#ধোঁয়ার_নেশা,অন্তিম_পর্ব
#রোকসানা_রাহমান
পালক অন্ত্রীশার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অন্ত্রীশার চোখে চোখ রেখে। ধোঁয়াগুলো তাদেরকে ঘিরে রেখেছে। আজ কেন জানি মনে হচ্ছে,এই ধোঁয়াগুলোতে এক মাতলতার সুবাস রয়েছে। যা দুজনকে হারিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে এক অদ্ভুত নেশায়। যে নেশাতে ধুকে ধুকে মরবে না,এক ঝটকায় মরে যাবে।
পালক ক করছে আর কী বলতে চাচ্ছে অন্ত্রীশার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। বেশ বিস্ময় মিশ্রিত জিজ্ঞেসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পালকের চোখের দিকে। যেন এই চোখেই সে তার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।
পালক অন্ত্রীশার আরেকটু কাছাকাছি,আরেকটু মুখোমুখি,আরেকটু চোখাচোখির ছলে বললো,,
“” একজন কলঙ্কিত আর অন্যজন শুদ্ধিত মিলে কখনোই একটি পবিত্র ফুল ফুটাতে পারে না। হয় দুজনকেই কলঙ্কিত হতে হবে নাহয় দুজনকেই শুদ্ধিত হতে হবে। আর তুমি যেহেতু চাচ্ছো আমি কলঙ্কিত হয় তার মানে তোমাকেও কলঙ্কিত হতে হবে!””
পালক নিজের কথা শেষ করতেই অন্ত্রীশার কোমর জড়িয়ে ধরেছে। অন্ত্রীশা তখনও পালকের চোখের মায়ায় ডুবে আছে। যেই না অন্ত্রীশাকে কোলে উঠিয়ে নিয়েছে অমনি অন্ত্রীশা চিৎকার করে উঠলো,,,
“” আরে কী করছেন? আপনি কিন্তু রুলস ভঙ্গ করছেন,এটা ঠিক হচ্ছে না পালক!””
“” উহু পত্র পুরুষ! তোমার মুখে পালকটা মানায় না,পত্রী!””
পালকের প্রতিটি কথাতে অন্ত্রীশা হারিয়ে যাচ্ছে,প্রতিটা পদক্ষেপে হারিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ওর কথার বুলিতে আজ হারিয়ে যাওয়ার ছন্দ মেখে নিয়েছে। আজ কি তবে তার হারিয়ে যাওয়ার দিন???
অন্ত্রীশাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে পালক ওর উপরে নিজের ভর ছেড়ে দিতেই অন্ত্রীশা আবার সম্বিৎ ফিরে পেয়েছে,,,
“” ও মা গো,সরেন,কী হচ্ছেটা কী?””
“” বাসর!””
অন্ত্রীশা পালকের দুবাহু ধরে সরানোর চেষ্টা থামিয়ে চমকে বললো,,
“” কী!””
“” হুম,তোমার আমার কলঙ্কিত বাসর। তোমার আমার ধোঁয়াময় বাসর হবে আজকে। যে বাসরে আমিতো কলঙ্কিত হবোই সাথে তোমাকেও কলঙ্কিত করে দিবো। তবেই তো জন্ম নিবে একটি পবিত্র ফুল! শুনো না,আমাদের ছেলর নাম হবে পবিত্র আর মেয়ের নাম হবে ফুল,,,তোমার আমার পবিত্র ফুল! কেমন বলেছি বলো??””
অন্ত্রীশা পালকের সাথে দস্তাদস্তি করতে করতে বললো,,
“” কোনো ফুল টুল হবে না। আপনি রুলস ভঙ্গ করেছেন। আমি বলেছিলাম,নো কথা নো ছোঁয়া। অনলি কলঙ্কিত! কিন্তু আপনি…””
“” আমি আজ সব রুলস ভেঙে দিয়েছি। রুলস না ভাঙলে কলঙ্কিত কিভাবে হবো? তোমার ছোঁয়া না পেয়ে আমি মরিয়া হয়ে উঠেছি। সে কী মরিয়া গো পত্রী! মনে হয়,মৃত্যুদেশ থেকে মরতে মরতে ফিরে এলাম!””
পালক এসব কী বলছে! ও কী পাগল হয়ে গেলো? কিন্তু এই পাগলামীটা আমাকে কেন মরিয়া বানিয়ে ফেলছে? আমার ও কেন ইচ্ছে হচ্ছে ওর সাথে মিলে মিশে কলঙ্কিত হতে?
“” আপনি আমার সাথে এমনটা করতে পারেন না। একজন উত্তম পুরুষ হয়ে কিভাবে একটা মেয়ের উপর অত্যাচার চালাতে পারেন??””
পালক অন্ত্রীশার ঠোঁটে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,,
“” অবশ্যই পারি। তুমি আমার বউ অন্য কোনো মেয়ে নও। আমরা কাগজে কলমে বিয়ে করেছি,চিঠিতে চিঠিতে বিয়ে করেছি,অপেক্ষায় অপেক্ষায় বিয়ে করেছি,অভিমানে অভিমানে বিয়ে করেছি,ধোঁয়ার চুমুতে চুমুতে বিয়ে করেছি,আর আজ ছোঁয়ায় ছোঁয়ায় বিয়ে করবো, নিশ্বাসে নিশ্বাসে বিয়ে করবো!
পালকের হাতের ছোঁয়া পড়তেই অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। গলার স্বর মিলিয়ে গিয়েছে। বুকের ভেতরে ধুকপুক ধুকপুক করছে। অজানা শিহরনে কেঁপে উঠছে তার শরীরের প্রতিটি পশম!
অন্ত্রীশা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,,,
“” ধোঁয়ার গন্ধে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, শুদ্ধ পুরুষ। আমার যে একটু শুদ্ধ নিশ্বাসের প্রয়োজন!””
পালক আর কথা না বাড়িয়ে অন্ত্রীশার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে নিয়েছে। পৃথিবীতে বউয়ের জন্য তার স্বামীর নিশ্বাসের চেয়ে আর কোন নিশ্বাসটা শুদ্ধ হতে পারে???
আতিশ সেই ভোরবেলাই পাপড়িদের বাসায় হাজির। সারারাত ছটফট করতে করতে কাটিয়েছে। একরাতেই চোখের নিচে ফুলে উঠেছে, ফযরের আযান কানে আসতেই বিছানা ছেড়ে পাপড়িদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলো। সে যতই চাইছে পাপড়ির কথা ভাববে না,ততই ভেতরের সবকিছু দুমড়েমুচড়ে তাকে শেষ করে দিচ্ছে। বারবার শুধু একটা জিনিস ভেবেই দিশাহারা হয়ে যাচ্ছে পাপড়ি অন্য কারো বউ হবে। তাহলে তার বউ কে হবে? তার ও তো বউ হিসেবে পাপড়িকেই চাই। কখনো মুখ ফুটে বলেনি বলে পাপড়িও বুঝার চেষ্টা করবে না? উফ! এই বাসাটা আসলেই আমার সব অনুভূতিগুলো একসাথে আমার উপর ঝেকে বসে। আজ বুঝতে পারছি পালকের পাগলামীগুলো কতটা ভয়াবহ ছিলো!
একটু পরেই বর চলে আসবে অথচ পাপড়ির এখনও সাজগোজ শেষ হয়নি। ও কি আজকে সারাজীবনের সাজ একবারেই সেজে ফেলবে? আতিশ পাপড়ির রুমের বাইরে অপেক্ষা করতে করতে নিজের চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলার উপক্রম। আর কত ধৈর্য্য ধরে সে বাইরে অপেক্ষা করবে? তার যে পাপড়ির সাথে অনেক কথা আছে,যে কথাগুলো আজকে না বলতে পারলে হয়তো আর কোনোদিন বলতে পারবে না। না বলা কথাগুলো তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিবে। আতিশ আর অপেক্ষা করতে পারছে না। হুট করেই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গিয়েছে!
পাপড়ি লাল কালারের বেনারশী পরে আছে,পুরো শরীর ভর্তি সোনার গয়না। চোখে মুখে ভারী মেকাপ। এতো ভারী সাজে সে কখনও পাপড়িকে দেখেনি। পাপড়ি যে সাজেনি তা নয়,কিন্তু ইচ্ছে করেই তার দেখা হয়নি,যদি নিজেকে সামলাতে না পারতো সে ভয়ে।
আতিশের হুট করে উপস্থিতে সকলে চমকে গেলেও পাপড়ি চমকায়নি। নিচু স্বরে সবাইকে চলে যেতে বলে ও হাতে চুড়ি পরা শুরু করেছে। হাতে কতগুলো চুড়ি নিয়েই আতিশের কাছে এগিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। পুরো মনোযোগ তার চুড়ি পরায়। চুড়ির দিকে তাকিয়েই বললো,,,
“” কিছু বলবেন? আর এখন থেকে আর কখনো এরকম হুট করে আমার রুমে ঢুকে পড়বেন না। এখন তো আমি শুধু আপনার বন্ধুর বোন নই,আরেক জনের বউ হতে যাচ্ছি। একটু পরেই অন্যকারো দখলিনী হয়ে যাবো।””
শেষ চুড়িটা পরা শেষ করে আতিশের দিকে তাকিয়েছে পাপড়ি। তার চোখের চাহনিটা কঠিন হয়ে এসেছে। এতোটাই কঠিন যে এখন চাইলে সে পাপড়িকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিতে পারবে।
পাপড়ি আতিশের চাহনিকে অগ্রাহ্য করেই বললো,,,
“” বউ সাজে আমাকে কেমন লাগছে? উনার পছন্দ হবে তো? উনার বুকে আমার মাথাটা চেপে ধরবে তো? উনার হাতদুটো আমার শরীরের সবটা জায়গায় বিচর…..””
পাপড়ি কথা শেষ করার আগেই ওর গালে কষে একটা চড় মেরে বসেছে আতিশ। আতিশ হুট করে এমন চড় মেরে বসবে ভাবতে পারেনি পাপড়ি। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি বেরিয়ে পড়েছে সাথে সাথে।
আতিশ পাপড়ির দুই চিবুক নিজের দুহাতে চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসেছে। নিজের চোখের সাদা অংশটা লাল রং ধারন করে ফেলেছে অনেক আগেই। কিন্তু সেই লাল রঙে এবার নোনাপানিও মিশে গিয়েছে। পাপড়ির চোখে চোখ রেখে বললো,,,
“” তুই,তুই শুধু…””
পাপড়ি ব্যথাতুর কন্ঠেই ক্ষীন স্বরে বললো,,
“” আমি কি?””
আতিশ তার পুরো কথাটা শেষ না করেই পাপড়িকে ঠেলে বিছানায় ফেলে দিয়ে বাইরে চলে যাচ্ছে। পাপড়ির রুম থেকে বেরিয়ে নিজের শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছে নিচ্ছে। চোখের পানিগুলোকে সে আর চোখের কোণে বন্দী করে রাখতে পারছে না। সবগুলো অবাধ্য হয়ে গেছে। আজ শুধু পাপড়ি না সবাই তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এতো কষ্টগুলো আমি কোথায় রাখবো পাপড়ি? আমার জন্যে কি আরেকটু অপেক্ষা করতে পারলে না? আর একটু অপেক্ষা করলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো? এতোগুলো বছর তোমাকে চোখে চোখে রেখেছি,আর আজ দুইদিন চোখের আড়াল হতে না হতেই আমাকে ভুলে গেলে? আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা সব শেষ হয়ে গেলো? কি করে পারলে আমার সামনে অন্য পুরুষের স্পর্শ নেওয়ার কথা বলতে? অন্য পুরুষের বুকে নিজের মাথা রাখার কথা বলতে? এটা আমাকে কতটা যন্ত্রণা দিয়েছে তোমাকে আমি কোনোদিনও বুঝাতে পারবো না,কোনোদিনও না।
আতিশ সব ভিড় ঠেলে পাপড়িদের বাসার গেটে আসতেই পেছন থেকে নিজের শার্টে টান অনুভব করে। পেছনে ঘুরতে পাপড়িকে দেখে বুকটা ছ্যাত করে উঠেছে। একটু আগেও যে মেয়েকে কোনো রাজকুমারীর চেয়ে কম সুন্দর লাগেনি সেই মেয়েটার চেহারা একি অবস্থা? চোখের কাজল ল্যাপ্টে চারপাশটা মেখে আছে,এতো ভারী মেকাপেও আতিশের হাতের আঙুলের ছাপ স্পষ্ট। থাপ্পড়টা কি খুব বেশি জোরে দিয়ে ফেলেছি? রাগের বশে এতোটুকু মেয়েকে এতো বড় থাপ্পড়টা আমি কিভাবে দিলাম??
আতিশের ভাবনার ঘোর কাটলো পাপড়ির পরপর দুটো থাপ্পড় খেয়ে। আতিশের কলার চেপে ধরে বললো,,
“” পালিয়ে যাচ্ছেন? বিয়ে না করেই পালানো হচ্ছে??””
আতিশ বিস্ময় নিয়ে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে আছে,আমি কি অতি মনোঃকষ্টে কোনো ভ্রমে চলে এসেছি? আমার চেনা পাপড়িতো এমন হতে পারে না। এই যে চোখটা এতো বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, এটা কখনোই পাপড়ির হতে পারে না,আর রাগ? ওর তো রাগ থাকতেই পারে না। ও তো ফুঁপিয়ে কাঁদতে পারে,ছেচ্কান্দুনি! আর থাপ্পড়?
আতিশকে আরও অবাক করতেই পাপড়ি ওর কলার টেনে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। পুরো বাড়ি ভর্তি মানুষ ওদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে,কেউ কেউ মুখ টিপে হাসছে তো,কেউ কেউ নানা মস্করাই মেতে উঠেছে। কাজীর সামনে গিয়ে আতিশকে ধাক্কা দিয়ে সোফাতে ফেলে দিয়েছে,,,
“” ভাইয়া কাজীকে বল এখনই বিয়ে পড়াতে!””
কাজীর পাশে পালককে দেখে বেশ হকচকিয়ে গিয়েছে আতিশ। নিজেকে সামলিয়ে পালককে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অন্ত্রীশা পেছন থেকে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো,,,
“” এমন সাজে বিয়ে করবে আতিশ ভাইয়া? শেরওয়ানিটা পরতে দিবে না? তুমি বসো আমি নাহয় উনাকে রেডি করে আনি!””
“” কিছু পরতে হবে না উনাকে। উনি এমন সাজেই বিয়ে করবেন!””
আতিশ ভয়ে ভয়ে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। পালক আতিশকে উদ্দশ্য করে বললো,,
“” দিলি তো আমার নরম বোনটাকে রাগিয়ে? তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। নিশ্চয় তুই এখনো ভালোবাসি বলিস নি তাই না??””
আতিশ পালকের কথায় তরতর করে ঘেমে যাচ্ছে। তাহলে কি পালকও সব জেনে গিয়েছে??
পালক আতিশের পাশে এসে ওর হাতটা ধরে বসলো।
“” তুই জানিস না,এই পৃথিবীতে সব থেকে বিশ্বস্ত যদি কেউ থাকে সেটা তুই? আর এমন বিশ্বস্ত মানুষটার কাছে আমার বোনকে বিয়ে দিতে চাইবো না কেন?? ভালবাসি তোকে আমি,আর যাকে আমি ভালোবাসি তাকে আমার বোন তো ভালোবাসবেই!””
“” তারমানে তুই সব…””
পালক আতিশের হাতটা ছেড়ে একটা ভ্রূ উঁচু করে বললো,,
“” তোর কি মনে হয়,তোর ব্যাপারে আমি কিছু জানি না? তুই মনে মনে প্রেম করবি আর আমি জানবো না? তাছাড়া তোর দিক নাহয় বাদই দিলাম বোনটাও তো আমার,আর ও কোন পুরুষের পাত্রে নিজের প্রেম নিবেদন করছে সেটার আমি খোজ রাখবো না? শুধু বন্ধুর অধিকারেই তোকে আমার বোনের বেড রুমে ঢোকার পারমিশন দিবো?””
এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আতিশের রুমে পায়ের ছোঁয়া ফেলেছে পাপড়ি। তবে এই বার আগের বারের মতো বউ হওয়ার আকুলতায় নয় সত্যি সত্যি বউ হয়েই এসেছে। আতিশের বিছানার ঠিক মাঝখানটাই ঘোমটা টেনে বসে আছে। আগের বারের মতো এবারও সে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছে। ঘেমে নিজেকে নায়িয়ে ফেলেছে। ইশ! আমার তো সব সাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে উনি কখন আসবেন? আজও কি উনি আমার সাজটাকে ভালো করে দেখবেন না??
পাপড়ি ঘোমটার আড়ালেই খুব বিরক্ত নিয়ে বার বার ঘাম মুচছে। উফ! আজকেই আমাকে এতো ঘামতে হচ্ছে???
আতিশ রুমের ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে বললো,,
“” তুই কার সাথে বকবক করছিস?””
আতিশের কণ্ঠ পেয়েই পাপড়ি বরফের মতো জমে যাচ্ছে। হাত দুটো শক্ত করে মুঠো করে নিশ্বাস আটকে রেখেছে। কণ্ঠটা কেমন কেমন জানি লাগছে! আল্লাহ! আমি এই মানুষটাকেই থাপ্পড় মেরেছিলাম? আজকে আমার যে কী হবে আল্লাহই জানে! পাপড়ি মনে মনে সুরা পড়তে শুরু দিয়েছে!
আতিশ বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পাপড়ি কী করছে বুঝার চেষ্টা করছে। হঠাৎ করেই গলার স্বরটা কঠিন করে বললো,,,
“” এভাবে বারো হাতি ঘোমটা দিয়ে বসে আছিস কেন? বাসর করবি বলে? তোর মতো বাচ্চার মেয়ের সাথে আমি বাসর করবো? পড়ে দেখা যাবে বাসরের দোহাই দিয়ে বিছানায় পড়ে আছিস!””
এবার একটু ধমকের সুরেই বললো,,
“” পড়া নেই? আর চারদিন পড় তোর পরীক্ষা,তাও ইংলিশ,তুই কি লাড্ডু কয়টা খাবি তা ভাবছিস? যা এইসব রঙঢঙ ফেলে পড়তে বস!””
আতিশের কথায় পাপড়ি সাথে সাথে ঘোমটা খুলে ওর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো।
“” তোকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে বলিনি। তোর কি মনে হয় জোর করে বিয়ে করেছিস বলেই বিয়ে হয়ে গেলো? তুই আমার বউ হয়ে গেলি? আগে পরীক্ষায় পাশ হয়ে দেখা পরে ভাবা যাবে তোকে বউ বানাবো কী না!””
পাপড়ির সব ভয় কেটে গিয়ে রাগে ক্ষেপে যাচ্ছে। কিন্তু রাগের জায়গায় একরাশ অভিমানি সুরে বললো,,
“” আমি আপনাকে জোর করে বিয়ে করেছি?””
আতিশ বিছানায় বসতে বসতে বললো,,
“” হুম!””
“” আপনি আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেননি?””
“” আমি কি তোকে কখনো বলেছি আমি তোকে ভালোবাসি?””
পাপড়ি ভারী শাড়ী গুটিয়ে নিয়ে আতিশের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,,,
“” আমি এখানে আর এক মুহুর্তও থাকবো না। আমাকে এখনি বাড়ি দিয়ে আসেন।””
আতিশ এবার বসা থেকে শুয়ে পড়েছে। পাপড়ির দিকে না তাকিয়েই বললো,,
“” তোকে কি আমি আসতে বলেছি যে আমি দিয়ে আসবো? তুই নিজের ইচ্ছায় এসেছিস,এখন ইচ্ছে হলে নিজেই চলে যেতে পারিস। বিরক্ত করিস না তো আমার ঘুম পাচ্ছে!””
“” আমি বিরক্ত করছি আপনাকে?””
“” হুম!””
পাপড়ি এবার ফুঁপাতে ফুঁপাতে বললো,,
“” একাই যাবো আমি,থাকবো না আপনার কাছে। আপনি আমাকে শুধু কষ্টই দিলেন। আমি এক্ষুনি চলে যাবো।””
আতিশ কাঁথার ভাঁজ খুলে গায়ে জড়িয়ে নিতে নিতে বললো,,
“” ওকে,সাবধানে যাস। গুড নাইট!””
পাপড়ি তখনই রাগে ফুসতে ফুসতে হাঁটা ধরেছে। কিন্তু রুমের বাইরে পা ফেলার সাহস পাচ্ছে না। এতো কষ্ট করে মানুষটার কাছে এলাম এভাবে চলে যাবো? এমন কেন উনি? একটু ভালোবাসলে কি হয়? আমি কি এতোটাই অবহেলার যোগ্য?
বেশ কিছুক্ষণ ভাবনায় ডুব দিয়েই চোখের পানি মুছতে মুছতে আবার ফিরে এসেছে আতিশের বিছানার কাছে। আতিশ কাঁথা গায়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে,উনি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন? কোথায় শুবো আমি?
পাপড়ি চুপচাপ আতিশের অপর পাশে গিয়ে আলতোভাবে বিছানায় শুয়েছে। বিছানার একদম ধারটাতে। যে মানুষটা তাকে ভালোইবাসে না তার কাছাকাছি সে শুবে না!
পাপড়ি আবার ফুঁপিয়ে উঠতেই আতিশ নিজের কাঁথাসহ ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে নিয়েছে। পেটে চাপ প্রয়োগে নিজের কাছে টেনে নিয়ে ওর কানে ফিসফিস করে বললো,,
“” তোমার এই ফুঁপানিটাকে বড্ড ভালোবাসি,বউ!””
পালক অন্ত্রীশার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিতেই অন্ত্রীশা সাথে সাথে ওকে ছাড়িয়ে নেয়। পালক অবাক হয়ে অন্ত্রীশার দিকে তাকাতেই ও বলে উঠলো,,
“” আমার ভেতর কোনো অনুভূতি কাজ করছে না!””
“” মানে?””
“” কেমন জানি নিরামিষ চুমু মনে হচ্ছে!””
“” চুমুতেও নিরামিষ?””
“” হুম,আমার মনে হয় নেশা হয়ে গেছে!””
“” কিসের?””
“” ধোঁয়ার নেশা। আপনার ধোঁয়া মাখানো চুমুর নেশা। যান তো সিগারেট খেয়ে আসুন!””
অন্ত্রীয়ার কথায় পালক হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে!
অনিকশার ঘুমের ঘোরেই মনে হচ্ছে কেউ তার দিকে খুব গভীরভাবে চেয়ে আছে। কোনো ভুতটুত নয়তো? অনিকশা টিপটিপ করে চোখ মেলতেই অরিদ ওর কপালে চুমু খেয়ে বললো,,
“”টিকেট কাটা শেষ অনি,আমরা কালই হানিমুনে যাচ্ছি!””
অনি বিরক্ত নিয়ে বললো,,
“” এই নিয়ে উনিশবার বলেছো! তুমি ঘুমোওনি কেন অরিদ?””
“” আমার হানিমুনের উত্তেজনায় ঘুম আসছে না,অনি!”‘
#সমাপ্তি