#ধরিত্রী_কথন
#পার্ট ৯,১০
#পিকলি_পিকু
০৯
“তোকে মাত্র তিন নম্বর দিয়েছে! খুব অন্যায় করেছে ধরিত্রী। অন্তত সোয়া তিন তো দিতে পারতো।”
রাফসান দাঁতে দাঁত চেপে আছে।
– আচ্ছা, সাড়ে তিন।
– আমি মজা করার মুডে নেই মীরা।
– পৌনে চার?
রাফসান মাথা নিচু করে বসে আছে।
– আচ্ছা সিরিয়াসলি বলছি। এখানে ধরিত্রীর দোষ নেই। বিয়ের পরপর যে সময়টা হয় না, এই সময়টা স্বামী স্ত্রী একটু বেশি কাছাকাছি থাকে। সব অনেক রোমান্টিক হয়। আর তুই কিনা এই সময়ে বউকে বাড়ি রেখে হাসাপাতালে দৌঁড়াচ্ছিস?
– কী করব? আ’ম আ ডক্টর। আমার দায়িত্ব আছে।
– ফ্যামিলি লাইফ ও তো আছে। ধরিত্রী কে অনেক স্ট্রং পার্সোনালিটির মনে হয়।
– মনে হয় না, ওর পার্সোনালিটি স্ট্রংই।
– তো ও যদি এডজাস্ট না করতে পারে দেন মুভ অন করবে। বসে থাকিস।
– তুই চুপ কর। তুই তো চাস আমার ডিভোর্স হোক। বসে আছিস দেখার জন্য।
– এটা কবে বললাম? তুই চেষ্টা না করলে কী করে হবে। আচ্ছা, তুই ওকে তোর ভালোবাসা দেখিয়েছিস?
– খুব একটা না।
– আগের কথা কিছু বলিস নি?
– না।
– কী করে হবে? তোকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো?
মীরা মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো। রাফসান আবার রোগী দেখতে চলে গেল। পনের মিনিট পর আবার আসল।
– এই ভাবে বিয়ে টেকাবি রাফসান? আমি দেখে এভাবে বসে আছি। অন্য কোনো মেয়ে বসে থাকবে না।
– কী করব?
– শো হার লাভ। শো দ্যাট ইউ আর ক্রেজি আবাউট হার।
– লজ্জা করে তো।
– ডোন্ট কন্ট্রোল ইট। লজ্জা পাবি না। বি আ ব্যাড বয়।
– ও যদি খারাপ ভাবে?
– ভাবুক। শুধু ওর সামনে ব্যাড বয়। মেয়েরা এসব ডুয়েল পার্সোনালিটি অনেক পছন্দ করে। মানে সবার সামনে এক ওদের জন্য পুরোপুরি আলাদা একটা মানুষ।
– এই, অঙ্কন ভাই কী এরকম? তোর সামনে ব্যাড বয়?
– অঙ্কন আমার সামনেই গুড বয়। বাট অঙ্কন ইজ আ ব্যাড বয়। শর্ট টেম্পারড, অ্যাঙ্গার ইস্যুস। আমার এ ধরণের ছেলে কখনো পছন্দ ছিল না। তার উপর রিচ কিড, পার্টি অ্যানিমেল। ভোর ছয়টা পর্যন্ত পার্টি চলত ওর।
– সিরিয়াসলি!
– জ্বী। এই জন্যই আমি বিয়ে করতে চাইনি ওকে। দায়িত্ব জ্ঞানহীন ধনীর দুলাল। প্লে বয়, যার ওয়ান নাইট স্ট্যান্ডস আর রঙ বেরঙের গার্লফ্রেন্ডের কাহিনী সোস্যাল মিডিয়া তে ফেমাস।
– তুই মিথ্যে বলছিস। আই ডোন্ট বিলিভ ইউ।
– একদম না। তুই ওর অফিসে গেলে এখনো জোরে জোরে চিৎকার শুনবি ওর।
– দুটো আলাদা পার্সোনালিটি?
– একদম। একটা আমার। শুধুই আমার। আমার সামনে ভেজা বিড়াল। শুধু আমি না, আমার আত্মীয় স্বজন বন্ধু দের সামনে ও খুব ভদ্র। ওর অন্য রূপ টা আমাকে দেখায় না।
– কেন?
– কারণ আমি বলেছিলাম, আমি চাই না কেউ আমাকে দেখে আফসোস করুক যে ওর স্বামী বদমেজাজি, চরিত্রহীন। আমার সহানুভূতির প্রয়োজন নেই। আমি ছোট হতে চাই না। তোমার মতো পুরুষ আমার জন্য না। আমার স্বামীর জীবনে শুধু একটাই নারী থাকবে। আর আমার তোমার গার্লফ্রেন্ড হওয়ার ও কোনো ইচ্ছা নেই।
– তো ও সত্যি সত্যি বদলে গেল?
– হ্যাঁ। নরম হয়ে গেল আমার সামনে। সবাই ওর সামনে নত আর ও আমার সামনে।
– তো ধরিত্রী ও কী?
– তুই এমনিতেই অনেক সফ্ট হার্টেড। আমি যেটা বুঝেছি, আমরা মেয়েরা সারপ্রাইজ পছন্দ করি। কোনো জিনিস একান্তই আমাদের পছন্দ করি। আলাদা পছন্দ করি। ঐ ইউনিক টা হয়ে যা ওর জন্য।
রাফসান সেদিন সন্ধ্যায় তাড়াতাড়ি বাসায় গেল। গিয়ে দেখলো ধরিত্রী নেই।
– মা, ও কোথায়?
– রাশার রুমে বোধহয়।
রাফসান রাশার ঘরে গেল। গিয়ে দেখলো ওরা সবাই অ্যানিমে দেখছে। ধরিত্রী ওর দিকে শুধু একবারই তাকালো। চমকালো না। রাফসান এসে ধরিত্রীর পাশে বসলো। রাশা বলল, “ভাইয়া, সামনে থেকে সর।” রাফসান ধরিত্রী থেকে একটু দূরে গিয়ে বসলো। ও কিছুই বুঝতে পারছে না। সাবটাইটেল এত দ্রুত। জাপানি ভাষা ওর বোঝার কুদরত নেই। আর মাঝখান থেকে দেখে কিছু বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর ও ধরিত্রী কে বলল,
– একটু কথা আছে।
– একটু পর। এই এপিসোড টা শেষ করতে দাও।
– কতক্ষণ বাকি?
– অল্প।
রাফসান বাইরে চলে আসলো। কিছুক্ষণ পর আবার গেল। ও তাকিয়ে আছে ধরিত্রীর দিকে। ধরিত্রীর মনোযোগ সাবটাইটেলে।
– কতক্ষণ?
– আরেকটা এপিসোড শুরু হয়ে গেছে। স্যরি। এটা শেষ করেই আসছি।
রাফসান এবার নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে অপেক্ষা করছে। আজকেও ওর সময় কাটানো হবে না। রাতের খাবার খেতে গেল ওরা সবাই। আজকে আবার চাচ্চু নেই। ধরিত্রী সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।
– বসে যা।
– আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।
– কেন?
– ক্ষুধা নেই।
– আরে, তোর মা আমাকে বকবে। বস। অল্প করে খা।
অল্প করেই খেয়ে ওরা শুয়ে পড়লো। মানে কী! একটু কথা বলবে না? ওদের সাথে শো দেখতে পারে, ওর সাথে কথা বলতে পারে না। আজকে রাতে আবার রাফসান কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করতে চাইলেও ওকে আটকে দেওয়া হলো। আজ আবার ধরিত্রী তৈরী হয়ে বসে ছিল রাফসান আসবে। মনে হচ্ছে যেন ওর সাথে ধোঁকা হয়েছে। সন্ধ্যার পর আর ঘর থেকে বের ই হলো না। রাগ করে আজ রাতের খাবার ও খায়নি। রুবাইয়া বুঝতে পেরেছে ওদের মধ্যে কিছু ঠিক নেই।
– ভাবি, ধরিত্রী রাগ করেছে না?
– করেছে। রাফসানকে আমি আর কী বলব? আমি অতিষ্ঠ! কখন বুঝবে ও?
– ভাবি, মা ওদের দাওয়াত দিতে চাইছিল। কালকে আমাদের যেতে বলল।
– সবাই?
– জ্বী। নতুন বউকে নিমন্ত্রণ জানাচ্ছিল।
– জিজ্ঞেস করে দেখি।
দাওয়াত! রাফসান দাওয়াত পছন্দ করে না। কিন্তু এখানে যেতেই হবে। চাচ্চুর শাশুড়ি রাফসানকে খুব পছন্দ করে। রাফসানের দাদি নানি অনেক আগেই মা*রা গেছেন। রাফসান তাকেই নিজের দাদি নানির মতো সম্মান করে। আর নানুও রাফসানকে আপন নাতি থেকে কম ভাবে না। আজকে এমনিতেই রাফসানের সন্ধ্যার পর জলদি আসার কথা ছিল। দাওয়াত বলে বিকেলেই ও হাজির। ধরিত্রীর রাফসানকে দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়। প্রথম দিন কথা বলে ওর মনে হয়েছিল রাফসানের সাথে কথা বলে হয়তো অনেক মজা পাওয়া যাবে। গল্প করার মতো একটা মানুষ। কিন্তু ওর তো সময়ই হয় না। অবশ্য ও আগেই বলেছিল যদিও।
ধরিত্রী একটা জাম রঙের শাড়ি পড়েছে। সাথে এই পাফড ব্লাউজটায় ওকে আরো মানিয়েছে। ড্রেসিংরুমে বসে ধরিত্রী সাজছে। ব্লাশ টা ব্লেন্ড করতে করতে লিপস্টিক টা খুঁজছে। রাফসানের হঠাৎ মনে হলো এই কাফ লিংক টা এই শার্টের সাথে যাচ্ছে না। তাই ও অন্য কাফ লিংক দেখতে ড্রেসিংরুমে ঢুকলো। ঢুকতে দেখল ধরিত্রীকে, কী সুন্দর লাগছে। ওর হৃদস্পন্দন যেন বেড়েই চলেছে। ও নিজেকে সামলে কাফ লিংক খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ধরিত্রী বুঝতে পারলো ও খুব অগোছালো ভাবে খুঁজছে।
– কী হলো?
– কিছু না। কাফ লিংক।
– ধীরে ধীরে খুঁজলে পাবে। এভাবে হযবরল করলে পাবে না।
ধরিত্রী ওর নেকলেস টা পরার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। এক পর্যায়ে ও অসহ্য হয়ে গেল?
– কী হলো?
– নেকলেস।
– পারছ না?
– হ্যাঁ।
– আই ক্যান হেল্প ইউ ইফ ইউ ওয়ান্ট।
– ওকে।
রাফসান ধরিত্রীর পেছনে এসে দাঁড়ালো। এরপর আস্তে আস্তে ওর চুল গুলো সরিয়ে ওর ঘাড় খালি করলো। তারপর ওর নেকলেসটা আলতো করে পরিয়ে দিল।
ধরিত্রী এতক্ষণ আয়নায় রাফসানকেই দেখছিল। ও বুঝতে পারছে রাফসানের ওর প্রতি আকর্ষণ। কারণ ধরিত্রীর পক্ষ থেকেও সেটা কাজ করছে। রাফসানের আঙুল ওর ঘাড়ে লাগতেই ও শিহরিত হয়ে গেল। রাফসান ওর হাতটা হঠাৎ ধরিত্রীর কোমরে জড়িয়ে ধরে। ধরিত্রী যেন অবশ হয়ে গেল। সে আর কোনো কথাই বলছে না। রাফসান ওর চোখটা বন্ধ করে ধরিত্রীর কাঁধে নিজের চিবুক রাখলো। ধরিত্রী ওর চোখটা নামিয়ে রেখেছে। ওর খুব লজ্জা লাগছে। এরপর রাফসান ওর চোখ খুলে ধরিত্রীর কানে ফিসফিসিয়ে বলল,
– আজকে এত সুন্দর কেন লাগছে?
– জানিনা।
– আমি যে আজ নিজেকে সামলাতে পারছি না, তার জন্য তুমি দায়ী।
– আমি?
ধরিত্রীর প্রশ্ন করার পরপরই রাফসান ওর ব্লাউজের ফিতেটা একটানে খুলে ফেলল। ধরিত্রী কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাফসান ওকে সামনে ঘুরিয়ে ওর গলায় মুখ ডোবালো। রাফসান যেন ধরিত্রী নেশায় মাতাল হয়ে গেছে। ধরিত্রীও রাফসানকে না করছে না। উল্টো কাছে টেনে নিচ্ছে। হঠাৎ বাইরে থেকে রাশার আওয়াজ এলো, “ভাবি, তোমার সাজা কী শেষ হয়েছে? হলে আমার চুলটা কী করবো একটু বলে দাও না। ”
রাশার কথা শুনে ওর মনে পড়লো, ওরা তো দাওয়াতে যাচ্ছে। কিন্তু রাফসান তো থামতে চাইছে না। আর ধরিত্রীর ও ইচ্ছে করছে না ও থামুক। ওর শ্বাস প্রশ্বাস অনেক দ্রুত হয়ে এসেছে। ধরিত্রী যেন কাতর হয়ে গেছে। তাই রাফসান ওকে উঠিয়ে ড্রেসিং টেবিলের পাশে কাউন্টারে বসালো। ধরিত্রী ওর থেকে আকারে খাটো, কাউন্টারটা উঁচু বিধায় ওরা এখন সমানে সমানে এসেছে।
ধরিত্রী রাফসানের দিকে নির্বাক তাকিয়ে আছে। রাফসান ও তাই। দুজনের চোখে দুজনের জন্য প্রবল আকাঙ্ক্ষা। দুজনেরই খুব ঘনঘন নিঃশ্বাস। দুজনেরই ঠোঁট কাঁপছে। রাফসান আর ধরিত্রী একে অপরকে খুব আপন করে কাছে চাইছে। কিন্তু বাইরে রাশা এখনো দাঁড়িয়ে। একথা মনে হতেই ধরিত্রী,
“আমার সাজা হয়নি রাশা। দেরি হবে। চাচি কে বলো।”
রাশা চলে গেল। রাফসান আবার শুরু করতে গেল। কিন্তু ধরিত্রী রাফসানকে বাঁধা দিল,
– আজকে না।
– না আজকেই।
– এখন না।
– আমি পারছি না।
– বাইরে যেতে হবে।
– বলে দেব তুমি অসুস্থ। আজকে দাওয়াত ক্যান্সেল।
– ওরা কষ্ট পাবে। সব রেডি তো।
– বাকিরা যাক। আমরা থাকি।
– রাফসান! আমাদের জন্যই দাওয়াত।
রাফসানের খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে। ও ধরিত্রীকে সেখানে রেখেই চলে আসলো। বাইরে এসে দরজাটা বন্ধ করে শার্টের বোতাম কয়েকটা খুলে দিল। ভেতরে ধরিত্রী ওর পোষাক ঠিক করছে। নেকলেস পরাতে এসে পুরো সাজটাই নষ্ট করে দিল। আবার সব ঠিক করতে হবে।
দাওয়াতে গিয়েও রাফসান শুধু ধরিত্রীর দিকেই তাকিয়ে আছে। ধরিত্রী ও কারো কথায় মনোযোগ দিতে পারছে না। আসলে ওদের দুজনের কেউই এখানে নেই। একসাথে বসার বাহানায় রাফসান শুধু ধরিত্রীর হাত স্পর্শ করছে। ধরিত্রীর একই সাথে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় লাগছে আবার আনন্দ ও লাগছে। প্রথমবার এমন কোনো অভিজ্ঞতা। কেউ খেয়াল না করলেই হলো। দাওয়াত শেষে ওরা বাড়ি ফিরে আসলো। ধরিত্রী এসে সোজা ঘরে ঢুকে পড়লো। রাফসান ও কারো সাথে কথা না বলে ঘরেই ঢুকেছে। সবার কাছে এসবে চোখে পড়ার মতো কিছু নেই। কিন্তু ওদের কাছে এ সবই চোখে পড়ার মতো। এ যেন ফুলের টানে ভ্রমরের আগমন। সে শুধু ফুলের দিকে যাবে।
ধরিত্রী সাথে সাথে ওর ড্রেসিংরুমে চলে গেল ওর পোষাক বদলাতে। শাড়ির আঁচলের পিন খুলতেই রাফসান হাজির। আয়নায় ওকে দেখেই ধরিত্রী চমকে উঠলো। রাফসান কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
– কী করছ?
– পোষাক বদলাচ্ছি।
– আই ক্যান হেল্প ইউ। না চাইলেও করব।
রাফসান এসে আবার শুরু করলো।
– রাফসান থামো।
– এখন কোথাও যাচ্ছি না তো।
– খুলতে তো দাও।
– আমি পারবো।
– মেক আপ তুলতে হবে।
– নো প্রবলেম! তুলে দেব।
– এমন করছ কেন?
– আজকে যা যা হবে, তার জন্য তুমি দায়ী। কোথায় ছিলাম যেন?
রাফসান ওর অসমাপ্ত কাজ আবার শুরু করলো। ধরিত্রী ওকে বাঁধা দিচ্ছে না। হঠাৎ মনে হলো,
– দরজা আটকিয়েছ?
– আমি সব প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি। আজকে থামছি না।
রাফসান ধরিত্রী কে আস্তে আস্তে ওদের ঘরে নিয়ে আসে। এরপর আলতো করে ওকে খাটে শুইয়ে বলে,
– আজকে তোমার শাস্তি হবে। এত সুন্দর লাগার জন্য অনেক কঠোর শাস্তি হবে।
– হঠাৎ এত বদলে গেছ কেন রাফসান?
– এর জন্য তুমি দায়ী। সম্পূর্ণরূপে তুমি। তোমার দোষ।
– বেয়াদপ ছেলে। মায়ের বান্ধবীর সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে?
– “মায়ের বান্ধবী ” আর “বান্ধবীর ছেলে”, এসব শব্দ ব্যবহারের জন্য আজ আলাদা আলাদা শাস্তি হবে। এসব আজে বাজে শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।
– এই মদন, হঠাৎ করে বড় হয়ে গেছ মনে হচ্ছে।
– আমি তোমার থেকে অনেক বড় পিচ্চি! বড়দের সম্মান দিতে শেখো।
(চলবে)
#ধরিত্রী_কথন
#পার্ট১০
#পিকলি_পিকু
সকাল বেলা অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙলো রাফসানের। সাথে সাথে অ্যালার্ম বন্ধ করে দিলো সে। এখনো অন্ধকার আশেপাশে। ভোর হয়নি। ধরিত্রী ঘুমাচ্ছে। খুব ক্লান্ত লাগছে ওকে। একটু আগেই ঘুমিয়েছে। আরেকটু ঘুমাক না।
শব্দ না করে বিছানা ছেড়ে উঠলো রাফসান। পা টিপে টিপে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছে। কাল রাতে ওরা ঘরের যাচ্ছেতাই অবস্থা করেছে। ধরিত্রীর শাড়ি, রাফসানের শার্ট। সবই অগোছালো। রাফসান সব ঠিক করে রাখছে। তৈরী হওয়ার পর রাফসান বাইরে গেল। সবাই নাস্তা খেতে আসছে। রুবাইয়া পাউরুটিতে মাখন লাগাতে লাগাতে বলল,
– ধরিত্রী কোথায়?
– ঘুমাচ্ছে।
– ক্লান্ত?
– হুম।
– অফিসে যাবে না?
– জানিনা।
– আচ্ছা রুমির মা, ওকে একটু পর নাস্তা পাঠিয়ে দিও।
যাওয়ার আগে রাফসান আরেকবার দেখতে গেল ধরিত্রীকে।
– ধরিত্রী। ধরিত্রী!
– জ্বী।
– তুমি কী বেশি ক্লান্ত?
ধরিত্রী কোনো কথা বলল না। রাফসান ওর কপালে হাত দিয়ে দেখলো। ওর তো খুব জ্বর।
– তোমার জ্বর আসলো কেন?
– জানিনা।
– বেশি খারাপ লাগছে?
থার্মোমিটার এনে জ্বর মেপে দেখলো। ১০২৹ ফারেনহাইট! ঠান্ডা পানি এনে ওর মাথায় পট্টি করতে লাগলো। রুবাইয়া হাসপাতালে যাওয়ার আগে ধরিত্রীকে একবার দেখতে আসলো, “কী ব্যাপার! কী হয়েছে!”
মাকে দেখে রাফসান তো চোরের মতো হয়ে গেলো। কী বলবে?
– ওর জ্বর মা।
– কেন? হঠাৎ জ্বর কেন আসলো?
– জানিনা।
– কত জ্বর?
– ১০২৹।
– একটা মানুষ তোর পাশে জ্বরে মরে যাচ্ছে আর তুই টের ও পেলি না। কী ঘুম ঘুমাস! সারা রাত মেয়েটা জ্বরে পুড়েছে আর তুই নাক ডেকে ঘুমিয়েছিস!
রাফসান ভাবছে সারারাত তো জ্বর ছিল না। সারারাত অন্য কিছু হয়েছিল। জ্বর তো ভোরের পর এসেছে। এখন তো কিছুই বলা যাবে না। “রুমির মাকে এখানে আসতে বল!” রুবাইয়া বলল।
রাফসান রুমির মা কে পাঠালো। ওনারা ডাবের পানি স্যালাইন এগুলো খাওয়াচ্ছে। প্যারাসিটামল তো খাওয়াবে না এখন।
– মা তুমি হাসপাতালে যাবে না?
– আজ ক্যান্সেল করে দিয়েছি। আজ যাব না।
– আমি?
– আজকেও যেতে হবে! তো যা!!! অলরেডি দশটা বাজে। হাসাপাতালেই থেকে যা। আর আসিস না বাসায়।
– বলছিলাম যাব না।
– দরকার নেই। আমি দেখে নেব।
রাফসান পরে হাসপাতালে চলে আসলো। দুপুরের দিকে মাকে ফোন করে ওর হালকা খোঁজখবর। সারাদিন ওর ধরিত্রীর জন্য চিন্তা হয়েছে। তাই আজকে তাড়াতাড়িই গেল বাসায়। ধরিত্রীর খেয়াল রাখতে হবে। স্বামীর অসুস্থায় স্ত্রী সেবা করবে। স্ত্রীর অসুস্থায় স্বামী সেবা করবে। এটাই তো নিয়ম। বাড়ি গিয়ে দেখলো ওর শ্বশুর শাশুড়ি এসেছে। সবাই ওদের ঘরে বসে আছে। ধরিত্রী খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে। পাশে জোহরা আর চেয়ারে রুবাইয়া। সোফায় ধরিত্রীর বাবা বসে আছে।
“ওর ছোটবেলা থেকেই ইমিউনিটি একটু কম। জ্বর সর্দি কাশি লেগেই থাকতো। কথায় কথায় ঠান্ডা লেগে যায়। ”
ধরিত্রীর মা এসব বলছিল। রাফসান ভাবছে কাল ঠান্ডা লাগার মতো এমন কী করেছিল?
“কাল ঠান্ডা লাগার মতো কী করেছিস?” সাথে সাথে রুবাইয়া জিজ্ঞেস করলো। রাফসানের হঠাৎ মনে পড়লো, ও রাতের বেলা শাওয়ার নিয়েছিল। ঠান্ডা পানি দিয়ে না তো? নাকি অন্য কিছু? হে আল্লাহ্! ওদের মান সম্মান। ধরিত্রী জোর করে হেসে বলল, “ওখানে আইসক্রিম, আর তারপর কোক ছিল। ঠান্ডা খাওয়ার কারণে হয়তো।” ধরিত্রীর কথা আটকে আটকে আসছিল। রাফসান বুঝতে পারছে ও কথা ঢাকতে চাইছে। ওকে এভাবে দেখে রাফসানের লজ্জা আর হাসি দুটোই পাচ্ছে। রুবাইয়া বলল, “আরে এত কথা বলিস না। ঠান্ডার কারণে কথাও বলতে পারছে না।” রাফসান লজ্জায় ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। ওনারা বের হচ্ছে না কেন? ভালো হয়েছে, সকাল বেলাই রাফসান ঘরটা গুছিয়ে ফেলেছিল। নইলে অনেক লজ্জায় পড়তে হতো।
– আজকে থেকে যাও না জোহরা।
– না আপা, মেয়ের বাড়ি।
– এসব বলো না। এসব অনেক আগেকার কথা।
তবুও ধরিত্রীর মা বাবা চলে গেলেন। ধরিত্রী এখন একটু ঠিক আছে। রাতের বেলা খাবার টেবিলে বসতেই রুবাইয়া বলল, “রাফসান, ধরিত্রীকে স্যুপটা খাইয়ে আয়।”
ধরিত্রী একটা বই পড়ছিল বসে বসে। রাফসান স্যুপ নিয়ে ঢুকলো। এরপর একটা পোর্টেবল ছোট টেবিল ধরিত্রীর সামনে রেখে স্যুপ আর পাউরুটি রাখলো। এসব কিছু দেখি ধরিত্রী বলল,
– এসব তো হাসপাতালে থাকে।
– হুম।
– আমি ভুলে গিয়েছিলাম, এত গুলো ডাক্তারের সাথে থাকি। বাসাটাই তো একটা হাসপাতাল। আজকাল হাসপাতালেও এত রঙের ডাক্তার থাকে না।
রাফসান চোখ উল্টালো। ধরিত্রী আর ওর কথাবার্তা। একটু দুষ্টুমি না করলে ওর হয় না। রাফসান ওকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য চামচ ধরলো। খাওয়ার চেয়ে বেশি যেন গায়ে পড়লো,
– উফফ! কিচ্ছু পারে না। স্যুপ টা গরম!
– স্যরি স্যরি! আগে তো কাউকে খাওয়াইনি।
– ঢং করা লাগবে না। আমি নিজের হাতে খেতে পারি।
ধরিত্রী এবার নিজে নিজেই খাচ্ছে। রাফসান ওর সামনে বসে আছে।
– তুমি খাবে না?
– তোমার খাওয়া হলে খাব।
– খেতে যাও।
– তোমার কী একা একা খেতে ভালো লাগবে?
– তোমার লাগবে?
– মা বসে আছে। মা আর আমি একসাথে খাই। মাঝে মাঝে মা খেয়ে ফেললেও আমার জন্য বসে থাকে। এমনিতেও আমি রাতে একাই খাই। আমার অভ্যাস আছে।
ধরিত্রী ওর দিকে তাকায়। বেচারা এত রাতে আসে। আর ধরিত্রী আগে আগে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। দোষটাও ওর। এত দেরি কেন করে? ধরিত্রী আবার খাওয়া শুরু করলো।
– আচ্ছা, সত্যি করে বলো তো, জ্বর টা কেন এসেছিল?
– তোমার কী মনে হয়?
রাফসান খুব অপরাধবোধ করছে,
– স্যরি। আমি বোধহয় কাল বেশি হার্শ। তোমার বোধহয় কষ্ট হয়েছিল, তাই না?
– না না। ওসব কিছু না। ওটার জন্য না।
ধরিত্রী লজ্জা পেয়ে বলল। রাফসান হাফ ছেড়ে বাঁচলো। তারপর ধরিত্রীর কাছে এসে ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
– শাওয়ার?
– হুম।
রাফসান এবার মুচকি হেসে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
– ঠান্ডা পানি?
– হুম।
– গরম পানি কেন না?
– মনে ছিল না। ক্লান্ত ছিলাম, আর এত রাতে।
– ওকে। নেক্সট টাইম থেকে বি কেয়ারফুল।
ধরিত্রী রাফসানের দিকে তাকিয়ে আছে। নেক্সট টাইম? রাফসান অন্য দিকে তাকিয়ে হাসছে। ইচ্ছে করেই বলেছে এটা।
– তুমি কী সবসময় এরকম ছিলে না বিয়ের পর হয়েছ?
– মানে?
– এই যে এরকম চিন্তা ভাবনা।
– কীরকম?
– উল্টো পাল্টা চিন্তা। তোমাকে প্রথম থেকে যেমন দেখেছিলাম তখন থেকে একদম আলাদা। অন্য একটা মানুষ। অনেক ভদ্র ছিলে। বাইরে সবাই সাধুবাবা ভাববে, আর কালকে যা করছিলে ওখানে। অসভ্যের মতো।
রাফসান ধরিত্রীর কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
” সো ইউ ডিডেন্ট লাইক দ্যাট?”
ধরিত্রী ঘাবড়ে গেল, ” তেমন না।” ও রাফসানের চোখে চোখ মেলাচ্ছে না। ওর গাল গুলো লাল দেখাচ্ছে। জ্বরের জন্য? এখন তো জ্বর নেমে গেছে। রাফসান বুঝতে পেরে হাসতে লাগলো। ধরিত্রী মাথা নিচু করে আছে। ওর চুল গুলো সামনে এসে পড়েছে। রাফসান ওর চুল গুলো কানের পেছনে সরিয়ে দিয়ে বলল, “চিন্তা করো না। এই দুষ্টু রাফসান টা শুধুই তোমার সামনে।”
ধরিত্রী ওর মাথা উঁচিয়ে রাফসানের চোখে চোখ রেখে বলল, ” আর আগের গার্লফ্রেন্ডরা?” রাফসান ওর এই প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে। ধরিত্রী ও ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। রাফসান বলল,
– ছিল না তো।
– এত হাসাপাতালে থাকলে থাকবে ও না।
– তুমি থাকবে?
– না।
রাফসানের চেহারার হাসি গায়েব হয়ে গেল। মানে কী না?
– কেন?
– এরকম ঈদের চাঁদের মতো স্পেশাল অকেশনের লোক আমার পছন্দ না। সারাদিন না থাকলে সারাদিনে একটু সময় তো থাকা যায়।
– চেষ্টা করবো।
– আচ্ছা, আমি একদিন তোমাকে কোথাও ইনভাইট করলে আসবে?
– কোথায়?
– পরে বলব। আসবে?
– অবশ্যই আসবো।
– বাই দ্য ওয়ে, রুম গোছানোর জন্য থ্যাংকস। কাল রাতে ক্লান্ত থাকায় গোছাতে পারিনি।
– ওয়েলকাম, বাট এটা আমার ঘর। আমি এমনিতেই গুছিয়েই রাখি। এটা আমারও কাজ।
– ভালোই। আমি খুব অগোছালো মানুষ।
– সমস্যা নেই। আমি গুছিয়ে নেব।
ধরিত্রী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে গেল। এখন অফিসে যাওয়া ও শুরু করেছে। রাফসানের সাথে ওর সম্পর্কের ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। রাফসান যেন একটা পাগল। ড্রেসিংরুমে ওকে একা পেলেই জড়িয়ে ধরে। ওকে ছাড়তে চায় না। না জানি ওর কী আসক্তি এই ড্রেসিংরুমের সাথে। আবার সকালে নাস্তার টেবিলে সবার সামনে পা দিয়ে ছুঁয়ে দেয়। ইচ্ছে করেই। পাশাপাশি বসলে তো কথাই নেই। ধরিত্রীর হাতের আঙুলে আঙুল রেখে সবার দিকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাকায়। ধরিত্রীর সন্দেহ হয়, ও কী সাইকো*প্যাথ নাকি। এ ধরণে কর্মকাণ্ড করার সময় কেউ কী করে এত স্বাভাবিক থাকে? কিন্তু প্রথমে ওকে অন্যরকম লেগেছিল। একদম অন্যরকম। মদন মদন। ভাজা মাছটি উল্টে খেতে পারে না এমন। কিন্তু এখন তো পুরোই ভিন্ন। ধরিত্রীর খুব ইচ্ছে হয় ওর সাথে গল্প করতে। ওর ব্যাপারে সব জানতে। ওকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে। সারা শহরটা ঘুরে দেখতে। তাই ধরিত্রী ওর জার্নাল টা নিয়ে বসলো।
” ১| বিকেল বেলা সিনেপ্লেক্সে।
২| সিনেমা দেখা শেষে রাস্তায় হাঁটা, গল্প করা, চা খাওয়া।
৩| পুরান ঢাকায় ডিনার।
৪| অনেক রাতে বাড়ি ফিরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়া। ”
– রাফসান, তোমার পরশু সময় হবে?
– কেন?
– ঐ যে ইনভাইট করব বলেছিলাম।
– ও হ্যাঁ।
– পারবে?
– কখন?
– বিকেল বেলা।
– চেষ্টা করবো।
– না, কনফার্ম করো।
রাফসান সব দেখে পরশু দিন বিকেল বেলার ছুটি নিল। তার বদলে আজ আর কাল একটু দেরি হবে। পরশু দিন চলে আসলো। ধরিত্রী অনেক সুন্দর একটা শাড়ি পড়েছে। সাদা রঙের শাড়িতে সাদা রঙের কাজ। সাথে কাঁচা হলুদ রঙের ব্লাউজ। কালো টিপ আর হালকা কাজল দিয়ে বের হওয়ার সময় রুবাইয়া দেখলো,
– আজকে তাড়াতাড়ি আসলি, আবার বেরিয়ে পড়ছিস?
– কাজ আছে।
– কোথায়?
– জানিনা।
ধরিত্রী মুচকি হাসলো। ওর লজ্জা পাওয়া দেখে রুবাইয়া বলল, ” রাফসানের সাথে?” ধরিত্রী মাথা নেড়ে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেল। রুবাইয়া খুব খুশি। শেষমেশ সব স্বাভাবিক হচ্ছে। ওকে যাওয়ার আগে দাঁড়াতে বলল। এরপর নিজের ঘর থেকে তার পঁচিশ বছর পুরোনো রুপার চুড়ি ধরিত্রীর হাতে পরিয়ে দিল। “এটা আমার খুব পছন্দের চুড়ি মা। তোর হাতে সুন্দর লাগবে।” ধরিত্রী রুবাইয়াকে জড়িয়ে ধরল। ওর বান্ধবী ওকে কত ভালোবাসে।
ধরিত্রী সিনেপ্লেক্সের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষা করছে ও রাফসানের। ও আসলেই একসাথে ঢুকবে। এদিকে মিম, রিমা আর রাধা ঘুরতে বেরিয়েছে। রাফসানের বিয়ের পর ওদের বন্ধুত্ব আবার গাঢ় হয়ে গেছে। ওরা ধরিত্রীকে দেখেই চিনতে পারলো। মিম বলল, “এটা ধরিত্রী না? রাফসানের বউ।” রিমা দেখে বলল, “হ্যাঁ তো। কী কিউট লাগছে, তাই না?” রাধা বলল, “রাফসান এসেছে? না আসলে চল কথা বলে আসি।” মিম আর রিমা যেতে চাইল না। কিন্তু রাধা ওদের নিয়ে গেল।
– ধরিত্রী?
– জ্বী। আপনি?
– আমি রাধা। ওরা মিম আর রিমা। আমরা রাফসানের ক্লাসমেট।
– ও! নাইস টু মিট ইউ।
ওরা সবাই ধরিত্রী কে অভিবাদন জানালো।
– রাফসান, এসেছে?
– না। আসবে।
– ওয়াও! ডেট?
ধরিত্রী লজ্জা পেল। মিম বলল, “তাহলে আর ডিস্টার্ব না করি। ” ওরা সবাই টিকিট কিনে স্ন্যাকস নিয়ে দেখল ধরিত্রী এখনো দাঁড়িয়ে আছে। রিমা ওর কাছে গিয়ে বলল,
– ভেতরে আসছ না?
– রাফসান আসবে।
– শুরু হয়ে যাবে তো।
মিম বলল, “একটা ফোন দিয়ে দেখ।”
ধরিত্রী রাফসানকে একটা ফোন করল। ফোনটা তুলেই রাফসান বলল, ” ধরিত্রী, আমি আজকে আসতে পারব না। হাসপাতালে একটা ইমার্জেন্সি হয়েছে। তুমি বাড়ি চলে যাও।” ধরিত্রী পাল্টা কিছু বলতেও পারলো না। রাফসান ফোনটা কেটে দিয়েছে। ওরা তিনজন ধরিত্রীর চেহারা দেখে বুঝে গেছে কী হয়েছে। মিম ধরিত্রীর কাঁধে হাত রেখে বলল, “কী হয়েছে রাফসান আসেনি বলে। আমাদের সাথে আসো। আমরাও আমাদের স্বামীদের আনিনি। গার্লস টাইম!” রিমা বলল, “ব্যস্ত বোধ হয়। পরে যেও। হয় এমন। আরে চলো না। ” ধরিত্রীর চোখ ছলছল করছিল। ও বুঝতে পারছে না রাফসান আসেনি তাই ওর এত কষ্ট কেন লাগছে? রাধা ওর বাহু ধরে বলল, “গু*লি মা*রো তো। এত দাম দিয়ে টিকিট কিনলে এখন নষ্ট করবে কেন?” ধরিত্রী ওর চোখ মুছে বলল, “আ’ম স্যরি, আমি আসছি।” রাধা থামিয়ে বলল, “অন্তত তোমার নাম্বার টা তো দাও। পরে যোগাযোগ করব।” ধরিত্রী ওর নাম্বার টা দিয়ে চলে আসলো।
রাস্তায় একা একা হাঁটছে ধরিত্রী। আজকের দিনটা নিয়ে ও কত স্বপ্ন দেখেছিল। একসাথে হাঁটবে, কথা বলবে, চা খাবে। আসলে রাফসান কোনো কিছুর যোগ্যই না। ওকে বিয়ে করাই উচিত হয়নি। ধরিত্রী অনেকক্ষণ রাস্তার ধারে বসেছিল। খুব একা লাগছিল। আগে তো কখনো এমন লাগেনি। একা একাই তো ঘুরত। ওর হাতে এখনো টিকিট গুলো। ও টিকিট গুলো ছিঁড়ে ফেলে দিল। এরপর রাত নয়টায় বাড়ি ফিরল। রুবাইয়া বা কেউ দেখেনি ওকে বাড়ি ফিরতে। তবে রুমির মা দেখেছে। তিনি গিয়ে ব্যাপারটা রুবাইয়াকে জানালেন। রুবাইয়া এসে দেখল ঘরের বাতি নেভানো। তার পক্ষে ধরিত্রীকে প্রশ্ন করা সম্ভব না। তাই রাফসানকেই ফোন করলেন। ওর ফোনটা বন্ধ। যখন ও কোনো ইম্পরটেন্ট মিটিংয়ে থাকে তখন ফোন বন্ধ রাখে। তারমানে কী ও আসেনি?
ঘরের বাতি নিভিয়ে, বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে অনবরত কান্না করেই যাচ্ছে ধরিত্রী। অনেকক্ষণ কান্না করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো সে।
(চলবে)