#ধর্ষিতা বউ
#পর্বঃ ০২
#জুনায়েত-হাসান (লিখন)
আপনার এত বড় সর্বনাশ হলো কী ভাবে? নীলা কোন কথা বলছে না। শুধু মাথাটা নিচু করে অঝর ধারায় কান্না করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী হলো কাঁদছেন যে? নীলার কান্নার আওয়াজটা আরো বেশি হতে থাকলো। আমি বুঝতে পারছি না নীলা এ ভাবে কাঁদছে কেন? আমি নীলাকে বললাম থাক কিছু বলতে হবে না। চলুন আমরা বাসায় ফিরে যাই। নীলাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পরালাম। কিন্তু নীলার কান্না তখন ও কমেনি। ও পুরো রাস্তা কান্না করতে করতে এসেছে। আমি নিজেই নিজেকে মনে মনে প্রশ্ন করছি কেন যে ওই কথাটা জানতে গেলাম? মেয়েটার মনটাই খারাপ করে দিলাম। নীলার কান্না দেখে আমার খুব খারাপ লাগছিলো। আমরা বাড়িতে এসে গেলাম। নীলা বাড়ি এসে বাথরুমে চলে গেলো ফ্রেস হতে। আমি রুমে বসে থাকলাম। আর মনে মনে ভাব ছিলাম নীলা কথাটা বলতে গিয়ে কেন এতো কাঁদছে? বিষয়টা আমার মাথায় ঢুকছে না। নীলা বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো আর আমি নীলাকে বললাম আমি দুঃখিত! নীলা জিজ্ঞেস করলো কিসের জন্য? আমি বললাম আপনার মনটা খারাপ করে দেওয়ার জন্য। আর আপনাকে ওই কথাটা আমার জিজ্ঞেস করা উচিত হয়নি।
নীলা বললো আরে না ঠিক আছে। আমার মন এমনিতেই সব সময় খারাপ থাকে। আপনার কোন দোষ নেই। আর এখন আপনি আমার স্বামি। ওই সব কথা জানার অধিকার আপনার আছে। কিন্তু আজ বলবো না বলবো অন্য কোন দিন। বলবো আমার এই এত বড় সর্বনাশ এর কথা। আমি নীলাকে বললাম যান আপনি শুয়ে পরুন। অনেক রাত হয়ে গেছে। নীলা ও আমাকে বললো আপনি ও শুয়ে পরুন আপনাকে তো আবার সকালে হাসপাতালে যেতে হবে। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পরলাম। আর উঠে দেখি নীলা আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আচরাচ্ছে। কী বলবো খোলা চুলে নীলাকে কী সুন্দর লাগছিলো। ইচ্ছে হচ্ছিলো ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু না, ওকে জড়িয়ে ধরলে ও অন্য কিছু ভাবতে পারে এই কথা ভেবে রুম থেকে বাথরুমে চলে গেলাম। বাথরুম থেকে শুনতে পেলাম নীলা আমাকে ডাকছে।
বলছে এইযে শুনছেন। এই যে, একটু বাইরে আসবেন? আমি বললাম কি হয়েছে? নীলা বললো আপনার মাকে আনতে আপনার সাথে আমি যাবো। ভাবছি শাড়ি পরে যাবো? আমি বললাম হুম পরুন। সমস্যা কী? নীলা বললো কিন্তু আমি তো শাড়ি পরতে পারি না। আমি বললাম আমি কী করতে পারি বলুন? নীলা বললো আপনি আমাকে শাড়িটা পরিয়ে দিন না? আমি? নীলা বললো হ্যা আপনি। আমি বললাম ঠিক আছে। দাঁড়ান আমি ফ্রেস হয়ে এসে পরিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু নীলা বললো আপনি চোখ বন্ধ করে শাড়িটা পরিয়ে দেন। আমি বললাম কিন্তু কেন? নীলা বললো নয়তো আপনি ত সব? আমি বললাম আর বলতে হবে না আমি সব বুঝতে পেরেছি। আমি চোখ দুটো বন্ধ করে নীলাকে শাড়িটা পরিয়ে দিলাম। নীলা খুব খুব খুশি হলো। আমি বললাম চলুন এবার যাওয়া যাক।
নীলাকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দিলাম। আমরা হাসপাতালে পৌছে গেলাম। মাকে নিয়ে নীলাদের বাড়ি চলে আসলাম। মা নীলাদের বাড়ি এসে বললো তিনি গ্রামে ফিরে যেতে চান। আমি নীলার বাবার সাথে কথা বললাম।বললাম আমার মা এখানে থাকবে না ওনি গ্রামে ফিরে যেতে চাইছেন। কাল আমি মাকে নিয়ে গ্রামে যাবো। নীলার বাবা না বললেন না। উনি শুধু বললেন আমি সাথে যেন নীলাকে নিয়ে যায়।
পরের দিন আমি মা আর নীলা গ্রামে আসলাম। আমি নীলাকে আমার পুরো গ্রাম ঘুরিয়ে দেখালাম। রাতের বেলা উঠনে চাঁদের আলোতে বসে ছিলাম। নীলা ও আমার পাশে এসে বসলো। আর আমাকে বললো সেদিন আপনি জানতে চেয়েছিলেন না আমার এতো বড় সর্বনাশ কী ভাবে হয়ে ছিলো?তাহলে শুনুন আমার সর্বনাশের কথা। আমি খুবই সাধারন একটা মেয়ে ছিলাম। যদিও আমার বাবার অনেক টাকা ছিলো। তবো ও আমি সাধারন জীবন যাপন করতে পছন্দ করতাম। একটা ছেলেকে নিজের চাইতে বেশি ভালবেসে ছিলাম। নিজের চাইতেও বেশি বিশ্বাস করে ছিলাম। দিনটা ছিলো সোমবার। ও আমাকে বলেছিলো ঘুরতে যাবে আমাকে নিয়ে।
তাই আমি আর সাত পাঁচ না ভেবে ওর সাথে ঘুরতে চলে গিয়ে ছিলাম। ও আমাকে ঘুরার নাম করে গাড়িতে করে একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ছিলো। সেখানে ওর বন্ধুরা আগে থেকেই দাড়িয়ে ছিলো। তার পর ওরা সবাই মিলে……?? এই পর্যন্ত বলে থেমে গেলো।আমি বললাম আর বলতে হবে না।বুঝে গেছি। নীলা কথা গুলো শেষ করে খুব কাঁদছিলো। নীলার দুচোখ দিয়ে যেন বৃষ্টির মতো পানি পরছে। আমি নীলাকে বললাম প্লিজ কাদবেন না। আপনি কাঁদলে আমার খুব খারাপ লাগে। নীলা কান্না যেন কোন ভাবেই থামছে না। আমি নীলাকে বললাম আপনার সাথে যা হয়েছে তাতে আপনার কোন দোষ নেই। আপনি কাউকে বিশ্বাস করেছিলেন। সে আপনার বিশ্বাস এর মর্যাদা দিতে পারেনি।
ওরা হলো মানুষ রুপে জানোয়ার। যারা মেয়ে দেখলেই হিংস্র হায়নার মতো ঝাপিয়ে পরে।আমি আরো জিজ্ঞেস করলাম পুলিশ এর কাছে যান নি? নীলা বললো না যায়নি। আমি জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু কেন?নীলা বললো গিয়ে কী হতো? এতে আমার কলঙ্কের বুঝাটা আরো বেড়ে যেতো। আমি বললাম কাজটা আপনি একদম ঠিক করেননি। এভাবে ওদের ছেড়ে দিলে ওরা আপনার মতো আর অনেক নীলার জীবন নষ্ট করে দেবে। নীলা আর কিছু বললো না। মাথাটা নিচু করে রইলো। ঠিক সেই সময় মা আমাদের ডাকছেন। মা বলছেন জুনায়েত জুনায়েত বউ মাকে নিয়ে খেতে আয়। রান্না হয়ে গেছে। আমি বললাম হ্যা মা আমরা আসছি। নীলাকে নিয়ে খাবার ঘরে চলে আসলাম। আজ মা অনেক কিছু রেঁধেছে। নীলা এত ভাল ভাল রান্না দেখে খুবই অবাক হয়ে গেলো। আর মাকে বললো মা আপনি আমাকে এগুলো রান্না করতে শিখিয়ে দেবেন?☺️মা বললো কেন শেখাবো না মা? তুমি আমার ছেলের বউ। আমার মেয়ের মতো। নীলা হাতে মেহেদী পরেছিলো তাই খেতে পারছিলো না। আমার মা নীলাকে খায়িয়ে দিলো। খেয়াল করলাম নীলার চোখের কোনে জল এসে এক ফোটা মাটিতে গড়িয়ে পরলো। মা জিজ্ঞেস করলো কাদঁছো কেন মা? নীলা বললো কেউ কখনো এভাবে খায়িয়ে দেয়নি মা।আমার তো মা নেই তাই। মায়ের আদর কী আমি জানি না। সেই ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছি। বাবা আমার সব। উনি আমাকে ছোট থেকে মানুষ করেছে। মা নীলাকে তার বুকে জড়িয়ে নিলো। আর বললো কে বলেছে তোমার মা নেই?
আজ থেকে আমি তোমার মা। আজ থেকে তুমি আমাকে তোমার মা ভাববে। নীলা মাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদলো। মা আর নীলার এমন ভালবাসার সম্পর্ক দেখে আমার খুবই ভাল লাগলো। আর মনে মনে ভাবছি মেয়েটার মনটা তো অন্তত ভাল হয়ে গেলে। যাক ওর দুঃখটা একটু হলেও কমেছে তো? আমরা খাওয়া শেষ করলাম। মা বললো তোরা দুজনে পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে পর। আমি বিছানা করে দিয়ে এসেছি। আমি নীলাকে নিয়ে ওই রুমে চলে গেলাম। আমি মাটিতে একটা বিছানা করলাম আর বললাম আপনি উপরে শুয়ে পরুন। আমি নিচে শুয়ে পরবো। নীলা উপরে শুয়ে পরলো আর আমি নিচে। নীলা আমাকে বললো আপনাকে একটা কথা বলবো? আমি বললাম হ্যা বলুন। নীলা বললো আপনি খুবই ভাগ্যবান কারন আপনার মা আছে। আমি বললাম হ্যা। আমি আমার মাকে অনেক ভালবাসি। নীলা বললো আপনি আমাকে বললেন না তো আপনি আমাকে কেন বিয়ে করেছেন? আমি বললাম আপনি জানতে চান আমি আপনাকে কেন বিয়ে করেছি? নীলা বললো হ্যা আমি জানতে চাই। আমি বললাম তাহলে শুনুন আমি আপনাকে টাকার জন্য বিয়ে করেছি। নীলা আমার কথাটা শুনে বললো ছি আপনি টাকার জন্য আমাকে বিয়ে করেছেন? তার মানে আপনি আমাকে দয়া করেছেন?
চলবে ত??