#ধর্ষিতা বউ
#পর্বঃ ৪ শেষ
#জুনায়েত-হাসান(লিখন)
নীলা আমাকে জিজ্ঞেস করলো ওকে ডিস্টার্ব করাই আমার এতো রাগ হলো কেনো? আমি ভাবলাম বলে দেই সত্যি কথাটা। যে আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু আমার খুব ভয় হলো তাই সত্যি কথাটা বলতে পারলাম না। বললাম আপনি আমার স্ত্রী আপনার প্রতি আমার একটা দায়িত্ব আছে না?আপনার খেয়াল রাখা আমার দায়িত্ব। কারন আপনার কিছু হলে আমি……। নীলা বললো আপনি মানে? থেমে গেলেন কেন? আমি বললাম আপনার কিছু হলে আপনার বাবাকে আমি কী জবাব দিবো? নীলা বললো ও আচ্ছা তাই বলুন। আমি তো অন্যকিছু ভেবেছিলাম। আমি বললাম কী ভেবে ছিলেন আপনি? নীলা বললো না কিছু না। আজ বাড়িতে মা একটা ছোট খাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সবাই এখানে এসেছে।
আমি নীলাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। নীলা আজ খুব খুশি হলো সবার সাথে পরিচয় হয়ে। সারা দিন খুব কাজ করতে হয়েছে। নীলা আর আমি রুমে চলে আসি। রুমে এসে ইয়ার ফোনটা কানে ঢুকিয়ে নিচে শুয়ে পরলাম। নীলা উপরে শুয়ে পরলো। নীলা আমাকে বললো আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো? আপনার পুরো পরিবারটা না খুবই ভালো।
আমি আপনার পরিবারের একজন সদস্য হতে চাই জুনায়েত। আপনি কী আমাকে আপনার পরিবারের একজন বানাবেন? নীলা বললো কিগো কথা বলছেন না কেন? নীলা মাথাটা নিচু করে দেখতে পেলো আমি ঘুমিয়ে পরেছি। নীলা বুঝতে পারে আমি নীলার একটা কথাও শুনতে পায়নি!নীলার আমার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলো। আর মনে মনে বলছিলো এতটা ভাল একটা মানুষ কী করে হয়? তার মানে শুধু আমি নয় নীলা ও আমাকে ভালবেসে ফেলেছে। যদিও ওর ভালবাসার কথাটা আমি আজ শুনতে পেলাম না। কিন্তু একদিন না একদিন আমি আমার ভালবাসার কথাটা ওকে জানিয়েই দেবো। সকালে ঘুম ভেঙে দেখালাম নীলা রুমে নেই। আমি উঠে বাইরে এলাম। এসে দেখি নীলা উঠনে বসে আছে। আমি ফ্রেস হয়ে নিলাম।
তারপর নীলা আমার কাছে এসে বললো ওর নাকি বাবার জন্য খুব খারাপ লাগছে। ও শহরে যাবে বাবাকে দেখতে। আমি মাকে গিয়ে বললাম নীলা শহরে যাবে ওর বাবাকে দেখতে তুমি কী বলো? আর মা বললো এতে না করার কী আছে? তুই বউ মাকে নিয়ে আজই শহরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পর। আমি রুমে এসে নীলাকে বললাম সব গুছিয়ে নিন। আমরা আজই শহরে যাবো বাবাকে দেখতে। নীলা এতটাই খুশি হলো যে আনন্দে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার সমস্ত শরীর কাপঁতে থাকলো। আমার পা থর থর করে কাপছিলো। আমি বললাম কী করছেন নীলা? নীলা একটু সরম পেলো আর জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললো সরি! আমি তো আপনাকে এমনি জড়িয়ে ধরেছি। আমি বললাম বুঝতে পেরিছি। নীলার মুখটা সরমে লাল হয়ে গেছে।
আমি আর নীলা শহরের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরলাম। নীলা আর আমি আমাদের গাড়ি করেই আসছিলাম। মাঝরাস্তায় গাড়ি থামালাম আর নীলার জন্য অনেকগুলো আইসক্রিম কিনলাম। নীলা খুবই খুশি হলো। আমি গাড়ির ভিতরে খেয়াল করলাম নীলা বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিলো। আমি ও নীলাকে দেখছিলাম।
আমরা শহরে পৌছে গেলাম। নীলা ওর বাবাকে দেখে খুব খুশি হলো। উনাকে জড়িয়ে ধরলো। আর বললো কেমন আছো বাবা? ওর বাবা বললো খুব ভাল আছি মা। তোরা কেমন আছিস ? নীলা বললো আমরা খুব ভাল আছি বাবা। নীলার বাবা নীলার হাসি ভরা মুখ দেখে খুবই খুশি হলো। উনি আমাকে ডেকে নিয়ে বললো ধন্যবাদ জুনায়েত। তুমি আমার মেয়েটার মনটা ভাল রেখেছো। দুই তিন দিন পরের কথা। বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। রুমে গেলাম আর গিয়ে দেখলাম নীলা জানালার পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাদঁছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে নীলা? নীলা বললো আজ সেই দিন যেই দিন আমি আমার সন্মান হরিয়েছিলাম।
আমি নীলাকে আমার বুকে জড়িয়ে নিলাম আর বললাম এই সব ভেবে কী লাভ বলেন তো? যা হওয়ার তা হয়ে গেছে? এতে আপনার তো কোন দোষ নেই। নীলা সেদিন খুব কেঁদে ছিলো। আর আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছিলো। আমি সেদিন নীলার নিশ্বাস এর শব্দটা শুনতে পাচ্ছিলাম। নীলার প্রত্যেকটা নিশ্বাস এর বাতাস আমার বুকে এসে লাগছিলো। আমার সেদিন অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছিলো। নীলাকে বললাম যান গিয়ে শুয়ে পরুন। নীলা গিয়ে শুয়ে পরলো। আমি বারান্দায় অনেক্ষন দাড়িয়ে ছিলাম।
আর মনে মনে ভাবলাম কাল আমি আমার মনের কথা নীলাকে বলে দেবো। বলে দেবো যে আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলছি। আমার আর তর সই ছিলো না। কখন যে সকাল হবে আর কখন নীলাকে আমি আমার মনের কথা জানাবো। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পরলাম। আর মার্কেটে চলে গেলাম। নীলার জন্য একটা নীল শাড়ি কিনলাম। ভেবে ছিলাম এই শাড়িটা ওর হাতে দিয়ে আমি আমার মনের কথা গুলো খুলে বলবো। কিন্তু আমি নীলাদের বাড়িতে গিয়ে অবাক হলাম। আমি গিয়ে দেখি একটা ছেলে নীলাদের বাড়িতে এসেছে। ছেলেটা বাইরে দাড়িয়ে। আর এক পাশে নীলা দাড়িঁয়ে কাঁদছে? আমি নীলার দিকে এগিয়ে গেলাম আর নীলাকে জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে নীলা? আর আপনি এই ভাবে কাঁদছেন ই বা কেন? আর এই ছেলেটাই বা কে? কেউ কোন কথা বলছে না। আমি নীলার বাবার দিকে এগিয়ে গেলাম আর জিজ্ঞেস করলাম অন্ততো আপনি বলুন কী হয়েছে? আর এই ছেলেটা কে? আর নীলা কেনই বা কাঁদছে? নীলার বাবা যা বললো তা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। নীলার বাবা বললো এটা সেই ছেলে যাকে নীলা ভালবাসতো আর যে নীলার এত বড় সর্বনাশ করেছিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম ও এখানে কেন এসেছে? নীলার বাবা বললো ও নীলাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। এই কথাটা শুনে আমার বুকটা কেঁপে উঠলো। নীলার বাবা বললো যদি নীলার সাথে ওর বিয়েটা দেওয়া যাই তাহলে অন্ততো নীলা নিজেকে অপরাধী ভাববে না। ও ওর স্বামী ই ভাবতে পারবে। নীলার বাবার কথা গুলো শুনে আমি আমার চোখের জলকে কোন ভাবেই আটকে রাখতে পারছিলাম না। বার বার হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে ছিলাম।
আমি আমার হাতের শাড়িটা লুকিয়ে ফেললাম। নীলা আমার দিকে একটু করোন সুরে তাকাচ্ছিলো। কিন্তু আজ আমার বড্ড খারাপ লাগছে। নীলার বাবা বললো ছেলেটার সাথে নীলার বিয়ে দিতে উনার কোন সমস্যা নেই। আমি এখন শুধু নীলার দিকে তাকিয়ে আছি। হয়তো নীলাও ওর বাবার কথায় রাজি হয়ে যাবে।কিন্তু এটা ভেবে খারাপ লাগছে নীলাকে আমি আমার ভালবাসার কথা জানাতে পারলাম না। আমি নিজের মাথাটা নিচু করে আছি। নীলার বাবা নিলাকে বললো তোমার কী মত মা? নীলা ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেলো। আমি ভাবলাম জড়িয়ে ধরবে হয়তো। তাই পিছন ঘুরে চলে আসতে থাকলাম। কিন্তু পিছন ঘুরতেই প্রচন্ড জোরে চড়ের একটা শব্দ শুনতে পেলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি নীলা ছেলেটার গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে। আর বলছে কুত্তার বাচ্চাঁ আমার সর্বনাশ করে এখন আমাকে বিয়ে করতে এসেছিস। তুই কী করে ভাবলি আমি তোর মতো একটা জানোয়ার কে বিয়ে করবো? নীলা ওর বাবাকে বললো বাবা পুলিশ এ ফোন দাও। আর ওকে পুলিশ এ দিয়ে দাও। পুলিশ এসে ছেলেটাকে ধরে নিয়ে গেলো। আমি তো অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আর আমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরছে। নীলা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আর বললো কী ভেবেছেন? আমি ওই লম্পটটাকে বিয়ে করবো? আমি তো বিয়ে করে ফেলেছি। নীলা আরো বললো আমার জন্য যে শাড়িটা এনেছেন ওটা দেবেন না আমাকে? আমি চোখের জল মুছে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আরে আপনি কী করে জানলেন? নীলা বললো আমি সবই জানি। আমি আরো জানি আপনি আমাকে এখন কিছু একটা বলবেন? আমি আর কিছু না ভেবেই নীলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আর কেঁদে কেঁদে বললাম আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি নীলা। আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। নীলা ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আর বললো আমিও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। ঠিক এ ভাবেই সারা জীবন আমাকে জড়িয়ে রাখবেন আপনার বুকে।
এ ভাবে আমাদের ভালবাসার পুরনো অধ্যায় এর সমাপ্তি ঘটলো। আর শুরু হলো নতুন এক জীবনের অধ্যায়।
আজ অন্তত একটা কমেন্ট করবেন আর জানিয়ে দেবেন সম্পূর্ণ গল্পটা কেমন লেগেছে আপনার। আবার কোন একটা গল্পে দেখা হবে ইন শা আল্লাহ। আর সবাই কে ধন্যবাদ গল্পটা কে এতো এতো পরিমাণ ভালোবাসা দেওয়ার জন্য।?
……. সমাপ্ত……..