ধৈর্য,পর্ব-৪,৫,৬
Tahmi_Chowdhury
৪ পর্ব
.
চোখ খুলে প্রিয়ন্তি নিজেকে আবদ্ধ ঘরে দেখতে পেলো!
চারিদিকে তাকিয়ে সবকিছু মনে করতেই ভয়ে কুঁকড়ে গেলো প্রিয়ন্তি!
হাতের বাঁধনটা ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগলো পরক্ষণেই বারবার ব্যার্থ হচ্ছে!
দরজায় ছ্যাঁত করে আওয়াজ হলে থেমে যায় প্রিয়ন্তি!
দরজার সামনে লোকটার দিকে তাকাতেই দ্বিগুণ ভয়ে চোখমুখ ফ্যাকাশে হতে থাকে প্রিয়ন্তির!
সেইদিনের সেই লোকটা,,,
চেয়ারের উপর দুহাত মেলে প্রিয়ন্তির উপর কিছুটা ঝুঁকল লোকটি!
ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো প্রিয়ন্তি!
লোকটা মুচকি হেসে প্রিয়ন্তির গালে স্পর্শ করে বলে,,
-আমাকে চিনতে পেরেছ নিশ্চয়ই,,আমি সেই যাকে তুমি তোমার বাসার সামনে দেখেছিলে যাকে দেখে তুমি দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছিলে!
কিন্তু কেন বলোতো এতো কষ্ট করলে ঠিকই আজ তোমাকে আবার আবদ্ধ করে ফেললাম!
এখন চাইলেও তুমি পালাতে পারবে না!
আস্তে আস্তে চোখটা মেলে কাপাকাপা গলায় প্রশ্ন করে প্রিয়ন্তি,,
-আ…আপনি আ…আমার প পেছনে ক…কেন লে…গেছেন!
-ভালো লেগেছে তোমাকে তাই!
সোজাসুজি জবাব দিলো লোকটা!
-ওহ আমার নাম ফারাবি,,,নাইছ টু মিট ইউ!
এই বলে ফারাবি প্রিয়ন্তির দিকে মোহিনীয় দৃষ্টিতে তাকালো!
ভয়ে ঢোক গিললো প্রিয়ন্তি!
-আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ,,!
প্রিয়ন্তি করুণাময়ী আবেদন শুনে ফারাবি বাকা হাসি দিয়ে বললো,,,
-অবশ্যই ছেড়ে দিবো, তার আগে তোমাকে যে আমার মন ভরাতে হবে,,
-মা…মানে,,
-সিম্পল! জাস্ট একটা রাত……
আর সহ্য করতে পারলো না প্রিয়ন্তি পা দিয়ে ফারাবির পায়ে জোরে আঘাত করলো সে!
কিছুটা দূরে ছিটকে গেলো ফারাবি!
পরক্ষণেই অগ্নিমূর্তি হয়ে তাকালো প্রিয়ন্তির দিকে,,,
এগিয়ে গিয়ে প্রিয়ন্তির গালে চড় বসিয়ে দিলো ফারাবি!
ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো প্রিয়ন্তি!
-তোর সব তেজ আমি এইমুহূর্তে শেষ করে দিবো!
তুই তো ফারাবিকে চিনিস না!
এখন চিনবি……
এই। বলে প্রিয়ন্তির শাড়ির আঁচল এক ঝটকায় ফেলে দিলো ফারাবি!
প্রিয়ন্তি চিৎকার দিয়ে ফারাবিকে থামতে বললো!
ফারাবি তখন নিজ নেশায় মত্ত!
প্রিয়ন্তি সুন্দর উন্মুক্ত শরীর যেন ওকে আরো উন্মাদ করে তুলেছে,,,প্রিয়ন্তির হাজারো আহাজারি ভরা আকুতি ফারাবির কান অব্ধি পৌঁছাচ্ছে না!
প্রিয়ন্তির গায়ে হাত দেওয়ার আগেই প্রিয়ন্তি সামনে নিস্তেজ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গেলো ফারাবি!
চুপ হয়ে ফারাবির নিস্তেজ দেহের দিকে কয়েকমুহূর্ত তাকিয়ে থেকে সামনে থাকালো প্রিয়ন্তি!
সামনে একজন পূর্ণবয়স্ক যুবক পড়নে সাদা পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা,সাদা টুপি, মুখভর্তি দাড়ি!
উজ্জ্বল শ্যামলা চেহারায় স্নিগ্ধ ভাব!
কয়েক সেকেন্ড লোকটাকে শুধু পরখ করলো প্রিয়ন্তি!
প্রিয়ন্তি ধ্যান ফিরলো যখন লোকটি কড়া গলায় বললো,,
-এখানে বসে থেকে যদি আরো বেইজ্জত হওয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে বসে থাকতে পারেন!
কথাটি শুনে ঝট করে উঠে দাঁড়ালো প্রিয়ন্তি,,,
খেয়াল করলো নিজের হাতের বাঁধনটা খুলা,,,পাশে লোকটার দিকে তাকালো হাতে থাকা রশি ছুড়ে মেঝেতে ফেলতে!
শাড়ির আচল তুলে নিলো প্রিয়ন্তি!
লোকটা হনহন করে হেটে চলে যেতে লাগলো!
প্রিয়ন্তি দৌড়ে লোকটার পাশে গিয়ে হাটতে শুরু করলো!
মাটির দিকে স্থির দৃষ্টি দিয়ে লোকটা হেটে চলছে!
অবাক হলো প্রিয়ন্তি,,যেখানে ছেলেরা ওকে দেখলে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে সেখানে এই ছেলেটা ফিরেও তাকাচ্ছে না!
-ছিঃ প্রিয়ন্তি কি ভাবছিস!
ছেলেরা তাকানোর ভয়ংকর পরিণতি দেখেও এখনো আশা করিস ছেলেরা তাকাতে!
নিজের বিবেকের কাছে নিজেই লজ্জিত হলো প্রিয়ন্তি!
-ধন্যবাদ
বললো প্রিয়ন্তি!
ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে,,,
প্রিয়ন্তি আর অজানা লোকটি হেটে চলছে বৃষ্টির মধ্যে!
আশপাশে দাঁড়ানোর মতো কোন জায়গা দেখতে পারছে না তারা!
চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে অনেক আগে,,,
-এইতো
লোকটার হাত দিয়ে একটি মসজিদ ইশারা করলো!
প্রিয়ন্তি তাকালো লোকটির দিকে!
লোকটার চোখেমুখে প্রশান্তির হাসি!
মসজিদের দিকে হাটা ধরলো দুজন!
লোকটি মসজিদের বারান্দায় উঠতে উঠতে বললো,,,
-আপনি ভেতরে এসে একটু অপেক্ষা করুন,,আমি নামাজটা পড়ে আসছি!
লোকটা তরিৎগতিতে মসজিদের ভেতর চলে গেলো!
প্রিয়ন্তির ভেজা শরীর নিয়ে কাপা কাপা পায়ে মসজিদের বারান্দায় উঠলো!
হঠাৎ করেই কেঁপে উঠলো প্রিয়ন্তি!
অজানা ভালো লাগায় ছেয়ে যাচ্ছে তাকে!
চোখ বন্ধ করে জোড়ে প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিলো প্রিয়ন্তি!
-এইভাবে বেরুলে না ও পারতেন!
প্রিয়ন্তি ঝট করে পেছনে তাকালো,,,
লোকটি দাঁড়িয়ে আছে তার এক হাত দূরে,,আর প্রিয়ন্তিকেই কথাটি বলছে লোকটি!
অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো প্রিয়ন্তি__
-মানে!
-বেপর্দায় না বেরুলেও পারতেন!
জানেন না,,নারীদের বেপর্দায় চলাফেরা করা মারাত্মক গুনাহ!
আপনি পর্দায় থাকলে হয়তো এইরকম পরিস্থিতিতেই পড়তে হতো না!
আল্লাহর রহম আমি আপনাকে ওরা নিয়ে যেতে দেখে নিয়েছিলাম,,তা না হলে………
লোকটা নিচের দিকে তাকিয়ে বলেই যাচ্ছে,,,প্রিয়ন্তি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে লোকটির কথা শুনছে!
লোকটিকে একটু আগেও প্রিয়ন্তির মনে হয়েছে বদমেজাজি,,কিন্তু এখন লোকটির কথায় এতো কোমলভাব, প্রিয়ন্তিকে মুগ্ধ করছে বারবার!
অবাধ্য চোখগুলো বারবার লোকটির উপর চলে যাচ্ছে প্রিয়ন্তির!
-বৃষ্টি থেমে গেছে!
আর আশা করি আপনি আমার কথাগুলো বুঝতে পেরেছেন!
লোকটির কথায় প্রিয়ন্তি কাপাকাপা কন্ঠে বললো,,
-আ…আমি হি…হিন্দু!
আবছা আলোয় প্রিয়ন্তি দেখতে পেলো লোকটি নিচের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকালো!
তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,,
-আপনি একা বাড়ি যেতে পারবেন!
ভয়ে আতকে উঠলো প্রিয়ন্তি,,
ঝট করে উত্তর দিলো সে,,
-না না পারবো না,,এতো রাত!
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো প্রিয়ন্তি!
-তাহলে চলুন,,,
বিরক্তিভাব ভেসে আসলো লোকটির কন্ঠে!
.
বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থেকে নামলো দুজন!
প্রিয়ন্তি বাড়ির দিকে হেটে যেতে আবার ফিরে এসে জিজ্ঞেস করে লোকটিকে,,
-কিছু মনে করবেন না,,
আপনি আমাকে এতো সাহায্য করলেন কেন?
আপনার এখানে কোন স্বার্থ?
প্রিয়ন্তি দেখলো লোকটি মুচকি হাসছে,,
লোকটির হাসির দিকে চোখ আটকে গেলো প্রিয়ন্তির!
হাসির সাথে সাথে লোকটির গালেও টুল পড়ে,,চেহারায় দাড়ির কারণে তেমন চোখে পড়ে না!
লোকটিকে এতো নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করছে প্রিয়ন্তি,,
নিজের কাজে নিজেই লজ্জিত হচ্ছে সে!
-মুসলিম ধর্মের নিয়মানুযায়ী কেউ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করা!
-ভাবলেন না,,এতে আপনার ক্ষতিও হতে পারতো!
পাল্টা প্রশ্ন প্রিয়ন্তির!
-হলে হতো,,!
আচ্ছা আপনি বাড়ি ফিরে যান!
লোকটি আবার গাড়িতে উঠে বসলো……।
-আপনার না……
আর বলতে পারলো না প্রিয়ন্তি গাড়িটা শো শো করে চলে গেলো বহুদূরর!
মন খারাপ হয়ে গেলো প্রিয়ন্তির!
নামটা অব্ধি জানতে পারলো না!
কলিংবেল একবার চাপ দিতেই দরজা খুললেন অনিতা!
মেয়েকে দেখে দুবাহুতে আবদ্ধ করলেন তিনি!
মায়ের বাহুদ্বয়ে পরম শান্তিতে মাথা রাখলো প্রিয়ন্তি!
-এতোক্ষনে তোর ফেরার সময় হলো!
পেছন থেকে প্রিয়ন্তির ছোট ভাই মহেশ বললো!
ভাইয়ের দিকে ক্ষুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো প্রিয়ন্তি,,
-দিন দিন অনেক বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস মহেশ! ছোট বড়র লেহাজ শিখিস নি!
দাঁতে দাঁত চেপে বললো মহেশ,,
-আমাকে তুই লেহাজ শিখাতে আসিস না!
সারাদিন তুই লেহাজের কি করলি!
আশেকের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে রাত ১০ টায় বাড়ি ফিরেছিস!
গর্জে উঠলো প্রিয়ন্তি ভাইয়ের কথায়!
অনিতা থামালেন প্রিয়ন্তিকে!
ছেলেটা একদম বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তার!
ছেলের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকান অনিতা!
মহেশ গজগজ করতে করতে ঘরের ভেতর চলে যায়!
অনিতা মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বললেন,,
-তুই তো পুরোপুরি ভিজে গেছিস মা! যা ফ্রেস হয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি!
নিরবে রুমের দিকে হাটা ধরে প্রিয়ন্তি!
লোকটার কথা মনে হতেই শান্ত মনটা হঠাৎ করে অশান্ত হয়ে উঠে প্রিয়ন্তির……
.
.
#চলবে ইন শা আল্লাহ
ধৈর্য
Tahmi_Chowdhury
৫, ৬পর্ব
হাল্কা ভলিউমে গান প্লে করে চোখ বন্ধ করলো প্রিয়ন্তি!
লোকটির কথা মনে পড়তেই অজান্তে ঠোঁটে মুচকি হাসির রেখা দেখা দিলো প্রিয়ন্তির!
মানুষটি চাইলেই সুযোগ নিতে পারতো কিন্তু একটিবারের জন্য ও মানুষটা তাকালো না,,
এমন মানুষ ও পৃথিবীতে এখনো আছে বলেই পৃথিবীটা রঙিন……
প্রিয়ন্তি হাসে!
.
-কি রে মেহরাব তুই কোথায় চলে গিয়েছিলি কতোক্ষণ ধরে তোকে খুঁজে মরছি!
মেহরাজ একদমে কথাগুলো বলে থামলো!
মেহরাব পাঞ্জাবীর হাতা গুটিয়ে নিতে নিতে বললো,
-আর বলিস না ভাই!
একটা ঝামেলায় আটকা পড়ে গিয়েছিলাম।
সারাহ চলে গিয়েছে……?
-হ্যাঁ রে আমাদের বোনটা চলে গেলো,,
তোর কথা বারবার জিজ্ঞেস করছিলো!
মেহরাবের মুখ চুপসে যায় বোনকে বিদায় পর্যন্ত জানাতে পারলো না!
মেহরাবের বড় ভাই মেহরাজ মেহরাবের কাদে হাত রেখে শান্তনা বাণী দিতে লাগলো……
মেহরাবের চোখে পানি টলমল করছে একমাত্র বোন ছিলো সারাহ!
সবার চোখের মধ্যমণি ছিলো সে,,ভাইদের ছিলো কলিজা!
সেই কলিজার বোনটিকে না চাইতেও যেতে হলো!
-মন খারাপ করিস না মেহরাব কাল তো আমরা যাচ্ছি ই ওকে দেখতে!
আচ্ছা আমি যাই তোর ভাবি তোকে খুজছিলো জানিয়ে দিয়ে আসি তুই এসে গেছিস!
মেহরাজ চলে গেলে মেহরাব মুখে হাত দিয়ে বসে পড়ে!
.
পাহাড়িকন্যা বান্দরবান প্রাকৃতিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এখানে!
মেঘ ছুঁয়ে দেখার বড্ড ইচ্ছে তাই তো এমন একটা জায়গায় চলে এলো বেড়াতে পরিবারকে সাথে নিয়ে!
ছোট্ট থেকেই ভ্রমণের অনেক শখ থাকলেও তেমন ভ্রমণের সুযোগ হয় নি কিন্তু এবার আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না মা-বাবাকে অনেক রিকুয়েস্ট করার পর তারপরই এখানে আসার সৌভাগ্য হলো!
শহর থেকে অনেকটা দূরে নিরিবিলি পরিবেশ ও চারিদিকে সবুজের সমারোহ এমন এক জায়গায় প্রিয়ন্তিরা এসে উঠেছে!
ভ্রমণে এসে এমন একটা পরিবেশের মধ্যে থাকতে পারছে এটা ভেবেই আনন্দের সীমা রইলো না প্রিয়ন্তির!
কাটের তৈরি একতালা বিশিষ্ট ঘরে দুইটা কামড়া ঘরটার সৌন্দর্য প্রিয়ন্তির মন কাড়ে!
কাটের জানালাটা খুলে দিতেই শো শো করে বাতাস এসে প্রিয়ন্তির চোখে মুখে ছেয়ে গেলো!
চোখ বন্ধ করে প্রশান্তির বাতাস উপভোগ করলো প্রিয়ন্তি!
অনেকক্ষণ এইভাবে থেকে হঠাৎ করেই ধ্যান ফিরলো ঘন্টার আওয়াজে প্রিয়ন্তির!
চোখে মুখে ফুটে উঠলো বিরক্তির চাপ……
-ভ্রমণে আসলাম মনের শান্তির জন্য এখানে এসেও শান্তি পেলাম না!
হাত দিয়ে কান চেপে ধরলো প্রিয়ন্তি!
-কি রে তুই এখনো স্নান করিস নি!
পূজোর সময় পের হলো যে!
প্রিয়ন্তি মায়ের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গটগট করে বারান্দায় চলে এলো!
মুহূর্তেই মন ভালো হয়ে গেলো প্রিয়ন্তির!
বারান্দার মনোরম দৃশ্যটা নজর কাড়লো প্রিয়ন্তির!
বেলি হাসনাহেনা ঘাসফুল দিয়ে পুরো বারান্দাটা সাজানো,,ফুলগুলো ছুঁয়ে দেখতে লাগলো প্রিয়ন্তি!
মেয়েকে ডাকতে ডাকতে বারান্দায় চলে এলেন অনিতা,,,
প্রিয়ন্তি তখন প্রকৃতির সৌন্দর্যে নিজেকে বিলাতে ব্যস্ত!
অনিতা মেয়েকে ডাকলেন,
,-প্রিয়ন্তি তুই এইভাবে চলে আসলি কেন?
মায়ের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবলো প্রিয়ন্তি,,তারপর ঘট করে অনিতার হাত থেকে থালা নিয়ে চলে গেলো সে!
প্রিয়ন্তির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন অনিতা!
.
রাত্রে শুয়ে শুয়ে ভাবলো প্রিয়ন্তি কাল কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে,,,
মিলনছড়ি আর নীলগিরি নীলাচল দেখেই যাবে এমন মনোস্থাপন করলো প্রিয়ন্তি!
.
মাঝ রাত্রীতে গুণগুণ আওয়াজে আড়মোড়া ভেঙ্গে গেলো প্রিয়ন্তির মাত্রই চোখটা লেগে আসছিলো পরক্ষণেই গুনগুন আওয়াজে ঘুম ভাবটাও উড়ে গেলো তার!
আস্তে আস্তে আওয়াজটাকে লক্ষ্য করে এগিয়ে গেলো প্রিয়ন্তি!
দুইটা কামড়া ই উকি দিলো না সবাই ই তো ঘুমিয়ে তাহলে আওয়াজটা……
বারান্দায় গেলো প্রিয়ন্তি,,
বাহিরে উকি দিতেই দেখতো পেলো আরেকটা কাটের তৈরি দালান!
আসার পর থেকে দালানটা খেয়াল করে নি প্রিয়ন্তি!
আওয়াজটা সেই ঘর থেকেই আসছে!
সেইদিকে উকি দিয়ে প্রিয়ন্তি যা দেখতে পেলো,,
এমন কিছু দেখবে সে কল্পনা ও করে নি,,,
সে তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলো!
কিন্তু আজ এতোমাস পর আবার মানুষটাকে দেখতে পাবে আশা করি নে প্রিয়ন্তি তা ও এমন একটা জায়গাতে!
লোকটার জোড়া ভ্রুর দিকে চোখে আটকে থাকলো প্রিয়ন্তির,,,গুনগুন আওয়াজে ঠোঁট নাড়ানোর দৃশ্যটাই দেখতে পাচ্ছে সে!
কান পেতে শোনার চেষ্টা করে এমন কিছুই শুনতে পেলো প্রিয়ন্তি,,
সাথে সাথে নিজেও উচ্চারণ করে ফেললো প্রিয়ন্তি……
-কুলহুয়াল্লাহু আহাদ্……
থেমে গেলো প্রিয়ন্তি!
সারাহর কথা মনে পড়ে গেলো প্রিয়ন্তির,,এমন একটা কথা সারাহকেও বলতে শুনেছিলো প্রিয়ন্তি!
-শুনছেন!
লোকটাকে ফিসফিসয়ে ডাকলো প্রিয়ন্তি!
থেমে গেলো লোকটার গুনগুন আওয়াজ!
চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে কিছুই দেখতে পেলো না লোকটি!
প্রিয়ন্তি দেখতে পেলো লোকটির চোখেমুখে ভয়ের চাপ স্পষ্ট!
মুখ টিপে হাসলো প্রিয়ন্তি!
ভাবলো প্রিয়ন্তি আরেকটু মজা করা যাক……
-এই যে আমি এইখানে,,শুনছেন আপনি!
লোকটা আবার ও ঘাড় কাত করে চারিদিকে চোখ বুলালো এবারো কিছুই দেখতে পেলো না বলে মনে হলো!
কোরআন বুকে চেপে চুমো দিয়ে বুক সেল্ফে রেখে দিলো মেহরাব!
উঠে আবার শব্দটার অনুসরণ করতে লাগলো,,
কিন্তু কোথায় থেকে আসছে বুঝতে পারলো না মেহরাব!
-আরে দেখতে পাচ্ছেন না আমায়!
বিরক্তি নিয়ে বললো প্রিয়ন্তি!
মেহরাব এবার বারান্দার দিকে তাকালো,,
আবছা আলোয় শুধু একটা মেয়েলি মুখাবয়ব দেখতে পেলো মেহরাব!
ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকিয়ে বললো মেহরাব,,
-এইভাবে এতো রাতে চেঁচাচ্ছেন কেন?
কে আপনি হ্যাঁ?
লোকটা কর্কশ স্বরের কথা প্রিয়ন্তির মন খারাপ হয়ে গেলো!
নীরবে বারান্দা থেকে সরে এলো প্রিয়ন্তি!
মেহরাব কাটের জানালা স্বশব্দে বন্ধ করে দিলো!
.
.
৬
:
পরের দিন সকালে পুরো পরিবারের সাথে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে বের হলো প্রিয়ন্তি!
পাহারের বুক চিড়ে নেমে আসা ঝর্ণা দেখে প্রিয়ন্তির আনন্দের সীমা রইলো না!
এই জায়গাটায় পর্যটকদের ভিড় লেগে আছে সবাই যে যার মতো আনন্দ করছে কিন্তু মেহরাব একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে!
আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মেহরাব সাথে একফোঁটা অশ্রুকণারাও ভীর করলো চোখে……!
-কিরে তুই এখানে এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
বন্ধু ফাহাদের কথায় নিজেকে স্বাভাবিক করে মুচকি হাসলো মেহরাব!
-দেখ সবাই কতো আনন্দ করছে এইভাবে মুখ ভার করে বসে আছিস কেন?
-ওই মেয়েটার মুখটা দেখতে একদম নিয়ামাহর মতো না!
মেহরাবের দৃষ্টি লক্ষ্য করে সামনের দিকে তাকালো ফাহাদ!
প্রিয়ন্তি ঝর্ণার পানি একটু পর পর হাতে মুখে ছুয়াচ্ছে!
ফাহাদ বুঝতে পারলো মেহরাবের মনের অবস্থা!
সবেমাত্র দ্বীনকে মানতে শুরু করেছে মেহরাব!
কিন্তু হঠাৎ করেই দুর্বলতা আঁকড়ে ধরে তাকে!
-তোর তো চোখের হেফাজত করার কথা মেহরাব!
তুই পরনারীর দিকে তাকাচ্ছিস কেন?
সূরা নূরের আয়াতটা ভুলে গেছিস?
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে……” (সূরা নুরঃ ৩০)
ফাহাদের কন্ঠ কর্কশ!
এতোক্ষণে যেন মেহরাবের চেতনা ফিরলো!
বারবার ভুল হয়ে যাচ্ছে তার!
চোখ নামিয়ে আবার আকাশের দিকে মুখ তুলে কি যেন বিড়বিড় করলো মেহরাব!
.
-মা বাবা আমি আসছি তোমার সামনে যাও!
অনিতা প্রিয়ন্তির কথায় অস্থির হয়ে বললেন,,
-আমরা সামনে যাব আর তুই কি করবি!
-কি করবে আবার দেখো কার সাথে ফষ্টিনষ্টি করবে!
মহেশের এই কথা শুনে বিজয়বাবু মহেশের গালে কষে চড় মেরে বসলেন
-তুই অত্যন্ত বিয়াদবের কাতারে পড়ে গেছিস!
ও তোর বড় বোন হয়!
মহেশ চোখ গরম করে প্রিয়ন্তির দিকে তাকিয়ে গটগট করে চলে গেলো সামনের দিকে!
ভাইয়ের এমন কথা শুনে প্রিয়ন্তির চোখে জল চলে এলো!
ভাইটাকে কত্ত আদর করে সে বড় করেছে আর এখন……
একটা ভুলের জন্য ভাইয়ের মনে এতো ঘৃণা জন্ম নিবে ভাবতে পারে নি প্রিয়ন্তি!
আবেগের বসে ভাই ভুল করতে যাচ্ছিল যেটা শুধরে দিয়েছিলো প্রিয়ন্তি!
কিন্তু পরিণামে ভাইয়ের মনে যে ঘৃণা জন্ম নেবে……!
বিজয়বাবু এসে মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,,
-মা এখন সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে!
কাল আবার আমরা আসবো কেমন!
এখন চলো……
প্রিয়ন্তি মুখ ভার করে সামনে এগিয়ে চললো!
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপর পাশের দালানের জানালার দিকে তাকিয়ে রইলো প্রিয়ন্তি!
উদ্দেশ্য একটিবার সেই মানুষটাকে দেখার!
মেহরাব ঘরে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো!
দু রাকাত তাওবার নামায পড়ে আল্লাহর কাছে নিজের ভুলের জন্য সেজদায় পড়ে রইলো মেহরাব!
জানালার অপর পাশ থেকে সব দেখছিলো প্রিয়ন্তি!
মেহরাবের রুকু সেজদা সবকিছু নীরবে অবলোকন করছিলো সে!
কেন জানি ভালো লাগছিলো প্রিয়ন্তির এই দৃশ্য দেখে!
মনে পড়ে গেলো প্রিয়ন্তির!
সারাহ ও একদিন তার সামনে এমন করেছিলো!
এটা তাদের দৈনন্দিনের ইবাদত!
মনে প্রশ্ন জাগে প্রিয়ন্তির!
-মাথা তো তারা ও নুয়ায়!
কিন্তু তাদের আর আমাদের মাঝে বিস্তর ফারাক!
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে প্রিয়ন্তি!
জানালা থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকায় প্রিয়ন্তি!
মনে ভরে উঠে সবুজের সমারোহ থেকে!
সৃষ্টিকর্তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ প্রিয়ন্তি!
হঠাৎ করেই ঝুপঝাড় থেকে একটা সাদা খরগোশকে বের হতে দেখে প্রিয়ন্তি!
এত্ত সুন্দর খরগোশটা দেখে নিজেকে আটকে রাখতে না পেরে দৌড়ে কাটের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো সেটাকে ধরতে!
খরগোশটা হুট করে সামনের দিকে দৌড়া শুরু করলো
প্রিয়ন্তিও খরগোশকে ধরতে পিছু নিলো!
সামনে কিছু একটা দেখে থেমে গেলো প্রিয়ন্তি!
চারিদিকে ঝি ঝি পোকার সমারোহ,,আর তার মাঝে এত্ত সুন্দর পুকুর!
পুকুরের চারপাশে সাদা নীল ফুল দিয়ে সাজানো!
ঘাটের এক পাশে ছোট্ট নৌকা বাধাই করা,,আস্তে আস্তে ঘাটে নেমে এলো প্রিয়ন্তি!
নীল আভা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো পুকুরটাতে তার উপর সন্ধ্যার আকাশের লাল আভাটাও পুকুড়ের দৃশ্যটাকে করে তুলেছে অধিক আকর্ষণীয়!
কিছু সময়ের জন্য খরগোশটার কথা ভুলে গিয়েছিলো প্রিয়ন্তি!
হঠাৎ করে ধ্যান ফিরলে,,ততোক্ষণে আধার নামতে শুরু করেছে চারিদিকে!
খরগোশটাকে খুঁজতে চারিদিকে চোখ বুলাতেই ছোট্ট ছোট্ট ঘাসের ঝুপড়ীতে লুকিয়ে থাকা খরগোশটাকে চোখে পড়ে যায় প্রিয়ন্তির!
হাতে তুলে খরগোশটার গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে সামনে আগায় প্রিয়ন্তি!
কিন্তু ততক্ষণে চারিদিকে আধারটা আরো ঘাড়ো হয়ে উঠেছে!
ভয় পেতে থাকে প্রিয়ন্তি!
রাস্তাটা আধারে চেনার যে উপায় নেই!
খুঁজে পাচ্ছে না রাস্তাটা সে!
কোনদিক দিয়ে এসেছিলো সেটাও টাহর করতে পারছে না!
কোলে থাকা খরগোশটাকে আকড়ে ধরে গাছের নিচে অসহায় ভাবে বসে পড়লে প্রিয়ন্তি!
.
অনিতা মেয়েকে ডাকতে মেয়ের ঘরে এসেছিলেন,,
প্রিয়ন্তিকে যখন ঘরেও খুঁজে পেলেন না তখন বারান্দায় চলে এলেন।
বারান্দায় এসেও প্রিয়ন্তির খুঁজ না মিললে অস্থির হয়ে পড়েন অনিতা!
স্বামী বিজয়বাবুকে প্রিয়ন্তিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বললে তিনিও মেয়ের চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েন!
তখনি মহেশ এসে চেঁচিয়ে বলে উঠে,,
-আমার কথা তোমাদের বিশ্বাস হয় নি তো এখন দেখো তোমাদের মেয়ে কেমন!
আমি আগেই বলেছিলাম ও……
-মার খেতে না চাইলে ওকে আমার সামনে থেকে চলে যেতে বলো প্রিয়ন্তির মা!
প্রচণ্ড রাগ নিয়ে বললেন বিজয়বাবু!
-হ্যাঁ হ্যাঁ তাই যাচ্ছি!
কেন যে তোমাদের সাথে আমি আসতে গেলাম!
হনহন করে নিজের ঘরে চলে এলো মহেশ!
.
চোখ আলো এসে লাগার কারণে এক হাত দিয়ে মুখের উপর ছায়া ধরলো প্রিয়ন্তি!
ভয়ে ভয়ে বললো প্রিয়ন্তি,,
-ক……কে
-আপনি এতো রাতে এখানে বসে কি করছেন!
মুখ তুলে তাকায় প্রিয়ন্তি!
মানুষটাকে চিনতে একদম ভুল হয় নি প্রিয়ন্তির!
মুহূর্তেই চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো প্রিয়ন্তির!
এই মানুষটাকে ভয় পাওয়ার প্রশ্নউ আসে না……!
চোখ সরিয়ে নিলো মেহরাব!
আস্তে আস্তে বসা থেকে উঠে বললো প্রিয়ন্তি,,
-আমাকে একটু সাহায্য করবেন প্লিজ!
আমি না বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটা খুঁজে পাচ্ছি না পৌঁছে দিবেন দয়া করে!
অপর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকায় মেহরাব!
বিরক্তিভরা কন্ঠ নিয়ে বলে,,
-হু!
প্রিয়ন্তি আর মেহরাব টর্চ লাইটের আধো আলোয় পথ চলতে শুরু করে!
অনেকক্ষণ নীরবতা থাকে তাদের মাঝে!
নীরবতা ভাঙ্গে প্রিয়ন্তি……
খরগোশের গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলে সে,,
-আপনার নামটা জানতে পারি!
কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাথা কাত করে মেহরাব!
যেন প্রিয়ন্তি বুঝতে পারে সে তার কথায় বিরক্ত প্রিয়ন্তির প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে সে বাধ্য নয়!
ব্যপারটা বুঝে প্রচন্ড ইগোতে লাগে প্রিয়ন্তির!
আর এক পাও না এগিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে পড়ে সেখানে!
মেহরাব কিছুটা সামনে এগিয়ে যেতে বুঝতে পারে প্রিয়ন্তি সাথে নেই!
পেছনে আলো ফেলতেই দেখতে পায় প্রিয়ন্তি দাঁড়িয়ে আছে!
কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে মেহরাব,,,
-সমস্যাটা কি আপনার এইভাবে দাঁড়িয়ে পড়েছেন কেন?
-আমি যাব না আমি এখানেই থাকবো!
জেদি কন্ঠে বলে প্রিয়ন্তি!
মেহরাব ভ্রু কুচকে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,,
-জ্বী নামটাই তো,,মেহরাব ঠিক আছে!
মুচকি হেসে সামনের দিকে হাটা ধরে প্রিয়ন্তি!
বিরক্তি নিয়ে প্রিয়ন্তির পিছু পিছু মেহরাব ও ছুটে চলে………
.
.
#চলবে ইন শা আল্লাহ