আর বসেও পড়লো। রাফসান ও ঘাবড়ে গিয়ে বসে বলল,
– আস্তে ধরিত্রী। সবাই শুনতে পাবে।
– শুনুক! সবাই জানুক তুমি আমাকে খেলনা ভাবো।
– খেলনা!
– হ্যাঁ! শুধুই সময় কাটানোর বস্তু। তোমার খালি সময়ে তোমাকে মনোরঞ্জন করার জন্য।
– হোয়াট! তুমি ভুল বুঝছ।
– আমি কেন বাধ্য তোমার খালি সময়ে তোমার সাথে সময় কাটাতে? তুমি কী সুলতান সুলেমান, যে সাম্রাজ্য চালিয়ে এসেছ। তোমার খাস কামরায় খাস বাঁদী দরকার।
– ধরিত্রী, তুমি কোথাকার কথা কোথায়,
– ঠিক জায়গায় আছি আমি। তুমি আমাকে ভোগ বস্তু মনে করো। তাই শুধু রাতের বেলায় আমার কথা মনে পড়ে। আমাকে বিয়ে করার তুমি একটা কারণ বলো তো। জানি, তুমি পারবে না। কারণ তুমি ডেস্পারেট ছিলে। এই বয়সে তোমার একটা রেগ্যুলার সে*ক্স পার্টনার দরকার তাই। ইউ আর সে,*ক্সুয়ালি ডিপ্রাইভড!
– তুমি এত বাজে চিন্তা করো।
– বাজে চিন্তা তো তোমার! যদি তোমার মনে হয় বিয়ে মানে শুধুই শারীরিক চাহিদা তো তুমি ভুল! বিয়ে একটা মানসিক চাহিদাও। আমি সবসময় চেয়েছিলাম এমন একজন মানুষ যে আমার সাথে কথা বলবে। সব বিষয় নিয়ে। কিন্তু বিয়ের পর আমি তোমার সাথে বসে একটু সময় করে কথা বলতে পারিনি। সেদিন তুমি আসবে বলেছিলে। আমার অনেক প্ল্যান ছিল। সব কিছুর মধ্যে শুধু ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়া পূরণ হয়েছে। তুমি আসোনি। কারণ সেই জিনিসটা কে তুমি কোনো কারণ হিসেবে মনেই করোনা। তুমি যে কারণে বিয়ে করেছ তার জন্য তুমি ব্রথে*লে যেতে পারতে ইউ হ*র্নি পিস অফ শি*ট!
– শাট আপ! প্লিজ শাট আপ! আর কত নোং*রা অপবাদ দেবে? তুমি একটিবার ও জিজ্ঞেস করোনি কী ইমার্জেন্সি ছিল আমার।
– তুমি সেদিন প্রশ্ন করার সুযোগই দাওনি। আমি আবার কেন প্রশ্ন করবো?
– আ’ম স্যরি ফর দ্যাট। আমি আসলে,
ধরিত্রী ওর দুটো কান হাত দিয়ে ঢেকে বলল, “আমি শুনতে চাই না। প্লিজ আমার সাথে আর কথা বলোনা। ”
রাফসান ও অতিষ্ঠ হয়ে বসে রইলো। ধরিত্রী ও ওর জায়গায় মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো। এখন রাফসান ও মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো।
(চলবে)
#ধরিত্রী_কথন
#পার্ট১২
#পিকলি_পিকু
সকালবেলা সব থমথমে পরিবেশ। ধরিত্রী আর রাফসান নাস্তার টেবিলে। ধরিত্রীর চোখ আজ ও ফুলে আছে। রাফসানকেও বিধ্বস্ত লাগছে। রাফসানের বাবা মা এর সাথে চাচ্চু আর চাচি ও আছে এখানে। চাচ্চুর ও মেজাজ খারাপ মনে হচ্ছে। রুবাইয়া খেয়াল করল রাশা আর আহসান নেই এখানে।
– কী ব্যাপার মাশরুফা, ওরা দুজন নেই যে। ছুটি নাকি?
– ভাবি, পরে বলি।
মাশরুফা ইতস্তত করছে। আজহার মাশরুফার দিকে রেগে তাকিয়ে বলল,
– পরে কেন? এখন বলো!
– আস্তে।
– কেন? ধরিত্রী, তুমি বিয়ের আগে কী কী করতে সব তো আর এখানে হবে না।
ধরিত্রী সোজা হয়ে বসলো। ও কিছুই বুঝতে পারল না,
– জ্বী চাচ্চু?
– রাত জেগে সিনেমা দেখা ভালো অভ্যাস না। যদি দেখতে চাও তো নিজের ঘরে একাই দেখতে পার। ওদের নিয়ে দেখার দরকার নেই। আবার হরর সিনেমা!
ধরিত্রী চুপ করে আছে। ওর সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। ও না ওদের ডেকেছে সিনেমা দেখতে না হরর সিনেমা ও চেয়েছিল। রুবাইয়া বুঝতে পারছে ধরিত্রীর খারাপ লাগছে। তাই,
– কী হয়েছে আজহার? এভাবে চিৎকার করছ কেন?
– ভাবি আমি তোমাকে খুব সম্মান করি। তোমার খাতিরেই আমি ওর সব অনিয়ম না দেখার ভান করছি।
– খুলে বল।
– কাল রাতে ও রাশা আর আহসান কে নিয়ে ভূতের ছবি দেখেছে। ভয়ে কাল ওরা কেউই ঘুমাতে পারেনি। মাঝরাতে আমাদের ঘরে চলে এসেছে। এখন নাকি স্কুলেও যাবে না। কিছু তো বলতেও পারব না। তুমি তো মেয়ে এনেছ। মেয়ে হলে মেয়েকে শাসন ও করতে হয়।
মাশরুফা আজহারের হাত ধরে রেখেছে। কী একটা ঝামেলা। আফসার এবার ধমক দিয়ে আজহারকে থামিয়ে দিল। ধরিত্রীর চোখ থেকে টুপ টুপ করে জল ঝড়ছে। রাফসান এবার বলল,
– চাচ্চু ভুল হচ্ছে, ভূতের সিনেমা ধরিত্রী না, আমি দেখতে চেয়েছিলাম।
– মিথ্যা কথা বলবি না। আমি কী তোকে চিনি না? রাত জেগে না, কখনো দিনেও সিনেমা দেখিসনি ওদের সাথে। ধরিত্রী কে বাঁচানোর জন্য।
– স্যরি চাচ্চু, আমিই করেছি। আসলে আমি ইচ্ছে করেই করেছি। ওরা ধরিত্রীকে সিনেমা দেখতে ডেকেছিল তাই ওদের ভাগানোর জন্য। আ’ম স্যরি।
রাফসান কথা শেষ করার আগেই ধরিত্রী চলে গেল ঘরে। রাফসান জায়গা থেকে উঠে ধরিত্রীর পেছনে যেতে যেতে বলল, “আমরা অল্প কিছুক্ষণই দেখেছি। ওদের এত ভয় পাওয়ার ও কিছু না। সব স্কুলে না যাওয়ার বাহানা।”
রুবাইয়া বলল,
– আজহার, তুমি এটা ঠিক করোনি। এমনিতেই ওদের দুজনের মধ্যে সব ঠিক যাচ্ছে না। আরো নষ্ট করে দিলে।
– কী করলাম? আর কী হয়েছে?
– তোমার ভাতিজা ওর সাথে বাইরে দেখা করবে বলে দাঁড় করিয়ে রেখে পরে ক্যান্সেল করে দিয়েছে। সেজন্যই ওর মন ভালো করতেই রাশা আর আহসান ওকে সিনেমা দেখতে ডাকে। আর ধরিত্রীর কোনো দোষ নেই। ওকে শুধু শুধু বকলে।
আজহার আর কিছু বলল না। কারণ তিনি এখনো বিশ্বাস করেন ধরিত্রীর দোষ। এদিকে ঘরের ভেতর এসে ধরিত্রী কান্না করছে। রাফসান ঢুকে দরজাটা আটকে দিল। যাতে বাইরে আওয়াজ না যায়।
– স্যরি ধরিত্রী। আমি আবার সব গন্ডগোল করে দিলাম।
– না! তুমি কেন গন্ডগোল করবে? তুমি তো ঠিক করেছ।
– আর হবে না। আমি আর কখনো হরর মুভি দেখার কথা বলব না। তুমি ওদের সাথে যেই মুভি ইচ্ছা সেই মুভি দেখ।
– প্লিজ তুমি বাইরে যাও। আই হে*ইট ইউ রাফসান! আই হে*ইট ইউ!
ধরিত্রী জোরে জোরে কান্না করতে থাকে। রাফসান ওর জায়গা থেকে সরছে না। অতঃপর ধরিত্রী ওদের ড্রেসিংরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিল। এই একটা ভালো ব্যবহার এই ড্রেসিংরুমের। কিন্তু রাফসান এখনো ধরিত্রীর কান্না শুনতে পারছে বাইরে থেকে। ও দরজার কাছে গিয়ে আঙুল দিয়ে দরজায় শব্দ করে বলে, “এই ধরিত্রী, প্লিজ বেরিয়ে এসো। আমি তোমার কথামতো চলে যাচ্ছি। ভেতরে থাকার দরকার নেই।”
ধরিত্রী রাফসানের কথা শুনতে পেল। এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে আসলো। রাফসান চলে গেছে। একটু পর হাত মুখ ধুয়ে ধরিত্রী ও বেরিয়ে যায়। হাসপাতালে রাফসানের মন বসছে না। ওর খুব খারাপ লাগছে। ওর ধরিত্রীর ভুল ধারণা ভাঙাতে হবে আর রাগ ও। তাই ও লাঞ্চ টাইমে মীরার কাছে গেল। মীরা ব্যস্ত। তাও সময় বের করলো। রাফসান স্বল্প সময়ে স্বল্প পরিসরে সব শোনালো।
– সিরিয়াসলি রাফসান!
– জ্বী।
– তুই ওকে পোষা বিড়াল ডেকেছিস।
– কিউট কিউট নামে তো ডাকা যায়। পোষা বিড়াল কী খারাপ?
– তারপর আবার বলেছিস আমি যখন থাকবো তখন শুধু আমার সাথেই সময় কাটাবে।
– হ্যাঁ।
– এর মানে বুঝেছিস? তুই ওকে হুকুম দিচ্ছিস। একান্তই তোর সাথে সময় কাটাতে। যেমনটা পোষা প্রাণী আর মুনিবের মধ্যে হয়।
– এত কাহিনী! আমার তো মাথাতেই আসবে না। তোদের মাথা এত প্যাঁচানো কেন?
– সত্যিই তো! তুই কী সুলতান সুলেমান? আরে বেচারি আবার তোর কারণে বকাও খেল।
– হ্যাঁ। ও ভাবে আমি সেক্সু*য়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড, শুধু ফিজিক্যাল নিড এর জন্যই বিয়ে করেছি। এটা কী বেশি বেশি না?
মীরা জোরে জোরে হাসতে লাগলো। রাফসান অনেক রেগে গেল।
– এই! হাসা বন্ধ কর।
– স্যরি দোস্ত। কিন্তু এটা কেন বলল?
– ওকে বিয়ে করার একটা কারণ বলতে বলল। কারণ টা বলার সময়ই দিল না। নিজেই নিজের মতো একটা কারণ বলে দিল। যত্তসব আজগুবি চিন্তা ভাবনা।
– ওরই বা দোষ কোথায়? বেশিরভাগ ছেলেরাই তো ফিজিক্যাল নিডের জন্য বিয়ে করে। ভা*র্জিন মেয়ে চায়। সারাদিনের সব ক্লান্তি দূরে করে প্রতি রাতে সেই বিয়ে করা খাস বাঁদীর উপর।
– চুপ! যত্তসব পুরুষ বি*দ্বেষী চিন্তা ভাবনা। সবাই এক না। অঙ্কন ভাই কী তোকে এইজন্যই বিয়ে করতে চেয়েছে? উনি চাইলে হাজার হাজার মেয়ে ওনার কাছে হাজির থাকতো। তাও কেন তোকে বিয়ে করেছে? সুযোগ পেলেই পুরুষ খারাপ এসব বলা!
রাফসান খুব ক্ষোভ থেকে এসব বলল। মীরা বুঝতে পেরে ওর পিঠে হাত বুলিয়ে ওকে ঠান্ডা করছে। একটু পর রাফসান বলল,
– আমি কেন ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম সেটা অন্তত তুই জানিস।
– জানি। কিন্তু ও তো জানে না। ও যেখানে কাজ করে সেখানে সবসময় এ ধরণের খবরই ও ছাপায়। তুই এসব জেনেই বিয়ে করেছিস। ওর যে পুরুষের প্রতি সফ্ট কর্ণার নেই তা তো জানতি। সব পুরুষ এরকম না, কিন্তু এমন পুরুষ ও তো আছে তা কী অস্বীকার করতে পারবি? আর তুই বিয়ের পর ওর সাথে একান্ত সময়ে কী কী করেছিস? একান্ত সময় মানে কী শুধু?
রাফসান মাথা নিচু করে আছে। মীরা তার মুখটা রাফসানের চেহারার কাছে নিয়ে ওকে দেখতে থাকে।
– আমি বেশি সময় পাইনি। ওর সাথে একান্ত গল্প করার মতো সময় হয়ে ওঠেনি।
– বাট ইউ গট ফিজিক্যালি ইন্টি*মেট!
রাফসান মীরার চোখে চোখ মেলায় না। মীরা চিৎকার করে বলে,
– হোয়াই???
– আরে, কী করব। মোমেন্ট টাই এমন ছিল। আর এমন না যে এক তরফা। শি লাইকস মি। দুই পক্ষ থেকেই ছিল। দেন উই গট ই*ন্টিমেট। এখন আমি ওকে বুঝতে পারছি না।
– দেখ, একটা কথা আছে, মেয়েদের শরীর তো যে কেউ ছুঁতে পারে। রাস্তায় বাসে দিন দুই চারজন ছুঁয়ে দিয়ে যায়। কিন্তু হৃদয় সবাই পারে না। মেয়েদের শরীর ছোঁয়া মানেই তাকে ছোঁয়া না। হৃদয় ছোঁয়া টাই আসল।
– কে বলেছে এই কথা?
– ফেসবুকে দেখেছি। কিন্তু ঘটনা সত্যি।
– ও তো বাঁধা দেয় নি। আমি কী খারাপ করলাম? বুঝতে ভুল করেছি?
– না রে। ওর ও তোর প্রতি শারীরিক আকর্ষণ আছে। কিন্তু ওর মানসিক আকর্ষণ ও আছে। তাই ও তোর সাথে কথা বলতে চায়। তোর সাথে সময় কাটাতে চায়। বড় কথা ও চায় তুই ওর ভেতরটাকে ভালোবাস।
– সেটা তো বাসি।
– বলে দে। বলে দে যে তুই ওকে কোচিংয়ে দেখেছিস। আর তোর বাবা মা ওকে তোর জন্য পছন্দ করেনি, তুই নিজেই পাঠিয়েছিস।
– এরপর ও আমাকে স্টকার বলুক আর কেস ঠুঁকে দিক। এমনিতেও “সেক্সু*য়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড”, “হ*র্নি পিস অফ শিট” খেতাব পেয়েছি।
– তাহলে কী করবি? গিফ্ট দে। কিন্তু মিনিংফুল। অযথা দামি না।
রাফসান মীরার আইডিয়া ভেবে দেখল। আর এদিকে রুবাইয়া গেল ধরিত্রীর অফিসে। ওকে দেখেই বলল,
– চিনি মামনি, কতদিন লাঞ্চ করিনা তোমার সাথে।
– মা!
ওরা লাঞ্চ করতে বেরিয়ে আসলো। ধরিত্রীর মন খারাপ। তাই রুবাইয়া ওর পছন্দের বিরিয়ানি অর্ডার করলো।
– তুমি তো বিরিয়ানি খেতে পার না।
– খাই একদিন।
– আমার জন্য এ পরিবারের সবার অনিয়ম।
– আরে বাদ দে এসব।
– তুমি হঠাৎ আমাকে চিনি ডাকতে চাইছ কেন?
– মা হতে চাইছি। কারণ বান্ধবীকে তো আর সব বলছিস না। ঝগড়া কেন হচ্ছে?
– তোমরা শুনেছ?
– কোনটা?
– কাল রাতে?
– তো ওটা সিনেমার শব্দ না। কী নিয়ে ঝগড়া হলো।
– দেখো মা, তোমার হয়তো খারাপ লাগবে। হয়তো কি, লাগবেই। ও তোমার ছেলে। কিন্তু ও একদম ভালো না। আর সবার মতোই।
– কী হয়েছে?
– ও আমাকে কেন বিয়ে করেছে?
রুবাইয়া তো চুপ করে আছে। ও জানে কেন করেছে। কিন্তু রাফসান কী বলেছে?
– বলতে লজ্জা করছে। ও বাকি সব পুরুষের মতোই। এই বয়সে এসে ওর ও একটা বউ লাগতো তাই। ওর সাথে আমার এখনো ভালো করে একটু কথাও হয়নি। তাই আমিই ওকে আসতে বলি। আমিই ডেট অ্যারেঞ্জ করি, কিন্তু ও ক্যান্সেল করে দিল। কারণ ওসবই ওর কাছে গুরুত্বহীন। আর ও আমাকে বলেছে ও যখন বাসায় থাকবে আমি যাতে শুধু ওর সাথেই সময় কাটাই। আর কারো সাথে না। এখন কেমন সময় কাটানো সেটা তো বুঝতে পারছো।
রুবাইয়া লজ্জায় ওর মুখ ঢেকে ফেলে। ছেলে আর ছেলের বউয়ের সব পার্সোনাল ব্যাপার। ধরিত্রী ওর শাশুড়িকে দেখে বলল,
– এজন্যই বলেছিলাম, বন্ধুত্ব টা বন্ধুত্ব থাক। শাশুড়ি হয়ে গেলে আর বন্ধু থাকবে না। নিজের ছেলের কর্মকান্ড শুনতে ভালো লাগবে না মা।
– তাই তো আজ তোর মা হয়ে এসেছি।
– মা হলেও ভালো লাগবে না। মায়েরা শুধু এডজাস্ট করতে বলতে পারে, শাশুড়ি নিজের ছেলের দোষ দেখবে না, আর বান্ধবীই শুধু বান্ধবীকে বুঝে। আর আমি সেই বান্ধবীটা হারিয়েছি।
রুবাইয়া বুঝতে পারছে ওর কষ্ট। নিজেকে অপরাধী ও লাগছে। ওনার উচিত ছিল রাফসানকে আরো মুখর বানানো। ও শুধু কয়েকজনের সাথেই মন খুলে কথা বলতে পারে। যেমন ওর মা আর মীরা। কিন্তু ধরিত্রী কেন না?
– ঐদিন কেন ক্যান্সেল করেছিল কিছু বলেছে?
– সেদিন বলেনি নি কেন? তাই আমি আর শুনিনি।
– এসব বললে হবে? শোনা তো উচিত ছিল।
– তোমাকে বলেছে?
– জ্বী। আমি শুনেছি। আর তোর ও ওর থেকে শোনা উচিত।
– না, আমি শুনব না।
– জানা তো উচিত।
রুবাইয়া এরপর ধরিত্রীকে সব খুলে বলল। শোনার পর ধরিত্রীর নিজেকে একটু অপরাধী লাগলো। শুনতে তো পারতো।
– ওর ব্যস্ততার জন্য ও কেউ দায়ী না। কিন্তু তোর খারাপ লাগাটাও জায়েজ।
– ও কী কখনো আমার সাথে বসে কথা বলতে পারবে না?
– দেখ, আমি একটা কথা বলি। আমি আর আফসার, আমরা দুজনেই বিজি ছিলাম। আমরা পড়াশোনা করতাম। রাফসানকে রাখতাম। রাফসান যখন হয়, রাতে ওকে একজন রাখলে আরেকজন ঘুমাতাম। আমাদের নিজস্ব সময় টা ছিল এই কাজের ফাঁকেই। একান্ত কোনো সময় হয়ে ওঠেনি। খুঁজে দেখলে অনেক সময় পাবি।
– ও তো আসেই দেরিতে।
– ওকে সেটা এডজাস্ট করতে বলবি। সবসময় মেয়েরা কেন এডজাস্ট করবে?
ধরিত্রী রুবাইয়ার দিকে তাকালো।
– বাহ রুবি! লাইনে চলে এসেছ।
রুবাইয়া আর ধরিত্রী হাসতে থাকে। রাফসান আজকে ধরিত্রীর জন্য উপহার নিতে বেরিয়েছে। ওর পছন্দের কিছু। অনেক চিন্তা ভাবনা করে ওর জন্য দুই ডজন লাল চুড়ি আর গোলাপ ফুল কিনলো। ধরিত্রীর চুড়ি খুব পছন্দ। ওর কাছে হয়তো থাকবে এই লাল রঙা চুড়ি, কিন্তু রাফসানের দেওয়া চুড়ি এই প্রথম। লাল রঙের প্রতি ধরিত্রীর অসম্ভব এক ভালো লাগা আছে। মাঝে মাঝেই আলতা রাঙা হাত আর হাত ভর্তি চুড়ির ছবি দিত। কিন্তু রাফসান কোথাও আলতা খুঁজে পাচ্ছে না। যাইহোক, ওর পছন্দের খাবার কী যেন? মোমো। অনেক ভাবনা চিন্তা করে উপহার দিতে হবে। অতঃপর সব উপহার নিয়ে বাসায় ঢুকলো। ধরিত্রী, রুবাইয়া আর মাশরুফা বসার ঘরেই ছিল। রাফসানকে দেখে ওরা অবাক হলো। রাফসান কী বলবে ভাবছে। ধরিত্রী তার আগেই ওর ঘরে চলে গেল। রাগ ভাঙাতে হবে।
ফুল আর চুড়ি নিয়ে রাফসান ওর ঘরে গেল। ধরিত্রী বিছানায় বসে আছে। এরপর রাফসান গলা ঝাড়লো।
– হ্যালো।
– কী?
– আ’ম স্যরি। সকালের জন্য।
ধরিত্রী ওর দিকে ভ্রুকুটি করে তাকালো। রাফসান আবার বলল,
– কালকের জন্য আর আগের দিনের জন্য ও। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি এখন থেকে সময় বের করব। আমরা গল্প করবো, সিনেমা দেখব, ডেট এ যাব। যেমনটা তুমি চাও।
– তো তুমি বলতে চাইছ তুমি এমনটা চাও না?
– এটা কবে বললাম। আমি চাই। আমিও চাই।
রাফসান এসে ধরিত্রীর পাশে বসলো,
– সেদিন আমি প্ল্যান ক্যান্সেল করেছিলাম কারণ,
– আমি জানি। মা বলেছে।
– তো, বুঝতে তো পেরেছ।
– হ্যাঁ, কিন্তু এটা তোমাকে আমার তখনই বলা উচিত ছিল। আমার বিষয়টা এত খারাপ ও লাগতো না, যদি না তোমার বন্ধুরা থাকতো। ব্যাপারটা স্বাভাবিক যে একজন ডাক্তার যেকোনো সময় ব্যস্ত হতে পারে। কিন্তু তুমি কোনো কারণ বলোনি। যেন আমি কিছুই না তোমার কাছে।
– আমার বন্ধুরা? আমার কোন বন্ধুদের পেলে?
– হ্যাঁ। মিম, রিমা আর রাধা। ওদের সামনেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা কে*টে দিয়েছ। আমি খুবই অপমান বোধ করেছি।
– আমি কী করে জানবো ওখানে ওরা ছিল?
– তারপর ও। নূন্যতম সৌজন্য। জানি ব্যস্ত ছিলে। কারো জীবন যাচ্ছিল। ছোট্ট করে তো বলতে পারতে।
– আ’ম স্যরি না। এরপর থেকে আর হবে না।
ধরিত্রী ওর দিকে এখনো তাকাচ্ছে না। রাফসান সেই লাল চুড়ি গুলো বের করে। এরপর ধরিত্রীর ডান হাত নিয়ে ওর হাতে লাল চুড়ি পরিয়ে দেয়। তারপর অন্য হাত টা নিয়ে সেই হাতেও পরিয়ে দেয়। ধরিত্রী ওর হাত গুলো সামনে নিয়ে দেখে।
– এগুলো তো অনেক বড়।
– স্যরি। আমি মাপ বুঝতে পারিনি।
– সারাদিন হাত চেপে ধরো। মাপটাও জানো না?
এবার রাফসান গিয়ে গোলাপ ফুল গুলো নিয়ে ধরিত্রী সামনে এসে বসলো। ধরিত্রী রাফসানের দিকে তাকিয়ে আছে।
– রোজেস ফর মাই রোজ।
– সিরিয়াসলি রাফসান! হাহাহ! এসব কে শেখাল? মদন দেখছি ফ্লার্টিং ও পারে না।
– মদন?
– রোজেস ফর মাই রোজ! হাহাহ!
– তো কী বলে? গুগলে তো এটাই দেখেছি।
– গুগল? ও! হোয়াটেভার, আই লাভ রোজেস। থ্যাংকস!
– আমাকে ক্ষমা করেছ?
– ভেবে দেখব।
ধরিত্রী হাসিমুখে উঠে ওর ফুল গুলো ফুলদানি তে রাখলো। বাইরে যেতেই দেখলো আহসান ওর জন্য আনা মোমোতে হাত বসিয়েছে। রাফসান ও ভিতর থেকে এসে দেখল। এরপর ধরিত্রীর দিকে আড়চোখে তাকালো। তারপর আহসানকে বলল,
– এই সর। আমিও খাব।
– তুমি আবার মোমো খাও নাকি? তুমি তো বাইরের জিনিস খাও না।
– খাই তো। এই, তোরা স্যরি বলেছিস তোদের ভাবিকে?
– কেন?
– তোদের কারণে তোদের ভাবি বকা খেল তাই। একদম সাত সকালে ঝাঁড়ি খেলো।
– ও স্যরি ভাবি। আমরা বাবাকে সব খুলে বলব। আমাদের ক্ষমা করে দাও।
ধরিত্রী সাথে সাথে বলে উঠলো,
– না না।
– কেন না?
– ওদের স্যরি বলতে হবে না।
– কীজন্যে?
– কারণ ওরা আমার আপনজন।
রাফসান বুঝতে পারল না। তারমানে ও পর। মোমো খাওয়া শেষে ওরা গল্প করতে বসলো। এভাবে গল্প করব বললেই তো আর গল্প করা যায় না। তাই কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে রাফসান সময় পার করছে।
“তুমি কী আমাকে ক্ষমা করেছ?”
ধরিত্রী কিছু না বলে ওর লেখার কাজ করতে লাগলো। ধরিত্রী ওকে ইগনোর করছে না তো? দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। রাফসান ওর পেছনে একবার হাঁটছে, একবার দাঁড়িয়ে থাকছে। ধরিত্রীর কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই। ধরিত্রী আর্টিকেল লিখতেই ব্যস্ত। রাফসান গেল কফি বানাতে। ধরিত্রী সোস্যাল মিডিয়াতে নিজেকে কফি লাভার বলে।
রাফসান বের হতেই ধরিত্রী হাসতে শুরু করে। ওর খুব ভালো লাগছে ওকে এভাবে চিন্তায় দেখে। আরেকটু মজা নেওয়া যাক। রাফসান এসে ওর পাশে কফি রেখে বলল,”আই হোপ তোমার কফি পছন্দ হবে। আমি একজন অদক্ষ বারিস্তা।” ধরিত্রী তাকিয়েও দেখল না। কিন্তু ওর খুব ভালো লাগছে। রাফসান খাটের উপর গিয়ে বসতেই ধরিত্রী এক চুমুক দিল। ভালোই বানিয়েছে। খারাপ না। এরপর রাতের খাবার শেষে রাফসান বিছানা ঠিক করছিল। ধরিত্রী কাউচের উপর বসে কাজ করছে। অতঃপর রাফসান খাটের উপর গিয়ে বসলো। সেখানে বসেই অপেক্ষা করছে।
” ধরিত্রী! তুমি খাটে আসছ না কেন? নাকি ঠিক করেছ কাউচেই ঘুমাবে? আমি থাকতে এসব হতে পারেনা।”
ধরিত্রী রাফসানের দিকে তাকালো। এরকম কিছু তো ওর মাথায় ও আসেনি। কী বলছে? ও কাউচে কেন ঘুমাবে?
“যদি না আসো তো শোনো। ওখানে থাকার দরকার নেই। তুমি খাটেই ঘুমাও। ওটা নড়াচড়া করার মতো কমফরটেবল না। গা হাত পা ব্যথা করবে। আমার চিন্তা করো না। আমি নীচেই ঘুমাব।”
ধরিত্রী ওর কথায় কান দিল না। হাস্যকর! এ মা! রাফসান সত্যি সত্যি বেড শিট বের করে নীচে বিছানা করছে। ধরিত্রীর পেট ফেটে হাসি আসছে। আজকে আল কত নাটক দেখা বাকি? কিন্তু ধরিত্রীর আর্টিকেল টা আরেকটু এডিটিং দরকার। ও সেটা করতে লাগলো।
(চলবে)