ধৈর্য,২২

0
707

ধৈর্য,২২
Tahmi_Chowdhury
;
—পিওয়ের কি হলো বললেন না তো……
তনয়ার প্রশ্নে মুচকি হেসে তনয়ার ঘাড়ে থুতনি রেখে বলে আয়াত……
—মেহরাবের সাথে বিয়ে হয়েছে!
জানো তনয়া মেহরাব প্রিয়ন্তি দুজন দুজনকে পছন্দ করে,,
আর শালা মেহরাব এতোকিছুর পর ও চুপ ছিলো,,,সে এটা শাবানা আলমগিরের সিরিয়াল ভাবছিলো।
আয়াতের কথা শুনে তনয়া খিলখিল করে হেসে উঠলো!
চশমা নাকের ডগায় এনে আয়াত তনয়ার হাসির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো……

—কি বলছিস মহেস এসব?
মা……মা মারা গেছে,,,তু……তুই কি বলছিস এসব?
-হু দি……মা আজ তিন সপ্তাহ হলো মারা গেছেন!
আমি বলিনি তোমাকে কারণ তোমার বিয়ে ছিলো তার উপর তোমাকে এতোদিনের পর খুশি দেখে সাহস হয় নি……
মহেশ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে!
প্রিয়ন্তির চোখ অন্ধকার হয়ে আসে,,,,মেহরাব ধরে ফেলে প্রিয়ন্তিকে!
মহেশ তাকায় বোনের দিকে!
প্রিয়ন্তি বাকরূদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে ভাইয়ের দিকে!
মেহরাব প্রিয়ন্তিকে শান্তনা দেয়,,,
-আমাদের সবাইকে একদিন মরতে হবে!
কারণ মানুষের জন্ম মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার জন্য!
যারা দুনিয়াতে এসেছি আমাকে তোমাকে সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে পিও!
মায়ের জন্য আমাদের দোয়া করা ছাড়া কিচ্ছু নেই,,
তুমি কেন এভাবে ভেঙ্গে পড়ছো পিও তোমার মা মুসলিম হওয়ার পর আল্লাহ তা’য়ালা মৃত্যুবরণ করিয়েছেন!
তিনি মাকে মুসলিম হওয়া পর্যন্ত সুযোগ দিয়েছেন!
আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জানাও পিও!
এভাবে ধৈর্য হারালে হয় না!
মুমিনদের উপর বিপদ-আপদ,দুঃখ-কষ্ট আপতিত হয় কারণ আল্লাহ তা’য়ালা তা দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করেন,,আর যে ধৈর্য ধরতে পারে আল্লাহ তা’য়ালা তার আশানুরূপ পুরস্কার প্রদান করেন!
প্রিয়ন্তি তবুও মেহরাবের উপর শরীরের ভার ঠেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে!
মহেশ মাথা নিচু করে বেড়িয়ে যায়!
পাঁজাকোলে তুলে প্রিয়ন্তিকে বিছানায় বসায় মেহরাব!
ছলছল চোখে মেহরাবের দিকে তাকায় প্রিয়ন্তি!
কপালে আলতো চুমো দিয়ে প্রিয়ন্তির হাত শক্ত করে জড়িয়ে রয় মেহরাব!
বোনের জন্য মহেশের চিন্তা হয় না,,,নিশ্চিন্তে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়!
কারণ বোনকে সামলানোর জন্য এখন মেহরাব আছে যে!
যতদিন থেকে খুব কাছ থেকেই মেহরাবকে দেখেছে,, বোনের কষ্টে ওই মানুষটাও কষ্ট পাবে এটা নিশ্চিত!

বিয়ের এক বছর পাড় হতে চললো,,,
প্রিয়ন্তি ৭ মাসের প্রেগন্যান্ট!
দুষ্টুমিস্টি হাসি আর খুনসুটিতেই কেটে যাচ্ছে দুজনের জীবন!
মেহরাব ব্যস্ত প্রিয়ন্তির ভেতরে থাকা অস্তিত্বের সাথে কথা বলতে!
মেহরাবের অবস্থা দেখে প্রিয়ন্তি মিটিমিটি হাসছে!
যখন প্রথম দিন শুনেছিলো প্রিয়ন্তির মাঝে আরেকজনের অস্তিত্ব বিস্তার করছে তখন থেকে মেহরাব পুরো বাচ্চাদের মতো কেয়ার নেওয়া আরম্ভ করেছে প্রিয়ন্তির!
মা-বাবা হওয়ার অনুভূতি গুলো কতোটা সুখকর প্রিয়ন্তি আর মেহরাবকে দেখলেই বুঝা যায়!
.
—বল তোর বোন কোথায়?
বল আমার প্রিয়ন্তি কোথায়?
আজ যদি না বলিস তোকে আমি মেরেই ফেলবো……
এই বলে দ্বীপ উঠে মহেশের নাক বরাবর ঘুষি মারে!
দুদিন হয়েছে মহেশকে লোক দিয়ে দ্বীপ তুলে এনেছে!
এনেই পাগলের মতো প্রলাপ করছে প্রিয়ন্তির খুঁজ দিতে!
দ্বীপ চলে গিয়েছিলো,,,কিন্তু আবার ফিরে এসেছে!
দেশে এসেই হন্য হয়ে প্রিয়ন্তিকে খুঁজছে দ্বীপ!
বাড়িতেও গিয়েছিলো কিন্তু পায় নি!
বিজয়বাবুকে টাকার লোভ দেখিয়ে বলেছিলো দ্বীপ যাতে প্রিয়ন্তির খুঁজ এনে দেন!
বিজয়বাবু টাকার লোভে তিনিও প্রিয়ন্তিকে খুঁজতে লোক জড়ো করলেন!
এক রাতে বিজয়বাবু ছেলের রুম থেকে কথার আওয়াজ শুনতে পান,,, কিছুটা সন্দেহের বসেই ছেলের দরজায় আড়ি পাতেন,,
শুনতে পান বোনের সাথে কথা বলছে।
ব্যাস হয়ে গেলো,,,ফোন লাগালেন দ্বীপকে আর জানিয়ে দিলেন মহেশ প্রিয়ন্তির খুঁজ জানে!
ছেলেকে প্রশ্ন করতে পারতেন বিজয়বাবু কিন্তু করেন নি কারণ হয়তো বলবে ও না ছেলে!
বললে এতোদিনে বলে দিতো!
মহেশের অজানা নয় সবাই যে প্রিয়ন্তিকে খুঁজছে,,তারপর ও যে চুপ করে ছিলো!
দ্বীপ রাতেই এসে মহেশকে জিজ্ঞেস করে কিন্তু মহেশ অস্বীকার করে সে জানে না!
বাড়িতে মহেশকে থ্রেড দিতে পারছিলো না তাই তুলে এনেছে নিজের আস্তানায়!
মহেশ আধমরা হয়ে চেয়ারের বসে আছে!
দ্বীপ রক্তচক্ষু নিয়ে বলে,,
—আবারও বলছি,,বল ও কোথায়?
মহেশ চুপ থাকে,,
দ্বীপ আবার মারতে চায়,,বিজয়বাবু এসে থামান!
বাবার দিকে তাকিয়ে ঘৃণায় চোখ ফিরিয়ে নেয় মহেশ!
বাবা হয়ে ছেলেকে এমন নির্মম ভাবে মারছে অন্য একটা লোক সহ্য করে কিভাবে?
বিজয়বাবু এগিয়ে মহেশের কাদ চাপড়ে বলেন,,
—বলে দে বাবা!
দ্বীপ ভালো ছেলে তোর বোন ওর কাছে খুশি থাকবে!
আর আমাদের ও অনেক টাকা হবে,,দ্বীপ আমাদের……
কথা শেষ করতে পারেন না বিজয়বাবু মহেশ নিজের মুখের থু থু ছেড়ে দেয় বাবার উপর!
বিজয়বাবু ক্ষেপে উঠে মহেশের চুল আছড়ে ধরেন,,
প্রচন্ড ক্ষুদ্ধ তিনি……
মহেশ ঠোঁট কামড়ে বলে,,
—মরে গেলেও বোনের ঠিকানা দিবো না আমি!
আমার বোন এই জঘন্য লোকের কাছে ভালো কিছুতেই থাকবে!
ও ভালো আছে,,ওর বিয়ে হয়েছে……
বিয়ে হয়েছে কথাটি শুনে দ্বীপ ক্ষেপে গেলো!
বিজয়বাবু থামালেন দ্বীপকে,,দ্বীপ কটমট করে বললো,,
–ওর ১০০ বার বিয়ে হলেও ওকে আমার চাই ই চাই……
বিজয়বাবু আশ্বাস দেন দ্বীপকে!
মহেশ ক্রুদ্ধ হয়ে বলে,,,
—আজ এই মুহূর্তে আমি আমার বোনের ধর্ম গ্রহণ করলাম,,আজ এই মুহূর্তে আমি আমার বোন যে রবকে মেনে থাকে মেনে পড়লাম,,
-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলল(সঃ)!
যে ধর্ম তোদের বিবাহিত মেয়েকে বিয়ে করার লালসা জাগায়,,যে ধর্ম তোদের ক্রুদ্ধ থামাতে পারে না সে ধর্ম আজ এক্ষুণি আমি ত্যাগ করলাম!
আপুর ধর্ম আমায় শিখিয়েছে কিভাবে ক্রুদ্ধ ধমন করতে হয়,,কিভাবে ধৈর্য ধরতে হয়,
কিভাবে মানুষককে নিঃস্বার্থে ভালোবাসতে হয়„„কিভাবে………
মহেশ আর বলতে পারলো না,,শরীর থিরথির করে কেঁপে উঠে,,কাদে খুব শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত হানলো দ্বীপ!
মহেশ অন্ধকার দেখতে লাগলো চোখে!
হঠাৎ করে ফোন বেজে উঠলো কোথা থেকে!
মহেশ আতকে উঠলেও কিছু করার ছিলো না,,,চোখ মেলে রাখতে কষ্ট হচ্ছে মহেশের!
মহেশের প্যান্টের বাম পকেট থেকে ফোন বের করে আনলো দ্বীপ ,,
স্ক্রীণে ভেসে উঠলো,,
-দি কলিং……
দ্বীপ হাসলো তৃপ্তির হাসি!
হাজার চেষ্টায় ও আর চোখ মেলে রাখতে পারলো না মহেশ।
.
—দ্বীপ তুমি এমন করতে পারো না আমার সাথে,,,
আহ! ছাড়ো……আল্লাহ সাহায্য করো!
টানতে টানতে প্রিয়ন্তিকে নিয়ে গাড়িতে তুললো দ্বীপ!
বাড়ির পাশেই বাগানে ঘুরতে বেড় হয়েছিলো প্রিয়ন্তি আর মেহরাব!
প্রিয়ন্তির হঠাৎ আচার খাওয়ার স্বাদ জাগলে মেহরাব তা আনতে দোকানে যায়।
পুরো একদিন ধরে মেহরাবের বাড়ির উপর নজর রাখছিলো দ্বীপ,,প্রিয়ন্তিকে সহজে চেনার উপায় ছিলো না বারান্দায় বের হলে হিজাব দিয়ে মুখ ঢাকা থাকতো!
কিন্তু দ্বীপের সিক্স সেন্স বলে কিছু ছিলো তাই প্রিয়ন্তিকে ধরে ফেলে সহজেই।
মেহরাব চলে যাওয়ার পরই দ্বীপ প্রায় হুমড়ি খেয়ে প্রিয়ন্তির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে,,
প্রিয়ন্তি হাজার চেষ্টা করেও ছুটতে পারে না!
মেহরাব এসে প্রিয়ন্তিকে না পেয়ে ভয় পেয়ে যায় প্রচুর!
পাগলের মতো প্রিয়ন্তিকে ডাকতে থাকে তবুও সাড়া মিলে না প্রিয়ন্তির!
.
দ্বীপ প্রিয়ন্তিকে বাসায় নিয়ে এসেই পুরোহিত ডাকে,,
প্রিয়ন্তি ভয় পেয়ে যায়!
দ্বীপ প্রিয়ন্তির উপর শাড়ি ছুড়ে দেয় আর তাগাদা দেয় রেডি হওয়ার জন্য,,
দ্বীপের পায়ে পড়ে যায় প্রিয়ন্তি।
তবু মন গলে না দ্বীপের!
হঠাৎ করে হিজাবের নিচে প্রিয়ন্তির বড় পেটটা দ্বীপের দৃষ্টি ঘোচর হয়,,,
দ্বীপ তেড়ে আসে,,প্রিয়ন্তি পেটে হাত দিয়ে পিছিয়ে যায়!
দ্বীপ বলে,,
—আমার আর তোমার মাঝে অন্য কেউ থাকবে না!
বাচ্চা হলে শুধু তোমার আর আমার হবে অন্য কারো নয়!
এই বলে সজোরে প্রিয়ন্তির পেটে আঘাত করে দ্বীপ।
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে প্রিয়ন্তি!
প্রচন্ড ব্যথায় আকাশ বাতাস কাপিয়ে চিৎকার করে উঠে প্রিয়ন্তি!
.
আধো আধো চোখ খুলার চেষ্টা করে প্রিয়ন্তি,,
মেহরাব কোলে নিয়ে প্রিয়ন্তিকে দৌড়াচ্ছে আর বলছে,,
-একটু খানি ধৈর্য ধরো পিও!
তোমার কিচ্ছু হবে আমার বাচ্চার কিচ্ছু হবে না……
প্রিয়ন্তি মেহরাবের দাড়ি দুহাতে মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,,
—আরো আগে এলেন না কেন আপনি,,,?
আমার বাচ্চাটা……
জ্ঞান হারায় প্রিয়ন্তি!
মেহরাবের চোখের জল গাল বেয়ে গড়িয়ে গিয়ে প্রিয়ন্তির কপালে গিয়ে পড়ে!
মহেশের জ্ঞান ফিরলে দেখতে পায় বিজয়বাবু কারো সাথে কথা বলছেন,,ভালো করে কান পেতে বুঝতে পারে ওরা প্রিয়ন্তিকে খুঁজে পেয়েছে,,
আর দ্বীপের বাসায়ই আছে!
মহেশ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে কি করবে,,
পাশে থাকা লাঠির দিকে চোখ যায়!
কান্না চলে আসে মহেশের,,
সে আঘাত করতে চায় না বাবাকে! কিন্তু এখন না করে উপায় নেই!
বোনটা মরে যাবে যে!
কোনরকম হাত বাড়িয়ে লাঠিটা ধরে বিজয়বাবুর ঘাড়ে আঘাত করলে বিজয়বাবু কয়েক মুহূর্তে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান!
আস্তে আস্তে উঠে মেহরাবের নাম্বারে কল দেয় মহেশ!
আর একে একে সব বলে,,
মেহরাব ছুটে যায় সেখানে,,,
দ্বীপ তখন পুরোহিত আনতে গেছে,,,বহুকষ্টে প্রিয়ন্তিকে বের করে আনে!
প্রিয়ন্তি তখন প্রচন্ড ব্যথায় আর্তনাদ করছে!
.
.
#চলবে ইন শা আল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here